নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহেদ নুর উদ্দিন

কবি, সাংবাদিক ও লেখক

শাহেদ নুর উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হাজারও সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২০





ঢাকার মিরপুর রোডে ১৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজ। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার পাশাপাশি তিনটি অনুষদের অধীনে ২০টি বিভাগে এর উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চলছে। প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও ২৩০ জন শিক্ষক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে দেশের অন্যতম সেরা এ কলেজটি। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই কলেজটি আগামী ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠার ১৭১ বছরে পর্দাপন করবে। অতীতে ফলাফলে সবসময় এক নাম্বারে থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ফলাফলের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। কলেজ নিয়ে ছাত্রদের রয়েছে নানা অভিযোগ। কলেজটির ইতিহাস ঐতিহ্য, বর্তমান ও সমস্যার কথা জানাচ্ছেন- শাহেদ নুর উদ্দিন।



১৮৭৫ সালে ঢাকা কলেজ অর্জনে একটি গৌরবময় পালক যুক্ত হয়। সে বছর থেকে ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান ক্লাস খোলা হয়। এরপর নানা ঘাত-প্রতিঘাত থাকলেও ঢাকা কলেজ শিক্ষাক্ষেত্রে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছিল। যার সোনালী ফসল ছিল ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি।



একাডেমিক কার্যক্রম :



উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাদান ছাড়াও ঢাকা কলেজে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং বিজ্ঞান অনুষদে বিভক্ত ২০টি বিভাগে উচ্চ শিক্ষা দেয়া হয়। একুশ শতকের চাহিদা মেটাতে কলেজে আরো বিভাগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আয়েশা বেগম।



আবাসন সুবিধা :



১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা কলেজের জন্য পরিকল্পিতভাবে নির্মিত প্রথম ছাত্রাবাস। এটিই বাংলাদেশের কোনো সরকারি কলেজের জন্য নির্মিত প্রথম ছাত্রাবাস। বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল। তবে কলেজে বর্তমানে সাতটি হল রয়েছে। এই সাতটি হল মূলত ১ হাজার ছাত্রের থাকার কথা থাকলেও হলগুলোতে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় ২ হাজারেরও অধিক ছাত্র। উত্তর হলের ২০২ নং রুমে ২/৩ জন থাকার ব্যবস্থা থাকলেও থাকেন ১০ জন। সরজমিনে দেখা যায় দক্ষিণ ছাত্রাবাসের চারিদিকের জমে থাকা আবর্জনা আর পয়নিষ্কাশনের খোলা নালা থেকে দুর্গন্ধের কারণে দিনের বেলায়ও নাকে হাত চাপা দিয়ে চলতে হয় ছাত্রদের। সামান্য বৃষ্টি হলেই উত্তর ছাত্রাবাস ও দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ছাদ চুপসে পানি পড়ে। প্রতিটি হলের ছাত্রদের বিনোদনের খোরাক মাত্র একটি করে টেলিভিশন। এই দিক থেকে অবশ্য আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের বাসিন্ধারা একটু সৌভাগ্যবান। কারণ তারা বাড়তি হিসেবে পেয়েছে একটি ক্যারামবোর্ড। হলের বেশিরভাগ টয়লেট ও বাথরুমগুলো ব্যবহারের উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। ‘টয়লেটের দুর্গন্ধ এখন নিত্যদিনের বন্ধু হয়ে গেছে আমাদের’ এমনটাই বললেন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র বাদশা



লাইব্রেরি ও সেমিনারের বেহালদশা :



ইংরেজি বিভাগের ছাত্র রাসেল ওসমান বিভাগীয় সেমিনারে দাঁড়িয়ে অক্ষেপ করে বলে, ‘এটাতো সেমিনার নয়, বইয়ের ছোট জাদুঘর! দেখা যায় কিন্তু ছোঁয়া বা পড়া যায় না।’ দুই একটি বাদে বাকি সেমিনারগুলোর একই অবস্থা। আর কলেজটির ২০ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য মূল ভবনের দোতলায় প্রায় হাজার বর্গফুটের একটি লাইব্রেরি রয়েছে। কিন্তু বই ও আসবাবপত্রের তুলনায় জায়গা স্বল্প হওয়ার এই লাইব্রেরিটিতে একসাথে বসে পড়তে পারে মাত্র ১০০ জন ছাত্র। আর এটি দুপুর দুইটার পর বন্ধ হয়ে যায় তাই সময় ও স্থান স্বল্পতার কারণে এই গ্রন্থাগারটি ব্যবহারের ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট অনাগ্রহ। লাইব্রেরিয়ান কানিজ মৌলুদা জানান, লাইব্রেরিতে প্রায় ৩০ হাজার বই আছে।



পরিবহন সংকট :



কলেজটির ২০ হাজার ছাত্রের জন্য আছে মাত্র ৪টি বাস। এর মধ্যে ২টি বাসের ধারণক্ষমতা ৪৮ জন করে বাকি ২টি বাসের প্রতিটিতে ৫২ জন করে যাত্রী বসতে পারেন। তাই বাধ্য হয়ে কলেজটির ছাত্রদের প্রাইভেট বাস সার্ভিসের উপর নির্ভর করতে হয়। আর প্রতিদিনই ভাড়া ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ছাত্রদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বিবাদ লাগে।



ছাত্র সংসদ :



১৯৯০ সালে শেষ নির্বাচন হয়েছিল ছাত্রসংসদের এরপর থেকে ফাঁকায় যাচ্ছে ছাত্রসংসদ রুমটি। বর্তমানে ছাত্রসংসদ কক্ষটিকে অর্থনীতি বিভাগের সেমিনার রুম ও মেডিকেল সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২১ বছর ধরে অকার্যকর সংসদ তাই সাধারণ ছাত্রদের দাবি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সংসদের নির্বাচন দিয়ে এটিকে কার্যকর করা হোক।



কলেজের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম :



ঢাকা কলেজের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম তথা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের গুণকীর্তন এখন আর শোনা যায় না। কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকির অভাবে প্রায় বন্ধ বললেই চলে। শুধু বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান ছাড়া তেমন কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হাতে নেয় না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এরপরও নিজেদের ইচ্ছা শক্তির বলে নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট, বাঁধন, বিএনসিসি, ঘাসফড়িং থিয়েটার, ডিবেটিং সোসাইটি, ঢাকা কলেজ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, রোভার স্কাউটের মতো কয়েকটি সংগঠন।



প্রিন্সিপালের বক্তব্য :



ছাত্রদের নানা অভিযোগের মধ্যে আবাসিক হলগুলোর ব্যাপারে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আয়েশা বেগম বললেন, হলের অবস্থা আগের চেয়ে অনেকাংশে ভালো করা হয়েছে এবং ছাত্রদের সুবিধার্থে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান। লাইব্রেরির প্রসঙ্গে তিনি বললেন, তিনি যোগদানের পর নিজে উদ্যোগী হয়ে অডিটরিয়ামে ছাত্রদের পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাই এখানে ছাত্ররা রাত ১০টা পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পান। পরিবহন সংকট নিয়ে জানালেন- তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন দুটি বাস দেয়া হয়েছে। তবে ফলাফলের বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে তিনি জানালেন, ছাত্রদের যাবতীয় সমস্যা নির্ণয়ের জন্য খোলা হয়েছে কাউন্সেলিং ও গাইডেন্স সেন্টার। ভবিষ্যৎতে ছাত্রদের প্রতিটি পরীক্ষার ফল অভিভাবকদের জানানোর ব্যবস্থা করা হবে। নতুন পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি জানান, শীঘ্রই নতুন একটি ভবনের কাজ শুরু হবে। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক ক্লাস, পরীক্ষার হলসহ সকল সহ-শিক্ষামূলক সংগঠনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে - See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.