![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সুস্থ সবল একজন মানুষ। লম্বা জার্নি করে কিছুটা ক্লান্ত। তার পরেও মনে হলো এখন যদি ম্যারাথন হয় যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত দৌড়ে চলে যেতে পারব। অথচ আমাকে চড়তে হলো এম্বুলেন্সে। এদেশের অর্থনীতির অক্সিজেন হলো প্রবাসীরা। আমিও একজন প্রবাসী। এতদিন পর নিজের দেশে ফিরে বাড়িতে যেতে হচ্ছে এম্বুলেন্সে চড়ে। খুব অপমান বোধ হলো নিজের ভেতরে। বিষয়টা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। সুস্থ সবল একজন মানুষ দেশে ফেরার পর নিজের পরিবারের কাছে যেতে হচ্ছে এম্বুলেন্স ভাড়া করে। এর চেয়ে লজ্জার, অপমানের, অসম্মানের আর কী থাকতে পারে! হায়রে দেশ, হায়রে রাজনীতি, হায়রে নির্বাচন, হায়রে গণতন্ত্র, করুণা ছাড়া আর কিছু খুঁজে পেলাম না তোমাদের জন্যে।
আমাদের সঙ্গে ছিলেন খুলনার একজন প্রবীণ সাংবাদিক। তিনিও এসেছিলেন এয়ারপোর্টে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার সঙ্গে অনেক কথা হয়। ৫ তারিখের ভোটারবিহীন নির্বাচন, গত এক বছরে বিএনপির বড় কোনো আন্দোলনে না যাওয়া, আন্দোলনের মুরোদ নেই বলে সরকারের উস্কানি দেয়া, আন্দোলন দমনের নামে গুলি করে মানুষ হত্যা করা, অপরদিকে রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষ হত্যা করা, দেশের বর্তমান, ভবিষ্যৎসহ অনেক বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। আমি বললাম, যেসব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে, টন টন বোমা ফেলে জনপদ ধ্বংস করা হচ্ছে, ওই সব দেশেও সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে হত্যা করা হয় না। অথচ আমাদের দেশে গণতন্ত্র বা নির্বাচনের নামে ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন ডেকে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। সাংবাদিক বললেন, আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মরতো রাজনৈতিক কর্মী, এখন মরছে সাধারণ মানুষ। টার্গেট করে মারা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এর প্রধান কারণ হলো রাজনীতি বা রাজনৈতিক আন্দোলন এখন আর স্বাভাবিক গতিতে নেই। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে দেয়া হয় না, বাধ্য হয়ে তারা চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, চোরাগোপ্তা হামলার টার্গেট কেন সাধারণ মানুষ হবে? অতীতে আমাদের দেশে কোনো দিন এই সময়ের মতো রাজনৈতিক আন্দোলন হয়নি। বড়-ছোট যত আন্দোলন হয়েছে সবগুলোয় নেতা-কর্মী মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছে। এখন সেই সুযোগ নেই। বড় বড় নেতা ছোট ছোট মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনের ভাষা এবং ধরন বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়ার শুরুটা হয়েছে দিকভ্রান্তের মতো। আন্দোলনকারীরা বুঝে উঠতে পারছে না তারা কী করবে। তবে বেশি দিন এভাবে চলবে না। রাজনীতি বা আন্দোলন করার স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে আন্দোলনের ভাষায় আবার পরিবর্তন আসবে। তখন হয়তো সাধারণ মানুষ আর টার্গেটে পরিণত হবে না। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। বিদেশি হস্তক্ষেপ বাড়বে। প্রতিবেশী দেশের সেনা ঘাঁটি হওয়ার আশঙ্কাও অমূলক নয়।
বাংলাদেশে আসার পর এবারই প্রথম আমার বাড়ি থেকে বিশাল এক সতর্ক বার্তা এলান করা হলো। সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে থাকা যাবে না, একা একা কোথাও যাওয়া যাবে না, দুইজন মোটর বাইকে চড়া যাবে না, সরকারের সমালোচনা করে যত্রতত্র কথা বলা যাবে না, থুতনির নিচে দাড়ি রাখা যাবে না, পুলিশের ত্রিসীমানায় ভেড়া যাবে না, ইত্যাদি। প্রথম দিকে কথাগুলো খুব একটা আমলে নেইনি। মনে করেছি বাবা-মা’রা একটু এমনই হন। তারা মনে করেন আমি এখনো আগের মতো ছোটই রয়ে গেছি। সবকিছুতে তাদের অতিরিক্ত সতর্কতা। কিন্তু আমার ধারণার অসারতা বুঝতে বেশি সময় লাগল না। খুলনার বাবরি চত্বর মোড়ে পুলিশ আমাকে মোটর বাইক থেকে নামিয়ে দিল। সঙ্গে সতর্ক করে দিল, ফের যদি দেখে দু’জন মোটর বাইকে তবে থানায় নিয়ে যাবে। এরপর যে ক’দিন দেশে থেকেছি আর মোটর বাইকে চড়া হয়নি। কারণ আমি ওটা চালাতে জানিনে। চড়তে হলে কারও না কারও পেছনেই চড়তে হবে আমাকে। দ্রোহী নামের খুলনার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আলোচক হিসেবে। সেখানে মূল আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করে সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ সৃষ্টি করা। ওই আলোচনায় যোগ দেয়ার আগেই পুলিশের সাদা পোশাকধারীদের কাছে বলতে হয়েছিল, গণপ্রতিরোধ মানে কী বোঝানো হচ্ছে। বক্তৃতায় বিরোধী দলের আন্দোলনের পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলা হবে কি না। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধের কোনো ডাক দেয়া হবে কি না। ডাক দিলে সেই ডাকের ধরন কেমন হতে পারে, ইত্যাদি। তারা পরামর্শ দিলেন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের আলোচনা সংস্কৃতির মধ্যেই থাকা ভালো, সেখানে রাজনৈতিক আলোচনা না হওয়াই উচিত। একটা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আলোচনায় কী থাকা উচিত, কী থাকা উচিত না, তা যখন ঠিক করে দেয় পুলিশ, তখন দেশের অবস্থা বুঝতে কারও কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, আমারও হয়নি। খুলনা থেকে ঢাকায় আসার মাত্র দু’দিন আগের ঘটনা- দুই ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তাদের বাড়ি ডুমুরিয়া থানায়। তারা খুলনার বিএল কলেজে ভর্তি হতে এসেছে। তাদের একজনের থুতনিতে হালকা পশমের মতো দাড়ি। বোঝাই যায় সদ্য গজানো দাড়ি রেখেছে স্টাইল করে। কলেজের সামনে থেকে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায় শিবিরের কর্মী বলে। তাদের একজনের মামা ডুমুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের নেতা। পুলিশের কাছে গিয়ে সে তার পরিচয় দেয়ার পরও কাজ হয়নি। পুলিশ বলেছে, আমরা ওদেরকে মিছিল থেকে ধরে এনেছি। দু’জনকে ছাড়াতে হলে দু’লাখ টাকা দিতে হবে, নয়তো কোর্টে চালান করে দেয়া হবে। বেশি তেড়িবেড়ি করলে ক্রসফায়ারও হতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয় পেয়েও পুলিশ পাত্তা দেয়নি। তারা বলেছে, সরকার টিকিয়ে রেখেছি আমরা, সুতরাং আমাদের টাকা না দিলে কোনো কাজ হবে না। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমার এক বন্ধু ডুমুরিয়া কলেজের শিক্ষক।
ইতালিতে ফেরার তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছি। সঙ্গে দুই বন্ধু। একদিন সকালে মতিঝিলে গিয়েছি বিশেষ এক প্রয়োজনে। যেতে পথে দেখি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তার অফিসের সামনের রাস্তায় বসে আছেন। কিছুক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে। বেশ আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছু জানতে চান তিনি। রাস্তায় বসে থাকার কারণ, মানুষের সহযোগিতা, সরকারের অসহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বললেন ছোট ছোট করে। সেখান থেকে ফেরার পথে আমার এক বন্ধুর আগ্রহে ঢুকতে হলো শাড়ির দোকানে। অনেক দেখেশুনে কেনা হলো একটা লাল শাড়ি। তখনো জানি না, ওই রাতেই যোগ দিতে হবে বিয়ের অনুষ্ঠানে। আমার বন্ধু সন্ধ্যার পর কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করল। নাটোরের মেয়ে, ঠিক যেন বনলতা সেন। মেয়েরা ঢাকায় থাকে। নতুন বর-বউকে মেয়ের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কোনো ঝড় তুফান সৃষ্টি হলে যেন দৌড়ের আগে থাকতে পারি। কিন্তু কিছুই হলো না। ঘণ্টা খানেক পরে আমার বন্ধু এলোমেলো চুল নিয়ে বেরিয়ে এলো। তাদের নিয়ে গেলাম এক রেস্টুরেন্টে, বিবাহোত্তর পার্টি হলো সেখানে। একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল আমার, ‘ঘুম মানে না ভাঙা খাট’। আমার বন্ধুর বেলায় ঘটলো, প্রেম মানে না পেট্রলবোম।
বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি লায়ন গনি মিয়া বাবুল, সাধারণ সম্পাদক নাসিরুল্লাহ ভূইয়া ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক হাসান মাহমুদসহ বেশ ক’জনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল বায়তুল মোকাররমে। তারা ওই সংগঠনের প্রথম প্রকাশনার দুইটা কপি দিয়েছিলেন আমাকে। আমরা ছানার জিলাপি খেতে খেতে ছবিও তুলেছিলাম সেদিন। ছবির হাটে দেখা হয়েছিল প্রবাসী পরিচালক কাজী টিপু, পুঁথিশিল্পী কাব্য কামরুলসহ অনেকের সঙ্গে। রাতে ঢাকার এক নামকরা রেস্তোরাঁয় খাওয়ালেন বিবিসির সাংবাদিক আহরার হোসেন এবং তানিয়া ভাবী। খুলনায় থাকতে কথা হয়েছিল তারকা মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) জিয়া উদ্দিনের সঙ্গে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং চলমান রাজনীতি নিয়ে অনেক কথা হয় তার সঙ্গে। অনেক কথার ভিড়ে একটি কথা তিনি বেশ স্পষ্ট করে বলতে চেষ্টা করেছেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার দু’জনই ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চর।
পরদিন ভোর চারটায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা করলাম। তখনো সুবহেসাদিক পেরোয়নি। পথঘাট একদম ফাঁকা। দূরে দূরে দুই-একটা সিএনজি ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়ল না। রিপন বলল, ভোরবেলায় হরতাল-অবরোধকারীরা একচোট তৎপর হওয়ার চেষ্টা করে। আমার বুকের ধুকধুকানি বেড়ে গেল। বন্ধু কামরুল আলম মুন্না গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিলেন। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট নামের টর্চার সেল পার হয়ে উড়াল দিলাম ইস্তাম্বুলের উদ্দেশে। বহু চেষ্টা করেও বলতে পারিনি, গুড বাই বাংলাদেশ।
http://www.shaptahik.com/v2/?DetailsId=10178
১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:২৬
পলাশ রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও... ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
নতুন অভিনেতা বলেছেন: খুব ভালো লাগল । ধন্যবাদ ।