নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ধর্মীয় নেতাদের বুঝতে হবে, সব যুবক অশ্লীল ব্লগ লেখে না

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:৪৩

গেল ডিসেম্বরের এক প্রবন্ধে লিখেছিলাম, যে যুবক দেশের পতাকা মাথায় বাঁধে, দেশের গান করে, সে কিভাবে অযোগ্য অসৎ মানুষকে ভোট দেয়? বাংলাদেশে তো এখন অনেক যুবক ভোটার, সেখানে কিভাবে অযোগ্য মানুষ পালা করে ক্ষমতায় আসে? দেশপ্রেম শুধু আনুষ্ঠানিকতার ফিতায় বাঁধা থাকে? সে লেখায় দেশের যুবকদের প্রতি আমার এক প্রকারের হতাশা প্রকাশ পেয়েছিল। সকল প্রতিবাদের নিয়ামক শক্তি যুবকরা- কেন যেন একথা বিশ্বাস হতে চাইত না। মনে হতো আমাদের দেশের যুবকরা প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তারা অপরাজনীতির বিষে বিষাক্ত হয়ে গেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, রাহাজানি আর অপসংস্কৃতির অন্ধকারে তারা হারিয়ে গিয়েছে। মনে হতো দেশের যুবকরা ডিসেম্বর আর মার্চ এলে মাথায় পতাকা বাঁধে, দেশের গান করে শুধু আনুষ্ঠানিকতার জন্য। এর মধ্যে কোনো দেশপ্রেম নেই, দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই। আমার ভুল ভাংতে বেশিদিনের দরকার হলো না। মাত্র দু’মাসের মাথায় হাজার হাজার যুবক রাস্তায় নেমে এসেছে। তাদের মাথায় দেশের পতাকা বাঁধা। মুখে দেশের গান, সেøাগান। বজ্রনিনাদে তারা প্রকম্পিত করে রাখে আকাশ বাতাস। তাদের দাবি একটাই- যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই। সরকার তড়িঘড়ি যুদ্ধাপরাধী বিচারের আইন পরিবর্তন করে। যুবকদের প্রাথমিক বিজয় অর্জন হয়, কিন্তু তারা রাজপথ ছাড়ে না। রাজপথ ছাড়তে সাহস পায় না। এই যুবকরা জানে, কত অযোগ্য আর অসৎ মানুষ আমাদের রাজনীতি দখল করে আছে। তারা সুযোগ পেলেই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত করবে। হয়ত করেছেও পর্দার আড়ালে। যুবকরা তাদের বিশ্বাস করে না। তাদের হাতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ভার দিয়ে নিরাপদ বোধ করে না। রাত দিন পড়ে থাকে রাজপথে। এই যুবকদের সবাই যে সৎ বা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পথে নেমে আসে তা নয়। ধানে যেমন চিটা থাকে, তাদের মধ্যেও কিছু বিপথগামী আছে। এই বিপথীরা শুধু যুবকদের আন্দোলনের জন্যই ক্ষতিকর নয়, তারা আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সম্প্রীতি ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্যও ক্ষতিকর। ক্ষতিকর এই অংশটিকে চিহ্নিত করে আগামীদিনের আন্দোলন থেকে বাদ দিতে হবে। যারা কোটি মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর নোংরা আঘাত করে তারা সমাজ সংসারের জন্যও নিরাপদ নয়। এরা এক ড্রাম দুধের মধ্যে দু’ফোঁটা চোনা হয়ে সব নষ্ট করবে।

আমাদের ধর্মীয় নেতাদেরও বুঝতে হবে, শাহবাগের সবাই নাস্তিক নয়। সব যুবক অশ্লীল ব্লগ লেখে না। যেমন মসজিদে যারা যায় তাদের সবাই মুসল্লি নয়। মুসল্লিদের জুতো চুরি করার জন্যও কেউ কেউ মসজিদে যায়। দুজন ছিঁচকে চোরের জন্য মসজিদ বন্ধ করার দাবি নিশ্চই যুক্তিযুক্ত হবে না।



অনেক আগেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া দরকার ছিল। ক্ষমতার রাজনীতি এতো দিন হতে দেয়নি। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিচার শুরু করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিচারের অনেক কিছুই প্রশ্নবিদ্ধ। এখানেও রাজনীতিকরণ আছে। তবু আশার বিষয় হলো, বিচার তো শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ আজ জামায়াত-বিএনপির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, কাল বিএনপি আওয়ামী লীগের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। এই দুই দলের রাজনৈতিক ইতিহাস তাই বলে। যেমন বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকে পুলিশ টিয়ারসেল ছুড়েছিল, এবার আওয়ামী লীগের পুলিশ বিএনপির অফিসের দরজা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে গণগ্রেপ্তার করেছে। আগামীতে হয়ত দেখা যাবে বিএনপির পুলিশ বুলডোজার নিয়ে ছুটছে আওয়ামী লীগের অফিসের দিকে।

জামায়াত সারা দেশে দাঙ্গা করেছে। পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছে। তাই বলে পুলিশ নির্বিচার গুলি ছুড়বে? মেরে ফেলবে শ খানেক মানুষ? ধর্মীয় সংগঠনগুলো মসজিদকে কেন্দ্র করে জড় হয়, মিটিং মিছিল করে, তাই বলে মসজিদের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিতে হবে? এটা কোন গণতন্ত্র? ইসলামে তো রাজনীতি আছে। নবী রাসুলগণের ইতিহাস বলে, ধর্মীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে মসজিদের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। কিন্তু শহীদ মিনারের সঙ্গে তো ক্ষমতার রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। যারা শহীদ মিনারের বেদিতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে, শহীদ মিনারের সিঁড়ি তাদের ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তাদেরও কি শহীদ মিনারে নিষিদ্ধ করা হবে? করা হবে না, হয় না। কিন্তু অরাজনৈতিক গরিব শিক্ষকরা যখন বেতন ভাতার দাবিতে শহীদ মিনারে যায়, সরকারের ক্ষ্যাপাটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের চোখে বিষাক্ত মরিচের গুঁড়া ছিটায়। মজার ব্যাপার হলো, জামায়াতি দাঙ্গা ঠেকাতে মরিচের গুঁড়া দেখা যায় না। সরকার জামায়াতের দাঙ্গা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়ে গুলি করে মানুষ মারছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলাচ্ছে, এগুলো গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। জামায়াত বাংলাদেশের কোনো নিষিদ্ধ দল নয়। সরকার গত চার বছরে তাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। এখন জামায়াত দাঙ্গার পথ বেছে নিয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে, এর দায় কে নেবে? কে ফিরিয়ে দেবে মায়ের কোলে তার সন্তান? একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, জামায়াতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভীত এবং নৈরাজ্যের জন্য প্রধানভাবে দায়ী আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির অপরাজনীতি।

হাজার হাজার যুবক মাথায় দেশের পতাকা বেঁধে পথে নেমে এসেছে। তারা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চায়। আমি যদি তাদের চাওয়াকে প্রতীকী অর্থে দেখি তবে স্বীকার করতেই হয়, আমাদের যুবকদের দেশপ্রেম শুধু আনুষ্ঠানিকতার ফিতায় বাঁধা নয়। তাদের দেশপ্রেমের শেকড় অনেক গভীরে। হয়ত অভিজ্ঞতার অভাবে তারা নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। রাজনীতিকরা অপরাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে। শাহবাগকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ সারাদেশে লাগামহীন চাঁদাবাজি করেছে। ব্যসবায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। যে কথা অকপটে ফেসবুকে লিখেছেন (এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কথা উল্লেখ করে) কণ্ঠশিল্পী ও জাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক প্রিতম আহমেদ। আমার এক ভাই তুল্য বন্ধু, যে এখন বিবিসি ওয়ার্ড সার্ভিসে সাংবাদিকতা করেন, জাগরণ মঞ্চে যার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল, তিনিও স্বীকার করেছেন- শেষ দিকে জাগরণের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগ কবজা করে নিয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ যাওয়া একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছে। কারণ তারা নিজেদের গায়ে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের ট্যাগ লাগাতে চায় না। তিনি অবশ্য এর জন্য বিএনপির আউলা রাজনীতিকেও অনেকটা দায়ী করেন। নারী পুরুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে, তিন তকবিরে কুরুচির ব্লগার রাজীবের জানাজার কড়া সমালোচনা করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীসহ ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী অনেকেই। ধার্মীকরা এটাকে ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে তামাশা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমি এগুলোকে তারুণ্যের ভুল এবং অনভিজ্ঞতা হিসেবে দেখতে চাই। এখনই তাদের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে খারিজ করে দিতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি তারা দেশপ্রেমিক, যারা দেশের পতাকা মাথায় বেঁধে পথে নেমে এসেছে। তাদের এবারের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। আগামীতে আরও দাবি নিয়ে এই যুবকরা রাজপথে নামবে। সকল অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদে আবারও তারা মাথায় দেশের পতাকা বেঁধে প্রতিবাদের দাবানলে ঝলসে উঠবে। অযোগ্য বাচাল রাজনীতিকদের বিদায় করে তারা নেতৃত্ব হাতে তুলে নেবে। আর কোনো অযোগ্য মানুষ এই যুবকদের ভোট পাবে না কোনো দিন। রাজনৈতিক দস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার হবে প্রিয় দেশ।

http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=7971

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:৫৫

তুহিন সরকার বলেছেন: ওনাদের কে বুঝাবে.................ওনারা অবুঝ।
যেমন, হেফাজতে ইসলাম নয় হেফাজতে জামায়াতে ইসলাম।

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:১৫

রামন বলেছেন:
আমি এক কথায় এ দেশের গণতান্ত্রিক দলগুলোকে অকার্যকর ও ব্যর্থ দল বলবো। অথচ সে দিক দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী ফ্যাসিস্ট জামাতি চক্র অনেকাংশে সফল। তারা অতি চতুরতার সাথে সমাজের অবহেলিত ও হতাশাগ্রস্থদের এক কাতারে এনে এমনভাবে সম্মোহিত করতে সক্ষম হয়েছে যে তাদের ইশারায় এ সকল ব্যক্তিরা মুর্খের মত জীবন বিসর্জন দিতেও কুন্ঠিত বোধ করে না।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:০৮

পলাশ রহমান বলেছেন: ঠিকই বলেছেন রামন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.