নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলাকে ভালবাসি

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে

কাজী মিতুল

লেখনী আমার প্রতিবাদের ভাষা, ব্লগ আমার স্বপ্নবোনার জমিন, আমি এক স্বাপ্নিক চাষা

কাজী মিতুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের শহরের দু:স্বপ্নময় জীবন (পর্ব-১)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৪২

ঢাকা শহরে বাস করছি ১৯৯৮ (উচ্চ মাধ্যমিক-এর পর) থেকে। এর আগ পর্যন্ত ঢাকা ছিল আমার বেড়াবার জায়গা, স্বপ্নের শহর। ২ বছর বয়সে প্রথম ঢাকায় এসেছিলাম বড় চাচার বাসায়। (সে স্মৃতি এখন নিউরোন-এর কোথায় চাপা পড়ে আছে, শক্তিশালী কোন সার্চ ইঞ্জিন দিয়েও তা খুঁজে বের করতে পারব না)। তবে এটুকু মনে আছে, বাবা-মা’র সাথে রুমা/দ্রুতি/ঈগল/আনন্দ/সোহাগ - এসব পরিবহনের বাসে করে খুলনা থেকে ঢাকা আসতাম (আমার বড় চাচার বাসায়)। তখন কামারখালি এবং দৌলতদিয়া - এ দু’জায়গায় নদী পার হতে হতো। কামারখালিতে ফেরি ছিল। দৌলতদিয়া থেকে আরিচা পাড়ি দিতে হতো লঞ্চযোগে, নদীর অপর পাড়ে একই পরিবহনের বাস অপেক্ষমান থাকতো (অবশ্য একটু অবস্থাপন্নরা ফেরি পারাপার ব্যবস্থায় বাস/গাড়িযোগে নদী পার হতেন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমার অসচ্ছল বাবা লঞ্চ পারাপার এর অপশনটি ব্যবহার করেছেন)

ঢাকা শহর নিয়ে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা লিখতে বসেছি। তিনটি পর্বে এই লেখাটা ভাগ করেছি।

১. বিফল টিউশানি (বুয়েটে পড়ার আগে)

২. অদ্ভুত প্রতারণা (বুয়েটে পড়াকালে)

৩. সফল (?) ইন্টারভিউ (আমার ৪র্থ চাকরির চেষ্টা)



আজ লিখছি প্রথম পর্ব:

১. বিফল টিউশানি :

১৯৯৯ সাল। বুয়েটের ভর্তি-পরীক্ষার রেজাল্ট পেয়েছি। ঢা.বি. ও টেক্সটাইল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা দেব বলে ঢাকায় (চাচার বাসায়) রয়ে গেছি। মনে মনে টিউশানি খুঁজছি, এমন সময় “প্রথম আলো”-র “নকশা” পাতায় একটা আর্টিকেল পড়ে জানলাম নীলক্ষেতে মিডিয়া সেন্টার আছে যারা টিউশানি খুঁজে দেয়। পরদিন সেখানে গেলাম এবং একটা মিডিয়া সেন্টারে গিয়ে কথা বললাম। সেখানকার পরিচালক প্রথমেই জেনে নিলেন আমার গ্রামের বাড়ি কোথায় এবং ঢাকায় কোথায় আছি। বুয়েটে চান্স পেয়েছি শুনে বললেন, আজই তার একজন বুয়েট-ছাত্র দরকার, লালমাটিয়ার এক বাসায় গৃহশিক্ষক প্রয়োজন, বেতন ৩০০০ টাকা। শুনে আমি হাতে আকাশের চাঁদ পেলাম। তিনি বললেন, প্রথমেই ৫০০ টাকা দিয়ে এখানকার সদস্য হতে হবে, তারপর বেতনের ৬০% অগ্রিম তাকে দিতে হবে, তারপর তিনি আমাকে সেই বাসার ঠিকানা দেবেন। আমি সব শুনে সাথে সাথে চাচার বাসায় ফেরত এলাম এবং আমার মায়ের দেওয়া হাত-খরচের প্রায় সব টাকা (মাসের তখন সবে শুরু) নিয়ে আবার নীলক্ষেত ছুটলাম। টাকা লেনদেন শেষে তিনি আমাকে ঠিকানা লিখে দিলেন এবং আমি তখনই রওনা হলাম সেই বাসার উদ্দেশে।

যে ভদ্রমহিলা দরজা খুললেন, তিনি ছাত্রের মা। আমাকে দেখে মহা বিরক্ত। প্রথমত: তাঁরা সেন্ট জোসেফ-এর প্রাক্তন ছাত্র না হলে গৃহশিক্ষক হিসেব নিয়োগ দেবেন না, এটা নাকি সেই মিডিয়াকে আগেই বলা ছিল। দ্বিতীয়ত: গত সপ্তাহে তাঁরা ঐ মিডিয়ার কাছ থেকে গৃহশিক্ষক পেয়ে গেছেন এবং কেন এরপর আরো কয়েকজনকে পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে আমাকেই দু’কথা শুনিয়ে দিলেন।

আমি ভগ্নহৃদয়ে ফিরলাম সেই মিডিয়া সেন্টার (নাকি দোকান?)-এ। পরিচালক সব শুনে বললেন, এটা কোন ব্যাপার না। তিনি আমাকে আরেকটি টিউশানি জুটিয়ে দেবেন। ইতোমধ্যে সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকার সুবাদে আমি বুঝে গেছি, এরা টিউশানি দেবে না, বরং একই কুমিরছানা বারবার দেখিয়ে ফায়দা লুটবে। আমার মতো অনেকেই একই অভিযোগ নিয়ে এসেছে এবং সবাইকে তিনি বলছেন, অন্যত্র ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি এবার বললাম, আমার টিউশানি দরকার নেই, আমার টাকা ফেরত চাই। তিনি বললেন, সদস্য ফি অফেরতযোগ্য। বেতনের অগ্রিম পরে ফেরত দেওয়া হবে। আমার চেহারা আর আচরণই বলে দেয়, আমি মফস্বলের এক ভীতু কিশোর এবং আমাকে ঠকানো খুবই সহজ। আর এই লোক ঢা.বি.-তে রাজনীতি করত (নাম তার ঈশাণ, কিছুক্ষণ সেখানে বসে এটা জেনেছি)। কাজেই তার সাথে আমি ঝগড়া করে সুবিধা করতে পারলাম না।

এরকম প্রতারিত হয়ে আমি মুষড়ে পড়লাম, কিন্তু লজ্জায় বাসায় কিছু জানাইনি। এরপর কয়েকবার গিয়েও যখন এক টাকাও আদায় করতে পারলাম না তখন বিষয়টা আমার চাচাত ভাই (শান্ত ভাইয়া)-কে জানালাম। শান্ত ভাইয়া নীলক্ষেত এলাকায় বড় হয়েছেন, এবং সিটি কলেজ ও ঢা.বি.-তে পড়েছেন। সব শুনে পরদিন সকালে আমাকে নিয়ে তিনি সেই মিডিয়ার দোকানে গেলেন। ঈশাণকে বললেন, টাকাটা এখনই ফেরত দিতে হবে, নইলে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা আমাদের জানা আছে। শুনে ঈশান ১০ মিনিট সময় চাইলেন।

১০ মিনিট পর আমরা তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ১৭০০ টাকা গুনে গুনে ফেরত দিলেন। আমার “শিক্ষা সফর”-এর একটি পর্ব শেষ হলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.