![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতীক ওমর
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে চীন সচারচার প্রকাশ্যে আসেনা। তারা বাণিজ্য রাজনীতি নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়। রাশিয়ার চরিত্রও একই। এরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশের সমর্থন সহযোগিতা নিয়ে থাকে। কিন্তু সরকার রাজনৈকিতভাবে বিপদে পড়লে প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়ায় না। ঘোষণা দিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রের পক্ষে তেমন কিছু করে না। পাকিস্তান তার নিকটতম সময়ের জ্বলন্ত উদাহরণ। ইমরান খানের সাথে চীনের দহরম মহররম সম্পর্ক। চীন পাকিস্তানে অনেক বড় বড় প্রকল্প করেছে ইমরান খানের সময় থেকে। রাশিয়ার সাথেও লাউয়ের মত মিশে গিয়েছিলেন ইমরান খান। তিনি ক্ষমতাচূত হওয়ার আগে রাশিয়া সফর ছিলো তার সর্ব শেষ রাষ্ট্রিয়ভাবে বিদেশ সফর। সেই সফর শেষ করে দেশে ফেরার পরই ইমরান খানের পতনের ঘন্টাধ্বনি বেজে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ইমরান খান তার ক্ষমতার মসনদ টিকে রাখতে পারেননি। পুরো পকিস্তানের জনগণ পক্ষে থাকার পরও ইমরান খান আমেরিকার রাজনীতির কাছে পরাস্ত। ব্যটে, বলে, ফিলডিংয়ে কোথাও দাঁড়াতে পারলেন না। মাঠের বাইরে পাঠিয়েই আমেরিকা দম ছেড়েছে। এতো কিছু ইমরান খানের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার পরও ইমরান খানের পক্ষে প্রকাশ্যে কথা বলতে বা সমর্থন দিতে দেখা যায়নি। চীন এবং রাশিয়া দুই বন্ধু দেশই নীরব দর্শক হয়ে পুরো খেলা উপভোগ করেছে। তাদের দেশীয় স্বার্থের জন্য কোন সরকারের পক্ষে প্লেয়ার হয়ে খেলে না। খেলা দেখে এবং বিশ্লেষণ করে। তারপর বিজয়ীদের গলায় মালা পরিয়ে তাদের সাথে থেমে যাওয়া কাজগুলো শুরু করে।
বাংলাদেশকে নিয়ে একের পর এক মার্কিন হস্তক্ষেপ বা পদক্ষেপ যাই বলি না কেন করার পরও একই ভূমিকায় ছিলো চীন। রাশিয়ার সাথে যেহেতু বাংলাদেশের সেই অর্থে তেমন লেনদেন নেই সেজন্য রাশিয়ার পক্ষ নেয়া বা বিপক্ষে অবস্থান করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল তেমন দৃষ্টি দিচ্ছে না। কিন্তু চীন-বাংলাদেশের সম্প্রতিক বছরগুলোর জোড়ালো সম্পৃক্ততার কারণে চীনের দৃষ্টি ভঙ্গির উপর নজর রাখছেন রাজনীতি বিশ্লেষকগণ। চীন এতো দিন বাংলাদেশ নিয়ে নীরবতা প্রদর্শন করে গেলেও এখন সরাসরি মুখখুলেছে। তাদের শক্ত অবস্থানের কথা প্রকাশ্যে বলে দিয়েছে। তারা শেখ হাসিনার কর্মকান্ড এবং সম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার স্যাংশ বিষয়ে সব সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ফলে সম্প্রতিক সময়ের বাংলাদেশের রাজনীতির গতি কিছুটা থমকে যাওয়ার মত মনে হচ্ছে। আবার চীনের সামনে আসার কারণে আমেরিকা তাদের পূর্ণশক্তি নিয়েও মাঠে নামতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতি গতি হারাবে না গতি বৃদ্ধি পাবে সেটি দেখতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরো। তবে চীনের প্রকাশ্যে কথা বলার বিষয়টা নিয়ে রাজনৈতিক মহল নতুন করে ভাবনায় পড়েছে সেটা অনেকটা নিশ্চিৎ করে বলা যায়।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কি যা বলেছে চীন: মার্কিন স্যাংশন ঘোষণার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্তুব্য করেছেন। এসব মন্তব্য দেশ এবং দেশের বাইরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। চীনও শেখ হাসিনার এসব কথা মনোযোগসহকারে শুনেছে। এতোদিন শেখ হাসিনার এসব বিচার বিশ্লেষণ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শেখ হাসিনার প্রতি চীনের দৃঢ অবস্থানের কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েই কথা বলেছেন এমন না। তিনি কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশের হয়ে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে। সাক্ষাৎকারের মূল অংশ ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের সামাজিক সাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের উপপরিচালক ওয়াং ওয়েনবিনের মন্তব্য প্রকাশ পেয়েছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি যে, বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে তিনি ধাঁধার মতো দেখতে পেয়েছেন। আর নিষেধাজ্ঞা যেন একটা খেলার মতো। তিনি আরও বলেছেন, যেকোনো দেশের সরকারকে উৎখাতের ক্ষমতা তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ ভীত নয়। যেসব দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু কেনা বন্ধ করতে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে চীনের মন্তব্য কী? জবাবে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আমরা জানি। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের বর্ণবাদী বৈষম্য, অস্ত্র নিয়ে সহিংসতা, মাদকের বিস্তার নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট দেশ চোখ বন্ধ করে রাখে। তারাই আবার গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের কথা বলে বাংলাদেশ এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশি জনগণের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েই কথা বলেছেন এমন না। তিনি কথা বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশের হয়ে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের হয়ে। চীন এবং বাংলাদেশ ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষা, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক স্বাধীন নীতি সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় এমন উন্নয়নের পথ অনুসরণে সমর্থন করি। সব রকম আধিপত্য এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অন্য দেশগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। একই সঙ্গে আমরা জাতিসংঘকেন্দ্রীক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা জোর দেয়া আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের মৌলিক নিয়ম এবং মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যত গড়ে তুলতে কাজ করবো।
আসলে চীনের এই সমানে আসা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠে কতটা প্রভাব পড়বে আর মার্কিনরা চীনের এই অবস্থানকে কোন চেখে দেখবে সেই দিকে এখন সবার নজর। তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় চীনের এই প্রকাশ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দেয়ায় মার্কিনরা তাদের কৌশল এবং শক্তি দুটোই বৃদ্ধি করবে সরকার সরানোর প্রকল্পে।
©somewhere in net ltd.