নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://lifestyletips24.com/

প্রনয় দেব

প্রনয় দেব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইরাক এখন আশ্চর্যজনক ভাবে মানবিক দুর্যোগের কবলে !

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫০

বিশ্বের প্রতিটা মানুষের এবং প্রতিটা সম্প্রদায়ের স্বাধীন মত প্রকাশ করার অধিকার আছে। এতে কেউ শয়তানের উপাসক হবে এমন ভাবনা ভাবার অধিকার কারও নাই। আপনার ইচ্ছা হলে তাদের মত গ্রহণ করেন না হলে নয় বরং প্রতিটা মানুষ বা সম্প্রদায়ের নিজস্ব মতকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। ইহায় মানবিকতাবোধ ইহায় মনুষত্ববোধ। যেটা বর্তমানে ইসলামী ষ্টেট বা (আই এস) শিকার করেনা যেমন শিকার করেনা ইহুদীবাদ ফিলিস্থীনিদের। তাহলে ইহুদিবাদ আর ইসলামী ষ্টেট ( আই এস) এর মধ্য কোন পার্থক্য নাই! উভয়ে মানবতার জন্য বিপদজনক, বিশ্ব শান্তির হুমকি। পৃথিবীতে যত সংঘাতের মূলে কিন্তু এই সংর্কীণবাদ।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জিহাদিরা তাদের কথিত ইসলামী রাষ্ট্র হতে শিয়া মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের তাদের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত করে। মুসল শহর খ্রিস্টানদের অনেক পুরাণ বাসস্থান সেখান থেকেও তাদের বিতাড়িত করা হয়। অমূল্য আসিরিয়ান সম্প্রদায়দের হস্তনির্মিত মূর্তিগুলি ধংস্ব করা হয়।

কয়েকমাস ধরে জিহাদি গ্রুপ ইরাক এবং সিরিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্র(আই,এস) প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন খিলাফত ঘোষণা করেছে। ইরাক এবং সিরিয়ার উভয় দেশের অনেক বৃহৎ অংশের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়েছে। এতে প্রকৃত ভয়ের কারণ, এটা ইসলামী রাষ্ট্রের নামে কট্টর সুন্নি আইন প্রতিষ্ঠায় ঐ সকল অঞ্চলের নিজস্ব সামাজিক , সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধংস্ব করে দিচ্ছে। অঞ্চলগুলি হারাতে বসেছে তাদের ভৌগলিক অবস্থান। এটা একটি ঠাণ্ডা মাথার চক্রান্ত না হলেও বিশাল বড় মাপের উন্মত্তা। ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে অন্য সংস্কৃতির উপরে আগ্রাসন। ইরাক ও সিরিয়ায় দেশ দুটির শিয়া, সুন্নি, খ্রিস্টান, কুর্দি ও ইয়াজিদি সব সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। শেষ কালে জিহাদিষ্টদের খেলাফতের পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠার মুখ দেখবে বলে মনে হয়না। কারণ অস্ত্রের জোরে, মানবিক সংকট ঘটিয়ে কোন মত প্রতিষ্ঠা করা যায়না। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে লড়াই চলবে দীর্ঘমেয়াদী। সাধারণ মানুষের ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় গুলির ঘটবে চরম বিপত্তি।

প্রকৃত পক্ষে যারা ইসলামী আইনের চরম ব্যাখ্যাগুলি পুরাপুরি মেনে চলেনা তাদের ইসলামী রাষ্ট্রে কোন স্থান নাই। এই লক্ষে জিহাদিরা সেই সকল অঞ্চলের খ্রিষ্টান এবং ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের নানা স্থাপনা এবং তাদের ধর্মের নানা নিদর্শনসহ অনেক মূল্যবান সম্পদ ধংস্ব করছে।

এই সকল হিসাবে সবচেয়ে ভয়ানক নিপীড়নের মধ্যে ও বিপদের মধ্যে আছে ইয়াজিদি সম্প্রদায়। যারা প্রাচীন ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় বসবাস করেন। তাদের সংখ্যা সর্ব সাকুল্যে প্রায় অর্ধ মিলিয়নের মত এবং তাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বসবাস করে উত্তর পশ্চিম ইরাকের পাহাড়ি এলাকা সিনজায়। এছাড়াও তারা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া, আর্মেনিয়া এবং তুর্কিতে অবস্থান করে। সম্প্রতি তাদের সম্প্রদায়ের অনেকে জার্মান এবং যুক্তরাষ্ট্রতে অভিবাসী হয়েছে।

ধর্মীয় আচার আচরণের কারণে ইয়াজিদিদের নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা পাওয়া যায়। সুন্নি চরমপন্থিদের বিশ্বাস ইয়াজিদিরা মূলত ইসলামের সবচেয়ে খারাপ দুষ্কৃতিকারী উমাইয়া বংশের ২য় খলিফা ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার অনুসারী বা তার থেকে তাদের উৎপত্তি।

বাস্তবে এই ধারনা ঠিক নয়। ইয়াজিত ইবনে মুয়াবিয়ার সাথে এই সম্প্রদায়ের কোন সম্পর্ক নাই। এই সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় আচরণ বিশ্লেষণ করলে ধারণা করা হয় তারা সম্ভবত ইন্ডিয়ান ট্রাইব জাতি পশ্চিমে অভিবাসী হয়ে চলে আসে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের ব্রোঞ্জ যুগে। তাদের সাথে মিডিলইষ্ট এবং ভারতীয় লিংক পাওয়া যায়।

ধারণা করা হয় ইয়াজিদি নামটি নেওয়া হয়েছে আধুনিক ফার্সি ‘ইজদ’ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে দেবদূত বা দেবতা। তা থেকে ইয়াজিদি শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে,‘ঈশ্বরের উপাসক’। জরথুরাষ্ট্রবাদী প্রাচীন ইরানের ধর্ম, যারা অগ্নি উপাসক ছিলেন। এই ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের সাথে জরথুরাষ্ট্রবাদের অনেক মিল আছে। আরও মিল খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন সনাতন হিন্দু ধর্মের সাথে। ইয়াজিদিদের সর্বোচ্চ দেবতার নাম ইয়াজদান। তাদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রথাগুলোর বেশির ভাগই মৌখিক লিখিত তেমন কোন বিধান নাই।

ইয়াজিদিরা ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন এবং খ্রিস্টধর্মের পবিত্র গ্রন্থ বাইবেল উভয়কেই শ্রদ্ধা করে থাকে। ব্যাপ্টিস্ট খ্রিষ্টানদের মতো ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের শিশুদের সর্বাঙ্গ পবিত্র পানিতে ডুবিয়ে দীক্ষা দেন একজন ধর্মীয় গুরু। ডিসেম্বর মাসে ইয়াজিদিরা তিন দিন রোজা রাখে। পরে এক সাথে ধর্মীয় গুরুর সঙ্গে সুরা পান করে। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখ ইয়াজিদিদের বার্ষিক তীর্থযাত্রার সময়। এ সময় তারা মসুল শহরের উত্তরে অবস্থিত লালেশ এলাকার শেখ আদির মাজারে গিয়ে নদীতে ওজুর মতো করে পবিত্র হয়। এ ছাড়া ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মধ্যে পশু উৎসর্গ করা এবং খতনা দেওয়ার প্রথাও রয়েছে। সাতটি মহাত্মার উৎস ইয়াজদান। এর মধ্যে প্রধান মালাক টাউসকে দিনে পাঁচবার উপাসনা করে ইয়াজিদিরা।

মুসলিম এবং খ্রিষ্টান উভয় সন্দেহ প্রকাশ করেন যে ইয়াজিদি সম্প্রদায় “শয়তানের উপাসক”। অষ্টাদশীয় এবং উনবিংশ শতকে অটোমান তুর্কি নেতৃত্বে চরম নির্দয় ভাবে নিপীড়নের নিষ্পেষণের এবং গণহত্যার শিকার হয়। এতে হাজার হাজার নিহত হয় এবং প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বিগত সাদ্দাম হোসেনের আমলে ইয়াজিদি সম্প্রদায় প্রকাশ্যে কোন ধর্মীয় নির্মমতার শিকার হয়নি। তবে ২০০৭ সালের এপ্রিলে বন্দুকধারীরা একটি বাস থেকে ২৩ ইয়াজিদি পুরুষ টেনে হিঁচড়ে নিচে নামায় এবং তাদের প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করে। তার চারমাস পরে সম্মিলিত সিরিজ গাড়ি বোমা আক্রমণে নারী ও শিশু সহ কমপক্ষে ৩০০ জনকে হত্যা করা হয়।

ইয়াজিদিরা বর্তমানে আগের মত সর্বশ্রেষ্ঠ সংকটের মুখোমুখি মোকাবেলা করচে মানবিক দুর্যোগের। ইসলামী রাষ্ট্র খ্রিষ্টানদের জিজিয়া ( শরিয়া আইনে অমুসলিমদের উপর আরোপিত ট্যাক্স ) বা ইসলাম ধর্মে রূপান্তর বা দেশ ত্যাগ এই কয়টা শর্ত আরোপ করে। কিন্তু ইয়াজিদিদের জন্য কোন শর্ত দেওয়া হয়নি। তাদের প্রকাশ্যে মেরা ফেলা হচ্ছে ”শয়তানের উপাসক” হিসাবে।

ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের হৃদয় ভূমি নামে পরিচিত মসুল শহরে ইসলামী রাষ্ট্রের দখলে। ক্ষুদ্র শহর সিনজার একমাত্র বিশেষ জায়গা যেখানে ইয়াজিদি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। আগস্টের প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে কুর্দি যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে বড় মাপের গণহত্যার প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সিনজার দখলের পর অন্তত ৫শ’ ইয়াজিদিকে হত্যা করেছে। ইরাকের মানবাধিকার বিষয়কমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি জানান, তার কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্যরা অন্তত ৫০০ ইয়াজিদিকে গণকবর দিয়েছে। বেশ কয়েকজন নারী-শিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০০ নারীকে দাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করছে। এছাড়াও প্রায় ৫০ থেকে ১৫০ হাজারের মত ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের লোক জন আটকা পরে আছে সিনজার পাহাড়ি এলাকায়। শতশত অনাহার এবং তৃষ্ণায় মারা গেছে। ইয়াজিদি তীর্থস্থান সবচেয়ে পবিত্র লালেশ ধংস্ব হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।

দু:খ্যজনক যে তারা প্রাথমিক অবস্থায় মিডিয়া অত্যাচারেও শিকার হয়েছে। সম্মেলিত অপারেশন কুর্দি বাহিনী এবং মার্কিন বিমান হামলার হস্তক্ষেপে তারা বেঁচে উদ্ধার হতে পারে কিন্তু এটি খুব শীঘ্রই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছেনা যে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে সক্ষম হবে। তার সম্ভাবনা অনেক কম।

এক শতাব্দী আগে ইরানের নিপীড়নে সেই সময় ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয় কিছু জরাস্থথ্রুরাষ্ট্র আর কিছু তাদের বংশধররা যারা ইরাকে আশ্রয় নিয়ে ছিল। তাদের রক্ষা করা বিশ্ব মানবতার বা বিশ্ব বিবেকের কর্তব্য। দেরীতে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দীতিয় দফা বিমান হামলা চালিয়েছেন। বিমান থেকে খাদ্য ত্রাণ সরবরাহ করেছে। যা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাদের সাহয্যে এগিযে এসেছেন ইংলান্ডসহ আরও অনেক দেশ। কিন্তু সব সহযোগীতায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।





http://www.atnewsbd.com/new/?p=660

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.