নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

খড়ের গাদায় যেমন সুঁচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, ঠিক তেমনি আমাদের চারপাশের থকথকে মন্দ খবরের ভিড়ে একটি ভালো খবর খুঁজে পাওয়া বড়ই শক্ত

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৩

একজন প্রবাসী বেলালের গল্প লিখব, তার আগে প্রায় সবার জানা প্রচলিত একটা গল্প বলি। একজন বিশেষ ব্যক্তি গিয়েছেন দোযখ পরিদর্শনে। তার সঙ্গে আছেন দোযখের দুজন সর্দার গোছের পাহারাদার। বিশেষ ব্যক্তিকে তারা ঘুরে ঘুরে দোযখ দেখাচ্ছেন এবং আজাবভোগীদের বর্ণনা দিচ্ছেন।

বিশাল এক কুয়া, ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। অপরাধী হাজার হাজার মানুষ সেই আগুনে পুড়ে পুড়ে আজাব ভোগ করছে। অপরাধীরা চিৎকার চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করছে, কেউ কেউ আবার পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করছে। অপরাধীরা যেন পালাতে না পারে, সেজন্য কুয়ার চার পাশে পাহারায় রয়েছে একদল পালোয়ান পাহারাদার।

বিশেষ ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, এখানে কাদের শাস্তি হচ্ছে?

উত্তর এলো, জার্মানিদের। যেসব জার্মান নাগরিক মৃত্যুর আগে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল, এখানে তাদের পাপের শাস্তি দেয়া হচ্ছে।

বিশেষ ব্যক্তি সামনে এগিয়ে গেলেন। কিছুটা পথ এগিয়ে দেখলেন, একই রকম আর একটি কুয়া। সেখানেও যথারীতি অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। অপরাধীরা পালানোর চেষ্টা করছে। পাহারাদার তাদের পাহারায় রয়েছে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, এখানে কাদের শাস্তি হচ্ছে?

উত্তর এলো, আমেরিকানদের।

সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন দোযখ পরিদর্শক। দেখতে থাকেন এক একটি কুয়ায় জ্বলছে এক এক দেশের অপরাধীরা। তাদের পাহারায় নিয়োজিত আছে পাহারাদার। কেউ যেন পালাতে না পারে।

দেখতে দেখতে ক্লান্ত বিশেষ ব্যক্তি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফেরার জন্য, তখনি তার চোখে পড়ল একটি কুয়ার পাশে কোনো পাহারাদার নেই। তিনি একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, এখানে পাহারাদার নেই কেন?

উত্তর এলো, এখানে বাংলাদেশিদের আজাব দেয়া হচ্ছে।

নামটি শুনেই বিশেষ ব্যক্তি আপ্লুত হয়ে পড়লেন। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললেন, বাংলাদেশের মানুষ এত ভালো! এই কঠিন আজাব ভোগ করছে তবু পালানোর চেষ্টা করছে না?

উত্তর এলো, আপনার ভুল হচ্ছে স্যার।

কি ভুল?

বাংলাদেশের মানুষ ‘ভালো’ তাই এখান থেকে পাহারাদার সরিয়ে নেয়া হয়েছে এমন ধারণা ঠিক না।

তাহলে?

ঘটনা হলো, বাংলাদেশের কোনো একজন যদি কুয়ার কিনারা বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে, পেছন থেকে অন্য দশজন তার পা টেনে নামিয়ে ফেলে। আর তাই বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা কোনো পাহারাদার দরকার হয় না।

বিশেষ ব্যক্তি শব্দ করে হেসে ফেললেন। হাসির মধ্যেই তার চেহারা দেখে মনে হলো, তিনি কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছেন।

দোযখ পরিদর্শনের গল্পটা নিছক একটি ‘গল্প’। তবু সব গল্পের পেছনে একটি গল্প থাকে। ‘দোযখ পরিদর্শন’ গল্পের পেছনের গল্প কি তা নিশ্চয় ব্যঙ্গ বলার দরকার হবে না। পাঠকরা এতক্ষণে পেছনের গল্পটিও পড়ে ফেলেছেন।

বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের আয়তন অতি ক্ষুদ্র হলেও জনসংখ্যার ওজন অনেক ভারী। ছোট্ট একটা দেশের পেটের মধ্যে গিজগিজে মানুষ। সারাক্ষণ অভাব অনটন তাদের তাড়া করে বেড়ায়। কোথাও ভালো খবর নেই। চারদিক সয়লাব হয়ে আছে নেতিবাচক খবরে। শুদ্ধ কাজ করার, শুদ্ধ চিন্তা করার মানুষ বড়ই অভাব। এর মধ্যে দুই একজন যারা আছেন, শুদ্ধ কাজ করার চেষ্টা করেন, শুদ্ধ চিন্তা করেন তাদের পেছন থেকে আমরা পা টেনে ধরি। কোনোভাবেই যেন উপরে উঠতে না পারে সে জন্য নিজের নাক কেটে হলেও তার বা তাদের যাত্রা ভঙ্গ করি। যেমন মোহাম্মদ ইউনূস। তাঁর যাত্রা বিশ্বের উঁচু উঁচু আসনে। তিনি তাঁর কাজ দিয়ে বিশ্বকে জয় করে চলেছেন। আর আমাদের সরকার, সরকারপ্রধান? সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন মোহাম্মদ ইউনূসের পা টেনে ধরতে। তারা বাদুড়ের মতো ঝুলে আছেন ড. ইউনূসের পায়ের সঙ্গে। তাঁর যাত্রা ভঙ্গ করতে ভোতা ছুরি দিয়ে নিজেদের নাক নিজেরাই কাটছেন। কাটা নাক যে কেউ পছন্দ করে না তার প্রমাণ মিলেছে ৫ সিটির নির্বাচনে। আসন্ন ক্যাবিনেট নির্বাচনেও জনগণ বড় ধরনের প্রমাণ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই বলে কি সরকার বা সরকারপ্রধানের লজ্জা হয়েছে? হয়নি। তারা মোহাম্মদ ইউনূসের পা ছেড়েছে? ছাড়েনি। এজন্যেই হয়ত আঞ্চলিক প্রবাদে বলে, ‘ইল্লোত যায় না ধুলি, খাইছলত যায় না মলি’।

খড়ের গাদায় যেমন সুঁচ খুঁজে পাওয়া কঠিন, ঠিক তেমনি আমাদের চারপাশের থকথকে মন্দ খবরের ভিড়ে একটি ভালো খবর খুঁজে পাওয়া বড়ই শক্ত। অসৎ, অযোগ্য, দুর্নীতি, দুষ্টবুদ্ধি এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, দু’চারটে ভালো খবর পাওয়া গেলেও তার স্বাদ আশ্বাদনের আগেই হারিয়ে যায় বানের জলে। এমন কি খবরের কাগজেও এসব খবরের জন্য জায়গা সঙ্কুলান হয় না। ‘নেতি খবরের’ চিপায় পড়ে থাকে সিঙ্গেল কলামে।

সারি সারি মন খারাপ করা খবরের ভিড়ে একজন প্রবাসী বেলাল আমাদের জন্য জন্ম দিয়েছেন একটি ভালো খবর, ভালো লাগার খবর। মন ভালো করার গল্প।

বেলাল নামের এক বাংলাদেশি যুবক বাস করতেন ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানো শহরে। অর্থনৈতিক মন্দার চাপে ল-ভ- ইতালির কর্মবাজারে বেলাল যুতসই কোনো চাকরি মেলাতে না পেরে ভ্রাম্যমাণ ফুল বিক্রেতা হিসেবে জীবন নির্বাহ করতেন। সারা বিকেল পেরিয়ে গভীর রাত অবধি তিনি ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করতেন। সবাই যে হাসিমুখে বেলালের ফুল কিনে নিতো তা না। মাঝে মধ্যে ক্রেতার বক্রচোয়ালও দেখতে হতো। কিন্তু নিরুপায় বেলাল। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সোনার হরিণ ধরতে ইতালিতে এসেছেন। দেশে বাবা মা, ভাইবোন, ঘরসংসার সবই আছে। তারা তাকিয়ে আছেন বেলালের দিকে, বেলাল তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে। তীব্র শীত অথবা গ্রীষ্মের দগদগে গরম, কোনো কিছ্ইু স্পর্শ করে না বেলালকে। সব কষ্ট সহ্য করেন নীরবে। মাঝে মধ্যে চোখের পানি ফেলেন গোপনে। ভাবেন, কষ্টের সময় মানুষের চিরকাল থাকে না, তারও থাকবে না।

এভাবেই শেষ হতে পারত বেলালের গল্প। কিন্তু না, বেলালের গল্প এখানে শেষ হতে দেয় না ‘লে ইয়েনে’ নামের ইতালীয় একটি টিভি অনুষ্ঠান। তাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে কষ্টক্লান্ত বেলালের ভেতরে বাস করা অন্য এক বেলাল।

এক বিকেলে ‘লে ইয়েনে’র উপস্থাপক আনজেলো দুরো গায়ে চার্চের পাদরির পোশাক চাপিয়ে ছোট একটা টাকার টুকরি নিয়ে দাঁড়িয়ে যান মিলানোর একটি গির্জার সামনে। পথচারীরা দান হিসেবে দু’একটি করে ইউরো রেখে যায় তার টুকরিতে। উপস্থাপক তার সামনে দিয়ে যাওয়া কোনো কোনো পথচারীকে থামিয়ে অনুরোধ করে বলেন, তুমি একটু টুকরিটা পাহারা দাও, আমি বাথরুম থেকে আসছি। এভাবে বেশ ক’জন পথচারীকে রেখে গির্জার ভেতরে যান উপস্থাপক আনজেলো। আবার একটু পরে ফিরে আসেন। তিনি যে সময়টা গির্জার ভেতরে থাকেন সেই সময়ে পথচারীর বেশ ধরে টুকরিতে ১০০ ইউরো রেখে যায় তার (উপস্থাপকের) নিজস্ব লোক। গোটা বিষয়টা ভিডিও হতে থাকে গোপন ক্যামেরায়।

‘লে ইয়েনে’ ইতালীয় টিভির অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চেষ্টা করা হয় মানুষের ভেতরের মানুষটাকে টেনে বের করে আনতে। মানুষের মুখোশ উন্মোচন করতে ইতালিতে তাদের জুড়ি নেই। তারা পথেপ্রান্তরে এ জাতীয় নানা কা ঘটায়। খুঁজে বের করে মানুষের ভেতরের মানুষ, প্রকৃত চেহারা। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, সমাজের কর্তা ব্যক্তিদের চেহারাও উঠে আসে তাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সেদিনের অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য ছিল মানুষের সততা। ইতালিতে অভিবাসীদের মধ্যে কারা বেশি সৎ, তা খুঁজে বের করতেই গির্জার পুরোহিত সেজেছিলেন উপস্থাপক আনজেলো দুরো।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, উপস্থাপক যাকেই টুকরি পাহারা দিতে রেখে গেছেন সে-ই ইউরো চুরি করেছে। যা রেকর্ড হয়ে আছে গোপন ক্যামেরায়। এক প্রকারের হতাশা নিয়েই উপস্থাপক ডেকে নেন ভ্রাম্যমাণ ফুল বিক্রেতা বেলালকে। একই ভাবে বাথরুমের কথা বলে টুকরি পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে যান বেলালকে। যথারীতি তার সাজানো পথচারী ১০০ ইউরো ফেলে যায় টুকরিতে। কিন্তু বেলাল একটি ইউরোতেও হাত দেন না। ভেতর থেকে বিষয়টি খেয়াল করে উপস্থাপক আরও দু’জনকে পাঠান টুকরিতে ইউরো রাখতে। তারাও ১০০ করে মোট ২০০ ইউরো রেখে যায় টুকরিতে। এভাবে টুকরিতে জমা হয় ৩০০ ইউরো (প্রায় ৩০ হাজার টাকা)। উপস্থাপক লক্ষ্য করেন, বেলালের মধ্যে কোনো ভাবলেশ নেই। তিনি আগের মতোই নির্মোহ পাহারা দিতে থাকেন ইউরো ভর্তি টুকরি। এবার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন উপস্থাপক আনজোলা। বেলালকে জড়িয়ে ধরে জানতে চান, তুমি কি কাজ কর?

বেলাল বলেন, ফুল বিক্রি করি।

কত ইউরো আয় কর একদিনে?

খুব সামান্য।

৩০০ ইউরো থেকেও কম?

অনেক কম।

যা পাও তা দিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ চলে?

যায় কোনো রকমে টেনেটুনে।

এখানে তো ৩০০ ইউরো আছে, নেওনি কেন?

উত্তরে বেলাল বলেন, আমি আমার দায়িত্বকে সম্মান করি।

আনন্দে ফেটে পড়েন লে ইয়েনের সবাই। উপস্থাপক আনজেলো খুব স্পষ্ট করে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ইতালিতে অভিবাসী বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি সৎ। তার এই ঘোষণা টিভির পর্দায় দেখেন ইতালির লাখ লাখ দর্শক। গর্বে বুক ভরে ওঠে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

আবারও বলতে হচ্ছে, এখানেই শেষ হতে পারত বেলালের গল্প। কিন্তু না, এবারও বেলালের গল্প শেষ হলো না, হতে দিলেন না এক ইতালীয় যুবতী।

লে ইয়েনের ‘অলেমপিয়া দেল্লেগালিতা’ পর্ব প্রচারিত হওয়ার পর বেলালকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শতাধিক মেইল আসে আনজেলোর কাছে। এর মধ্যে সাইয়া নামের এক ইতালীয় যুবতী লেখেন ব্যতিক্রম ইমেইল। তিনি বেলাল সম্পর্কে জানতে চান, দেখা করতে চান বেলালের সঙ্গে। উপস্থাপক আনজেলোর কাছে বেলালের কোনো কন্ট্রাক ছিল না। পথে পথে খুঁজতে নামেন বেলালকে। অন্যান্য ফুল বিক্রেতাদের কাছে জানতে চান বেলালের সন্ধান। এক সময় পেয়েও যান। নিজের গাড়িতে করে বেলালকে নিয়ে যান সাইয়ার কাছে। সাইয়া জানান, লে ইয়েনে অনুষ্ঠানে বেলালের সততা দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ যে, তার বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন বেলালের একটা চাকরির জন্য। সাইয়ার বাবা রাজি হয়েছেন তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে বেলালকে চাকরি দিতে।

খুশিতে ডগমগ বেলাল এক কথায় রাজি হয়ে যান চাকরি করতে। চাকরির জন্য তাকে মিলানো শহর ছাড়তে হয়। যেতে হয় কালাব্রিয়া নামের অন্য এক শহরে। বেলাল এখন ভালো আছেন, অনেক ভালো। টেলিফোনে কথা বলার সময় তার নির্মল হাসি সে কথাই বলছিল বার বার।

http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=8484

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫

ল্যাটিচুড বলেছেন: ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম .........

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪

পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ জানাতেও ভুল করলাম না।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১২

ননদালীনাজ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট ! অসাধারন! ধন্যবাদ। চালিয়ে যান ভাই।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৫৫

পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০২

মনুআউয়াল বলেছেন: অসাধারন পোস্ট, ধন্যবাদ

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.