![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাদের কাছে এতদিন বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা ও নদীভাঙনের দেশ হিসেবে, সময়ের চাকা ঘুরে আজ তারাই এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়েছে। খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি তুষারঝড়, পাহাড়ধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈরিতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। এর প্রধান কারণ হলো বিশ্ব জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন। আগে ইউরোপে যে পরিমাণে ঠাণ্ডা পড়তো, এখন তা পড়ছে না। আগে যে মাত্রায় গরম পড়তো, এখন পড়ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রকৃতি এখন কোনো নিয়ম-কানুন মানছে না। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার মাত্রা এতটাই বেয়াড়া হয়েছে যে, তা মোকাবিলা করতে ইউরোপ-আমেরিকাও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ ইতালির কয়েকটি শহরে সম্প্রতি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে জেনোভা নামক শহরে। সেখানে বন্যার ভয়াবহতা এবং ঝড়ের ক্ষিপ্রতা এতটাই ক্ষতিকর ছিল যে, স্থানীয় মেয়র সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, জেনোভাকে পুনর্গঠন করতে হলে ওই শহরকে আগামী তিন বছরের জন্য ট্যাক্সমুক্ত শহর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। মেয়রের এ দাবির সঙ্গে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলোও সুর মিলিয়েছে। মাত্র ৪০ ঘণ্টার বন্যা এবং ঝড়ে গোটা জেনোভা শহর লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। সরকার জেনোভাকে রক্ষা করতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। সারা দেশ থেকে সরকারি উদ্ধারকর্মী, নির্মাণকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবক পাঠাতে হয়েছে জেনোভায়। শহরের ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য সরকারিভাবে রেডিও-টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিয়ে সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এর পরে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শহরের মধ্যে রয়েছে লোমবারদিয়ার মিলানো। সেখানে প্রায় ৩ দিনের প্রবল বর্ষণ, বন্যা এবং পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে প্রায় আড়াই ফুট, কোনো কোনো জায়গায় আরও বেশি উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। ওই পানির ¯্রােতে একজন বৃদ্ধা মহিলা ভেসে যেতে শুরু করেছিলেন। উদ্ধারকর্মীদের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় তিনি কোনো মতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। সাগরের পানিতে ভাসমান শহর ভেনিসের অবস্থাও জবুথবু। শত শত বছর ধরে জোয়ারের পানি ভেনিসকে ডুবিয়ে দিলেও তা কোনো দিন বন্যার পর্যায়ে যায়নি। বরং জোয়ারের পানিকে এতদিন ভেনিসের প্রাকৃতিক বিনোদন হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু গত দুই তিন বছর যাবৎ জোয়ারের পানি আর বিনোদনের পর্যায়ে থাকছে না। তা পৌছে যেতে শুরু করেছে ব্যাপক জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী বন্যার পর্যায়ে। জোয়ার মোকাবিলায় ভেনিসবাসীর প্রাচীন প্রস্তুতি এখন আর ধোপে টিকছে না। ঘরবাড়ি অফিস দোকানে পানির অবাধ প্রবেশ প্রতিরোধে তারা প্রায় প্রতিদিনই ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ ইউরো গচ্চার মুখে পড়ছে তারা। এমনকি আবহাওয়ার পূর্বাভাসও ঠিক থাকছে না। প্রতিমুহূর্তে এত বেশিবার তা পরিবর্তন হচ্ছে যে সাধারণ মানুষের পক্ষে বুঝে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে চলতি বছর থেকে স্থানীয় পৌরসভা ভেনিসে বসবাসকারীদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে পানির উচ্চতা সম্পর্কে ফ্রি বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে।
নভেম্বর মাস শেষ। এ সময় ইতালির স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা হিমাঙ্কের নিচে। এ বছর এখনো তা হয়নি। অন্যান্য বছরে নভেম্বরের তাপমাত্রা শূন্য (০) ডিগ্রির নিচে থাকলেও এবছর তা হতে দেখা যায়নি। নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে শীত পড়েনি বললেই চলে। দিনের তাপমাত্রা ছিল কুড়ির উপরে। অন্যান্য বছর সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে যেমন ঠাণ্ডা পড়ে এবার নভেম্বরে তার চেয়েও কম ঠাণ্ডা পড়েছে। ইতালিতে সাধারণত সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে গাছের পাতা হলুদ রং ধারণ করতে শুরু করে এবং অক্টোবর শেষ হওয়ার আগেই সব গাছ ন্যাড়া হয়ে যায়। পাতামুক্ত ডালগুলো দাঁড়িয়ে থাকে কঙ্কলের মতো। তাতে জমাট বেঁধে ঝুলতে থাকে কামিনি ফুলের মতো থোকা থোকা শুভ্র তুষার। এ বছর তা হয়নি, নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ গাছের পাতা ঝরাতো দূরের কথা, হলুদ রং ধারণ করতেও দেখা যায়নি। এবছর অক্টোবর নভেম্বরে ইতালিতে যে পরিমাণে ভারী বর্ষণ হয়েছে গত ১০০ বছরেও তা হয়নি বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গ্রীষ্মের সময়ও আবহাওয়া পুরামাত্রায় অব্যাহত রেখেছে তার খামখেয়ালিপনা। অসময়ের ঠাণ্ডা এবং প্রবল বৃষ্টি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। সরকার আগের তুলনায় অনেক বেশি কৃষি ভর্তুকি দিয়েও বাজারে খাদ্যের দাম আগের জায়গায় ধরে রাখতে পারেনি।
এমন দৃশ্য শুধু ইতালির নয়, গোটা ইউরোপের দৃশ্যই এখন অভিন্ন। একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা, অন্যদিকে অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তনের চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় দেশের সরকারগুলো। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা মাপলক্রপ তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, জলবায়ু এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে ইউরোপের অনেক দেশের জনগণের মধ্যে গণঅসন্তোষ দেখা দিতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ঝুঁকি শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তারা বিশ্বের ১৯৮টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়েছে।
স্ইুজারল্যান্ডে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘আউটলুক অন দ্য গ্লোবাল এজেন্ডা ২০১৫’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে আগামী বছরের গুরুত্বপূর্ণ দশটি অর্থনৈতিক ইস্যুর তালিকা দেয়া হয়েছে। ওই তালিকায় বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘আয়ের বৈষম্য’ এবং বেকারত্বকে দেখানো হয়েছে দুই নম্বরে। এছাড়াও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, দুর্বল গণতন্ত্র, ভৌগোলিক প্রতিযোগিতা, পরিবেশ বিপর্যয়, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদনে যে আশঙ্কাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে এসবের গোড়ায় রয়েছে বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তন। তাদের মতে, আয়ের বৈষম্য, ভৌগোলিক প্রতিযোগিতা, বেকারত্ব, পরিবেশ বিপর্যয়সহ বর্তমান বিশ্ব অস্থিরতার মূলে রয়েছে অস্বাভাবিক বৈশ্বিক পরিবর্তন। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব বসন্ত নামে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গণঅসন্তষ সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছনেও রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিশেষ ভূমিকা। বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলের মানুষের চিন্তা চেতনা, চাহিদা, প্রত্যাশায় গণপরিবর্তন ঘটেছে। তাদের উৎপাদন এবং খাদ্য বাজারে প্রভাব পড়েছে। মানুষের মধ্যে হতাশা এবং বিষন্নতা ভর করেছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে রাজনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে হঠাৎ আলোড়ন। বন্যার পানি যেভাবে আচমকা ভাসিয়ে নিয়ে যায় জনপদ, তেমনি সেখানের রাজনীতিতেও হঠাৎ পটপরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে তারা টেকসই রাজনৈতিক অবকাঠামো তৈরি করার সুযোগ পায়নি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এই হাওয়া ইউরোপ-আমেরিকাকেও নাড়া দিয়েছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশের যুবক তাদের দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন চায়। বিশেষ করে তারা বর্ষীয়ান রাজনীতিকদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা মনে করে, বৃদ্ধরা নতুন করে দেশকে আর কিছু দিতে পারবে না। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য বয়স্কদের কাছ থেকে নতুন কোনো ‘পরিকল্পনা’ আসা সম্ভব নয়। তারা (যুবকরা) নতুন প্রজন্মের ক্ষমতায়ন চায়। ইতিমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানের পদ থেকে প্রবীণ রাজনীতিকরা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো ইতালি। সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন বয়সের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা চেতনায়ও যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, বিশ্বরাজনীতি যে বদলে যেতে শুরু করেছে, এগুলো তারই নমুনা।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আশির দশক থেকে পুঁজিবাদি অর্থনীতিতে ‘মুক্তবাজার’ নামে যে নতুন নীতি চালু করা হয়েছে তা আসলে কায়েমি অর্থনীতির একটি ছদ্মনাম। মুক্তবাজার নীতি গ্রহণ করে রাজনীতিবিদরা চেয়েছিলেন উন্নত দেশগুলো থেকে কল-কারখানা সরিয়ে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নিয়ে যেতে। এতে তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলেন। এক. তারা অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হবেন। দুই. উৎপাদন বর্জ্য দ্বারা সৃষ্ট তাদের দেশের পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে পারবেন। তাদের দুই নম্বর ধারণাটির বড় একটা অংশ বাস্তবায়ন হলেও এক নম্বরটি পুরামাত্রায় ব্যর্থ হয়েছে। অনুন্নত দেশে তারা কম খরচে পণ্য উৎপাদন করতে পারছে ঠিকই, কিন্তু বাজারে তার চাহিদা সৃষ্টি করতে পারছে না। কারণ উন্নত দেশগুলো থেকে কল-কারখানা অনুন্নত দেশে চলে যাওয়ায় উন্নত দেশের মানুষরা বেকার হয়ে পড়েছে। তারা নিত্যদিনের খাদ্য সংগ্রহ করতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে। গাড়ির মডেল পরিবর্তন করবে কীভাবে? অন্যদিকে কলকারখানা সরিয়ে নিজ দেশের পরিবেশ বিপর্যয় কিছুটা মন্থর করতে পারলেও অনুন্নত দেশগুলোতে জলবায়ুর বৈরিতা মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় ওই সব জায়গায় নেমে এসেছে বিভীষিকা। অনুন্নত দেশগুলোর জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় এখন উন্নত দেশ থেকে ঢালতে হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো, ডলার। ম্যাপলক্রপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং ব্যবসায়ী দ্বারা পরিচালিত বিশ্ব রাজনীতিকদের মুক্তবাজার অর্থনীতি এখন উন্নত দেশগুলোর গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে।
১৯৯০ সালে আমাদের দেশে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১-তে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। এর পর থেকে গত ২৩ বছর যাবৎ (দু’বছর বাদে) বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচিত-অনির্বাচিত সরকারের নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হলেও দেশের জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলায় তাদের কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। বরং গত ২৩ বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয় দখল এবং বন জঙ্গল, পাহাড় টিলা উজাড় করা হয়েছে। জনবসতি এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে কলকারখানা গড়ে উঠেছে। সেই মান্ধাতার যুগের মতোই এখনো গাছ পুড়িয়ে ইট পাকানো হয় ইটের ভাটাগুলোয়। কোনো কল-কারখানায় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয় না। যত্রতত্র বসানো হয়েছে গভীর নলকূপ। অন্যদিকে ভারত তাদের সুবিধামতো শতাধিক নদীতে বাঁধ দিয়েছে। এসবের বৈরী প্রভাবে আমাদের দেশের জলবায়ু এখন জ্বালামুখের মতো রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সরকার আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিশ্ব সম্মেলনে যোগ দিয়েছে, দিচ্ছে খুব এলোমেলোভাবে। তাদের কার্যক্রমে কখনোই কোনো সমন্বয় এবং গবেষণা ছিল না। তারা শুধু চেষ্টা করেছে দাতা দেশগুলোর কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু সাহায্য নেয়ার জন্য যে পরিকল্পনা, গবেষণা উপস্থাপনা এবং সমন্বয় থাকা দরকার ছিল, তা তারা কোনো দিনই দেখাতে পারেনি। তার পরেও যেটুকু যা সাহায্য এসেছে, আসছে তার কোনো সঠিক ব্যবহার এ পর্যন্ত হয়নি। মাপলক্রপ (আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা) বিশ্বের যে ১৯৮টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়েছে তার মধ্যে ৩২টি দেশকে তারা দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঝুঁকির শীর্ষে রেখেছে। ওই ৩২ দেশের প্রথমেই রয়েছে বাংলাদেশ। ১৩ নম্বরে ভারত, ১৯ নম্বরে মিয়ানমার ও ২৪ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রায় সব দুর্যোগই বাংলাদেশে আঘাত হানে। সুতরাং খাদ্য নিরাপত্তা এবং আবাস নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে প্রবল আকারে।
মাপলক্রপের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং অবকাঠামোগত ব্যর্থতার কারণে ৩০ বছরের মধ্যে ১০টি দেশে গণ-আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে। ওই ১০ রাষ্ট্রের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের দেশের সরকার যদি জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা এবং অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, আমাদের দেশেও আরব বসন্তের মতো গণ-অসন্তোষ থেকে গণ-পরিবর্তনের রণডংকা বেজে ওঠার আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এক সময় পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবাংলার কিছু অংশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হতো। এখন আর তা বলা যায় না। আমাদের দেশে এখন আর ছয়টি ঋতুকে আলাদা করা যায় না। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমরাও চার ঋতুর দেশে পরিণত হয়েছি। বন খেকো, নদী খাল বিল ঝিল পাহাড় দখলকারী এবং অতিব্যবসায়ীদের উৎপাতে আমাদের দেশে টিকতে পারেনি ছয় ঋতু। প্রতিদিনের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষের জিনেও পরিবর্তন আসছে।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্লাইমেটোলজিস্টরা বলেন, ‘হিউম্যান অ্যক্টিভিটি ইজ কজিং আওয়ার ক্লাইমেট টু চেঞ্জ’। বিশেষজ্ঞদের এ কথার বাস্তবতা হলো আজকের ঝুঁকিপূর্ণ পৃথিবী। জগতের আধুনিক লোভী মানুষরা তাদের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে গ্লোবাল ক্লাইমেটকে প্রতিদিন নিয়ে যাচ্ছে বিপজ্জনক পরিণতির দিকে। অতিদ্রুত পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাস উত্তপ্ত করে তুলছে বায়ুমণ্ডল। নিচে অতিরিক্ত গাড়ি এবং আকাশে হাজার হাজার বিমানের ব্যাপক চলাচলের ফলে বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ছে বিপুল ফসিল গ্যাস, যা বায়ুর ওজন এবং উষ্ণতা উভয়ই বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি অরণ্য ধ্বংস, কলকারখানার অতিমাত্রায় উৎপাদন বর্জ্য এবং দেশে দেশে সন্ত্রাস দমনের নামে ভারী বোমাবাজি জলবায়ুর ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। প্রভাবিত করছে ঋতুর সাধারণ চক্র। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টার্কটিকার ওজোন স্তরে বিশাল এক ছিদ্র দেখা দিয়েছে, যেখান থেকে সোলার রেডিয়েশন আঘাত হানছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ হিমশীতল গ্লোসিয়ারের গভীরতায়। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখন ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানের বরফ গলতে শুরু করা মানে ধীরে ধীরে পৃথিবী একটি জ্বলন্ত উনুনে পরিণত হওয়া।
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=9804
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ জেকলেট!
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
খেলাঘর বলেছেন:
" অনুন্নত দেশগুলোর জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলায় এখন উন্নত দেশ থেকে ঢালতে হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো, ডলার। "
-কত বিলিয়ন কোন অনুন্নত দেশ পেয়েছে? নাকি আপনি একা পেয়েছেন?
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫০
পলাশ রহমান বলেছেন: হা হা... আমি পাইলে তো খবর পাইতেন!
৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টে ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫২
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে!
৪| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৬
আজমান আন্দালিব বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্টে প্লাস।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৩৫
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আন্দালিব ভাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১৪
জেকলেট বলেছেন: +++