![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ১২ মে ২০১৫ তারিখে রোমের তাইবার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন একজন ইসরায়েলি মহিলা। ৫৫ বছর বয়সের ওই মহিলা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। তাকে উদ্ধার করেছেন সবুজ খলিফা নামের একজন প্রবাসী বাংলাদেশি যুবক। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে ওই মহিলা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেও কেউ তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়নি। প্রায় সবাই ব্যস্ত ছিল মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করতে। সবুজ খলিফা তা করেননি, তিনি পুলিশ বা উদ্ধার বাহিনীর জন্য অপেক্ষাও করেননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাইবারের গভীর পানিতে। মৃতপ্রায় মহিলাকে উদ্ধার করেন। তার এই অসামান্য কৃতিত্ব এবং মানবিক অবদানের খবর ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমগুলোয় বড় জায়গা পেয়েছে। ইতালীয় পুলিশের প্রেস উইং থেকে পুলিশ বাহিনীর লোগো সম্বলিত সবুজ খলিফার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যা সাধারণত করতে দেখা যায় না। পুলিশের সদর দপ্তর থেকে তাদের ওয়েবসাইটেও ওই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
ইতালিতে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা ভিসা ছিল না সবুজ খলিফার। তিনি আইনের চোখে অবৈধভাবে বসবাস করতেন ইতালিতে। এই তথ্য জানার পর পুলিশ তাকে নিয়ে যায় স্থানীয় থানায়। খলিফার মানবিক অবদানের পুরস্কার হিসেবে রোমের পুলিশপ্রধান তার হাতে তুলে দেন ইতালিতে বসবাসের বৈধ কাগজপত্র। প্রাথমিকভাবে এক বছরের জন্য ডকুমেন্ট দেয়া হলেও এই সময়ের মধ্যে সবুজ কোনো একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলে তার কাগজ নবায়ন করা হবে এবং তিনি ইতালিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের বৈধতা অর্জন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, সবুজ খলিফাকে দেয়া ডকুমেন্টের ধরন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এটি একটি মানবিক ডকুমেন্ট’।
বাস্তবতা বোধ করি এমনই হয়, পৃথিবীর এক প্রান্তে একজন সবুজ খলিফা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডুবন্তপ্রায় একজন অজানা অচেনা ভিনদেশি মানুষকে টেনে তুলে আনেন নদীর গভীর থেকে। তাকে উদ্ধার করেন মৃত্যুর থাবা থেকে। পৃথিবীর আরেক প্রান্তে সবুজ খলিফার স্বদেশিরা মাসকে মাস ভাসতে থাকে সাগরের পানিতে। তারা ক্ষুধায় তৃষ্ণায় নরকযন্ত্রণায় ভোগে। না খেয়ে কঙ্কলসার হতে হতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যুগোঙ্গানিও বেরোয় না তাদের মুখ থেকে। ততটুকু শক্তিও অবশিষ্ট থাকে না শরীরে। অথচ এই মানুষগুলোকে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসে না। কেউ তাদের টেনে তুলে আনে না ডাঙ্গায়। সবাই দূর দূর করে। একদেশ ঠেলে দেয় আরেক দেশের সীমানায়। অথৈ সাগরে ভাসমান মুমূর্ষু মানুষদের নিয়ে ঠেলাঠেলি যেন এক মজার খেলা! একে কি নিয়তি বলব, নাকি ‘কর্মফল’ বলব আমি বুঝতে পারি না!
২০১২ সালের মে-জুন মাস। মিয়ানমারের আরাকান থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৃতপ্রায় মানুষ সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন আমাদের দুয়ারে একটু আশ্রয়ের জন্য, একটু সাহায্যের জন্য। সেদিন আমরা কী করেছিলাম? কী করেছিল আমাদের রাজপ্রভুরা? সেদিন মৃতপ্রায় রোহিঙ্গাদের করুণ গোঙ্গানিতে মন গলেনি আমাদের রাজা-রানিদের। মিয়ানমারের জালিম সরকারের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সেদিন আরাকানিরা কোনো মতে জীবনটা হাতে নিয়ে আমাদের দুয়ারে এসেছিল। আমারা তাদেরকে উদ্ধার করিনি, সাহায্য করিনি। তাদের শিশুদের করুণ মুখ দেখেও আমাদের শাসকগোষ্ঠীর মন নরম হয়নি। উল্টো তাদের ঠেলে দিয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যুকূপের দিকে। দু’বছর না ঘুরতেই আজ প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি আমরা। আমাদের দেশের হাজার হাজার মানুষ অধম মানুষদের পাল্লায় পড়ে অথৈ সাগরে ভাসছে, উদ্ধার করার কেউ নেই। ছিটে ফোঁটা খাবার বা পানি দেয়ার নামে অনাহারে মৃতপ্রায় মানুষগুলোর সাথে নিষ্ঠুর তামাশা করেছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়নরা। তারা এক অমানবিক খেলায় মেতে উঠেছে। তাদের নিষ্ঠুর মনে একচিলতে দয়ার উদ্রেক ঘটাতে পারেনি আমাদের মৃতপ্রায় মানুষগুলো। হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু ধুঁকে ধুঁকে মরেও তাদের মন গলাতে পারেনি। হায়রে, মাত্র দু’বছর আগে আমাদের পাষাণ সরকারেরও হৃদয় গলাতে পারেনি মরতে মরতে বেঁচে আসা আরাকানিরা।
ইতালিতে বাস করি অনেক বছর হয়। মানবতা, মানবিকতা কাকে বলে তা কাছে থেকে দেখেছি বহুবার। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে প্রতিনিয়ত সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে আসে বহু মানুষ। তারাও এক প্রকার মরতে মরতে বেঁচে আসে। সাগরের পানিতে ভাসতে ভাসতে ঢুকে পড়ে ইতালির সমুদ্রসীমায়। আজ পর্যন্ত কোনো দিন দেখিনি, শুনিনি ইতালির সরকার বা সীমান্তরক্ষীরা মানুষ বোঝাই কোনো একটা নৌকা বা ট্রলার ঠেলে দিয়েছে তাদের সমুদ্রসীমার বাইরে। দূর থেকে কোনো ট্রলার বা নৌকা দেখলেই তারা ছুটে যায়। সীমান্তরক্ষীরা নিশ্চিত জানেন, যারা ট্রলারে রয়েছে তারা সবাই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তারা অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশের জন্য এসেছে। কিন্তু কোনো দিন ইতালীয় প্রশাসন তাদের উদ্ধার না করে হাতগুটিয়ে বসে থাকেনি। উল্টো পথে ঠেলে দেয়নি। বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে গেছে খাদ্য নিয়ে, পানি নিয়ে, ওষুধ নিয়ে। আর আমরা কী ব্যবহার করেছি আরাকানিদের সঙ্গে? থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ারা কী ব্যবহার করছে আমাদের সঙ্গে?
অবশেষে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ারা মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে তারা এত বেশি সময় ক্ষেপণ করে ফেলেছে যে, সাগরে ভাসমান আর কতজনের প্রাণ বেঁচে আছে আল্লাহই ভালো জানেন।
২০১২ সালে শত শত মানবিক রচনা ছাপা হয়েছে আমাদের দেশের পত্রিকার পাতায়। সভা সমাবেশ করে বারবার সরকারকে বলা হয়েছে আরাকানিদের প্রতি সদয় হতে। অসহায় নির্যাতিত মৃতপ্রায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে। আমাদের সরকার বাহাদুররা সাহায্য করেনি। মানবিকতার পরিচয় দেয়নি। সে সময় পত্রিকায় লিখেছিলাম, আপনারা আরাকানিদের সঙ্গে যে অমানবিক আচারণ করছেন একই রকম আচরণ যদি আমাদের (প্রবাসীদের) সঙ্গে করা হয় তখন আপনারা কী করবেন? কী ভাবে উদ্ধার করবেন আমাদের? কে তখন আমাদের পাশে দাড়াবে? সেদিনের কোনো কথাই আমাদের শাসকগোষ্ঠীর কানে প্রবেশ করেনি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে। বিস্মকর বিষয় হলো, এখনো যে আমাদের সরকার বা রাজপ্রভুরা সাগরে ভাসমান মানুষগুলোকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা মনে হচ্ছে না। প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলছেন, এটা তার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তিনি অবৈধদের নিয়ে কাজ করেন না, তার কাজ বৈধদের নিয়ে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলছেন, মিডিয়ায় যেভাবে খবর প্রকাশ হচ্ছে, তা ঠিক না। সাগরে হাজার হাজার বাংলাদেশি ভাসছে না, মরছে না। সব দোষ মিয়নমারের।
খুব অবাক হয়েছি! কাদের আপনারা অবৈধ বলছেন? ভাগ্য বদলের আশায় সাগড় পাড়ি দেয়া মানুষগুলো থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার কাছে অবৈধ হতে পারে, আপনার কাছে, আপনাদের কাছে, বাংলাদেশের কাছেও অবৈধ! স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ক’টা মানুষকে বৈধ চ্যানেলে বিদেশে পাঠাতে পেরেছেন আপনারা? নিবন্ধনের নামে সাড়ে চার লাখ মানুষের কাছে থেকে কৌশলে কতো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন? দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমরা এখন পর্যন্ত এসব প্রশ্নের জবাব দিতে আপনাদের বাধ্য করতে পারিনি। আপনারা অতিধূর্ততার সঙ্গে জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেননি। সবকিছুতে বাতিকগ্রস্ত রাজনীতি করে অভ্যস্থ আপনারা, আপনাদের বিষরাজনীতি থেকে এই মহাবিপর্যয় মূলক মানবিক বিষয়টিও উদ্ধার পায়নি। সত্যিকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত আপনারা নিতে পারেননি, নেননি। বিরোধী দলেরও এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এতবড় মানবিক এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে কেউ রাস্তায় নামেনি। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেনি। এনজিওরাও চোখে মুখে ঠুলি পরে বসে আছে। ইসলামি দলগুলোরও কোনো খবর নেই। কথিত বুদ্ধিজীবী, মানবতার বিক্রেতারাও কোনো কথা বলছেন না। সবাই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। সরকারকে চটিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি নন।
শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্পে নেপাল ভেঙে পড়েছে। আমাদের সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই প্রশংসা করেছি। সরকার অযথা কথা বলে সময় নষ্ট না করে একটি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু নিজ দেশের মানুষের বেলায় সরকারের এত উদাসিনতা কেন? থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের গণকবর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষ বন্দিশিবিরে মানবেতরভাবে বেঁচে আছে, সাগরে অনাহারে ভাসছে হাজার হাজার মানুষ, এ খবর জানার পর সরকারের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাওয়া। খাদ্য নিয়ে, পানি নিয়ে, ওষুধ নিয়ে, অর্থ নিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার সরকারদের কাছে ছুটে যাওয়া। তাদের অনুগ্রহের অপেক্ষায় না থেকে নিজেদের টাকায় মরতে বসা মানুষগুলোকে উদ্ধার করা। তাদের কাছে খাবার, পানি, ওষুধ পৌঁছে দেয়া। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আবেদন করা। তা না করে সরকার বাতিকগ্রস্ত আচরণ, করছে। ওই সব দেশে লোক পাঠিয়েছে আলোচনা করার জন্য। নিজেরা আলোচনায় বসেছে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে। একগাদা টাকা বরাদ্দ করেছে, কিন্তু ওই টাকার সঠিক ব্যবহারে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
আলোচনা করে কেন সরকার সময় নষ্ট করেছে, করছে? আলোচনা করতে করতে তো অনেক মানুষ মরে গেছে, মরে যাবে। মানুষগুলোকে যদি বাঁচানোই না যায়, তবে আলোচনা করে কী লাভ হবে? কোটি কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়ে কী লাভ হবে?
নেপালে যদি তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ নিয়ে, সাহায্য নিয়ে ছুটে যাওয়া যায়, নিজের দেশের মানুষগুলোকে উদ্ধারের জন্য কেন ছুটে যাওয়া গেলো না? কেন আন্তর্জাতিক সাহায্য চাওয়া হলো না? এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর এত কিসের রাগ আমাদের সরকারের? আলোচনা করে স্থায়ী সমাধান, প্রকল্প বাস্তবায়ন তো পরের বিষয়, দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, আগে মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে হবে। তা না করে সরকার উল্টো কাজ করলো, কয়েক জন পাচারকারীকে কথিত ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলল। এই মুহূর্তে ওদের না মেরে, ওদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া বেশি জরুরি ছিল। ওরাই বলতে পারত কোথায় কত মানুষ কী অবস্থায় আছে। ওরাই পথ চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারত মৃতপ্রায় মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে। সরকার তা না করে ওদের মেরে ফেলল। ওদের মেরে কি সরকার বিশেষ কোনো মহলকে রক্ষা করার চেষ্টা করলো?
ঝুকিপূর্ণ পথে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নতুন কোনো বিষয় নয়। জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখেরও বেশি মানুষ পাচার হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং এনজিওর হিসাবে এই সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। টাইমস অব ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি নারী, পুরুষ, শিশু ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন থেকে সাগর পথে মানব পাচার মহামারি আকার ধারণ করেছে ২০১২ সালের পর থেকে। এই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বারবার চিঠি দিয়ে সরকারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন দেখানো আমাদের সরকার কোনো গুরুত্ব অনুভব করেনি। ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী মাছ ধরার নৌকা থেকে ১৩৮ জনকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করলে বিষয়টির ভয়াবহতা সবার নজরে আসে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং অভিবাসী নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এর বীভৎসতা নিয়ে সরব হয়। কিন্তু আমাদের সরকারের টনক নড়ে না। সরকার ব্যস্ত থেকেছে মানুষকে আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র দেয়ার ‘মওকা’ নিয়ে। সর্বশেষ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের প্রায় ৩৩টা গণকবর এবং বন্দিশিবির আবিষ্কার হলে দেশি-বিদেশি সকল মিডিয়া এবং অভিবাসন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো আরেক দফা সোচ্চার হয়। আমাদের সরকারের কাছে তখনও বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। তারা বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার এবং মাথাপিছু আয় বড় হওয়ার গল্প নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। প্রতিদিন অব্যাহতভাবে মানব পাচারের পিলেচমকানো খবর প্রকাশ হতে থাকলে সরকার গেল সপ্তাহে আলোচনায় বসেছে। ওই সব দেশে লোক পাঠিয়েছে আলোচনা করার জন্য। এর আগে কয়েকজন কথিত পাচারকারীকে ক্রসফায়ার করে খুন করেছে। এসব থেকে বোঝা যায় আমাদের সরকারের কাছে দেশের মানুষের বাঁচা না বাঁচার গুরুত্ব কতখানি।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বজুড়ে বৈধ পথে অভিবাসন এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে থেকে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কোনো দেশে বছরে মাত্র ২০ জন শ্রমিকও পাঠানো সম্ভব হয়নি। সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে সাড়ে ১৪ লাখ মানুষকে কথিত নিবন্ধন করিয়ে কৌশলে কোটি কোটি টাকা টেনে নিয়েছে। মালেশিয়ার সঙ্গে সুপার ব্যর্থ জিটুজি চুক্তি করেছে, যা নিয়ে পরে আর কোনো দিন পুনর্মূল্যায়ন করেনি। জিটুজি পদ্ধতিতে শ্রমিক রপ্তানির খরচ কমানোর কথা প্রচার করে সরকার মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির পথ বন্ধ করেছে। গত বছর শুধু নেপাল থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে এক লাখ। আর আমাদের দেশ থেকে বৈধ উপায়ে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবে ২০০৮ সাল থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯-১০ সালে মালেশিয়া বাংলাদেশি শ্রমিক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিন বছর যাবৎ ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি শ্রমিক আমদানি নিষিদ্ধ। লিবিয়াও সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আরব আমিরাত, কুয়েত, আবুধাবিসহ আরব বিশ্বের কোনো দেশই আমাদের শ্রমিকের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমাদের সরকার শুধু কথা বলছে। তারা কোনো কূটনৈতিক সফলতা দেখাতে পারেনি। নতুন বাজার সৃষ্টি করতে পারেনি। পুরনো বাজার ধরে রাখতে পারেনি। বন্ধ হয়ে যাওয়া বাজার খুলতে পারেনি। বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে গত এক বছরে সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং মালেশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৩৮ হাজার ৭৬৩ জন। অথচ ২০০৭ সালে ওই তিন দেশে শ্রমিক রপ্তানি হয়েছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৭০৫ জন। ২০০৮ সালে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৪১ জন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিএমইটির হিসাবে বড় ধরনের গড়বড় আছে। পুরনো যেসব শ্রমিক ছুটিতে দেশে আসে এবং আবার যায় তাদের জন্য আলাদা কোনো পরিসংখ্যান নেই। নতুন-পুরনো মিলিয়ে গোঁজামিলের একটা সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৭ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি শ্রমিক রপ্তানির হার কমেছে মাত্র ৯৫ শতাংশ!
মিয়ানমারের সরকার কর্তৃক তাদের দেশের বাসিন্দা রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার অনেক বছর ধরে। সে দেশের সরকারি নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার আরাকানি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। তারা নিজ দেশ ছেড়ে পালায় বেঁচে থাকার জন্য। ওদেশে তাদের জীবন বীভৎস রকম বিপন্ন। ২০১২ সালে রোহিঙ্গা নির্যাতন ভয়াবহ রকম বাড়িয়ে দেয় মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গারা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে আশ্রয়ের জন্য। আমাদের সরকার সব ধরনের মানবিকতা এবং বিশ্ব আইন লঙ্ঘন করে তাদের মুখের ওপর সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। তাদের ঠেলে দেয় নিশ্চিত মৃত্যুর পথে। সে সময় আমাদের সরকার যদি অবিবেচক, নির্দয় না হয়ে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিত, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে যৌক্তিক আলোচনা করত, উন্নত দেশগুলোর সাহায্য দাবি করত, শরণার্থী রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দেশে ভাগ করে নেয়ার দাবি জানাত, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করত, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিকে ইস্যু করতে পারত এবং বাংলাদেশ থেকে বৈধ প্রক্রিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি ধরে রাখতে পারত তবে আজ এত ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম হতো না। এত মানুষের করুণ মৃত্যু হতো না। এত মানুষের জীবন বিপন্ন হতো না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ববাসীর মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত। আমাদের শ্রমিক রপ্তানিতেও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো যেত। কিন্তু আমাদের সরকার এসবের ধারে কাছেও যায়নি। জানি না এর শেষ কোথায়। প্রতি মুহূর্তে ভয় হয়। প্রিয় দেশটার জন্য মন কাঁদে।
২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:৪৭
পলাশ রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই!
২| ২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৯
তপ্ত সীসা বলেছেন: সবকিছুতে স্বার্থ জড়িত। মানবিক খবরের চেয়ে নায়িকার কেলেংকারীর খবরে হিট বেশি, মানুষ সেইটাই খায় ভায়া, তাই সবাই ওইদিকেই ছুটে। আর যার কান্দার সে নিভৃতেই কান্দে। ওরা জানেনা ক্যামেরার সামনে ক্যামনে কান্দন লাগে। জানলে ফেসবুকে কয়ডা শেয়ার পাইতো।
২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:০৩
পলাশ রহমান বলেছেন: অকাঠ্য বলেছেন ভাই!
৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
অবিবাহিত জাহিদ বলেছেন: Rajnoitic sartho chara sorker ek pao agia jayna.
Tader kacha desh , manobotar agea holo baktigoto sartho. Ai sarthoporo ta thaka na baria asa por jonto amara basi kichu protasha korta parina
৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: দরিদ্র দেশের মানূষের কষ্টের শেষ নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আমরা এখন পর্যন্ত এসব প্রশ্নের জবাব দিতে আপনাদের বাধ্য করতে পারিনি। আপনারা অতিধূর্ততার সঙ্গে জবাবদিহির পরিবেশ সৃষ্টি করতে দেননি। সবকিছুতে বাতিকগ্রস্ত রাজনীতি করে অভ্যস্থ আপনারা, আপনাদের বিষরাজনীতি থেকে এই মহাবিপর্যয় মূলক মানবিক বিষয়টিও উদ্ধার পায়নি। সত্যিকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত আপনারা নিতে পারেননি, নেননি। বিরোধী দলেরও এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। এতবড় মানবিক এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে কেউ রাস্তায় নামেনি। সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেনি। এনজিওরাও চোখে মুখে ঠুলি পরে বসে আছে। ইসলামি দলগুলোরও কোনো খবর নেই। কথিত বুদ্ধিজীবী, মানবতার বিক্রেতারাও কোনো কথা বলছেন না। সবাই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। সরকারকে চটিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে রাজি নন।
+++