![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক সময় অপেক্ষা করার পরে বুকিংয়ের ব্যাগ পাওয়া গেল। আমার দুইটা ব্যাগ নেয়ার জন্য একটা ট্রলি দরকার। কিন্তু ট্রলি পাই কোথায়? প্রায় সবগুলো ট্রলি গলায় আইডি কার্ডধারীদের দখলে। তাদের হাতে দু’চার পয়সা গুজে না দিলে ওগুলোর দখল পাওয়া খুবই কষ্টকর। পয়সার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিলে নিজের কোনো কষ্ট করতে হয় না। তারাই বেল্ট থেকে ব্যাগ তুলে, ট্রলি ঠেলে বাইরে যাওয়ার দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। পয়সা একটু বাড়িয়ে দিলে ব্যাগ গাড়িতেও তুলে দেয়। আমার ব্যাগ দুটি ট্রলিতে নিয়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছি, গলায় কার্ড ঝুলানো একজন এসে সামনে দাঁড়াল। ফিসফিস করে কী যেন বলল, বুঝতে পারলাম না। তাকে পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে আগাতে শুরু করলাম। আরেকজন ছুটে এলো, এবার বোঝার চেষ্টা করলাম সে কী বলতে চায়। ফিসফাস না করে সে সরাসরি বলল, ব্যাগে কিছু থাকলে বলেন, আমি পার করে দিচ্ছি। আমাকে ২০ ডলার দেবেন। আমি বললাম কিছু নেই, ধন্যবাদ। সামনে আগাতে শুরু করলাম। পেছন ফিরে দেখি সে হাল ছাড়েনি, আমার পেছনে পেছনে হাঁটছে। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না, ব্যাগে কিছু থাকা বলতে সে কী বুঝিয়েছে! আন্দাজ করে নিলাম, সে হয়তো আমাকে মিডলইস্টে থাকা প্রবাসী মনে করেছে। শুনেছি ওইসব দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা অনেক সময় ব্যাগের মধ্যে পুরে ইলেকট্রনিক সামগ্রী নিয়ে আসে। শুল্ক বিভাগকে এড়াতে তারা কার্ডধারীদের রিয়াল, রিংগিত দিয়ে পুলসিরাত পার হয়। আমি আগে কোনো দিন এমন কোনো ঝামেলার মুখোমুখি হইনি। ইউরোপীয় যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত গ্রিনচ্যানেল দিয়ে বিনা বাধায় বেরিয়ে গিয়েছি। গেল বছর যখন দেশে এসেছি তখনও বিনা বাধায় বেরিয়ে গিয়েছি, কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি। এবার দেখলাম ভিন্ন চিত্র। যাত্রীদের বের হওয়ার মুখে একটা স্ক্যান মেশিন পাতানো হয়েছে। নির্বিশেষে সব যাত্রীর ব্যাগ-পেটারা স্ক্যান করা হচ্ছে।
আমার হাতে তখন ব্যাপক সময়। পেট্রলবোমায় পুড়ে মরার ভয়ে আগে থেকেই ডমেস্টিক ফ্লাইটের টিকেট করে রেখেছি। যশোর যাওয়ার ফ্লাইট ছাড়তে তখনো সাড়ে চার ঘণ্টা বাকি। আমি এবার ঝিমকাতর অফিসারদের মতো শামুক গতিতে আগাতে শুরু করলাম। আমার সময়ও কাটতে থাকল, ওখানের যাত্রী নির্যাতনও অবলোকন করতে থাকলাম। কিছু যাত্রীকে দেখলাম ব্যাগ-বোঁচকার স্ক্যান ছাড়াই বেরিয়ে যাচ্ছে আইডিধারীদের সহযোগিতায়। কিছু যাত্রী ওখানে দাঁড়িয়েই দেন-দরবার করছে। বাকি সবার ব্যাগ মেশিনে স্ক্যান করা হচ্ছে। কিছু কিছু ব্যাগের উপর স্ক্যানকারীরা চক দিয়ে সাংকেতিক কিছু লিখে দিচ্ছে এবং যাত্রীকে অন্য একটি ডেস্ক দেখিয়ে বলা হচ্ছে সেখানে যেতে। আমার ব্যাগে তারা চকের আঁচড় না দিলেও আমি ওই ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডমেস্টিক ফ্লাইটের জন্য কোন দিয়ে যেতে হবে, ওয়াশরুম কোন দিকে, এটা-সেটা জিজ্ঞাসা করে আমি সময় পার করতে থাকি।
ওই ডেস্কে দু’জন শুল্ক অফিসার বসে আছেন খাতা কলম নিয়ে। প্রবাসীদের সঙ্গে খেক-খেক করে কথা বলছেন। কারও কারও সঙ্গে তুই তুকারিও করতে দেখলাম। ওখানে গিয়ে বুঝতে পারলাম, কোন ব্যাগে ক’বোতল মদ আছে চক দিয়ে সেই সংকেত লিখে দিয়েছে স্ক্যানওয়ালারা। শুল্ক মশাইরা বোতল প্রতি ১০ থেকে ২০ ডলার করে দাবি করছেন। যারা তাদের চাহিদামতো টাকা দিচ্ছে, তাদের ব্যাগ খোলার দরকার হচ্ছে না। টাকা দিয়ে তারা বিনা বাধায় চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ টাকার অঙ্ক নিয়ে মলামলি করছে, তর্ক করছে। কোনো কোনো প্রবাসী কথা খরচ না করে মদের বোতল রেখে চলে যাচ্ছে। বোতল রেখে শুল্ক মশাইরা একটা রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, যখন ফিরে যাবেন তখন রসিদ দেখিয়ে আপনার বোতল নিয়ে যেতে পারবেন। একজন প্রবাসী তাদের কাছে জানতে চায়, রসিদে লিখেছেন এক বোতল মদ। ফেরত দেয়ার সময় বুঝবেন কী করে কোনটা আমার মদ? আপনারা তো ব্রান্ডের নাম লিখছেন না। এখানেতো হরেক রকম ব্রান্ড রয়েছে। তারা এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি, চুপ করে থেকেছে। তারা হয়তো জানে, ফিরে যাওয়ার সময় এই বোতলের জন্য কেউ আসবে না, দু’একজন এলেও খোঁজার নাম করে তাকে ঘণ্টাখানেক বসিয়ে রাখলে সে এমনিতেই চলে যেতে বাধ্য হবে। সুতরাং ওগুলো ফেরত দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। একজন যাত্রী জানতে চাইলেন, এয়ারপোর্টে ডিউটি ফ্রি মদের দোকান আছে, বাইরে বার আছে, এর পরেও মদ নিয়ে দেশে ঢোকা যাবে না কেন? কোথায় লেখা আছে? কোন আইনের বলে আপনারা এগুলো রেখে দিচ্ছেন? কর্মরত অফিসার আঙুল তুলে দেয়ালের ঝুলন্ত তালিকা দেখিয়ে বললেন, ওখানে সব লেখা আছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম ডিজিটাল প্রিন্ট করা ওই তালিকায় মদের কথা উল্লেখ নেই। তারা এ.ফোর সাইজের একটা সাদা কাগজে লিখে দেয়ালে সেঁটে রেখেছে, বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা মদ নিয়ে যেতে পারবে না। বুঝতে অসুবিধা হলো না, শুল্ক মশাইরা নিজেদের সুবিধার জন্যই ওই কাগজ আলাদা করে ঝুলিয়েছে।
শুল্ক মশাই এবং মদ বহনকারী যাত্রীদের সার্কাস দেখে আমার সময় ভালোই কাটছিল। এর মধ্যে শুল্ক মশাইদের দুই চ্যালা এসে দুইবার আমাকে তাগিদ দিয়ে গেল, কোনো কাজ না থাকলে চলে যান। আমি একথা ওকথা বলে তাদের সঙ্গে খাতির জমিয়ে আরও কিছু সময় ওখানে পার করার চেষ্টা করি। এর মধ্যে ঘটে এক মজার ঘটনা। ইতালি থেকে আসা এক ভদ্রলোকের ব্যাগে দুই বোতলের চিহ্ন একে পাঠানো হয়েছে শুল্ক মশাইদের কাছে। মশাইরা জানতে চান তার ব্যাগের মধ্যে কী আছে? ভদ্রলোক খুব সাধারণভাবে উত্তর দেন, আপনারা আটকাতে পারেন এমন কিছু আমার ব্যাগে নেই। মশাইরা বলেন, আপনার ব্যাগ খুলতে হবে। ভদ্রলোক বলেন, কেন?
-আপনার ব্যাগে দুই বোতল মদ আছে।
ভদ্রলোক উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমার ব্যাগে মদ বা ওই জাতীয় কিছুই নেই।
মশাইরা নাছোড়, ব্যাগ তাকে খুলতেই হবে। এর মধ্যে মশাইদের এক চ্যালা এসে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু একটা বলল। ভদ্রলোক কোনো পাত্তাই দিলেন না। তিনি ব্যাগ খুলে দিলেন। ব্যাগের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দুটি মাঝারি সাইজের বোতল। মশাইদের গলার খেক-খেকানি এবার বেড়ে গেল। চেহারা দেখে মনে হলো তারা ব্যাগ ভর্তি সোনার বার আবিষ্কার করেছেন। তারা ভদ্রলোকের পাসপোর্ট চাইলেন। ভদ্রলোক বললেন, কেন? একজন মশাই চটে গিয়ে বললেন, আপনি মদ এনেছেন, আবার বলছেন কেন? আপনাকে তো জরিমানা করা উচিত। ভদ্রলোক এবার হেসে ফেললেন। তিনি বললেন, বোতলের গায়ে কী লেখা আছে পড়ে দেখেন। ওগুলো মদ না, ইতালিয়ান অলিভের তেল। তিনি মশাইদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনো ভাবেই তারা বুঝতে গররাজি। ভদ্রলোক বললেন, কাচের বোতল দেখলেই মদ ভাবা ঠিক না। আপনারা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে কাজ করেন। আপনাদের দক্ষতা, বিচক্ষণতা আরও বেশি থাকা উচিত। একথা শুনে মশাইরা আরও তেতে উঠলেন। গলার খেক চড়িয়ে বললেন, কোনটা উচিত আর কোনটা অনুচিত আপনার কাছে শিখতে হবে? ধীরে ধীরে পরিবেশটা ঘোলাটে হতে শুরু করল। ভদ্রলোক বললেন, আপনাদের নেমপ্লেইট কোথায়? আমি আপনাদের নামে মানহানি এবং হয়রানির মামলা করব। এর মধ্যে মশাইদের অন্য দুই সহকর্মী এগিয়ে এলেন। তাদের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হতে শুরু করল। আমি পা বাড়ালাম ডমেস্টিক লবির দিকে।
চলবে....
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=10087
০৫ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:২৩
পলাশ রহমান বলেছেন: বেশ বলেছেন.... আমাদের পকেট ফুটো, তাই ব্যাগ দু হাতে দুটো!!!
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:০৭
কেএসরথি বলেছেন: খুবই ইন্টারেস্টিং। যারা বিপদে পড়ে, তাদের জন্য নয় - কিন্তু আমাদের জন্য।
০৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬
পলাশ রহমান বলেছেন: ভালোই বলেছেন, যারা বিপদে পড়ে তাদের জন্য নয়!
৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৩:৫৪
আমি সামুর ভ্ক্তু বলেছেন: চলুক.......................
০৭ ই মে, ২০১৫ ভোর ৪:১১
পলাশ রহমান বলেছেন: চলছে... চলবে....
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:০২
আবদুর রব শরীফ বলেছেন: আমাদের পকেট ফুটো, তাই ব্যাগ দু হাতে দুটো!!!