১ টা নেশাখোরের আত্বকাহিনী

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৯

আমার তার সাথে পরিচয় খুব অল্প সময়ের।
ওর সাথে পরিচয়টা হয়েছিল ১ টা প্রেমের গল্প প্রথম দেখাতেই প্রেমে পরা এমন নয়।

ওর সাথে আমার পরিচয়াটা হয়েছিল ১ টা সিগারেট খাওয়া থেকে
ও বলতে,যার কথা আজ বলব অপু ।

অপু, নাম টা কার রাখা ছিল তার মনে নেই! হয়ত বাবা নাহয় কোন কাছের লোকের হবে।
দেখতে স্মার্ট ১ টা যুবক ছেলে,কথার চেয়ে চিন্তা করে বেশী।
লম্বায় আনুমানিক ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি হবে ,মাঝারি টাইপের বডি , ঘন কালো চুল

ভাল ১ টা কলেজে ডিগ্রী করতেছে, নিম্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে রেজাল্ট ভালই ছিল।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের সার্টিফিকেট না থাকলেও অপু তাদের চেয়ে কম হবেনা।
তবে, প্রচুর পরিমানে সিগারেট খায় সে।

কিছুদিন পর বুঝতে পারলাম সে অনেক নেশা করে , মানে নেশখোর!
সবকিছুতে একদম পার্ফেক্ট দেখে বুঝলাম অনেক পুরুনো নেশাখোর বা পাকাপুক্ত নেশাখোর।

১ দিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করে বসলাম,
কিরে অপু তুই ত সবকিছুই ভাল জানিস (পারিস) তো নেশা করিস কেন.........?

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে যা বলল,
কেউ মায়ের পেট থেকে নেশাগ্রস্থ বা মাদকাসক্ত হয়ে জন্মায় না ।
এই সমাজ আর সমাজের কিছু পরিস্থিতি আমাকে মাদকাসক্ত করেছে
আমার ছোট বেলাটা আর ৫ টা আদরের বাবুর মত কাটেনি!
আমার কৈশর টা কেটেছিল অনেক জালাময়ি একটা জীবন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে

তখন আমার বয়স আনুমানিক ১০-১২ হবে ,আমার বড় ২ বোন বিয়ের বয়সি পড়তেছিল বুঝতাম খুব কষ্ট হচ্ছিল তাদের!
আমার বাবা মা ২ জনেই এর জন্য দায়ী। কেউ কারো কাছে হার মানতে নারাজ যে কোন বিষয়ে
কারন মায়ের বাপের ছিল অনেক সম্পদ টাকা আর বাবার ছিল নির্বাচনের লোভ

গত ২ পিরিয়ড আগে বাবা নির্বাচন করে কাউন্সিলর পদে , জায়গা বিক্রি করে অনেক টাকা নষ্ট করেও ফেল করে
তখন ছোট ছিলাম কিছু বলতে পারলাম না
এই নির্বাচন থেকেই আমি বিড়ি সিগারেট কি ...? কি হয় সিগারেট খেলে তা জানতে পারি

পরের পিরিয়ডে আবার নির্বাচন করল ,অনেক নিষেধ করেছিলাম শুনেনি আমাদের কথা
অপমান জনক ভাবে আবার হারে , খুব লজ্জা পেয়েছিলাম!
কারন এলাকার সবাই তখন আমাকে চিনত একটু বড় হইছিলাম ত স্কুলে যেতাম ঘুরতাম খেলতাম
কিন্তু বাবা সব শেষ করে দিছিল

আমাদের কপালটাও এর মধ্যে খারাপ হয়ে গেল ,
বাবার অর্থনেথিক অভাব আর মায়ের রাগে নানা বাড়ি চলে যাওয়ার অভ্যাসের কারনে
আমরা ছিলাম অবহেলিত ! বাবা মা কেউ আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু ভাবেনি

আমার মা প্রায়েই বাপের বাড়ী চলে যেত বাবার সাথে রাগ করে ,
আমি তখন ছোট, বড় বোনদের বিয়ে হয়েছিল ভাগ্যক্রমে
তখন আমার ছোট আর ২ টা ভাই ছিল
আমাদের কথা ত কেউ তখন ভাবেনি একটা বারও !

আমাদের পড়াশোনা, আমাদের খাওয়াপরা, আমাদের ভবিষ্যতের কথা ত বাবা মা কেউ ভাবেনি তখন !
তখন বাবা মার অযত্নের বা অপুর্নতার কারনে কিছু বন্ধুদের সাথে সিগারেটের পাশাপাশি গাজা আর ডেন্ডি সেবন করতে থাকি রিতিমত
তখন সবে মাত্র ডেন্ডির প্রচলন শুরু হয়।

এক সময় টাকার প্রয়োজনিয়তা বেড়ে গেল
১ টা ব্যাবসায় জড়িয়ে পরেছিলাম, কম্পিউটার ই পোগ্রামিং এর সাথে ভালই চলছিল দিন
এর মধ্যে নিম্ন মাধমিক শেষ করি ১ টা ভাল রেজাল্টের সাথে , কলেজে চলে গেলাম আরও বন্ধু বেড়ে গেল নিজের কামানো টাকা
তাই অনেক কিছুই করতাম নেশা করতাম, রাত শেষে বাড়ি ফিরতাম কেউ কিছু বলতে পারতনা।

কারন যখন আমাদের যত্ন নেওয়ার কথা ছিল তখন তোমরা তোমাদের নিজেদের নিয়ে ব্যাস্থ ছিলে
এখন কি হবে খবর নিয়ে.........? বাবা মার মুখের উপর বলে দিতাম।

কিন্তু শত কষ্টের মাঝেও নিজের টাকায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতেছিলাম সংসারেও কিছু টাকা দিতাম
১ দিন ব্যাবসা থেকে বাড়ি যাচ্চিলাম জরুরি অবস্থা জাড়ি ছিল আমাদের শহরে
রাতে রাস্তা থেকে পুলিশ অযথা ধরে নিয়ে গেল থানায়
৫ দিন পর ছাড়া পেলাম

মেজাজ কি হইছিল তখন সেটাই আমিই বুঝছিলাম
আরে হালার জরুরি অবস্থা বলে কি ঘরে বসে থাকব...? কি দুষ ছিল আমার ......?
থানায় নিয়ে মিথ্যে মামলা দিয়ে ৫ দিন জেলে রাখছিলা শালারা ।
তবে অনেক কিছুই শিখছিলাম এ থেকে ।

যেহেতু লাল কালির দাগ লাগাইছেই
সেসময় ভাবলাম এখন অনেক কিছু করব আরো বেশী কিছু
কিন্তু আইন আমাকে কিছুই করতে পারবেনা এই পজিশনে যাব
টিকেই চলে আসলাম সেই পজিশনে আর এই পজিশনে আসতে ত নেশা করাটা ফরযে আইন।

আর এই জন্য দায়ী আমার পরিবার আর এই সমাজ ,সমাজের কিছু মানুষ

এই বলে আরেকটা সিগারেট ধরাল আর আমার উদ্দেশ্যে বলল...............

শুন, কেউ মাদকাসক্ত হয়ে জন্মায় না ! এই সমাজ আর সমাজের কিছু মানুষের কারনেই
১ জন মাদকাসক্তের জন্ম হয়।

৭ টি +০/-০