নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুন্দর একটি পৃথিবী চাই

পিট পলাশ

নিতান্ত অলস একজন মানুষ

পিট পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমন ব্লগঃ সেইন্ট মার্টিন ভ্রমণ

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৬



সেইন্ট মার্টিন।
এখানে গিয়ে মনে হচ্ছিল উইলবার স্মিথের লেখা “আই অব দ্যা টাইগার” বা মাসুদ রানার “আই লাভ ইউ, ম্যান”-এর মতো এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাই। সকল প্রকার যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এই দ্বীপ যে কারোরই মন কেড়ে নিতে বাধ্য।

অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল সেইন্ট মার্টিন যাওয়ার। তাই এবারের ডিসেম্বরে আমরা ১১ জনের গ্রুপ মিলে সেইন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমাদের ট্যুর ছিল ২ রাত ৩ দিন সেইন্ট মার্টিনে অবস্থান করি।

১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭ঃ৩০ এর বাসে করে আমরা টেকনাফের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। আমরা সৌদিয়ায় করে গিয়েছিলাম। এই বাসে লেগরেস্টসহ থাই সিট থাকলেও সিট ও হেডরেস্ট খুবই শক্ত এবং এগুলোকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটারের মতো দূরের জার্ণির জন্য উপযুক্ত মনে হয়নি। তবে বাসের ড্রাইভার আব্দুস সাত্তার সাহেবের চালানো ছিল খুবই সুন্দর। কোন ঝুঁকিপূর্ণ ওবারটেকিং বা তাড়াহুড়ো করেননি। পাশাপাশি উনার ব্যবহারও ছিল চমৎকার।

১১ ডিসেম্বর সকাল ৬ টায় আমরা টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছাই। উখিয়া থেকে দমদমিয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা করুণ হলেও আব্দুস সাত্তার সাহেবের সুন্দর চালানোর জন্য তেমন একটা সমস্যা হয়নি আমাদের।

ঢাকায় তখন তেমন একটা শীত না থাকলেও ঢাকার বাইরে ছিল হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। সকালে ঘাটে পৌঁছে আমরা নাস্তা করি। আমাদের শীপ ছিল ৯ঃ৩০ এ। আমরা কেয়ারী সিন্দবাদের ওপেন ডেকে করে সেইন্ট মার্টিন যাই। মেইন ডেকের চাইতে ওপেন ডেকই তুলনামূলক ভালো মনে হয়েছে আমার কাছে।

৯ঃ৩০ এর কিছুপরে আমাদের শিপের সেইন্ট মার্টিনের উদ্দ্যেশ্যে দমদমিয়া ঘাট ত্যাগ করে। যাত্রা শুরুর সাথে সাথেই আমাদের শীপের পাশ দিয়ে গাঙচিলের ওড়াওড়ি আমরা দেখতে পাই। একটু সামনে আগাতে চোখে পড়ে টেকনাফ বাজার। মিয়ানমারের কিছু পণ্যবাহী বড় সাইজের ট্রলারও চোখে পড়ে সেখানে।

একপাশে বাংলাদেশ ও আরেকপাশে মায়ানমার দেখতে দেখতে এক সময় আমরা নাফ নদী ছেড়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ি। তখন সেখানে দুপাশেই সমুদ্র। সমুদ্রের ঢেউ আর গাঙচিল দেখতে দেখতে আমরা ১২ টায় পৌঁছাই সেইন্ট মার্টিনের জেটিঘাটে।

জেটিঘাটে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে আগে থেকে বুক করে রাখা সায়েরী ইকো রিসোর্টের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা শুরু করি। সেখানে রুম বুঝে নিয়ে ব্যাগপত্র ফেলে আমরা চলে যাই সমুদ্রে। তখন ভাটা ছিল। একারণে পানি ছিল অনেকদূরে। পানিতে দাপাদাপি করে আমরা রুমে ফিরি। এরপর বীচের পাশে সূর্যাস্ত দেখা, সাইকেল চালানো, চায়ের দোকানে বসে ডাব খাওয়া ও চায়ের আসর বসিয়ে সময় কাটাই আমরা। রাতে চিকেন বারবিকিউ আর পরটা দিয়ে ডিনার সেরে নেই।

পরদিন আমাদের ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেজে যায় প্রায় ৮ টা। যার কারণে সূর্যোদয় দেখা মিস করি আমরা। খিচুরী আর ডিম দিয়ে নাস্তা করে আমরা রওনা দিই ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশ্যে। ১১ জনের গ্রুপ তখন দুই ভাগে ভাগ হয়। এক গ্রুপ ট্রলারে করে যায় আর আমরা ৫ জন হেঁটে ছেড়াদ্বীপ রওনা করি। যাওয়ার সময় আমরা পূর্ব পাশের বীচ ধরে যাই। এতে আমাদের প্রায় ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে ছেড়াদ্বীপ পৌঁছাতে। ফেরার সময় আমরা সেইন্ট মার্টিনের গ্রামের ভেতর দিয়ে ফিরি। ফিরতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট। সাইকেল নিয়ে অনেকে ছেঁড়াদ্বীপ যায় কিন্তু বীচের অনেক জায়গায় আর গ্রামের ভেতর বেশিরভাগ জায়গায় সাইকেল হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এরচেয়ে হেঁটে যাওয়াই উত্তম আমার কাছে। যাওয়ার আগে অবশ্যই জোযার-ভাটার সময় জেনে যাবেন। জোয়ারের সময় ছেড়াদ্বীপ হেঁটে যাওয়া যায় না।

এরপর বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমরা বীচেই সময় কাটাই। বীচের পাশে কিছু চায়ের দোকান আছে যেগুলো সারা রাতই খোলা থাকে। সেগুলোতে বসে আড্ডা দিয়ে আর সমুদ্র দেখে আমাদের সময় কাটে। জোয়ারের সময় দোকানের ভেতরেও অনেক সময় ঢেউ চলে আসে। হাতে চায়ের কাপ আর নিচে সমুদ্রের ঢেউ- অন্যরকম এক অনুভূতি সেটা।

পরদিন আমরা ভোরে উঠে পূর্ব পাশের বীচে চলে যাই সমুদ্রের বুকে সূর্যোদয় দেখতে। সমুদ্রের বুকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত- দুটোই খুব সুন্দর। এগুলো মিস করবেন না। এরপর ১২ টার দিকে আমরা রিসোর্ট ছেড়ে জেটাঘাটের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করি। সেখানে বাজারে দুপরের খাবার খেয়ে আমরা শিপে উঠি। ৩ টায় শীপ ছেড়ে ৫ঃ৩০ এ দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছায়। আমাদের বাস ৬ টায় ছাড়ার কথা থাকলেও একটা শীপ দেরিতে আসে। এজন্য বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭ টায়। আমরা ঢাকা পৌঁছাই সকাল ৬ টায়।

যেহেতু আমরা অন সিজনে ট্যুর দিয়েছি, তাই ঝামেলা এড়াতে প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে রিসোর্ট, বাস ও শিপের টিকেট কনফার্ম করে ফেলি। রিসোর্ট নিয়ে ছিলাম সায়েরী ইকো রিসোর্ট। ২টা কটেজ নিয়েছিলাম, প্রতিটির ভাড়া ছিল প্রতি রাতের জন্য ৩০০০ টাকা করে। এই ট্যুরে আমাদের রিসোর্টে থাকা, রিসোর্টে খাওয়া, শীপের ভাড়া, বাসের ভাড়া মিলিয়ে প্রায় ৫০০০ টাকার মত জনপ্রতি খরচ পড়ে।

বাজারের চাইতে রিসোর্টের খাবারের মান অনেক ভাল ছিল। তবে রিসোর্টে খেলে আগে থেকে বলে রাখতে হয়। রিসোর্টের সব কিছুই অনেক ভাল ছিল এবং আমরা খুবই বন্ধুপূর্ণ ব্যবহার পেয়েছি তাদের থেকে। সেইন্ট মার্টিনের লোকজনের ব্যবহার অনেক সুন্দর এবং অনেক মিশুক তারা।

জীবনের সেরা কিছু সময় কিংবা বলা যায় জীবনের সবচেয়ে সেরা সময়টুকু এখানে কাটিয়ে এসেছি। সকালের সূর্যোদয়, সন্ধ্যার সূর্যাস্ত, রাতের সমুদ্রের গর্জন, সমুদ্রের স্বচ্ছ পানির মতো এখানকার সহজ-সরল মানুষ- এরা মন কাড়বেই। সেইন্ট মার্টির অবশ্যই একবার ঘুরে আসবেন।

ভ্রমনে গেলে স্থানীয় লোকদের সম্মান করুন এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

পরিশেষে সেইন্ট মার্টিনের কিছু ছবি।














মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর জায়গা ভ্রমন করেছেন।
ছবি গুলো বেশ সুন্দর হয়েছে।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৪

হাবিব বলেছেন: আমিও গেছিলাম সেন্টমার্টিন, দুইবার। তবে জান হাতে করে নিয়ে। ট্রলারে!!!

৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: সেন্টমার্টিন আমার কাছে স্বপ্নের মত জায়গা। ++

৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৬

নডতডৃস বলেছেন: আমি একবার সেখানে যেতে চাই, ছবির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ https://drift-hunters.com

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.