![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখনী আমার প্রতিবাদের ভাষা, ব্লগ আমার স্বপ্নবোনার জমিন, আমি এক স্বাপ্নিক চাষা
একজন লেখক কেন লেখেন? প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনে হয়, তিনি লেখেন, কারণ লেখার জন্যে তিনি নিজের ভেতর এক ধরণের তাড়না অনুভব করেন। একজন লেখক কেন লেখা প্রকাশ করেন? কারণ, নিজের ভাবনাকে তিনি দশদিকে ছড়িয়ে দিতে চান। আমি লেখক নই, তবে নিজে কিছু কিছু লিখি, তাই পরিচিত কেউ যখন লেখেন, তা একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ি; প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি।
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত সাদাত শাহরিয়ার-এর উপন্যাস “তন্ত্রশক্তি বিধান” প্রায় এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। কী হয় এর পর জানার অদম্য কৌতুহল আমাকে শুরুর কয়েক পাতা পর থেকে এক রকম টেনে নিয়ে গেল শেষ পাতা পর্যন্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমি হরর ছবি বা গল্প দেখতে বা পড়তে ভালবাসি না। শাহরিয়ার আমার সহকর্মী বলেই তার এই অতিপ্রাকৃত উপন্যাসটি আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করি, কিন্তু পড়তে পড়তে যখন দৃশ্যগুলো চোখের সামনে একটা অবয়ব পাচ্ছিল, তখন লেখকের ব্যক্তিগত পরিচিতিকে ছাপিয়ে আমাকে আকৃষ্ট করছিল তার লেখনী। দৃশ্যের বর্ণনা যখন এমন হয় যে তা কল্পনা করে নিতে হয় না, আপনা থেকেই তা চোখের সামনে সৃষ্টি হয়, তখন সে কৃতিত্ব পাঠকের যতটুকু, লেখকের তার চেয়ে অনেক বেশি।
“তন্ত্রশক্তি বিধান” উপন্যাসটিতে জন্মান্তর, গ্রীক পৌরাণিক চরিত্রের নাটকীয় আবির্ভাব এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে ইতিহাস আর জ্যোতির্বিদ্যার যে সুক্ষ্ণ সমন্বয় ঘটাবার দু:সাহস লেখক শাহরিয়ার দেখিয়েছেন, তা পাঠককে সন্দেহাতীতভাবে মুগ্ধ করে। কিছু ফ্রয়েডীয় প্রেমের দৃশ্য, কিছু স্বপ্নদৃশ্য আর কিছু চুড়ান্ত পর্যায়ের ফ্যান্টাসী এই উপন্যাসের মূল শক্তি। লেখকের সাবলীল ভাষা পাঠককে যেমন হাত ধরে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, ঘটনার ক্রমবর্ধমান রহস্যময়তা তেমনিভাবে পাঠককে আটকে রাখে বইয়ের দুই মলাটের ভেতরে।
মূল চরিত্র রাজিব এবং রাকিব দুই বন্ধু; নায়িকা রূপা এক পিশাচিনী, পূর্বশত্রুতার প্রতিশোধ নিতে যার কালো যাদু সে ব্যবহার করে এবং গল্পটির মূল রহস্যময়তা তাকে ঘিরেই। মূলত: প্রথম পুরুষে লেখা উপন্যাসটিতে লেখক রাজিবের ভাষ্যতে কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন, কিছু ঘটনা লেখা হয়েছে তৃতীয় পুরুষের ভাষ্যে। বরিশালের বিশেষ একটি অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে লেথা উপন্যাসটিতে কিছু স্থানের বর্ণনা প্রশংসনীয়; তবে সংলাপগুলোর কোথাও বরিশালের আঞ্চলিকতা পেলাম না, সেটি থাকলে আরো বেশি প্রাণবন্ত হতো।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সব লেখকের লেখনীতেই ব্যাকরণগত বা বানানগত কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে, প্রকাশকের দায়িত্ব সেটিকে নির্ভুল করা, যা সাধারণত করা হয় না। সেই বিষয়টি এখানেও প্রকট। প্রচ্ছদটি আকর্ষণীয়, তবে কাগজের মান আরো ভাল হলে ভাল লাগত। উপন্যাসের সমাপ্তি পাঠককে দেবে স্বস্তি; তবে যে কবিতাটি ব্যবহার করা হয়েছে তা উপন্যাসের মানের সাথে কিছুটা অসঙ্গতিপূর্ণ
যেকোন কিছুর সমালোচনা করলে অনেক করা যায়, কিন্তু ভাল কিছু সৃষ্টি করা সুকঠিন। কাজেই আমি ইতি টানছি লেখকের কল্পনাশক্তি, তার বহি:প্রকাশ এবং বই আকারে তা জনসমক্ষে উপস্থাপনের সুপ্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে। এককথায়, উপন্যাসটি ভিন্ন স্বাদের, গতানুগতিক ধারা থেকে এর ঘটনাপ্রবাহ বেশ আলাদা। সব পাঠকের উচিত চেনা-অচেনা যেকোন লেখকের বই পড়ে দু-তিনলাইনে হলেও তার প্রতিক্রিয়া লেখককে জানানো। এতে লেখক একদিকে যেমন পান এগিয়ে যাবার প্রেরণা, অন্যদিকে নিজের দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে ভবিষ্যতে হতে পারেন আরো সচেতন। সাদাত শাহরিয়ারের “তন্ত্রশক্তি বিধান” পড়ে আমার মনে হয়েছে, লেখক হিসেবে তিনি অনেক দূর যাবেন, যদি লেগে থাকেন। পাঠকের দায়িত্ব উদীয়মান লেখকদেরকে প্রণোদনা যুগিয়ে তাঁদেরকে সামনে ঠেলে দেওয়া; আর তাহলেই আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে ভাল লেখকের যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তার পূরণ সম্ভব।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০২
সাদাত শাহরিয়ার বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার এই লেখাটি আগামীতে নতুন কিছু লেখার ক্ষেত্রে আমাকে অনেক সতর্ক হতে সাহায্য করবে।