![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতা নিয়ে মাস তিনেক আগে গিয়েছিলাম আমার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের কাছে। তিনি আমাকে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারি দেড় মাসের আগে অ্যাপয়েনমেন্ট দেয়া সম্ভব হবে না। তা-ই কবুল করলাম। নির্দিষ্ট তারিখে বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম। তিনি খুব যতেœর সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন, ছোট একটা অপারেশন করলে সমস্যার সমাধান হবে। আমি রাজি থাকলে তিনি ব্যবস্থা করবেন। আমি রাজি হলাম। ডাক্তার আমার নামে একটা ফাইল তৈরি করলেন এবং বললেন, কবে কখন অপারেশন হবে তা টেলিফোন করে জানানো হবে। জিজ্ঞাসা করলাম, আনুমানিক কত দিন সময় লাগতে পারে? তিনি বললেন, এখনই ঠিক-ঠাক বলা যাবে না। তবে দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে। মাস খানেক পার না হতেই ফোন এলো। হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগ থেকে জানানো হলো মে মাসের ২৮ তারিখে একটা জায়গা খালি আছে, আমি রাজি থাকলে ওই দিন অপারেশন হতে পারে। আমি রাজি হলাম। আমার সঙ্গে তারা ১০ দিন আগে যোগাযোগ করবে বলে ফোন রেখে দিল। ১০ দিন আগে জানানো হলো, ২৩ তারিখ সকাল ৭টার মধ্যে খালি পেটে এক শিশি ইউরিন নিয়ে হাসপাতালে যেতে। সময়মতো হাজির হলাম। আমার বাম হাতের রগ ফুটো করে চার বোতল রক্ত টেনে নিয়ে তারা আমাকে বিদায় করল। বিদায় দেয়ার আগে জানালো, ২৫ তারিখে আবার যেতে হবে। আমি সময়মতো হাজির হলাম। আমাকে একটা লম্বা ট্রের ওপর শুতে বলা হলো। প্রায় অর্ধনগ্ন করে আমার সারা শরীরে ১০/১৫ টা জেলপ্লাগ লাগিয়ে দিল। জানতে চাইলাম, এটা কি করছো? একজন উত্তর দিলেন, তোমার হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং রক্তের চাপ পরীক্ষা করছি। পরীক্ষা শেষে আমাকে পাঠানো হলো ডাক্তারের চেম্বারে। গিয়ে দেখি সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বসে আছেন, যিনি প্রথম দিন আমাকে দেখেছিলেন।
মিনিট দশেক আমার সঙ্গে কথা বললেন। কী করি? কোথায় থাকি? এখানে কে কে আছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ নিলেন। এরপর জানালেন তারা আমার রক্ত ও প্রস্রাবের মোট ১১টি পরীক্ষা করেছে। হার্ট এবং ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের পরীক্ষা করেছেন। অপারেশনের জন্য সবকিছু পজেটিভ। তিনি দুইটা কাগজ এগিয়ে দিলেন দস্তখত করার জন্য। একটি হলো যদি আমি কোনো কারণে অপারেশন না করার সিদ্ধান্ত নিই, তবে যাবতীয় পরীক্ষার খরচ আমাকেই পরিশোধ করতে হবে। আর অন্যটি হলো প্রাইভেসি রক্ষা ও অপারেশনের অনুমতি প্রদান। পরদিন ২৬ তারিখে আবার যেতে বললেন। গিয়ে দেখি একজন মনোচিকিৎসক আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে তিনি আমার মনের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলেন। কীভাবে অপারেশন করা হবে, কী কী করা হবে, এই অপারেশন কতটা জটিল, কত সময় লাগতে পারে, প্রতিবছর কত জন রোগীকে এই অপারেশন দেয়া হয় এবং তার ফল কী, ইত্যাদি বিষয়ে বিরাট বয়ান দিয়ে তিনি আমাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করার চেষ্ট করলেন। বুঝলাম অন্যান্য সকল পরীক্ষার ফল পজেটিভ এখন বাকি শুধু মানসিক প্রস্তুতির সার্টিফিকেট। মনোচিকিৎসক যদি মনে করেন আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত না তবে আমার অপারেশন হবে না। আরও দেরি হবে। ডাক্তার আমাকে প্রায় শ’খানেক প্রশ্ন করলেন। আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীতে কার কী রোগ আছে, কারও কোনো জটিল অপারেশন হয়েছে কি না, কোনো খাবারে বা ওষুধে এলার্জি আছে কি না, ধূমপান করি কি না, মদ্যপান করি কি না, গত এক বছরে কোনো ড্রাগ নিয়েছি কি না, আগে কখনো আমাকে অজ্ঞান করা হয়েছে কি না, পরিবারের কাউকে কখনো অজ্ঞান করতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে কি না ইত্যাদি। আমি সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। অবশেষে হ্যান্ডশেক করে তিনি বললেন, শুভ কামনা থাকলো।
২৮ তারিখ সকাল ৭টায় কাঁধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে হাসপাতালে হাজির হলাম। ব্যাগে ৪/৫ দিন হাসপাতালে থাকার জিনিসপত্র। আগে থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, অপারেশনের আগের রাত ১২টার পর থেকে কিছু খাওয়া যাবে না। পানিও না। আমি তা-ই করেছি। না খেয়ে সময়মতো হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছি। আমাকে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে বলা হলো। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষার পালা আর ফুরায় না। এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, কেউ কোনো খবর নিলো না। বিরক্ত হয়ে এর মধ্যে দুইবার ভেতরে গেলাম। ওই একই কথা, অপেক্ষা করো। সময় হলে ডাকা হবে। মেজাজ আমার তিরিক্ষি হয়ে গেল। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে ভেতরে ডাক পড়ল। আমি ভেতরে যেতেই একজন অতিশয় ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। চেহারাটা বাংলা পাঁচের মতো করে বললেন, দুঃখিত আজ তোমার অপারেশন করা সম্ভব হবে না। তুমি বাসায় ফিরে যাও। পরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
একদিন পরেই হাসপাতাল থেকে ফোন এলো। জানানো হলো, জুনের ৫ তারিখ অপারেশন করা সম্ভব। আমি জানতে চাইলাম নিশ্চয়তা কতোটুকু? তারা আমাকে ৯৯ ভাগ নিশ্চিত করলেন। একভাগ রেখে দিলেন তাদের হাতে। ৫ জুন তারিখে সকাল ৮টায় হাসপাতালে হাজির হলাম। এবার খুব বেশি দেরি করতে হলো না। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে একটা ধবধবে সাদা বিছানা এবং একটা গাউন দিয়ে বলা হলো ওটা পরে বিশ্রাম করতে। আমি তা-ই করলাম। শরীরে তখন হাসপাতালের গাউন ছাড়া কিছু নেই। সাদা চাদরের বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিয়ে অনেক কিছু ভাবছি। জন্ম, মৃত্যু, জগৎ, সংসারসহ সবকিছু ভেবে ফেললাম এক মুহূর্তে। এই সব ভাবতে ভাবতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। সাদা পোশাক পরা একজন পুরুষ, একজন মহিলা আমার রুমে এসে বললেন, তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। কোথায়? ডাক্তারের কাছে। আমি কোনো কথা বললাম না। শুধু একটু হাসার চেষ্টা করলাম। তারা দু’জন আমার খাট (চাকাওয়ালা খাট) ঠেলে নিয়ে চললেন। লিফটে করে খাটসহ আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো গ্রাউন্ড ফ্লোরে। একটা বিশেষ রুমে নিয়ে খাট বদল করা হলো। এবার আমাকে ঢেকে দেয়া হলো হালকা নীল একটা চাদরে। ওই দুইজন আমাকে একজন পুরুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে বিদায় হলেন। পুরুষ লোকটাকে বেশ হাসিখুশি মনে হলো। তার কান মাথা পলিথিন জাতীয় টুপি দিয়ে মোড়ানো। হাতে গ্লাভস পরা। আমার মাথায় একটা টুপি পরিয়ে দেয়া হলো। কথা বলতে বলতে তিনি আমার বাম হাতের শিরায় ভোমরের মতো একটা সুই ঢুকিয়ে দিলেন। ব্যথায় কোঁত্ করে উঠলাম। বললেন, ব্যথার পর্ব শেষ। এর পর থেকে যা কিছু করা হবে তুমি কোনো ব্যথা অনুভব করবে না। তার কথা ঠিক হলো। ওই ছিদ্র দিয়ে তিনি আমাকে দুটো ইনজেকশন ও একটা স্যালাইন পুশ করলেন। আমি কোনো ব্যথা অনুভব করলাম না। একথা সে কথা বলে ১৫ মিনিট পার করলেন। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য এক রুমে। কল-কবজা দেখে বুঝলাম ওটা অপারেশন রুম। তিন জন মহিলা আমাকে ঘিরে ধরলেন। একজন আমার পায়ের তলা স্পর্শ করে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলেন। একজন দাঁড়িয়ে আছেন মাথার কাছে। তার হাতে অক্সিজেনের পাইপ। অন্যজন একটা ইনজেকশন পুশ করলেন। এবারও ব্যথা পেলাম না। শুধু মনে হলো দলা বাঁধা কিছু একটা আমার বুকের মধ্যে গড়াতে শুরু করলো। এরপর আমি আর কিছু জানি না। যখন ঘুম ভাঙলো দেখলাম কেউ একজন আমার পায়ের ওপর হাত রেখে আমাকে জাগাতে চেষ্টা করছেন। তখনো আমার মুখে অক্সিজেনের পাইপ। আমি কিছুতেই চোখ খুলে রাখতে পারছিলাম না। বারবার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কেউ একজন অনবরত আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাকে চোখ খুলে রাখার অনুরোধ করছিলেন। এভাবে কত সময় কেটেছে আমি জানি না। একপর্যায়ে অক্সিজেনের পাইপ খুলে নেয়া হলো। আমি পিটপিট করে তাকাতে শুরু করলাম।
আমাকে যখন রুমে ফিরিয়ে আনা হলো বেলা তখন দুইটা প্রায়। আমি খাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। বাঁ হাতে স্যালাইনের নল লাগানো। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। গজ দিয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। গলার কাছে কেমন একটা বাধা বাধা অবস্থা। মুখ শুকিয়ে চৌচির। একটু পানি খেতে চাইলাম। জানানো হলো পানি খাওয়া যাবে না, আরও অন্তত ৪ ঘণ্টা। কিছুই করার নেই। অসহায়ের মতো পড়ে আছি। স্যালাইন একটা শেষ হয় আর একটা লাগায়। এভাবে পরপর চারটা স্যালাইন শেষ হলো। স্যালাইনের নল খোলা হলো হাত থেকে। খুব সামান্য পানি খাওয়ার অনুমতি পেলাম। এর মধ্যে প্রচণ্ড রকমের মাথা ঘোরা নিয়ে প্রকৃতির ছোট ডাকে সাড়া দিতে বাথরুমে গেলাম দুইবার। সেবিকারা অবশ্য বিছানায় শুয়ে পটের মাধ্যমে ওটা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমি রাজি হইনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে এক বাটি স্যুপ দিয়ে গেল। ঢাকনা সরিয়ে দেখি বাটি ভর্তি পানি। অজু করার মতো স্বচ্ছ পানি। বাটির তলানিতে ক্ষুদ্রাকৃতির (ভাঙা চাল) কয়েকটা পাস্তা। বড়জোর ১০ থেকে ১৫টা হবে। চুমুক দিয়ে দেখি স্বাদ একেবারে মন্দ না। কিন্তু খেতে পারলাম না। গলার কোথায় যেনো বাধা বাধা লাগছিল। ওই রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। সারা রাত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থেকেছি। আধা ঘণ্টা পরপর একজন সেবিকা এসে দেখে গেলেন, কী করছি। কোনো কথা বললেন না। ভোরের দিকে তিনি আমার কানের মধ্যে কি যেন একটা ঢুকিয়ে দিলেন। জিজ্ঞাসা করলাম, কী করছো? বললেন, জ্বর মাপছি। এরপর যে ক’দিন হাসপাতালে ছিলাম প্রতি ছ’ঘণ্টা অন্তর একজন এসে জ্বর মাপতেন এবং ১২ ঘণ্টা অন্তর একটা ইনজেকশন দিয়ে যেতেন। হাতে ওই একবারই সুই ফোটানো হয়েছে। একই ছিদ্র দিয়ে ইনজেকশন দেয়া হতো। কোনো কিছু বুঝতে পারতাম না। এমনও হয়েছে, আমি ঘুমিয়ে আছি, সেবিকা ইনজেকশন দিয়ে চলে গেছেন, টেরও পাইনি।
আমার রুমে দুইটা বিছানা ছিল। একটিতে আমি অন্যটিতে জর্জ নামের একজন বয়স্ক ভদ্রলোক। মাঝখানে একটা পর্দা ঝুলানো। দুইজনের জন্য দুইটা টিভি। কানে এয়ারফোন লাগিয়ে শব্দ শোনার ব্যবস্থা। দুইটা আলমারি, দুইটা ছোট টেবিল এবং একটি বাথরুম। জর্জ-এর গলায় কি যেন একটা অপারেশন করা হয়েছে। প্রায় তিন ইঞ্চি কাটার চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যায়। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা জর্জ বেশ সজ্জন মানুষ। সারাক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলতেন। আমাদের ধর্ম, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার বেশ আগ্রহ তার।
প্রতিদিন সকালে একজন সেবক এসে দুপুরের, রাতের এবং পরদিন সকালের খাবারের অর্ডার নিয়ে যেতেন। স্যুপ, পাস্তা, মুরগির গোস্ত, গরুর গোস্ত, পনির, দই, আপেল, লেবু, কফি এগুলো খেতে দেয়া হতো। প্রতিদিন সকালে বিছানার চাদর, গায়ের চাদর, বালিশের কভার বদলে দেয়া হতো। সকাল ন’টার দিকে ডাক্তার এসে দেখে যেতেন। সেবিকারা সারাদিন ঘুরঘুর করতেন। কোনো কিছু দরকার হলে যতেœর সঙ্গে করে দিতেন। যেদিন আমার ব্যান্ডেজ খোলা হলো, দেখি একজন সেবিকা হুইল চেয়ার নিয়ে এসেছেন। বললাম, ওটা দরকার হবে না। সে বললেন, ব্যান্ডেজ খোলার পর তোমার মাথা ঘুরতে পারে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে।
হাসপাতালের বিছানায় যে ভয় এবং আশঙ্কা আমাকে চেপে ধরেছিল এবার সেটার কথা বলি। ২৮ মে তারিখে বাসায় যাওয়ার আগে আমি গিয়েছিলাম হাসপাতালের পাবলিক রিলেশন বিভাগে। সেখানে অভিযোগ করি, প্রায় দু’মাস আগে অ্যাপয়েনমেন্ট করেও বিনা চিকিৎসায় আমাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। তোমরা যদি এর বিহিত না করো বা সঠিক কারণ দেখাতে না পারো আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব। তারা আমার তিরিক্ষি মেজাজের মাত্রা মাপতে পারলেন খুব ভালো ভাবে। প্রথমে নিজেরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলেন এবং আমাকে হাসপাতালের প্রশাসনিক বড় কর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিলেন। ১০ মিনিটের মধ্যে বড় কর্তার সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিলেন। বড় কর্তার রুমে ঢুকতেই ৪০/৪৫ বছর বয়সের একজন ইয়াং কর্তা তার চেয়ার থেকে উঠে এসে আমাকে রিসিভ করলেন। তার সামনের চেয়ারে বসতে দিলেন। আমাকে কিছুই বলতে হলো না। তিনি খুব বিনয়ের সঙ্গে কথা শুরু করলেন, তোমার বিষয়টা আমি খোঁজ নিয়েছি এবং দুঃখ প্রকাশ করছি এমন একটা ঘটনা ঘটার জন্য। এরপর তিনি পুরো বিষয়ের ব্যাখ্যা করলেন, হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে নির্দিষ্ট পরিমাণে সিট থাকে। সেই অনুসারে সিট খালি হওয়া এবং নতুন রোগী ভর্তির প্রোগ্রাম করা হয়। কিন্তু গোল বাঁধে যখন কোনো জরুরি রোগী এসে পড়ে। আমরা বাধ্য হই কম জরুরি রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে বেশি জরুরি রোগীকে চিকিৎসা দিতে। তোমার বেলায় এমনটাই ঘটেছে। গত রাতে জরুরি বিভাগ থেকে দুজন রোগী পাঠানো হয়েছে ওই বিভাগে। আর এজন্যই আজ তোমাকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি। আমি বললাম, খুব ভালো কথা। কিন্তু তোমরা কেন আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানাওনি? তাহলে তো আমি এই ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে হাসপাতালে আসতাম না। আমাকে চার ঘণ্টা না খেয়ে বসে থাকতে হতো না। তিনি আবারও দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং কেন আমাকে জানানো হয়নি তা খোঁজ নেবেন বলে কথা দিলেন। তার ভদ্রতা এবং বিনয়ের কাছে আমি হার মেনে গেলাম। প্রায় রাগশূন্য হয়ে হাসপাতালের বাইরে পা বাড়ালাম।
ইতালির কোনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নগদ টাকা দিতে হয় না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে রোগীর ওষুধ, খাবার, চিকিৎসা সরঞ্জাম, সেবাযতœ সব কিছু দেয়া হয় সরকারি খরচে। রোগী বাসায় ফেরার পরেও যদি ওষুধ প্রয়োজন হয় তাও হাসপাতাল থেকে দিয়ে দেয়া হয়। রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরে তার চিকিৎসা খরচের বিল পাঠানো হয়। শিশু এবং বৃদ্ধদের চিকিৎসা এবং ওষুধ একদম ফ্রি। যারা নিয়মিত কাজ করে, ট্যাক্স প্রদান করে তাদের খরচ ওই ট্যাক্স থেকে নিয়ে নেয়া হয়। যারা নিয়মিত কাজ করে না, পর্যাপ্ত ট্যাক্স সরকারের খাতায় জমা নেই শুধু তাদের নামে খরচের বিল পাঠানো হয়। এক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা আছে। ধরে নেয়া যাক আমার চিকিৎসার জন্য বিল হয়েছে ৫০০ ইউরো। যা একসঙ্গে পরিশোধ করার সামর্থ্য আমার নেই। তাতেও কোনো সমস্যা নেই। মাসে ২০ ইউরো ৫০ ইউরো করে কিস্তি দেয়ারও সুযোগ আছে।
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9357#
২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
ভয়ংকর শিরোনামের লেখাটি অনেক কৌতূহল নিয়ে পড়লাম। ভালো লিখেছেন
ইটালির চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেবার বিষয়গুলো জেনে ভালো লেগেছে।
আমরাও ট্যাক্স দেই, কিন্তু কিছু পাচ্ছি না। নাগরিক অধিকার কী, সেটি উন্নত দেশে না গেলে বুঝতে পারা যায় না।
অনেক শুভেচ্ছা.... সুস্থ থাকুন প্রবাসে
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৩
পলাশ রহমান বলেছেন: হা হা.... শিরোনামটা কি খুব বেশি ভয়ংকর হয়ে গিয়েছে? ঠিক আছে, বদলে দিলাম।
কিছুই বলার নেই মাঈন ভাই, আমাদের দেশ তো আমাদের মতোই!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৮
দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: পলাশ ভাই আপনার শরীর কেমন আছে। আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৪
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ রথি ভাই। এখন ভালো আছি। ভালো থাকবেন।
৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪
তূর্য হাসান বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন। আর পড়া শেষে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম দেশের সঙ্গে তুলনা করে। ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৮
পলাশ রহমান বলেছেন: তূর্য ভাই, দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর কী করবেন? আমাদের চালকের আসনে সব বড় বড় ভন্ডরা বসে আছে।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৪৯
লিখেছেন বলেছেন: http://en.wikipedia.org/wiki/Septoplasty