নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাড়ির টানে টানাটানি ১

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

ভোর চারটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট, তুর্কি এয়ারলাইনসের টিকে ৭১২ এয়ারবাসটির চাকা কচ্ছপের মাথার মতো শরীরের ভেতর থেকে পা বের করে দিলো। জানালা দিয়ে বাইরে দেখার প্রচণ্ড ইচ্ছা হলো আমার। কিন্তু তা সম্ভব হলো না। আমার আসন জানালার পাশে ছিল না। থাকলেও হয়তো বিন্দু বিন্দু আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যেত না। কারণ, শেষ রাতের অন্ধকারে তখনো আচ্ছন্ন হয়ে ছিল ঢাকার চরাচর। প্লেন যতই নিচের দিকে নামতে থাকল, আমার মনের ভেতরে এক ধরনের চাপ বাড়তে শুরু করল। যেন মেরুদণ্ড বেয়ে তিরতির করে ওপরে উঠছে ঠাণ্ডা পারদ, আবার নেমে যাচ্ছে। তক্ষুনি মনে হলো, জানালার পাশে বসতে না পেরে ভালোই হয়েছে। ওখানে বসলে ডিম্বাকৃতির ছিদ্রগুলো ঢেকে রাখা মোটা কাচ ভেদ করে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত পোড়া মাংসের বিকট গন্ধ। এই প্রথম জানালার পাশে বসতে না পেরে এক ধরনের স্বস্তি হলো নিজের ভেতর। প্লেনটি আমাদের নিয়ে শাহজালালের নির্দিষ্ট জায়গায় এসে থামল। আগে বহুবার দেখেছি, প্লেনের চাকা মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হাতে তালি দিয়ে চালককে অভিনন্দন জানিয়েছে অথবা নিজেদের খুশি প্রকাশ করেছে। এবার তা করতে দেখলাম না। কান খাড়া করেও তালি বা উল্লাস প্রকাশের একসুতো শব্দ শুনতে পেলাম না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রবাসীদের মধ্যে যে আতঙ্ক এবং অস্থিরতা কাজ করছে, তা স্পষ্ট বোঝা গেল। ছোপ ছোপ রক্তের মতো চোখে মুখে জমাট বাঁধল ঘাতক ভয়। নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারা না পারার আশঙ্কা অক্টোপাস হয়ে তাড়া করল সবাইকে। কে কার আগে প্লেন থেকে নামতে পারে, শুরু হলো হুড়োহুড়ি। যেন আগে নামলেই আগে ঘরে ফেরা যাবে। নাগাল পাবে না পেট্রলবোমাওয়ালারা।

প্লেন তখনও রানওয়েতে দৌড়াচ্ছে, চারপাশ থেকে ভেসে আসতে লাগল সিটবেল্ট খোলার টকাটক শব্দ। প্রায় অর্ধেক প্লেন উঠে দাঁড়াল একযোগে। মাথার ওপর থেকে হাতব্যাগ নামাতে শুরু করল। প্লেন সম্পূর্ণ থামার আগে সিটবেল্ট না খোলার অনুরোধ জানানো হলো বার বার। ঝুঁকির কথাও বলা হলো লাউডে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! কারও যেন তর সইছে না। কেউ কেউ প্লেন মাটিতে নামার আগেই মোবাইল ফোনে বাংলাদেশের সিম লাগিয়ে শুরু করলো ফোনাফুনি। প্লেন ওপরে ওঠা এবং নিচে নামার সময় মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের মারাত্মক ঝুঁকির কথা বার বার জানানোর পরও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ তা আমলে নেয় না। ফোনাফুনির দু’একজনের কথার অংশবিশেষ আমার কানে এলো, যা এখানে উল্লেখ না করাই ভালো। শুধু এতটুকু বলা যেতে পারে, অধিকাংশ কথাই আদরণীয়। একটু হালকা করে বললে বলতে হয়, পিতলা পিতলা কথা। ফোনাফুনিরা হয়তো একবারও ভাবে না তাদের এই পিতলা পিতলা কথার জন্য নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপদ। প্রিয় মানুষটার সঙ্গে কথা বলা বা তার মুখ দেখার সুযোগ বন্ধ হতে পারে চিরতরে। নিভে যেতে পারে জীবনপ্রদীপ।

উল্লেখ্য, প্লেন নামার সময়ের তাড়াহুড়ো নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশি যাত্রী বহনকারী প্রতিটি ফ্লাইটের দৃশ্য একই রকম। কেবিন কর্তৃপক্ষ শুধু হাত দিয়ে যাত্রীদের পা ধরে না, এর বাইরে যতভাবে অনুরোধ করা যায়, সব চেষ্টাই তারা করে, কোনো লাভ হয় না। আমার ধারণা, যদি সম্ভব হতো বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ না হতো কেবিন কর্মচারীরা যাত্রীদের পা ধরতেও দ্বিধা করত না। বাংলাদেশের যাত্রীরা প্লেন থামার আগেই প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। হাতব্যাগ নামায়। হুড়োহুড়ি করে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এটা যেন প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি এই হুড়োহুড়ির কারণ কী? প্লেন থেকে আগে নামলেই তো আগে যাওয়ার সুযোগ নেই। আরও কিছু নিয়ম কানুন রক্ষা করে, বুকিংয়ের ব্যাগ নিয়ে তার পরে বাইরে যেতে হয়। ইচ্ছা না থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। এয়ারপোর্ট দস্যুদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।

চলবে...



http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=10065

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: হুম..

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০২

পলাশ রহমান বলেছেন: মানে কী... ভালো না খারাপ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.