একটা স্বপ্ন ( সাধারণ অথবা পরাবাস্তব )

১০ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:২৪

( অদ্ভুত স্বপ্ন / the mysterious dream )....



অদ্ভুত স্বপ্ন নিয়ে কৌতুহলী খুব অল্প সংখ্যক মানুষের জন্য এই লেখা টা।



উৎসর্গ স্বপ্নের সেই "আমি" কে



আমি লেখক নই, বিজ্ঞানী ও নই। তাই কোন ঘটনা খুব সুন্দর করে লেখা বা কোন স্বপ্ন কে বৈজ্ঞানিক বা পরাবাস্তব যুক্তিতে ব্যখ্যা করা ও আমার জন্য খুব কঠিন। অন্যান্য মানুষের মত ও আমি ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি। বেশির ভাগ স্বপ্ন ই আমি ভুলে যাই। কিন্তু কিছু স্বপ্ন দেখে কিছুটা সময় মনে রাখি। কুল কিনারা করতে পারি না। পরে তাও ভুলে যাই। কিন্তু কিছু স্বপ্ন দেখি একাধিক বার। মানে আমি স্বপ্নে যে জায়গায় যাই সে জায়গাটা আমার পরিচিত। কিন্তু আমি নিশ্চিত বাস্তব জগতে আমি সেই জায়গায় যাই নি। আবার কিছু কিছু স্বপ্নের পর অনেক টা বেশ কিছুক্ষণ মনে থাকে। এবং সবচেয়ে যেটা অবাক লাগে সেটা হল এরপর শারীরিক কিছু রেস্পন্স। ডাক্তার হিসেবে তাও এবং অনেক আগে থেকে স্বপ্ন বিষয়ে কিছু কৌতুহলের কারণে আমি বেশির ভাগ স্বপ্নের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারি নিজেকে। কিন্তু অদ্ভুত কিছু স্বপ্ন আছে, যা আমি ব্যাখ্যা করতে পারি না। একটু আগেই আমি একটা দেখলাম। খুব বেশি বাস্তব মনে হচ্ছে স্বপ্ন টাকে। যদি কারো আগে কখনো এমন হয় বা নিয়মিত হয় আমাকে জানাবেন কষ্ট করে । নিচেই একটুক্ষণ আগের দেখা স্বপ্ন টা যতটুক মনে আছে লিখলাম। স্বপ্ন দেখে যতটা অবাক আমি তার চেয়ে বেশি অবাক স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমার নিজের অবস্থা দেখে। এর ব্যাখ্যা কি এটা শুধুই আরেকটা সাধারণ স্বপ্ন নাকি আমি আসলে অন্য কোথাও ছিলাম , অন্য কোন মানুষের দেহে বা অন্য কোন জগতের অন্য কোন "আমি" তে ?





স্বপ্নের প্রথম অংশ ঃ



অনেক খোলা একটা প্রান্তরে আমি দাঁড়িয়ে আছি। সেই খোলা মাঠের এক প্রান্তে অনেকগুলা ছোট ছোট কিন্তু খোলামেলা খড়ের ঘরের মত। তার উপরে পুর্নিমার মত চকচকে আকাশ। তা র পাশের আকাশের গায়ে অদ্ভুত সুন্দর কিছু আকৃতি ফুটে আছে। কিছু আকৃতি খুব বেশি সুন্দর, কিরকম জানি একটা স্পষ্ট অবয়ব ধরে আছে। রাতের আকাশে তারা/নীহারিকা বা দিনের আকাশে মেঘ অনেক সময় এরকম সুন্দর কিন্তু অস্পষ্ট অবয়ব তৈরি করে। কিন্তু এত স্পষ্ট আর সুন্দর অবয়ব দেখে আমি সামনে এগিয়ে যেতে থাকি। আমাকে যেভাবে ই হোক এর ছবি তুলে রাখতে হবে। এগোতে এগোতে আমি ঘরগুলার কাছে পৌঁছাই। একটা হালকা বাতাস মনে হয় হচ্ছে, কিন্তু মুহূর্তে কি বাতাসের বেগ বাড়ল ? আমি ঘরের ভিতর থেকে আকাশের অবয়ব দেখার জন্য দাঁড়ালাম। হঠাত খেয়াল করলাম ঘরের মাঝে এক পাশে একজন মেয়ে আপন মনে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্ভবত চশমা পড়া , পাতলা গড়ন। আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম। হঠাত কিছু একটা হল, ভুমিকম্পের মতন। আমি আমার পাশে আরেকজন রমনীকে খুঁজে পেলাম। জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারলাম সে আগের মেয়েটির বড় বোন।





স্বপ্নের ২য় অংশ ঃ



আমি একটা ঘোড়ার গাড়ি জাতীয় গাড়িতে। আমার গাড়িতে একজন গাড়োয়ান, একটা বাচ্চা, সেই বড় বোন টি, আমি । কোথাও যাচ্ছি। গাড়িতে করে কোথাও যাওয়ার সময় মেয়েটি আর বাচ্চাটা নেমে গেল পাশের কোথাও। আমার পাশে ই একটা পরিচিত একটা গাড়ি এসে থামল। গাড়িটাকে দেখতে দেখতে ই আমাকে দেখে একজন চিৎকার করে কিছু বলল। আমি শুনতে পেলাম না কিন্তু মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম আমি এখানে আর নিরাপদ না। আমি আমার পাশের গাড়িটাতে উঠে বসলাম। গাড়িতে স্টার্ট দিলাম। পিছনে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমার গাড়িতে সম্ভবত আরো ২ জন আছেন, সম্ভবত আমার মা , আমার স্ত্রী। আমি নিশ্চিত না। আমি গাড়ী নিয়ে পালাচ্ছি। আমি কে ? আমি কি বিপ্লবী না সন্ত্রাসী আমি জানি না। কিন্তু পালাতে হবে বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি আমি কোন একটা সংগুঠনের কোন একটা গুরূত্বপূর্ণ পদে। আমি খুব ই দ্রুত চালাচ্ছি গাড়ি। কিন্তু আমি আমার গাড়ির গতিতে যেন কারো ক্ষতি না হয় সে খেয়াল ও রাখছি একিসাথে। একজন অনুসরণকারী আমাকে প্রায় ধরে ফেলেছে। সে আমার গাড়ির পাশেই চলে এসেছে। তাকে আহত করলাম ধাক্কা দিয়ে। কিন্তু একি সামনে গাড়ির জ্যাম। কিন্তু আমি আসতেই একটু পর জ্যাম টা ছু্টে গেল, আমি আবার গাড়ি নিয়ে ছুটছি। কিন্তু অনেকদূর যেতে না যেতেই আবার সামনে অনেক গাড়ি , গতি কমিয়ে, কিছুটা ভেবে নেমে পড়লাম। পায়ে হেঁটে বা দৌড়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছি।আমি জানি আর কিছুটা হলে আমাকে আর ধরতে পারবে না। কিন্তু হঠাত করেই প্রচন্ড হতাশায় আমি থেমে গেলাম। আর পালানোর পথ নেই। আমার সামনে একটা গাড়িতে ওড়া ৪ জন। একজন বাইরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে কিছুটা সতর্ক , কিছুটা সহমর্মী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবকি ৩ জন গাড়ীর ভেতর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে শীতল দৃষ্টিতে। সেই আহত ব্যক্তি ও মনে হচ্ছে পৌঁছে গেছে। আমি বুঝলাম, আমার এখানেই সমাপ্তি।এরাই আসছে আমার খোঁজে। আমি হতাশ, প্রচন্ড হতাশ, কিন্তু আমি শান্তভাবে একজনের কাছ থেকে মোবাইল জাতীয় কিছু একটা চেয়ে নিলাম। সম্ভবত বাসায় শেষ কথা বলে নিতে চাইলাম। রাত টা ও কি শেষের পথে !





স্বপ্ন থেকে জেগে উঠাঃ

প্রচন্ড হতাশা নিয়েই স্বপ্ন থেকে জেগে উঠেই আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমি খুব ই হাপাচ্ছি। অনেক ক্ষণ দৌড়ানোর পরে যেমন হাঁপাই সেরকম । এবং কিছুটা পানি পিপাসা। আমার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি অনেক বেশি। আমার হৃদপিন্ডের গতিও যথেষ্ট বেশি। আর অনেকক্ষন দৌড়ানোর আর টেনশনে থাকলে যেমন অনুভুতি হওয়ার কথা ঠিক তেমন ই অনুভুতি। আবার ঘুমাব কিনা ভাবলাম। কিন্তু এত বাস্তব স্বপ্ন টা । ভাবলাম লিখে রাখি। আমি তো ডায়েরী লিখি না। ব্লগ ই একমাত্র জায়গা। যেখানে অনেক মানুষের অনেক রকম ভাবে আছে যুক্তিসম্পন্ন ব্যাখ্যা করার বিরল ক্ষমতা। আবার অনেকেই হয়ত উড়িয়ে দিবেন। যাই হোক এই লেখাটি যখন লিখছি, পর্দার ফাঁক দিয়ে একটা জিনিস দেখে আমি রীতিমত চমকে গেলাম। সেটা হচ্ছে আজ আসলেই জোছনা। আমি যখন ঘুমাতে যাই, তখন ছিল বিকাল, আর এখন আকাশে আসলেই জোছনা, আর আরো বিস্ময়কর হল, ঝকঝকে আলোটা দেখে আমি মোটামুটি নিশ্চিত আমি এই আলোটাই দেখছি। একি রকম ঝকঝকে এই আলোর মাঝেই আমি খোলা প্রান্তরে আকাশের দিকে তাকিয়ে সুস্পষ্ট অবয়ব দেখছিলাম আর আমার ক্যামেরা খুঁজছিলাম।





স্বপ্ন নিয়ে আমার কৌতুহল অনেক আগে থেকে। সেই কারণেই প্রথম বারের মত আমার দেখা একটা স্বপ্ন কে আমি ঘুম থেকে জেগেই লিখে রাখলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে, লিখে রাখাটা ঠিক হল না। স্বপ্ন হয়ত লিখে রাখার জন্য না, হয়ত দেখে ভুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু স্বপ্ন টা খুব বেশি বাস্তব ছিল।

১০ টি +১/-০