নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাড়ির টানে টানাটানি ৬

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৫

ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে পৌছাতেই গলায় তক্তা ঝুলানো (আইডি কার্ড) দু’জন এসে হাজির হলো। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কোথায় যাবেন? বললাম, যশোর।
টিকেট করেছেন?
-হ্যাঁ করেছি।
এবার তারা আমার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার ব্যাগের ওয়েট তো বেশি হবে। বললাম, কিছুটা হয়তো হবে।
কিছুটা না, অনেক বেশি হবে। তারা কোনো রাখঢাকা না করে বলল, আপনি আমাদের দুই হাজার টাকা দেন, আমরা আপনার ব্যাগ বুকিং করে দিচ্ছি।
-বুঝলাম না, পরিষ্কার করে বলেন।
এবার তারা নিজেদের মধ্যে একদফা চোখাচুখি করে বলল, আপনি যদি কাউন্টারে গিয়ে আপনার ব্যাগ বুকিং করেন তবে চার হাজার টাকা লাগবে। আমাদের কাছে দিলে অর্ধেক টাকায় করে দিতে পারব। আমি তাদের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। পেছনে না ফিরেই বুঝতে পারলাম তারা গজগজ করছে। হয়তো গালাগালও করেছে। কাউন্টারে দুই যুবক এবং এক যুবতীকে দেখলাম। যথেষ্ট আন্তরিক এবং মানুষকে সম্মান দেখানোর মতো শিক্ষিত মনে হলো তাদের। মোটামুটি সহজেই সেখানের কাজ সম্পন্ন হলো। বডিংপাস নিয়ে ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলাম। রাজ্যের খিদে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। মনে হলো আকাশ জমিন ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু খাওয়ার উপায় নেই, অনেক দিন পরে দেশে এলে প্রথম ক’টা দিন একটু সামলে চলতে হয়। নয়তো ডাক্তার বাড়ি দৌড়া-দৌড়ির দরকার হতে পারে। দু’চার দিন গেলেই পাকস্থলী আবার আগের জায়গায় চলে আসে। সে খুঁজে পায় পুরনো স্বাদ। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথাগুলো মনে হলো। হাত ব্যাগের পকেট থেকে চকলেট বের করে মুখে পুরলাম। প্রচণ্ড খিদের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার খুবই উপাদেয় হয়। আমাকেও উপাদান দিল। পেটের উথাল-পাতাল কিছুটা মন্থর হলো। এ রকম হয়েছিল ভেনিস থেকে আসার সময়। প্লেনে উঠে বসতেই ভয়ানক খিদের কবলে পড়ে গেলাম। তখনো প্লেন ছাড়েনি, কিছু চেয়ে খাওয়ারও সুযোগ নেই। লজ্জা-শরম ছেড়ে সহযাত্রীকে বলে ফেললাম খিদের কথা। সে কিছুটা ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিল। মনে মনে বললাম, ব্যাটা তুমিও তো দেখি আমাদের রাজা-রানীদের উপদেষ্টাদের মতো। আমাদের কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যদি লোকসান করে তবে উপদেষ্টারা রাজা-রানীদের উপদেশ দেন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিতে। যেমন লোকসানের দায় মাথায় নিয়ে ক’দিন আগে রোম-ঢাকা রুটের বাংলাদেশ বিমান সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ রোম থেকে প্রতিদিন অন্যান্য এয়ারলাইনসের চারটি ঢাকামুখী প্লেন উড়াল দেয়। তারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে। এসব প্লেনের প্রায় ৭০ ভাগ যাত্রীই অভিবাসী বাংলাদেশি। অথচ আমাদের নিজ দেশের এয়ারলাইনস লোকসান করে আর উপদেষ্টারা উপদেশ দেন তা বন্ধ করে দেয়ার জন্য। আমি একটা বিষয় কিছুতেই বুঝতে পারি না, লোকসান করা প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ করেই দিতে হবে তাহলে উপদেষ্টার দরকার কী? বন্ধ করার বুদ্ধিতো বোকাদেরও থাকে।
প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পর কেবিন কন্যারা তুর্কির এক ধরনের ট্রেডিশনাল চকলেট নিয়ে এলো। আমার সহযাত্রী বলল, তুমি দুইটা নেও, সে নিজেও দুইটা নিল এবং তার দুইটা আমাকে দিয়ে দিলো। চারটা তুর্কি মিঠাই (চকলেট) খেয়ে পেটের উৎপাত থেকে অনেকটা রেহাই পেয়েছিলাম। ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তুর্কি থেকে আসার সময় কিছু চকলেট কিনে হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম, যা আমাকে ঢাকার ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে আরেকবার হেফাজত করলো প্রলঙ্কয়কারী ক্ষুধার কবল থেকে।
প্লেন ছাড়তে আধা ঘণ্টা দেরি হবে। যশোরের আকাশে তখনো নাকি ঘন কুয়াশা। আমি ওয়েটিং রুমে আগের মতোই বসে আছি। কোনো ভাবলেশ নেই। ক্লান্ত চোখে খেয়াল করি আমার থেকে দুই-তিন সারি আগের সিটে ওই মেয়েটা এবং তার বাবা বসে আছে, যারা ইস্তাম্বুল থেকে ছেড়ে আসা প্লেনে সকল প্রকার ভদ্রতার মাথা খেয়ে আমার আসন দখল করে রেখেছিল। তারাও ঘাড় ফিরিয়ে আমাকে দেখল। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। বিরক্তিতে আমার শরীর গুলিয়ে উঠল। আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না তাদের অভদ্র আচরণ। বারবার মনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছিল একটা প্রশ্নÑ উন্নত বিশ্বে এত দিন থেকে আমরা কী শিখলাম? বলা নেই- কওয়া নেই, নিজের সুবিধামতো অন্যের সিটে বসে পড়া যায়? অন্যের সিট দখল করে বলা যায়, আমি বা আমার মেয়ে এখানে বসতে চাই! এটা কোনো ভদ্রতার মধ্যে পড়ে? তারা যে দেশে থাকে ওই দেশের কাউকে কি কখনো দেখেছে এমনটা করতে? ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়ার কোনো নাগরিক হলে কি এভাবে অন্যের জায়গায় বসে পড়ত? তাহলে কী শিখলো এত দিনে? শুধু টাকাই রোজগার করল, আর কিছু রোজগার করতে পারল না? মানুষের সুবিধা-অসুবিধা থাকতেই পারে, সিট বদল করা যেতেই পারে, তারও তো একটা নিয়ম কানুন আছে। সাধারণ ভদ্রতা বলে একটা শব্দ আছে। ওয়েটিংরুমে তাদের দেখে আরও একটা দৃশ্য মনে পড়ে গেল- ঢাকা এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন চেক শেষ করে বুকিংয়ের ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করছি। মোটামুটি একটা ভিড় লেগে আছে সেখানে। গায়ে মাথায় লম্বা-চওড়া এক লোক তার পাশে দাঁড়ানো এক ছেলেকে হড়বড় করে কী যেন একগাদা জিজ্ঞাসা করল ইংরেজিতে। ছেলেটা খুব বিনয়ের সঙ্গে উত্তর দিলোÑ ভাই, আমি ইংরেজি বুঝি না। ছেলেটার কথা শুনে লোকটা রীতিমতো ক্ষেপে উঠল। মনে হলো ইংরেজি না জানা বিরাট কোনো অপরাধ। সে গলার স্বর উচু করে ছেলেটাকে বলল, কী বোঝেন? প্রমিত বাংলা বোঝেন? আসেন প্রমিত বাংলায় কথা বলি। আমরা যারা আশপাশে ছিলাম, সবাই লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হলো। ছেলেটার চেহারায় ফুটে উঠল চরম রকমের তাচ্ছিল্য। মনে হলো ওই লোকটার কথার উত্তর দিতেও তার রুচিতে কুলালো না। সে একটু দূরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল তার ব্যাগের জন্য। তখনো লোকটার মধ্যে সামান্যতম বোধদয় দেখলাম না। সে বেত্তমিজের মতো একথা সেকথা বলতেই থাকল।
(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:২১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তাহলে কী শিখলো এত দিনে? শুধু টাকাই রোজগার করল, আর কিছু রোজগার করতে পারল না?

মৌলিক প্রশ্ন!

আসলেই- আমাদের চেতনার বিষ গুলো বুঝি ওদের নিয়েমর করাকাষ্টে চেপে চুপে রাখি-- যা সুযোগ পেলেই লাফীয়ে বেরিয়ে আসে;)

দু:খজনক!

০৯ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫১

পলাশ রহমান বলেছেন: আমাদের চেতনার বিষ গুলো বুঝি ওদের নিয়েমর করাকাষ্টে চেপে চুপে রাখি-- যা সুযোগ পেলেই লাফীয়ে বেরিয়ে আসে!

দারুণ বলেছেন।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:৩৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: পড়তে খুব ভালো লাগছে! আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম,

০৯ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৩৭

পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.