![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালির মিলানো শহরে এসেছিলেন গত ১৫ অক্টোবর। চার দিনের এ সফরে তিনি দুই দিনের এশিয়া-ইউরোপ শীর্ষ সম্মেলনে (আসেম) যোগ দেন এবং আওয়ামী লীগ ইতালি শাখার একটি সংবর্ধনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জো নাপোলিতানোর এক নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথাগতভাবেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় শ’খানেক দলীয় নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিক এসেছিলেন। মিলানোর বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা প্রধানমন্ত্রীর ইতালি আগমনের প্রতিবাদে দুই দিন সমাবেশ এবং মিছিল করেছে। প্রতিবাদকারীরা প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখায়।
দশম আসেম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এশিয়া এবং ইউরোপের ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা এসেছিলেন ইতালির বাণিজ্যিক নগর মিলানোয়। স্বাগতিক দেশ ইতালিসহ ইউরোপের প্রায় সব রাষ্ট্রপ্রধান দুই দিনের ওই সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। তারা ইউরেশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং সমন্বয়ের ভিত্তিতে উন্নয়নমূলক কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা সন্ত্রাস দমন, প্রযুক্তি বিনিময় এবং বাণিজ্যসহ বেশকিছু সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা সম্মেলনে যোগ দেন। তারা নিজ নিজ দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এবং এশিয়া-ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে একটি উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় কী বলেছেন, তা নিশ্চিত করে আমরা জানি না। তবে পররাষ্ট্রসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবদের বরাতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, কোনো দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপকে তিনি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেবেন না। বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং তার সরকারের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ধ্বংস করেতে সন্ত্রাসী, চরমপন্থি ও মৌলবাদীদের বর্বর কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন এবং তার সরকারের প্রতিরোধ বিষয়টি তুলে ধরেন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাস এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তিনি একটি কৌশল প্রণয়ন করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার নিন্দা জানান এবং কম কার্বন নির্গমন ও জলবায়ু সহনশীলতার প্রতি তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ব্যাপকহারে কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্গীকার পূরণেরও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আসেম শীর্ষ সম্মেলনে ঠিক কী কথা বলেছেন তা নিশ্চিত করে আমরা জানি না। না জানার কারণ হলো ইতালির কোনো টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের কোনো খবর প্রকাশ করেনি। সম্মেলনে তার বক্তব্য, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠকসহ কোনো খবরই ইউরোপীয় কোনো মিডিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি টিভিগুলোর সংবাদে আসেম সম্মেলনের খবর প্রচারের সময় কোনো টিভি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর একটিও ক্লোজআপ ছবি প্রকাশ করেনি। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। প্রায় সবগুলো মিডিয়া বেশ গুরুত্বসহকারে তার বক্তব্য প্রচার করেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের বরাত দিয়ে আমাদের দেশি মিডিয়াগুলো খবর দিয়েছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনছিসহ জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং জাপানের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একান্ত বৈঠক করেছেন। কিন্তু এসব বৈঠকের খবর বা ছবি ইউরোপীয় কোনো মিডিয়ায় প্রকাশ হতে দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিনোর রেনছি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ মিনিটের জন্য ফটোসেশন করার সময় দিয়েছিলেন। একইভাবে অন্য প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফটোসেশন করেছেন। ধারণা করা হয়, ওই সময় টুকটাক যা কথা হয়েছে সেগুলোকেই বৈঠকের আলোচনা বলে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও পররাষ্ট্রসচিবরা। রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মানে ইতালির রাষ্ট্রপতি জর্জো নাপোলিতানোর দেয়া নৈশভোজে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার প্রবাসী ভাগনি রুপন্তি। জানি না তিনি কোন প্রটোকলে সেখানে গিয়েছিলেন। ওই সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভøাদিমির পুতিন এবং রুপন্তি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি এবং আলাপের বিষয়বস্তুকে একান্ত বৈঠক বলে প্রচার করা হয়।
১৫ তারিখে মিলানোর মালপেনসা এয়ারপোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ইতালি আওয়ামী লীগের সদস্যরা যেতে চাইলে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রপ্রধানদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিমানবন্দরে যাওয়ার অনুমোতি দেয়নি। এদিকে আসেম সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে থেকেই মিলানো প্রবাসী বিএনপির কয়েক’শ সমর্থক জড়ো হয় সম্মেলন কেন্দ্রের নয় নম্বর গেটে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতালি আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগ দেয় লন্ডনের একটি প্রবাসী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে কালো পতাকা এবং জুতা প্রদর্শন করে। তারা বলতে থাকে, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী নয়, তিনি অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী, খুনি এবং প্রতারক। কোনো অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপ্রধানকে আসেম শীর্ষ সম্মেলনে ঢুকতে না দেয়ার জন্য অনুরোধ করে তারা বক্তৃতা দেয়। একই সময়ে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সমর্থক এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা থেকে আসা ক’জন নিরাপত্তাকর্মী সেখানে জড় হতে চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সমাবেশ বা মিছিল করার অনুমতিপত্র দেখতে চায়। তারা তা দেখাতে না পারলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৯ নম্বর গেট দিয়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশের কথা থাকলেও প্রশাসন তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক গেট পরিবর্তন করে এবং প্রধানমন্ত্রী এক নম্বর ভিভিআইপি গেট দিয়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করেন।
পরদিন ১৭ তারিখ দুপুরের আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর হোটেলের সামনে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়। তারা শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা হোটেলের সামনে কড়া নিরাপত্তা গড়ে তোলেন এবং বেশ কয়েক গাড়ি পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। বিকেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত হন সন্ধ্যার কিছু আগে। প্রধানমন্ত্রী যখন হোটেল থেকে বেরিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যান এর আগদিয়ে তার নিরাপত্তাকর্মীরা এবং ক’জন পুলিশ মিছিলকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে তাদের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং ওই সুযোগে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বেরিয়ে যায়, যাতে কোনো প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। মিলানোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেরিতে যোগ দেয়ার খবর সংগ্রহ করে ঢাকার একটি পত্রিকা তাদের মতো করে খবর প্রকাশ করে। ওই খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে তিন ঘণ্টা হোটেলে অবরুদ্ধ করে রাখে প্রবাসীরা। অবশেষে হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে সংবর্ধনায় যোগদান করেন তিনি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া ইতালি আওয়ামী লীগের আরও কিছু নেতা বক্তৃতা করলেও মূলত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য কাউকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা বাড়াবাড়ি রকমের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলায় আওয়ামী লীগের অনেকেই অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারেনি। এমনকি প্রবাসী সাংবাদিকদেরও অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। অনুষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের হাতে ছিল বলে মনে হয়নি। কোনো এক রহস্যজনক কারণে ওই অনুষ্ঠানে ইতালি আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইতালি আওয়ামী লীগের চেয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সর্ব ইউরোপ আওয়ামী লীগের প্রাধান্য বেশি থাকলেও সর্ব ইউরোপ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির একজন ইতালিপ্রবাসী নেতাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব নিয়ে অনেক দেনদরবার হয়েছে। একপর্যায়ে ওই নেতার সমর্থকরা রোমে মিটিং ডেকে সর্ব ইউরোপ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে ইতালিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই কিছু কিছু নেতাকে সামনে আসতে দেয়া হয়নি। এদের একজন হলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তাকে বক্তৃতা করতে দেয়া হয়নি। এমনকি তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন এই মর্মে কোনো ঘোষণাও দেয়া হয়নি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে অতিথিদের তালিকা থেকে সিদ্দিকুর রহমানের নাম বাদ দিতে বলেছেন। কারণ লতিফ সিদ্দিকী যখন আমেরিকায় বসে জয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তখন সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিকার করেননি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য নেতারা যথারীতি তাদের ছকবাঁধা বক্তৃতা করেছেন। বাংলাদেশি কায়দায় হিংসা, বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার বাইরে তারা কেউ বেরুতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা উজ্জ্বল করতে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার আদর্শ সমুন্নত রাখতে প্রবাসীদের অবদানের কথা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। তিনি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, এরশাদসহ আওয়ামী লীগ বিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখেন, যা প্রবাসীদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ বিভাজনকে আরও উস্কে দেয়। রাজনীতির নামে প্রবাসী কম্যুনিটিতে নোংরা দলাদলি করতে উৎসাহ জোগায়।
জানি না কেন বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বিদেশে এসে তাদের বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক বক্তৃতা করেন এবং কেন বিদেশি সম্মেলনে দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা তুলে ধরেন। এমতিনেই প্রবাসী কম্যুনিটি অনৈক্য এবং দলাদলিতে জর্জরিত। বিদেশিদের চোখে আমাদের রাজনৈতিক ইমেজ সঙ্কট প্রচণ্ড। এরপর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিদেশে এসে যখন রাজনীতির নোংরা ভাষায় কথা বলেন, হিংসা বিদ্বেষের কথা বলেন, বিদেশিদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাগুলো নগ্নভাবে তুলে ধরেন, তখন আর আমাদের কিছুই থাকে না। বিদেশিদের কাছে আমরা চরমভাবে অবমূল্যায়িত। কম্যুনিটিতে হিংসা বিদ্বেষ বেড়ে যায় শতগুণ।
প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ইতালির প্রবাসী সাংবাদিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, অধিকাংশ সাংবাদিককে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তারা অনুষ্ঠান কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলা হলেও জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক না থাকা বা বিভিন্ন সময় আওয়মী লীগবিরোধী খবর প্রকাশের অপরাধে তাদের প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা ঢাকা থেকে এসেছেন তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মী এবং সচিবরা ছাড়া প্রায় সবাই ঘুরে ঘুরে তাদের সময় পার করেছেন। তারা ইতালিতে আসার পরদিনই বাস ভর্তি করে ভেনিস ভ্রমণ করেছেন। রাজধানী রোমসহ বিভিন্ন শহরে তারা ঘুরে বেড়িয়েছেন। যার যেখানে পরিচিত প্রবাসী আছে তিনি সেখানে গিয়েছেন। প্রবাসীদের বাসায় থেকেছেন, খেয়েছেন এবং প্রবাসীদের টাকায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। এদের মধ্যে থেকে বড় একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশে ফিরে যাননি। তারা সেনজেন ভিসার সুবিধা নিয়ে ইতালি থেকে জার্মানি, ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বিদেশে গেলে সংবর্ধনা বা রাজনৈতিক মিটিং করা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিরোধীদের বিরোধিতা করাও যেন প্রথায় রূপ নিয়েছে। তাদের এই প্রথাগত সংবর্ধনা এবং বিরোধিতা অনেক সময় সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিদেশিদের কাছে প্রবাসী কম্যুনিটির ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের এক সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন। সে সময় নিউইয়র্কে তার আগমনকে স্বাগত জানাতে জেএফকে বিমানবন্দরে সমবেত হয় নিউইয়র্কে বসবাসরত আওয়ামী লীগের সমর্থকরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখাতে সেখানে জড় হয়েছিল বিএনপির সমর্থকরা। কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। সেদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রবাসী সমর্থকরা সেখানে ধান ভেনে ছিলেন। তাদের ধান ভানায় উভয় দলের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছিল। একইভাবে ২০১৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তাদের বিদেশ সফরের সময় ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রবাসীদের কালো পতাকা মিছিলের মুখে পড়েছিলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম কালো পতাকা দেখানো হয় টরন্টোয় এবং খালেদা জিয়াকে নিউইয়ার্কে। এছাড়াও দুই তিন বছর যাবৎ লন্ডনে বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিক গেলেই তাকে লাঞ্ছিত করা, গালাগাল করা, ডিম, জুতা ছুড়ে মারা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এত কিছুর পরেও আমাদের রাজনীতিকদের হুঁশ হয় না। তারা বিদেশে এসে দু’দিন অবকাশ যাপন করতে পারেন না। এখানেও তাদের রাজনৈতিক কামড়াকামড়ি করতে হয়। উল্লেখ্য, আসেম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এশিয়া-ইউরোপের ৫৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ইতালিতে এলেও শুধু আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সংবর্ধনা এবং প্রতিবাদের নামে কম্যুনিটিতে কুৎসিত রাজনীতি করা হয়েছে। যা অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের বেলায় দেখা যায়নি। এমনকি এশিয়ার অনেক দেশের বহু প্রবাসী ইতালিতে বসবাস করলেও তারা বাংলাদেশিদের মতো করে প্রবাসে রাজনৈতিক খোয়াড় খোলে না। তাদের নেতারা এলে আমাদের মতো করে নোংরা রাজনীতির বিষবাষ্প ছড়ায় না। জানি না কেন আমাদের দেশের নেতা-মন্ত্রীরা বিদেশে এসেও আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নেতা-মন্ত্রী হয়ে থাকেন! কেন তারা হতে পারেন না দেশের নেতা, দেশের মন্ত্রী!
আমার জানামতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি হলো প্রবাসে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। কিন্তু এ শর্ত বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কেউই মান্য করে না। তারা প্রায় প্রতিমাসেই কেউ না কেউ বিদেশে এসে তাদের রাজনৈতিক দলের নামে ব্যানার টানিয়ে বড় বড় মিটিং করেন। যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ তারিখে ইতালির মিলানোয় আওয়ামী লীগ ইতালি শাখার ব্যানার টানিয়ে সংবর্ধনা মিটিং করেছেন। নিয়মিত এসব খবর সচিত্র প্রকাশিত হয় সংবাদ মিডিয়াগুলোয়। কিন্তু আজ অবধি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাউকে কোনো কথা বলতে বা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের রাজনীতিকরা বিদেশে এসে দেশি কায়দায় রাজনীতি করে বিদেশিদের কাছে আমাদের জাতীয় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করছেন নিয়মিত, অথচ দেখার কেউ নেই। প্রতিকার করার কেউ নেই। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের আইন থাকার পরেও তারা বধির। কোথায় যাব আমরা? কোন গ্রহে গেলে নিস্তার মিলবে আমাদের?
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9704
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৯
পলাশ রহমান বলেছেন: হা হা হা... ঠিকই ধরেছেন!
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আমাকে গতকাল একজন বলছিলো প্রধানমন্ত্রী নাকি চট্রগ্রাম। আমি বললাম তাতে আমার কি !!! এই দেশে কোন সরকারই নাগরিকদের জন্য কিছু করেনি। যা করেছে নিজেদের জন্য। আপনার পোষ্টটা কষ্ট করে পড়ে মনে হচ্ছে সময় নষ্ট করলাম। আক্ষেপ থেকে বললাম। মাইন্ড কইরেন না।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৫
পলাশ রহমান বলেছেন: হা হা... লিখার পরে আমারও মনে হয়েছে, খামোখা সময় নষ্ট করলাম!
৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
তিক্তভাষী বলেছেন: বিদেশে বসেও এরা পরষ্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়িতে নিরস্ত হয়না। এতে একটা কথা অন্ততঃ পরিষ্কার। যারা এগুলো করে তারা আসলে কাদায় বসবাস করা প্রাণী। এদের চারপাশে কেবল পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ কাদাই আছে। তাই কাদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া অন্য কোনো কিছু করার কথা তাদের কল্পনাতেই আসে না।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:১৯
পলাশ রহমান বলেছেন: একটা কথা অন্ততঃ পরিষ্কার। যারা এগুলো করে তারা আসলে কাদায় বসবাস করা প্রাণী।
দারুণ বলেছেন, ধন্যবাদ
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৫
খেলাঘর বলেছেন:
আমাদেরগুলো রাজনীতি শিখেছে পাকিস্তানীদের কাছে; এগুলো চোর ডাকাত।
১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:৫৫
পলাশ রহমান বলেছেন: আমার মনে হয় আমাদের চেয়ে পাকিদের দেশপ্রেম বেশি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০১
নিষ্কর্মা বলেছেন: রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে ছবি দেখেই আমার মনে হয়ছিল আমাদের এই নারী নেত্রীর আসলেই কোন কাজ ছিল না। ঘোরাঘুরি করে বেড়িয়েছিলেন, এবং কাউকে পরিচিত মনে হলেই পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করেছেন।