নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতীকের ব্লগ

'মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি'

প্রতীকহ্যাপি

চিন্তা ও তৎপরতায় বিশ্বাসী

প্রতীকহ্যাপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশেই ট্রেড ইউনিয়ন দরকার/বেশি মজুরি মানেই কম মুনাফা নয়

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

গার্মেন্ট মালিকরা তাদের কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন হতে দিতে চান না, মূলত এই ভয়ে যে ট্রেড ইউনিয়ন হলে কারখানাগুলোতে লাল বাতি জ্বলবে। শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে সারাদিন রাজনীতি করবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ভয় একেবারে শতভাগ অমূলক নয়। তবে তা ছাপিয়ে এখানে প্রধান কারণ হচ্ছে, নিজেদের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। আবার ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে গার্মেন্ট শিল্পে চলমান এই অরাজকতা রোধ করাও সম্ভব হত অনেক সহজে। এ ব্যাপারটাও সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবতে হবে।



ট্রেড ইউনিয়নঃ



শ্রমিক ও মালিক উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করার লক্ষ্যে যৌথ দরকষাকষির কেন্দ্র হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন। দেশের প্রচলিত শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী তার অর্থ এই দাঁড়ায়। এটা মূলত পেশাজীবি সংগঠন। সারা দুনিয়ায়ই এর অস্তিত্ব রয়েছে। শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় ট্রেড ইউনিয়নের অনেক সঙগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু আমাদের দেশে ট্রেড ইউনিয়ন সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এই পেশাজীবি সংগঠন বা সংগঠনসমূহের জোটকে দলবাজির অর্থে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করে ফেলা। সরকারী যেসব প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে, সেখানে দেখা যায় যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন ট্রেড ইউনিয়ন সেই দলের শ্রমিক সংগঠনের দখলে চলে যায়। তা হয়ত নিয়মতান্ত্রিক উপায়েই ঘটে, তবে এর পেছনে একটি হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এইসব তথাকথিত শ্রমিক নেতাদের সাথে যোগসাজশে হরিলুটে মেতে ওঠেন, এমন নজির ভুরি ভুরি দেওয়া যায়। যার ভাগ সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত যায়। এ কারণেই সরকারি অনেক উতপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান মুখ থুবরে পড়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজীও এর বাইরে নয়। তবে এর জন্য শ্রমিকরা দায়ী নন, দায়ী হচ্ছে সরকার- আওয়ামী লীড়-বিএনপি-জাতীয় পার্টি- জামায়াত, এমনকি বামপন্থীদের একটা অংশও এই দায় এড়াতে পারবেন না।



কিন্তু কথা হচ্ছে, মাথা ব্যাথা হলে তো মাথা কেটে ফেলে লাভ নেই। তার প্রতিকার করতে হবে। ট্রেড ইউনিয়নকে রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে। দরকার হলে আইন করেই তা করতে হবে। তবে আইন করে সব সমাধান হয় না, যদি না আমরা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে না পারি। এ কাজটা অনতিবিলম্বে শুরু করতে হবে, সংশ্লিষ্ট সকলকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।



গার্মেন্ট শিল্পে অবিলম্বে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। তবে ট্রেড ইউনিয়ন কী জিনিষ, তার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ভিত্তি ও আইনগত দিকটি সম্পর্কে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক-মালিক সবাইকেই সম্যকরূপে ওয়াকিবহাল হতে হবে। কারণ, গার্মেন্ট শিল্পে যতই শ্রম শোষণ হোক, এটা আমাদের দেশের শিল্প। এটাকে রক্ষা যেমন একদিকে করতে হবে, তেমনি শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, তাদের স্বাস্থ্য, বাসস্থান, তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও বেড়ে ওঠার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য দরকার ট্রেড ইউনিয়ন। একইসাথে, এই ট্রেড ইউনিয়ন আবার সময়মতো যাতে শিপমেন্ট হয়, তাও নিশ্চিত করবে। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ ও একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই। মোদ্দা কথা, ট্রেড ইউনিয়নকে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। এ লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ-সরকার সবাইকেই একটি ঐকমত্যে আসতে হবে। মালিকদেরও এটা বুঝতে হবে। গুণ্ডা বাহিনী পেলে শ্রমিকদের হেনস্তা করার কৌশল পরিহার করতে হবে।



অর্থনৈতিক পরিবেশঃ



আমাদের দেশের গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমকিদের মানুষ মনে করেন না, এ নিয়ে দ্বিতীয় কোন কথার অবকাশ নেই। এটা অনেক পুরোনো কথা, তবে মাঝে মাঝে পুরোনো কথারও পুনরাবৃত্তি করতে হয়। নইলে মৌলিক দিকটা অনেক সময় দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। সে কারণেই তাজরিনে আগুন লাগার পরও শ্রমিকদের বের হতে দেওয়া হয়না। রানা প্লাজা ধসে ১৫০০ শ্রমিক মারা যায়, অথচ এরা নির্বিকার। এমনকি এরা এত ক্ষমতাধর যে, এদের বিচারও হয় না। এর পেছনে আমাদের জাতীয় পুঁজি গঠনের ধরনটাই মূলত দায়ী। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে পুঁজি গঠন হয়েছে মূলত লুটপাট ও দুর্ণীতির মাধ্যমে এবং তা আবার রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে। আমাদের শিল্পপতিদের কোন কিছু নির্মাণের কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয় নি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অধিকার সুরক্ষায়ও এদের ঘাম ঝরাতে হয়নি। বরঞ্চ উন্নত বিশ্ব যেসব শ্রমঘন শিল্পকে রাজনৈতিক ও পরিবেশগত কারণে পরিত্যাগ করেছিল, আমাদের শিল্পপতিরা সেগুলোকে বুকে টেনে এনেছেন। তাও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আবার ফেরত না দিয়ে। রাজনৈতিক ফন্দি ফিকির করে নানারকম ব্যবসা বাণিজ্যের লাইসেন্স নিয়ে, ফরিয়া ব্যবসা করে ও স্টকের মাল উধাও করে। ফলে এই গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা কখনও বিদেশী ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষি করতে পারেনা। এমনও শোনা যায়, ৫ বছর আগের চেয়ে কম দামে অনেক গার্মেন্ট অর্ডার নিচ্ছে। আবার ডব্লুটিও’র সাথে বিবাদ করে নিজেরা নতুন নতুন শিল্প গড়ে তুলতে পারেন না। তবে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে নিঃসন্দেহে- সে বিষয়ে পরে আলোচনা করব। তবে এখন পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কিছু করার ক্ষমতা আমাদের দেশের সরকার বা উদ্যোক্ত কারোরই হয়নি। কিন্তু মালিকরা তো আর মুনাফা কমাতে রাজী নন। আর তার বলি হচ্ছেন এইসব বাস্তুচ্যুত মানুষেরা। তাদের ঘারে জোয়াল টা চাপিয়ে মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন। রানা প্লাজা ধসের পর রয়টার্স তাদের একটি প্রতিবেদনে দেশের গার্মেন্ট মালিকদের বিলাস বহুল জীবন যাপনের চিত্র তুলে ধরে। তারা এও মন্তব্য করেন যে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট মালিকদের জীবন যাপন ইউরোপ আমেরিকার শিল্পপতিদের সমপর্যায়ের।



বস্তুত, আমাদের দেশের গার্মেন্ট মালিকরা এখন পর্যন্ত উতপাদকের চরিত্র অর্জন করতে পারেনি। তারা সর্বোচ্চ উপ- ঠিকাদার। এর প্রমাণ হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত পোশাকের কোন বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গড়ে ওঠেনি। আমাদের গার্মেন্টগুলো বিভিন্ন বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের অর্ডার সরবরাহ করে থাকে। এমনকি মার্কিন সেনা বাহিনীর ইউনিফর্মও সরবরাহ করে আমাদের গার্মেন্টগুলো। কিন্তু দেশীয় ব্র্যান্ড নির্মাণে কোন আগ্রহ এদের মাঝে এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণেও তা হতে পারে, তবে তাদের এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা দেখা যায় না। লুটেরার চরিত্র এ কারণে যে, তারা এটাও বোঝেনা একজন অসন্তুষ্ট শ্রমিকের চেয়ে একজন সন্তুষ্ট শ্রমিকের উতপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি হয়। এতে অপচয় অনেক কম হবে, শ্রমিকের সংখ্যাও কম হলে চলবে। এতে অনেক শ্রমিক চাকরি হারাবেন, তবে যে পরিমাণ অর্ডার আমরা পাচ্ছি তাতে এটা কোন সমস্যা নয়। অর্থাত আখেরে যে তাদেরই লাভ তা বোঝার ক্ষমতাও তাদের নেই বা সেই কষ্টকর পথ পারি দেওয়ার মানসিকতা নেই। তারা শুধু শর্টকাটেই ধনী হতে চান।



বেশি মজুরি মানেই কম মুনাফা নয়ঃ



শ্রমিকদের ভাল বেতন, উন্নত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা শুধুমাত্র মানবিক কারণেই নয়, দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি ফিরোজ আহমেদ এক নিবন্ধে দেখিয়েছেন, “ধরে নেয়া হলো দেশব্যাপী প্রায় ৪০ লাখ পোষাক শ্রমিকের মাসিক মজুরি দুই হাজার বা পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেলো। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকের থাকা-খাওয়ার ব্যয়কে যদি খানিকটা স্থিতাবস্থায় রাখতে সক্ষম হন, তবে:



১. মালিকদের লাভের ভাগ থেকে ৪০ লাখ গুণ ২ হাজার= ৮,০০০,০০০,০০০ (৮ শত কোটি টাকা) বাড়তি মজুরি হিসেবে শ্রমিকদের কাছে যাবে। বছরে ১২ গুণ ৮ = ৯৬,০০০,০০০,০০০ (৯ হাজার ৬শত কোটিটাকা) বাড়তি মজুরি হিসেবে শ্রমিকদের কাছে যাবে। মজুরি তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি পেলে বছরে এভাবে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা শ্রমিকের কাছে যাবে। মাসে চার হাজার টাকা মজুরি বৃদ্ধি পেলে বছরে ১৯ হাজার দুইশ’ কোটি টাকা বাড়তি মজুরি হিসেবে বাজারে যাবে। মজুরি মাসে পাঁচ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেলে ২৪ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছরে মজুরি হিসেবে বাজারে আসবে।

২. যে কোন বিবেচক মানুষই স্বীকার করবেন পোষাক- শ্রমিকরা এখন যে দশায় আছেন, সেটা কোনমতে টিকে থাকার স্তর। ন্যূনতম চাহিদা পূরণের মত অব্স্থা এটা না। তাদের জীবন মরুভূমির মত শুষ্কপ্রায়, এটাকে সজল করতে বাড়তি দুই-পাঁচ হাজার টাকা মোটেই যথেষ্ট কিছু না। ফলে এই টাকা পাওয়া মাত্র আর কোন কিছু বাদ দিয়ে তারা পণ্য কিনতে ছুটবেন সোজা বাজারে। বাড়তি বাড়িভাড়া আর খাদ্যশস্যের মূল্য যতটা সীমিত রাখা যাবে, ততটাই তারা নিত্য নতুন কিন্তু অত্যাবশ্যক পণ্য, সেবা ইত্যাদি কিনবেন। তার মানে এই বিপুল পণ্যের চাহিদা রাতারাতি বাজারে তৈরি হবে, যেটার প্রয়োজন এখনই তাদের জীবনে থাকলেও ক্রয়ক্ষমতার অভাবে তারা সেটা কিনছেন না, ফলে বাজারে সেটার কোন চাহিদাও তৈরি হচ্ছে না, ফলে সেটা আদৌ উতপাদিতও হচ্ছে না।



বাড়তি এই অর্থ দিয়ে পোষাক শ্রমিক কিনবেন কাপড়, জুতো, ইলেকট্রনিক পণ্য, তাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, উন্নত যাতায়াত, বিনোদন, ওষুধ এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা। বাড়বে পাঠাভ্যাস, বইপুস্তক আর পত্রিকা ক্রয়।

৩. নিজ দেশের শিল্পকলকারাখানার জন্য কৌশলী সুরক্ষানীতি প্রণয়ন করেই পৃথিবীর সকল শিল্পোন্নত দেশ নিজ দেশের শিল্পের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জন করেছিলো,এর ব্যতিক্রম একটাও নেই। সেই রকম নীতি অবলম্বন করলে বর্ধিত মজুরির ফলে সৃষ্ট এই বাড়তি পণ্যের চাহিদার একটা বড় অংশ দেশেই উতপাদিত হতে পারবে, ধীরে গোটটাই দেশে তৈরি হওয়া সম্ভব”।



ফলে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালে মালিকদের মুনাফা কমবে না, বরং পরিকল্পনা মতো এগুলো মুনাফা আরও বাড়বে। একইসাথে, ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প প্রসারিত হলে তো কথাই নেই। এতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। গার্মেন্ট খাতের উতপাদনশীলতা বাড়াতে তাই ট্রেড ইউনিয়নের কোন বিকল্প নেই। আজ যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকত, তাহলে এক ফালতু মন্ত্রীর কথাকে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা মনে করে শ্রমিকরা রস্তায় নেমে আসতেন না। মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তারা পর্যালোচনা করে দেখছেন, ন্যূনতম মজুরি কত হবে। ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে এর নেতারাই শ্রমিকদের নিবৃত্ত করতে পারতেন। আবার মালিকরাও ঈদের পর নতুন মজুরি দেওয়ার ফন্দি করছে, এটাও রোধ করা সম্ভব হত। এই অনাবশ্যক ভাংচুরের প্রয়োজন সৃষ্টি হত না। হলে ট্রেড ইউনিয়নকেই এর জবাবদিহী করতে হত।



চীন গার্মেন্ট ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের বাজার সামনে আরও সম্প্রসারিত হবে। এ-অবস্থায় এ শিল্পকে একটি কাঠামোগত রূপ দেওয়া অত্যন্ত জরূরী। যারা দিনরাত শ্রম দিয়ে এত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন, তাদের জীবনমান উন্নত হবে না, এটা হতে পারে না। এটা না হলে আমাদের শিল্পের ইতিহাসে তা একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। দুনিয়াতে আমাদের পরিচয় হবে সাব-কন্ট্রাকরের জাতি হিসেবে, উতপাদকের নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

ত্রিদীব বলেছেন: সহমদ

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৪

এফ এম-৯৭ বলেছেন: আসলে সব জায়গায় রাজনীতি হওয়ায়- ট্রেড ইউনিয়নেও যে রাজনীতি থাকবে না, তার নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না। তবে ট্রেড ইউনিয়ন হলে (অরাজনৈতিক) ভালো হয়।
আপনার পোষ্টটা দারূন লেগেছে। এই বিষয় নিয়ে- আমার লেখা-

বিজিএমইএ নেতাদের কুকীর্তি, ঢাল হিসাবে শ্রমিক, নেপথ্যে সরকার


পোশাক শিল্পের রপ্তানীর সাথে জড়িত কতকগুলো শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর সাথে তুলনা করলেই বাংলাদেশের শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থার করূণ চিত্র ফুটে উঠে। এটা সত্য যে, সস্তা শ্রমমূল্যের কারণে বেশ কয়েকটি আমেরিকান কোম্পানী চীন-ভারতে না গিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এই বিনিয়োগ ও রপ্তানী আয়ের প্রবৃদ্ধির কতটাই বা শ্রমিকরা ভোগ করছে? বরঞ্চ আয়ের অধিকাংশ ভোগকারী এই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। ১৮ই জুলাই’১৩ প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে এসব নেতাদের হালচিত্র হুবহু তুলে ধরছি- “অভিযোগ রয়েছে- “বিজিএমইএ-বিকেএমইএ’র বেশির ভাগ নেতারা অবৈধ আয়-রোজগারের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে ঘন ঘন বিদেশ-ভ্রমণ, শ্রমিকের ঘামে অর্জিত টাকায় অমোদ-ফূর্তি করা, প্রতিবছর নতুন নতুন কারখানা করা, কাঁচামাল আমদানীর নামে বিদেশে অর্থ পাচারসহ অসংখ্য অপরাধের সাথে তারা যুক্ত হন। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ, বিনোদনের নামে বায়ারদের অনৈতিক সুবিধা প্রদান, বাটেক্সপো আয়োজনের নামে প্রতি বছর ভারতীয় নর্তকীদের এনে আশ্লীলতা ছাড়ানোসহ নেতিবাচক কাজের সাথে যুক্ত এসব নেতারা”। এই যখন তাদের হাল-চিত্র তখন মাত্র ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর কথা কি শ্রমিকদের জীবনের সাথে করূণ উপহাস নয়? শ্রমিকরা বলছে ৩০০০টাকা থেকে সরাসরি ৮০০০টাকা করতে (যদিও এখানে অনেক উসকানী কাজ করছে, লেখার মধ্যাংশে বর্ণনা করা হলো)। তবে আমার কথা হলো- ৮০০০ না হয় করা না গেলেও নেতাদের বলা ৬০০ এর সাথে কি একটা শুন্য ‘০’ লাগানো যেতো না? কিছু কিছু শিল্প মালিকেরা পুরোপুরি ৮০০০টাকা দাবি না মানলেও তারা বেতন বাড়ানোর পক্ষে। তবে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে- সম্ভবত বিজিএমইএ-বিকেএমইএ- নেতাদের চাপেই তারা শ্রমিকদের দাবি বিবেচনা করতে পারছেন না। কারণ- “ প্রত্যেক কারখানা মালিকই কোনো না কোনো নেতার আশ্রয়ে থাকেন। আর যারাই তাদের বশ্যতা স্বীকারে আপত্তি করেন তাদের ওপর নেমে আসে রাজ্যের খরগ। কথায় কথায় সমিতি থেকে বহিষ্কার, এমনকি পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক মাস্তানদের দিয়ে হয়রানির কাজটিও করেন এক শ্রেণীর নেতা। এদিকে, সাধারণ শিল্প নেতাদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করলেও সাধারণ মালিকদের স্বার্থে বিজিএমইএ-বিকেএমইএ কেনো কাজ করে না। বরং বিরোধ মিমাংসার নামে সংক্ষুব্ধ উভয় পক্ষের কাছ থেকে বখরা আদায়েই ব্যস্ত থাকেন সংগঠনের নেতারা। এমনকি কারখানায় আগুন লাগা, শ্রমিক অসন্তোষ, শুল্ক বিভাগের হয়রানিসহ নানা বিষয়ে বিজিএমইএ’র কাছে যাওয়া মানেই অযথা বিপদ ডেকে আনা”। সুতরাং সাম্প্রতিক সংঘর্ষে সাধারণ উদ্যোক্তাদের, চাপের মুখে চুপ থাকার এটাও একটা কারণ হতে পারে। এদিকে টানা চারদিন ব্যাপি চলমান সহিংসতা-ভংচুড়কে দেশী-বিদেশী চক্রান্তের ফলাফল বলা হলেও কোনো তদন্ত্র নেই। তবে সম্প্রতি দেখা গেছে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এর নেতৃত্বে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মহাসমাবেশ হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের বিক্ষোভ- আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে (যদিও জানা যায়-বেশির ভাগ শ্রমিকই এসব জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করেন না, তারা আলোচনার সাপেক্ষে বেতন বাড়ানোর পক্ষে)। তাই বলতেই হয়- সামনে শ্রমিকদের রেখে উসকানী দিয়ে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের দাবি আদায়ের যে সংগ্রাম চলছে, তাতে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ-বাটোয়ারা রয়েছে। আর এটাই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে যে- ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অসৎ নেতাদের লুটে-পুটে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। আর এখন হয়ত রপ্তানী খাতে সর্বোচ্চ অবদান রাখা এই খাতের ওপর তেমনই কুনজর পড়েছে। শাজাহান খান সাহেবের ক্ষেত্রে সেরকম কিছু হচ্ছে কিনা তা তদন্ত্রের দাবি রাখে। এদিকে বিদ্যমান ভংচুড় ও সহিংসতার জন্য শ্রমিকদের গ্রেফতার না করে মূল হোতা তথা রাজনৈতিক নেতাসহ বিজিএমইএ নেতাদের গ্রেফতার করলেই হয়ত রহস্য বের হয়ে যাবে।


হাদিসে যেখানে ঘান শুকানোর আগে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধের বিধান রয়েছে সেখানে এই মুসলিম প্রধান দেশে মানুষের ঈমানের ঠিক নেই। আর তাই মাসের পর মাস শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রাখা হয়, চাকরি ছেড়ে গেলে সে টাকা জীবনেও তারা পায় না। সুতরাং শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক আর এজন্যই উসকানী দিলেই তারা উঠলে উঠে। আফসোস, এ দেশে সুষ্ঠ তদন্ত্র কোনো কিছুরই হয় না আর হয়ত বর্তমান সহিংসতার তদন্ত্রও হবে না, এটা ধরে নিয়েই বলছি- অন্তত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণের স্বার্থে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ না রেখে, ৮০০০টাকা না হয়- অন্তত বর্তমান বাজার দর বিবেচনা পূর্বক তাদের বেতন বৃদ্ধি করে শমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হোক।




আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.