নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবি সমাজপতি

রবি সমাজপতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব্দ নিয়ে খেলা

১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩০

কবিতায় কবিরা শব্দ নিয়ে খেলা করে। এই শব্দ শব্দ খেলা শিশুর ডাঙ্গুলি খেলার মতোই দূরত্ব-ছোঁয়া। প্রতিবার যেমন ডাঙ্গুলি খেলায় টুঙটাকে দূরত্ব অতিক্রমণের চেষ্টা করাতে হয়, তেমনি কবিকেও প্রতিটা কবিতাকেই কালোত্তীর্ণতার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালাতে হয়। কী শব্দে, কী ভাবে কবিকে নিত্যনতুনের দ্বারস্থ হতে হয়। আর সেখানে অবহেলা মানেই নিশ্চিত পরাজয়।

নিজস্ব শব্দভাণ্ডার না তৈরি করতে পারলে অন্যের শব্দ নিয়ে খেলা করে যেতে হয়। এতে আত্মসত্তার মৃত্যু ঘটে। কারণ, কবির শাব্দিক-ভূখণ্ড পাঠকের বিচরণভূমি। আর নতুনের দৃশ্য-দৃশ্যান্তর ছাড়া পাঠক সেখানে বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। পাঠকের কান চায় এমন শব্দ শুনতে, চোখ চায় এমন দৃশ্য দেখতে, মন চায় এমন বিষয় জানতে যা সে আগে কখনো কোথাও পায়নি। মৌলিক কবিদের ভেতর পাঠক সেটা উপলব্ধি করে।

কবিতার ফর্ম নিয়ে সকল কবিই কাজ করেছেন। সমগ্র জীবনের কাব্যচর্চার দ্বারা কিছু না কিছু নতুনত্ব দিতেও পেরেছেন। বন্দে আলী মিয়া, মতিউল ইসলামের মতো অখ্যাত কবিরাও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু তারা এখন অপঠিত হওয়ার একমাত্র কারণ এই, তারা নিজস্বতাটুকু আবিষ্কার করে সে ফর্মে চর্চা চালিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু তাদের ভাষাজ্ঞান ও ভাব ছিলো অত্যন্ত উঁচুমানের।

কবিতা এমন এক শিল্প, যে শিল্পের ভেতর অনবরত ভাঙা-গড়া চলে কবির আত্মসত্তার। এই ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়েই আবিষ্কার করতে হয় মৌলিক জায়গা কোনটা তার। একবার আবিষ্কার হয়ে গেলে কবির নিজস্ব কাব্য ও শব্দভুবন তৈরি হয়। আর সেখানে পাওয়া যায় এমন এক ভাষাবিশ্ব ও ভাববলয় যার ঘোর কাটিয়ে ওঠতে হিমশিম খেতে হয় পাঠককে। আর তখনই তৈরি হয় ওই কবির কাব্যবলয়। এরপর দেখা যায়, কয়েকটা দশক; এমনকি কয়েকটা শতাব্দীও গৌণ কবিরা তা থেকে বেরুতে পারে না। এমনকি বিপুল প্রতিভাধারী অনেক বড় কবিরও কাব্যপ্রতিভা-সংহারক হয়ে দাঁড়ায় সে কবি।

মুখ্যকবি আর গৌণকবির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য এই যে, মূখ্যকবির কবিতা পড়লেই অনুভব করা যায়-- আহা! কী পড়লাম, গৌণকবির কবিতা বিরক্তিরও কারণ হতে পারে। 'আহা! কী পড়লাম'- এর মূল কারণ, কবি যা বলেন তার সমস্তটাই চিরকালের মানব-মানবীর ধ্রুপদি কথা। যে কথা ওই পাঠকের একান্ত একনিষ্ঠ গোপন কথাটির বাঙ্ময় প্রকাশ। আর বলার স্টাইলও এমনি অভিনব যে পড়তে পড়তে বেরিয়ে আসে বিস্ময় ভরা চোখ আর ঠোঁট দুটি নিজের অজান্তেই ফাঁক হয়ে যায়। পাঠ শেষে পাঠক বুঝে কবির নান্দনিক চিন্তা কতোটা গভীর ও মসৃণ। অন্যদিকে বিরক্তির মূলেও আপেক্ষিক হয়ে দাঁড়ায়, গতানুগতিকতা আর অনুকরণপ্রিয়তা। সাহিত্যে পাঠক জাবর-কাটাকে গ্রহণে প্রস্তুত নন। রুচিশীল পাঠক চিবানো খাদ্যে তীব্রভাবেই অরুচি প্রকাশ করে থাকেন।

নিবিষ্ট মনে শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে একদিন ব্রহ্মশব্দের নৈকট্য পাওয়া যায় কীনা এ প্রশ্ন যদি কেউ করে প্রত্যুত্তরে আমি বলবো, সচেতন হলে পাওয়া যায়। কেননা, ভাব ও চিন্তা বলয়ে প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটি শব্দভাণ্ডার থাকে। কবিতায় নিজস্ব মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে বাকি থাকে শুধু ওই ভাণ্ডারে মজুদকৃত শব্দের আসত্তিময় বিন্যাস। তার সাথে সংযুক্ত করতে হবে অলঙ্কার-রস-ছন্দ। সমসাময়িককালে যে যত জনপ্রিয়ই হোক না কেন ছন্দ, অলঙ্কার আর রসবোধে যার ন্যূনজ্ঞানও থাকবে না সময় তাকে ছুঁড়ে ফেলবে। ছন্দজ্ঞান ছাড়া কবিতায় সুরের রিদম তোলা সম্ভব নয়। যদি কেউ তুলতে যায় সে অসুরের বেসাতিই কেবল ছড়ালো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯

গাজী বুরহান বলেছেন: ভালো লিখেছেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.