নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাদকের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ....

পলাশ রহমান

লিখার মতো কিছু নেই।

পলাশ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভেনিসের সিটি নির্বাচন এবং.....

০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:১২


মে মাসের মাঝামাঝি সময়, ঢাকা থেকে আমার এক বন্ধু বেড়াতে এসেছিলেন ভেনিসে। অথৈ পানিতে ভাসমান ভেনিস দেখে বিমুগ্ধ বন্ধুটি বড় বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুরু করলেন। আমি কিছুটা বিস্ময় নিয়ে তাকালাম তার দিকে। মনে হলো বুকফাটা আহাজারি শুরু করতে পারেন যেকোনো সময়। আমার কবি বন্ধুটির কাছে জানতে চাইলাম, ঘটনা কী?
তিনি আবারও একদলা শীতল দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বললেন, আমাদের বরিশালকে যদি একটু পরিকল্পনা মাফিক সাজানো যেতো, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করা যেতো, মানুষের নিরাপত্তা দেয়া যেতো তবে বরিশাল হতে পারতো পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক ভেনিস।
তিনি গলায় এক চিলতে উষ্ণ অহঙ্কার নিয়ে বললেন, ইতালির ভেনিস অনেক সুন্দর, এখানে বড় বড় দালান-কোটা থেকে শুরু করে আধুনিক নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার, স্টেডিয়াম, মিউজিয়াম, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবই আছে, শুধু নেই আমাদের দেশের মতো অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমরা যদি দেশটাকে সাজাতে পারতাম, নদী, নালা, খাল, বিল, ঝিলগুলো রক্ষা করতে পারতাম তবে গোটা দেশটাই হতে পারতো একটা প্রাকৃতিক ভেনিস। এরা কোথায় পাবে আমাদের মাঝি-মাল্লা, জেলে-তাঁতিদের সরল জীবন। কোথায় পাবে বটের ছায়া, রাখাল বাঁশির সুর। পালতোলা নৌকা, ছৈতোলা নৌকা, তালের ডোঙ্গা, মাটির ঘর, খড়-বিছালির ছাউনি, নলি বাঁশের বেড়া কোথায় পাবে এরা।
আমার বন্ধুটিকে বললাম, তুমি কী জানো আর মাত্র দু’সপ্তাহ পরে ভেনিসের সিটি এবং প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে?
তিনি বেশ একটু অবাক হলেন- কই, নির্বাচনের কোনো ডামাডোল তো চোখে পড়লো না। মাইকিং, পোস্টারিং, গণসংযোগ কিছুইতো না।
বিকেলে তাকে নিয়ে বেরুলাম নির্বাচন দেখতে। ঘুরে ঘুরে বেশ ক’জন মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় দেখালাম। নির্বাচনের প্রচার, পোস্টার, গণসংযোগ সবই দেখালাম। আমার বন্ধুটির বুকের গভীর থেকে আবারও দলা পাকানো দীর্ঘশ্বাস বেরুতে শুরু করলো। তিনি বললেন, শেষ এপ্রিলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন হয়েছে। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেকি এলাহিকাণ্ড। গোটা শহর ঢেকে ফেলা হয়েছিল প্রার্থীদের পোস্টারে। হাজার হাজার, লাখ লাখ পোস্টার। যে যেভাবে পেরেছে পোস্টার লাগিয়েছে, টানিয়েছে। কোনো নিয়ম, নিয়ন্ত্রণের বালাই ছিল না। যেখানে সেখানে যখন ইচ্ছা থোক বেঁধে গণসংযোগ করেছে। গাড়ির বহর নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। নির্বাচন বিধিতে নিষেধ থাকার পরেও মিছিল, মাইকিং সবই হয়েছে। সরকার সমর্থিত প্রার্থীর প্রচারে মন্ত্রী-এমপিদেরও দেখা গেছে। নির্বাচনের কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। জুমার নামাজের খোৎবা থামিয়ে মুসল্লিদের কাছে ভোট চাওয়া হয়েছে। যত্রতত্র গণসংযোগ করতে গিয়ে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করা হয়েছে। টিভি সাংবাদিকদের ডেকে প্রার্থীরা সদল-বলে রাস্তা পরিষ্কারের নামে জনচলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। পোস্টার লাগিয়ে পরিচিত শহরটাকে একদম অপরিচিত বানিয়ে ফেলা হয়েছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামলে বারবার তার ওপর হামলা করা হয়েছে পুলিশের উপস্থিতিতে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা একথা ওকথা বলে ওই হামলায় সমর্থন জুগিয়েছে।
আমার বন্ধু কবি আরিফ আবেদিনকে ভেনিসের সিটি নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত দেখাতে পরিনি, তার আগেই তিনি ঢাকায় ফিরেছেন। কিন্তু আমি দেখেছি, এবারের সিটি নির্বাচন বেশ কাছে থেকে দেখেছি আমি।
মেয়র নির্বাচনে মোট প্রার্থী হয়েছিলেন নয় জন। এর মধ্যে সরকারি দল ‘পিডি’ সমর্থিত মধ্যবামদের প্রার্থী ফেলিচে কাচ্ছন এবং মধ্যডানদের প্রার্থী লুইজি ব্রুনারোর মধ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। ৩১ মে, ২০১৫ তারিখের ওই নির্বাচনে ফেলিচে কাচ্ছন পেয়েছেন ৪৬,৩০৬ ভোট, অর্থাৎ মোট ভোটের ৩৮.০১ শতাংশ। তার কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজি ব্রুনারো পেয়েছেন ৩৪, ৮০৫ ভোট, অর্থাৎ ২৮.৫৭ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ইতালিতে রাজনৈতিক দল সরাসরি সকল স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।
ইতালীয় আইন অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ের সরকার গঠন বা আঞ্চলিক সরকার গঠন করতে হলে অথবা মেয়র নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হয়। ভেনিসের মেয়র নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করতে পারেননি বা কোয়ালিশনও করতে পারেননি। অপরদিকে আঞ্চলিক সরকারে কট্টর ডানপন্থি প্রার্থী লুকা জাইয়া একক ভাবে ৪৩.০৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং অন্য প্রার্থীদের সাথে কোয়ালিশন করে তিনি আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুইজন প্রার্থীকে দু’সপ্তাহ সময় দেয়া হয়, ওই সময়ের মধ্যে যদি তারা অন্য কোনো প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে ৫০ শতাংশ ভোট দেখাতে পারেন তবে তিনি হতে পারবেন নগরপিতা। কিন্তু সে সম্ভাবনা শুরুতেই নাকচ হয়ে যায়। কারণ এবারের নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন তুলনামূলক নতুন এবং প্রথা বিরোধী রাজনৈতিক দল চিনকুয়ে এসতেল্লের প্রার্থী দাভিদে এসকানো। তিনি ভোট পেয়েছেন ১২.৬০ শতাংশ। তাকে বাদ দিয়ে অন্য সব প্রার্থীদের ভোট একসঙ্গে করলেও কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় না। সে হিসাবে একমাত্র দাভিদে এসকানো যদি ফেলিচে কাচ্ছন কে সমর্থন করতেন তবে ফেলিচে হতে পারতেন ভেনিসের নগরপিতা। কিন্তু সে সম্ভাবনা শুরুতেই নাকচ করে দেয় দাভিদের দল চিনকুয়ে এসতেল্লে।
চিনকুয়ে এসতেল্লে বা ফাইফ স্টার দলটি ইতালিতে প্রথা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত। এই দলটি তারুণ্যের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। তারা প্রকাশ্যেই বলে, বৃদ্ধদের অবসরে পাঠাতেই তারা রাজনীতিতে এসেছে। ইতালির তরুণদের মধ্যে এই দলটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে হুহু করে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইতালির বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা বেপ্পে গ্রিল্লো।
৩১ মে’র নির্বাচনের পর প্রার্থীদের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন কমিশন পুনর্মূল্যায়ন নির্বাচন ঘোষণা করে। ১৪ জুন পুনর্মূল্যায়ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মানুসারে এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রথম দুইজন মেয়র প্রার্থী ফেলিচে কাচ্ছন এবং লুইজি ব্রুনারো। এতে ডানপন্থি প্রার্থী লুইজি ব্রুনারো (৫৪,৪০৫) ৫৩.২১ শতাংশ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবং ফেলিচে কাচ্ছন পেয়েছেন (৪৭,৮৩৮) ৪৬.৭৯ শতাংশ ভোট। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভেনিসের গত ৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো বামপন্থি প্রার্থীকে হারিয়ে ডানপন্থি প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, ভেনিস সদরকে সব সময় বামদের ঘাঁটি হিসাবে গণ্য করা হয়। এই আসনের সংসদ সদস্যও বামদল থেকে নির্বাচিত হয়।
পরাজিত প্রার্থীরা ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন। নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা কেউ চুরি-চামারির অভিযোগ তোলেননি। নির্বাচন বর্জন করেননি। নির্বাচনের দিন ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি। কেন্দ্র দখল, ভোটের বাক্স ছিনতাই বা আগের রাতে ভোট কেটে বাক্স ভরার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে কেউ বের করে দেয়নি, ভয়ভীতি দেখায়নি। সরকারি মহল, মন্ত্রী-এমপিরা কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি। তারা কেউ কোমরে গামছা বেঁধে বলেননি, সরকার দলীয় প্রার্থীকে জেতাতেই হবে। এর পরেও যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে, বিশেষ করে ভোটারদের প্রভাবিত করা, প্রশাসনকে প্রভাবিত করা বা অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করার পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ থেকে থাকে তবে তিনি নির্বাচনী আদালতে যেতে পারেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করবে। অভিযোগ যদি গুরুতর এবং সত্য বলে প্রমাণিত হয় তবে নির্বাচিত মেয়র তার পদ হারাতে পারেন। যেমন ভেনিসের সাবেক মেয়র জর্জো ওরসোনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার প্রায় ৪ বছর পর তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে আদালতের নির্দেশে তাকে মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অ্যাডভোকেট ওরসোনি ৮ এপ্রিল ২০১০ থেকে ২৩ জুন ২০১৪ পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। আদালতের নির্দেশে তাকে ৪ জুন (২০১৪) গৃহবন্দী করা হয় এবং মেয়রের পদ কেড়ে নেয়া হয়। অপরদিকে আদালতে যদি প্রমাণিত হয় যে অভিযোগকারী উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ করেছেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা যদি খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে আদালত অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। বিচারকার্য পরিচালনা যাবতীয় খরচ অভিযোগকারীকে গুনতে হতে পারে। সুতরাং সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়া ইতালিতে কেউ কারো বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক অভিযোগ করার সাহস দেখায় না।
ইতালিতে মেয়র কাজ করেন মূলত সিটি সরকারের প্রধান হিসাবে। নির্বাচনের সময় প্রত্যেক মেয়র প্রার্থীর নিজস্ব একটা প্যানেল থাকে। ৩৬ জন কাউন্সিলরের প্যানেল নিয়ে মেয়র নির্বাচনে দাড়ান। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ওই কাউন্সিলরদের মধ্যে সিটির কাজ ভাগ করে দেন এবং নিজে সব কিছুর তদারকি করেন। মেয়রের কাউন্সিলররা ওয়ার্ড কমিশনারদের নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ার্ড কমিশনার এবং কাউন্সিলররা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। জাতীয় বিষয়গুলোর বাইরে সিটির জন্য প্রয়োজনীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা মেয়র রাখেন। সিটির বাজেট তিনি ঘোষণা করেন। বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি আঞ্চলিক সরকার প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং আঞ্চলিক সরকার ও জাতীয় সরকারের দেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করেন। জাতীয় বা আঞ্চলিক সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত যদি তার সিটির জন্য যথাযথ মনে না করেন, তবে তা পুনর্মূল্যায়ন অথবা সংস্কারের সুপারিশ করতে পারেন।
ভেনিসে এবারই প্রথম সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী ফেলিচে কাচ্ছনের প্যানেল থেকে সৈয়দ কামরুল সরোয়ার নামের একজন বাংলাদেশি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। সৈয়দ কামরুল সরোয়ারের আগে ১৯৯৩ সালে রোমের মেয়র নির্বাচনে ভেরদি পার্টি থেকে একই পদে লুৎফর রহমান নামে আরেকজন প্রবীণ বাংলাদেশি নির্বাচন করেছিলেন। ইতালির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মূলধারার নির্বাচনে এই দুজনই অংশগ্রহণ করেছেন। লুৎফর রহমান যখন ভোটে দাড়িয়েছিলেন তখন ইতালিতে বাংলাদেশি ভোটার সংখ্যা অর্থাৎ ইতালীয় নাগরিকত্বধারী বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল শূন্যপ্রায়। যদ্দূর জানা যায় ওই সময় লুৎফর রহমানই ছিলেন একমাত্র ইতালীয় নাগরিকত্বধারী বাংলাদেশি। এখন সময় বদলেছে, বাংলাদেশি ভোটারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে ইতালীয় নাগরিকত্বধারী বাংলাদেশিদের বড় একটা অংশ এখন আর ইতালিতে বসবাস করেন না। তারা ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ওইসব দেশে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনানুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে বসবাস করছেন।
নির্বাচনী প্রচারের জন্য প্রার্থীরা শহরের নির্দিষ্ট জায়গায় ক্যাম্প করে। কোনো অবস্থাতেই অন্যের সমস্যা সৃষ্টি না করে ছোট একটা ছাতার নিচে একটা টেবিল এবং কিছু প্রচারপত্র নিয়ে দুই তিনজন দাঁড়িয়ে থাকে। তারা পথচারীদের হাতে প্রচারপত্র তুলে দেয়। অনেক সময় প্রার্থী নিজে এসে দাঁড়িয়ে যান ওইসব ক্যাম্পে। এসব প্রচারে কোনো মাইক ব্যবহার করা হয় না। একই জায়গায় পাশাপাশি প্রায় সব প্রার্থীদের ক্যাম্প করতে দেখা যায়। পোস্টার লাগানো জন্য পৌরসভা থেকে শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গা করে দেয়া হয় এবং ওইসব জায়গায় ছোট ছোট বোর্ডে নাম্বার দেয়া থাকে। একজন প্রার্থীর জন্য একটি বোর্ড বরাদ্দ থাকে, ওই বোর্ডের বাইরে অন্য কোথাও কোনো অবস্থাতেই পোস্টার লাগানো বা লটকানো যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে পোস্টার লাগালে, পূর্বানুমতি ছাড়া ক্যাম্প করলে, সময় অতিক্রম করলে, মানুষের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করলে, অনুমতি ছাড়া অন্যের জায়গা বা বস্তু নিজের নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করলে, শহরের পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য নষ্ট করলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রার্থীকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হতে পারে। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচারণ বিধি ভঙ্গ করে জরিমানা গোনার মানে হলো তার নির্বাচনের বারটা বেজে যাওয়া। একজন বিধিভঙ্গকারী, মানুষের অসুবিধা সৃষ্টিকারী, শহরের সৌন্দর্য নষ্টকারীকে ভোটাররা কোনো অবস্থাতেই ভোট প্রদান করবে না। ভোটারদের কথা হলো, যে ব্যক্তি নিজে আইন মানে না, নগরবাসীর জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করে তাকে দিয়ে শহরের ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন সম্ভব না। তাকে ভোট দেয়া মানে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া, নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে আনা। প্রার্থীরা পাড়া মহল্লার বিভিন্ন হলের মধ্যে মিটিং করে, প্রেস কনফারেন্স করে, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করে তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
ইতালিতে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে সকল প্রকারের প্রচারাভিযান বন্ধ থাকে। নির্বাচনের দিন ভোটারকে প্রভাবিত করার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে সরাসরি প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। নির্বাচনী আদালতে প্রার্থীর বিচার করা হয়। নির্বাচনের দিন অধিকাংশ প্রার্থীরা নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। নিজের ভোট প্রদান করে কেউ কেউ অন্যান্য দু’চারটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন, কেউ কেউ তাও করেন না। সাধারণত স্কুলগুলোকে ভোট কেন্দ্র করা হয়। মোটা কাগজের কার্টন দিয়ে ভোট বাক্স তৈরি করা হয়। ভোট গ্রহণের সময় নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়োগ প্রাপ্তরা ব্যালট সরবরাহ করেন। ভোট গণনার সময় প্রার্থীদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারে। তবে ভোটের আগেই নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধিদের নাম এবং ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়।
ভোট প্রদানের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা ১৮ বছর। কোনো নাগরিকের বয়স ১৮ হলে স্থানীয় পৌরসভা থেকে বাড়িতে ডাকের মাধ্যমে ভোটার কার্ড পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই কার্ড দেখিয়ে ভোটাররা ভোট প্রদান করেন। ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার আগেই যদি কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে ভোটার তার আইডি কার্ড দেখিয়ে স্থানীয় পৌরসভা থেকে ভোটার কার্ড সংগ্রহ করতে পারেন।
ইতালিতে সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে যুবকরা সবচেয়ে কম ভোট প্রদান করে। তাদের মধ্যে ভোট প্রয়োগের আগ্রহ খুবই কম লক্ষ্য করা যায়। এরা যত্রতত্র ভোট নিয়ে, নির্বাচন নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে না। বরং ফুটবল খেলাসহ অন্যান্য বিষয়ে কথা বলতে বেশি আগ্রহী দেখা যায়। এরা ভোট প্রদানের আগে লক্ষ করে কোন প্রার্থীর পরিকল্পনায় নতুনত্ব আছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটারদের কাছে প্রধান লক্ষণীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় করের মাত্রা কমাতে এবং চাকরির বাজার সৃষ্টিতে কোন দলের আগ্রহ এবং পরিকল্পনা বেশি ভালো

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

অবিবাহিত জাহিদ বলেছেন: Onak boro holao valo laglo
amadero protha birodi ekta dol dorker...

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫২

পলাশ রহমান বলেছেন: সত্যিই তাই, আমাদেরও একটা প্রথাবিরোধী দল দরকার।

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯

ফয়সল নোই বলেছেন: ঈদ মোবারক

১৯ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:৫৮

পলাশ রহমান বলেছেন: ঈদ মোবারক দোস্ত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.