নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রানা ইশতিয়াক

আমি জয়বাংলার বাঙালি

মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)

আমি জয়বাংলার বাঙালি

মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক) › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষকবিদ্বেষীরাই বার বার বিতর্কিত করছে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৫


শিক্ষকবিদ্বেষীরাই বার বার বিতর্কিত করছে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের ভাবমূর্তি

মো. রহমত উল্লাহ্

>শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারি উন্নয়ন সাধনে বার বার আন্তরিকতার পরিস্কার স্বাক্ষর রাখার পরও বার বার বিতর্কিত হচ্ছে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি। বেশি পিছনে না গিয়ে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনার কথাই বলছি আজকের এই লেখায়। যেমন: সংশ্লিষ্টদের সাথে কোনরকম পূর্বালোচনা না করে এবং বাস্তবানের সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই চলতি বাজেট প্রনয়নের সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো ভেট। এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এলো হাজার হাজার শিক্ষার্থী। যারা কোনদিন জানতোনা আন্দোলন কাকে বলে, কীভাবে করতে হয়; তারা শিখে গেলো সফল আন্দোলন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থীরা অচল করে দিলো সারা ঢাকা শহর। তাদের পক্ষে সমর্থন দিলো অনেকেই। এই আন্দোলন দানাবাধার সময় মাননীয় অর্থমন্ত্রী শক্ত শক্ত কথা বলার কারণে আরো চঙ্গা হলো তা এবং সরকার বাধ্য হলো সেই ভেট প্রত্যাহার করতে। দীর্ঘদিন পরে কোন একটি ডেকে আনা আন্দোলনের কাছে হার মানতে বাধ্য হলো শেখ হাসিনা সরকার। সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে কী উদ্দেশ্য ছিল অহেতুক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিবাবক ও সচেতন মানুষের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার? আবার তিনি বলে দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব। এ নিয়ে শুরু হলো সমালোচনা ও প্রতিবাদ। সেইসাথে সমালোচিত হলো বর্তমান সরকার। শেষে কিছু ব্যাখ্যা ও দুঃখ প্রকাশ করলেন তিনি।
নতুন পেস্কেলের চূড়ান্ত ঘোষণার পরথেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষগণ বলে আসছিলেন কথা রাখেননি মাননীয় অর্থমন্ত্রী। অবশেষে গত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় তিনশতাধিক শিক্ষক। আর এই দাবির সমর্থনে নানান মন্তব্য প্রকাশ করছেন দেশের অনেক সাধাণ শিক্ষক।
জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর শুরু থেকে এখনো থেমে নেই বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসরদের পদমর্যাদা ও বেতন গ্রেড নির্ধারন করা হলো সচিবদের নিচে। শুরু হলো তাঁদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন। তৈরি হলো অশান্তি। বিঘ্নিত হলো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। বিতর্কিত হলো সরকার। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অনেক দরবার করে, অনেক অনুরোধ করে, অনেক কৌশল করে নানান কথা বলে থামালেন সেই শিক্ষকদের। তারপর মানা হলো তাঁদের দাবি, কিন্তু সেখানেও রাখা হলো বিতর্কের সুযোগ। জাতীয় অধ্যাপকদের দেওয়া হলোনা যথাযথ মর্যাদা।
এদিকে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর প্রথম কপিতে ব্লক করে দেওয়া হলো সরকারি কলেজের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ ধাপে যাওয়ার রাস্তা। শিক্ষকগণ হারাতে বসলেন মাউশি সহ শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর/অধিদপ্তরের প্রধান হবার যোগ্যতা। এমনকি সরকারি কলেজের প্রফেসরগণ হারাতে বসলেন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসার যোগ্য পদোন্নতি পাওয়ার উপায়। শুরু হলো প্রতিবাদের ঝড়। আসতে শুরু করলো আন্দোলনের বিভিন্ন হুমকি ও কর্মসূচি। যেমন, "সাধারণত সরকারি কলেজের অধ্যাপকেরা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড থাকায় এতদিন মোট অধ্যাপকদের মধ্যে ৫০ শতাংশ অধ্যাপক গ্রেড-৩-এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়ায় এখন এই পথ বন্ধ হয়ে গেল।
১৫ ডিসেম্বর বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপনে এ বিষয় সুরাহা না হওয়ায় তাঁরা আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সরকারি কলেজের শিক্ষকেরা।" [দৈনিক শিক্ষাডটকম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫] এতে কম/বেশি বিনষ্ট হবে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ। সমালোচিত হচ্ছে সরকার। অবশেষে হয়ত আরো আশ্বস্ত করা হবে এবং যুক্তিযুক্ত হলে দাবিও মেনে নেওয়া হবে তাঁদের। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে / হবে বার বার?

অন্যদিকে এই পেস্কেলের প্যাচকলে বার বার আটকে দেওয়া হলো এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবন। অতীতে শেখ হাসিনা সরকার যতবার জাতীয় বেতন স্কেল দিয়েছ, ততবারই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই স্কেল পেয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারি গণ। সেমতে সবারই ধারনা ছিল এবারের বর্ধিত বেতন স্কেলেও আগের মতই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অন্তর্ভুক্ত হবেন তারা। কিন্তু নতুন স্কেলে প্রথমে অস্পষ্ট রাখা হলো তাদের বেতন-ভাতা বর্ধিত করার কথা। বিক্ষোব্ধ হলেন, বিবৃতি দিলেন, সভা করলেন, কর্মসূচি দিলেন বেসরকারি শিক্ষকসমাজ; যারা এই দেশের মোট শিক্ষকের প্রায় নব্বুই শতাংশ। এরপর জুড়ে দেওয়া হলো আরেক শর্ত। প্রতিষ্ঠানের ও শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অর্জিত আয় সরকারকে দিয়ে তারপর নিতে হবে বর্ধিত হারে সরকারি অংশের বেতন-ভাতা। আবার ক্ষোব্ধ হলেন দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি শিক্ষকসমাজ। তাদের অধিকাংশরাই যুক্তিযুক্ত ভাবে বললেন, তাঁদের চাকরি জাতীয়করণ করে তারপর নিয়ে নেওয়া হোক প্রতিষ্ঠানের আয়। তা না হলে শর্তহীন ভাবে দিয়ে দেওয়া হোক বর্ধিত স্কেলের মূল বেতন। কেননা, কেবল শিক্ষ-কর্মচারিদের মূল বেতন দিয়ে (পূর্ণ ভাতাদি, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস ও পদোন্নতি এবং পর্যাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক না দিয়ে) প্রতিষ্ঠানের সকল আয় নিয়ে নিলে প্রতিষ্ঠান চলতে পারবেনা। লেখালেখি হলো পত্রপত্রিকায়। সমালোচনা হলো সর্বত্র। অসন্তোষ দেখাদিলো শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত। তারপর গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে এলো এক প্রজ্ঞাপন। যাতে লেখা হলো "এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করিয়া তাহাদের যোগ্যতাভিত্তিক অনুদান-সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ কর্তৃক মূল্যায়নক্রমে প্রাপ্য অনুদান-সহায়তা নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের তারিখ অর্থাৎ ০১ জুলাই ২০১৫ তারিখ হইতে কার্যকর করা সমীচীন হইবে। ২। এমতাবস্থায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের অনুদান-সহায়তা নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের তারিখ অর্থাৎ ০১ জুলাই ২০১৫ হইতে কার্যকর হবে।" এটিতেও রাখা হলো অনেক মারপেঁচ। কী যোগ্যতার ভিত্তিতে কারা কখন থেকে পাবেন এই বর্ধিত সুবিধা আর কী অযোগ্যতার কারণে কারা বঞ্চিত হবেন? অর্থাৎ শর্তহীনভাবে নতুন স্কেলে সবার সাথে বেতন পাবেন কি না, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি এই সার্কুলারে। এতে যে কিছু মারপেঁচ আছে এটির আরো প্রমান হচ্ছে এই যে- "ডিসেম্বরের বেতনের সঙ্গে বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি সূত্র বলেছে, সরকারি স্কুল কলেজ শিক্ষকদের তুলনায় দুএকমাস দেরিতে হাতে নগদ পাবেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের অদক্ষতা ও উদাসীনতাকে দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছেন শিক্ষকরা।" [দৈনিক শিক্ষাডটকম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫] "সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় সরকারি কোষাগারে দিতে হবে কি না—এর জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ টাকা যাতে স্বচ্ছভাবে ব্যয় হয়, এ জন্য আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ওই টাকা সরকারি কাজে চলে আসবে কি না, সেটা আইনে বলা হবে। ১ মাসের মধ্যে আইন পাশের জন্য সংসদে উঠবে বলে জানান তিনি।" [দৈনিক শিক্ষাডটকম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫] সবচেয়ে পীড়াদায়ক হচ্ছে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সার্কুলারটিতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বর্ধিত বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রস্তাবিত বর্ধিত টাকাকে বার বার লেখা হয়েছে "অনুদান-সহায়তা"। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই এমপিও আদেশে লেখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা। বেসরকারি শিক্ষকগণ কি বিনাকাজে টাকা চাচ্ছেন যে তাদেরকে প্রদত্ত সরকারি টাকাকে বেতন-ভাতা না বলে অনুদান-সহায়তা বলা হলো?
বার বার শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার এহেন অপচেষ্টা করে সরকারের উপর অসন্তুষ সৃষ্টির পিছনে কোন বিশেষ আমলা/নেতাদের কারসাজি আছে কি না এমন প্রশ্ন জাগা এখন নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক নয়? তা না হলে, যা হবার তা সঠিক সময়ে না করে এবং যা না হবার তা বার বার করে কেনো ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে শিক্ষক, কর্মচারি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা শিক্ষাক্ষেত্রের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে? শিক্ষাক্ষেত্রে এত এত শুভ কাজ করার এবং হাতে নেওয়ার পরেও কেন বার বার বিতর্কিত হয়ে, জনরোষে পড়ে, মাথা হেট করে বদল করতে হচ্ছে সরকারি সিদ্ধান্ত?//
[মো. রহমত উল্লাহ্: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.