![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইতালির জলকন্যা ভেনিসের লিদো দি ভেনেছিয়ায় উদযাপিত হলো ৭১তম বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসব। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩২টি দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে ২০১৪ সালের উৎসবে। এবারই প্রথম প্রবাসী বাংলাদেশি পরিচালক কাজী টিপুর চলচ্চিত্র ‘১৮+’ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শিত হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনযাপন, ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠা, তাদের চিন্তা-চেতনা, ভালোলাগা, মন্দলাগার গল্প নিয়ে নির্মিত এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন তারা কেউই পেশাদার শিল্পী নন। প্রায় সবাই জীবনের প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। ছবির কাহিনীতে দেখা যায় ইমরান নামের এক ছেলে শৈশব থেকে প্রাবাসী বাবা-মার সঙ্গে ইতালির মিলানো শহরে থিতু হয়। ধীরে ধীরে সে বড় হতে থাকে, এদেশের স্কুল কলেজে পড়ে, ইতালীয় বন্ধু-বান্ধবী তৈরি হয়। একসময় সে কারিনা নামের এক ইতালীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে। এদিকে ইমরানের বাবা-মা চান ছেলেকে বাংলাদেশি সংস্কৃতি, বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে ধরে রাখতে। দোটানায় পড়ে যায় ইমরান। ঘরের পরিবেশ এবং বাইরের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারে না সে। সে বুঝতে পারে না কোনটা তার আসল ঠিকানা। একসময় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ইমরান। এক রাতে পার্কের মধ্যে বসে বন্ধুদের সঙ্গে নেশা করার সময় সেখানে হানা দেয় ইতালীয় পুলিশ। ইমরানের অন্য বন্ধুরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ছবিটির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় ইমরান একটি নদীর কিনারে একা একা বসে একটা কাগজের নৌকা বানায়। নদীর পানিতে নৌকাটা ভাসিয়ে দিয়ে সে মনে করে এই নৌকাটার যেমন কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই, তার জীবনেরও সঠিক কোনো ঠিকানা নেই। তার মতো হাজার হাজার ইমরান প্রবাসে বেড়ে উঠতে গিয়ে দুই সংস্কৃতির মাঝে পড়ে দিক হারিয়ে ফেলছে। কোথায় তারা চলেছে, কোথায় তাদের শেষ ঠিকানা, তারা কেউ জানে না।
ছবিটিতে দেখা যায় ইমরানের বাবা একজন ব্যবসায়ী। তিনি সারাক্ষণ টাকার পেছনে ছোটেন। ছেলেমেয়েকে সময় দেন না। রাতে বাসায় ফিরে পড়ে থাকেন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের খবর নিয়ে। এ চ্যানেল থেকে ও চ্যানেলে যান আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। কোথাও ভালো কোনো খবর খুঁজে পান না। ইমরানের মা একজন পুরোদস্তুর গৃহিণী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে তার বিভিন্ন চাহিদার কথা মাকে জানায়। মা তা মেটাতে না পারায় সে অবাধ্য বেয়াড়া হয়ে ওঠে। মা কিছুই করতে পারেন না। বাবাকেও জানাতে ভয় পান। নীরবে চোখের পানি ফেলা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকে না।
মিলানো পৌরসভা এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত দেড় ঘণ্টার ছবিটি এর আগে ইতালির বিভিন্ন শহরের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রদর্শিত হয়েছে। সে সময় ব্যাপক প্রশংসার পাশাপাশি বেশ কিছু সমালোচনাও কুড়িয়েছেন পরিচালক। প্রবাসী কেউ কেউ মনে করে ছবিটিতে আমাদের প্রবাসীদের পারিবারিক সংকট এবং মাদকের ব্যবহার একটু বেশি মাত্রায় দেখানো হয়েছে, যা কিছুটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে মনে হয়েছে।
‘১৮+’ এ নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কারিনা নামে একজন ইতালীয় মেয়ে। এছাড়াও আরও অনেক চরিত্রে ইতালীয় শিল্পীদের দেখা যায়। ইমরান তার পরিবার এবং কমিউনিটির সঙ্গে বাংলায় কথা বলে, ইতালীয়দের সঙ্গে ইতালীয় ভাষায়। ছবিটিতে একই সঙ্গে দুটি ভাষার ব্যবহার এবং দুই সংস্কৃতির টানাপোড়েন দেখানো হয়েছে। ছবিটি চিত্রায়িত হয়েছে ইতালির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানোর বিভিন্ন স্থানে।
পরিচালক কাজী টিপু ইতালির বলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া এবং চলচ্চিত্র বিভাগ থেকে উচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন বছর খানেক আগে। ছাত্র অবস্থায় তিনি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে নির্মাণ করেন ‘লাভ লক প্যারিস’ নামের একটি টেলিফিল্ম। সেখানে ঢাকার ফজলুর রহমান বাবুসহ বেশ ক’জন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী অভিনয় করেছিলেন। ‘১৮+’ এসব নতুনদের দিয়ে অভিনয় করিয়ে কাজী টিপু তার শিক্ষা এবং দক্ষতা খুব ধারালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
‘১৮+’ সম্পর্কে পরিচালক কাজী টিপু বলেন, ‘ইমরান-কারিনাদের গল্পটা একটা সত্যি গল্প। বছর দুই আগে ইমরান নামের এক প্রবাসী ছেলেকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তার ভেতরের টানাপোড়েনগুলো আমার মনে দাগ কেটেছে। আমার মনে হয়েছে আমাদের প্রবাসী কমিউনিটির সচেতনতা বাড়ানোর জন্য হলেও বিষয়টি পর্দায় তুলে আনা দরকার। প্রবাসীরা যখন আমার ছবিটা দেখেছে তখন তাদের কাছে মনে হয়েছে তারা ছবি দেখছে না, আয়নার সামনে বসে আছে। আমি মনে করি এখানেই আমার সফলতা।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে কোনো বাংলাদেশি পরিচালকের ছবি ভেনিসের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়নি। আমার হাত ধরেই চলচ্চিত্রের এই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের ছবি প্রবেশ করল।’ টিপু বলেন, ‘আমার নির্মিত ছবিকে তো আমি ভালো বলবই। সুতরাং ছবি সম্পর্কে আসল এবং নির্মোহ মন্তব্য জানতে হলে দর্শকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে পরিচালক হিসেবে আমি বলতে পারি একেবারেই আনকোরা শিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করিয়েও আমি তৃপ্ত। আমার অনেক শুভাকাক্সক্ষী পরামর্শ দিয়েছিল দুই-একজন হলেও যেন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী নিয়ে কাজ করি। কিন্তু আমি নেইনি। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল আমি পারব এবং পেরেছি। তবে আরেকটু প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারলে ভালো হতো। বাজেট সংকটের কারণে যা আমি করতে পারিনি। প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিবেচনা করলে ভেনিসের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের মতো ছবি আমি বানাতে পারিনি। তবে ছবির গল্প এবং অন্য দিকগুলো এতই শাণিত হয়েছে যে, ভেনিসের ফিল্ম কমিশন একবার দেখেই আমার ছবিটি প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একজন নতুন পরিচালক হিসেবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। কানের পরই বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হলো ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভাল। এখানে আমার ছবিটি দেখাতে পেরে যেমন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারের প্রেজেন্ট করতে পেরেছি, তেমনি আমাদের প্রবাসীদেরও সম্মানিত করতে পেরেছি। গর্ব করার মতো আমাদের প্রবাসী কমিউনিটিতে কিছু নেই এমনটা যারা ভাবেন, তাদেরকে সেই জায়গা থেকে বের করে আনতে পেরেছি। পাশাপাশি আমার সাহস, উৎসাহ এবং উদ্দীপনা বেড়েছে পাহাড় সমান। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ বদলের দায়িত্ব বোধ করতে শুরু করেছি নিজের ভেতরে। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, আমি চলচ্চিত্রকে আমাদের ঘুণে ধরা সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাই। সুতরাং আগামীতে আরও ভালো কাজ আমাকে করতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘১৮+’ নিয়ে আগামী সপ্তাহে দেশে যাচ্ছি, ঢাকায় কয়েকটি প্রদর্শনী করার ইচ্ছা আছে এবং ভালো বিনিয়োগ পেলে এ বছরের শেষ নাগাদ নতুন কাজে হাত দেয়ার ইচ্ছা আছে।
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9604
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০০
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৭
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ফিল্মটি সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো । কাহিনী মোটেও অবাস্তব বা অতিরঞ্জিত মনে হয় নি ।
++++++++++++
ভালো থাকবেন