নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাড়ির টানে টানাটানি ২

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪২

মাত্র সকাল হতে শুরু করেছে, এয়ারপোর্ট কর্মচারীরা তখনও ঝিমাচ্ছে। মুখের সামনে হাত না এনেই বড় বড় হাই তুলছে কাতল মাছের মতো। ক’জনকে দেখলাম পুলিশের পোশাক পরা, হাতে ওয়্যারলেস সেট, পায়ে স্যান্ডেল পরে দিব্বি হেঁটে বেড়াচ্ছে। চোখে মুখে প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বলছে। এদের দু’একজনের প্যান্ট পায়ের টাকনু গিরা থেকে ভাঁজ করে ওপরের দিকে তোলা। তারা সম্ভবত ফজরের নামাজ পড়তে যাবে অথবা পড়ে এসেছে। ইমিগ্রেশন ডেস্কে যারা কাজ করছে, তারাও সমানে হাই তুলছে। প্রচণ্ড অনিহা নিয়ে কাজ করছে। কারও মুখে একরত্তি হাসির রেশ নেই। বরং ভয়ানক বিরক্তি আর তাচ্ছিল্যের ঘ্যাট থক থক করছে। কাজ করে তো করে না, নড়ে তো নড়ে না, এমন একটা ভাব। একেক জন যাত্রীর পেছনে ব্যয় করছে প্রায় পনের থেকে কুড়ি মিনিট। মাথা নিচু করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে এত সময় নিয়ে তারা কী করে, আমার জানতে খুব ইচ্ছা হয়, কিন্তু জানতে পারি না। পেছন থেকে একজনকে বলতে শুনি, ‘স্যারে মনে হয় কম্পিউটরের পাসওয়ার্ড ভুইল্যা গ্যাছে।’ সত্যিই তাই, স্যারদের কাজে কোনো গতি নেই। আস্তে ধীরে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে তারা কাজ করছে। এতগুলো মানুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, ক্লান্ত হয়ে দেশে এসেছে, তাতে স্যারদের কিছু এসে-যায় না। তারা তাদের কাজ করছে শামুক গতিতে ।
অফিসার লেভেলের সবাই ঝিমকাতর হলেও একদল কর্মীকে বেশ তৎপর দেখলাম। ঝাড়–দার থেকে শুরু করে গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো ওই কর্মীরা প্রত্যেকে হাতে একটা করে কলম নিয়ে ছোটাছুটি করছে। এদের দলে দুই-তিনজন পোশাকি পুলিশও দেখলাম। তারা প্রবাসীদের ইমিগ্রেশন কার্ড পূরণ করতে ব্যস্ত। যেসব যাত্রী প্লেনে বসে ওই কার্ড পূরণ করে এসেছে, তাদেরও এটা ঠিক হয়নি, ওটা ঠিক হয়নি বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কলম দেয়ার নামে, ইমিগ্রেশন কার্ড দেয়ার নামে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। এখানে ‘চেষ্টা’ বলা ঠিক হবে না, তারা রীতিমতো যাত্রীদের ‘বাধ্য’ করছে। ইমিগ্রেশন কার্ড নির্দিষ্ট যে জায়গায় থাকার কথা সেখানে নেই, সব ওদের পকেটে। বিদেশি টাকা না দিলে ওরা কার্ড বা কলম দেয় না। ওদের প্রকাশ্য তৎপরতা দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, প্রবাসীদের হয়রানি করার জন্যই ওখানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়। ওরা হয়তো ইমিগ্রেশন অফিসারদের প্রতিনিধি হয়েই কাজ করে। প্রবাসীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার ভাগ অফিসাররাও নেয়। ওদের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্যই ইমিগ্রেশন অফিসাররা শামুক গতিতে কাজ করে। তারা চেইন করে প্রবাসীদের নির্যাতন করে। ঢাকার এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের নির্যাতন করার প্রথম মহড়া শুরু হয় এখান থেকে, শেষ হয় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্ষুকদের দিয়ে।
আমি যে ডেস্কে ইমিগ্রেশন চেকের জন্য গেলাম ওই ডেস্কে কর্মরত পুলিশেরও চোখেমুখে বিরাট বিরক্তি দেখলাম। তার চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলাম- ‘খামোখা ঝামেলা করতে কেন আসেন বাংলাদেশে? বিদেশে আছেন, বিদেশেই পড়ে থাকেন। ওখানে বসে কামলা খাটেন আর দেশে টাকা পাঠান, আমাদের যন্ত্রণা দিয়েন না।’ পুলিশ মশাই আমার পাসপোর্ট আর ইমিগ্রেশন কার্ড হাতে নিয়ে সেই যে মাথা নিচু করলেন আর মাথা তোলেন না। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম, হায় হায় এখন কী হবে! ডানে-বাঁয়ে ফালুক-ফুলুক করতে থাকলাম। প্রায় দশ মিনিট পর তিনি মাথা তুললেন- আপনি খুলনায় থাকেন?
-জি, আমাদের বাড়ি খুলনায়।
খুলনা কোথায়?
-সোনাডাঙ্গায়।
আপনার বাবা কী করেন?
-এখন কিছু করেন না, বৃদ্ধ মানুষ।
আগে কী করতেন?
-ডাক্তার ছিলেন।
এমবিবিএস?
-হ্যাঁ।
কোথায় প্র্যাকটিস করতেন?
-সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন।
এখন ওনার বয়স কতো?
-৯৪ বছর।
এ পর্যায়ে এসে পুলিশ মশাইর দয়া হলো। তিনি জেরা বন্ধ করে আমার পাসপোর্ট ফেরত দিলেন। আমি তার জেরার মাথামুণ্ডু না বুঝে বললাম, থ্যাংকইউ স্যার। উত্তরে কিছু বলা বা সাধারণ ভদ্রতা করে একটা হাসি দেয়া তো দূরের কথা, আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না তিনি। পুলিশ মশাই যখন আমার পাসপোর্ট নিয়ে মাথা নিচু করে ছিলেন, ওই সুযোগে আমি ডানে-বাঁয়ে দেখার চেষ্টা করি। পাশের ডেস্কে তাকিয়ে দেখি, অফিসার মশাই কলা এবং রুটি খাচ্ছেন। তার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন যাত্রী। অফিসার মশাই তার মুখের কলা রুটি কচকচ করে চাবাতে চাবাতে বললেন, ‘কাজের চাপে সারা রাত মুখে কিছু দিবার পারি নাই, তাই একটু খায়া নিচ্ছি। কিছু মনে করিয়েন না।’ জানি না তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীটির কী করতে বা কী বলতে ইচ্ছা করেছিল, তবে আমার যা ইচ্ছা হয়েছিল তা এখানে লেখার অযোগ্য।

চলবে....

http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=10065

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.