![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন পথে যাচ্ছে দেশের রাজনীতি? কথাটার মাঝে একটা অধিবিদ্যক সংশয় থাকলেও এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে যে চিত্রটি মানসপটে ভেসে ওঠে তা মোটেই সুখকর নয়।
আওয়ামী লীগের বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সমাজে এখনও অনেকটা গ্রহণযোগ্য হলেও দলটির মাঝে ক্ষয়িষ্ণু ধারা দেখা যাচ্ছে। দেশের সর্ববৃহত রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও তারা পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসার মানসিকতা ধারণ করে বলে মনে হয়না।পাচ বছর লুটপাট করে তারপর হাওয়া হয়ে যাবে, কিছু লোক মারা পড়বে। তাতে কেন্দ্রের কিছু যায় আসেনা। দলটির বর্তমান সরকারের সময়কালের অপশাসন ও দুঃশাসনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। দলে ন্যূনতম কোন গণতান্ত্রিক চর্চা নেই। সংগঠন নেই বললেই চলে। দলটি রাজনৈতিকভাবে চরম নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে। বিএনপি'র অবস্থাও একই। তবে আগামি নির্বাচনে তারাই জিতবে, এটা মোটামুটি পরিষ্কার। অন্তত সিটি নির্বাচনের ফলাফলে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার কারণেই বিএনপি এবার ক্ষমতায় আসবে, তাদের নিজেদের কোন কৃতিত্বের কারণে নয়। জনগণ এদের কাউকেই বিশ্বাস করেনা, তাদের ভোট দেয় বিকল্প কোন শক্তির অনুপস্থিতির কারণে।
জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি‘র কোন নিজস্ব রাজনীতি নেই। জিয়াউর রহমান দেশে আওয়ামী বিরোধী নানা উপদানকে একত্র করে দলটির গোড়াপত্তন করেন। তার কৃতিত্ব এখানইে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে দলটি যে মার খায় তাতে এখন পর্যন্ত সে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। আগামি নির্বাচনে তার সরকার গঠনের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে তা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে, অন্য কোন কারণে নয়- যা আমি আগেও বলেছি। রাজনৈতিকভাবে চরম দৈন্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে দলটি। শাহবাগে গণ জাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় যা দেখা যায়।
বড় দুই দলের ঐক্যের প্রতীক হচ্ছে দুই পরিবার। দলের প্রধান নেতা এ দুই পরিবারের না হলে সেখানে চরম কোন্দল শুরু হয়ে যায়, ১/১১-এর সময় যা আমরা দেখেছি। তাদের বয়স হয়েছে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তারা একদিন চলে যাবেন। কথা হচ্ছে, তারা চলে যাওয়ার পর তাদের বংশধরেরা দল দুটোকে কীভাবে পরিচালনা করবেন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক শূন্যতাকে তারা কতটা মোকাবিলা করতে পারবেন। বিশেষতঃ উভয় দলের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে আমারা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় কথিত ‘আস্তিক-নাস্তিক’ ইস্যুতে হেফাজতের মতো একটি নামগোত্রহীন দলের উদ্ভব দেখলাম। তাদেরকে তুষ্ট করার জন্য দলদুটোর ততপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। খালেদা জিয়া তো তাদের পাশে পানি ও খেজুর নিয়ে দাড়ানোর জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বানও জানালেন।
এই রাজনৈতিক শূন্যতার মাঝে বিকল্প শক্তি হিসেবে বামপন্থীদের উত্থানের ব্যর্থতা আমার কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তাদের কাজকর্মে এমন কিছু মনে হয়নি যে তারা নিজেরা আদৌ কোনদিন ক্ষমতায় যেতে চায়। ইতিহাসে বামপন্থা বোধহয় সবচেয়ে বাজে সময় অতিবাহিত করছে। আসলে তারা একরকম নির্ঝঞ্জাট জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আন্দোলন সংগ্রাম নেই। শ্রমিক-কৃষক আপামর জনতার সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই। বড় দুই দলের ছায়াতলে তারা নির্ভার রাজনীতি করতেই চায়। ক্ষমতায় যাওয়ার যে ঝক্কি সেটা পোয়াতে তারা একদম নারাজ। তাদের রাজনীতি এখন ভজন-কীর্তনের মতোই মনে হয়।
তো এই পরিস্থিতিতে গোঁফে তা দিচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। সাথে ভারত তো আছেই। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধসে পড়া তাদের জন্য পোয়াবারো। আর তাকে পুষ্ট করার জন্য জামায়াত-জাতীয় পার্টি ও হেফাজতের মতো শক্তিগুলো তো রয়েছেই। আছে কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ্ আবু সা্ঈদ ও ড. ইউনূসের মত মানুষেরা। যাদের কাছে স্বাধীনতার চেয়ে উপনিবেশই শ্রেয়।ফরহাদ মজহার খুব সম্ভবত সে পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছেন। নামকাওয়াস্তে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর দুর্বলতায় দেশে ইসলামি রাজনীতির উত্থান ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। কারণ, ইসলামি রাজনীতি যতই ইহুদী নাছাড়াদের গালাগাল করুক না কেন, তাদের সাথে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গলায় গলায় বন্ধুত্ব- অন্তত ইতিহাস তাই বলে। এর যে ব্যতিক্রম নেই তা নয়, সে বিষয়ে অন্য সময় কথা বলার আশা রাখি। এ পরিস্থিতির সাথে ১৯৭০-এর দশকের মধ্যপ্রাচ্যের আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময়কার একটি মর্মগত মিল দেখতে পাচ্ছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সে-সময় পৃথিবী ব্যাপী রাজনৈতিক ইসলামের জন্ম হয়, মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকানোর জন্যে। এই রাজনৈতিক ইসলাম আরব জাতীয়তাবাদকে ঠেকিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিস্তার ঘটায়, যার পেছনে থাকে সামরিক শক্তি। মিসরে ঠিক যা ঘটেছে। সেখানকার সামরিক সরকারও ছিল মার্কিন মদদপুষ্ট, মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুডও মার্কিন মদতে তাহরির স্কয়ার সৃষ্টি করেছিল। আবার সেই মুরসি জনরোষের কবলে পড়লে সেই সামরিক বাহিনীকে দিয়ে তাকে সরিয়ে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে- তেমনি সেখানে প্রকৃত অর্থে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গড়ে ওঠার সম্ভাবনাকে তিরোহিত করেছে। অন্তত সাময়িকভাবে।
বিষয়টা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি যত খারাপই হোক; জনগণের সাথে রাজনীতি করতে গিয়ে তারা আর যাই করুক, সাম্রাজ্যবাদের কাছে দেশটাকে পুরোপুরি বিকিয়ে দিতে পারেনা। সে কারণে কিছুটা হলেও সমাজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া জারি রাখতে হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু এই রাজনৈতিক ইসলাম ও সেনাবাহিনীর তো সেই বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের জন্মই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের গর্ভে। তারা সবকিছুকে অগ্রাহ্য করে দেশকে সাম্রাজ্যবাদের কাছে বিকিয়ে দিতে পারে। দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সবকিছুকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, দেশে প্রকৃত অর্থে একটি গণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ আমাদের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সেটা ঐ ড. ইউনূসকে দিয়ে হবেনা। তিনি সামরিক সরকারের মদতে কোন গণতন্ত্র আমদানি করবেন, তা আমরা জানি। গণজাগরণ মঞ্চও সে রাজনৈতিক অভিপ্রায় ধাবন করেনা। কালের এই আহ্বানে যে/যারা সাড়া দেবেন, তারাই হবেন কাণ্ডারি। আমরা তাদের প্রতীক্ষায় রইলাম।
©somewhere in net ltd.