নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুই নেত্রীর প্রতি এদেশের মানুষের রয়েছে অন্ধ সমর্থন, নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও তারা নেত্রীদ্বয়কে সমর্থন করে

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:০২

মাদার তেরেসা। একজন নারী, একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের কে না জানে এই নিবেদিত মানুষটির নাম? তার জন্ম মেসিডোনিয়ার এক অখ্যাত শহরে। জীবনের প্রায় পুরটা সময় কাটিয়েছেন ভারতের অধিকারবঞ্চিত মানুষের পাশে। অথচ গোটা দুনিয়ার মানুষ তার নাম জানে। তাকে শ্রদ্ধা করে, স্মরণ করে। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি একজন বঞ্চিত, অবহেলিত, দুস্থ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মানবিক প্রতিষ্ঠান হয়ে আছেন। মানবসেবা, সমাজসেবা, শিক্ষা, দারিদ্র্য ও দুস্থ অধিকার নিয়ে কাজ করে তিনি অর্জন করেছেন বিশ্বখ্যাতি। ১৯৬২ সালে ভারত সরকার তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে। এর পর থেকে একে একে আসতে থাকে পৃথিবীর সব শীর্ষ পুরস্কার এবং স্বীকৃতিগুলো। ১৯৭১ সালে তিনি ভ্যাটিকানের পোপ দ্বিতীয় জন পল এবং ১৯৭২ সালে জওহরলাল নেহরু পুরস্কার পান। ১৯৭৯ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ওই একই বছরে তিনি সেন্ট অব দ্য গাটার্স পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে আমেরিকার সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার মেডেল অব ফ্রিডম অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে তাকে বিশ্বের চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে ১৬ নম্বর অনারারি ইউএস সিটিজেনশিপ প্রদান করা হয়। জীবনকালে তিনি এমন আরও অনেক সম্মান এবং স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।

১৯১০ সালের ২৭ আগস্ট মেসিডোনিয়ার এক অখ্যাত শহর এসকপিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন মাদার তেরেসা। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্টান মিশনারিতে যোগ দেন এবং ১৮ বছর বয়সে ধর্মের দীক্ষা নিয়ে তেরেসা নাম গ্রহণ করেন। এর আগে তার নাম ছিল এগনেস বোজাক্সহিও। ছোট সময় থেকেই তিনি নিজেকে মানবসেবায় উৎসর্গ করার পরিকল্পনা করেন। একটি মিশনারি প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেন। সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত, দুস্থ নারীদের পাশে দাঁড়ানোর পণ করেন। তার স্বপ্ন এবং মনের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্য ডাবলিন থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি চলে আসেন ভারতে। সাত সমূদ্র তের নদী পাড়ি দেন ভারতের অবহেলিত, দুস্থ নারী, শিশুদের কল্যাণে কাজ করার জন্য। ১৯২৯ সালে তিনি কলকাতার সেন্ট মেরিস হাইস্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ওই স্কুলের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন।

১৯৩৭ সালে মাদার তেরেসা এইডস এবং কুষ্ঠ রোগীদের সেবা এবং সামাজিক মর্যাদা নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৬ সালে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকায় টিবি রোগীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি প্যারিস থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়ে অবহেলিত বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য ও সচেতনতার জন্য কাজ শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। ১৯৫০ সালে কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি ধর্মীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। ১৯৯৭ সাল নাগাদ ওই মিশনারিজের শাখা ভারতের ৫০টি স্থানসহ বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি বৈরুতের একটি হাসপাতাল থেকে ৩৭ জন যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুকে নিজের আশ্রয়ে নিয়ে আসেন এবং তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন ওই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি বিস্ময়কর এক মানবিক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি ৮৭ বছর বয়সে প্রয়াণ যাত্রা করেন।

পৃথিবীতে মাদার তেরেসার মতো আরও অনেক নিবেদিত মানুষ আছেন যারা মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োগ করেছেন। দুস্থ, অসহায়, অবহেলিত সমাজ সংসারের সেবা করে তারা বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছেন। নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজেকে সম্বল করে। দুনিয়াজুড়ে মানুষের কাছে তারা অনুসরণীয়, অনুকরণীয় হয়ে আছেন। এ লেখায় তাদের অনেকের কথাই বলা যেত। তাদের মানবিক কৃতকর্ম এবং খ্যাতির বর্ণনা দেয়া যেত। কিন্তু তাদের কথা না বলে মাদার তেরেসার প্রসঙ্গ অবতরণ করার প্রধান কারণ হলো তিনি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে বসবাস করেছেন। সেখানে আত্মমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছেন। দুনিয়াজুড়ে কোটি কোটি মানুষ তাকে মানবিকতার মডেল মনে করে। মাদার তেরেসার কীর্তি আমাদের দেশের অনেকেই খুব কাছ থেকে দেখেছে। তার জীবন-বাসন ছুঁয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে অনেকের। শুধু গল্প শুনে বা পত্রপত্রিকায় খবর পড়ে নয়, এখনো তার মানবিক অবদান নিজ চোখে দেখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমাদের দেশের যে কেউ ইচ্ছা করলেই তা দেখে আসতে পারেন। এজন্যে খুব বেশি দুরে যাওয়ার দরকার হবে না।

একজন মাদার তেরেসা হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে এসেছেন ভারতে। আপন ভিটা-মাটি ছেড়ে আস্তানা গেঁড়েছেন ভিনদেশে। ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন মানসিকতার মানুষদের তিনি আপন করে নিয়েছেন। মানবপ্রেম দেখিয়ে জয় করে নিয়েছেন সবার মন। তিনি যখন ভারতে এসেছিলেন তখন সঙ্গে করে কী নিয়ে এসেছিলেন? একবুক মানবপ্রেম ছাড়া আর কিছুই না। হাজার প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে তিনি মানবিকতার উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছেন। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্বজোড়া খ্যাতির শীর্ষে। মাদার তেরেসার দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে তিনি খ্যাতির পেছনে ছোটেননি, খ্যাতি ছুটেছে তার পেছনে। কারণ তিনি খ্যাতি অর্জনের মতো কাজ করেছেন। আমাদের দুই নেত্রী কি পারেন না এমন কাজ করতে, যে কাজের জন্য খ্যাতি তাদের পেছনে ছুটবে। বিশ্বজোড়া নাম হবে তাদের। মাদার তেরেসার মতো হরেক প্রতিকূলতার মোকাবেলা তো তাদের করতে হবে না, হয়নি। তারা তাদের বাবা এবং স্বামীর তৈরি করা চেয়ারে এসে বসেছেন। দেশের মানুষ তাদের বাবা এবং স্বামীকে যেমন ভালোবাসতেন, তেমনি ভালোবাসায় গ্রহণ করেছেন তাদের। তারা দীর্ঘদিন দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ চেয়ারে বসে আছেন। দেশের মানুষের অন্ধ সমর্থন রয়েছে তাদের প্রতি। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ হাজার নির্যাতনেও জনগণ তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়নি। তাদের ছেলে মেয়ে, আত্মীয়স্বজন সাধারণ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত। আর কী চান তারা? তারা কী পারেন না দেশে সুশাসন কায়েম করে নিজেদের খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যেতে? তাদের কী একবারও ইচ্ছা করে না- দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। দুর্নীতি, দুঃশাসন বন্ধ হোক। অবকাঠামগতভাবে দেশের মানুষ সত্যিকারের উন্নয়নের মুখ দেখুক। দেশের মানুষ আজীবন সম্মানের সঙ্গে তাদের স্মরণ করুক। বিশ্ববাসী জানুক বাংলাদেশের মতো একটি ঘুণেধরা সমাজকে বদলে দিয়েছেন দু’জন নারী। তারা গরিব অনুন্নত দেশটাকে বিনির্মাণ করেছেন। তারা বাংলাদেশে সুশাসন কায়েম করেছেন। একবারও কী তাদের ইচ্ছা করেন না ইতিবাচক কাজ করে খ্যাতির শীর্ষে পৌছাতে?

আমি ধরে নিচ্ছি রাজনীতি করতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধকতার মোকাবেলা করতে হয়। ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করা যায় না। তাই বলে দেশের উন্নয়ন করা যায় না? দেশের স্বার্থ রক্ষা করা যায় না? জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা যায় না? অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করা যায় না? এগুলো করা না গেলে রাজনীতি করার দরকার কী? স্বদিচ্ছা থাকলে বাংলাদেশে এগুলো করা যায় না, তা একদম ঠিক না। কারণ দুই নেত্রীর প্রতি এদেশের মানুষের রয়েছে অন্ধ সমর্থন। নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও জনগণ নেত্রীদ্বয়কে সমর্থন করে। দলে এবং সংসদে উভয় জায়গায় দুই নেত্রী একচ্ছত্র আধিপত্য ভোগ করেন। নেত্রীদ্বয় যা চান, যেভাবে চানÑ তা-ই হয়, সেভাবে হয়। তবু ধরে নিচ্ছি আপনাদের সদিচ্ছা আছে কিন্তু রাজনৈতিক কারণে পেরে উঠছেন না। এখনতো আপনাদের দু’জনেরই বয়স হয়েছে। দু’জনই দীর্ঘ দিন দলীয় প্রধান থেকেছেন। দেশ চালিয়েছেন। দেশের মানুষকে শাসন করেছেন। এদেশ থেকে নতুন করে পাওয়ার মতো আর কিছুই বাকি নেই। আপনাদের যোগ্যতা এবং দক্ষতার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছেন। দেশের মানুষ আপনাদের অনেক দিয়েছে। আপনারাও দিয়েছেন দেশের মানুষকে। এবার না হয় অবসর নিন। পৃথিবীতে এমন অনেক নজির আছে, এক সময়ের দুর্দান্ত রাজনীতিক রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। মানবসেবার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গেছেন। তখন খ্যাতি এবং ক্ষমতা দুটোই তাদের পায়ের কাছে লুটোপুটি করেছে। আপনারা দেশকে যা দেয়ার তা দিয়ে ফেলেছেন। নতুন কিছু দেয়ার সময় এবং সক্ষমতা এখন আর আপনাদের হাতে অবশিষ্ট নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিন। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় মনোযোগ দিন। রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায়, দল পরিচালনায় আপনাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। আগামী দিনের বাংলাদেশকে ইতিবাচক কিছু দিতে তাত্ত্বিক এবং মানবিক কাজ শুরু করুন। আপনাদের শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাত্ত্বিক লেখালেখি করুন। দুস্থ মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুন। অসহায় নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ান।

http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9543

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০১

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: শেখ সাহেব ও জিয়ার বেলায়ও অন্ধ সমর্থন ছিল; পরে দেখা গেছে, কাউকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি।


খালেদা ও শেখ হাসিনা সরে গেলে কুকুরও ওদের জন্য কাঁদবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.