নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু 'আলাইকুম

“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃড় দুর্গে(High Fortified Castle) অবস্থান কর” [নিসা ৭৮]

আলোর-ভূবন

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম আস্সালামুয়ালাইকুম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে এই ব্লগে লেখালেখির সুযোগ করে দিয়েছেন। ইসলাম আজ বহু অভিযোগে অভিযুক্ত একটি জীবন-ব্যাবস্থা।এর অনেক কারণের একটি কারণ, ইসলামের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে অভিযোগকারীদের অজ্ঞতা(আপনারা ভাববেন না যে আমি নিজেকে আপনাদের সামনে বিজ্ঞ বলে প্রমাণ করতে চাচ্ছি)।আর আমি আপনাদের সামনে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরব-(ইনশা’আল্লাহ), বিশেষত তাওহীদ সম্পর্কে। জাযাকাল্লাহু খাইর(আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন)

আলোর-ভূবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এর বেশি ভালোবাসা যায়না, ও আমার প্রাণপাখি ময়না

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭

ক’দিন আগে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম, একটা গান কানে এলো পথের ধার থেকে — “এর বেশি ভালোবাসা যায়না, ও আমার প্রাণপাখি ময়না”। প্রেমিক লোকের চিৎকার করা আর্তনাদ। এই প্রেমিক গায়ক আবার ভালোবাসার

একটা স্কেল আবিষ্কার করেছেন, যার সর্বোচ্চ রেটিং-এর ভালোবাসা তিনি বেসেও ফেলেছেন। সম্ভবত এইটা চেক

করে দেখার পর তিনি আরো জোরে চিৎকার করছিলেন, এবং তার সমস্ত চিৎকার তার প্রাণপাখি ময়নার উদ্দেশ্যে হলেও ভুলক্রমে আমার সাথে আরও বহু পথচারীর কর্ণকুহর ফুটো করে দেয়ার উপক্রম করছিলো।



আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো এই

“ময়না” কি আসলেই শুনবে? ময়নারা কি এইসব গান শুনে গলে যায়, নাকি তব্দা খায়? ফলাফল যা-ই হোক, ময়নাপাখি, জান, জান্টু, মন, প্রাণ, বেবি, হানি টাইপের শব্দ দিয়েই প্রেম হয় এখন। আম্মা-আব্বার নাম আবেগ আর ভালোবাসার কাছে রিনেম হয়ে ওই কয়টা নামেই রুপান্তরিত হয়।



দেখতে দেখতে আরেকটা ভ্যালেন্টাইনস ডে চলে এলো। পহেলা ফাল্গুনের পরদিন

ভ্যালেন্টাইন। ব্যাপক উপলক্ষ্য পাওয়া গেলো পরপর দুইটা দিন। এইদিনে “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইনস ডে” বলে একটা উইশ করা হয়। অথচ ভ্যালেন্টাইনের ইতিহাস পড়ে প্রচন্ড অরুচি লেগেছিলো — সেটা ছিলো বহুগামিতা আর চরিত্রহীনতার একটা ইতিহাস। সেটা জানার আগে পরে কোনদিনই আমি এই উইশটা করি নাই, রিসিভও করিনি।



এই সময়গুলো আসলেই নিজের ছাত্রজীবনটার কথা খুব মনে হয়। কত কাহিনী যে দেখেছিলাম খুব কাছ থেকে!! যাহোক, একটা প্রেম কাহিনীর কথা বলি।



ধরি, ছেলেটার নাম আকাশ, মেয়েটার নাম মিথিলা। “দোস, প্রেম করুম, একটা ফোন নাম্বার দে” — এক বন্ধুর কাছে আকাশের এরকম একটা আবেদন থেকে সেই প্রেমের কুঁড়ি ফোটা বলতে হবে। সেই বন্ধুর প্রেমিকার বান্ধবী মিথিলা। সেই সূত্রে অনেক কিছু জানতে পারে আকাশ। তারপর মিথিলাকে বেলা অবেলায় ফোন করা। নরমালি গাঁইগুঁই করা মিথিলাকে বাগে আনতে আকাশের বেশি সময় লাগেনি। মাত্র এক-দু’দিনের মাথায় নিয়মিত ফোনালাপ, রাত বারোটার পরে। এভাবেই ওরা “আই লাভ ইউ” বলে ফেললো। আকাশের রুমের সবাই সেদিন “ট্রিট” পেলো বার্গার খাওয়ার মাধ্যমে। সম্ভবত সেদিনই প্রেম শুরু। ভ্যালেন্টাইনস ডে তে তাদের প্রথম দেখা। “ভালোবাসার গল্পতে পড়া গল্পের মতন করেই ওরা ফোনে কথা বলে ঠিক করেছিলো মিথিলা লাল পাড়ের শাড়ি আর আকাশ নীল পাঞ্জাবি পরবে। পরবর্তীতে শোনা গল্পে জানা যায়

একসাথে দু’জনে বসে ফুচকা খেয়ে প্রথম ‘ডেটিং’ করেছিলো। তারা একই রিকসায় উঠে বহুদূর গিয়েছিলো, পথিমধ্যে হয়ত

পথচারীরা লজ্জা পেয়েছিলো তাদের দেখে — কিন্তু সেটা ভ্রূক্ষেপ করার মতন মানসিকতা তাদের কারোই ছিলোনা। আকাশ এমন গল্প তার রুমমেটদের করেছিলো যা থেকে সেটা আঁচ করে নিতে বেগ পেতে হয়না। পারস্পারিক উষ্ণতা আদান-প্রদান ক্রমাগত মাত্রা পেতে থাকলো।



কিছুদিন পরে যখন সর্বোচ্চটুকু মাপা হয়ে গেলো, তার কিছুদিন পরেই হঠাৎ ঝগড়া শুরু হলো। আকাশ ভার্সিটির অন্য ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একটা মেয়ের

সাথে ফোনালাপ করেছিলো। মিথিলা সেটা জেনেছিলো আরেক বান্ধবীর কাছে। সেই ফোনালাপকে নিজের সাথে আলাপের সাথে মিলিয়ে ভবিষ্যতে আরও কী কী হবে সেটা ভেবে অনেক

বেশি রাগ ঝেড়ে ফেলেছিলো। আকাশ ক্ষেপে গিয়ে মিথিলাকে “ন্যারো মাইন্ডেড” বলে গালি দিয়েছিলো। ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট দেখা গেলো, ” মনের মানুষটি চলে যেতে চাইলে তাকে ছেড়ে দাও, সে যদি ফিরে আসে, বুঝবে সে তোমার ছিলো, আর যদি না আসে বুঝবে তো কখনো তোমার ছিলো না”। ওদের ঝগড়া মিটেনি — ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস “ইন আ রিলেশনশিপ” থেকে ধুম করে “সিঙ্গেল” হয়ে গেলো। আকাশ তার ভার্সিটির “আনিলার” সাথে কথা বলতে লাগলো। এফএনএফ নাম্বার বদলে গেলো… মিথিলা লিখলো “সমস্ত পুরুষ হলো মিথ্যুক আর সুবিধাভোগী। সেখানে কমেন্ট করলো আশফাক, মিথিলার ক্লাসমেট। আরো দু’জনের এফএনএফ নাম্বার বদলে যেতে লাগলো কয়েকদিন।

ভেঙ্গে পড়া হৃদয়ের মিথিলাকে ক’দিন মানসিক সাপোর্ট দিলো আশফাক… তারপর আরো ঘনিষ্টতা, আরো আরো…



অনেকটা এরকমই হয় বাস্তবের ভালোবাসার গল্পগুলো। অথচ ক’দিন আগে কোথা কোথা ঘুরে যেন “ভালোবাসার গল্প” নামের একটা পেজে চলে গিয়েছিলাম। তখন খেয়াল হলো কিছুদিন আগে আমাকে কে যেন এরকম পেইজের থেকে একটা গল্প পড়তে দিয়েছিলো। আমি আগ্রহের সাথে এক

নিঃশ্বাসে ৩/৪ টা গল্প পড়ে ফেললাম। কেউ একজনকে দেখে “ফার্স্ট সাইট” নামের “লভ” ফিল করে কেউ। তার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে, আবার কেউ রাস্তায় ছবি কুড়িয়ে পায়, সেটা আলমারির ড্রয়ারে রেখে দেয়। অনেক বছর পরে এক প্রেম করে বিয়ে করা মেয়ে দেখে সেই ড্রয়ারের ছবিটা তার। প্রথম প্রেম আর পরের প্রেম একই হয়ে যাওয়াতে সেখানে প্রেম গাঢ় হয়। অথচ ওই ছবিটা অন্য মেয়ের হইলে কি হতো সেইটা লেখক আর পাঠক কারোই মাথায় আসেনা। এইসব এই ল্যাদলেদে ইমোশোনের প্রেমকাহিনী পড়ে কেমন যেন বমি করার পরে তিতা তিতা লাগা অনুভূতি হচ্ছিলো বুকে। একটা বিশাল প্রজন্ম প্রেম-প্রেম জিনিস নিয়ে জীবন পার করে দিতে পারছে। অথচ বাস্তব জীবনটা পুরাই আলাদা…



এইসব হিজিবিজি প্রেমের গল্পে পড়ছিলাম — “প্রতিদিন ছাদে উঠতাম তাকে এক পলক দেখবো বলে”, “অনেক

ভালোবাসি তবুও কেন যে তাকে বলতে পারিনি”, “তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ”

– এরকম অজস্র ফালতু আর অর্থহীন প্রলাপ। এসব পড়ে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা প্রেম-প্রেম চোখে ডানে বামে তাকাতে থাকে, যাকে দেখে তাকেই প্রেমিক/প্রেমিকা মনে করে। প্রেম করতেই হবে, এরকম চিন্তা মাথায় নিয়ে বড় হচ্ছে একটা বিশাল প্রজন্ম। গার্ল ফ্রেন্ড না থাকলে অনেক ছেলেই”বোকা”। আবার “বয়ফ্রেন্ড” না থাকলে অনেক মেয়েই “আনস্মার্ট” হয়ে যায় একটা প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে। নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল আর প্রেমের গল্পে ডুবে থাকলে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করতে পারলে ওরা কীভাবে বুঝবে এইসব ছ্যাবলা ইমোশনের আউটকাম সবচাইতে ভালো ক্ষেত্রে পারস্পরের উপরে বোর হয়ে যাওয়া, পরকীয়া করা। আর নাহয় হারিয়ে ফেলা চরিত্র ও শরীরের অমূল্য কিছু জিনিস, ইউটিউবে ভিডিও হয়ে যাওয়া…



রিয়েল লাইফে যখন কাছাকাছি আসা যায়, তখন ব্রাশ করার টাইমিং মেলেনা, খাওয়ার টাইমিং মেলেনা। কারো নাকডাকার শব্দে অন্যজনের ঘুম আসেনা, কারো ছেলেবন্ধু/মেয়েবন্ধু অপরজনের সহ্য হয়না। এরকম আরো কত কী ! তখন আর প্রেমের “প্রথম দেখা ডাগর চোখ” বা “এলোমেলো চুলের দুষ্ট ছেলেটাকে” আর মুগ্ধ লাগেনা। ভেবে ভয় লাগে, এই ভ্যালেন্টাইনস ডে তে না জানি আরো কত বোনের সর্বনাশ হবে। হয়ত সেটা তাদের স্বেচ্ছায় হুতি হবে। অমন অজস্র উষ্ণতাভরা পাপ হবে, অমন শতশত ফুল বিক্রি হবে যখন, তখনও হয়ত রেললাইনের পাশে শুয়ে থাকা অশী্তিপর বৃদ্ধা রাহেলা বানুর

একবেলা খাওয়া জুটবে না। নিজের ভালো তো পাগলেও বুঝে। হুমায়ূন ফরীদি, কবির চৌধুরী, মিশুক মনিররা যেমন চলে গেলো কয়েকদিনের মাথায়। আমাদেরকেও তো যেতে হবে। নিয়ে যাবার সময় কী নিয়ে গেলাম, কী রেখে গেলাম সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ যেন আমাদের যাবতীয় পাপাচার থেকে, বাবা-মা কে কষ্ট দেয়া থেকে, অন্য কোন ছেলে/মেয়ের ক্ষতি করা থেকে রক্ষা করেন। আসলে আমরা খুব দুর্বল এক সৃষ্টি যারা মরে গেলেই মাটির সাথে মিশে যাবো।

আল্লাহ আমাদের রহম করুন।আমিন!!

াাা

—-

- স্বপ্নচারী আব্দুল্লাহ

- See more at: http://i-onlinemedia.net/archives/5386#sthash.UJPWrXlT.dpuf

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.