![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতীক ওমর
কৈশরের দূরন্তপনা, যৌবনের উচ্ছ্বাস, বিকশিত হওয়ার প্রথম শিঁড়ি সব কিছুর সাথে মহিমাগঞ্জের ধূলো-মাটি জড়িয়ে আছে। বিকেলে দল বেঁধে চিনিকলে গিয়ে মাত্র জমাট বাঁধা কাঁচা চিনি খাওয়া, কলের মধ্যে ঢোকার আগে অপেক্ষমান আঁখ চিবিয়ে খাওয়া অথবা রেলস্টেশনের সতেজ ঘাসে বসে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। মাগরিবের আজান হলে স্টেশন মসজিদে নামাজ আদায়। পূর্ণিমা রাতে হলের ছাদে জোসনা অবলকন। কত স্মৃতি বাতাসে, ইথারে মিশে আছে গুণে শেষ করা যাবে না। আসাদ, আতাউর, আলমগীর, জুয়েল, জামিরুল, মুক্তার, এরশাদ, আবু তাহের, ফিরোজ, বাবুল, মাসুদ, শাহরুল, সুলতান, শাহালম, শামীম, আব্দুল লতিফ, বুলবুল,নাজমুল, আহসান সোহেল, আতিকুর রহমান আতু, তাজুল, আলেক উদ্দিন, ময়নুল হক, আমিনুল ইসলাম, সজিব হোসেন, আনারুল ইসলাম, মঞ্জুরুল ইসলাম, জিয়া, মাসুদ। পরবর্তীতে এসে যোগ হয় রুবেল, রেজা। বোনারপাড়া থেকে এসে আমাদের আড্ডায় যোগ দিতো মোকছেদ।
প্রায় দুই যুগ আগের স্মৃতি এসব। এদের অনেকের সাথেই কালে ভাদ্রে যোগাযোগ হয় আবার অনেকের সাথে নিয়মিত যোগযোগ হয়। অনেককে খুঁজে পাইনি দুইযুগ। জীবন ও জীবীকার তাগিদে সবাই ছিন্নভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছে। কেউ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত আর বেশির ভাগ এলাকার বাইরে। কর্মময় জীবনে এসে কেউ কারো কথা ভাবার সময় হয়তো এখন খুব বেশি পায় না। তবে আমাকে আমার সব বন্ধুদের কথা প্রায় সময়ই নাড়া দেয়। আমি সুযোগ পেলে বন্ধুদের খুঁজে বের করি। কথা বলি। অনেক সময় রাত গভীর হলে বন্ধুদের মুখগুলো একে একে সামনে এসে দাঁড়ায়। হারিয়ে যাই ফেলে আসা অতীতে। ২০০১ সালের পর এসব বন্ধুদের সাথে আর আড্ডা দেয়া হয়নি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত কিছু বন্ধু এক সাথে ছিলাম। ২০০৪ সালের পর উল্লেখিত বন্ধুরা শতভাগ প্রায় আলাদালা হয়ে যাই। সবাই উচ্চ শিক্ষার জন্য এদিক সেদিক ভাগ হয়। ওই সময়ই আমরা হারাই হাসি-খুশির দিনগুলো।
আব্দুল লতিফ নামের বন্ধুটি আমার উপজেলায় বাড়ি হলেও ওর সাথে প্রায় দেড়যুগ পরে ২০১৮ সালে দেখা হয়। দীর্ঘদিন ওকে হারিয়ে ছিলাম। এখন নিয়মিত ফোনে কথা হয়।
ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ফিরোজ। সাদুল্লাহপুরের ভাতগ্রামে ওর বাড়ি। এক সময় চব্বিস ঘন্টার সহপাঠি ছিলো ফিরোজ। ২০০১ সালের পর ওর সাথে আর দেখা হয়নি। হয়নি কথাও। বহু বছর ওকে খুঁজেছি। সাদুল্লাপুরের কারো সাথে দেখা হলেই ভাতগ্রামের ফিরোজকে তিনি চেনেন কিনা জিজ্ঞেস করেছি। কেউ ওকে বের করে দিতে পারে নি। মাস কয়েক আগে আমার আরেক বন্ধু রুহুলের সাথে কথা প্রসঙ্গে ভাতগ্রামের ফিরোজের কথা ওঠে। ওকেও বলি আমার সেই বন্ধুকে কোন ভাবে খুঁজে দিতে পারবি কিনা। রুহুল সাহস করে বললো হ্যা আমি চেষ্টা করবো। সে তার পরিচিত একজনকে ফোন দিয়ে সে পর্যন্ত ফিরোজের সন্ধান পায়। ওই দিনেরই ফিরোজের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে কথা বলি। দীর্ঘ দুই যুগপর ফোনের কথাতেই সে আমাকে চিনতে পেরেছে। তুই সাংবাদিক ফারুক না? আমি আশ্চার্য হয়ে গেলাম। ফিরোজ এখন ঈশ্বরদীর লালপুরে চিনি কলে কর্মরত আছে। চলতি মে মাসের ১৫ তারিখে ওর সাথে দেখা করতে ঈশ্বরদীর লালপুরে যাই। ওর বাসায় ফল-জল খেয়ে ঘন্টাখানেক আড্ডায় অসংখ্য স্মৃতি নাচাচাড়া করে ওঠে বুকের মধ্যে। আসাদ, আতাউর এবং এরশাদের সাথে ফোনে ওর সাথে কথা বলে দেই। সবার মধ্যেই হারানো দিনগুলো এক মহুর্তের জন্য হাজির হয়েছিলো সেদিন। ফিরোজ-লাতিফের মত আরো অনেক বন্ধুর সাথে যুগের পর যুগ দেখা নাই। কথা নাই। তাদেরকেও খুঁজছি। বন্ধুরা তোরা কে কোথায় কীভাবে আছিস সুযোগ পেলে যোগাযোগ করিস। আবারো তোদের সাথে মিশে যেতে চাই অতীতের বিকেল সন্ধ্যাগুলোর মত।
©somewhere in net ltd.