নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর একটি পৃথিবী চাই

পিট পলাশ

নিতান্ত অলস একজন মানুষ

পিট পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণঃ জাফলং-এ একদিন

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৪



কোথাও ঘুরতে যাব এরকম প্লান অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু কোথায় যাব তা ঠিক করতে পারছিলাম না। স্কুল জীবনের বন্ধু ফাহাদের সাথে এ নিয়ে ফেসবুকে কথা বলতে বলতে প্রথমে আমি ময়মনসিংহ যাওয়ার প্রস্তাব করলাম। তখন মে মাস। প্রচন্ড গরম। এরই মধ্যে ফাহাদ আবার কিছুদিন আগেই ময়মনসিংহ থেকে ঘুরে এসেছে। জানাল সেখানে প্রচন্ড গরম। একদিনের ট্যুরে গেলে খবর হয়ে যাবে। এর উপর যানজট তো আছেই। তো যাই হোক, আমি বললাম সিলেট গেলে কেমন হয়? জাফলং ঘুরে এলাম? ফাহাদও রাজি। টিকেট আনতে চলে গেলাম ইউনিকের মুগদা কাউন্টারে। বাসায় জানানোর পর বাসা থেকে এই গরমে কেন যাচ্ছি তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি জানানো হলেও আমি ঠিকই জাফলং-এর পথে যাত্রা করি।

এ বছরের মে মাসের ৮ তারিখ দিবাগত রাত ১২ঃ৩০ এর সিলেটগামী বাসের টিকেট নিই। অর্থাৎ ৯ মে তারিখে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। ড্রাইভারের একবারে পেছনের দুটো সিট আমাদের ছিল। প্রথমে চার জন যাওয়ার কথা থাকলেও পরে আমি আর ফাহাদ- দুই জনই যাই। ফাহাদ আগের দিন ফেনী থেকে এসেছে। বেচারা দিল ঘুম। আমার আবার বাসে ঘুম হয় না। আমি জেগে জেগেই বাসের পথচলা দেখতে লাগলাম। ঢাকার সীমানা পার হতেই রীতিমত হাড়কাঁপানো শীত করতে লাগল। হোটেল উজান ভাটিতে সিলেটগামী বেশিরভাগ বাস বিরতি দেয়। আমার এখানকার খাবারের মান ভাল লাগে না। দামও অনেক বেশি। কিন্তু ফাহাদের জোরাজুরিতে একটা স্যান্ডউইচ খেলাম। সেই স্যান্ডউইচ খেয়ে আমার কিছু না হলেও ফাহাদের পেট গুড় গুড় শুরু করে। এর আগে একবার সিলেট যাওয়ার সময় হোটেল উজান ভাটির উপরের রেস্টুরেন্টে দুই বন্ধু মিলে চারটা পরোটা আর গরুর মাংস খেয়েছিলাম। বিল এসেছিল ৪৭০ টাকা। সেবার বিল দেখে আমার প্রায় হার্টফেলের অবস্থা হয়ে যায়। যাই হোক, দুটো স্যান্ডউইচের বিল এল ১২০ টাকা। হাইওয়ের আশেপাশের রেস্টুরেন্টে কিছু খাওয়ার চেয়ে সাথে করে বিস্কিট বা কেক জাতীয় কিছু সাথে নিয়ে যাওয়াই ভাল। বেশিরভাগ হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট-এর খাবারের মান যেমন খারাপ, দাম তেমন গলাকাটা পরিমাণ বেশি।

হোটেলে ২০ মিনিট বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হল। আমি পুরো পথই জেগে। ধীরে ধীরে ভোর হতে লাগল এক সময়। সবুজের মাঝে সূর্যোদয় দেখে সব ক্লান্তি ভুলে গেলাম। এরকম একটা সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য রাত জাগাই যায়।

যাই হোক, সকাল ৬ টায় সিলেট পোঁছাই। হুমায়ুন রশীদ চত্বরে নেমে সেখান থেকে রিক্সায় যাই মাজার গেট এলাকায়। হযরত শাহজালাল (রঃ) -এর মাজারের সামনের রাস্তায় প্রচুর হোটেল আছে। সেখানে হোটেল দরদাম করি। প্রথমে যাই হোটেল উর্মিতে। ডাবল রুমের জন্য তারা এক হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু আমরা যেহেতু হোটেলটা শুধুমাত্র ফ্রেশ হওয়া আর ব্যাগ রাখার কাজে ব্যয় করব তাই আরও কম খরচের হোটেলের খোঁজ করি। হোটেল উর্মির পাশেই হোটেল পায়রায় ডাবল রুম পাই ৬০০ টাকায়। সেই রুম নিয়ে নিই। আরও খোঁজ করলে হয়ত আরও কিছু কমে হোটেল পেতাম কিন্তু ফাহাদের প্রাকৃতিক ডাকে সারা দেয়া জরুরী হয়ে পড়ায় আমরা সেই হোটেলেই উঠি।

বাথরুমে সাবান আছে কিনা রিসেপশনে জিজ্ঞেস করার পর সিলেটি ভাষায় রিসেপশনিস্ট ভাই আমাদের যা বললেন তার সারমর্ম হল, তারা এসি রুম ছাড়া বাথরুমে সাবান দেন না। এসি রুমের ভাড়া ১৫০০ টাকা। এরপর আমরা সাবানের দাম দিতে চাইলে রিসেপশনিস্ট বললেন যে সাবান রুমে পাঠিয়ে দিবেন। কিন্তু আমি তার কথায় ভরসা পাইনি। তাই নিজেই আধা ঘন্টা খুঁজে এক পান-সিগারেটের দোকান থেকে দুটি সাবান কিনলাম। তো আপনারাও সস্তা দরের হোটেলে থাকলে নিজেরা আগেই সাবান কিনে নিয়ে যেতে পারেন।

ফ্রেশ হয়ে গেলাম নাস্তা খেতে ‘ডিঙ্গি’-তে। মাজার গেটের পাশে আম্বরখানা এলাকায় অবস্থিত এটি। খিচুরি আর মুরগির মাংস খেলাম। চল্লিশ টাকা প্লেট। বেশ ভাল খেতে। খিচুরি খেয়ে ভাল লাগায় গরুর তেহারী নিলাম হাফ প্লেট ৫০ টাকায়। এটি হতাশ করল আমাকে।

সকালের খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকে গেল। এবার জাফলং রওনা দেয়ার পালা। সিএনজি দরদাম করা শুরু করলাম। ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দাম চাইতে লাগল একেজন। এরপর ফাহাদের সাথে কথা বলে ঠিক করলাম ১২০০ টাকায় যেতে পারলে সিএনজিতে যাব। নাহলে বাসে যাব।


শেষে ১১০০ টাকায় একজন যেতে রাজি হলেন। যাওয়া, আসা, ওয়েটিং চার্জ সহ মোট ১১০০ টাকা। পাশাপাশি হযরত শাহ পরান (রঃ)-এর মাজার শরীফ, তামাবিল ঘুরিয়ে আনবেন।

যাত্রা শুরু হল সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটে । সিলেট শহর পার হতেই ওপাশের ভারতের পাহাড়গুলো দেখা যেতে লাগল। সেই পাহাড়ের বুক চিরে একটু দূরে দূরে অসংখ্য ঝর্ণা। মনে হল স্বর্গের পথে আমরা ছুটে চলেছি। ঢাকায় যেরকম মাথা ফাটা রোদ এখানে আবহাওয়া তার ঠিক বিপরীত। রোদ আছে, কিন্তু হালকা হালকা শীত শীত ভাব। হয়তো বৃষ্টির কারণেই।

এক পাহাড়ের পেছনে আরেক পাহাড় লুকিয়ে আছে। কিছুটা নীলচে দেখায়। প্রথমে মনে হয়েছিল দৃষ্টিভ্রম। কিন্তু যত জাফলং-এর দিকে যেতে লাগলাম, পাহাড়গুলো তত স্পষ্ট হতে লাগল। কিছুটা আফসোসও হতে লাগল এই ভেবে যে, কেন এখানে আরো আগে আসলাম না।

জাফলং জিরো পয়েন্ট পৌঁছাতে প্রায় দুই ঘন্টার মত লাগল। সিএনজি মামাকে ভাড়ার বাইরে ১০০ টাকা দিলাম দুপুরে খাওয়ার জন্য। খুব খুশি হলেন তিনি। সিএনজি থেকে নামতেই শুরু হল স্থানীয় গাইডদের উৎপাত। একজন আমাদের আশেপাশের কিছু দর্শণীয় স্থান (ঝুলন্ত ব্রীজ, সংগ্রামপুন্জি ঝর্না, খাসিয়া পল্লী) ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য ১৮০০ টাকা চাইলেন। আসলে জাফলং ঘুরার জন্য কোন গাইড লাগে না। সীমান্তবর্তী হওয়ায় নিজেরা একটু সাবধান থাকলেই হল। বিজিবি ক্যাম্পের পাহাড় থেকে নামার পর এক ছেলে ঐ একই পরিমাণ স্পষ্ট ঘুরিয়ে আনা এবং নৌকা খরচ সহ চাইল ৩০০ টাকা। বুঝুন অবস্থা! আমরা পরে জানাচ্ছি বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। কোন গাইড নিইনি আমরা।

আসলে, ঝুলন্ত ব্রীজ ভারতের সীমানায়, তবে বাংলাদেশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। সংগ্রামপুন্জি ঝর্ণা দেখতে চাইলে জনপ্রতি ১০ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে বালুচর দিয়ে কিছুক্ষণ হাটলেই পেয়ে যাবেন। এটার চূড়াও আবার ভারতের সীমানায়। তবে বিএসএফের পাহারায় চূড়ায় উঠতে দেয়। তবে আফসোস হয়েছিল, সেখানকার বেশিরভাগ সুন্দর জায়গাগুলো ভারতে পড়ে গেছে বলে।

নদীর পানি একদম টলটলে পরিষ্কার আর ঠান্ডা। পানির নিচে ছোট ছোট মাছগুলোও স্পষ্ট দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন পাথর সংগ্রহ করছে। এসব দৃশ্য খুব ভালো লাগল আমাদের। পানিতে চাইলে গোসলও করতে পারেন। তবে স্রোত খুবই বেশী। নদী বেশি চওড়াও না। পানিও তেমন বেশি না। তবে পায়ে হেঁটে এই নদী পার হবার দুঃসাহস না করাই ভালো। হাঁটু পানিতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর।

এর মাঝে একবার আকাশের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। বৃষ্টি শুরু হল, সাথে বেশ জোরে-সোরে বাতাস। এইটুকু নদীতে ছোট ছোট ঢেউ উঠল। প্রকৃতি যেন আরো সবুজ হয়ে গেল। প্রকৃতির এই রাগী রূপ দেখে যেন সম্মোহিত হয়ে গেলাম। নিজের চোখে না দেখলে এই দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন।

প্রকৃতি বিরূপ হওয়ায় ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার আর সাহস করিনি। চার ঘন্টার মত কাটিয়ে তামাবিলের পথে যাত্রা করলাম। সেখান থেকে শাহ পরান (রঃ) এর মাজার ঘুরে সিলেট শহরে এলাম প্রায় বিকেল ৪টার দিকে। দুপুরের খাওয়া হল ‘ডিঙ্গি’-রেস্টুরেন্টেই। মোরগ পোলাও খেলাম ১২০ টাকায়। অমৃতের মত লাগল খেতে।

এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। এক ঘন্টা ঘুমালাম। সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাওয়া আরেক বন্ধুর সাথে দেখা হল। ক্বীন ব্রিজে আড্ডাবাজি করলাম কিছুক্ষণ। সেদিন রাতের ১২ঃ৪০ এর বাসের ঢাকায় ফেরার টিকেট নিলাম আবার। এরপর রাতের খাবার খেতে গেলাম আবার সেই ‘ডিঙ্গি’-তেই্ পাঁচ ভাই-এ যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু গ্রিল-নান খাওয়ার প্লান থাকায় আবার ডিঙ্গিতেই যাই। আগে একবার এখানকার নান খেয়েছিলাম। এখনো মুখে লেগে আছে স্বাদ।

রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে দুই বন্ধু মিলে স্কুল জীবনের স্মৃতি হাতড়ে বেরালাম কিছুক্ষণ। রাত ১২টায় হোটেল ছেড়ে কাউন্টারে গেলাম। ১২ঃ৪০ এ বাস এল কদমতলী। প্রায় ১টা বেজে গেল বাস ছাড়তে ছাড়তে। ঢাকা পৌঁছালাম সকাল ৬টায়।
এই ছিল আমাদের একদিনের জাফলং ভ্রমণের বৃত্তান্ত।

আমার ভাগের খরচের হিসাবঃ

বাস ভাড়া- ৪৭০+৪৭০=৯৪০ টাকা
জাফলং-এর সিএনজি ভাড়াঃ ৬০০ টাকা
তিন বেলা খাওয়াঃ ৪০০ টাকা
হোটেলঃ ৩০০ টাকা

আরও কিছু টুকটাক খরচ মিলিয়ে ২৩০০ টাকার মত খরচ হয়েছিল আমার। ৪/৫ জন যেতে পারলে আরও ৫০০ টাকার মত খরচ কমত।

কিছু ছবিঃ


জাফলং যাওয়ার পথের দুপাশের কিছু দৃশ্য



ভারতের পাহাড়ের বুকে ঘরবাড়ি




নদীর বুকে পাথর


ভারতের ঝুলন্ত ব্রীজ


প্রকৃতির একটু রাগান্বিত রূপ


সাবধান!


বিএসএফ ওয়াচটাওয়ার


জিরো পয়েন্ট বাজার


তামাবিল স্থল বন্দর



হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর মাজার



হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর মাজারে এরকম অসংখ্য কবুতর রয়েছে




ট্যুরমেট

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর।
চমৎকার।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৪

পিট পলাশ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৪

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৩

পিট পলাশ বলেছেন: ধন্যবাদ শুভকামনার জন্য।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৬

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: সুন্দর ভ্রমন কাহিনী তুলে ধরেছেন আপনার লিখনিতে।
সত্যি মনোমুগ্ধকর।
ছবি গুলিও বেস হয়েছে।

বাস ভাড়া- ৪৭০+৪৭০=৯৪০ টাকা
জাফলং-এর সিএনজি ভাড়াঃ ৬০০ টাকা
তিন বেলা খাওয়াঃ ৪০০ টাকা
হোটেলঃ ৩০০ টাকা

খরচের পরিমানটা এর চেয়ে অনেক কমিয়ে নেওয়া যেত কিন্তু তখন ভ্রমনের মানটা কমে যেত।
ভাল কিছু পেতে হলে খরচটা ভালই করতে হয়।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৩

পিট পলাশ বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।

৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:২৫

উদাস মাঝি বলেছেন: আহ দেখার মত জায়গায় বটে !

১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩২

পিট পলাশ বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর জায়গা আসলেই।

৫| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪০

কাছের-মানুষ বলেছেন: দেখারমত জায়গা।
চমৎকার ।

৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৮

সুমন কর বলেছেন: ছোট করে দারুণ পোস্ট। +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.