![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে চলছে যুদ্ধ। শুরুতে গৃহযুদ্ধ হিসাবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এটি একটি নতুন রূপ লাভ করেছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে ১০টি রাষ্ট্রের একটি জোট ইয়েমেনের বৈধ সরকারের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেছে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র চরম সংকটে পতিত হয়েছে।এই সংকটের একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
১৯৬৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন নামক ২টি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইয়েমেনিদের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তারর সূত্রপাত ঘটে। উত্তর ইয়েমেন ও দক্ষিণ ইয়েমেনের ঐতিহাসিক বিভক্তি থেকেই রাষ্ট্রটি অস্থিথিশীল হিসাবে পরিগণিত। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব। মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নী বিরোধ কারও অজানা নয়। কিন্তু ইয়েমেনে এই বিরোধ ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আছে। যে কারণে কোন সরকার সফলভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না। গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধের বিষয়টি ছাড়াও ইয়েমেন অর্থনৈতিকভাবে এই অঞ্চলে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত। দেশটির প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো যখন ব্যাপক অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ইয়েমেন তখন ক্রমাগত দারিদ্রের কবলে নিমজ্জিত। অথচ সাড়ে পাচঁ লক্ষ বর্গকিলোমিটার আয়তনে আড়াই কোটি মানুষ দেশটিতে বসবাস করে। 'এডেন' এর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর রয়েছে। যে বন্দর দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার চলাচল করে।
অভ্যন্তরীণ বাস্তবতারর আরেকটি দিক হচ্ছে দুর্বল শাসন ব্যবস্থা। ১৯৯০ সালে দুই ইয়েমেন একত্রিত হলেও ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়। রাজনৈতিকভাবে সব সময়ই উত্তর-দক্ষিণ বিরোধ লেগে আছে। বর্তমান বাস্তবতায় বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের ফলে ইয়েমেন সংকটটিকে এক ধরনের প্রক্সি যুদ্ধ বলা যায়। একদিকে ইরান সমর্থিত শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী, অন্যদিকে সৌদি আরবসহ সুন্নি রাষ্ট্রসমূহের সমর্থনপুষ্ট ইয়েমেন সরকার। তাছাড়া যখনই ইয়েমেনে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তখনই সৌদি আরব ইরানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়েছে।
আমরা যেমন ইয়েমেনে দৃশ্যত সুন্নি সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ দেখছি পাশাপাশি দুটি ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী সামরিক দিক থেকে সক্রিয় হয়েছে এবং তাদের স্বার্থ ভিন্ন। ফলে এই সংকটে আইএস (ইসলামিক স্টেটস) চাচ্ছে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে অন্যদিকে একাপ (আল কায়দা ইন দা এরাবিয়ান পেনিনসুলা) চাচ্ছে তাদের প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে। হুতি বিদ্রোহীরা চাচ্ছে শিয়াদের আধিপত্য প্রতিষ্টা করতে। অন্যদিকে সুন্নিগোষ্ঠী হাদী সরকারের অবস্থানকে চাচ্ছে আরও সুদৃঢ় করতে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব চাচ্ছে ইয়েমেনে তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে। এক্ষেত্রে সৌদি আরব কিংবা আরব লীগ তাদের প্রক্সি হিসাবে কাজ করছে। ফলে দেখা যাচ্ছে ইয়েমেন রাষ্ট্রটি গভীর থেকে গভীরতর সামরিক সংকটে নিপতিত হচ্ছে। এই সংকট থেকে বের হওয়া কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ।
©somewhere in net ltd.