![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুন-আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। ঘর থেকে শুরু করে হাটে-বাজারে প্রকাশ্যে খুন করা হচ্ছে মানুষকে। নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায়ও চলছে খুন। নারী-শিশু থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ছাত্র-শিক্ষক সর্বস্তরের মানুষ আজ নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে যেমন খুন হচ্ছে তেমনি দেশীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্য দেশের বাহিনীর হাতেও খুন হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। কেবল বাংলাদেশের মানুষই নয় খুন হচ্ছে বিদেশিরাও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার কেবল তার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জেল, জুলুম, নির্যাতন আর হয়রানিতে ব্যস্ত হয়ে আছে। প্রকৃত অপরাধীরা এই সুযোগে অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে খুন-আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রকাশ্যে লোমহর্ষক ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক ও চরম উৎকণ্ঠা। পুলিশের হিসেবে প্রতি মাসে গড়ে খুন হচ্ছে ২৮৬ জন। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারাদেশে ২৬৭টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৯১টি, আর মার্চে ৩০৭টি খুনের ঘটনা ঘটে। দেশে গত ১৪ মাসে ৩৪টি সাড়া জাগানো হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিন খুন হচ্ছে। প্রকাশক, লেখক, শিক্ষক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, ভিন্নমতের ইসলামী ভাবধারার অনুসারী ও বিদেশির পর এবার দুর্বৃত্তের চাপাতির আঘাতে মারা গেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খুনের দুদিনের মাথায় সোমবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরের কারাফটকের কাছে এক সাবেক কারারক্ষী খুন হন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাজধানীর কলাবাগানের লেক সার্কাসে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে খুন করা হয় জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু এক নাট্যকর্মীকে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা জুলহাজ (৩৫)। খুনে করায় পিছিয়ে নেই সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজের বিজয় সুনিশ্চিত করতে খুনের উৎসবে মেতে উঠেছে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা। দেশব্যাপী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে মৃত্যুর মিছিল দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে সহিংসতা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চার ধাপে সহিংসতায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৮১ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিকের তথ্যমতে, তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচন পর্যন্তই নিহতের সংখ্যা ছিল ৭১ জন। সদ্য শেষ হওয়া চতুর্থ দফা নির্বাচনেও প্রাণহানি হয়েছে কমপক্ষে ১০ ব্যক্তির। খুন হচ্ছেন নারীরা। এপ্রিল মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৪ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে ১৪ নারী, ১১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ৬ নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর খুন করা হয় ৩ জনকে। খুনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশুরাও। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সারাদেশে ২২ শিশু খুন হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭৮ শিশু। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৪ নারী ও শিশু। যাদের কাজ মানুষের নিরাপত্তা দেয়া তাদের হাতেও নিহত হচ্ছে মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অপহরণের পর খুন করা হচ্ছে। কথিত ক্রসফায়ারের নামেও নিহত হচ্ছে মানুষ। এমনকি কারাগারের মধ্যে নিহত হচ্ছে মানুষ।মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অপহরণ এবং নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার প্রশাসন যে হিসাব দিচ্ছে প্রকৃত হিসাব তার চেয়েও অনেক বেশি। বছরে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হচ্ছে, যাদের অনেকেই পরে আর উদ্ধার হয়নি। বছরের পর বছর নিখোঁজ তারা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে (২০১৩-১৫) সারাদেশে ১৮৮ জন অপহরণের পর নিখোঁজ হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩২ জনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকি ১১৫ জনের হদিস নেই। সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৫৫ জনকে আটক করা হয়েছে; যাদের কাউকে আটকের কথাই স্বীকার করেনি প্রশাসন। সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ১৬ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে তাদের মধ্যে তিনজনের লাশ পাওয়া যায়। গত তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত ক্রসফায়ারের ৩২ জন নিহত হয়। তাছাড়া কারাগারে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বিএসএফের হাতে ২০১৫ সালে ৪৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। চলতি মাসের মার্চ পর্যন্ত বিএসএফ ৫ জন বাংলাদেশিকে খুন করেছে। তাছাড়া গণপিটুনিতে খুন হচ্ছে মানুষ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৮ জনকে খুন করা হয় গণপিটুনিতে।
©somewhere in net ltd.