নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলাকে ভালবাসি

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে

কাজী মিতুল

লেখনী আমার প্রতিবাদের ভাষা, ব্লগ আমার স্বপ্নবোনার জমিন, আমি এক স্বাপ্নিক চাষা

কাজী মিতুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন ছুঁয়েছে “আমাদের গল্প”

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিজ্ঞজনেরা একে বলেছেন slice of life. আসলেই আমাদের জীবন থেকে নেওয়া কোন এক ফালি ঘটনার শিল্পিত রূপ এক একটি ছোটগল্প। সাদাত শাহরিয়ার-এর “আমাদের গল্প” তেমনই একটি ছোটগল্পের বই। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি মুঠোফোন প্র্তিষ্ঠানে কর্মরত এই তরুণ প্রকৌশলী ও লেখক আমার সহকর্মী। জাগৃতি প্রকাশনী থেকে ২০১২-র একুশের বইমেলায় তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, সে খবর পেলাম তাঁর একটি “গণ” ই-মেইলে; সাথে ছিল বইটির একটি পি.ডি.এফ. সংস্করণ। সেটা পেয়েই পড়তে শুরু করলাম; চব্বিশটি গল্পের গোটাকয়েক পড়েও ফেললাম। শাহরিয়ারকে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর ই-মেইলের জবাব দিলাম, সাথে এও লিখলাম, পুরো বইটি পড়ে মন্তব্য করব। এভাবে আমার পরিচয় শাহরিয়ারের সাথে। এরপর কয়েকটি ব্যস্ত মাস কেটে গেছে, বাকি গল্পগুলো পড়া হয়ে ওঠেনি। কম্পিউটারের স্ক্রীনে গল্প পড়ে সেই স্বাদ কোথায়…। হয়তো আমার নীরবতা দেখে শাহরিয়ার সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন; তাই চা খাবার ছলে আমার সাথে আড্ডা দিতে এসে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন তাঁর এক কপি “আমাদের গল্প”; ফলে, সেটা আদ্যোপান্ত পড়া এবং আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার দায়বদ্ধতাটা গেল বেড়ে।



শাহরিয়ার তাঁর ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন – এই দুই পর্যায়ের অভিজ্ঞতা থেকে গল্পগুলো লিখেছেন। ভাষা প্রাণবন্ত, বর্ণনা সাবলীল; ঘটনার অনুক্রম একেবারে বাস্তব! আর তাই প্রতিটি গল্প হয়ে উঠেছে একেবারে জীবন্ত, পড়তে পড়তে মনে হয়, এ যেন আমার চোখের সামনেই ঘটছে। কিছু গল্প পাঠককে ভাবায়, কিছু গল্প হাসায়, কিছু আবার কাঁদায়; কিছু গল্প পাঠককে ফেলে দেয় দ্বিধায়…। “প্রহেলিকা” গল্পের তিশা যখন তার স্বামীকে পূর্বপেমিকের কথা বলবে কিনা ভাবছে, “গ্রহনের কাল” গল্পের লোপা যখন তার কর্পোরেট বসের কুপ্রস্তাব পেয়ে হতচকিত, “মহালয়া” গল্পের জয় যখন তার কুকর্মের ফল পেয়ে দিশেহারা, তখন গল্পের চরিত্রগুলোর সাথে পাঠকও দ্বিধান্বিত, এর পর কী হওয়া উচিত? মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত “পাগল” গল্পটি বোধকরি এ বইয়ের শ্রেষ্ঠ গল্প। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি চিরকাল আমাদেরকে আবেগতাড়িত করে, কিন্তু শাহরিয়ার যেভাবে তাঁর যুক্তিবোধ, ইতিহাস-সচেতনতা, নিরপেক্ষতা এবং কল্পনা – এ সবগুলো উপাদান সুচারুভাবে সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে এই গল্পের দৃশ্যগুলো নির্মাণ করেছেন, তা শুধু প্রশংসাই নয়, পুরস্কারের দাবি রাখে। স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে অহেতুক বিতর্কের প্রতিবাদ, মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে উদ্ধৃতি এবং রাজাকারদের আসল চেহারার সচিত্র বর্ণনা - এসবই লেখক সাজিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়, যা পরবর্তী প্রজন্মকে অনেক ঋদ্ধ করবে, সন্দেহ নেই। “হারমাফ্রোডাইট” গল্পটি পাঠককে দেবে ভাবনার এক নতুন বিষয়, সহানুভূতির অশ্রুতে পাঠকের চোখ ভিজিয়ে দেবে তার অজান্তেই। ইভ টিজিং নিয়ে লেখা গল্প “বিকেল পাঁচটা” পড়ে পাঠক একদিকে যেমন কাঁদবে, অন্যদিকে হোস্টেলজীবনের মজার ঘটনা নিয়ে লেখা “লুঙ্গী সন্ত্রাস” পড়ে পাঠক হেসে উঠবে হা হা করে। “কর্পোরেট সাউন্ড” গল্পটি পাঠককে দেবে এক ভিন্ন গল্পের স্বাদ। গল্পগুলো পড়লে বোঝা যায়, এগুলো লেখকের বিভিন্ন সময়ে লেখা; ভিন্ন ভিন্ন একেকটির পটভূমি, বিচিত্র একেকটির মেজাজ। একটি গানের অ্যালবামে যেমন বিভিন্ন স্বাদের গান থাকে, একটি চিত্রপ্রদর্শনীতে যেমন থাকে নানা ধাঁচের চিত্র, “আমাদের গল্প” তেমনি প্রেম-অপ্রেম, আনন্দ-বেদনার একগুচ্ছ গল্পসংকলন।



প্রশংসার পর এবার আসি নেতিবাচক আলোচনায়, নইলে সমালোচনাটি যে অপূর্ণ রয়ে যাবে…! লেখক তাঁর ভূমিকায় বলেছেন, গল্পগুলো বাস্তবজীবন থেকে নেওয়া; হয়তো সেই কারণে কল্পনার শিল্পরূপটি কোথাও কোথাও অনুপস্থিত। কোথাও কোথাও সংলাপও কথ্য ভাষায়, ফলে তা জীবনঘনিষ্ঠ হয়েছে বটে; তবে সাহিত্যের মানদণ্ডে পড়েছে ঈষৎ পিছিয়ে…। অনেক বড় লেখকও কথ্য ভাষা বলিয়েছেন তাঁদের চরিত্রদের দিয়ে, তবে সব ক্ষেত্রে সেই পর্যায়ে যেতে পারেনি শাহরিয়ারের নির্মিত চরিত্রগুলো। লেখার মানও সব ক্ষেত্রে সমান ভাবে ধরে রাখতে পারেননি তরুণ লেখক শাহরিয়ার। মুদ্রণপ্রমাদ চোখে পড়ার মতো, বানান বা ব্যকরণগত ভুল-ভ্রান্তিও আছে। প্রচ্ছদটি কৃত্রিম, ফটোশপের ‘কারুকাজ’ প্রকট। চব্বিশটি গল্পের মধ্যে কোন কোনটি বেশি ছোট, অনুগল্প বলা চলে। কয়েকটি আছে দীর্ঘ গল্প, তবে সাহিত্যের মানে সেগুলোই উঁচু পর্যায়ের বলে মনে হয়েছে।

যদি এক কথায় বলি, তবে বলতে হয়, “আমাদের গল্প” সংগ্রহে রাখার মতো একটি গল্পগ্রন্থ। তরুণ লেখক হিসেবে আমিও ২০০৪ সালে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেছিলাম; তাই শাহরিয়ারের প্রতি আমার আবেগ একটু বেশি। ছোটগল্প নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যেমন বলেছিলেন “অন্তরে অতৃপ্তি রবে/ সাঙগ করি মনে হবে/ শেষ হইয়াও হইলো না শেষ”, শাহরিয়ারের গল্পগুলোও যেন তাই; পড়া শেষে একটি রেশ রয়ে যায়; চরিত্রগুলো চোখের সামনে ঘোরাফেরা করতে থাকে, তখন ইচ্ছে করে ওদের ডেকে বলি, ওরা আমার মন ছুয়েঁছে…।

২০১৩-র একুশে বইমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে সাদাত শাহরিয়ারের উপন্যাস “তন্ত্রশক্তি বিধান”; সেটা পড়ব বলে অপেক্ষা করে আছি…।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

রীতিমত লিয়া বলেছেন: অসাধারণ বর্ণনা

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২১

কাজী মিতুল বলেছেন: লিয়া আপুকে ধন্যবাদ :)

আপনিই কি লিয়া সরকার?

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৮

সাদাত শাহরিয়ার বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।সাহিত্য চর্চায় সমালোচনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। লেখক ভাল মন্দ যা-ই লিখুক না কেন একমাত্র শুদ্ধ সমালোচনাই তাকে তার লেখনির সঠিক মানদণ্ড বিচারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।

৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০৯

কাজী মিতুল বলেছেন: ভাই শাহরিয়ার, আমি সাহিত্যিক বা বোদ্ধা কোনটাই নই। একজন পাঠক হিসেবে একটু সমালোচনা করলাম, এই আরকি!! :) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.