নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার প্রিয় বাংলা-ভাষা
০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হে প্রিয় আমার বাংলা-ভাষা
জেনেছি তোমাকে মায়ের ভাষা।
কত যুগ সাধনার অরূপ রতন
বাংলা ও বাঙালির তুমি-ই আশা!!
এই মাটিতে জন্ম নিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ,চৈতন্য
জন্ম নিলেন ঋষি বঙ্কিম,নেতাজী ও বিবেকানন্দ।
রবীন্দ্রনাথ,কাজী নজরুল আমাদের বাঁচার আশা!!
বাংলার বুকে কত বীর শহীদের আহ্বান শুনি বারেবার
পদ্মা ও গঙ্গার ওপার থেকে বিপ্লবী সুর-ঝঙ্কার।
রমণার মাঠ থেকে শিলচরে সেই বাংলা-ভাষার জয়গান
সালাম,কমলা গায় 'বাংলা আমার একুশ-উনিশের গান'
বিশ্বসভায় আজ বাঙালির প্রাণ চিনেছে মনের ভাষা!!
কবি নজরুল স্মরণে
০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এপার হ'তে ওপারেতে সেই যে চলে গেলে---
পদ্মানদী পার হয়ে কই আর ফিরে না এলে!
প্রবাসেতে হারিয়ে গেল মায়ের 'দুখুমিঞা'
চুরুলিয়ার কবরতলে কাঁদছে কবির প্রিয়া!
পদ্মা-গঙ্গা-মেঘনা কাঁদে, কাঁদে আকাশ-ফুল
সবই আছে আজ আমাদের নেই কবি নজরুল!!
সন্ধ্যাকাশে জ্বলবে তারা ডাকবে ভোরের পাখি
রবিমামা মারবে উঁকি রাঙা আবির মাখি'--
শরৎকালে শিশিরকণা ঝরবে সবুজ ঘাসে
আসবে উমা মায়ের ঘরে প্রতি আশিন্ মাসে।
কেবল তুমি আসবে না আর তাই কেঁদে আকুল
মোদের ফেলে কোথায় গেলে কবি কাজী নজরুল!
মায়ের গলে পরিয়ে গেলে মধুর গানের হার
'অগ্নিবীণা', 'বিষের বাঁশি' কতই উপহার---
দিয়ে গেলে কন্ঠে মোদের শিকল ভাঙার গান
বাংলা-মায়ের দুটি ছেলে হিন্দু-মুসলমান।
বলেছিলে: 'রাম ও রহিম একই বৃন্তের ফুল'
কোন্ সুদূরে লুকিয়ে আছো কবি কাজী নজরুল!!
৩৬ বার পঠিত ০ ০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
১. ২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১:২৯ ০
নিভৃত নয়ন বলেছেন: ভাল
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৪৩ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠক,নিভৃত নয়ন---
আমার কবিতা প'ড়ে ইতিবাচক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ! ঠিকানাসহ আপনার পূর্ণ পরিচয় জানালে খুশি হ'ব।আমার বেশিরভাগ লেখা ব-কলম ডট.কম,বাংলা কবিতা ডট কম,সাহিত্য ডট কম প্রভৃতি ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে; পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।
২. ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬ ০
ময়নামতি বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং,
কবিতাটা ভাল লাগল।+++++
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৫ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠিকা ময়নামতি,
আমার কবিতা প'ড়ে শুভকামনা জানিয়েছেন।কবিতাটি আপনার ভাল লাগায় আনন্দোচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।অশেষ ধন্যবাদ!! আপনার পূর্ণ পরিচয় জানালে খুশি হ'ব।
সে বলেছিল
১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সে বলেছিল: "ফিরে আসবো একদিন!
আজ নইলে পাঁচ বছর,দশ বছর পরেও"।
অসম্ভব জেনেও বিশ্বাস করেছিলাম।
প্রতিদিন,প্রতিক্ষণ চাওয়া-পাওয়ার যন্ত্রণা
একটু একটু পেরিয়ে জীবনের শেষ সীমানায়
তুমি এলে কবিতা হয়ে!!
২৫ বার পঠিত ০ ১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
১. ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:২৬ ০
ফাইরুজ বলেছেন: valo laglo +++
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৪৩ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় ফাইরুজ,
আমার কবিতায় সহজ-সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ!আপনার নামে নতুনত্বের ছোঁয়া আছে।ঠিকানাসহ আপনার পূর্ণ পরিচয় জানালে খুশি হ'ব!!
২. ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৩৭ ০
রুমানবিডি বলেছেন: ফাইরুজ বলেছেন: valo laglo +++
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫০ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় রুমানবিডি,
ফাইরুজের মন্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন।ধন্যবাদ! পাঠক/পাঠিকা নিজের পূর্ণ পরিচয় জানালে আমরা বেশি খুশি হই।আশা করি এ ব্যাপারে আপনারও সমর্থন থাকবে।
৩. ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৯ ০
আল-মামুন-কৌশিক বলেছেন: খারাপ না।
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫৬ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠক আল-মামুন-কৌশিক,
আমার কবিতা প'ড়ে আপনার খারাপ লাগেনি,এ আমার অনেক পাওয়া।আপনার মূল্যবান সময়ের মাঝে আমার কবিতা প'ড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ!...আপনার পূর্ণ পরিচয় জানাতে অনুরোধ রইলো।
অশ্লীল কবিতা
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পঁচিশের উত্তাপ ছিল দেহে-মনে
বিকেলে প্রেমিকার হাতছানি,
দু'চোখে নীল স্বপ্ন, কম্পিত অধর--
বজ্রসঙ্কেত সারা আকাশ জুড়ে!
সহসা বিদ্যুতরেখা,স্ফিতবক্ষের
কম্পিত নির্বাক আহ্বান---
ভুলেছিলাম একুশ তুমি,
দুরন্ত বাঁধভাঙা আলিঙ্গন,
পঁচিশ-একুশের অবাধ্য ঝড়,
নির্বিরোধ ফাল্গুনি সন্ধ্যায়।
মুখোমুখি নিবিড় বন্ধনে,
পঁচিশ-একুশের দীর্ঘ রাত যেন মিনিট।
নিদ্রাহীন আবেশে কয়েক পশলা বৃষ্টি---
স্নিগ্ধ-শান্ত-অবসন্ন নতুন সকাল।
সেদিনের ডায়েরি আজ অশ্লীল কবিতা!!
৮৬২ বার পঠিত ০ ৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৪৮ ০
শ্রাবন্য বলেছেন: সুখসৃতির বদলে ‘সেদিনের ডায়েরী আজ এক অশ্লীল কবিতা’! কবির উপর ঈমানের বজ্রসহ বর্ষণ না হলে সম্ভব নয়...
২. ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৩৮ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক শ্রাবণ্য,
আমার কবিতায় অসাধারণ মন্তব্য প্রকাশের জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই!!
একুশের গান
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
একুশের গান / রইসউদ্দিন গায়েন
(কোন্)পাগল পথিক শুনিয়ে গেল একুশে ফেব্রুয়ারি
জীবন নদীতে ভাষার ভেলায় গান গেয়ে জারি,সারি।।
ফাগুন দিনে কালো মেঘ হ’য়ে দেখা দিল কালো হাত
রফিক,সালাম ভায়েদের বুকে হানলো বজ্রাঘাত....
বুলেটের গুলি হুঙ্কার তুলি’ বিঁধলো বুকেতে তারি।।
শহীদ-বেদীর বুক থেকে শুনি সালামের আহ্বান---
বরকত যেন আজও গায় সেই বাবলা গাঁয়ের গান
এপার-ওপার একসুরে গায়, “আমি কি ভুলিতে পারি?”।।
বাংলার বুকে বার বার আসে একুশে ফেব্রুয়ারি
সারা বিশ্বে ছড়ায় বার্তা শুভ আগমন তারি
মাতৃভাষায় প্রেম-জয়গানে মুখরিত নরনারী।।
৩০ বার পঠিত ০ ১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২২ ০
হাম্বা বলেছেন: ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৮ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু হাম্বা,
ধন্যবাদ,এই গৌরবোজ্জ্বল দিনটির কথা উল্লেখ করার জন্য!ফেব্রুয়ারি,২০০৮ -এ আয়োজিত 'বাংলাদেশ জাতীয় কবিতা পরিষদ'-এর আমন্ত্রণে, সেই ঐতিহাসিক রমণার মাটি স্পর্শ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।...ভালো থাকবেন!!
কবিতায় আন্দামান
০৯ ই মে, ২০১১ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এখানে সবুজের ভিড়--
ঘননীল সমুদ্রপারে
নারকেল সুপুরির নাচ
ঝোড়ো বাতাসের ডাক
বর্ষারানীর আবাহন--
শ্যামল বনভূমি।
বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা,ঝিনুকের মেলা
রংবাহারি মাছের খেলা
নিমগ্ন প্রবাল-কোরালের দেশে।
পাহাড়ি ঝর্ণাতলা,ঊর্বরা সমতটে
কিষান-কিষাণী,ফসলের হাতছানি।
ঘনঘোর বাদলা মেঘ....
সন্ধ্যালগ্নে বনান্তরে
দীপশিখা,শঙ্খধ্বণির আহ্বান--
বাঁশের বনে কলকাকলী
উজান বাঁকে মনুয়ার জেলেডিঙি।
সুখের নেশায় দুটি পাখি
দোল খাওয়া ঝাউয়ের ডালে।
পূবাকাশে চন্দ্রিমা----
পম্চিমে সমুজ্জ্বল দুটি তারা
ছল ছল জলে রূপালি জ্যোৎস্না
ভেসে যায় কোন্ অজানায়!
মায়াবী রাত,নিবিড় স্নিগ্ধতা
শান্ত আবেশে স্বপ্নপুরীর দেশে
রূপসী আন্দামান!!
৩২ বার পঠিত ০ ২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১০ ই মে, ২০১১ রাত ১২:০৩ ০
নষ্ট কবি বলেছেন: চমৎকার সব উপমা...
কবিতা লেখার সময় যে কেন এই গুলো মাথায় আসেনা....??????
++++++++++++
আমার কবিতা গুলা পড়ে আমাকে খানিকটা উপদেশ দেবেন কি???
২. ১০ ই মে, ২০১১ রাত ৯:৩৮ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় দরদী পাঠক-বন্ধু,
আপনার সুন্দর মন্তব্য-র জন্য ধন্যবাদ! আপনার কবিতা প'ড়ে মন্তব্য করা যেতে পারে,কিন্তু ভাই উপদেশ দেবার মতো ক্ষমতা আমার নেই।আমারও মাথায় তেমন ভাল কিছু আসেনা।যা' লিখি,তা' যদি পাঠকের ভাল লাগে,সে শুধু পাঠকের গুণেই।
৩. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৮ ০
হাম্বা বলেছেন: আমাদেরও এরকম সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে
কিন্তু আমি এত সুন্দর করে সেগুলোর বর্ণনা দিতে পারি না।
৪. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১৯ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু হাম্বা,
আপনার স্বদেশী-সুন্দর জায়গার কথা শুনে আমারও দেখতে ইচ্ছে হয়!অন্তত একবার দেখতে পারলে আমি-ই চেষ্টা করতে পারতাম সেগুলির আরও সুন্দর বর্ণনা দিতে।..খুব ভালো লাগলো আপনার কথা! ভালো থাকবেন!!
ভারত আমার দেশ
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এত সুন্দর দেশ বলো আছে কোথায়!
যেন বিশ্বজননী আছে দাঁড়িয়ে সেথায়।।
গিরিরাজ যেই দেশে, করে গো বিরাজ
যাঁর কৃপাবলে এলো, এ জলধিরাজ।
দক্ষিণে মহাসাগর শান্ত উদার--
পশ্চিমে আরব-সাগর ডাকে বারেবার।
এলো গঙ্গা,যমুনা আর কাবেরী যেথায়।
যেন বিশ্ব জননী, আছে দাঁড়িয়ে সেথায়।।
ন্যায়ের প্রতীক, যিনি অশোক মহান
গীতার বাণী, যেথা শ্রীকৃষ্ণের-ই দান।
নানক,কবীর যেথা বুদ্ধ মহান
শান্তি ও সত্যের শুনি জয়গান।
নিল দীক্ষা কত জাতি, কত অসহায়
যেন বিশ্বজননী আছে দাঁড়িয়ে সেথায়।।
স্বামীজী-র বাণী শুনি বিশ্ব-ধরায়
বীর সুভাষের খ্যাতি সারা দুনিয়ায়
জন্ম নিলেন কবিগুরু যেথায়
তীর্থভূমি সে তো গায়েন ব'লে যায়।
আমি ধন্য হলাম মাগো তোমারি সেবায়।
যেন বিশ্ব-জননী আছে দাঁড়িয়ে সেথায়।।
১৭০ বার পঠিত ০ ১
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৫৮ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: পাঠকের নিরপেক্ষ মন্তব্য প্রত্যাশিত।
২. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০১ ০
সোর্বিয়ের বলেছেন: এ তুই কিডা রে ?????
পালাও............
৩. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৩ ০
গেদু চাচা বলেছেন: মাইনাস বাটন কই
৪. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৭ ০
হাম্বা বলেছেন: আপনি ভারতীয় তাই এই পোষ্টে + দিলাম
তবে ভারত খালি আমাদের সাথে দুনাম্বারী করে।
যেমন এখন টিপাইমুখ বাধ দিচ্ছে।
ভারত পাকিস্থান দুই দেশের সরকারের উপরই রাগ লাগে।
৫. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক সোর্বিয়ের,মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!তবে আপনার বক্তব্যে সৌজন্যবোধের অভাব থাকায় প্রমানিত হয় যে রবীন্দ্র-নজরুল দেশের মানুষরা কেন তাদের দেশের জন্য গৌরবান্বিত হয়।...ভালো থাকবেন!!
৬. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৪ ০
মাসুদ০১৯১ বলেছেন: আমার দেশ বাংলাদেশ।
৭. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৩ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: গেদু চাচা এবং হাম্বা নাম দুটি আমার কাছে প্রশ্নসূচক(?)তবুও প্রত্যুত্তরে বলি:কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা ভেবে আমার কবিতার প্রকাশ নয়।প্রতিটি মানুষের স্বদেশ তার কাছে প্রিয়;তারই অভিব্যক্তির প্রকাশ।এতে সমালোচনার অবকাশ থাকেনা।সহৃদয় পাঠক-বন্ধুরা আশা করি শিল্পী-সাহিত্যিক দৃষ্টিতে বিচার করবেন! আপনারা সবাই ভালো থাকবেন!!
৮. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৭ ০
সোর্বিয়ের বলেছেন: আপনাদের(ভারতীয়দের) সৌজন্যতা দেখানোর কিছু নাই । একবার বলেন যে, ভারত আমাদের সাথে যা করছে তাতে আপনি হলে কি পারতেন সৌজন্যতা দেখাতে । হয়তো বলবেন পারতেন; কিন্তু সত্যিই আপনি কি পারতেন ??
ভাই শোনেন,
সবাইকে ভালোবাসার চেষ্ঠা করি । কিন্তু যে দেশ আমাদের এক পয়সার দাম দেয়না আর রক্ত চুষে খাচ্ছে আমাদের সেই দেশের ভালো চাইতে পারিনা । আর আপনারাও তো কোনদিন দেখলাম না একটা মানব বন্ধন করে বলছেন যে, প্রতিবেশী বাংলাদেশের ওপর অন্যায় বন্ধ কর ভারত সরকার ।
আপনাদের কাছে সারাজীবন খারাপ থাকলেও আমি ভারত- পাকিস্তানকে সারাজীবন ঘৃণাই করব ।
৯. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩৭ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় মাসুদ ভাই,
আপনার কথায়'আমার দেশ বাংলাদেশ',কথাটি শুনে আমার মন আনন্দে ভ'রে উঠলো! পাঠক-বন্ধুদের কাছ থেকে আমি এমনই আরও সুন্দর অথচ নিরপেক্ষ মন্তব্য আশা করেছিলাম।আমার পূর্বপুরুষরাও মূলত অখন্ড ভারতবর্ষের পূর্ব বঙ্গের-ই(অধুনা বাংলাদেশ)।কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আজ আমাদের পরিচয় খন্ডিত ভারতবর্ষের নাগরিক।সব মানুষের কাছে তার স্বদেশ সবচেয়ে প্রিয় মনে হয়,এটাই স্বাভাবিক;যেমন আমার গর্ভধারিণী মা আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।...আপনার সুন্দর প্রতিক্রিয়া প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ! ভালো থাকবেন!!
১০. ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৪১ ০
গেদু চাচা বলেছেন: কিছুই না আমাদের বিজয়ের মাজে আপনার ভারত বন্দনার খেতা পুড়ি।
বিশ্বের একমাত্র সন্ত্রাসী দেশ ভারত।
ক্ষুদ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র সমূহের অধিকার এবং শান্তি নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে তাদের বন্দনা করা যায়না।
fuck the india
১১. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৫ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু সোর্বিয়ের,
আপনার স্পষ্ট বক্তব্যে আমি খুশি হতে পেরেছি।কিন্তু সত্যি বলতে কি ভাই,আমি দু'দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সত্যিই অনভিজ্ঞ।আমাদের দেশের মিডিয়াগুলিও বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য পরিবেশনে অক্ষম ব'লে মনে হয়।পশ্চিমবঙ্গে থাকলে হয়তো আমার পক্ষে অনেকটা বুঝতে সুবিধা হ'ত।কিন্তু সরকারি চাকরিসূত্রে আমাকে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে থাকতে হয়।এখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্র-বিষয়ক কোনো খবরাখবর খুব বেশি নিয়ন্ত্রিত ব'লে মনে হয়।তবে একটা কথা ব'লে রাখি ভারতীয় উপ মহাদেশের দূর্ভাগ্যজনক এবং কলঙ্কিত ইতিহাসকে কখনও আমি সমর্থন করতে পারিনা।আপনি দয়া ক'রে ব-কলম,কম-এ(http://www.bokolom.com)প্রকাশিত 'স্মৃতির পথ ধ'রে আন্দামানে' পর্বগুলি পড়লে আশা করি আমার প্রতি আপনার নেতিবাচক ধারণা থাকবেনা।...ভালো থাকবেন!!
১২. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১৭ ০
সোর্বিয়ের বলেছেন: লেখা লেখিকে শ্রদ্ধা করি । সামান্য লেখার চেষ্ঠা করি ।
কাউকে কষ্ট দেয়া আমার মুখ্য উদ্দেশ্য নয় । আপনাকেও না ।
তবে ভারত পাকিস্তানকে সবসময় বর্জন ।
১৩. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৯ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: সোর্বিয়ের ভাই,
আপনিও লেখার চেষ্টা করেন জেনে আরও খুশি হলাম!সেই সঙ্গে আমার প্রতি আপনার সমবেদনা প্রকাশ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই! আর ভারত-পাকিস্তান বিষয়ক যে মন্তব্য তা' অবশ্যই তথ্য-যুক্তিসহ সব স্বাধীন লেখনীতে ফুটে উঠুক,সত্য উদ্ঘাটিত হোক!...ভালো থাকবেন!!
১৪. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:২০ ০
আলস্যের আনন্দে আমি বলেছেন: "তুমি বিস্মৃত লঘ্ন-মাধুরীর জলে ভেজা কবিতায়
আছ সোহরোওয়ার্দী,শেরে বাংলা,ভাসানীর শেষ ইচ্ছায়
তুমি বঙ্গবন্ধুর রক্তে আগুন-জ্বালা জ্বালাময়ী সে ভাষন
তুমি ধানের শীষে মিশে থাকা শহীদ জিয়ার স্বপন
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি
জন্ম দিয়েছে তুমি মাগো, তাই তোমায় ভালবাসি
আমার প্রাণের বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি
প্রাণের প্রিয় মাগো তোকে বড় বেশী ভালবাসি"
ভাই,দুঃখিত এখানে বাংলা বলতে "বাংলাদেশকে" বোঝানো হয়েছে।আমার দেশের নামকরা শিল্পী জেমসের(গুরু) উপরিউক্ত গানকে মনেপ্রাণে জাতীয় সংগীত মানি।আমি রবীন্দ্র রচিত "আমার সোনার বাংলাকে" জাতীয় সংগীত মানি না (যদিও ঐ টা আমার দেশে স্বীকৃত)।এর কারন একটাই সেটা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ যে "আমার সোনার বাংলা" কবিতাটি যে বাংলাকে নিয়ে লিখেছিলেন তা ভারত নামের একটা অত্যাচারী,জালিম,বেইমান,হারামী রাষ্ট্রের অংশ।আপনার ভারতকে মনের অন্তঃস্তল থেকে চরম ঘৃণা করি কিন্তু আপনাকে নয়।
আপনার দেশের কিছু কীর্তি বলি :
১. ১৯৭১সালে যুদ্ধে বাংলাদেশকে হেল্প করার নামে বাংলাদেশের(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সীমানায় যত পাহাড় ছিল তা কেঢ়ে নিয়েছে আর চামে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর পুরানা খাড় ঢালছে।আপনি খেয়াল করে দেখবেন একটা বড় পাহাড় দেখলেই সেখানেই অ্যামিবার ক্ষণপদের মত ভারত তার কালো হাত ১০-১২ মাইল ঢুকিয়ে দিয়েছে।ঐ পাহাড় ছিনতাই আর একটা নবজাতকের কাছ থেকে তার আহার কেড়ে নেয়া একই কথা।পাহাড় হল খনিজ সম্পদের বিশাল সম্ভাবনা।তাছাড়া কোমড়া,মেঘালয় এলাকা থেকে সিমেন্ট ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য যে পাথর আমার দেশ কিনে আনে তা ১৯৭১ সালেও আমাদের ছিল অর্থাৎ আমার দেশ তার নিজের সম্পদ ভারত কর্তৃক ছিনতাই হওয়ার পর তা আবার কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছে।আর স্পষ্ট করে বললে প্রতিদিন আপনার দেশ আমার দেশের কাছ থেকে ৩০-৪০লাখ টাকা ছিনতাই করছে।আর কি বলব!!!!!!
২.আন্তর্জাতিক নদী আইন ভঙ্গ করে ফারাক্কা বাধ দিয়ে আমার দেশের উর্বরা জমিকে করেছে ঊষর,প্রমত্তা নদীকে করেছে মরুভূমি।আমার দেশের উত্তরবঙ্গকে করেছে ক্ষুধার্ত মানুষের আস্তানা।
৩.গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে কত নাটকই না করল আপনার দেশের সরকার।আর তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আরও একটি নাটকের জন্ম দিল আর বাংলাদেশের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে বিনা শুল্কে মনের আনন্দে পণ্য পরিবহণে ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করছে।আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া হিসেবে তৈরী করা হচ্ছে টিপাইমুখ বাধ, যা স্পষ্টত আমার দেশে দুর্ভিক্ষ বয়ে আনবে।
৪.আপনাদের প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত যতবার সীমান্তে বিনা বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ করা নিয়ে কথা দিয়েছে আর তা বরখেলাপ করেছে, এরকম বেঈমানি দুনিয়ার আর কোন দেশ প্রতিবেশী দেশের সাথে করে নি।কিছুদিন আগে ফেলানীকে হত্যা করে কাটাতারের বেড়ার পশুর মত করে ঝুলিয়ে রেখেছে।
কিন্তু দাদা,আমার দেশ বেঈমান না কারন আজ থেকে ৫-৬ মাস আগে আপনাদের এক প্রেমিক জোটি বাংলাদেশের ৯ কি. মি. ভিতরে ঢুকে পড়ে ।আমাদের বিডিআর বা বিজিবি কিন্তু তাদের হত্যা করে নি বরং আপনার দেশের বি এস এফ এর কাছে সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছে।
৫.দাদা, আপনার দেশ বাংলাদেশের একদম সীমান্তে ২২ টি ফেনসিডিল কারখানা করেছে এবং চোরাচালানির মাধ্যমে আমার দেশ পাঠায়,যাতে করে আমার দেশের যুবসমাজ নেশায় বুদ হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।প্রতিবেশী দেশকে শায়েস্তা করার জন্য এই কৌশলটা হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণ্যতম ও ভয়ানক কৌশল।
৬.আমার দেশ যদি চাইত তাহলে আপনাদের সেভেন সিস্টারস্ বহু আগেই ভেঙ্গে দিতে পারত কিন্তু আমার দেশ সহজ সরলভাবে আপনার দেশের আর্টিফিসিআল বন্ধুত্ব বিশ্বাস করে তা হতে দেয় নি।আর আপনারা প্রতিনিয়ত তার ফিডব্যাক দিচ্ছেন আমাদেরকে শোষণের মাধ্যমে।
ভাই,জানি আপনাকে বলে লাভ নেই,কিন্তু আপনি যেহেতু বলেছেন যে আপনি দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানেন না তাই বললাম(ছোট খাটো একটা হাইলাইটস দিলাম)। আর এগুলো জেনেছি বই-পুস্তক পড়ে কিছুটা আপনাদের বর্ডারে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে।আপনার প্রতি আমার একটা অনুরোধ থাকবে,আমার কথাগুলোর উপর বিশ্বাস রাখবেন।তবে বলে রাখি "ভাই, দিন আমাদেরও আসবে,তবে আমরা আপনাদের শোষণ করব না,শুধু শোষণ করতে আসলে দাতভাঙ্গা জবাব দেব"
দেশ ভিন্ন হোক আপনিতো অন্তত বাংগালী, ভালো থাকবেন।
১৫. ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৩১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: ভাই আলসোর আনন্দে আমি,
অশেষ ধন্যবাদ,আপনার স্বাধীন-সাবলীল মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য! সত্যি-ই এইসব অনাঙ্খাকিত ঘটনাগুলি আমার অজানা ছিল।আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এই ভেবে যে 'অন্যায় নীতি'-র সমর্থন আমরা (লেখক-কবি-শিল্পী এবং সত্যানুসারীরা) কোনোদিন-ই করিনা,তা' স্বদেশ হোক অথবা বিদেশ!
আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি: "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা তারে তৃণসম দহে।"
মিথ্যে প্রশংসায় আমি বিশাসী নই,অভ্যস্তও নই;তবে তথ্য এবং প্রমাণভিত্তিক বিষয় আমাকে সত্যভাষণে সাহায্য করবে।আপনি যে দূর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলির কথা লিখেছেন তা'যদি সত্য হয়,শান্তিকামী ভারতীয়তার পক্ষে অবশ্যই অগৌরবের।'বাংলাদেশ' শুধু 'বাংলাদেশ' নয়,বাংলাভাষার একমাত্র দেশ,বিশ্ববাংলা ভাষা-ভাষীর একমাত্র গৌরবের দেশ।সে দেশ অকারণ অত্যাচারের সম্মুখীন হোক তা' কখন-ই প্রত্যাশিত নয়।আমাদের প্রতিবাদ-লেখনী যে চিরকাল অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধাচরণ করবে,সে বিষয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত খাকতে পারেন।শুধু ভারত নয়,পৃথিবীর যেসব দেশ শক্তিমদমত্ত হয়ে দূর্বলকে আঘাত করে চলেছে,তার বিরূদ্ধেও আমাদের লেখনী অনেক আগেই সোচ্চার হয়ে উঠেছে।কবি নজরূলের কথায় বলতে হয়: "মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত,আমি সেইদিন হ'ব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বণিবেনা,অত্যাচারীর খড়্গ-কৃপাণ ভীম-রণভূমে রণিবেনা/বিদ্রোহী রণক্লান্ত,আমি সেইদিন হ'ব শান্ত।"
কাশ্মীর সমস্যা:একটি ঐতিহাসিক দলিল:---প্রবীর ঘোষ
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কাশ্মীর সমস্যা:একটি ঐতিহাসিক দলিল
[সৌজন্যে:স্বাধীনতার পরে ভারতের জ্বলন্ত সমস্যা(পৃ:৮৮---১৪৫)—প্রবীর ঘোষ]
“আমি আত্মহত্যাকে অন্যায় মনে করিনা,
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকেও না,
নারী-পুরুষের প্রেমময় অসামাজিক সম্পর্ককে
অশ্লীল ভন্ডামি মনে করি না,
বৈষম্য জিইয়ে রেখে যারা জাতীয় সংহতির কথা বলে
তাদের ভন্ডামি ও অশ্লীলতা দেখলে মাথায় খুন সওয়ার হয়!”---পারভীন সুলতানা
দেশপ্রেম যখন পণ্য
বড় অসময়ে এ-লেখায় হাত দিয়েছি?নাকি এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়?
“যুদ্ধের খবর পাবলিক দারুণ খাচ্ছে।প্রায় প্রতিটি পত্রিকারই বিক্রি বেড়ে চলেছে হু-হু করে।এই সময় অন্য খাবার খাওয়ানো মুশকিল”।জুনের মাঝামাঝি নিজ পত্রিকা দপ্তরে বসে বলছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক।
এলাহাবাদ থেকে উড়ে কলকাতায় এসেছিলেন হিন্দি ম্যাগাজিনের এক বড় প্রকাশক।উদ্দেশ্য—এই কার্গিল যুদ্ধের বাজার থাকতে থাকতে একটা বাংলা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।যুদ্ধ আজ প্রচার মাধ্যমগুলোর কাছে পণ্য।যুদ্ধে মৃত সেনারা আজ পণ্য।ভারত-পাকিস্তান দু-দেশের প্রচার মাধ্যমই তাদের নিহত সেনাদের বীরত্ব-কাহিনী,দেশের জন্য আত্মত্যাগকাহিনী প্রচার করে দু-দেশের মানুষদের মধ্যে অন্তসারশূন্য দেশপ্রেমের আবেগের বান ডাকাচ্ছে।যুদ্ধ তহবিলে বিয়ের কনে সব গয়না দিয়ে দিচ্ছেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুতো পালিশ করা রোজগার তুলে দিচ্ছেন,চাকুরেরা একদিনের মাইনে দিয়ে দিচ্ছেন,খেলোয়াড়-গায়ক-গায়িকা,সিনেমার নায়ক-নায়িকারা নিজের নিজের দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াতে ছুটে যাচ্ছেন অগ্নিগর্ভ সীমান্তে।দু’দেশের একই চিত্র।
বিয়ের কনে থেকে ছাত্র সবাই যে,আবেগে ভাসতে ভাসতে এমনটা করে ফেলে,তা’ নয়।অনেকে এই সুযোগে চমক দিতে চায়।ছাপোষা চাকুরেদের চাওয়া,না চাওয়ারও পর অবশ্য মাইনে কাটা নির্ভর করে না।আর এই সামান্য টাকায় যুদ্ধের খরচের হাজার ভাগের একভাগ না উঠলেও দেশপ্রেমকে তেজি করার ব্যাপারটা মন্দ জমে না।চাকুরেদের অবস্থাটা কিল খেয়ে কিল হজম করার মত।পারফর্মারদের কাছে প্রায়শই এই যুদ্ধ,এই মৃত্যু-পণ্য।যাঁরা মরেছেন তাঁরা দেশপ্রেমের জন্য না মরলেও চাকরির জন্য মরেছেন।মানুষ মরছে,মারছে মানুষই।ওদেশের সেনা মরলে এদেশের মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ছে।এদেশের সেনা মরলে ওদেশের মানুষের রক্তে বীরত্ব ছলাৎ ছলাৎ করে উঠছে।কি ভয়ঙ্কর অমানবিক ব্যাপার!
এরা কি সকলেই দেশপ্রেমিক?দেশপ্রেম মানে কি সরকারের পক্ষে প্রশ্নাতীত আনুগত্য?অন্যরকম হলেই দেশদ্রোহী? ‘দেশপ্রমিক’ ও ’দেশদ্রোহী’ চিহ্ণিত করবে কারা?আপাদমস্তক ধান্দাবাজী ও দুর্নীতিতে ডুবে থাকা রাজনীতিকরা? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও যে দেশের শতকরা পঞ্চাশভাগ মানুষ পানযোগ্য জলটুকু পায়না,শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনা,যে দেশের তিরিশভাগ মানুষের মাথার ওপর চাল নেই,প্রতিদিন এক বেলা ভাত বা রুটি জুটলেই যথেষ্টর বেশি,সে দেশের মানুষ যদি বলে, “ভাত দে হারামজাদী,নাইলে মানচিত্র ছিঁড়ে খাবো”---তবে তারা কি দেশদ্রোহী বলে চিহ্ণিত হবে? শিক্ষার সুযোগ-বঞ্চিত ক্ষুধার্ত মানুষ জানেনা,কার্গিল খায়, না মাথায় মাখে।ওরা জানে না,কারণ পত্রিকা পড়া বা টি.ভি দেখার মত বিলাসিতা করা সুযোগ ওদের নেই।বঞ্চিত শোষিত মানুষদের অধিকার অর্জনের লড়াইকে আমরা কি দেশদ্রোহিতা বলবো? যারা দারিদ্রসীমার নীচের বঞ্চিত মানুষগুলোকে মিথ্যে আশার বাণীতে ভুলিয়ে শোষণপ্রক্রিয়াকে গতিশীল রেখেছে,সেই দুর্নীতির পাঁকে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকা রাজনীতিকরাই কি ঠিক করে দেবে ‘দেশপ্রেমিক’ ও ‘দেশদ্রোহী’র সংজ্ঞা?
দেশ মানে তো মাটি-নদী-পর্বত নয়;মানুষকে বাদ দিয়ে দেশ হয়না।দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষের প্রতি প্রেম।নাগরিকদের অধিকার লাভে বঞ্চিত মানুষদের প্রতি প্রেম।দেশপ্রেমের এই সংজ্ঞাটিকে ও ছকটিকে মাথায় রাখলে,দেশপ্রেমিক ও দেশদ্রোহিদের চিনে ফেলা সহজ হয়।
কাশ্মীর নিয়ে বাহান্ন বছর(এই লেখার সময় পর্যন্ত)ধরে ভারত-পাক যুদ্ধ দফায় দফায় কম হলো না।এ এক ভয়ঙ্কর সমস্যা।ভারত-কাশ্মীর-পাকিস্তানের আত্মঘাতী সমস্যা।“যুদ্ধ নয়,শান্তি চাই”---শুধুই কি শ্লোগানের জন্যেই শ্লোগান হয়ে থাকবে?নাকি শান্তি আনতে আমরা দু-পক্ষই আন্তরিক হবো?.........
কাশ্মীর---তুমি কার?
পঞ্চাশ বছরের ওপর ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক ও উত্তেজনা জীইয়ে রেখেছে।কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত-পাক উত্তেজনা ও ছোট-বড় যুদ্ধ চলবেই।যে সব রাজনৈতিক চিন্তাবিদ থিঙ্কট্যাঙ্করা ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠার পর ঘোষণা করেছিলেন,এতে করে দু-দেশের মধ্যে যুদ্ধ সম্ভাবনার অবসান ঘটল---তাঁদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণ করেই দু-দেশ এখন যুদ্ধে উত্তাল।কারণ সেই কাশ্মীর সমস্যা।দু-দেশের রাজনীকিতরা ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থেই আমজনতার কাছে দেশপ্রেমিক সাজতে চায়।এইসব সাজা দেশপ্রেমিকরা কোনও দিনই কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে না,করতে পারবেনা।কাশ্মীর নিয়ে স্থায়ী সমাধানের উপায় মাত্র তিনটি।এক:দু-দেশের দখলে থাকা কাশ্মীর অংশকে সেই সেই দেশেরই অংশ বলে মেনে নেওয়া।দুই:দু-দেশের দখলে থাকা কাশ্মীরবাসীরাই ঠিক করুক তাদের ভবিষ্যৎ,তারা স্বাধীন থাকবে,অথবা ভারত বা পাকিস্তানের রাজ্যবাসী হিসেবে থাকবে---তা সে স্বায়ত্বশাসন নিয়ে হোক,কী রাজ্য হিসেবেই হোক।তিন:কাশ্মীরবাসীদের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেওয়া।...(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৯
বাংলা যখন হিন্দিতে উচ্চারিত হয়! এ কি বিস্ময়!!
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাংলা যখন হিন্দিতে উচ্চারিত হয়,একি এ বিস্ময়!!
রইসউদ্দিন গায়েন(সঙ্গীত-শিক্ষক,রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্ট-ব্লেয়ার,দ: আন্দামান।)
শৈশবের ‘জন-গণ-মন অধিনায়ক জয়হে’ গানটি আজও যখন স্বদেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়;বাংলার মাটিতে গড়া আমার সহজ-সরল মন গর্বে আর আনন্দে ভ’রে ওঠে!রবীন্দ্রনাথ আছেন, সারা বিশ্ব-বাংলা ও বাঙালির হৃদয় জুড়ে!আমরা পৃথিবীর যেখানেই থাকিনা কেন,রবীন্দ্রনাথ থাকেন আমাদের সাথে সাথেই। তাই ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলার মানুষ, স্বাধীন চিন্তা-চেতনায় ‘চির উন্নত শির’। রবীন্দ্র-ভাষা এবং ভাবনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সৃষ্টি-স্বপ্ন।সে স্বপ্ন বা কল্পনা কখনও মিথ্যে হয়নি,আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর আত্ম-প্রত্ময়ের জন্য! আলোচ্য বিষয়:আমাদের জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে।বলা বাহুল্য,আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের(জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ইত্যাদি)ভাষা ‘বাংলা’।কিন্তু আজ এই বিশেষ দিনেও (২৬ শে জানুয়ারি,গণতন্ত্র দিবস)আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একজন উচ্চ পদস্থ শিক্ষা-বিভাগীয় প্রশাসনিক অধিকর্তার মন্তব্যে প্রকাশ:আমাদের চির পরিচিত সেই বাংলাভাষায় লিখিত গানটি(ভারতের জাতীয় সঙ্গীত) নাকি হিন্দি-ভাষার উচ্চারণে গাইতে হবে।অর্থাৎ ‘জন-গণ-মন অধিনায়ক’ গাইতে হবে ‘জ্যা-ন্যা-গ্যা-ন্যা-ম্যা-ন্যা অ্যা-ধি-না-য়্যা-ক্যা’-র মতো উচ্চারণে।কিন্তু কেন?কে এই বিকৃত ভাবনার জনক?আমি শুধু বাংলার নই,একজন স্বাধীন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে, আমার এ প্রশ্নের জবাব প্রত্যাশা করি!ওয়েব সাইটে যাঁরা পোস্ট করেছেন এই ব’লে: ‘JANA-GANA-MANA Written by Rabindranath Tagore, originally in Bengali but adopted in Hindi’-এর মানে কি? এর অর্থ কি এই যে, বাঙালির ঘরে জন্ম আর হিন্দিভাষীর ঘরে লালিত-পালিত;তাই তার বাঙালি হিসেবে আত্ম-পরিচয় চিরকালের জন্য মুছে যাবে? ওয়েবসাইট পোস্টাররা কি এসব সদবুদ্ধি মাথায় রেখে লিখেছেন,নাকি তাঁরা বঙ্গসন্তানদের অসাধারণ প্রতিভার স্বীকৃতি ও মর্যাদা দান করাটাই অগৌরবের মনে করেন? বাংলার মানুষের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে।অখন্ড বাংলার মানুষ, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা জন্য অনেক রক্ত ঝরিয়েছে!বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে!’৫২-তে রমণার রক্ত-রাঙা ইতিহাস,’৬১-র শিলচরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস,’৭১-এ ওপার বাংলায় মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাস বিস্মৃত হবার নয়।সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে, বীর-প্রসবিনী ভারত-জননীর সন্তানরাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য!তবে আজ কেন এই মিথ্যাচার? বিশ্বকবির ‘দুই বাংলা’ শুধু নয়,’দুটি দেশ’, তাঁরই(রবীন্দ্রনাথের)দুটি গানের (‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’)বাণী ও সুরে,আকাশ-বাতাস আজও মুখরিত হয়ে ওঠে---এ গর্ব শুধু আমার নয়,সব মানুষের!!
১৭৩ বার পঠিত ০ ১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩১ ০
জুনায়েদ জুবেরী বলেছেন: হুম।
২. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪ ০
একজন অপদার্থ বলেছেন: যারা এমোন করে দাঁত ফেলে দাওয়া উচিৎ
৩. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:১৬ ০
ভাঙ্গাচুরা যন্ত্রপাতি বলেছেন: পশ্চিম বঙ্গীয়দেরতো আমি মেরুদন্ডহীন হিসাবে জানি, যার একটা বড়সড় কারণ এই জনগণমন। এখনও কেউ কেউ মেরুদন্ড বজায় রেখেছে তাহলে দেখা যাচ্ছে! ভালো লাগলো। যদিও পারবেন না জানি, তবুও বলি এভাবে নিজেকে হিন্দির কাছে পরাজিত করবেন না, পারলে অধিকার আদায় করে নিন আন্দোলন করে। বাংলাভাষী হিসাবে আমার দেখতে খারাপ লাগে।
৪. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১১ ০
রাইসুল জুহালা বলেছেন: পোস্ট পড়ে মনে হচ্ছে আপনি ভারতের বাসিন্দা। যদি আসলে আপনি ভারতীয় হন, তাহলে পোস্ট সম্বন্ধে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে জাতীয় সংহতি বজায় রাখার জন্য কখনো কখনো আঞ্চলিক এবং ব্যক্তিগত কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আপনার জায়গায় আমি থাকলে এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতাম।
আর আপনি যদি ভারতীয় না হন, তাহলে আমি বলব যে নিজের চরকায় তেল দিন এবং ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তাদেরই মাথা ঘামাতে দিন।
কবিতার টানে
১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কবিতার কথা না বলা-ই ভালো,সয়না ব্যথার ভার---
কবিতা লেখায় সে ভাব আসেনা,বন্ধ মনের দ্বার!
কেউ বলে--'ব্যাটা কবি হতে চায়,কিন্তু বিদ্যা নাই
মুখে পাকা কথা ক'য়ে যায় শুধু,লেখে তো ভস্ম-ছাই।
নাম শুনলেই বুঝা যায়,ওর নাই জাত-কুল-মান
জানে কেডা আর কবে কেডা, ক্যান্ আইছে আন্দামান!'
মুখ বুজে সই আরও কটু কথা,আমি আজ বড় একা---
একদিন ছিল আমার পাশে যে, আজ নাই তার দেখা!
সাঁঝের আকাশে সেই সাঁঝতারা সজল নয়নে চায়---
তুলসী তলার সন্ধ্যা-প্রদীপ,শুধু মনে পড়ে যায়।
প্রভাতী আলোয় সেই হাসি নেই,যেন নিরাশার ছবি---
তবু কেন হায় কবিতার টানে, মন হতে চায় কবি!!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১১:১৩
প্রিয় সবুজ
বাংলা বহির্সুখ এক অন্ধ আবেগ---
'হেথা নয়,হোথা নয়,অন্য কোথা' এ শুধু বিলাস।
গবোর্ন্নত 'স্টার হোটেল'-ইন্দ্রপুরী দূ:সহ স্বপ্নসুখ!
অতিশয় আহার-বিহারে মত্ত সবাই,ক্লান্ত আমি
প্রাচুর্যের মাঝে এক নিবিড় শূন্যতা।
সময় যখন দেখার,ছিলনা সেই চোখ--
সময় যখন শোনার, ছিলনা সে মন--
সময় যখন বলার,ছিলনা সে কন্ঠ!
একই আকাশপথে ফেরা--
আজ শেষ রাতে আনন্দ-বিহ্বল নক্ষত্র,
উজ্জ্বল ধ্রুবতারা,নির্মল প্রভাতি আলো
নিয়ে এল আমার প্রিয় সবুজের কাছে!!
হিন্দির স্তাবকতায় ভারতে বাংলাভাষাসহ অন্যান্য জাতীয় ভাষাগুলি অবমাননার শিকার হচ্ছে
৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভারতে হিন্দির প্রতি অতিভক্তির কারণে তামিল-তেলুগু-বাংলা-মালয়ালম-প্রভৃতি স্বীকৃত জাতীয়-ভাষাগুলি অবমাননার শিকার হচ্ছে।
আন্দামানের পোর্টব্লেয়ার শহর-স্থিত গভ: মডেল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল-অডিটরিয়ামে,আয়োজিত সঙ্গীত,নাটক ইত্যাদির প্রতিযোগিতা শেষ হ’ল।উপলক্ষ্য প্রয়াত ড: রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন-পালন শিক্ষক-দিবস রূপে।অংশগ্রহণে ছিলেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আনুষ্ঠানিক পরিচালকবৃন্দ এবং বিচারকগণও ছিলেন হিন্দিভাষার স্তাবকধর্মী মানুষ।শুধু ভাষা নয়,ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশের একজন কর্ণধার এবং আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাবিদের প্রতি শ্রদ্ধা-জ্ঞাপন করা হ’ল গণেশ-বন্দনা দিয়ে।বিদ্যার দেবী সরস্বতী-বন্দনায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হ’লে,হয়তো এ প্রশ্ন উঠত না।তবুও এ কথা বলতে হয় যে মিশ্র-সাংস্কৃতিক যে কোনও অনুষ্ঠান,ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। ঐতিহাসিক পটভূমিকায় ‘বন্দে মাতরম্ ’-এর ইতিবাচক গুরুত্ব যে অপরিসীম ছিল,তা’ অস্বীকার করা যায়না;কিন্তু এই স্তবগানের জন্য-ই যে অখন্ড ভারতমাতা দ্বি-খন্ডিত বা ত্রি-খন্ডিত হয়েছিল,তা ইতিহাস-ই বলে।
ফিরে আসি,আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে।মঞ্চে-- একক কন্ঠে,সমবেত কন্ঠে বিভিন্ন ভাষায় গান যেমন ছিল,বিভিন্ন ভাষায় প্রাদেশিক নৃত্যশৈলীর প্রদর্শনও ছিল অসাধারণ।কিন্তু হিন্দি-স্তাবকতার আলোয় বিচারকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত-সূচীতে ঝলমল ক’রে উঠল হিন্দি-ভাষায় পরিবেশিত অর্কেষ্ট্রা-কলাকারসহ স্কুলগুলির নাম।এ এক অভিনব সুযোগ।‘হিন্দি লাও,হিন্দি গাও,প্রাইজ পাও;অন্য ভাষা গোল্লায় যাও।
অনেকের বদ্ধমূল ধারণা,হিন্দি নাকি রাষ্ট্রভাষা।হিন্দি প্রচার করা হয় অনেকটা বিজ্ঞাপনী কায়দায়।যেমন ‘রাজকীয় বরিষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’,রাজভাষা প্রকোষ্ঠ ইত্যাদি।এগুলিকে যদি বলা হ’ত সরকারি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সরকারি প্রকোষ্ঠ—তা’হলে সাধারন মানুষের পক্ষে সহজবোধ্য হ’ত।এখন দেখা যাক ‘রাজভাষা’ বলতে কী বোঝায়(?)।এক হতে পারে,রাজার ভাষা ‘রাজভাষা’।আর এক হতে পারে,ভাষার রাজা ‘রাজভাষা’। প্রথমটির কথায় বলতে হয়,রাজা যখন নেই(গণতান্ত্রিক দেশে) তখন রাজার ভাষা বলা যায়না,দ্বিতীয়ত: যদি বলা হয় ভাষার রাজা,তখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক তামিল,তেলুগু,বাংলা প্রভৃতি ভাষার মতো হিন্দি উন্নত ভাষা নয়।তাই হিন্দিকে ভাষার রাজা কখনো বলা যায়না।
সজ্ঞান মানুষগুলি যদি জ্ঞানচক্ষু মেলে দেখে,ভাষাদূষণের অপকীর্তিগুলো নজরে পড়বে।ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কোন্ ভাষায় রচিত প্রশ্ন তুললে,হিন্দি চাটুকারদের মুখে সত্য প্রকাশ পায়না।বাংলাভাষায় রচিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই গানটি হিন্দি ব’লে অপপ্রচার চালানো হয় ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে।এ এক অত্যাশ্চর্য মিথ্যাচার! আজও আমরা দৃপ্ত কন্ঠে গেয়ে বেড়াই ‘মোদের গরব,মোদের আশা—আ-মরি বাংলাভাষা/তোমার কোলে তোমার বোলে,কতই শান্তি ভালবাসা//বাংলাকে ভালবেসে আমরা সারা পৃথিবীকে আপন ক’রে পেয়েছি।বাংলাভাষাকে ভালবেসে আমি আমার নিজেকে চিনেছি।আমাদের এই সংবেদনশীলতার গুরূত্ব যারা দেয়না,দিতে চাননা,তাঁরা নি:সন্দেহে ভারতীয় সংস্কৃতির শত্রু।ভাষা মানুষের গোপন আশ্রয়,হৃদয়ের সম্পদ,চিরপথের সাথী।সেই ভাষাপ্রাণকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন করতে চায়,তাঁদের বিরদ্ধেই চলুক আমাদের ভাষা-সংগ্রাম,জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই আমাদের প্রকাশ ঘটুক মাতৃভাষায়!!
ধর্ম,জ্যোতিষ,ভাগ্য,তাবিজ,মন্ত্র এবং মন্দির-মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমেই শুধু ভারতবর্ষ এগিয়ে যাবে উন্নতির চরম শিখরে। [প্রথম প্রকাশ: ‘বাক্-প্রতিমা’(আন্দামানের একটি সাহিত্য পত্রিকা)]
১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ধর্ম-বিষয়ক কিছু বলার আগে সমার্থক কয়েকটি বিশেষ শব্দ-পরিচিতির দরকার।কর্তব্য-প্রীতি-সুনীতি-সৎসঙ্গ-অহিংসা-গুণ-ভাব ইত্যাদি শব্দগুলি ‘ধর্ম’ শব্দটির(প্রায়) সমার্থক।অথচ,আমাদের কাগজে-কলমে,খাতায়-পাতায়-মাথায়-কথায় ধর্মের ‘গোদা’ অর্থ হ’ল---হিন্দু,ক্রিশ্চান,ইসলাম,শিখ,জৈন,বৌদ্ধ,আরও অনেক কিছুই। ‘ধৃ’ ধাতু থেকে নিষ্পত্তি হয়ে এসেছে ‘ধর্ম’ শব্দটি। ‘ধৃ’ যা ধরে রাখে।কী ধরে রাখে? না,মানুষের ‘মনুষ্যত্ব’-কে বা মানবের ‘মানবতা’-কে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়---কোথাও নেই এই ‘মানবতাবাদ’-এর কথা!ইদানীং অবশ্য মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মুখে বা বিক্ষিপ্তভাবে কিছু পুস্তক-পত্রিকায় মানবতাবাদের উল্লেখ থাকলেও একজন ‘আদর্শ’ ‘মনুপুত্র’-র সন্ধান পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ---যাঁর কাছে ধর্মের প্রকৃত অর্থ হ’ল ‘মানবতাবাদ’।
মানবের ধর্ম মানবিকতা;পশুর ধর্ম পাশবিকতা।আমাদের কাছে ধর্মের অর্থ হোক নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যপালন;সর্বোপরি অহিংসা ও প্রেম।তথাকথিত হিন্দু,মুসলিম,শিখ,খ্রিস্টান ইত্যাদি ব’লে পরিচয় দিলে বিশ্বমানবধর্মের অবমাননা করা হয়।ধর্মের স্থান সবরকমের সঙ্কীর্ণতার ঊর্দ্ধে।কোনও গোষ্ঠীর বেড়াজালে নিজেকে আবদ্ধ রাখার অর্থ—ধর্মান্ধতার পাগলাগারদে বন্দী হয়ে থাকা।আর এই ধর্মান্ধতার অন্ধকূপে মানুষের কোমল প্রবৃত্তির স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়।ধর্মের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সৃষ্টিশ্রেষ্ঠ মানুষ সূক্ষাতিসূক্ষ ভাবনার ফসল ফলাতে পারে না তার মানসভূমিতে।প্রকৃতি-সৃষ্ট মানুষের ঊর্বর মনোভূমি তখন ঊষর হয়ে ওঠে।;সজীবতা ও স্নিগ্ধতার অভাবে মানবতাবোধ লুপ্ত হয়,মানসিক অবসাদ এসে ভিড় করে।তখন মানুষ আর মানুষ থাকে না।ধর্মের নামে অমানুষের সৃষ্টিহার অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে।অন্যান্য গ্রহ-র সঙ্গে তুলনামূলকভাবে পৃথিবী গ্রহটির আকার বেশ ছোট।তাছাড়াও,এর তিন চতুর্থাংশ জল আর জলজন্তুতে ভরা।বাকী এক-চতুর্থাংশে
মানুষ,গরু,ছাগল,ভেড়া,উল্লুক,ভল্লুক,বাঁদর,হনুমান,রাক্ষস,খোক্কস,ভূত,প্রেত ইত্যাদির সহাবস্থানে মানবতার বাস্তবায়ন যে কতখানি সম্ভব তা’ আমার মতো সাধারণ মানুষের আন্দাজ করা কঠিন।এক তো আগাছার ভিড়;তার উপর গাছাদের খামচা-খামচি---এভাবে কি ধর্মের স্বরূপদর্শন বা আত্মোপলব্ধিকরণ সম্ভব?আমার জন্মের আগে ‘ধর্ম’ বলতে মানুষ কী বুঝত বা বোঝাত—জানি না।তবে জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি ধর্ম মানে,টিকি অথবা টুপি;মালা না হয় তসবি;পৈতে না হয় সুন্নত;লুঙ্গি না ধুতি,পূর্ব না পশ্চিম,মন্দির না মসজিদ,জল না পানি,শের আলি না বনমালি-র বিভেদীকরণ।আর এই বিভেদীকরণ কি মানুষকে কখনও সবল ক’রে তুলতে পারে?প্রাসঙ্গিক মনে ক’রেই একটা অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করছি।কোলকাতার আখড়া,বড়তলা,মেটিয়াব্রুজ এলাকার কিছু মানুষ ‘চেয়ার’কে বলে ‘স্টুল’ আর ‘স্ক্রু ড্রাইভার’কে বলে ‘বাঁটালি’।বলা বাহুল্য, ‘বাঁটালি’ একটা আলাদা যন্ত্র যা’ কাঠের কাজে ছুতোর-মিস্ত্রিরা ব্যবহার করেন,ইংরেজিতে যার নাম ‘চিজেল’।যা’ হোক এই হ’ল সেই বিশেষ মানুষগুলির কথ্যভাষার দূর্দশা।অথচ মজার ব্যাপার হ’ল,তাঁরা এসব ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে চিন্তিত নন্।কারণ,তাঁদের ব্যবহৃত এ-জাতীয় শব্দগুলি স্বরচিত।বাংলা ভাষার ব্যাকরণসম্মত আভিধানিক শব্দাবলী তাদের কাছে নিষ্প্রয়োজন।ধর্মের ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য।পৃথিবীর কোনো এক ক্ষুদ্রতম বিন্দু থেকে ‘ধর্ম’ শব্দের উৎপত্তি এবং তার সঠিক অর্থ বা সঠিক প্রয়োগ না থাকায় যত বিপত্তি।
অসংখ্য মানুষের বিশ্বাস রয়েছে জ্যোতিষ-শাস্ত্রের উপর।শোনা যায়,জ্যোতিষ বা হস্তরেখা নাকি বিজ্ঞানসম্মত।জ্যোতিষী বা গণক-ঠাকুররা নাকি ভূত-ভবিষ্যৎ সব বলে দিতে পারেন;এঁরা দৈবজ্ঞ।তর্কের খাতিরে সাময়িকভাবে একথা স্বীকারও করতে পারি বিশ্বখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা ‘নষ্ট্রাডামে’-র কথা স্মরণ ক’রে।[সম্পাদকীয় সংযোজন: ফরাসী দিব্য ক্ষমতাসম্পন্ন ভবিষদ্বক্তা মাইকেল ডি নষ্ট্রাডামে(১৫০৩খ্রিস্টাব্দ---১৫৬৬ খ্রিস্টাব্দ)ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন---‘In the year 1999…from the sky will come the great king of terror.’ ৯/১১-এর টোয়াইন টাওয়ার (আমেরিকার ওয়ার্লড্ ট্রেড্ সেন্টার) ধ্বংস-কে বহু মানুষ মনে করছেন নষ্ট্রাডামে’-র সেই ভবিষ্যদ্বাণীর রূপায়ণ] তাহলেও একটা সঙ্গত প্রশ্ন মনে আসে স্বাভাবিকভাবেই।গত ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬/১২’র অব্যবহিত পূর্বে সারা পৃথিবীর তথাকথিত জ্যোতিষী/গণকঠাকুর/ভবিষ্যদ্বক্তারা কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন?নাকি,এক্ষেত্রে ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণায় তাঁদের অনীহা ছিল?তাঁরা কি ভূমিকম্প বা সুনামি’র মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা জানতেন না?নাকি,এসব বিপর্যয় জ্যোতিষশাস্ত্র-বহির্ভূত বিষয়?
বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে---আন্দামানে কিছু গেরুয়াধারী মরশুমী ভন্ড জ্যোতিষীদের প্রাবল্য ঘটেছে।প্রকৃতপক্ষে এঁরা কর্মবিমুখ,অলস এবং ফাঁকিবাজ।মানুষের সরল বিশ্বাসের ‘রক্তজীবি পরগাছা’ এরা।এরা ঠগ,প্রবঞ্চক,ধাপ্পাবাজ।খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল---এই সমস্ত ভন্ড জ্যোতিষীগুলির উৎপত্তিস্থল/সৃজনস্থল হ’ল অন্ধ্র-তেলেঙ্গানা বিধৌত দাক্ষিণাত্য।আন্দামানের বাড়ি-বাড়ি এমনকি অফিস কাছারিতে ঘুরে ঘুরে এরা মানুষের সরলতা শিকার ক’রে জীবিকানির্বাহ করে।
জ্যোতিষশাস্ত্র-বিষয়ক আরো দু’চার কথা বলা প্রয়োজন,নইলে ‘গরীবী রেখা’-র নিম্নবর্তী মানুষগুলি যে একদিন হারিয়ে যাবে ‘মরিবী রেখা’-র নীচে---এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।বহু শহরের অলিতে-গলিতে ভাগ্যগণনার বিজ্ঞাপনসরূপ ছোট-বড় অনেক সাইনবোর্ড নজরে আসে আমাদের।পোর্টব্লেয়ারের জংলিঘাট অঞ্চলেও সেদিন নজরে এল,একটা ছোট দোকানের গায়ে লাল অক্ষরে হাতে লেখা আছে—‘এখানে হাত দেখা হয়’।ব্যাধ বা জংলী শিকারীরা যেমন শিকারের নেশায় ফাঁদ পেতে,বন্য পশু-পদচারণ-শব্দের ওঁত পেতে থাকে,(লক্ষ্য একটাই---কখন এই মরণফাঁদে এসে পড়বে জীবজন্তু)ভাগ্যনির্ণয়ের ঠিকাদার-জ্যোতিষীরাও তেমনিভাবে অপেক্ষায় থাকে---কখন হাড়িকাঠে মাথা দেবে ‘বলির পাঁঠা’রা।
তাগা-তাবিজ-মন্ত্রশক্তির কথা যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল।লটারিতে মোটা টাকা পাওয়ার আশায় কোমরে-গলায়-হাতে-অষ্টপৃষ্ঠে তাবিজ মাদুলি বেঁধে কত লোক যে সর্বস্বান্ত হয়েছে,তা’ জানতে হ’লে হিসাবশাস্ত্র-বহির্ভূত কোনো গণনাপদ্ধতি আবিষ্কারের প্রয়োজন হবে।একটা কথা কেউ বোঝেন না বা বুঝতে চান না যে মন্ত্রশক্তির প্রভাব যদি ফলপ্রদ-ই হবে,তাহলে মন্ত্রদানকারী নিজে কেন মন্ত্রবলে অমরত্বলাভ করেন না!(?)
এবার আসা যাক মন্দির-মসজিদ নির্মাণের কথায়।এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত-শিল্পী নকুল বিশ্বাসের একটা গানের দুটো লাইন মনে পড়ে গেল:-
‘যদি মন্দির মসজিদে গিয়ে জুতো চুরি যায়
দয়াল,কেমনে ডাকব তোমায় নির্জন নিরালায়!’
আলোচ্য বিষয়টিকে স্বল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়োজনে মন্দির-মসজিদ প্রসঙ্গটির দ্রুত অবতারণা করতে হ’ল।দু’একটি ‘মহাজন-বাণী’ উদ্ধৃত করা যেতে পারে এখানে।
‘অন্ধকারে লুকিয়ে আপন মনে
কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে
নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে দেবতা নাই ঘরে।‘(ধূলামন্দির/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
অথবা,
‘...ওরে,এ ভারতবর্ষ তোদের মন্দিরের ভরতবর্ষ নয়,মুসলমানের মসজিদের ভারতবর্ষ নয়---এ আমার মানুষের,মহামানুষের মহাভারত।’ ( কাজী নজরুল ইসলাম)
মন্দির-মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে ভারতবর্ষ এগিয়ে যাবে কি পিছিয়ে যাবে---এ সিদ্ধান্তে আসা, ভারতবর্ষের মতো বিশাল ও বৈচিত্রপূর্ণ দেশের ক্ষেত্রে,এক কথায় সম্ভব নয়।সদাজাগ্রত সর্বশক্তিমান (ঈশ্বর-আল্লা-গড্-ভগবান যে নামেই হোক না কেন)প্রতিটি জীব ও অনু-পরমানুর মধ্যে সদা বিরাজমান।জাগতিক সব কাজ সম্পন্ন হয় তাঁরই অদৃশ্য ইঙ্গিতে।ইট্-কাঠ-বালি-পাথর-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ছাদ-আঁটা চার দেয়ালের মাঝখানে কখনও ঈশ্বরপ্রাপ্তি হয় না।মানুষ যদি নাকে চশমা এঁটে ঘরময় চশমা খুঁজে বেড়ায়,সে নেহাত ‘আহাম্মক’ ছাড়া আর কিছুই নয়।বিশ্বনিয়ন্তা খোঁজার জন্য মন্দির-মসজিদ নির্মাণ এই নাকে চশমা এঁটে চশমা খোঁজার মতো আহাম্মকি/বেওকুফি।
‘কৃষ্ণ’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে কর্ষণ থেকে।আত্মকর্ষণ>আত্মদর্শন=কৃষ্ণ (ঈশ্বর)-প্রাপ্তি।(কৃষ্ণপ্রাপ্তির অন্য অর্থ ‘মৃত্যু’;আমি আর কথা বলছি না)।আমাদের আত্মকর্ষণে প্রবৃত্তি নেই;নেই ইচ্ছা,একাগ্রতা,মনোনিবেশ-ক্ষমতা।তাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে,চিৎকার-চেঁচামেচি করে,মাইক বাজিয়ে ‘আগমনী’ বা আজানের(আহ্বানের) নামে ঈশ্বর খোঁজার বাহানায়,প্রকৃতপক্ষে ‘শব্দদূষণ’ ছাড়া আর কোনো সৎকর্ম করি না।ঈশ্বর খোঁজার সহজ পথটি দেখিয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ(জীবে প্রেম করে যেইজন,সেইজন সেবিছে ঈশ্বর)।অথচ সেই সোজা পথে না হেঁটে ,জগঝম্প রাস্তায় আমরা ঈশ্বর খুঁজতে বের হই,যা গিয়ে শেষ হয় রেষারেষি,মারামারি,হানাহানিতে।
প্রকৃতপক্ষে,মানুষের প্রয়োজন আত্ম-উপলব্ধি ও আত্মজ্ঞান;তবেই আত্মিক বিকাশ,আমার মাঝে আমিত্বের প্রকাশ সম্ভব। ‘আপনার মাঝে দেখ,আপন স্বরূপ’(কাজী নজরুল ইসলাম)।অতি প্রাচীন চাণক্য-শ্লোক উপমার ছলে সে কথাই বলে:--
‘যস্য নাস্তি স্বয়ং প্রজ্ঞা শাস্ত্রং তস্য করোতি কিম্।
লোচনাভ্যাম বিহীনস্য দর্পণঃ কিং করিষ্যতি’।।
---যার নিজের নেই জ্ঞান,শাস্ত্র তার কী করবে?অন্ধ ব্যক্তির কী(উপকার)টা করতে পারে আয়নায়?
বিশাল এই দেশ ভারতবর্ষ-র পক্ষে এগিয়ে চলা তখনই সম্ভব,যখন একতার বন্ধনে আমরা সবাইকে সংগঠিত করতে পারব।বৈচিত্র্য’র মাঝে ঐক্য-প্রতিষ্ঠাই হ’ল উন্নতির প্রথম সোপান।
‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’
ঐ বৈচিত্র্য মানে কিন্তু ভুরি-ভুরি অন্ধবিশ্বাস নয়,রাশি রাশি কুসংস্কার ভরা আচার-বিচার পদ্ধতি নয়।গলায় বড় তাবিজ বা মাদুলি ঝুলিয়ে যদি পাশ করা যায়,তাহলে বই পড়ায় কী কাজ?মন্ত্রবলে যদি ধনী হওয়া যায়,তাহলে ভারতের অধিকাংশ মানুষ গরিব কেন?মন্ত্রপূত তেল-জলে যদি রোগ-নিরাময় সম্ভব,তাহলে ডাক্তার বা হাসপাতালের কী প্রয়োজন?তাই খুব সহজ ভাষায়—নৈতিক এবং মানবিক চরিত্র-নির্মাণ ছাড়া স্বদেশ-নির্মাণ কোনও কালেই সম্ভব নয়।মন্দির-মসজিদ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত-নির্মাণের স্বপ্ন তাই ‘সোনার পাথর-বাটি’-র মতোই অবাস্তব।এ স্বপ্ন বিশ্ব-মানবিকতা বিকাশের চরম অন্তরায়।
১৬১ বার পঠিত ০ ১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৫ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: যে কোনো ব্লগার/পাঠক/পাঠিকা মন্তব্য করতে পারবেন,তবে একটা বিশেষ অনুরোধ---আপনাদের বক্তব্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেমনই হোক,তা' যেন সুন্দর সাহিত্যের ভাষায় প্রকাশিত হয়।লেখকের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ প্রত্যাশিত!...ভাল থাকবেন সবাই!!
২. ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১৬ ০
সরোজ রিক্ত বলেছেন: অ'নে'ক ভা'ল লা'গ'লো।
তা' জ'না'ব, ধ'র্ম কু'-'সং'স্কা'র আ'নে না'। কু'-সং'স্কা'র আ'নে অ'শি'ক্ষা আ'র দা'রি'দ্র, বু'ঝে'ছে'ন?
ব্ল'গে ছা'গ'শি'শু'র আ'গ'ম'নে'র হে'তু অ'জ্ঞা'ত র'হি'ল।
৩. ১৩ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২৭ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: আপনি বোধ হয় আমার অনুরোধ রক্ষা করতে পারলেন না।আপনার বক্তব্য সুন্দর ভাষায় ব্যক্ত করতে আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।ভাল থাকবেন!
৪. ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৫১ ০
ভাঙ্গাচুরা যন্ত্রপাতি বলেছেন: ধর্মকে এই শান্তির মোড়কে উপস্থাপনার ভন্ডামী গত শতকের শেষের দিকে শুরু হয়েছে। এটা একপ্রকার বানিজ্যিক প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই না। মানুষ যুদ্ধটুদ্ধ করে এখন ত্যাক্তবিরক্ত, মানুষ আর এখন যুদ্ধের আহবানে সাড়া যায় না, সবাই এখন দুদন্ড শান্তি চায়। তাই লাগাও ধর্মব্যাবসার পিছনে শান্তির সীল!!!!
কথায় আছেঃ there is no great love without great jealousy
যে ধর্ম শুধু শান্তির কথা বলে ঐ ধর্ম মানুষের মানবিকতার বিরুদ্ধে। মানুষ যেমন সুঘ্রাণযুক্ত, সুস্বাদু খাবার খায় তেমনই দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা মলত্যাগ করে।
যে ধর্ম শুধু শান্তির কথা বলে সেই ধর্মের অনুসারীদের কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমাদের মনে রাখা উচিত মানুষ শুধুমাত্র কার্নিভোর বা হার্বিভোর নয়, মানুষ ওমনিভোর। প্রকৃতি মানুষকে এভাবেই সৃষ্টি করেছে। স্বাভাবিক মানুষ থাকতে হলে প্রকৃতিবিরুদ্ধ হওয়াটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। উন্নত দেশের বাবা মায়েরা বাচ্চাদের কাদামাটির কাছে ঘেষতে দিতে বেশী সতর্ক হয়ে থাকে, যেখানে অনুন্নত দেশগুলোর বাচ্চারা ধুলোয় গড়াগড়ি খায়। এ কারনেই উন্নত দেশগুলোতে অটোইমিউন রোগ বেশী দেখা যায়, অনুন্নত দেশগুলো থেকে। তাই শান্তি শান্তি শান্তি বলে আসতে যে বানিজ্যিক বিপনণ চলছে, ভন্ডামী চলছে তা ভাল নয় বরং আদতে খারাপই ডেকে আনবে।
পোষ্টের বাকী পয়েন্টগুলোর সাথে সহমত পোষণ করছি।
৫. ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার দীর্ঘ এবং স্বাধীন মন্তব্য প্রকাশের জন্য।আপনার মুক্তমনের পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হ'লাম।পাঠক/লেখক বন্ধুদের এমন স্বচ্ছ বক্তব্য প্রত্যাশিত।...ভাল থাকবেন!
৬. ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৬ ০
আমি বাঁধনহারা বলেছেন:
ভালো লাগল++++
ভালো থাকবেন
মনে রাখবেন!!!
৭. ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:২৫ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠকবন্ধূ বাঁধনহারা,
পরপর ৪টি প্লাস দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ! শুভেচ্ছাসহ আপনাকে মনে রাখার কথা বলেছেন জেনে আপনাকে আরও আপন ক'রে পেলাম!আমার ই-মেলে চিঠি পাঠান একান্ত আপনজন ভেবেই।নিশ্চয়ই উত্তর দেব।আপনিও ভাল থাকবেন! আমার ইমেল [email protected]
AMAR MEYER
KOBITA
২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
My Daughter’s Composition
A TRUE FRIEND
A friend in need is a friend indeed,
That is all what I really need.
A true friend dries your tears,
And makes sure to comfort your fears.
They console and they understand,
All obstacles they firmly withstand.
A heart so clean where you can find your soul,
Makes you forget all things foul.
False friends are like leaves,
they are scattered everywhere,
But true friends are like diamonds,
They are pure and rare!!!!!!
By Rehana Rais
Mahatma Gandhi International School,
Port Blair,
South Andaman.
৮৮ বার পঠিত ১ ১
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর
১. ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩১ ০
তানিয়া হাসান খান বলেছেন: খুব সুন্দর!!!!!!!!!! আপনার মেয়ের জন্য শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।
২. ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৮ ০
শূন্য পথিক বলেছেন: অনেক অনেক শুভকামনা।
৩. ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৯ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন:
'তানিয়া হাসান খান বলেছেন: খুব সুন্দর!!!!!!!!!! আপনার মেয়ের জন্য শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।'
প্রিয় পাঠকবন্ধু তানিয়া হাসান খান,
আমার মেয়ের জন্য আপনার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা তাকে প্রেরনা জোগাবে!আমি ভাবতে পারিনি ও এত সুন্দর একটি কবিতা লিখতে পারবে!আমার একমাত্র মেয়ে ব'লেই হয়তো বেশি আদরের।ওর নাম 'রেহানা রইস'(ওর মা জুবেদা র্রইসের রাখা নাম) রাখা হলেও
আমি কিন্তু 'পাখি' ব'রেই ডাকি,আমার প্রাণপাখির সাথে মিলিয়ে।এটি আমার মেয়ের প্রথম কবিতা আর আপনি তার প্রথম পাঠক/পাঠিকা।তাই আপনিও স্মরণীয়া হয়ে রইলেন তার জীবন-খাতার পাতায়! আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, আমার মেয়ের প্রতি শুভাশীষ জানানোর জন্য!.।রইসউদ্দিন গায়েন,সঙ্গীত-শিক্ষক,সরকারি রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্টব্লেয়ার,দ:আন্দামান,ভারত।
৪. ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: ৩. ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৯
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন:
'তানিয়া হাসান খান বলেছেন: খুব সুন্দর!!!!!!!!!! আপনার মেয়ের জন্য শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।'
প্রিয় পাঠকবন্ধু তানিয়া হাসান খান,
আমার মেয়ের জন্য আপনার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা তাকে প্রেরনা জোগাবে!আমি ভাবতে পারিনি ও এত সুন্দর একটি কবিতা লিখতে পারবে!আমার একমাত্র মেয়ে ব'লেই হয়তো বেশি আদরের।ওর নাম 'রেহানা রইস'(ওর মা জুবেদা র্রইসের রাখা নাম) রাখা হলেও
আমি কিন্তু 'পাখি' ব'লেই ডাকি,আমার প্রাণপাখির সাথে মিলিয়ে।এটি আমার মেয়ের প্রথম কবিতা আর আপনি তার প্রথম পাঠক/পাঠিকা।তাই আপনিও স্মরণীয়া হয়ে রইলেন তার জীবন-খাতার পাতায়! আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, আমার মেয়ের প্রতি শুভাশীষ জানানোর জন্য!.।রইসউদ্দিন গায়েন,সঙ্গীত-শিক্ষক,সরকারি রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্টব্লেয়ার,দ:আন্দামান,ভারত।
৫. ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৭ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক শূন্য পথিক,
আমার মেয়ের প্রতি শুভকামনা জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
৬. ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৫ ০
আমি বাঁধনহারা বলেছেন:
ভালো লাগল।আপনার মেয়ের জন্য শুভ কামনা।
৭. ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৫ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠকবন্ধূ 'আমি বাঁধনহারা',
আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম!আমার মেয়ের জন্য শুভ-কামনা জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!এভাবে আপনাদের প্রেরণা পেলে আমার মেয়ের লেখনীতে হয়তো আরও অনেক সৃজনাত্মক ভাবনার প্রকাশ পাবে!
৮. ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭ ০
ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
Very nice !
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৭ ০
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ,ইমরাজ কবীর মুন-- আপনার সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য!
আপনার মন্তব্য লিখুন
কি বোর্ড বেছে নিন:
ভার্চুয়াল ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয় english
ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
পোস্ট পর্যবেক্ষণ
হিন্দি কি ভারতের রাষ্ট্রভাষা?
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
হিন্দি কি ভারতের রাষ্ট্রভাষা? রইসউদ্দিন গায়েন
না,হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা নয়।ভারতের কোনও নির্দিষ্ট রাষ্ট্রভাষা নেই।তাহলে হিন্দি ভাষা নিয়ে এতো হৈ-হুল্লোড় কিসের জন্য? ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ দিন ধ’রে ‘হিন্দি পখ্ওয়াড়া’ পালিত হয়।উদ্দেশ্য মহৎ।কিন্তু এটাও ভেবে দেখা দরকার আরও ২২/২৩ টা ভাষা,যা’ সংবিধান-স্বীকৃত,সেগুলির জন্য এরকম এক পক্ষকালব্যাপী ভাষাচর্চার সরকারি ব্যবস্থা আছে কিনা(?)।যদি না থাকে(বলাবাহুল্য,ব্যবস্থা নেই),তবে প্রশ্ন ওঠা-ই স্বাভাবিক, কেন নেই? একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব জাতীয় ভাষাগুলি সমান মর্যাদার অধিকারী। ‘নানা ভাষা,নানা মত, নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান।’ ‘বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য’ আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। নিঃসন্দেহে ‘বৈচিত্র’শব্দটি গুরূত্বপূর্ণ।সেই বৈচিত্র অক্ষুন্ন রাখার আন্তরিক প্রয়াস যদি না থাকে,তবে জনকন্ঠে প্রতিবাদধ্বণি উচ্চারিত হবেই।...
হিন্দি,উত্তর ভারতীয় জনগোষ্ঠির মিশ্রিত মাতৃভাষা। তাই তাঁদের জীবনে,মরণে এই ভাষা অমৃতময়। অপরদিকে দক্ষিণ ভারতীয়(বিশেষতঃ দ্রাবিড় সভ্যতা)মানুষের কাছে তা’ তীব্র বিষময়। ‘সত্যমেব জয়তে’অমৃত বাণী সামনে রেখে, একজন ভারতীয় মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হবেন,এ যেমন প্রত্যাশিত নয়; ‘হিন্দি’ আমাদের ‘রাষ্ট্রভাষা’ ব’লে অপপ্রচার করাও তেমনি কাঙ্খিত নয়। অ-হিন্দি ভাষীদের ওপর জোর ক’রে হিন্দি-ভাষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়াও এক অ-মানবিক অত্যাচার।
ভাষাসংক্রান্ত সাংবিধানিক বক্তব্যের সার-সংক্ষেপ এই যে দেবনাগরী লিপিতে আন্তর্জাতিক সাংখ্যমানসহ কেন্দ্রীয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা (Official Language) হবে হিন্দি এবং সহ-দাপ্তরিক ভাষা(Associate Official Language)হিসেবে থাকবে ইংরেজি। এখন দেখা যাক রাষ্ট্রভাষা-বিষয়ক বক্তব্যে কোথায় ভুল হচ্ছে(?)। ‘দাপ্তরিক ভাষা’ আর ‘রাষ্ট্রভাষা’ কি এক? একটা মজার ব্যাপার দাপ্তরিক বা কার্যালয়ের ভাষাকে বলা হচ্ছে ‘সরকারি ভাষা’,সরকারি ভাষাকে বলা হচ্ছে ‘রাজভাষা’,আর ‘রাজভাষা’ বলতে গিয়ে বলছে ‘রাষ্ট্রভাষা’। এ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে প’ড়ে গেল:- এক চোখওয়ালা ব্যক্তি এক অন্ধ লোককে বুঝিয়ে বলছে:--
“শরীর সুস্থ রাখতে হ’লে প্রতিদিন দুধ খাওয়া দরকার।
অন্ধ: দুধ? সে আবার কী?
চোখওয়ালা: আরে,তা’ও জানো না? দুধ হচ্ছে সাদা?
অন্ধ: ও:,তা’ সাদা জিনিসটা কী?
চোখওয়ালা:তা’ও জানো না? সাদা হচ্ছে ঠিক বকের মতো।
অন্ধ: তাই বুঝি? তা’ বক কেমন,বুঝিয়ে বলুন না।
চোখওয়ালা: বেশ,আমার ডান হাতটি ছুঁয়ে দেখো,কেমন হাত ঘুরিয়ে বকাকৃতি বানিয়েছি।
অন্ধ ছুঁয়ে দেখল হাতটি বাঁকা) অ্যাঁ! এ কি? এই নাকি দুধ? এই বাঁকা জিনিসটা আপনি আমাকে খেতে বলছেন! কী সর্বনাশ! এমন জিনিস খেলেই তো গলা আটকে মরে যাব!!”
হিন্দি ভাষার প্রতি অতিশয় স্তাবকধর্মী মনোভাবের জন্য সাংস্কৃতিক ঐক্য-র নামে অনৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে।সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্টব্লেয়ার শহর-কেন্দ্রিক একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।আনুষ্ঠানিক রিপোর্টটি এখানে পরিবেশিত হ’ল:
ভারতে হিন্দির প্রতি অতিভক্তির কারণে তামিল-তেলুগু-বাংলা-মালয়ালম-প্রভৃতি স্বীকৃত জাতীয়-ভাষাগুলি অবমাননার শিকার হচ্ছে।
আন্দামানের পোর্টব্লেয়ার শহর-স্থিত গভ: মডেল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল-অডিটোরিয়ামে,আয়োজিত সঙ্গীত,নাটক ইত্যাদির প্রতিযোগিতা শেষ হ’ল।উপলক্ষ্য প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ড: রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিন-পালন শিক্ষক-দিবস রূপে।অংশগ্রহণে ছিলেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আনুষ্ঠানিক পরিচালকবৃন্দ এবং বিচারকগণও ছিলেন হিন্দিভাষার স্তাবকধর্মী মানুষ।শুধু ভাষা নয়,ধর্ম-নিরপেক্ষ দেশের সবোর্চ্চ পদাধিকারী একজন রাষ্ট্রপতি এবং আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাবিদের প্রতি শ্রদ্ধা-জ্ঞাপন করা হ’ল গণেশ-বন্দনার গান দিয়ে।কেন,গণেশ-বন্দনা কেন? দেশে কি দেশবন্দনামূলক গানের কোনও অভাব ছিল?
ফিরে আসি,আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে।মঞ্চে-- একক কন্ঠে,সমবেত কন্ঠে বিভিন্ন ভাষায় গান যেমন ছিল,বিভিন্ন ভাষায় প্রাদেশিক নৃত্যশৈলীর প্রদর্শনও ছিল অসাধারণ।কিন্তু হিন্দি-স্তাবকতার আলোয় বিচারকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত-সূচীতে ঝলমল ক’রে উঠল হিন্দি-ভাষায় পরিবেশিত অর্কেষ্ট্রা-কলাকারসহ স্কুলগুলির নাম।এ এক অভিনব সুযোগ।‘হিন্দি লাও,হিন্দি গাও,প্রাইজ পাও;অন্য ভাষাগুলি গোল্লায় যাও।
অনেকের বদ্ধমূল ধারণা,হিন্দি নাকি রাষ্ট্রভাষা।হিন্দি প্রচার করা হয় অনেকটা বিজ্ঞাপনী কায়দায়।যেমন ‘রাজকীয় বরিষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’,রাজভাষা প্রকোষ্ঠ ইত্যাদি।এগুলিকে যদি বলা হ’ত সরকারি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সরকারি ভাষা প্রকোষ্ঠ—তা’হলে সাধারন মানুষের পক্ষে সহজবোধ্য হ’ত।এখন দেখা যাক ‘রাজভাষা’ বলতে কী বোঝায়(?)।এক হতে পারে,রাজার ভাষা ‘রাজভাষা’।আর এক হতে পারে,ভাষার রাজা ‘রাজভাষা’। প্রথমটির কথায় বলতে হয়,রাজা যখন নেই(গণতান্ত্রিক দেশে) তখন রাজার ভাষা বলা যায়না,দ্বিতীয়ত: যদি বলা হয় ভাষার রাজা,তখন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক তামিল,বাংলা প্রভৃতি ভাষার মতো হিন্দি উন্নত ভাষা নয়।তাই হিন্দিকে ভাষার রাজা কখনো বলা যায়না।
সজ্ঞান মানুষগুলি যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করতেন,তাহলে খুব সহজেই ধরা পড়তো ভাষাদূষণের অপকীর্তি।ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কোন্ ভাষায় রচিত(?)এই প্রশ্ন তুললে,হিন্দি চাটুকারদের মুখে সদুত্তর থাকেনা।বাংলাভাষায় রচিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের এই গানটি হিন্দি ব’লে অপপ্রচার চালানো হয় ভারত সরকারের ওয়েবসাইটেও।এ এক অত্যাশ্চর্য মিথ্যাচার! আজও আমরা দৃপ্ত কন্ঠে গেয়ে বেড়াই:
‘মোদের গরব,মোদের আশা,আ-মরি বাংলাভাষা---
তোমার কোলে তোমার বোলে,কতই শান্তি ভালবাসা।’
বাংলাকে ভালবেসে আমরা সারা পৃথিবীকে আপন ক’রে পেয়েছি।বাংলাভাষাকে ভালবেসে আমি আমার নিজেকে চিনেছি।আমাদের এই সংবেদনশীলতার গুরূত্ব যাঁরা দেন না বা দিতে জানেন না,তাঁরা নি:সন্দেহে ভারতীয় সংস্কৃতির শত্রু।ভাষা মানুষের গোপন আশ্রয়,হৃদয়ের সম্পদ,জীবন-পথের সাথী। সেই ভাষাপ্রাণকে যাঁরা বিচ্ছিন্ন করতে চায়,তাঁদের বিরূদ্ধেই চলুক আমাদের ভাষা-সংগ্রাম,জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই আমাদের প্রকাশ ঘটুক মাতৃভাষায়!
রইসউদ্দিন
মন্তব্য সমূহ
গাংচিল
সেপ্টেম্বর ৭, ২০১২, ২০:৩১
আপনার লেখা পড়ে খুব ভাল লাগলো । শুধুমাত্র ভাষা কেন আমাদের পুরা সাংস্কৃতির উপরই চলছে সন্ত্রাসী আগ্রাসন । বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দি চ্যানেল গুলোই এই অপসাংস্কৃতির জন্য দায়ী ।
ধন্যবাদ ।(মন্তব্য সূত্র: ‘বকলম.কম’)
পাঠক গাঙচিলের সমালোচনা শুধু নয়;আরও অনেক পাঠক-মন্তব্য লক্ষনীয়:
All our History books in school proudly boasts that "India is a Land of Diversity". It's a land of Dravidians and Aryans.Then why do we fight and argue with each other to have one single language? It was for political reasons that few leaders propaganded this idea. It's sheer monopoly.This clash is what they wanted to happen. Each of us value our mother Tongue. India has grown into a powerful nation without having a national language so far. So we certainly don't need one. If you still insist on having a National language then i will vote for Tamil which is 5000 years old,this language has its roots from our "Bharat" (unlike Hindi which originated from Urdu) Also Tamil is a predecesor to Hindi (to any Aryan language for that matter).So now does a Hindi speaking friend agree to learn Tamil ?
I do not want any other language to supersede my mother tongue. Why should I? Hindi is an official language not national language. Nowhere it says even in the constitution. Hindustan is a combination of states that speak different languages. I do not want to kill my language or make it inferior to another language to call myself an Indian or Hindustani. If you want me to, I would rather call myself NOT AN INDIAN.
Vijay commented on 22 Jul, 2012
My personal view is that all languages have their own beauty & should be admired by all. At the same time however I don't subscribe to the idea of Hindi being our national language as India being a country of diverse languages & communities & most of them are not comfortable with the idea. As far my knowledge on Hindi language goes the present form of Hindi has been developed in last hundred years from a form of Language called "Khari Boli" due to influence "Khari Boli" writer during Brithish Raj and have been sanskritised in last hundred years. As to some ones comment on several north Indian states (UP, Rajashthan, haryana, Bihar etc) having Hindi as official language despite having their own dialect.. the reason is all of the different Hindi dialects wanted to ascertain their separate identity from the present Hindi form, however were rejected & were not recognized. Only language which could ascertain separate identity was Punjabi.
Abhijit commented on 23 Jun, 2012
Hindi is Foreign Language to us . The Same way Regional Languages are foreign to you.
We do not need National Language. By bringing this national language phenomenon you are trying to abolish all regional languages.
Hindi and English are official languages.
Arul cmmented on 05 Jul, 2012
I don't want Hindi as my country's National language. My mother tongue is not Hindi and I don't know the language. Why should I be forced to learn it? Just because majority of the people in India know Hindi, is it reasonable that I should be forced to learn the language? It doesn't make any sense to me.
Rajarajan commented on 07 May, 2012
Why? People like me have different mother tongues. Why should I be forced to learn this language? Hindi has emerged from Sanskrit; whereas my language is pure and is unparalleled to Sanskrit and is the mother of the Dravidian script. Why should I learn Hindi forcibly?
Rajarajan commented on 07 May, 2012
with same DETEST and HATRED we appose Hindi...
If European is forign for North indian,
North indian is Forign for South Indian.
If north has so much Pride not to accept GLOBAL language of Science and NI are so priding in forcing hindi on southern people...
I guess with Same Logic South indians have Right to Fight back for their Pride, South do Not want to become Slave of North indians...
karan commented on 31 May, 2012
We have gone well in the past without a national language. I think we will be fine in the future without it. All the individual languages of India are beautiful and amazing in their own way. We should not acknowledge any state language just as we haven't acknowledged any state religion. Pakistan imposed Urdu as their national language and paid the price by losing Bangladesh. We have seen agitation in our land too. We should not make the same mistakes. We have more important things, like a stronger infrastructure and education, to focus upon.
Posted by:Mayank Mamgaain commented on 03 Apr, 2012
(তথ্যসূত্র:www.Siliconindia.com. posted on 05th August,2011)
এভাবে অগণ্য পাঠক-মন্তব্য আছে যেগুলি সরাসরি হিন্দি-বিরুদ্ধ।
এখানে একটা প্রশ্ন: যে ব্যক্তির জন্মদিন পালন করা হচ্ছে তার ঐতিহাসিক পটভূমিকা কী? প্রকৃত ঘটনা হ’ল এই:- ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেছিলেন: “জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর যদি ‘শিক্ষক দিবস’ উদযাপিত হয়,তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।” ড: রাধাকৃষ্ণণ ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতি হ’লেও তিনি নিজেকে একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব অনুভব করতেন।এখন আমাদের জানা দরকার তিনি কোন্ ভাষায় এবং কোন্ বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন? ইংরেজি মাধ্যমে ‘মাদ্রাজ ক্রিস্টান কলেজ’ থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে।এরপর ১৯০৯ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত স্বদেশ-বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।তাঁর অসাধারণ বাগ্মীতার জন্য তিনি বিশ্বখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।...বলা বাহুল্য,ড:রাধাকৃষ্ণণ ইংরেজি ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন।ইংরেজিতে লেখা তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য ফিলোজপি অফ রবীন্দ্রনাথ’।রবীন্দ্র-দর্শন সম্বন্ধে তিনি মন্তব্য করেন তাঁরই ভাষায়: “The Philosophy of Rabindranath Tagore is the GENUINE MANIFESTATION OF THE INDIAN SPIRIT`.অর্থাৎ ‘রবীন্দ্র-দর্শণ ভারতাত্মার সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি’।
অথচ আশ্চর্যের বিষয়, রবীন্দ্র-স্মরণোৎসবের জন্য ৩৬৫ দিনের একটি দিনও নির্দিষ্ট নেই কেন্দ্রিয় কর্ম-পঞ্জিকায়।
এবার আমরা সংবেদনশীল প্রশ্নের সম্মুখীন হতে চাইব।ড:রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনকে কেন্দ্র ক’রে এক পক্ষকাল ব্যাপী মহাসমারোহে যদি হিন্দি-চর্চা হয়,তবে রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র ক’রে কত পক্ষকাল হিন্দি-চর্চা করা হবে? আমার স্পষ্ট বক্তব্য এই যে ড:রাধাকৃষ্ণণ বা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের যত সৃষ্টি,কখনও হিন্দি ভাষায় ছিল না।তবে কেন হিন্দির এমন উপদ্রবধর্মী কার্যকলাপ।সর্বপল্লী নামে গ্রাম থেকে তিরুত্তানি পর্যন্ত মানুষের মুখে মুখে ফেরে যে ভাষা তা’ হ’ল দ্রাবিড় সভ্যতার ভাষা।হিন্দি ভাষা সেখানে অকথ্য শুধু নয়,অস্পৃশ্য ও ঘৃণ্য।আন্তর্জাতিকতার কথা ভেবে তামিলনাডুর দৃপ্ত কন্ঠ: ‘ENGLISH EVER,HINDI NEVER.’ আবার অখন্ড বাঙলামায়ের দিকে তাকালেই রবীন্দ্রবাণীর মূর্ত প্রকাশ:
‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।
ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে
তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে’।
এ কথা ভুলে গেলে চলবেনা যে বাংলার মাটি থেকে ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল।তাই বাংলার ভাবনাকে বাদ দিয়ে ভারতীয়তার কথা ভাবা যায় না।রবীন্দ্র-নজরুল-নেতাজী-বিবেকানন্দের স্বপ্নের ভারতবর্ষ আমরা পাইনি; পেয়েছি গান্ধী-নেহেরু-প্যাটেল কল্পিত খন্ডচিত্র।তাই তো আমার দেশ আজও প্রতি পদক্ষেপেই পরমুখাপেক্ষি।সিংহমূর্তি আজ যেন রাজনৈতিক শিয়ালের রূপে বিবর্তিত হয়েছে।
ফিরে আসি মূল বক্তব্যে। ১৯৯১-এর জনগণনা অনুসারে সর্বভারতীয় হিন্দিভাষীর আনুপাতিক হার ছিল ৩৯.৮৫%(যদিও তা’সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নয়) এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম সর্বভারতীয় বাঙলাভাষী ছিল ৮.২২%(এ হিসেবও নির্ভরযোগ্য নয়,আরও বেশি হবে।)তৃতীয় বৃহত্তম স্থানে তেলুগুভাষী ৭.৮০%,চতুর্থ স্থানে মারাঠী ৭.৩৮%,পঞ্চম স্থানে তামিল ৬.২৬% ইত্যাদি।সাংখ্যমানানুসারে লক্ষনীয়: এই পাঁচটি জনবহুল ভাষার মধ্যে চারটি দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা,একটি পূর্ব-ভারতীয় ভাষা,আর একটি মাত্র উত্তর-ভারতীয় ভাষা।আর সেই উত্তর ভারতীয় ভাষাটি-ই হ’ল হিন্দি,যার উৎপত্তি আঞ্চলিক ভাষা ‘খড়িবোলি’ থেকে।এর সাথে উর্দু-আরবী-ফার্সী শব্দের মিশ্রিত রূপ হ’ল হিন্দি যা দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয়।মজার ব্যাপার, এই পাঁচমিশালি ভাষা যখন আরবী বা উর্দুলিপিতে লেখা হয় তখন সেই ভাষার নাম ‘হিন্দুস্তানি’।উপরোল্লেখিত ভাষাভাষীর আনুপাতিক হার দেখে একজন সাধারন মানুষও বলে দেবে যে ৪০% (৩৯.৮৫%)মানুষের মুখের ভাষা, বাকি ৬০% মানুষের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া যায় না।এটা শুধু অ-সাংবিধানিক নয়,অমানবিক। হিন্দির প্রচার,প্রসার এবং পরিচর্যার জন্য বিপুল আর্থিক মদত দেবার সুব্যবস্থা আছে। সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলিতে ইংরেজির সাথে হিন্দির যুগল চলন থাকবেই, অন্য কোনো ভাষার সেখানে স্থান নেই। ফলে, সরকারি কর্মক্ষেত্রে হিন্দিভাষীদের প্রতি, হিন্দুস্থানী ভাগ্যদেবীর কৃপাবৃষ্টি ঝরে পড়তে থাকে, অঝোর ধারায়। পরাধীন ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার নামে ক্ষমতা হস্তান্তরের খেলায় যেন কয়েকজনমাত্র বিজয়ী-বীর স্মরণীয়,বরনীয় হয়ে আছেন।অখন্ড ভারতবর্ষে যেন আর কোনো বীর-পুরুষ ছিলেন না।
বিদ্রোহী কবির কন্ঠধ্বণি—
“ফাঁসীর মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন্ বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ।
দুলিতেছে তরী,ফুলিতেছে জল,কান্ডারী হুঁশিয়ার!”
এর অর্থ তারা বুঝল না।বুঝবেও না কোনোদিন।
অথচ বিদেশী শাসকরাও বাংলাভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রথম বাংলা-ব্যাকরণ গ্রন্থকার ন্যাথানিয়েল হ্যালহেড।অথচ ভারতীয় হিন্দি বলয়ের মহারথীরা একবারও বাংলাভাষার কথা মুখে আনেন না।বরং তাঁদের কার্যকলাপে প্রমানিত হয় ,তাঁরা কতটা বাংলা-বিদ্বেষী। বাংলাভাষায় রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা হিন্দি ব’লে প্রচার করা, তার জ্বলন্ত উদাহরণ,যা আগেই বলা হয়েছে।১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত বিশ্বভারতীর সভায় ড:মহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাভাষার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ ক’রে, বাংলাকে ভারতের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবী করেন।তিনি আরও বলেন: “শুধু ভারতবর্ষে কেন,সমগ্র এশিয়া মহাদেশে বাংলার স্থান হবে সর্বোচ্চ”।হিন্দির সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লক্ষ্য ক’রে ড: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন: ‘ I honestly feel that I’m seeing an incipient HINDI IMPERIALISM, which will be all the more ANTI-NATIONAL. [তথ্যসূত্র: ‘Letter from Sri B.G.Kher,Chairman,Official Language Commission to the President of India,Forwarding the report of theCommision,dated the31st July,1956.]
রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ পাওয়া কবি। ভারত এ জন্য গর্ব প্রকাশ করে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে জাতীয় কবির উপযুক্ত মর্যাদা দিতে তাদের কোথায় যেন সংশয়,দ্বিধা-দ্বন্দ্ব!হায়রে,হতভাগ্য জাতি!বিশ্বকবির জন্মদিনে নেই কোনো আবেগ-উচ্ছ্বাস;মৃত্যুদিনেও নেই কোনো তাঁর স্মৃতিচারণ।নেই তাঁর অমর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।
‘বাংলা’ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠির ভাষা।তাই রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে বাংলাভাষার প্রসঙ্গ উঠে আসাই স্বাভাবিক।এভাবে তেলুগু,মারাঠী,তামিল,গুজরাটির প্রসঙ্গও অস্বাভাবিক নয়।এ সব কারণে ভারতীয় ঐক্য ও সংহতির কথা মাথায় রেখে নির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ সম্ভব হয়নি।অষ্টম তফশিলে সংবিধান-স্বীকৃত ২২টি ভাষার উল্লেখ আছে। প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছানো দরকার যে এই ২২ টি ভাষা আমাদের জাতীয় ভাষা।আর ইংরেজি এবং হিন্দি কেন্দ্রিয় সরকারের দাপ্তরিক ভাষা।আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার প্রতিটি রাজ্যের বৃহত জনগোষ্ঠির ভাষা-ই হবে সেই রাজ্যের সরকারি ভাষা।যেমন তামিলনাডুর সরকারি ভাষা তামিল,গুজরাটের সরকারি ভাষা,গুজরাটি।উড়িষ্যার সরকারি ভাষা উড়িয়া ইত্যদি।
বেশ কিছু সংবেদনশীল শব্দগুচ্ছ আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে।হিন্দু-হিন্দুস্তানি-হিন্দি-হিন্দ্-মহাসাগর-জয়হিন্দ্ ইত্যাদি।এই শব্দগুলির উচ্চারণে আমরা আমাদের জাতীয়তাবোধের পরিচয় দিই,মনে-প্রাণে গর্ব অনুভব করি।কিন্তু একটু নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখলে আমাদের গর্ব,খর্ব হয়ে যায়।‘সিন্ধু’ শব্দ থেকে এই শব্দগুলির উৎপত্তি।খন্ডিত ভারতবর্ষে ‘সিন্ধু’ আমাদের জাতীয় জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।আমাদের জাতীয়-সঙ্গীতে ব্যবহৃত ‘সিন্ধু’ শব্দটির বর্জন প্রসঙ্গে তাই স্বাধীন ভারতে অনেক বিতর্কের ঝড় বয়ে গেছে।শুধু বিশ্বকবির গান ব’লে আজও তা অপরিবর্তিত আছে।বিখ্যাত উর্দু কবি ইকবালের ‘হিন্দি হ্যায় হম্ বতন্ হ্যায়,হিন্দোস্তাঁ হমারা’—গানটিও অখন্ড ভারতবর্ষের জন্য রচিত হয়েছিল।নেতাজী সুভাষচন্দ্রের ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানটিও খন্ডিত ভারত-ভূমির জন্য উচ্চারিত হয়নি।
উপরিউক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ‘সিন্ধু-হিন্দু-হিন্দুস্তানি’ প্রভৃতি মিথ্যে মোহময়ী শব্দ-মানসিকতার জন্য হিন্দি স্তাবকধর্মী মনোভাব গ’ড়ে উঠেছে।আর তারই ফলস্বরূপ রাজভাষা-রাষ্ট্রভাষা-র বোধ-বিকৃতি।
সিন্ধু-সভ্যতার জন্য যদি আমরা এত গর্বিত হই,তবে দ্রাবিড়-সভ্যতার জন্য আমাদের গর্ব প্রকাশের কিছু থাকবেনা কেন? উত্তর-ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতি কেন জোর ক’রে চাপানো হবে দক্ষিণ-ভারতীয়দের ওপর।আর বঙ্গীয়-ভাষা-সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রসঙ্গ তুললেই তো আর একটা বঙ্গীয়-মহাভারত তৈরি হয়ে যাবে।
সবশেষে,এ কথাই বলতে চাইবো যে রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক অপ-প্রচার বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেন্দ্রিয় দাপ্তরিক ভাষা ‘হিন্দি’-র প্রচার-প্রসার প্রচেষ্টার সঙ্গে-সঙ্গেই ইংরেজিসহ সংবিধান স্বীকৃত জাতীয় ভাষাগুলির প্রচার-প্রসার,বিকাশ-প্রকাশের কাজে উৎসাহিত করা এবং কেন্দ্রিয় আর্থিক অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ মনোভাব না থাকলে কখনও জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।আমাদের জাতীয় চরিত্র হোক সত্যানুসারী। ‘সত্যমেব জয়তে”!!
গুজরাত-সন্ত্রাস পর্ব:১,২,৩,৪,৫ (দলিল-ভিত্তিক দীর্ঘ পরিক্রমা)
১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গুজরাত-সন্ত্রাস:-দলিল-ভিত্তিক একটি দীর্ঘ পরিক্রমা/রইসউদ্দিন গায়েন
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রি হবার খবর শুনে আমি শুধু আশ্চর্য হইনি,হতবাক হয়েছিলাম। কাজী নজরুলের একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতার দু’এক লাইন মনে পড়ে: ‘কুঁজো বলে সোজা হয়ে শুতে যে সাধ---দে শুইয়ে/দে গরুর গা ধুইয়ে।’ মনে পড়ে:যে লোকটি স্পষ্টতই মুসলিম বিদ্বেষী শুধু নয়,পরিকল্পিত নরহত্যাকারী; তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রি তো দূরের কথা,একজন সাধারণ মানুষ নামে আখ্যায়িত করা যায় কিনা সে প্রশ্নও ওঠে।ধর্মের নামে ভন্ডামি আর কতকাল চলবে? ট্রেনে পুড়ে মরল রামভক্ত আর পুড়িয়ে মারল রহিম ভক্তকে।একজন সাধারণ মানুষও জানে,ভগবান বা আল্লাহ মন্দির বা মসজিদের মধ্যে ঢুকে নেই। ‘তিনি আছেন সেথায়, যেথায় করছে চাষা চাষ/পাথর কেটে ভাঙছে সেথায়,খাটছে বার মাস।’ আমার আজও মনে পড়ে ছোটবেলায় ঘাটে,মাঠে,বাটে যেখানেই হোক না কোনও গিরগিটি দেখতে পেলেই ঢিল ছুঁড়ে বা লাঠি নিয়ে তাড়া করে মেরে ফেলা হ’ত।আর এই কাজে কিশোর বয়সের ছেলেরাই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করলেও বয়স্ক লোকদেরও থাকতো এই মারণযজ্ঞে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন।আর এটাই আমার কাছে অতি আশ্চর্যের বিষয়।গিরগিটি মারার ইতিহাসভিত্তিক কারণ যেদিন লোকমুখে শুনলাম,সেদিন অত্যন্ত আহত হয়েছিলাম।সংক্ষিপ্ত ঘটনা এই(শোনা কথা,আমি কোনো বইতে পড়িনি): হজরত মহম্মদ(স এবং তাঁর কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুসারী শত্রুর আক্রমন থেকে আত্মরক্ষার জন্য পাহাড়ী গুহায় আশ্রয় নিলে মাকড়সা গুহার মুখে জাল বুনে দিয়েছিল,যাতে শত্রুরা নবীজীর খোঁজ না পায়।কিন্তু এই বহুরূপী গিরগিটি নাকি শত্রুদের সাহায্যার্থে সত্য তথ্য জানিয়ে দিয়েছিল।আর সেই থেকেই নাকি গিরগিটি চিরশত্রু।অদ্ভুত ব্যাপার,এই ঘটনার জের ধরে গিরগিটি দেখতে পেলেই বেচারাদের আর রেহাই নেই।এখানে আমার প্রশ্ন যে বিশেষ একটি গিরগিটি শত্রুপক্ষকে সাহায্য করেছিল,তাকেই না মেরে তার বংশধরদের খুন বা হত্যা করার যৌক্তিকতা কোথায়?কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কি গিরগিটির বংশ ধ্বংস করার হিংসাত্মক মনোবৃত্তিকে সমর্থন করতে পারে?আমি জানি এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে কেউ এগিয়ে আসবেন না।কারণ হিংসাত্মক কর্ম-ই তো ধর্মের আর এক রূপ।ফিরে আসি গুজরাত-সন্ত্রাস প্রসঙ্গে।শুরুতেই একটি রিপোর্ট শোনা যাক:--
“গোধরা হত্যাকান্ডের পরদিন থেকে গুজরাতে যে তান্ডব শুরু হল তার নাম দাঙ্গা নয়,তা একটি সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ বিলোপের পরিকল্পনা প্রসূত।এই পরিকল্পনার অংশীদার যেমন রাস্তার খুনী তেমনই নরেন্দ্র মোদী সরকার।এই সরকারের একজন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী হরেন পান্ডিয়া তাঁর নির্বাচনের প্রক্কালে অঙ্গীকার করেছিলেন যে তাঁর এলাকাকে তিনি মুসলমান- শূন্য করবেন।ফেব্রুয়ারি মাসের হত্যাকান্ডের অন্তত ছ মাস আগে সারা গুজরাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে বজরং দল এক ত্রিশুলদীক্ষার আয়োজন করে,তাতে নানান ধরনের অস্ত্র ও অস্ত্রশিক্ষা হিন্দু যুবকদের দেওয়া হয়।গত চার বছর ধরে গুজরাতে বিজেপি(ভারতীয় জনতা পার্টি),ভি এইচ পি(বিশ্ব হিন্দু পরিষদ)কখনো আর কখনো খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসমূলক কাজ চালিয়ে গিয়েছে।রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ তাতে খুশি হয়ে বলেছে যে গুজরাত হল হিন্দু রাষ্ট্রের পরীক্ষাগার।এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষে হিন্দু রাষ্ট্রের যে কাঠামো তৈরি হযে উঠছে তার চেহারা আমরা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভালভাবেই দেখতে পাচ্ছি।আমাদের দেশে একতরফা সন্ত্রাস ও হিংসার এরকম আখ্যান এর আগে কখনো শুনিনি।যদি এ হিংসা গুজরাতে অব্যাহত থাকে তাহলে সারা ভারতে তা ছড়াতে বাধ্য।কারণ সংঘ পরিবারের মূলমন্ত্র হল ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে ভেঙে হিন্দুরাষ্ট্র গঠন করা।এবং গুজরাত প্রমাণ করেছে যে হিন্দুরাষ্ট্র জন্ম নেবে সংখ্যালঘুদের বিধ্বংস করে।
গত চার বছর ধরে গুজরাতে হিংসা যেভাবে দানা বেঁধে উঠেছে তার ছবি বহু সাংবাদিক,বহু বেসরকারি তদন্ত অনুসন্ধানী দল আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন।মার্চ মাস জুড়ে টেলিভিশনের কোনো কোনো চ্যানেল গলি-বাড়িতে হত্যাকান্ডের দৃশ্যাবলী অকুস্থল থেকে পর্যায়ক্রমে আমাদের দেখিয়ে গেছেন।নাৎসী জার্মানিতে ইহুদীবিলোপের প্রচেষ্টা ছিল কনসেন্ট্রশন ক্যাম্পের দেওয়ালের আড়ালে।গুজরাতের প্রায় সব ঘটনা ও তাদের পরিকল্পনা আগাগোড়াই প্রকাশ্যে ঘটেছে,তার সব খুঁটিনাটি তথ্য ভারতীয় নাগরিকদের জানানো হয়েছে।আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সব সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সময়ে অবহিত হইনি,আমরা সব জেনেও নিষ্ক্রিয় হয়ে থেকেছি,আমরা গুজরাতে মুসলমান সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিক্র রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করিনি।,আমরা সংঘ পরিবারের প্রকৃত চেহারা জানবার বোঝবার চেষ্টা করিনি,বাজপেয়ীর মোলায়েম ভাষণে নিশ্চিন্ত থেকেছি,যতক্ষণ না বাজপেয়ী স্বয়ং স্বয়ং গোয়া কনফারেন্সে পুরোপুরি আত্মপ্রকাশ করে বলেছেন---‘সংঘ আমার আত্মা’।
গুজরাতের ধ্বংসলীলায় মুসলমান মহিলা ও শিশুদের ওপর যে ব্যাপক ও নিদারুণ অত্যাচার করা হয়েছে তা বিশেষভাবে প্রণিধান করে দেখা উচিত।সংঘ টরিবারের হিংসাত্মক কর্মসূচী যে কতদূর যেতে পারে শুধু তা বোঝার জন্র নয়,এই আক্রমণ সংঘ পরিকল্পনার এক বিশেষ আঙ্গিকের পরিচয়।সংঘের মতাদর্শে,রাজনৈতিক লেখা ও ভাষণে,শাখার সব ‘সাংস্কৃতিক’ কার্যকলাপে দটি ব্যাপারের ওপর সবৃদা জোর দেওয়া হয়েছে---এক হল মুসলমানদের ভারতে আগমনের প্রথম দিন থেকে হিন্দু নারীর উপর অত্যাচারে বিচিত্র কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত উপাখ্যান।অন্যটি হল মুসলমান জনসংখ্যার প্রবর্ধমান হারের তেমনই অতিরঞ্জিত কাল্পনিক পরিসংখ্যান,ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা।এই দুই আখ্যানকে ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছে এক আকাশচুম্বী প্রতিশোধমূলক মনোভাব,এক সর্বাত্মক হিংসাধর্মী আশঙ্কা।
এর পরিণাম আমরা গুজরাতে দেখেছি। ‘প্রতিশোধের’ পিপাসায় মুসলমান মেয়েদের প্রবীণা থেকে তিন বছরের শিশু পর্যন্ত বেধড়ক পেটানো হয়েছে,তাদের গণধর্ষণ ও বহুধর্ষণ করা হয়েছে,তাদের কোলের শিশুদের ছিনিয়ে নিয়ে চোখের সামনে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।অথবা শিশুদের পেট্রোল খাইয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে মায়ের সামনে।তারপর মাকে ধর্ষণ করে পেট চিরে গর্ভস্থ অজাত শিশুকে বার করে ছিন্নভিন্ন করে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে।ধর্ষিত,মৃত মহিলাদের জরাযু নষ্ট করা হয়েছে,তারপর প্রজনন স্থানে অত্যাচার করা হয়েছে।অথবা অ্যসিড ঢেলে তাঁদের নিম্নাঙ্গ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে,রাস্তায রাস্তায় নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে।সবশেষে তাঁদের আগুনে ফেলে ভসমঈভূত করা হয়েছে যাতে ধ্বংসের কোনো চিহ্ন না থাকে।আর যাতে মুসলমানদের অন্তিম ধর্মানুষ্ঠান---কাফন-কবর—পারন না করে হিন্দুমতে শবদাহ করা যায়।
এ অত্যাচার সাময়িক পাগলামি নয়,এর বিশেষ উদ্দেশ্য আছে।নারীদেহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আধার,সেই আধার অত্যাচার করে নষ্ট করে মুসলমানদের ভবিষ্যৎকেই ভস্মীভূত করা হচ্ছে---শুধু প্রতীকিভাবে নয়,আক্ষরিক অর্থে।লক্ষ্যণীয় যে,বিশেষ করে শরীরের প্রজনন স্থানের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে।আরও লক্ষ্যণীয় মায়ের সামনে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে ব্যপাকভাবে।অর্থাৎ,এই প্রজন্ম থেকে শুরু করে ভ্রুণ পর্যন্ত,জীবিত ও অজাত সমস্ত মুসলমানের জীবন ও জীবনের সম্ভাবনা পর্যন্ত নষ্ট করা হয়েছে।জাতিবিলোপের উপাখ্যানে এধরনের ব্যাপক পরিকল্পনার নজির বিরল।
বেশ কিছু স্বাধীন তদন্তের অনুসন্ধানে এই পুরো প্রকল্প দ্ব্যর্থহীনভাবে ফুটে ওঠে।হিন্দুরাষ্ট্র যখন গুজাটের প্রান্ত ছাড়িয়ে ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়বে তখন এইসব তথ্য অনুসন্ধান করা আর সম্ভব হবে না,প্রকাশ করা দুরের কথা।
আমাদের হতে সময় বেশি বাকি নেই।ফ্যাসবিাদের একটা সুবিধা হল যে তা এতই ভয়ঙ্কর এক সত্য যে তাকে সময় থাকতে বিশ্বাস করতে কেউ চায় না।যখন সে সত্য সকলের কাছে একেবারেই প্রকট হয়ে ওঠে তখন তার হাতে আর সময থাকে না।
হিন্দু রাষ্ট্রবাদীদের জাতিবিলোপের ফ্যাসিস্ট পরিকর্পনা,বিশেষত মুসলমান মহিলাদের সম্বন্ধে তাদের প্রকল্প বেশ কিছু তদন্তে পরিষ্কার ধরা দিয়েছে।বিশেষ প্রণিধান করে এ সব তথ্য আয়ত্ব করলে তবেই আমাদের ফ্যাসীবিরোধী চেতনা দৃঢ় হবে,উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে,শত্রুকে জানতে পারবে।.....(.তনিকা সরকার,জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়,দিল্লী।)…..(ক্রমশ: চলবে)
গুজরাত-সন্ত্রাস:পর্ব-২(দলিল-ভিত্তিক দীর্ঘ পিরক্রমা)
“বম্বের প্রাক্তন পুলিশ প্রধান গুজরাতের অনুসন্ধানী দলের সদস্য হিসেবে তদন্ত করে যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়ক ভূমিকা স্পষ্ট করে দেয়। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বিশেষ নিবন্ধে (২৪.৪.২০০২)তিনি লিখেছেন—‘রাজ্য সরকার হত্যালীলার নীরব দর্শকই শুধু ছিল না তারা এই ঘটনা ঘটতে দিয়েছে। তারা দাঙ্গাকারীদের প্ররোচিত করেছে,উৎসাহ দিয়েছে এবং ধ্বংসলীলায় অংশ নিয়েছে।পুলিশ তাদের চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।’
এর পরে তিনি লিখেছেন--- ‘একজন মন্ত্রী আমেদাবাদ শহরের পুলিশ কমিশনারের কন্ট্রোলরুমে সমর্থক নিয়ে বসে থেকে হুকুম দিতে থাকেন। আর এক মন্ত্রী রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের কন্ট্রোলরুমে ঢোকেন,এবং পুলিশ তাদের নির্দেশ মত কাজ করতে থাকে। পুলিশের এই সার্বিক আত্মসমর্পণ গোটা আই.পি.এস শ্রেণির পক্ষে এক কলঙ্ক হয়ে রইল—যার দাগ সহজে মুছবে না। গুজরাত নি:সন্দেহে পুলিশ বাহিনীর রাজনৈতিক দলের ক্রীড়নক হওয়ার নিকৃষ্ট উদাহরণ।’
এর পেছনে অবশ্যই বড় কারণ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে সব সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। গুজরাতে ডি জি পি,সি পি,এস পি ঠিক হয় রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশে।পুলিশ যে কত ভাল করে রাজনৈতিক প্রভুদের হুকুম তামিল করছে তার প্রমাণ,কোথাও ধর্ষিতাদের অভিযোগ পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ কর্মীরা স্বয়ং সাহায্যপ্রার্থী নারীদের যেদিকে বিপদ নেই সেদিকে যেতে বারণ করে তাদের হত্যাকারীদের দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে।....
গোধরার ঘটনাকে সামনে শিখন্ডী করে ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ ও ‘বজরং দল’ যে বর্বর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ চালিয়েছে তা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিশোধ নয়। বেশ কিছুদিন ধরেই সংঘ পরিবার সগর্বে বলে আসছে গুজরাত হল হিন্দুত্ব নির্মাণের পরীক্ষাগার।ধ্বংসের এই গবেষণাগার যে খুব ভাল কাজ করেছে তা এই ধর্মীয় গণহত্যায় প্রমাণিত হয়েছে।
ঘটনার ছ’মাস পরেও গোধরার অগ্নিকান্ড কিভাবে ঘটেছিল,কারা ঘটিয়েছিল,পুলিশ আসতে বেশ দেরী করেছিল,ফায়ার ব্রিগেড কি করছিল,কেন মৃতদেহগুলি আমেদাবাদ নিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছিল,বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকা বন্ধে রাজ্য সরকারও সামিল হয়েছিল এই সব প্রশ্নের একটাই জবাব---সরকারি সমর্থন। মোদী সরকারে এক মন্ত্রী হরেন পান্ডিয়ার এবং তদন্ত কমিশনে সাক্ষ্য(যা তিনি পরে অস্বীকার করেন)অনুযায়ী মোদী কিছু মন্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বৈঠক করে সবাইকে নির্দেশ দেন ‘দাঙ্গা থামাতে তৎপর হতে হবে না। আগে ওদের শায়েস্তা করা হোক’।মোদী অবশ্য এই ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করেছেন। তবে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিশেষ করে গুজরাতি পত্রিকাগুলির সাম্প্রদায়িক ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। করসেবকদের ধারাবাহিক প্ররোচনার কোনও আভাষ এইসব সংবাদপত্রে পাওয়া যায়নি। প্ররোচনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কিন্তু যদি সেই ঘটনাকে সমানে রেখে বর্বর নিধনযজ্ঞ চলে তাহলে কেন প্ররোচনার প্রসঙ্গটি বাদ যাবে?এইসব নানাবিধ প্ররোচনার চাক্ষুষ প্রমাণ শহরে থাকা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে স্থানীয় পত্রিকারা কোনও যোগাযোগ করেনি,খবর ছাপা তো দূরের কথা।সত্যি ঘটনার তদন্তে গিয়ে সাংবাদিক জ্যোতি পুনওয়ানি এক প্রতিবেদনে (হিন্দু,১৫.৪.২০০২) যা জানিয়েছে তা ধিক্কার যোগ্য।
১.গোধরার মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রধান মৌলানা হুসেন উমেরজি সমস্ত শান্তি কমিটিতে পুড়ে যাওয়া মৃতদের পরিবার ও হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মুসলিমদের হয়ে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।বেশির ভাগ মিটিং-এ জেলা শাসকও উপস্থিত ছিলেন।যে সব হিন্দুরা উপস্থিত ছিলেন তারা কিন্তু এই ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনাটি নিয়ে কোনও প্রচার করেননি।সব থেকে লজ্জার বিষয় ব্যাপারটির প্রচারে জেলাশাসকও অদ্ভুত নীরবতা পালন করেছেন।
২.হিন্দু ও মুসলিম অনেকেই দেখেছে স্টেশনে চা বিক্রেতা সিদ্দিক বকর-এর দাড়ি ধরে কিছু বজরং টানাটানি করেছে।এই চা বিক্রেতার সম্পর্কে হিন্দু রেলওয়ে কর্মীরা প্রতিবেদকের কাছে প্রচুর প্রশংসা করেছেন। কিন্তু গোধরার পত্রিকাগুলি উদ্দেশ্যমূলক ভাবে চুপ থেকেছে।
৩.গোধরার সাংবাদিকরা স্বীকার করেছেন যে সিদ্দিকের মেয়ে ১৭ বছরের সোফিয়াকে একজন রেলযাত্রী পেছন থেকে ধরে ট্রেনের দিকে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মুখে হাত চাপা দেওয়া সত্ত্বেও সে ‘মা’ বলে চিৎকার করলে তাকে ছেড়ে দেয়।কিন্তু এই কুৎসিৎ প্ররোচনা তাদের পত্রিকায় ঠাঁই পায়নি।
৪.যা প্রচারের আলোয় এসেছে তা হল হিন্দুদের স্কুল উড়িয়ে দেবার মুসলিম পরিকল্পনার অসমর্থিত খবর,একজন সিমি সদস্যের ‘তথাকথিত স্বীকৃতি’—কিভাবে গোধরায় পোড়ানো হবে,স্টেশনের সংলগ্ন মসজিদের ভেতর থেকে হিন্দু নারীদের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার।এই শেষ গুজবটি স্বয়ং মোদীও অস্বীকার করেছেন।কিন্তু গোধরার হিন্দুদের মতে গুজরাতে গোলমাল বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী জেনেশুনে ঘটনা অস্বীকার করেছেন।সেটাই তার মহানুভবতা।
৫.যদিও জেলাশাসক ও পুলিশ কর্তারা (এস পি)জানতেন উপরোক্ত ঘটনাগুলি গুজব মাত্র তারা কিন্তু সেটা নিয়ে কোনওরকম বাড়তি শ্রম খরচ করেনি জনসাধারণের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে।
৬.সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন গোধরার হিন্দুরা ইংরিজি সংবাদপত্রগুলিকে এবং বেসরকারি টিভি সংবাদ মাধ্যমগুলি প্রচারিত কোনও খবর বিশ্বাস করে না।তাদের যখন বলা হয় যে প্রতিবেদক সোফিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তার ঘটনাটা সত্যিই হয়েছে তারা বলে সাজানো।শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শিশুদেরও নাকি শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়া হয়েছে মিথ্যে বলতে।এসবই তাদের কাছে ‘জেহাদি ষড়যন্ত্র’।
গোধরা নিয়ে জাতীয় সংবাদপত্রে অনেক প্রশ্ন তোলা হয়েছে।তার একটি দেওয়া হল।প্রতিবেদক দিগন্ত ওঝা(হি.টা.)।
১.সিংগাল পালিয়ার বাসিন্দারা কেন ট্রেনে আক্রমণ করেছিল?আক্রমণ কি পূর্বপরিকল্পিত?
২.কারা ষড়যন্ত্রের ছক কষেছিল?
৩.জনতা কেন শুধু এস-৬ কামরা আক্রমণ করে,অন্য কোনও কামরা কেন নয়?
৪.বগিটি এত তাড়াতাড়ি কিভাবে জ্বলে ওঠে যার ফলে ৫৮ জন যাত্রীর পক্ষে বেরিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে?কামরায় চারটি দরজা,দুটি প্ল্যাটফর্মের দিকে এবং দুটি তার উল্টো দিকে যেদিকে কেউ ছিল না এবং বগির দুদিকে ভেতর দিয়ে অন্য কামরায় যাওয়া দরজা।
৫.এস-৬ এর দুপাশের কামরার যাত্রীরা কেন তৎপরতা দেখায়নি আটকে থাকা যাত্রীদের বাঁচাতে,শত শত করসেবক যাত্রীরা কি করছিল?
৬.হোস পাইপগুলি কে কেটে দেয়,চেনই বা কে টেনে ট্রেন থামায়?
৭.কেন ১৯টি মৃতদেহ শনাক্ত হয়নি?এস-৫ ও এ-৭ এর যাত্রীদের তালিকা থাকা সত্ত্বেও কেন রেল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ জানতে চায়নি।
৮.মৃতদেহগুলি পোস্ট মরটেমের আগেই দিয়ে দেওয়া হয়।
৯.৫ জন অভিযুক্ত চিহ্নিত।চার্জশিটে কিন্তু তাদের আই এস আই-এর চর বলা হয়নি।
মনে হয় সরকার আসল অপরাধীদের খুজেঁ বের করতে খুব আগ্রহী নয়।
ফরেনসিক রিপোর্ট(যা সরকার ধামা চাপা দেবার চেষ্টা করেছিল) দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেছে আগুন কামরার ভেতর লাগানো হয়েছে।তারা নানাভাবে হোসপাইপ,জ্বলন্ত কাপড় ইত্যাদি নিয়ে লাইন থেকে ছুঁড়ে দেখেছে যে তা ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না।ওইভাবে কেরোসিন ছুঁড়লে (পেট্রোল) তা বেশিরভাগটাই লাইনে পড়ে লাইনের ক্ষতি হত।অথচ বগির নীচে লাইন অক্ষত আছে।অকাট্য যুক্তি এবং অনেক আলোচনার পর যদিও বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্টভাবে সরকারি বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি তারা কিন্তু সেটা সমর্থনও করেননি।উল্টো কথাই বলেছেন।বারবার বলেছেন কামরার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।কামরায় ঢোকার একমাত্র উপায় ছিল করিডর দিয়ে ভেতরের দরজায়।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কি করে এক উন্মত্ত মুসলিম জনতা করসেবকদের চোখে ধুলো দিয়ে তাদেরই মাঝখান দিয়ে সংলগ্ন এস-৬ বগিতে ঢোকে? প্রথমেই নরেন্দ্র মোদী আই এস আই-এর নাম করে কিন্তু চার্জশিটে কেন উল্লেখ নেই?
ফরেনসিকের রিপোর্ট নিয়ে গোল ওঠার মাঝেই গোধরার তালিকা বেরোল।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগের আগে পর্যন্ত কেন রেলমন্ত্রী নীতিশ কুমার যাত্রী তালিকা প্রকাশ করেননি?এই সন্দেহের মধ্যেই যখন তালিকা প্রকাশিত হল,দেখা গেল ৫৮ জন মৃতের মধ্যে মাত্র চার জনের নাম এস-৬ এর সংরক্ষণ তালিকায় ছিল।১৯ জনকে শনাক্ত করা যায়নি,৭ জনের কোনও হদিশ নেই।তাহলে ৩৭ জন সংরক্ষিত যাত্রী ছিলেন,তাদের কিভাবে সরকার সনাক্ত করলেন? তারা কে ছিল?
ফরেনসিকের রিপোর্ট যে সন্দেহের ভিত মজবুত করে তা হল গুজরাতের গণহত্যা পূর্বপরিকল্পিত।সেই জন্যেই সমস্ত গ্যাস সিলিন্ডার মজুত করা হয়েছিল,রেশন অফিস,নির্বাচন দপ্তর,পুরসভা থেকে মুসলিম পরিবার,মুসলিম ব্যবসা সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।কিভাবে একটা সম্প্রদায়কে সামাজিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হবে তারও ছক কষা হয়েছিল।তাই দেখা গেল গোধরা কান্ডের পর,নিখুঁতভাবে তিন চার দিনের মধ্যে শহরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মেরুদন্ড ভেঙে গেল। এরপর গ্রামাঞ্চলেও যেখানে আগে দাঙ্গা এভাবে হয়নি সেখানেও দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচিত করা হল।...(ক্রমশ: চলবে)
গুজরাত-সন্ত্রাস পর্ব ৩(দলিল-ভিত্তিক দীর্ঘ পরিক্রমা)
মোদীর প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই একটি কবিতার লাইন উল্লেখ করেছিলাম পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে: ‘কুঁজো বলে সোজা হয়ে শুতে যে সাধ দে শুইয়ে----দে গরুর গা ধুইয়ে’।কথাটির যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য সাম্প্রতিক সময়ের একটি সাংবাদিক-রিপোর্ট পেশ করা হ’ল। গুজরাতে মুসলিম নিধনযজ্ঞে এই মোদী যে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ইন্ধন যুগিয়েছিল এই রিপোর্টে তা’ স্পষ্ট বলা হয়েছে।কারণ সত্য কখনও গোপন থাকে না।এখন রিপোর্টটি পড়ুন:--তথ্যসূত্র—আনন্দ বাজার পত্রিকা,৪ঠা সেপ্টেম্বর,২০১৩)
বানজারার পত্রবোমায় বেসামাল মোদী
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
জেলবন্দি এক পুলিশকর্তার লেখা দশ পাতার একটা দীর্ঘ পদত্যাগপত্র। আর তার ধাক্কাতেই রীতিমতো বেসামাল নরেন্দ্র মোদী। বেকায়দায় তাঁর দল বিজেপিও। উল্টোদিকে বিজেপির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে বাড়তি অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে তুমুল উল্লাস কংগ্রেসের অন্দরমহলে।
সোহরাবউদ্দিন, তুলসীরাম প্রজাপতি-সহ চারটি ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ডি জি বানজারা গুজরাত পুলিশের প্রাক্তন ডিআইজি। ২০০৭ থেকেই সাবরমতী জেলে বন্দি এবং চাকরি থেকে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। এ বার জেল থেকেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। দশ পাতার সেই চিঠিতে নিজের ইস্তফার কথা জানানোর পাশাপাশি তিনি যা লিখেছেন, তাতেই সরগরম রাজনীতির ময়দান। চিঠিতে বানজারা লিখেছেন, “নরেন্দ্র মোদীর প্রতি শ্রদ্ধার কারণে এত দিন নীরব ছিলাম। কারণ ওঁকে ভগবান বলে মানতাম। এখন দেখছি দিল্লি যাত্রার জন্য ওঁর এত তাড়া যে, জেলবন্দি পুলিশ অফিসারদের প্রতি ঋণ শোধ করতেই ভুলে গিয়েছেন! অথচ এই অফিসারদের জন্যই তিনি সাহসী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।”
এখানেই শেষ নয়। মোদীর অন্যতম আস্থাভাজন তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অমিত শাহ-র বিরুদ্ধেও তীব্র বিষোদ্গার করেছেন বানজারা। এই পুলিশ কর্তার বক্তব্য, অমিত শাহের ‘কুপ্রভাবেই’ তাঁর ‘ঈশ্বর’ বিপথে চালিত হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, “আমাকে এবং আমার অফিসারদের জেলে আটকে রেখে সিবিআই-এর হাত থেকে নিজেদের চামড়া বাঁচাতে এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতেই ব্যস্ত এই সরকার।” সেই সঙ্গেই মোদী-সরকারের দিকে তোপ দেগে বানজারার অভিযোগ, ১২ বছর ধরে বিভিন্ন সংঘর্ষ মামলার কথা তুলে ধরে মোদীর সরকার বিপুল রাজনৈতিক ফায়দা তুললেও জেলে বন্দি পুলিশ অফিসারদের কথা ভাবেইনি।
একের পর এক অভিযোগে গুজরাত সরকারকে তুলোধোনা করে বানজারা শুধু যে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতৃত্বকেই চরম অস্বস্তিতে ফেলেছেন তা নয়, তাঁর চিঠির একটি অনুচ্ছেদ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীর বিরুদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজেপিরই অনেকে। ওই অনুচ্ছেদে বানজারা লিখেছেন, “স্পষ্ট করে জানাতে চাই, যা করেছি, তা রাজ্য সরকারের গৃহীত সুচিন্তিত নীতি মেনেই।” দলের অনেকেই মনে করছেন, ওই অংশটির অর্থ হল, ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনায় এখন মোদীকেও জড়াতে চাইছেন বানজারা। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিরও বক্তব্য, বানজারার ওই চিঠিকে নথি হিসেবে গণ্য করে ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীকে জড়ানোর দাবি উঠতে পারে।
পদত্যাগপত্রটি গুজরাতের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি ও আইজি-কে দেওয়ার পাশাপাশি বানজারা পাঠিয়েছেন সিবিআইয়ের প্রধানকেও। আর তাতেই আশঙ্কার মেঘ জমছে বিজেপির অন্দরে। কী বলা যায় একে? অস্বস্তির ত্র্যহস্পর্শ?
ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় অমিত শাহকে বাঁচাতে অভিযোগকারীকে প্রভাবিত করার অভিযোগে গত কালই সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে বিজেপির দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে একটি ‘স্টিং অপারেশন’-এর ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যেই আজ মোদী সরকারের লোকায়ুক্ত বিল ‘অপর্যাপ্ত’ বলে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল কমলা বেনিওয়াল। এই দুই ঘটনা নিয়ে এমনিতেই উত্তপ্ত রাজনীতির তাপ আজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বানজারার পত্রবোমা।
একের পর এক ঘটনায় মোদী তথা বিজেপির চরম অস্বস্তিতে প্রত্যাশিত ভাবেই উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস। মাত্র ক’দিন আগে রাহুল গাঁধী দলের মুখপাত্রদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, মোদীর বিরুদ্ধে মন্তব্য না করতে। মোদীকে আক্রমণ করলে মেরুকরণের রাজনীতিতে হাওয়া লাগতে পারে, এই আশঙ্কাতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আজ তাঁরই সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কংগ্রেসের সদর দফতর থেকে মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়ানো হয়েছে। তুলসীরাম প্রজাপতি ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীর পদত্যাগও দাবি করেছে কংগ্রেস।
বানজারার চিঠি মনোবল বাড়িয়েছে বিজেপির অন্দরে মোদী-বিরোধীদেরও। মোদীকে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার জন্য যখন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের বড় অংশ সক্রিয়, ঠিক তখনই এমন ঘটনায় বেশ উজ্জীবিত দলের মোদী-বিরোধী অংশ। মোদী-ঘনিষ্ঠরা অবশ্য গোটা ঘটনাকে কংগ্রেসের চক্রান্ত বলে দাবি করছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, কংগ্রেস কিন্তু বানজারার চিঠি সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, বানজারা নিজেই ভুয়ো সংঘর্ষে অভিযুক্ত। তা ছাড়া তিনি মোদীর তৈরি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। ভোটের মুখে জেল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মোদীকে ব্ল্যাকমেল করতেই তিনি এমন চিঠি লিখেছেন বলে দাবি কংগ্রেসের ওই নেতাদের। তাঁদের বক্তব্য, ওই চিঠির দৌলতে দলের কিছুটা ফায়দা হলেও বানজারাকে সমর্থন জানালে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ উঠতে পারে। তা কংগ্রেসের অস্বস্তি বাড়াবে।
এই অবস্থায় কংগ্রেস অস্ত্র করতে চাইছে বিজেপি-র দুই নেতা প্রকাশ জাভড়েকর ও রাজ্যসভার সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদবের বিরুদ্ধে ‘স্টিং অপারেশন’কে। ওই ভিডিও ফুটেজকে সামনে রেখে সুপ্রিম কোর্টে যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে, তার মোদ্দা বক্তব্য, সোহরাবউদ্দিন মামলায় অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী তথা ভুয়ো সংঘর্ষে নিহত তুলসীরাম প্রজাপতির মা নর্মদাকে ভুল তথ্য দিয়ে ৬টি ফাঁকা ওকালতনামায় সই করিয়ে নিয়েছিলেন জাভড়েকর ও যাদব। তাঁদের উদ্দেশ্য একটাই, অমিত শাহকে বাঁচানো। কংগ্রেসের বক্তব্য, এই ষড়যন্ত্রের কথা নরেন্দ্র মোদীও জানতেন। তাই নিরপেক্ষ তদন্তে তিনি বাধা দিচ্ছেন। মোদী মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকলে তদন্ত সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত সিডি-কাণ্ড নিয়ে গতকাল মুখ খোলেননি জাভড়েকর। আজ তিনি বলেন, “ওই সিডি কংগ্রেসের সাজানো।”
সোহরাবুদ্দিন মামলায় জাভড়েকরের নাম
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ হত্যা মামলায় নাম জড়িয়ে গেল বিজেপি সাংসদ প্রকাশ জাভড়েকরের।
আজ সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে অভিযোগকারীকে প্রভাবিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে প্রকাশ জাভড়েকর, রাজ্যসভায় বিজেপিরই আরেক সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব ও সংঘ পরিবারের নেতা রামলালের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে বাঁচানোর জন্য ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যেখানে অভিযুক্তেরা সোহরাবুদ্দিন মামলায় অন্যতম প্রতক্ষ্যদর্শী তথা পুলিশি সংঘর্ষে মৃত তুলসি প্রজাপতির মা-কে ভুল তথ্য দিয়ে ছ’টি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিলেন। আবেদনকারী আইনজীবী কামিনী জয়সওয়াল নিজের অভিযোগে আজ আশঙ্কা জানিয়েছেন, ওই ওকালতনামার সাহায্যে ভবিষ্যতে মামলা দুর্বল করার চেষ্টা করতে পারেন জাভড়েকররা। যদিও রাত পর্যন্ত গোটা অভিযোগটি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জাভড়েকর-সহ অন্য বিজেপি নেতারা। কংগ্রেস শিবির বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অমিত শাহ দোষী প্রমাণিত হলে সমস্যায় পড়বেন খোদ নরেন্দ্র মোদী। তাই মোদীকে বাঁচাতেই ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। শুধু অমিত শাহ নয় গোটা পরিকল্পনাটি জানতেন নরেন্দ্র মোদীও।
আজ সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারীর পক্ষ থেকে ওই মামলার স্বপক্ষে একটি স্টিং অপারেশনের সিডিও জমা দেওয়া হয়েছে। ওই সিডিও দেখা গিয়েছে, অমিত শাহের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংঘর্ষ মামলা দুর্বল করতে গত বছরের আগস্ট মাসে সক্রিয় হন জাভড়েকর-ভূপেন্দ্ররা। সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসাবে এক সাংবাদিকের সাহায্যে তুলসি প্রজাপতির মা নর্মদা প্রজাপতিকে দিয়ে গুজরাত হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট-সহ মোট ছ’টি আদালতের ফাঁকা ওকালতনামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য জাভড়েকর ঘনিষ্ঠ ওই সাংবাদিকই স্টিং অপারেশনটি করেন। যার সিডি আজ সুপ্রিম কোর্টে জমা করা হয়েছে।
অভিযোগকারী কামিনী জয়সওয়ালের বক্তব্য, সে সময় তুলসির মা’কে বোঝানো হয়, গুজরাত সরকার নর্মদাকে সরকারি সাহায্য দিতে চায় তাই তাঁর সম্মতি প্রয়োজন। নর্মদাদেবী বিনা দ্বিধায় ওই ছ’টি ফাঁকা ওকালতনামায় স্বাক্ষর করে দেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্তভূষণের আশঙ্কা, “অভিযোগকারীর ওকালতনামা অভিযুক্ত পক্ষের হাতে চলে আসায় প্রয়োজনে নর্মদার আইনজীবী পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পারবেন অমিত শাহরা।” ওই ওকালতমানার সাহায্যে গোটা মামলাটিই দুর্বল করে দেওয়াই লক্ষ্য অভিযুক্তদের বলে মনে করছেন প্রশান্তভূষণ।
ইশরাত খুন ঠান্ডা মাথায়, চার্জশিটে অস্বস্তিতে বিজেপি নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি একটা পায়ে জুতো। আর একটা পা খালি। কমলা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েটার লাশ পড়ে রয়েছে। তার ডান দিকে পড়ে রয়েছে আরও তিন জন। পুরুষ।
২০০৪ সালের ১৫ জুন টিভির পর্দায় ছবিটা সারা দিন ধরে দেখেছিল গোটা দেশ। তখনই জানা গিয়েছিল ১৯ বছরের কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির নাম ইশরাত জহান। গুজরাত পুলিশ দাবি করেছিল, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল ইশরাত আর তার বন্ধুরা। ওরা লস্কর জঙ্গি। আমদাবাদের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মারা গিয়েছে চার জন।
নয় বছর পরে আজ সিবিআই গুজরাতের অতিরিক্ত মুখ্য ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ইশরাত জহান মামলার চার্জশিট পেশ করে বলল, ঠান্ডা মাথায় ওই চার তরুণ-তরুণীকে হত্যা করেছিল গুজরাত পুলিশ। তার পর ঘটনাটাকে সংঘর্ষের চেহারা দিতে নিহতদের হাতে গুঁজে দিয়েছিল একে-৪৭ এবং আরও কিছু অস্ত্রশস্ত্র। অর্থাৎ শেখ সোহরাবুদ্দিনের পর এ বার আরও একটা ভুয়ো সংঘর্ষের মামলায় জড়িয়ে গেল মোদীর পুলিশের নাম।
মোদীর পুলিশ, মোদী নন সরাসরি। নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর ঘনিষ্ঠ, সোহরাবুদ্দিন মামলায় অভিযুক্ত প্রাক্তন পুলিশমন্ত্রী অমিত শাহের নাম চার্জশিটে নেই। রয়েছে আইপিএস জি এল সিঙ্ঘল, আইপিএস ডি জি বানজারা, এডিজি পি পি পাণ্ডে-সহ মোট সাত জন পুলিশ অফিসারের নাম। তার মধ্যে বানজারা আগেই সোহরাবুদ্দিন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। পাণ্ডে এখন ফেরার।
কারও কারও দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সম্ভবত সিবিআই-কে মোদীর নাম না-রাখার পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। কারণ, মোদীর নাম রাখামাত্র বিজেপি বলতে শুরু করত, কংগ্রেস রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআই-কে ব্যবহার করছে। বিজেপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বিভিন্ন সময় তুলেছে। প্রাক-নির্বাচনী বছরে মোদী তথা বিজেপি-র হাতে নতুন করে প্রচারের অস্ত্র তুলে না-দিতেই এই কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেস সূত্রে দাবি, সিবিআইয়ের চার্জশিটে মোদীর নাম না-রেখেও তাঁর সরকারের প্রতি আঙুল তোলা গিয়েছে। তাতে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না বলে আশা করছেন তাঁরা। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন মিস্ত্রি আজ বলেন, “সত্যিটা ঠিকই বেরোয়। মোদীর আসল চেহারাটা খুব শিগগিরি সামনে আসবে।” মণীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, সিবিআই নিয়ে বিজেপি দ্বিমুখী আচরণ করে। “হরেন পাণ্ড্য মামলায় যখন সিবিআইয়ের চার্জশিট মোদীর পক্ষে গেল, তখন তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। এখন যেই বিষয়টা ওঁদের বিপক্ষে গেল, ওঁরা বলছেন, সিবিআই নাকি কংগ্রেস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন!”
ডি জি বানজারা
জি এল সিঙ্ঘল
তরুণ ভানোট
এন কে আমিন
ইশরাত মামলার চার্জশিট বিজেপি তথা মোদীকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে বটেই। ঘটনাচক্রে আগামিকালই দিল্লি আসছেন মোদী। আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচার নিয়ে দলীয় বৈঠক করবেন। তার আগের দিনই ইশরাত মামলার চার্জশিট পেশ হল। পাশাপাশি, সিবিআই-কে স্বাধীনতা দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামাও জমা দিল কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র যে আসলে সিবিআই-কে নিজের মতো করেই ব্যবহার করতে চায়, ইশরাত মামলা তার আরও একটা প্রমাণ বলে আজ সুর চড়িয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে সিবিআইয়ের চার্জশিট নিয়ে তাদের সমালোচনার কেন্দ্রে রয়েছে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ।
সিবিআই চার্জশিটে বলেছে ইশরাতরা যে মোদীকে খুনের ছক করছিল, সে প্রমাণ নেই। আইবি-র যে সতর্কবার্তার ভিত্তিতে গুজরাত পুলিশ ইশরাতদের পাকড়াও করে, তা ভুয়ো। সিবিআইয়ের এই সিদ্ধান্তের নিরিখেই ইশরাতের পরিবারের দাবি, তাঁদের মেয়ে নির্দোষ প্রমাণিত হল। কিন্তু ইশরাত এবং তার তিন সঙ্গীর সঙ্গে লস্কর জঙ্গিদের সম্পর্ক ছিল কি না, তাদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তান থেকে এসেছিল কি না, তা চার্জশিটে নেই। এই ফাঁক নিয়েই প্রশ্ন তুলছে বিজেপি।
কিন্তু সিবিআইয়ের বক্তব্য, ইশরাত মামলার তদন্তভার তারা হাতে নিয়েছে গুজরাত হাইকোর্টের নির্দেশে। হাইকোর্ট বলেছিল, ইশরাতদের মৃত্যু ভুয়ো সংঘর্ষে হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখতে। ইশরাতদের প্রকৃত পরিচয় খোঁজা তাদের দায়িত্ব নয়। বিজেপি মুখপাত্র নির্মালা সীতারামন যদিও অভিযোগ করেন, এ ভাবে লস্করের ভূমিকাটাকেই লঘু করে দেখা হচ্ছে। সন্ত্রাস নিয়ে রাজনীতি করা কংগ্রেসের উচিত হচ্ছে না। আরও এক...(নোট:---কোনো কারণে আমার ডকুমেন্ট থেকে সম্পূর্ণ অংশ কপি-পেস্ট করার পরে প্রকাশিত হয়নি,এজন্য দুঃখিত)...ক্রমশঃ চলবে.....
২১৫ বার পঠিত ২ ০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০৫ ০
সর্বহাটের কাটালিকলা বলেছেন: যাই হোকনা আমি একজন ভারতীয় হিসাবে নরেন্দ্র মোদীকেই চাই।
২. ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:৪১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: আপনি ভারতীয় হলে,আপনার নাম সর্বহাটের কাটালিকলা হ'ত না।ভারত সত্য ও অহিংসার দেশ বলেই সবাই জানে।আপনার মতো কাটালিকলাদের দেশ নয়।ভারতীয় বলার আগে,আপনার প্রথম কাজ হবে সত্যানুসারী হওয়া,অন্ধানুসারী বা ধর্মান্ধানুসারী নয়।
৩. ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৪ ০
বশর সিদ্দিকী বলেছেন: আমি আমার এক বন্ধুর ভারতীয় কলিগকে প্রশ্ন করেছিলাম নরেন্দ্র মেদি তো তোমাদের প্রধান মন্ত্রি হচ্ছে। সে আমাকে বলল নরেন্দ্র মোদি যদি বিজেপি থেকে ইলেকশন করে তবে সে নিজে ডুববে সাথে বিজেপিকে ডোবাবে। কারন সব গুজরাট না। প্রধানমন্ত্রি হতে হলে পুরো দেশের সাপোর্ট লাগে।
আর মোদি তো একটা খুনি। তার হাতে শুধু মুসলমান না অনেক হিন্দুর রক্তে লেগে আছে।
৪. ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:১১ ০
নাজ_সাদাত বলেছেন: আসল সত্য হল সব নরমাংসলোভীরাই মোদীর ভক্ত। আর তাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে কল্পনা করতে ভালবাসে। পেটের জ্বালা আর কি। তবে তাদের সে কল্পনায় বালি। আমরাও আছি যারা মানুষকে ভালবাসি। রুখে দেব এই হত্যাকারীদের।
৫. ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৩ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: বশর সিদ্দিকী ও নাজ সাদাত,
ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে দেরি হ’ল।আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী মনমোহন সিং স্বয়ং মন্তব্য করেছেন যে নরেন্দ্র মোদী দেশের জন্য এক বিনাশকারী চরিত্র। মোদী নিজেকে একজন হিন্দু ন্যাশনালিষ্ট বলছেন,যেকথা হিন্দুবাদী আর.এস.এস. বলে। ভারতের মতো মিশ্র-সংস্কৃতির দেশে যে ‘হিন্দুবাদী্’ শব্দটি অচল, অর্থহীন,তা’ এই ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা জেনেও জানে না। মোদী নিজেকে হিন্দু ন্যাশানালিস্ট না ব’লে ‘মানুষ ন্যাশানালিস্ট’ভাবা উচিত।আর তা যদি সম্ভব না হয়,ভারত ছেড়ে সিন্ধু নদীর তীরে (বর্তমান পাকিস্তানে,এই সিন্ধু শব্দ থেকেই তো হিন্দু শব্দের সৃষ্টি) বসে রাম-নাম জপ করাই ভাল (যদিও মোদীর জন্য তা’ বিপজ্জনক) যদি তিনি প্রকৃত সিন্ধু-হিন্দু-হিন্দুত্ব’অনুসারী হন।
৬. ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৬ ০
েবনিটগ বলেছেন: voyonkor
৭. ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৪ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: ধন্যবাদ,পাঠকবন্ধু বেনিটগ,আপনার জোরালো (আপনার ভাষায় ‘ভয়ঙ্কর’) মন্তব্যের জন্য!
মোদীর বিরুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং-এর মন্তব্য
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
প্রধানমন্ত্রী শ্রী মনমোহন সিং স্বয়ং মন্তব্য করেছেন যে নরেন্দ্র মোদী দেশের জন্য এক বিনাশকারী চরিত্র। মোদী নিজেকে একজন হিন্দু ন্যাশনালিষ্ট বলছেন,যেকথা হিন্দুবাদী আর.এস.এস. বলে। ভারতের মতো মিশ্র-সংস্কৃতির দেশে যে ‘হিন্দুবাদী্’ শব্দটি অচল, অর্থহীন,তা’ এই ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা জেনেও জানে না। মোদী নিজেকে হিন্দু ন্যাশানালিস্ট না ব’লে ‘মানুষ ন্যাশানালিস্ট’ভাবা উচিত।আর তা যদি সম্ভব না হয়,ভারত ছেড়ে সিন্ধু নদীর তীরে (বর্তমান পাকিস্তানে,এই সিন্ধু শব্দ থেকেই তো হিন্দু শব্দের সৃষ্টি) বসে রাম-নাম জপ করাই ভাল (যদিও মোদীর জন্য তা’ বিপজ্জনক) যদি তিনি প্রকৃত সিন্ধু-হিন্দু-হিন্দুত্ব’অনুসারী হন।
১০৬ বার পঠিত ০ ০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৯ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: পাঠকবন্ধুদের সত্য-সুন্দর-স্বাধীন মন্তব্য প্রত্যাশা করছি।ভারতের মতো বিশাল অসাম্প্রদায়িক দেশের সামনে হিন্দু-হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদীর ধর্ম এবং সম্প্রদায়-বিদ্বেষী মনোভাব কখনও সমর্থনযোগ্য নয়।তবুও মোদী-প্রচেষ্টার অন্ত নেই।হিন্দুবাদী সংগঠনগুলিও উঠে পড়ে লেগেছে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত মনোভাব নিয়ে।আগামী লোকসভা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন-তেন-প্রকারেণ মোদীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসানোই একমাত্র উদ্দেশ্য, বিজেপিসহ সব হিন্দুবাদী সংগঠনগুলির।নরেন্দ্র মোদী দেশের জন্য যে এক বিনাশকারী চরিত্র তা স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করলেন,ড: মনমোহন সিং।...সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ভার এখন জনগণের হাতে।এখন এটাই দেখার বিষয় প্রধানমন্ত্রীর আসনে কে বসবেন? মোদী না রাহুল?
২. ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৭ ০
পাঠক১৯৭১ বলেছেন: মোদীকে পরাজিত করার জন্য বাংগালীদের পক্ষ থেকে সাধ্যানুসারে ব্যবস্হা নেয়া দরকার।
৩. ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৪৭ ০
েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: ভারত কখনই অসম্প্রদায়িক রাস্ট্র ছিলো না,এখনও নয়।এই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে যখন গুজরাটে পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা লাগিয়ে সেখানকার মুসলমানদের উপর গনহত্যা চালায় তখন এই কংগ্রেস কোথায় ছিলো।বিশ্ব মানবতাবাদীরাই বা কোথায় ছিলো।এখন ভোটের জন্য .....।আসলে সবই ধুর্ত শিয়াল।আর সব শিয়ালের এক রা।
৪. ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১০ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: পাঠক 1971বন্ধুকে অশেষ ধন্যবাদ,সদর্থক মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য!
আর ‘ফেরারী এই মনটা আমার’ বন্ধুর সঠিক-সুন্দর বক্তব্য’র উত্তরে বলি এইসব ধূর্ত শেয়ালদের জন্যই তো দেশভাগ হয়েছিল।ধর্মরোগ এদের মগজে এমনভাবে ঢুকে বসে আছে,যা দুরারোগ্য ব্যাধির মতো।একমাত্র জনগণের সচেতনতা-ই পারে সম্প্রীতি রক্ষা করতে।
মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ-জিহাদ ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মৌলবাদ-সন্ত্রাসবাদ-জিহাদ ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ / রইসউদ্দিন গায়েন
‘মৌলবাদ’, ‘সন্ত্রাসবাদ’ এবং ‘জিহাদ’ এই তিনটি শব্দ আজ বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার বিষয়বস্তু।এমন কোনো সংবাদমাধ্যম নেই(তা’ প্রিন্ট মিডিয়া হোক বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া) যেখানে প্রতিনিয়ত এই তিনটি শব্দ নিয়ে কোনো না কোনো খবর প্রচারিত বা প্রকাশিত হয় না।আর সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো এই শব্দগুলি কোনো এক বিশেষ সম্প্রদায়ের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য এগুলো রিপোর্টার এবং সম্পাদকমন্ডলীর লৈখিক সুনিপুণ যোগ্যতার প্রকাশ।
এখন আসা যাক এই তিনটি শব্দের অর্থ ও সঠিক প্রয়োগ-ভিত্তিক আলোচনায়। প্রথম শব্দটি ‘মৌলবাদ’।;তা’ থেকে ‘মৌলবাদী’। মৌলবাদী’ কাকে বলবো? এর উত্তরে বলতে হয়,মৌলবাদী এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোনো একটি বিষয়ে ‘মৌলিকত্ব’-কে কঠোরভাবে মেনে চলেন। যেমন একজন ডাক্তারকে যদি ভাল ডাক্তার হতে হয়,তাঁকে চিকিৎসাশাস্ত্রের মৌলিকত্ব সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে। একজন গণিতবিদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তেমনি ‘ধর্ম’ বিষয়ে মৌলিক ধারনা না থাকলে ধার্মিক হওয়া যায় না। অস্পষ্টতা না রেখে বলা ভাল যে একজন হিন্দু,মুসলিম বা খৃস্টান যদি ধর্মের মৌলিকত্ব না বোঝেন বা না অনুসরণ করেন,তিনি প্রকৃত হিন্দু,খৃস্টান বা মুসলিম হতে পারেন না। সত্য ও অহিংসার ক্ষেত্রে মহাত্মা গান্ধী মৌলবাদী ছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে শব্দটি কোনো সত্যদ্রষ্টা মানুষের চারিত্রিক গুণাবলী প্রকাশের জন্য প্রয়োগ করা হয় না। ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ধর্মীয় কার্যকলাপের ক্ষেত্রে বহুল প্রচারিত শব্দ। প্রচারের অপব্যাখ্যায় এই ‘মৌলবাদ’ শব্দটি ধর্মীয় বিষয় ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে আলোচিত হয় না। তাই সাধারণ মানুষের কাছে এই শব্দটি ‘সাম্প্রদায়িক শব্দ’ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
দ্বিতীয় শব্দটি হ’ল ‘সন্ত্রাসবাদ’। ‘সন্ত্রাসবাদ’ হচ্ছে অন্যায়ভাবে মানুষকে ভয় দেখানো। ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর একটি সমার্থক শব্দ ‘আতঙ্কবাদ’। আর এই ‘আতঙ্কবাদ’ থেকে ‘আতঙ্কবাদী’ শব্দটি ব্যাপক প্রচারগুণে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এখন প্রশ্ন কে বা কা’রা ‘আতঙ্কবাদী’? এ প্রসঙ্গে,আগ্রহী পাঠকবন্ধুদের জন্য আমার লেখা একটি কবিতা উপস্থাপন করছি:-
‘আতঙ্কবাদী:-রইসউদ্দীন গায়েন
চোখ রাঙিয়ে শিশুকে ভয় দেখালো কে?---মাষ্টারমশাই।
লিঙ্গভেদে ভ্রুণহত্যা করলো কে?---পতিদেব।
নিরপরাধ বধূহত্যা কেন?---অতিলোভী অজদের দোষে।
বলপূর্বক প্রেমখেলায় উন্মত্ত কা’রা?---মুখোশধারীরা।
পুলিশ কেন দুষ্কৃতির বন্ধু?---পকেট ভরার তাগিদে।
রক্ষক কেন হয় ভক্ষক?---অর্থলোভে।
বীর সুভাষ কেন নিরুদ্দেশ?---পন্ডিতের আশীর্বাদে।
ভারত-বিভাজন চক্রান্তকারী কা’রা?---ধর্মবণিকরা।
কাশ্মীর আক্রান্ত কেন?---ধর্মতান্ত্রিক চক্রান্তে।
আফগানিস্তান ধ্বংসস্তুপে পরিণত কেন?---মশা মারতে কামান দাগায়।
ইরাকে মৃত্যুলীলা কেন?---ইবলিসের উৎপাতে।
ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা কেন?---কাশ্মীর ভাগাভাগি নিয়ে।
সাদ্দাম-হুসেন কি আতঙ্কবাদী ছিলেন?---আমেরিকাই জানে।
আর জর্জ-ডব্লিউ বুশ?---ইবলিসের উপযুক্ত বংশধর।
আসলে,আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে
টপ্ টু বটম্ আতঙ্কবাদীতে ভরা---
তাই বৃথাই প্রশ্ন করা---
‘আতঙ্কবাদী কে বা কা’রা?’
এবার ফিরে আসা যাক মূল আলোচনার স্রোতে। একজন চোর বা ডাকাত যদি পুলিশকে দেখে ভয় পায়,তাহলে সেই পুলিশ, চোর-ডাকাতের কাছে একজন সন্ত্রাসী।কিন্তু ডাকাতি বা চৌর্যবৃত্তির মতো অসামাজিক কার্যকলাপ দূর করার জন্য পুলিশ আমাদের কাছে একজন সমাজসেবী বন্ধু হিসেবে প্রশংসিত হয়। বীর ক্ষুদিরাম,সূর্য সেন,প্রফুল্ল চাকী,বিনয়-বাদল-দীনেশ এবং আরও অনেকের আত্ম-বলিদানের ঘটনা আমরা স্মরণ করি অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সঙ্গে।কিন্তু ব্রিটিশ রাজত্বে ইংরেজদের বিচারে তাঁরা ছিলেন সন্ত্রাসবাদী বা আতঙ্কবাদী।বিপ্লবী রাসবিহারী বসু,নেতাজী সুভাষচন্দ্রও ছিলেন ব্রিটিশ-সাম্রাজ্যবাদীদের দৃষ্টিতে অপ্রতিরোধ্য আতঙ্কবাদী।অথচ,আমাদের দৃষ্টিতে দুঃসাহসিক দেশপ্রেমিক,অবিস্মরণীয় প্রণম্য ব্যক্তিত্ব।
শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়,বন্য প্রাণিদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ঘটনা ঘটছে।একই জঙ্গলে থাকে বাঘ ও হরিণ,অথচ বাঘ মহা-আতঙ্কবাদী, চির শত্রু হরিণ ও অন্যান্য জন্তু-জানোয়ার এমনকি মানুষেরও। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই আতঙ্কবাদী আছে ও থাকবে।স্বর্গলোক বা জান্নাত থেকে বিতাড়িত আজাজিল বা ইবলিস্ তার প্রমাণ,যিনি মানবজাতির চিরশত্রু---সৃষ্টির আদিকাল থেকে এক বিস্ময়কর আতঙ্কবাদী। দুর্গাপুজা এসেই গেল।কিন্তু কিভাবে এল এই পূজা---নিশ্চয়ই কারও অজানা নেই।অসুরের দাপটে স্বর্গলোকের দেবতারা ভীত-সন্ত্রস্ত।দেবী দুর্গা মহাকালী-চামুন্ডেরূপ ধারণ ক’রে অসুর বধ না করলে দেবতাদের স্বর্গলোকে বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠত।এখানে বিচার্য বিষয় এই যে বিপন্ন দেবতাদের কাছে অসুর ছিল মারাত্মক আতঙ্কবাদী।অপরপক্ষে মহাকালীরূপী দেবী দুর্গা ছিলেন অসুরদের সামনে কালভৈরবী মহা-আতঙ্কী।এখানে একটা ইতিবাচক বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ছে।বিষয়টি হ’ল,দেবী দুর্গতিনাশিনীর জন্যই শুধু দেবতারা নন্ সমস্ত সৃষ্টকুল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।বসুন্ধরায় শান্তি-প্রতিষ্ঠা হ’ল।মা ঊমার আগমনী গানে,স্তব-স্তুতিতে ভ’রে উঠল অবনী।এমনি ভাবে মহাভারতের ইতিহাসে শ্রীকৃষ্ণ চরিত্র,সত্যাদর্শী যুধিষ্ঠিরের কাছে পরম মিত্র হলেও দুর্যোধন-দুঃশাসনের দৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণ এক ভয়ালরূপ শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী।রামায়ণে দশানন এক বিভীষিকা।রামভক্ত হনুমান কৌশলে রাবণপত্নী নিকষা’র কাছে রক্ষিত মৃত্যুবাণ না এনে দিলে শ্রীরামের পক্ষে দুঃসাধ্য ছিল রাবনবধ করা।মাইকেল মধুসুদনরচিত ‘মেঘনাদবধ’ কাব্যগ্রন্থে ইন্দ্রজিতের যজ্ঞগৃহে লক্ষন-প্রবেশের ঘটনায়,লক্ষণ যে সন্ত্রাসবাদীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তা’ গুণী পাঠকমাত্রই জানেন।নিরস্ত্র মেঘনাদকে লক্ষণ হত্যা করেছিল।আরএই সন্ত্রাসবাদী কর্মে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেবতারাই ইন্ধন যুগিয়েছিলেন।
আমাদের বিচার্য বিষয় এই সন্ত্রাসবাদ যখন কোনো সমাজ বা দেশের হিতার্থে ব্যবহৃত হয়,তখন তা প্রশংসনীয় হয়,যদিও তা’ প্রশ্নসূচক(?)।এখানে মনে রাখা প্রয়োজন ‘সন্ত্রাসবাদ’ যখন কোথাও নিন্দনীয় হয়,অন্য কোথাও তা’ প্রশংসনীয় হতে পারে।আবার ঠিক এর বিপরীতও হতে পারে।সমস্ত পৃথিবীর মানুষ যেদিন এরকমই ভাবতে শিখবে,সেদিন আতঙ্কবাদ বা সন্ত্রাসবাদ শব্দটির অপপ্রয়োগ হবে না এবং মানুষের মনে নেতিবাচক ভাবনার সৃষ্টি হবে না।
তৃতীয় শব্দটি হ’ল ‘জিহাদ’।এই ‘জিহাদ’ শব্দটি এসেছে ‘জাহদাহ’ শব্দ থেকে,যার মানে হ’ল চেষ্টা করা,পরিশ্রম করা,উদ্যমী হওয়া। ইসলামিক অভিধান অনুযায়ী জিহাদের অর্থ--- কারো অসৎ প্রবৃত্তির বিরূদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করা,অন্যায় অত্যাচারের বিরূদ্ধে সংগ্রাম। উদাহরণস্বরূপ,যদি কোনো ছাত্র পরীক্ষায় পাশ করার জন্য চেষ্টা করে,তাকে বলা হয় সে জেহাদ করছে।যদি কোনো চাকুরীজীবী চেষ্টা করে,পরিশ্রম করে,তার মনিবকে খুশি করার জন্য---সে ভাল কাজ দিয়েই করুক আর খারাপ কাজ দিয়েই করুক,সেটাই জিহাদ।
এখন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তির প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন পরিবেশন করা যাক। সেই অসাধারণ ব্যক্তিটির নাম অনেকেই জানেন; তিনি ছিলেন মুম্বাই হাইকোর্টের একজন বিচারক।১৯৯১-সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।বিচারক হসবেট সুরেশ সাধারণ জীবনে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।তিনি অনেক আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তৃতা করেছেন।১৯৯২-৯৩ সালে তিনি মুম্বাই সম্পর্কিত লেখা প্রতিবেদনের জন্য প্রশংসা পেয়েছেন---যার শিরোনাম ছিল ‘জনগণের বিচারক’।গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার ওপর লেখা ‘CRIME AGAINST HUMANITY’ বা মানবতার বিরূদ্ধে অপরাধ ২০০০ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হবার পর বহু প্রশংসিত হয়।তাঁর প্রতিবেদনে আরো উঠে আসে মুম্বাই-এর দলিত,কেরালার ছাত্র,গুজরাটের খৃস্টান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।এবার শোনা যাক আজকের উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদনটি--- (এটি ছিল বিচারক হসবেট সুরেশের একটি আনুষ্ঠানিক দীর্ঘ বক্তব্যের ভাষান্তরিত কিয়দংশ):---
“বন্ধুরা, আমি শুরুতেই ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বিচারক লর্ড টার্নিগের প্রসঙ্গ উল্লেখ না ক’রে পারছি না।তিনি একবার একটা কথা বলেছিলেন—‘বিচারকরা অভিনেতাদের মতো অন্যকে খুশি করার জন্য,উকিলদের মতো মামলায় জেতার জন্য,ঐতিহাসিকদের মতো অতীতকে জানার জন্য কথা বলে না; বরং বিচারকরা কথা বলে রায় দেওয়ার জন্য।” আমি একজন ‘রিটায়ার্ড বিচারক বটে,কিন্তু টায়ার্ড নই।অবশ্য আমি এখানে কোনো রায় দেব না,শুধু কথা বলবো।আমি মানুষের বাক্-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী,তাই মানুষের অধিকার নিয়ে আগেও কথা বলেছি।আমি সব সময় চেয়েছি,বিচারকরা এসব বিষয়ে কথা বলুক।কারণ তারা যদি এসব অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ না করে,তাহলে কে-ই বা এর প্রতিবাদ করবে? আমাদের কাছে এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে,সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জবাব দিতে গিয়ে প্রত্যেক দেশের সরকারই আরো বেশি সহিংসতার জন্ম দেয়।আর এভাবেই এটা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে।এভাবে এ পদ্ধতিতে সন্ত্রাস দমন তথা এ জাতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
১৯৮৪ সালে দিল্লী ও তার পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় বেশ কিছু বোমা বিস্ফোরণ হয়েছিল যেটা করেছিল খালিস্থানীরা।সে সময় সন্ত্রসী গ্রুপ খালিস্থানীদের বিরূদ্ধে ভারতে বিদ্রোহ চলছিল,তখন আমরা ‘টাডা’ নামক একটি আইন প্রণয়ন করি যেটা ছিল খুবই কঠোর।আপনারা জানেন যে,টাডার অনেক অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ হয়েছে।এই আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে আটক করা হয়েছে।তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।আমার মনে পড়ে পাঞ্জাব হাইকোর্টের একজন প্রবীণ বিচারক অজিত সিং বেইনস্ একটা জনসমাবেশে তৎকালীন সময়ে ভারতে চলমান অত্যাচার-নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছিলেন।তিনি বলেছিলেন,একদিন আমরা এই আইন থেকে মুক্তি পাব।’ তাকেঁ আটক করা হ’ল এবং তাকেঁ পরানো হ’ল হাতকড়া।আইনটা এমনই ছিল যে,একজন বিচারকের হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হ’ল হাইকোর্টে।কিন্তু হাইকোর্টের বিচারকরা জামিন দিতে পারলেন না।অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন।সেখানেও জামিন বা মুক্তি না পেয়ে তিনি জেলখানার মধ্যে কাটালেন এক বছরেরও বেশি সময়।আর সবশেষে দেখা গেল এটা কেস্ বা মামলা নয়। ‘টাডা’ আইনের ক্ষমতাবলে পঁচাত্তর হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছিল।সবাই ছিল জেলখানায়।কাউকে জামিন দেওয়া হয়নি।এই আইনের আওতায় পুলিশ স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর সব নির্যাতন চালাত।তারপর ১৯৯৫ সালে ভারত সরকার ‘টাডা’ নামক এই জঘন্য আইনটিকে বাতিল ঘোষনা করল।তখন দেখা গেল হাজার হাজার মানুষের ওপর অত্যাচার, অবিচার করা হয়েছে।বাহাত্তর হাজার বন্দীকে মুক্ত ক’রে দেওয়া হ’ল যাদের মামলা,বিচার কিছুই হ’ল না।শুধু তারা মাসের পর মাস,বছরের পর বছর জেলখানার ভেতরে অত্যাচার সহ্য করেছে।তাছাড়া এই জঘন্য আইনে আমরা দোষী সাব্যস্ত করতে পেরেছি মাত্র(১.৮%)এক দশমিক আট শতাংশ লোককে।কিন্তু তারপরেও এক সময় এটা বলবৎ ছিল,যার ফলে পুলিশ হয়ে গিয়েছিল স্বৈরাচারী।পুলিশ যা খুশি করতে পারত অথচ কেউ কিছু বলতে পারত না।রাজনীতিবিদরা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই আইনকে ব্যবহার করত।যে কোন লোককে আটক ক’রে জেলখানায় বন্দী রাখতে পারত এবং কোনভাবেই জামিন পাওয়া যেত না।অতঃপর সারা দেশে এর বিরূদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় ১৯৯৬ সালে টাডা আইন বাতিল করা হ’ল।আমরা এর সবাই প্রতিবাদ করছি;এটা একটা নিষ্ঠুর আইন।এ ধরনের কোনো আইন আমরা চাই না।এ ধরনের আইন দিয়ে সন্ত্রাস বন্ধ করা যাবে না;আরও বাড়বে।
এরপর এল ‘পোটা আইনের প্রহসন’। এ সময় নিউইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ঘটে গেল এক প্রলয়ঙ্কারী ঘটনা। মি.বুশ তৎক্ষণাৎ যুদ্ধ ঘোষণা করলো সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে এবং বললো, ‘যারা আমাদের সাথে নেই তারা আমাদের শত্রু।তখন আমরা আমেরিকা তথা বুশের পক্ষ অবলম্বন করলাম এবং ‘পোটা’ আইন প্রনয়ণ করলাম।এই আইনেও সেই একই ঘটনা ঘটল।পোটা বহুমুখী একটা আইন।এর আওতায় যে কোনো মানুকে আটক করা যাব।টাডা আইনের মতো এখানেও অনেক মানুষের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে,সন্ত্রাসী হোক বা না হোক।এ ধরনের আইন শুধু আতঙ্ক ছড়ায়।তাই মানুষ এখন পোটার মতো আইন চায় না।২০০৬ সালে বোম্বে ট্রেনের বোমা বিস্ফোরণ এবং তৎকালীন বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষ ক’রে উপলব্ধি করেছে যে,কঠিন কোনো আইন ছাড়া সন্ত্রাস দমন করা যাবে না।কিন্তু আমি বলি,কঠিন কোনো আইন দিয়ে সন্ত্রাস থামানো যায় না।এদেশ কেন?পৃথিবীর কোথাও এর নজীর নেই।সংসদে পোটা আইনের বিতর্কিত এক পর্যায়ে ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সংসদে আক্রমণ করা হ’ল।এভাবে ২০০২ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর অকশর্ধাম মন্দিরে,২০০২-এর ২৪ শে নভেম্বর রঘুনাথ মন্দিরে,২০০৩-এর ২৫ শে অগাস্ট গেট অফ ইন্ডিয়ায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।এই ‘পোটা’ আইন থাকা সত্ত্বেও এভাবে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটেছিল।২০০২ সালে তৎকালীন ভারতের এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন,সে বছর জম্মু ও কাশ্মীরে সব মিলিয়ে (৪০৩৮) চার হাজার আটত্রিশটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছিল যদিও সেখানে আর্মি,নিরাপত্তা রক্ষী এবং এই আইনটা বলবৎ ছিল।সে সময়েই সেখানে ১০০৭ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে,যাদের মধ্যে ৫০৮ জন অন্য দেশের নাগরিক।কাশ্মীরে গত সতের বছরে এ পর্যন্ত মারা গেছে আশি সহস্রাধিক মানুষ,হারিয়েও গেছে অনেকে।অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে পাঞ্জাবে।সে সময় পাঞ্জাবে খালিস্থানীদের বিদ্রোহ চলছিল।হাজার হাজার মানুষ হারিয়ে গেছে।কেউ জানে না তাদের কী হয়েছে!এমন কি কয়েক বছর আগেও ‘বিয়াস’ নদীর তীরে অনেক লাশ,কঙ্কাল ও মানুষের হাড়গোড় পাওয়া গেছে।আমি একবার একটা তদন্ত করতে গিয়েছিলাম।সেখানে ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম সেখানের বেশিরভাগ বাড়িতে বয়স্ক লোকজন,শিশু বাচ্চারা আছে;কিন্তু কোনো তরুণ বা যুবক নেই।তাদের কী হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। তারা শুধু এতটুকু জানে যে, গভীর রাতে তাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল,তারপর তারা আর ফিরে আসেনি।এ ঘটনার আট-দশ দিন পর বিভিন্ন জায়গায় তাদের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এমনই ছিল সেই আইন,যেখানে সহিংসতা ছিল একটি অবিরাম প্রক্রিয়া এবং খুনের পরিবর্তে খুন সেখানে অহরহ ঘটত।মনিপুর,ছত্তিশগড়,তেলেঙ্গানা এরকম আরও অনেক জায়গায় খুনোখুনি,হত্যাযজ্ঞ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল।সেদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন---আমাদের একটা সন্ত্রাস বিরোধী অধ্যাদেশ প্রয়োজন।
অনেকদিন আগে কাশ্মীরে আমরা একটা পরীক্ষা করেছিলাম।তাদেরকে জেলখানার ভিতর আটকে রেখেছিলাম বছরের পর বছর। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেল। সরকার তাদের মগজ ধোলাই করে বললো— তোমরা ফিরে গিয়ে তোমাদের লোকদেরকে বোঝাও,এভাবে যুদ্ধ করতে নিষেধ করো এবং ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব বদলানোর ব্যাপারে সহায়তা করো। তখন তারা বললো---আমরা ফিরে গেলেই আমাদেরকে মেরে ফেলা হবে।তারপর আমাদের সরকার বললো---আমরা অস্ত্র দেব। অবশেষে তারা অস্ত্র হাতে ফিরে গেল।
আমার মনে আছে,একবার নির্বাচনের সময় পাঞ্জাবে ‘ডেমোক্রেটিক রাইটস্ অর্গানাইজেশন্’(গণতান্ত্রিক অধিকার সংস্থা) একটা প্রতিবেদন ছাপালো।সেখানে বলা হল যে,পাঞ্জাবে ভোট নেওয়া হচ্ছে বন্দুকের মুখে,সেখানে সশস্ত্র সেনাবাহিনীসহ আরো অনেক মানুষের দল বা গোষ্ঠির কাছে ব্যাপক অস্ত্র রয়েছে।এক কথায় ভারতের মানুষ এখন বন্দুকের মুখে,সহিংসতার জবাব সহিংসতা দিয়েই হচ্ছে।এভাবে কি সমস্যার সমাধান সম্ভব?
ছত্তিশগড়ে অনেক মাওবাদীরা ও নকশালপন্থীরা আছে।তাদেরকে শেষ করার জন্য প্রায় ৫০০০ আদিবাসী নিয়ে ‘সালওয় জুলুম’ নামে একটা বাহিনী তৈরি করা হল।এর ফলাফল হিসেবে আদিবাসীরা সব মারা গেল এবং নকশালপন্থীরা এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়ল। আমাদের একটু ভাবতে হবে,এখনও পর্যন্ত এদেশে কোনো সন্ত্রাসীর প্রকাশ্যে বিচার হয়নি,শুধু হত্যা করা হয়েছে।যেমন,মুম্বাইতে ১৯৯৩ সালে একটা বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল।এর আসল অপরাধী কা’রা আমরা এখনো তা বের করতে পারিনি।এর পাশাপাশি অনেক লোকজন জেলখানায় বন্দী হয়ে আছে বছরের পর বছর।কবেইবা তাদের মামলার শুনানী হবে,বিচার হবে,তারা কিছুই বলতে পারে না।আর এটাই বাস্তবতা।এছাড়া অকশর্ধাম্ মন্দির যারা আক্রমণ করেছিল তাদের মেরে ফেলা হ’ল। সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও কাজটা আসলে কা’রা করেছিল তা’ আমরা জানি না। এ ধরনের কাজ আমরা ক’রে যাচ্ছি। সহিংসতার জবাব দিতে গিয়ে আমরা আরো বেশি সহিংসতার সৃষ্টি করেছি। এভাবেই চলছে দেশের জীবনব্যবস্থা।এমনকি নাইন-ইলেভেনের (১১-ই সেপ্টেম্বর) পর বুশ সন্ত্রাসের অজুহাতে সারা বিশ্বের মুসলমানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো।
আফগান হামলা ছিল সন্ত্রাসীদের বিরূদ্ধে,ওসামা বিন্ লাদেনের বিরূদ্ধে।বুশ আফগানিস্থানে বোমা হামলা করলো,মারা গেল অসংখ্য গরীব,অসহায়,নিরীহ নারী পুরুষ। ইরাককেও একই বুশ প্রশাসন কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই সন্দেহ ক’রে বসলো। ইরাকে নাকি তালেবান এবং ভয়ঙ্কর সব রাসায়নিক অস্ত্র আছে,এই মিথ্যে সন্দেহের ওপর ভিত্তি ক’রেই বুশ ইরাকের বিরূদ্ধে বোমা হামলা ও যুদ্ধ শুরু করলো। অনেক নিরীহ মানুষ সেখানে মারা গেল। এ পর্যন্ত বিশ্ব বানিজ্য কেন্দ্রে যত লোক মারা গেছে তার কুড়ি গুণ বেশি মানুষ মারা গেছে শুধু ইরাকে। এখন আমরা সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করবো কাকে? আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি---বর্তমান বিশ্বে যদি কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়,তাহলে সেটা হবে জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি একটা অযৌক্তিক অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিলেন,সকল আইন লঙ্ঘন করলো,এমনকি আন্তর্জাতিক আইনেরও তোয়াক্কা করা হয়নি।
হিন্দু,খ্রিস্টান,মুসলমান নির্বিশেষে আমাদের যে কেউ এ যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে পারে,সে অধিকার আমাদের আছে।কারণ শুধু নিন্দা ও প্রতিবাদ করলেই আমরাও সন্ত্রাসী হয়ে যাব না। আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো---সন্ত্রাসকে সজ্ঞায়িত করা তথা বিশ্বের মাঝে সন্ত্রাসের পরিচিতি তুলে ধরা।আর কিভাবে আপনি সন্ত্রাসের সজ্ঞা দেবেন? ‘টাডা’, ‘পোটা’ ইত্যাদি তথাকথিত আইনেও সন্ত্রাসের সজ্ঞা দেওয়া হয়নি। শুধু সন্ত্রাসী কাজের সজ্ঞা দেওয়া আছে।আর এরকম কাজের কথা যেমন নরহত্যা,খুন,ডাকাতি,অস্ত্রবাজি এসব ভারতের পেনাল কোডে আছে,কিছু সাধারণ আইনের আওতাভূক্ত রয়েছে;কিন্তু তারপরও পুলিশ তার নিজের সুবিধামতো এসব কাজকে সন্ত্রাসী কাজ ব’লে অভিহিত করছে। যদি আপনারা সবাই মেনে নেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করাই সন্ত্রাসী কাজ,যেটা বেশিরভাগ সজ্ঞার মূল কথা,তাহলে আমি বলবো গত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হ’ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এবার একটা অদ্ভুত খবর শোনা যাক। খবরটির হেডলাইন দেওয়া যাক এই ব’লে---‘সন্ত্রাসী নোবেল পুরস্কার পেল’:- ‘১৯৪৬ সালের ২২ শে জুলাই কিং ডেভিড হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটেছিল।মেনাফেম বেগেন-এর নেতৃত্বে ইরগুন(সন্ত্রাসী দল) কর্তৃক এই বিস্ফোরণটা ঘটে। সেখানে ৯১ জন নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছিল; তন্মধ্যে ২৮ জন বৃটিশ,৪১ জন আরব,১৭ জন ইহুদী এবং অন্য আরও পাঁচজন। এই ইরগুন গ্রুপ, আরবদের মতো পোষাক পরিধান করেছিল,যাতে লোকজন মনে করে আরবরা-ই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আর এ ছিল বৃটিশ ম্যানডেটের বিরূদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আক্রমণ। সেই সময়ে মেনাফেম বেগানকে বৃটিশ সরকার এক নম্বর সন্ত্রাসী ব’লে অভিহিত করেছিল। কিন্তু দেখা গেল,কয়েক বছর পর তিনিই হলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং আরো কিছুদিন পর তিনি ‘শান্তি’-তে নোবেল পুরস্কার পেলেন। চিন্তা করার বিষয়,যে মানুষটা খুন করেছে হাজার হাজার মানুষকে,সেই প্রধানমন্ত্রী হয় ইসরাইলের। কিছুদিন পর শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারও পায়। আর তখন ইরগুন,হ্যাগানা,স্টার্নগ্যাং এইসব সন্ত্রসী দল ও তাদের নেতারা যেমন আইজেক রবীন,মেনাফেম বেগান,এরিয়েল শ্যারন,এঁরা সবাই পরবর্তীতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী অথবা উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তা হয়েছিলেন। এরা সবাই যুদ্ধ করেছিল ইহুদী রাষ্ট্রের জন্য। একটু খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে পৃথিবীর মানচিত্রে ১৯৪৫ সালের আগে ইসরাইল নামে কোনো দেশ-ই ছিল না।এই ইহুদী দলগুলো,খোদ ব্রিটিশরা যাদেরকে সন্ত্রাসী ব’লে ডাকতো,এরা একটা নতুন ইহুদী রাষ্ট্র গড়ার জন্য লড়েছিল।পরে তারা শক্তি দিয়ে ইসরাইল দখল ক’রে প্যালেস্টাইনদের তাড়িয়ে দেয়।এখন এই লোকগুলোই নির্লজ্জভাবে প্যালেস্টাইনের লোকদের বলছে সন্ত্রাসী(যাঁরা তাঁদের হারানো প্রিয় স্বদেশ ফিরে পেতে চাইছে)।’
এই রিপোর্টের সঙ্গে সংযোজন করে যদি বলা হয় বর্তমান ‘কাশ্মীর’ তার স্বাধীনতা ফিরে পেতে চাইছে,তবে অনেকেই হয়তো বক্তার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করবেন। কিন্তু যা সত্য,তা একদিন অনির্বাণ আলোক শিখার মতো উঠে আসবেই। কাশ্মীর ছিল একটি স্বাধীন দেশ।কাশ্মীরের মাটিতে জন্ম নেওয়া মানুষদের মুখে সর্বপ্রথম যে কথাটি উঠে আসে তা হ’ল তাঁরা ‘কাশ্মীরী’--- না ভারতীয় না পাকিস্তানী।আর সে জন্যেই ওরা আমাদের বলে ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানের মানুষদের বলে পাকিস্তানী। কাশ্মীরিদের ভাবনায় ধরা পড়ে দু’দেশের সন্ত্রাসী-প্রতিচ্ছবি। ভারত-পাকিস্তান দু’দেশই জবরদখলদার। ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার কালে জম্মু ও কাশ্মীর আর দশটা অঙ্গরাজ্য’-র মতো ছিল না।এটি ছিল ১৪০টি পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন করদ রাজ্যের অন্যতম। ফলে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে এই রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকবে, নাকি ভারত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে তা নির্ধারণের স্বাধীনতা ছিল ঐ রাজ্যগুলিরই। জম্মু-কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্বাধীন থাকার ইচ্ছাই পোষণ করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির চাপে প’ড়ে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন ভারতের সাহায্য গ্রহণ করতে;সে আর এক ইতিহাস। ১৯৪৭-এর সেপ্টেম্বর মাসে পুঞ্চ অঞ্চলের অধিবাসীরা জম্মু-কাশ্মীরের সরকারের বিরূদ্ধে একটি অভ্যুত্থান সংগঠিত করে। কিছুদিনের মধ্যেই উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পার্বত্য অধিবাসীরা জম্মু-কাশ্মীরের উপর আক্রমণ চালায়। এ সবের পেছনে পাকিস্তানের মদদও ছিল।এরকম একটা পরিস্থিতিতেই ১৯৪৭-র ২৬শে অক্টোবর ভারত এবং জম্মু-কাশ্মীরের মধ্যে একটি ‘অন্তর্ভূক্তি সংক্রান্ত দলিল’(Instrument of Accession) স্বাক্ষরিত হয়।শর্ত ছিল,ভারত কেবল প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে,অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নয় এবং কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর গণভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে কাশ্মীর ভারতের সাথে থাকবে নাকি স্বাধীন থাকবে। সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে চুক্তির ৮ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ ছিল: ‘Nothing in this Instrument affects the continuance of my sovereignty in and over this state,or save as provided by or under this Instrument, the exercise of any powers, authority and rights now enjoyed by me or ruler of this state or the validity of any law at present in force in this state.’ অর্থাৎ হরি সিং পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন,এই প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি মানে এই না যে জম্মু-কাশ্মীরের স্বাধীনতা তিনি ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছেন। শুধু তাই না,তিনি ভারতের কোনো সংবিধান মেনে চলার কোনো নিশ্চয়তা দেননি। চুক্তির ৭ ধারায় বলা আছে:- ‘Nothing in this Instrument shall be deemed to comment in any way to acceptance of any future constitution of India or to fetter my discretion to enter into agreement with the Govt. of India under any such future Constitution.
তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ঐ চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ দিন পর ঘোষণা করেন:- ‘We have declared that the fate of Kashmir is ultimately to be decided by the people of Kashmir. That pledge we have given and the Maharaja has supported it, not only to the people of Kashmir but to the world. We will not and cannot back out of it. We are prepared when peace and law and order have been established to have a referendum held under international auspices like the United Nations. We want it to be a fair and just reference to the people and we shall accept their verdict. I can imagine no fairer and juster offer.’[সূত্র:Instrument of Accession of Jammu and Kashmir State 26 october,1947,Legal Document No.113]
অর্থাৎ ‘আমরা ঘোষণা করেছি যে কাশ্মীরের ভাগ্য কাশ্মীরের জনগণই নির্ধারণ করবে। শুধু কাশ্মীরের জনগণই নয়, সারা দুনিয়ার কাছে আমরা এই প্রতিজ্ঞা করেছি আর মহারাজা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন।এর অন্যথা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। আমরা প্রস্তুত আছি,যে মুহুর্তে কাশ্মীরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে,সে মুহুর্তেই জাতিসঙ্ঘের মতো কোন আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের অধীনে গণভোটের আয়োজন করা হবে। আমরা চাই এ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে,জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে এবং আমরা এই জনরায় মেনেও নেব। এর চেয়ে ভালো এবং ন্যায়বিচারমূলক কোনো প্রস্তাব তো আর আমার মাথায় আসছে না।’
কিন্তু কোথায় সেই ন্যায়ের প্রতিফলন? নেহেরুর প্রতিশ্রুতির পর দীর্ঘ ৬৩ বছর পার হয়ে গেল,কাশ্মীরে শান্তি-শৃঙ্খলা আর ফিরে এল না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ,ইরাক দখলের সময় ১৬৬ জন ইরাকীর জন্য একজন ক’রে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।কিন্তু অবাক হতে হয়, কাশ্মীরে কুড়িজন নাগরিকের জন্য একজন ভারতীয় সেনা বা অর্ধসেনা নিযুক্ত আছে। কাশ্মীরে মোট জনসংখ্যা ১ কোটির কিছু বেশি। আর এই ছোট্ট দেশের জন্য সেনা নিযুক্ত করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার রাষ্ট্রীয় রাইফেল সেনা ও এক লক্ষ ৩০ হাজার সি আর পি এফ জোয়ান।এছাড়াও আছে রাজ্যের লাখ খানেক পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী। আর এই সশস্ত্র বাহিনীগুলোকে দেওয়া হয়েছে মানুষ খুন করার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। ১৯৯০ সালের ৫ই জুলাই কাশ্মীরে সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন(আর্মড্ ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট) জারি ক’রে তাদের হাতে এই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। এই আইনের ৪(এ) ধারায় বলা হয়েছে যে,সশস্ত্র সামরিক বাহিনী যে কোনো সন্দেহভাজন নাগরিককে হত্যা করতে পারবে।[সূত্র: স্যোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার বাংলা মুখপত্র ‘গণদাবী’-র ৬-১২ অগাস্ট সংখ্যা। ওয়েবসাইট: http//www.ganadabi.in/isues 2010/gd080610.pdf] এই বিশেষ ক্ষমতায় বলীয়ান হয়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে হত্যা,ধর্ষণ,লুন্ঠন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।এখানে প্রাসঙ্গিক কিছু ঘটনা তুলে ধরা যাক:--
বলা বাহুল্য,এই ঘটনাগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে কাশ্মীরী জনগণের বিক্ষোভের যথার্থ কারণ:--
৮-ই জানুয়ারি ,২০১০,১৬ বছর বয়স ইনায়েত খান বিকেলে কোটিং সেরে বাড়ি ফিরছিল। শ্রীনগরের বাদশা চকে প্রতিবাদ-সভা চলছিল।পুলিশ প্রতিবাদীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়।গুলিবিদ্ধ ইনায়েতের আর বাড়ি ফেরা হলনা,কবর-স্থান হ’ল তার শেষ ঠিকানা।
৩১ শে জানুয়ারি,১৩ বছরের ওমর ফারুক শ্রীনগরের গণি মেমরিয়াল স্টেডিয়ামে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল।পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে সেদিন তার সব খেলা সাঙ্গ হয়ে যায়।৫ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মীর যেদিন ওয়ামিকের শোকপালনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল,সেদিন ১৪ বছরের আর এক বালক জাহিদ বি এস এফ-এর গুলিতে প্রাণ হারায়।
১৩ এপ্রিল,সোপুরের সরকারি স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ১৭ বছর বয়সী জুবের আহমেদ ভাট,ঝিলাম নদীর পাড়ে বসেছিল।বিক্ষোভরত কিছু মানুষ পুলিশের তাড়া খেয়ে সেখানে চলে আসে।পুলিশ নির্বিচারে সবার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,পুলিশ জুবেরসহ প্রত্যেককে নদীতে ঝাঁপ দিতে বাধ্য করে। অন্যরা সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হলেও ,জুবের তলিয়ে যেতে থাকে।মাঝিরা বাঁচাবার চেষ্টা করেছিল।কিন্তু পুলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়তে থাকায়,তারা জুবেরের কাছে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়।জুবের প্রাণ হারায়।
১১-ই জুন,রাজৌরির তোফায়েল আহমেদ মাত্তু তার পিতামাতার একমাত্র সন্তান;দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।টিউশানি শেষে সে বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরছিল।কাঁধে ছিল স্কুলব্যাগ।কাছেই কোথাও হয়তো বিক্ষোভ চলছিল,তোফায়েল জানত না।একদল যুবক পুলিশের তাড়া খেয়ে দৌড়াচ্ছিল।তোফায়েলদের দেখতে পেয়ে পুলিশ তাদেরও পিছু নেয়।ভয় পেয়ে কিশোর তোফায়েলরা সামনের গণি মেমোরিয়াল স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়ে।পুলিশ স্টেডিয়ামে ঢুকে গুলি চালায়।তোফায়েলের আর ঘরে ফেরা হ’ল না;গুলি লেগে তোফায়েলের মস্তক চূর্ণ হয়ে যায়।
অমানবিক অত্যাচারের এই তালিকা এত দীর্ঘ যে এই সামান্য পরিসরে তা’ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।এ হত্যাকান্ডগুলোর ধরণ-ধারণ খতিয়ে দেখলে,অনুমান করা শক্ত নয় যে একটা জনগোষ্ঠির তরুণ অংশকে একরকম খেয়াল খুশি মতো খুন করার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সেই জনমানসের ওপর কেমন হতে পারে।একদিকে সামরিক বাহিনীর নির্যাতন,অন্যদিকে অর্থনৈতিক বৈষম্য,তীব্র বেকারত্ব,কৃষি-শিল্পের অনগ্রসরতা ইত্যাদি কাশ্মীরবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় দখলদার ভারতের সাথে তাদের সম্পর্কের স্বরূপ কী।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা ‘অনীক’-এর জুলাই,২০১০ সংখ্যায় প্রণব দে লিখেছেন:- ‘১৯৪৭ থেকে কাশ্মীর, ভারত ও পাকিস্তান এই দু’পক্ষের মধ্যে পিষ্ট হচ্ছে।এটা দু’পক্ষের মর্যাদার লড়াই অথবা অন্য বিচারে কাশ্মীর দু’পক্ষেরই সেফটি ভাল্ব।শাসক শ্রেণির সঙ্কটমোচনে সীমান্ত যুদ্ধ বেশ শক্তিশালী দাওয়াই।আর কাশ্মীরের মানুষ(আজাদ কাশ্মীরসহ)এই রাজনৈতিক পূজার্চনায় বলিপ্রদত্ত পশু।’সাম্প্রতিক বিক্ষোভসহ ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে উঠে কাশ্মরিবাসী পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে বলি’র পাঁঠা আর তাঁরা হতে চান না। তাঁরা স্বাধীন কাশ্মীরেরই স্বপ্ন দেখেন। যে জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ-যুবা নির্বিশেষে পাথর হাতে রাস্তায় নেমে আসে দখলদারের বুলেট মোকাবিলা করতে,তাদের আর দাবিয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হোক কাশ্মীরীদের প্রেরণা! [তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট]
সবশেষে,রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিষয়ে প্রকাশিত একটি তথ্য:-(সংকলন প্রবীর ঘোষ,কাশ্মীরে আজাদির লড়াই,পৃ: ১০১--১০৩)
‘হ্যাঁ,আমরা কাশ্মীরের কথাই বলছি---“সশস্ত্র বাহিনী(বিশেষ ক্ষমতা)আইন,১৯৫৮(AFSPA) ভারতের নিষ্ঠুরতম আইনের একটি, যেটা ভারতীয় লোকসভার ৪৫ বছরের ইতিহাসে পাস হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে লাগামহীন ও দায়ভারহীন সমস্তরকম ক্ষমতা দেওয়া আছে।একবার কোন অঞ্চলকে উপদ্রুত ঘোষণা করা হলে এমনকি বাহিনীর ক্ষুদ্রতম non-commissioned অফিসাররাও শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে হত্যা করতে পারে।এই ‘AFSPA’ আইনের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে।...”[সাউথ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস্ ডকুমেন্টেশন সেন্টার।]সশস্ত্র বাহিনীকে ঢালাও ক্ষমতা দিয়েছে গুলি করে হত্যা করার,গ্রেপ্তার করার এবং তল্লাশি চালানোর—সবই ‘জনজীবনের সাহায্যার্থে’এই আইন প্রথম চালু করা হয় উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম ও মণিপুরে।তারপর ১৯৭২-এ এটি অ্যামেন্ড করে সাতটি রাজ্যেই চালু হয়—অসম,মণিপুর,ত্রিপুরা,মেঘালয়,অরুণাচল,মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড---যাদের প্রচলিত নাম ‘সাত বোন’ বা Seven Sisters.এই AFSPA লাগু করার ফলে অসংখ্য অত্যাচার,ধর্ষণ,বেআইনী আটক ও লুটের ঘটনা ঘটাচ্ছে এই নিরাপত্তা রক্ষীরা।ভারত সরকারকে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করতে হবে...” [সাউথ ইন্ডিয়ান হিউম্যান রাইটস্ ডকুন্টেশেন সেন্টার।]
সমস্ত অসামরিক ভারতীয় নাগরিককে আমাদের প্রশ্ন:--
১.একটি স্বাধীন দেশে AFSPA-র মতো আইন কেন প্রয়োজন?
২.কোন্ সভ্য দেশ ‘নিজের অংশ’ বলে চিহ্নিত অঞ্চলে ২০ বছর ধরে সামরিক শাসন চালায়?
৩.অবস্থা এখন এমন যে প্রতিদিন এখানে দশ-বিশ জন করে তরুণ গুলিতে মারা যাচ্ছে—কোনও সংবাদ মাধ্যম নেই যে রিপোর্ট করবে---নেই কোন যানবাহন,কোনও বানিজ্য।সরকার এটা থামাতে কি প্রচেষ্টা করেছে?
৪.যে সব তরুণ-যুবা প্রতিদিন খুন-ধর্ষণ দেখছে তারা যদি বিদ্রোহ করে,বলে ‘ইন্ডিয়ান আর্মি গো ব্যাক’---আমরা কি তাদের দোষ দিতে পারি?
৫.কার্ফিউ তুলে নেওয়ার বা আফস্পা(AFSPA) লাঘব করার সমস্তরকম আশ্বাস ক্রমশই পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে--- কেন?
৬.ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাজ আসলে কী? মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া,নাকি যথেচ্ছ খুন,ধর্ষণ,লুট চালিয়ে যাওয়া?
৭.সেনাপ্রধান বলেছেন(খবর ১৫.৯.১০) ‘এই আইন না থাকলে আমাদের কাজ করা খুব কঠিন হবে’। সেনাপ্রধান কি সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক—কোথায় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে বা নেই? ওঁর অনুমতির কেন প্রয়োজন?
৮.আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার কি একবার পারেন না একটু সদয় হয়ে শক্ত হাতে ও দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে কাশ্মীর থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে?
আমরা চাই কাশ্মীর সমস্যার শীঘ্র সমাধান। আমরা ভারত সরকারের এই অক্ষমতার তীব্র নিন্দা করি।২০ বছরটা অনেক বেশি সময়। শেম্! শেম্।
যদি দমনপীড়নই একমাত্র উপায় হয় তাহলে কাশ্মীর দখলে রাখার যুক্তি কী? দেশ তো আর কিছুটা ভূখন্ড আর সীমানা নয়। দেশ তো মানুষে তৈরি।যাঁরা আমাদের এই আবেদন পড়ছেন,আমাদের আবেদনে যোগ দিন,অনুরোধ।
আসুন সবাই চাই কাশ্মীরের মানুষদের একবারে স্বাধীনতা দিতে,যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারে।
চিন্তা করুন সেইসব শিশুদের কথা,যারা গত কুড়ি বছরে কাশ্মীরে জন্মেছে। তারা কি তাদের হারানো শৈশব,যৌবন ফিরে পাবে? অবশ্য যদি বেঁচে থাকে।
নিজেকে প্রশ্ন করুন মাননীয় মনমোহন সিং,এর জন্য কে দায়ী?
---সুমিত্রা পদ্মনাভন,সাধারণ সম্পাদক,হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন
(সারা পৃথিবীর সমস্ত সদস্যদের তরফ থেকে)
২৭৮ বার পঠিত ২ ০
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর
১. ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:২৬ ০
উড়োজাহাজ বলেছেন: আসলে মানুষ মানুষ হয়ে এই ঘৃণিত কাজগুলো কেন করে? কী লাভ মানুষ হয়ে মানুষ মারার মাঝে? যে হত্যা করছে সে যেমন অনুভূতিপ্রবণ মানুষ আর যে মরছে সেও তো তারই মত অনুভূতিপ্রবণ মানুষ।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১৯ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠকবন্ধু উড়োজাহাজ,
আপনার সহজ-সুন্দর মন্তব্য’র জন্য ধন্যবাদ! আপনার মতো এই অপ্রতিরোধ্য প্রশ্নগুলি আমারও। জানি না,মানুষ নামের এই অমানুষগুলি কবে মানুষ হবে!?
২. ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৬ ০
েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: কবি বলেছেন,
পাগলের সুখ মনে মনে ,
রাইত হইলে তারা গুনে ।।
কবি উপরোক্ত কবিতায় একটি বিশেষ শ্রেনীর পাগলের বৈশিষ্ট্য বর্ননা করেছেন।
কি সেই বৈশিষ্ট্য?
এদের কথাবার্তা মোটামুটি স্বাভাবিকই থাকে।শুধু তারা কল্পনার জগতে বাস করে ,আর যা দেখে মুলতঃ সবই তার দাবী করে।ভাবটা এমন গোটা দুনিয়ারই বাদশাহ্ সে।রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরায়। রাস্তায় ছদ্মবেশে বেড়াছ্ছে প্রজাদের অবস্হা দেখার জন্যে। এ ভাবের জগতে থাকার কারনে সারাদিন সে খুব সুখে থাকে।ভাবতে থাকে রাতের বেলা সে তার রাজপ্রসাদে ফিরে যাবে।
কিন্তু যখন রাতের বেলা হয় তখন ফুটপাতে শুয়ে আকাশের তারা গুনে।
এই হইলো Mango peaple....। আমরা ৫ বছরে একবার কোন একটা মার্কায় সীল মারার সুযোগ পেয়ে ঐ পাগলের মতো নিজেকে দেশের মালিক মনে করি।বাকি ৫ বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।
Click This Link
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৩০ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠকবন্ধু, ফেরারী এই মনটা আমার,
আপনার এই অসাধারণ মন্তব্যটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! আপনার লেখা শেষের অংশটি বিশেষভাবে মনে রাখার মতো--- ‘আমরা পাঁচ বছরে একবার কোন একটা মার্কায় সীল মারার সুযোগ পেয়ে ঐ পাগলের মতো নিজেকে দেশের মালিক মনে করি। বাকি পাঁচ বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।’
৩. ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৬ ০
েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: কবি বলেছেন,
পাগলের সুখ মনে মনে ,
রাইত হইলে তারা গুনে ।।
কবি উপরোক্ত কবিতায় একটি বিশেষ শ্রেনীর পাগলের বৈশিষ্ট্য বর্ননা করেছেন।
কি সেই বৈশিষ্ট্য?
এদের কথাবার্তা মোটামুটি স্বাভাবিকই থাকে।শুধু তারা কল্পনার জগতে বাস করে ,আর যা দেখে মুলতঃ সবই তার দাবী করে।ভাবটা এমন গোটা দুনিয়ারই বাদশাহ্ সে।রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরায়। রাস্তায় ছদ্মবেশে বেড়াছ্ছে প্রজাদের অবস্হা দেখার জন্যে। এ ভাবের জগতে থাকার কারনে সারাদিন সে খুব সুখে থাকে।ভাবতে থাকে রাতের বেলা সে তার রাজপ্রসাদে ফিরে যাবে।
কিন্তু যখন রাতের বেলা হয় তখন ফুটপাতে শুয়ে আকাশের তারা গুনে।
এই হইলো Mango peaple....। আমরা ৫ বছরে একবার কোন একটা মার্কায় সীল মারার সুযোগ পেয়ে ঐ পাগলের মতো নিজেকে দেশের মালিক মনে করি।বাকি ৫ বছর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি।
Click This Link
৪. ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩ ০
সিদ্ধার্থ. বলেছেন: আপনার মতো এক চক্ষু মানুষের জন্য আমার কুইজ -
Click This Link
যদি না বলতে পারেন ,তবে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করবার মতো নুন্যতম জ্ঞান আপনার নেই ।
৫. ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: সিদ্ধার্থবাবু,
আপনার জ্ঞানসুচক মন্তব্য’র জন্য ধন্যবাদ! আপনি কোনো লিংক না দিয়ে,সুন্দর মনোভাব নিয়ে সরাসরি আলোচনা করুন।আপনার নিজের যুক্তি দেখান।আমি আপনার মতো কোনও জ্ঞান-সাধু নই। আলোচনার আগে,শুধু জেনে রাখুন-- কাশ্মীর কখনো পরাধীন ছিল না,ইংরেজ রাজত্বেও নয়।একটি স্বাধীন দেশ (কাশ্মীর) কিভাবে ভারতীয় চক্রান্তের শিকার হ’ল,মুক্তমনে জানার চেষ্টা করুন। ‘সিদ্ধার্থ’ নাম হলেই বুদ্ধ (জ্ঞানী) হওয়া যায় না। আপনি আপনি আমাকে একচোখো বলেছেন তার উত্তরে আপনাকেই প্রশ্ন করিিআপনার ছবিতে কিন্তু একচোখই দেখা যাচ্ছে। তাহলে আপনি কি নিজের কথাই বলেছেন? এবার আমার দৃষ্টিভঙ্গীর কথা শুনে রাখুন। আমি সারা পৃথিবীর মানুষকে মানুষ বলেই চিনি,জানি--না হিন্দু না মুসলমান--না জৈন না পারসিক-- না ইহুদী না খৃস্টান। আপনি আমার অন্যান্য ওয়েবসাইটে লেখাগুলি পড়লে,তবেই বুঝতে পারবেন। বকলম.কম-এ আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাই।আরও জেনে রাখুন,আমি যেখানে থাকি,সেটি ভারতীয় উপমহাদেশের একটি মডেল বা প্রতিরূপ। তাই কেমন দৃষ্টি থাকলে সব মানুষকে চেনা যায়,তা’ বলাই বাহুল্য। সুন্দর সংযত ভাষায় লিখুন,আমার কাছ থেকে সদুত্তর পাবেন আশা করি। আবারও বলি কোনও লিংক দেখিয়ে নয়,নিজের ভাষায় এখানেই লিখুন। পাঠক-বন্ধুরা কাশ্মীরের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন।..শুভেচ্ছা রইল--ভাল থাকুন!!.. আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে রইসউদ্দিন গায়েন।
৬. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭ ০
সিদ্ধার্থ. বলেছেন: কথার মারপ্যাচ করে লাভ নেই ।আপনি সাম্প্রদায়িক না অসাম্প্রদায়িক জেনে লাভ নেই ।প্রসঙ্গ যখন কাশ্মীর নিয়ে তখন আপনি কতটা এই নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তা প্রশ্নবোধক ।
যেমন -
১)আপনি জানেন কিনা জানি না -কাশ্মিরে এক সময় শিখেরা থাকত ।তাদের বলপূর্বক তাড়ানো হয়েছে ।আপনার পোস্টে তার উল্লেখ নেই কেন ?
২)কাশ্মিরে ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা নির্যাতনে প্রায় ৫ লাখের বেশি হিন্দু পন্ডিত উদ্বাস্তু হয়েছে ।যা নিজে দেশে উদ্বাস্তু হওয়ার মধ্যে রেকর্ড।।আপনার পোস্টে তার উল্লেখ নেই কেন ?
৩)"লা ইলিহা ইল্লিলাহা ....কাশ্মীর হঙ্গে হামারা "এটা জাতীয়তাবাদী স্লোগান না ধর্মীয় মৌলবাদী ?
৪)কাশ্মিরে আর্মি কেন অবস্থান নিয়েছিল জানেন ?কারণ তার আগে ৫০,০০০ এর বেশি হিন্দু কে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ।(১৯৮৫-এখন পর্যন্ত ) আপনার পোস্টে তার উল্লেখ নেই কেন ?
৫)আপনি কি জানেন কাশ্মীর নাম টা কথা থেকে এসেছে ?ঋষি কাশ্যপ এর নাম থেকে ।
৬)"কাশ্মীর কখনো পরাধীন ছিল না,ইংরেজ রাজত্বেও নয়।একটি স্বাধীন দেশ (কাশ্মীর) কিভাবে ভারতীয় চক্রান্তের শিকার হ’ল,মুক্তমনে জানার চেষ্টা করুন।"
আপনার জানা নেই -ভারত যখন স্বাধীন হয় তখন ভারতে ৫৫৫ টা স্বাধীন রাজা ছিল ।তারমধ্যে কাশ্মির ও ছিল ।আপনি কি ওই ৫৫৫ টা রাজার স্বাধীনতা না চেয়ে শুধু কাশ্মীরের কেন চাইছেন ?
৭)আমার পোস্টে দেখানো হয়েছিল যে কাশ্মিরে থাকা শিয়া রাও এখন আর সুরক্ষিত নয় ।অবস্থা এতটাই খারাপ যে তারা "মুসলিম বিদ্বেষী "বলে খ্যাত নরেন্দ্র মদির কাছে সাহায্য চাইছে ।
এতগুলি প্রশ্নের মাঝে আপনি শুধু ৪ আর ৬ নাম্বারের উত্তর দিন ।তাহলেই হবে ।
৭. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: ধন্যবাদ,সিদ্ধার্থবাবু--আপনার প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য! এই মুহূর্তে আমার হাতে সময় কম;তাই বিস্তারিত আলোচনায় যেতে পারছি না।সংক্ষেপে বলবো--555 টি রাজ্য-রাজা সম্পর্কিত বিষয়টি কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল বিষয় নয়।আর এই সংবেদনশীলতার একটি মূল কারণ,ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হওয়া,যা ভারতীয় উপ-মহাদেশের জন্য শুধু দুর্ভাগ্য নয়,অভিশাপ।আর তারই ফলস্বরূপ যা হচ্ছে,যা ঘটছে তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। হিন্দু,মুসলিম,শিখ,ইহুদির কথা নয়,মানুষের কথা বলুন। কাশ্মীর প্রসঙ্গে আমার পড়াশোনার কথা তুলেছেন,তার জন্য ধন্যবাদ। আমি আর কথা না বাড়িয়ে একটি ঐতিহাসিক দলিল পেশ করছি।তবে মনে রাখতে হবে এটি একটি দীর্ঘ পরিক্রমা।আশা করি আপনি আমার সঙ্গে সঙ্গেই থাকবেন।মাঝ পথে আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন না।আপনাকে প্রকৃত বন্ধু ভেবেই এগিয়ে যেতে চাই। শুরু করা যাক তাহলে আমাদের অজানাকে জানার যাত্রা:--
কাশ্মীর সমস্যা:একটি ঐতিহাসিক দলিল
[সৌজন্যে:স্বাধীনতার পরে ভারতের জ্বলন্ত সমস্যা(পৃ:৮৮---১৪৫)—প্রবীর ঘোষ]
“আমি আত্মহত্যাকে অন্যায় মনে করিনা,
আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকেও না,
নারী-পুরুষের প্রেমময় অসামাজিক সম্পর্ককে
অশ্লীল ভন্ডামি মনে করি না,
বৈষম্য জিইয়ে রেখে যারা জাতীয় সংহতির কথা বলে
তাদের ভন্ডামি ও অশ্লীলতা দেখলে মাথায় খুন সওয়ার হয়!”---পারভীন সুলতানা
দেশপ্রেম যখন পণ্য
বড় অসময়ে এ-লেখায় হাত দিয়েছি?নাকি এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়?
“যুদ্ধের খবর পাবলিক দারুণ খাচ্ছে।প্রায় প্রতিটি পত্রিকারই বিক্রি বেড়ে চলেছে হু-হু করে।এই সময় অন্য খাবার খাওয়ানো মুশকিল”।জুনের মাঝামাঝি নিজ পত্রিকা দপ্তরে বসে বলছিলেন কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক।
এলাহাবাদ থেকে উড়ে কলকাতায় এসেছিলেন হিন্দি ম্যাগাজিনের এক বড় প্রকাশক।উদ্দেশ্য—এই কার্গিল যুদ্ধের বাজার থাকতে থাকতে একটা বাংলা দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।যুদ্ধ আজ প্রচার মাধ্যমগুলোর কাছে পণ্য।যুদ্ধে মৃত সেনারা আজ পণ্য।ভারত-পাকিস্তান দু-দেশের প্রচার মাধ্যমই তাদের নিহত সেনাদের বীরত্ব-কাহিনী,দেশের জন্য আত্মত্যাগকাহিনী প্রচার করে দু-দেশের মানুষদের মধ্যে অন্তসারশূন্য দেশপ্রেমের আবেগের বান ডাকাচ্ছে।যুদ্ধ তহবিলে বিয়ের কনে সব গয়না দিয়ে দিচ্ছেন,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুতো পালিশ করা রোজগার তুলে দিচ্ছেন,চাকুরেরা একদিনের মাইনে দিয়ে দিচ্ছেন,খেলোয়াড়-গায়ক-গায়িকা,সিনেমার নায়ক-নায়িকারা নিজের নিজের দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াতে ছুটে যাচ্ছেন অগ্নিগর্ভ সীমান্তে।দু’দেশের একই চিত্র।
বিয়ের কনে থেকে ছাত্র সবাই যে,আবেগে ভাসতে ভাসতে এমনটা করে ফেলে,তা’ নয়।অনেকে এই সুযোগে চমক দিতে চায়।ছাপোষা চাকুরেদের চাওয়া,না চাওয়ারও পর অবশ্য মাইনে কাটা নির্ভর করে না।আর এই সামান্য টাকায় যুদ্ধের খরচের হাজার ভাগের একভাগ না উঠলেও দেশপ্রেমকে তেজি করার ব্যাপারটা মন্দ জমে না।চাকুরেদের অবস্থাটা কিল খেয়ে কিল হজম করার মত।পারফর্মারদের কাছে প্রায়শই এই যুদ্ধ,এই মৃত্যু-পণ্য।যাঁরা মরেছেন তাঁরা দেশপ্রেমের জন্য না মরলেও চাকরির জন্য মরেছেন।মানুষ মরছে,মারছে মানুষই।ওদেশের সেনা মরলে এদেশের মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ছে।এদেশের সেনা মরলে ওদেশের মানুষের রক্তে বীরত্ব ছলাৎ ছলাৎ করে উঠছে।কি ভয়ঙ্কর অমানবিক ব্যাপার!
এরা কি সকলেই দেশপ্রেমিক?দেশপ্রেম মানে কি সরকারের পক্ষে প্রশ্নাতীত আনুগত্য?অন্যরকম হলেই দেশদ্রোহী? ‘দেশপ্রমিক’ ও ’দেশদ্রোহী’ চিহ্ণিত করবে কারা?আপাদমস্তক ধান্দাবাজী ও দুর্নীতিতে ডুবে থাকা রাজনীতিকরা? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও যে দেশের শতকরা পঞ্চাশভাগ মানুষ পানযোগ্য জলটুকু পায়না,শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেনা,যে দেশের তিরিশভাগ মানুষের মাথার ওপর চাল নেই,প্রতিদিন এক বেলা ভাত বা রুটি জুটলেই যথেষ্টর বেশি,সে দেশের মানুষ যদি বলে, “ভাত দে হারামজাদী,নাইলে মানচিত্র ছিঁড়ে খাবো”---তবে তারা কি দেশদ্রোহী বলে চিহ্ণিত হবে? শিক্ষার সুযোগ-বঞ্চিত ক্ষুধার্ত মানুষ জানেনা,কার্গিল খায়, না মাথায় মাখে।ওরা জানে না,কারণ পত্রিকা পড়া বা টি.ভি দেখার মত বিলাসিতা করা সুযোগ ওদের নেই।বঞ্চিত শোষিত মানুষদের অধিকার অর্জনের লড়াইকে আমরা কি দেশদ্রোহিতা বলবো? যারা দারিদ্রসীমার নীচের বঞ্চিত মানুষগুলোকে মিথ্যে আশার বাণীতে ভুলিয়ে শোষণপ্রক্রিয়াকে গতিশীল রেখেছে,সেই দুর্নীতির পাঁকে গলা পর্যন্ত ডুবে থাকা রাজনীতিকরাই কি ঠিক করে দেবে ‘দেশপ্রেমিক’ ও ‘দেশদ্রোহী’র সংজ্ঞা?
দেশ মানে তো মাটি-নদী-পর্বত নয়;মানুষকে বাদ দিয়ে দেশ হয়না।দেশপ্রেম মানে দেশের মানুষের প্রতি প্রেম।নাগরিকদের অধিকার লাভে বঞ্চিত মানুষদের প্রতি প্রেম।দেশপ্রেমের এই সংজ্ঞাটিকে ও ছকটিকে মাথায় রাখলে,দেশপ্রেমিক ও দেশদ্রোহিদের চিনে ফেলা সহজ হয়।
কাশ্মীর নিয়ে বাহান্ন বছর(এই লেখার সময় পর্যন্ত)ধরে ভারত-পাক যুদ্ধ দফায় দফায় কম হলো না।এ এক ভয়ঙ্কর সমস্যা।ভারত-কাশ্মীর-পাকিস্তানের আত্মঘাতী সমস্যা।“যুদ্ধ নয়,শান্তি চাই”---শুধুই কি শ্লোগানের জন্যেই শ্লোগান হয়ে থাকবে?নাকি শান্তি আনতে আমরা দু-পক্ষই আন্তরিক হবো?.........
কাশ্মীর---তুমি কার?
পঞ্চাশ বছরের ওপর ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক ও উত্তেজনা জীইয়ে রেখেছে।কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভারত-পাক উত্তেজনা ও ছোট-বড় যুদ্ধ চলবেই।যে সব রাজনৈতিক চিন্তাবিদ থিঙ্কট্যাঙ্করা ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হয়ে ওঠার পর ঘোষণা করেছিলেন,এতে করে দু-দেশের মধ্যে যুদ্ধ সম্ভাবনার অবসান ঘটল---তাঁদের সমস্ত চিন্তা-ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণ করেই দু-দেশ এখন যুদ্ধে উত্তাল।কারণ সেই কাশ্মীর সমস্যা।দু-দেশের রাজনীকিতরা ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থেই আমজনতার কাছে দেশপ্রেমিক সাজতে চায়।এইসব সাজা দেশপ্রেমিকরা কোনও দিনই কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে না,করতে পারবেনা।কাশ্মীর নিয়ে স্থায়ী সমাধানের উপায় মাত্র তিনটি।এক:দু-দেশের দখলে থাকা কাশ্মীর অংশকে সেই সেই দেশেরই অংশ বলে মেনে নেওয়া।দুই:দু-দেশের দখলে থাকা কাশ্মীরবাসীরাই ঠিক করুক তাদের ভবিষ্যৎ,তারা স্বাধীন থাকবে,অথবা ভারত বা পাকিস্তানের রাজ্যবাসী হিসেবে থাকবে---তা সে স্বায়ত্বশাসন নিয়ে হোক,কী রাজ্য হিসেবেই হোক।তিন:কাশ্মীরবাসীদের স্বাধীনতার দাবি মেনে নেওয়া।...(চলবে)
৮. ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯ ০
সিদ্ধার্থ. বলেছেন: আপনাকে করলাম কয়েকটা প্রশ্ন করলাম আর আপনি প্রবীর ঘোষের প্রবন্ধ কপি পেস্ট করে দিলেন ।পারলে পয়েন্ট ধরে ধরে আলোচনা করেন ।
আর আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি ,প্রবীর ঘোষ একজন নাস্তিক ,সে সমস্ত ধর্মের ,হ্যা ইসলামেরও গালমন্দ করে ।
৯. ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৪ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: আপনার বিজ্ঞতার প্রশংসা করছি।তবে একটা কথা বলে রাখি,আস্তিক-নাস্তিক প্রসঙ্গে না যাওয়াই ভাল। আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন প্রচলিত ধর্ম-বিশ্বাসের জন্য শুধু কাশ্মীর নয়,আমরা হিন্দু-মুসলিম মার্কা মিথ্যে পরিচয়ে পরস্পর হিংসায় উন্মত্ত।আপনার বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় 6নংপ্রশ্নের উত্তর তো দেওয়াই হয়েছে। অন্য প্রশ্নটি কাশ্মীর নিয়ে।নামে কী এসে যায়? হিন্দু শব্দটি সিন্ধু থেকে এসেছে--তাতে কী হ’ল? আর এসব আলোচনার অর্থ আমাদের সময়ের অপচয়। কাশ্মীর প্রসঙ্গে প্রথমেই আমাদের স্বীকার করতে হয়, কাশ্মীর কারও নয়;না ভারতের না পাকিস্থানের। আমার মূল বক্তব্য সেটাই।আপনার মূল প্রশ্ন ছিল,555 টি স্বাধীন রাজার কথা না বলে,শুধু কাশ্মীরে কথা কেন? তাইতো? আমি তো বলেছি।অন্যান্য রাজ্য-রাজার ইতিহাস কাশ্মীরের মতো সংবেদনশীল বিষয় নয়। অন্যান্য রাজ্য-রাজা-প্রজা স্বাধীন ভারতে অন্তর্ভুক্তি মেনে নিয়েছে।কিন্তু কাশ্মীরের আমজনতা তা’ মেনে নেয়নি।আর এটাই কাশ্মীর অশান্তির মূল কারণ।ভারতের কাশ্মীর-জবরদখল, সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। এই সহজ ইতিহাসের কথাটি মেনে নেওয়াই ভাল। আর সেই সঙ্গে একথাও বলতে হয়,কাশ্মীরের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়াই ভাল। একথা আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে আশা করি,সম্রাট আলেকজান্ডার রাজা পুরুকে বন্দী করে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,তিনি কেমন ব্যবহার/আচরণ প্রত্যাশা করেন।উত্তরে পুরু রাজা বলেছিলেন: ‘রাজার প্রতি রাজার যেমন ব্যবহার হওয়া উচিত,তিনি তেমনই প্রত্যাশা করেন।’ এই জবাবে খুশি হয়ে আলেকজান্ডার পুরুর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কাশ্মীরের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিলে ভারত যে সত্য ও অহিংসার দেশ তা প্রমাণিত হবে। আশা করি, আপনি আমার সঙ্গে একমত হবেন। আর যদি আপনার পক্ষে সমর্থন করা সম্ভব না হয়,আমার কিছু বলার থাকবে না।...ধন্যবাদ,ভাল থাকবেন! আন্দামান থেকে রইসউদ্দিন গায়েন।
একুশের ইতিহাস
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অমর একুশ বারে বারে আসে ফিরে---
পদ্মা থেকে গঙ্গা যমুনা তীরে।
হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী,
গান্ধার (কান্দাহার) থেকে ব্রহ্মদেশ---
সিন্ধু জোয়ারে হিন্দোল জাগে,
ভাগীরথীতে তারই রেশ!...
পাক নাম নিয়ে পবিত্র হও,জিন্না সাহেব বলে---
ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর থাবা, ছলে-বলে-কৌশলে।
পাক নাম শুধু নিলেই হবে না,ভাষা বদলানো চাই---
ঊর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা,বাংলার স্থান নাই।
বীর বাঙালিকে ভুলে গিয়ে ওরা, শাসনদন্ড হাতে--
মারণের বাণী মুখে নিয়ে ফেরে,সকাল-বিকাল-রাতে।
বাঙালির পণ,জাগে প্রতিক্ষণ, মাতৃভাষার তরে--
যায় যাক প্রাণ,হারাব না মান,এবার নতুন ভোরে।
বাহান্ন (বায়ান্ন) সালের একুশে সকাল,আইনসভার দিন
শাসকগোষ্ঠীর রক্ত-চোখে, স্বপ্ন হ’ল রঙিন।
আইনসভার চোখে-মুখে-বুকে,শুধুই ঊর্দুভাষা
বাঙালিকন্ঠে বিদ্রোহধ্বণি---আমার বাংলাভাষা!
বাংলা আমার কর্মভূমি,জন্মভূমি মা--
(তার) আঁচল ধ’রে চলতে শিখেছি,বলতে শিখেছি মা।
বাংলা আমার রূপসী মা,জীবন-নদীর চর।
বাংলা আমার বাঁচার আশা স্বপ্ন সুখের ঘর।
ভালবাসি মোরা রাম ও রহিম,তাই তো শাসকদল--
ভেঙে দিতে চায় ধর্মদ্বন্দ্বে ভাষার ঐক্যবল।
একুশের বেলা তিন ঘটিকায়,হিংস্র বুলেট-গুলী
বাঙালির খুনে লাল হয়ে গেল,ঢাকার রমণা-ধুলি!
বাংলার মাটি রঞ্জিত হ’ল,শহিদের তাজা খুনে
স্মৃতি-স্তম্ভ হ’ল নির্মাণ,রমণা রণাঙ্গনে।
খালি হাত,আর বুলেটের গুলি এ কেমন রণনীতি?
মহাভারতের ইতিহাসে নেই,এমনই ধর্মনীতি।
স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে দিল ওরা,আবার চালালো গুলী
আবার মারলো চল্লিশটি প্রাণ, দানব দশমাথা তুলি’।
রফিক,সালাম বরকত আর জাব্বার আজও আসে--
এই বাংলা নদীপ্রান্তর, উদার আকাশ ও বাতাসে।
রক্ত দিয়ে যে বাংলা গড়েছি,পেয়েছি মধুর ভাষা
শত যুগ ধ’রে হারাব না আর, আমার মাতৃভাষা!!
২২ বার পঠিত ০ ০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪১ ০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: রক্ত দিয়ে যে বাংলা গড়েছি,পেয়েছি মধুর ভাষা
শত যুগ ধ’রে হারাব না আর, আমার মাতৃভাষা!!
সুন্দর
২. ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:১২ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সেলিম আনোয়ার,আপনার সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য!
আন্দামান থেকে বলছি: প্রথম পর্ব
৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আন্দামান থেকে বলছি: প্রথম পর্ব
গত শতাব্দী’র নয়ের দশক থেকেই ভাবছিলাম আন্দামান সম্পর্কিত স্বীয় অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করব, কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে উঠতে পারেনি। ইতিমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি সূত্রে প্রাপ্ত আন্দামান সম্পর্কিত তথ্যসমৃদ্ধ অনেক বইপত্র পড়ার সুযোগ আমার আমার হয়েছে। কিন্তু সেসব লেখার মধ্যে তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি রূপসী আন্দামানের অপরূপ সৌন্দর্য ও করুণ ইতিহাস। ঘন নীল সমুদ্র-ঘেরা, সবুজ পাহাড়ে সাজানো নিবিড় বনভূমির সংমিশ্রণে এ যেন এক অজানা রূপকথার দেশ। যতই দেখি,এর মধ্যে ততই রহস্যাবৃত,পুঞ্জীভূত অরূপরতনের সন্ধান পাই।
আন্দামানে দুটি মাত্র মহাবিদ্যালয়,তাও আবার পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। একসময় পোর্টব্লেয়ার-স্থিত মহাবিদ্যালয়টিতে বাংলা-বিমুখ চক্রান্তকারীদের কূটকৌশলে বাংলা ভাষা বিতাড়নের অভিসন্ধি চলছিল। ব্যাপারটি যখন আমার গোচরে আসে, আমি কলম ধরতে বাধ্য হই। তীব্র প্রতিবাদ নিয়ে প্রকাশিত হয় আমার ‘মাতৃভাষা’-শীর্ষক প্রবন্ধটি,একাধিক স্থানীয় কাগজে। মনে পড়ে, ‘বাকপ্রতিমা’-র সম্পাদকীয়তে সেটিকে ‘অত্যন্ত সংবেদশীল লেখা’ বলে ইতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছিল। লেখাটি পাঠ করে খুব জোরালো সমর্থন ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন আলোচ্য মহাবিদ্যালয়ের তৎকালীন বাংলা-বিভাগীয় প্রধান ড: অবনী সিংহ মহাশয়।
৫৭২ টি ছোটবড় দ্বীপ ও প্রস্তরখন্ড’র সমাহারে গঠিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ,যার ক্ষেত্রফল ৮,২৪৯ বর্গ কিলোমিটার। ২০০১ খৃস্টাব্দ’র জনগণনানুসারে ৩.৫৬ লক্ষ মানুষের বসবাস এই দ্বীপপুঞ্জে,যার মধ্যে কমবেশি সত্তর হাজার জন মানুষ উপভোগ করেছে তার নির্মল মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। দ্বীপপুঞ্জ’র প্রাণকেন্দ্র পোর্টব্লেয়ারে রয়েছে অগ্নিযুগের বীর সন্তানদের পদধূলি-ধন্য সেলুলার জেল, যার কালকুঠুরিতে কান পাতলে আজও হয়তো শোনা যায় উল্লাসকর দত্ত’র মতো বহু স্বাধীনতা-সংগ্রামীর মর্মভেদী চিৎকার। তাঁদের বিদেহী আত্মার আকুল আহ্বান,করুণ দীর্ঘশ্বাস আজও আমি অনুভব করি হৃদয় দিয়ে। প্রতিটি সন্ধ্যায়,ধ্বনি ও আলোর কুহেলীমায়া প্রতিটি দর্শক-শ্রোতাকে করে তোলে বেদনাহত ও আবেগমথিত।
প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটারের ভৌগোলিক দূরত্ব থাকলেও, বাংলা ভাষার মুখ্য ধারা থেকে আন্দামান কিন্তু খুব একটা দূরে নেই। ‘বাকপ্রতিমা’র দৌলতে আজ আন্দামানে সাহিত্যচর্চার সুরভি পৌঁছে গেছে,শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়,ভারতবর্ষের বহু শহরে যেখানে বাঙালির বসবাস রয়েছে। হলদিয়া’র বিশ্ব বাংলা কবিতা উৎসবে আমরা নিয়মিত হাজির থেকেছি,বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’র ডালি নিয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি বাংলাদেশের জাতীয় কবিতা উৎসব মঞ্চে,শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি ঢাকার ভাষা-শহীদ বেদীমূলে।
বিগত ১৩,১৪,১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯,দ: ২৪ পরগনা জেলার ঢোলা হাই স্কুল(এইচ.এস)-এর প্লাটিনাম জুবিলি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে, একজন প্রাক্তন ছাত্র সম্মানার্থে সভাপতির আসনে কিছুক্ষণ উপবিষ্ট থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। সেখানে লক্ষ্য করেছি আন্দামান সম্পর্কে জানার জন্য মানুষের কী অপরিসীম কৌতুহল! শারীরিক অসুস্থতার জন্য, অপূর্ণতার বেদনাময় স্মৃতি নিয়ে,আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে আন্দামানে। ফেলে আসা আমার সহপাঠী বন্ধুবর্গ, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী ও নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের,আন্দামান সম্পর্কে জানার অপরিসীম আগ্রহ আমাকে বাধ্য করেছে ‘আন্দামানের পাতায়’ লিখতে। তাই, শুরু হ’ল এই ‘আন্দামানের পাতা’।
২২৮ বার পঠিত ৩ ০
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর
১. ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৬ ১
ভালো ছেলে ২০১০ বলেছেন: আপনি পোর্টব্লেয়ারের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আপনি বাংলাভাষি। আপনার ব্লগ পেজ এ বাংলাদেশের পতাকা। লেখালেখিতে ভারতের প্রসঙ্গই মুখ্য। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি একজন বাংলাদেশি যিনি পেশাগত কারণে অনেক দিন আন্দামানে অবস্থান করছেন। ভুল হলে সংশোধন করে দেবেন।
আন্দামান নিয়ে আমার প্রচুর আগ্রহ। আমার খুব জানার ইচ্ছা- আন্দামানের স্থানীয় আঞ্চলিক বাংলা উচ্চারণ কেমন। ইন্টারনেটে প্রচুর খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। আপনার কাছে যদি কোন অডিও থাকে, প্লিজ আপলোড করবেন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। আমার খুব একটা ব্লগে বসা হয়না। যখন লেখেন, সাথে সাথে একটা মেইল করলে খুব উপকৃত হব।
মেইল আইডি
[email protected]
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১ ০
লেখক বলেছেন: পাঠক-বন্ধু ভালো ছেলে ২০১০-কে ধন্যবাদ আপনার আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য।আন্দামানের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশ থেকে এসেছেন উদ্বাস্তু হয়ে।ভারত সরকারের সহযোগিতায় তাঁরা এখন স্বনির্ভর। ভাষার উচ্চারণ-প্রসঙ্গে বলা বাহুল্য,বংশপরম্পরায় অপরিবর্তিত,যদিও বর্তমান প্রজন্মে হিন্দির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।আপনি যা কিছু জানার চেষ্টা করছেন,তা সবই আমার ধারাবাহিক লেখার মধ্যে পেয়ে যাবেন আশা করি।নিয়মিত আমার লেখা পড়ুন।ভাল থাকবেন!
২. ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৩৪ ০
শাহ আজিজ বলেছেন: আন্দামানে যাওয়ার সহজ ও ব্যয় বহুল নয় এমন পদ্ধতি লিখবেন। ওখানে যাওয়ার উপযুক্ত সময়, থাকার ব্যাবস্থা/ খরচ ও স্থানীয় ভ্রমন কোম্পানিগুলোর কথা ও লিখবেন ।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৪ ০
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠক-বন্ধু শাহ-আজিজ, আপনার আগ্রহ প্রকাশের জন্য! আন্দামানে আসার দুটো পথ আছে,জলপথ ও আকাশপথ।কলকাতা থেকে জলপথে আসার খরচ ১।জাহজের টিকিটের দাম সবচেয়ে কম প্রায় দু হাজার টাকা,জাহাজের মধ্যে খাবার খরচ আনুমানিক এক হাজার টাকা(৪/৫ দিনের খাবার জন্য।) কলকাতা থেকে আন্দামানে পৌঁছনোর সময় লাগবে কমপক্ষে ৯৬ ঘন্টা।
আর আকাশ পথে আসতে সময় লাগবে কলকাতা থেকে ২ঘন্টা।টিকিটের মূল্য কমপক্ষে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। আমি সবই কিন্তু ভারতীয় অর্থমূল্যের হিসাবে বললাম। এরপর থাকার ব্যবস্থার কথা। লজ ভাড়া কমপক্ষে ৭০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা,এবং হোটেলে খাওয়া প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। আপনি ব্যক্তিগতভাবে মোটামুটি এরকমই খরচ হবে।তবে যদি কোনো ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে বেশ কয়েকজন মিলে আসেন,তাহলে খরচ কম হবে। ট্রাভেলস এজেন্সির কথা জানেতে চেয়েছেন।এগুলি সম্পর্কে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ'র ওয়েবসাইট দেখে নির্বাচন করতে পারেন। 'আন্দামান টুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস' কমান্ড দিয়ে দেখতে পারেন। আরও কিছু জানার থাকলে লিখুন,উত্তর দেবার চেষ্টা করবো। ভাল থাকবেন!
৩. ৩১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৬ ০
মামুন রশিদ বলেছেন: আন্দামান নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থেকে লাইব্রেরী ঘেটে অনেক পুরাতন বই পড়েছি, ভারতীয় সরকারের প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট পড়েছি ।
এই লেখার মুল লেখক যদি আপনি হোন তাহলে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা । যদিও প্রথম মন্তব্যে আপনাকে নিয়ে যুক্তিসঙ্গত কারণেই কিছু প্রশ্ন এসেছে, আশাকরি সদোত্তর মিলবে ।
৪. ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:২১ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: পাঠকবন্ধু মামুন রশিদ,
ধন্যবাদ,আপনার বক্তব্য'র জন্য।ভারত সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট আমার লেখা নয়। তাই তেমন শ্রদ্ধার পাত্র আমি হতে পারলাম না।আমি নিজের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আন্দামান সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যে আমার একটি গ্রন্থ 'আন্দামান থেকে বলছি' প্রকাশিত হয়েছে।কলকাতায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বইমেলা,২০১৪ এই পুস্তকের প্রথম প্রকাশ। সেই গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ এখানে পাঠক-বন্ধুদের উদ্দেশে প্রকাশ করছি।আপনার আরও কিছু জানার থাকলে অবশ্যই লিখবেন,উত্তর পাবেন আশা করি।
৫. ২৩ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:৫১ ০
পংবাড়ী বলেছেন: আপনাকে কি দ্বীপান্তর দিয়েছে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন?
৬. ২৭ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:৪৩ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: পাঠক-বন্ধু পংবাড়ি,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য প্রকাশের জন্য! কিন্তু ভাই, হঠাৎ এমন কথা আপনার মনে কেন এল? দ্বীপান্তর-পর্ব তো বিগত ৩০-এর দশকে শেষ হয়ে গেছে।তবে আপনার রসিকতার উত্তরে বলি: দ্বীপান্তর নয়,নির্বাসন---তা'ও স্বেচ্ছা-নির্বাসন চাকরীর সন্ধানে।ভাল থাকবেন!
গুজরাত সন্ত্রাস -হিন্দুত্ব'র নগ্নরূপ(একটি প্রকাশিত রিপোর্ট)
২৫ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
গুরুচন্ডা৯ টইপত্তর
Name: কালপুরুষ
IP Address : 59.136.2.245 (*) Date:13 Jul 2013 -- 11:06 PM
গুজরাত,২০০২
অনেককিছুর মত,গুজরাট গণহত্যা’কেও দাঙ্গা বলে চালানোর চেষ্টা বিজেপি নেতারা করে থাকেন,এটাকে গোধরা কান্ডের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হিসেবে দেখানো হয়।কিন্তু,গোধরা কান্ডের অনেক আগে থেকেই সঙ্ঘ নেতারা গণহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।হিন্দুত্বের মেরুকরণে নরেন্দ্র মোদী’র অভিষেক করা দরকার ছিল,আর তার জন্য বেজন্মা সংখ্যালঘুদের রক্তপান একটি অতি আবশ্যিক প্রক্রিয়া।সম্প্রতি ৫৪১ পাতার একটি রিপোর্ট গুজরাত দাঙ্গার তদন্তকারী দল সিট এর কাছে জমা পড়েছে,যেখানে সংগৃহীত আছে বিভিন্ন পুলিস কন্ট্রোল রুমে আসা ফিল্ড অফিসারেদের সতর্কবার্তা।সেসব সতর্কবার্তায় স্পষ্টভাবে গণহত্যা পূর্ববর্তী সময়ে গৈরিক নেতাদের গতিবিধি এবং গণহত্যাচলাকালীন বিভিন্ন জায়গার ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পুলিস কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করে যাওয়া হয়েছে।এটা পরিষ্কার যে খবর পাওয়া সত্বেও উপরমহলের নির্দেশে পুলিশ চুপ করে বসেছিল।এই রিপোর্ট সর্বভারতীয় মিডিয়ার কাছে পৌঁছেছে এবং তাদের সৌজন্যে তার কিছু অংশ এখানে তুলে দেবো।
প্রথমেই বলে রাখি,গোধরা ট্র্যাজেডি না ঘটলেও গুজরাত গণহত্যা হত।গোধরা কান্ড দেশলাই কাঠির কাজ করেছিল।বারুদ কিন্তু আগে থেকেই যোগাড় করা হচ্ছিল।
আমেদাবাদে দুটি কেন্দ্রীয় পুলিস কন্ট্রোলরুম ছিল ২০০২ সালে।তার একটি ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্রে শাহীবাগে।নারোদা আর গুলবার্গ সোসাইটি,যেখানে ২৮শে ফেব্রুয়ারী ১৫০ জন মুসলিম আবাল-বৃদ্ধ বনিতা কে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়,তা সেই পুলিস কন্ট্রোলরুম থেকে ৬ কিমি ব্যসার্ধের মধ্যে অবস্থিত।
দ্বিতীয়টি,মানে,রাজ্য পুলিস কন্ট্রোলরুম,গান্ধীনগরে পুলিস ভবনে অবস্থিত।নারোদা-গুলবার্গের ঘটনা ঘটার আগে রাজ্য পুলিস কন্ট্রোলরুমে আমেদাবাদে গৈরিক বাহিনীর সশস্ত্র জমায়েতের খবর ছিল।কিন্তু কোনো অদৃশ্য অঙ্গুলিহেলনে তারা চুপ থেকে রাজধর্ম পালন করছিলেন।
আরেকটি তৃতীয় কন্ট্রোলরুম ছিল,যেটি আদতে স্টেট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো’র হেড কোয়ার্টার,এবং তা অবস্থিত ছিল ওই পুলিস ভবনেই।২৭ তারিখ থেকেই গোটা রাজ্যের ফিল্ড পুলিস দের কাছ থেকে ভিএইচপি,বজরং দল,প্রমুখ উগ্র দক্ষিণ পন্থী দলের সশস্ত্র জমায়েত এবং গতিবিধি সংক্রান্ত অসংখ্য বার্তা আসতে থাকে।কিন্তু,কোনো অজ্ঞাত কারণে রাজ্য পুলিসের কর্তারা সতর্কবার্তা পাওয়া প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ন্যুনতম চেষ্টা করেন নি।সন্দেহ এখান থেকেই শুরু হয়।
গোধরা ট্র্যাজেডি’র কয়েকঘন্টা পরেই গুজরাতে ভিএইচপি’র ইউনিটের তিন বর্ষীয়ান নেতা,জয়দীপ প্যাটেল,দিলীপ ত্রিবেদী আর কৌশিক প্যাটেল মিলে একটি স্টেটমেন্ট ইস্যু করেন,যাতে রাজ্যওয়াড়ি বন্ধের ডাক দেওয়া হয় এবং কিছু উত্তেজনাকর বাক্য বলা হয় যা সহজেই ‘মব’ কে ‘ভায়োলেন্ট’ করে তুলতে পারে।২৭ শে ফেব্রুয়ারি,রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে একজন স্টেট লেভেল অফিসার এই স্টেটমেন্ট সংক্রান্ত সতর্কবার্তা স্টেট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর কাছে পাঠান(February 27, 2002.Time: 8:38 pm.State Intelligence Bureau Message No: Page No. 188 (Annexure III, File XVIII,D-160).
এবং তা যথারীতি অগ্রাহ্য করা হয়।২৭ তারিখ বার্তা পেয়ে সতর্ক হলে নারোদা-গুলবার্গের নারকীয় হত্যাকান্ড নাও ঘটতে পারতো।আমার কাছে প্রত্যেকটি মেসেজের দিন তারিখ,সময়,প্রেরক ও প্রাপক,পেজ নাম্বার ,অ্যানেক্সচার,ফাইল আর ডকুমেন্ট নাম্বার আছে।সবকটি এখানে দিলে অতি দীর্ঘ হয়ে যাবে।মেসেজগুলি থেকে এটা পরিষ্কার যে গুজরাত প্রশাসনের কাছে প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের আগাম সতর্কবার্তা ছিল,তা সত্বেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।অসহায় মানুষগুলোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে।যারা মেসেজ গুলো দেখতে চান,আমাকে ইনবক্সে মেসেজ করুন,আমি সোর্স লিঙ্ক দিয়ে দেবো।
২৭ এবং ২৮ তারিখে মুসলিমদের উপর অসংখ্য প্রানঘাতী হামলার পুলিসি বার্তা পেয়েও আমেদাবাদের পুলিস কমিশনার সিটের তদন্তকারী দলের জেরায় বলেন যে তিনি পরিস্থিতি কার্ফিউ জারি করার মত মনে করেন নি।
মেসেজগুলি তুলে ধরছি,
February 27, 2002
Time: Not Known
State Intelligence Bureau Message No: Page No. 345, Order No. 24 (Annexure III File XIX)
Sender: D.O, Ahmedabad
Recipient: Intelligence Office, Virangam (Ahmedabad)
৭৫ জন ভিএইচপি আর বজরংদল সমর্থক গোলওয়াড়া আর বীরাঙ্গাম চাল্লি’তে জমায়েত হয়েছে।পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত।
February 27, 2002
Time: 6:10 pm
State Intelligence Bureau Message: No. 531 Page No. 19 (Annexure III, File XVIII (D-160)
গোধরা থেকে বিকেল ৪.৩০ নাগাদ সবরমতী এক্সপ্রেস আমেদাবাদে এসে পৌঁছেছে।সশস্ত্র করসেবকরা খুনের বদলা খুন বলে শ্লোগান দিচ্ছে।
February 27, 2002
Time: 10:12 pm
State Intelligence Bureau Fax Message: 311/02 Page No.: D-1/ HA/Jaher Sabha/Junagadh
Sender: CID, Bhavnagar
Recipient: IG, Gujarat & Intelligence Bureau, Gandhi Nagar
ওই দিনেই রাত ১০টা ১২তে ভাবনগর থেকে সি আই ডি’র এক ইন্সপেকটর গান্ধীনগরে আইজি,গুজরাত স্টেট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো’র কাছে বার্তা পাঠান যে জুনাগড়ে সাধু সমাজ এর প্রেসিডেন্ট গোপাল নন্দ এবং স্থানীয় ভিএইচপি নেতারা হিন্দুদের বদলা নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন।সময় সন্ধে সাড়ে-সাতটা থেকে সাড়ে নটা’র মধ্যে।
২৭শে ফেব্রুয়ারি গণহত্যা শুরু হয়।
February 27, 2002
Time 17:45
State Intelligence Bureau Fax Message No 273 File XIX Annexure III
Sender: B M Mohit Anand Centre
সবরমতী এক্সপ্রেস আনন্দ রেলস্টেশনে পৌঁছায়।সেখানে করসেবকরা স্টেশনে উপস্থিত চার মুসলিম কে কোপায়।আনন্দের বাসিন্দা আবদুল রশিদ,বয়স ৬৫,তার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।বাকিদের আনন্দ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
February 27, 2002
Time: 11:59 pm
State Intelligence Bureau Fax Message: Com/HM/550/ Out No. 398
Sender: ACP, Gandhinagar Region
Recipient: IG, Gujarat & Intelligence Bureau, Gandhi Nagar
গোটা রাজ্য থেকে উন্মত্ত করসেবকদের আক্রমণের খবর আসতে থাকে,মোদাসা’র ভেদগামে ৫০ জন করসেবক স্পেশাল বাসে করে গ্রামবাসীদের উত্তেজিত করে স্থানীয় মুসলিমদের উপর আক্রমণ শুরু করে।স্থানীয় পুলিস থানাগুলো তে বারবার সাহায্যের আর্তি জানিয়েও কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি।
সিট এর রিপোর্টে ১৩৪ পাতায় পরিষ্কার বলা আছে যে শ্রী বিজয় বাড়েকা,. Under Secretary to Home Department জানিয়েছেন যে ভিএইচপি’র ডাকা ২৮ তারিখের গুজরাট বন্ধ আর ১ তারিখের ভারত বন্ধ শাসক বিজেপি সমর্থন করেছিল।
February 28, 2002
Time: 9am-10am
State Intelligence Bureau Message No: 73/02 Page 365 (Annexure III File XXI (D-166)
Sender: ACP (Intelligence) Surat
সদর চক,ভাপি টাউন এ ভিএইচপি’র দিনেশ বেহারি,বজরং দলের আচার্য ব্রম্ভট,বিজেপি’র জহর দেশাই আর আরএসএস এর বিনোদ চৌধুরি উপস্থিত জনতাকে গোধরা কান্ডের বদলা নেবার জন্য প্ররোচিত করছেন।
.
.
স্বরাষ্ট্র দপ্তরে ক্রমাগত সতর্কবার্তা পাঠানো সত্বেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।এদিকে গোধরা ট্র্যাজেডিতে নিহত করসেবকদের দেহ লোককে দেখিয়ে ভিএইচপি নেতারা যে ম্যাস হিস্টিরিয়া তৈরী করতে চেয়েছিলেন,তাতে পূর্ণ সফলতা পান।
সোলা হাসপাতালে নিহত করসেবকদের দেহগুলো আনা হয়েছিল।সেখানে ধীরে ধীরে ৬০০০ উন্মত্ত জনতার ভিড় তৈরী হয়।বিপদবার্তা যায় পুলিস সদরে।অথচ পুলিস কর্তা পান্ডে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দ্যাখেন।করসেবকদের দেহ সৎকার হওয়ার পর উন্মত্ত সশস্ত্র জনতা নারোদা-পাতিয়া,নারোদা গ্রাম আর গুলবার্গ সোসাইটি’র দিকে এগিয়ে যায়।পুলিসের কাছে এর খবর ছিল।
পিসি আর এবং এস আই বি’র রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ ছিল যে গুলবার্গ সোসাইটি আর নারোদা আক্রান্ত হতে পারে।অথচ পুলিস কর্তা পান্ডে কার্ফিউ জারি করেন বেলা ১২.৫০ এ,ততক্ষণে ১০-১৫ হাজার সশস্ত্র মানুষের জমায়েত করে ফেলেছে করসেবকরা।কাজেই,কার্ফিউ কাগজেই থেকে গেছিল।বেলা ২টো থেকে ৬টার মধ্যে ১৫০ মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়।ঘরবাড়ি লুট হয়।পান্ডে সন্ধের আগে সেখানে যাওয়ার সময় পান নি।
ফিল্ড অফিসার রা মোট তিনটে বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
Date: 28.02.02
Time: 12:15
Sender: Police Inspector CJ Bharwad To: State SIB Control Room
গুলবার্গ সোসাইটিতে মুসলিমরা বাস করে।
‘মব’ গুলবার্গ সোসাইটি ঘিরে জমা হচ্ছে।
কড়া নজর রাখা দরকার।.
Date: 28.02.02
Time: 14:50
Sender: Police Inspector CJ Bharwad To: State SIB Control Room
৩০০০ এর বেশি ‘মব’ জড় হয়ে গেছে।
টেক ইমিডিয়েট অ্যাকশন।.
Date: 28.02.02
Time: 17:00
Sender: Police Inspector CJ Bharwad To: State SIB Control Room
সমস্ত দিক থেকে ‘মব’ সোসাইটিকে আক্রমণ করে এহসান জাফরি,নারী ও শিশুদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে।ঘরবাড়ি সব লুট করা হয়েছে।
এহসান জাফরি প্রাক্তন সাংসদ।তার বাড়ি থেকে সাহায্য চেয়ে অনেকবার ফোন করা হয় পুলিস থানায়।কেউ জবাব দেয় নি।
আমি মাত্র কয়েকটা মেসেজ তুলে ধরলাম।এটা স্পষ্ট যে গুজরাত গণহত্যায় প্রশাসনের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল।আক্রমণকারীরা ভুল করে কিছু হিন্দু বাড়ি আক্রমণ করে।প্রশাসন থেকে এরপর হিন্দু বাড়িগুলোতে গেরুয়া পতাকা লাগানো হয়,যাতে নরপিশাচরা শিকার চিনতে ভুল না করে।
এত গেল,নিছক তথ্যপ্রমাণ।একটু দেখা যাক,হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা কি করেছিল।
বাচ্চা,কিশোরী,মহিলা কেউ ধর্ষণ থেকে বাঁচেনি।এদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার আগে গ্যাং রেপ করা হয়েছে।স্তন,যৌনাঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছিল।প্রেগনান্ট নারীর পেট চিরে ভ্রুণ বের করে তরোয়ালে বিঁধে নেচেছে ধর্মান্ধরা।বাচ্চাদের গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্যান্ত পোড়ানো হয়েছে।তিস্তা শেতলাবাদের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩০০ এর বেশী মেয়েকে ধর্ষণ করে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।মহিলাদের ধর্ষণ করার পর তাদের স্ত্রী অঙ্গে গেরুয়া পতাকা পুঁতে দেওয়া হয়েছে।রেণু খান্না’র লেখায় এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।
সরকারী পরিসংখ্যানে মুসলিম নিহত হয়েছে ৮০০ এর কাছাকাছি।সিদ্ধার্থ বরদারাজন,কল্পনা কান্নাবিরান,তিস্তা শেতলাবাদ,দ্য কন্সার্নড সিটিজেন্স ট্রাইবুনাল ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবীদের হিসেবে নিহতের সংখ্যা ২০০০ এর বেশী।৩০০ এর বেশী এখনও নিখোঁজ।
জামালনগরের মত কিছু জায়গাতে পালটা আক্রমণ ঘটেছিল।সরকারী হিসেবে হিন্দু মৃতের সংখ্যা ২৫৪।এর মধ্যে একটা অংশ মারা গেছে পুলিসের গুলিতে।কিছু মুসলিম পল্লী আক্রমণ করতে গিয়ে বাকিরা পালটা আক্রমণকারী মুসলিমদের হাতে।
১৯৪৬কলকাতা,১৯৪৭দিল্লী,২০০২গুজরাট...সব জায়গাতে কিছু কমন ফ্যাক্টর আছে।সব ক্ষেত্রেই প্রশাসন হত্যাকারীদের সমর্থন করে গেছে।সুরাবর্দী,বল্লভ ভাই প্যাটেল,নরেন্দ্র মোদী,এদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এতগুলো মানুষ কে বলি হতে হয়েছে।
আর একটা তথ্যও কমন,যারা মেরেছে আর যারা মরেছে,তারা প্রত্যেকেই সাধারণ মানুষ,কারুর পিতা,কারুর ভাই,কারুর সন্তান।
গুজরাত নিয়ে বেশী কথা বলেছি।কারণ,এটা সাম্প্রতিক বিষয়।আমি গণহত্যা পরবর্তী গুজরাট নিজের চোখে দেখেছি।আমার এক সহপাঠিনী ছিল।গুজরাতি।নাম আসিয়া নাসরিন।গণহত্যার কিছুদিন আগে সে বাড়ি যায়।তার বারি চারোদিয়া চক।আর ফেরেনি। আমরা সহপাঠীরা তার খোঁজ করতে গুজরাটে যাই।সেখানে খবর পেলাম,আসিয়া’কে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী নরপিশাচরা গ্যাং রেপ করে মুখে অ্যাসিড ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে।
আসিয়া আমার কেউ নয়।১৯৪৬ এর কলকাতাতে যারা খুন হয়েছিল,তারাও আমার কেউ নয়।এবং আমি মনে করিনা,এ নরমেধ যজ্ঞের প্রতিবাদ করার জন্য নিজের কাউকে হারাবার দরকার আছে।
আজ যখন নরেন্দ্র মোদী’কে জননেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়,আমার আসিয়া’র মুখ মনে পড়ে।সতেরো বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে,সায়েনটিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।
তারপর বুনো একটা রাগ শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে।
আসিয়া,তোমার দিব্যি,এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার শয়তান গুলোকে শেষ না করা অব্দি নিজেকে রেহাই দেবোনা।
এগারো বছর ধরে সেই শপথ রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ লড়াই-এ আপনাদের আহ্ববান রইলো।
________________________________________
Name: দ
IP Address : 24.97.186.26 (*) Date:13 Jul 2013 -- 11:23 PM
আপনার নিকটি সার্থক।
করতে তো চাই কতকিছুই। কিন্তু শেষমেষ কিছুই করা হয় না। আপনি/আপনারা করছেন..... আপনাদের সাফল্য কামনা করি।
________________________________________
Name: siki
IP Address : 132.177.2.80 (*) Date:13 Jul 2013 -- 11:35 PM
আরও বেশি লিখুন।
আপনার লেখাটা ছড়িয়ে দিতে চাই, যতটা পারি।
________________________________________
Name: pi
IP Address : 118.12.169.134 (*) Date:13 Jul 2013 -- 11:36 PM
সিকি , ফেবু গ্রুপেও আছে। শেয়ার করতে পারো।
________________________________________
Name: h
IP Address : 127.194.234.39 (*) Date:14 Jul 2013 -- 06:40 PM
এই ধরণের লেখা ভালো, ক্ষত দগদগে হয়ে থাকবে হয়তো স্বাভাবিক, তবে এই ধরণের ন্যুনতম শর্ত হল সোর্সিং। যেটা আমরা ১৯৪৬/১৯৪৭ এর বেলায় পাচ্ছি না। এটা কি ব্যক্তিগত রিসার্চ এর অভাব না মেটেরিয়াল এর অভাব ? এই প্রশ্ন লেখক কে?
এবং এটা যদি সিরিজ হয়, এতে নোয়াখালি, ভাগলপুর, দিল্লী ৮৪, মীরাট, মুম্বাই, আসাম এর উপরে কাজ/নোট্স আশা করব।
________________________________________
Name: h
IP Address : 127.194.234.39 (*) Date:14 Jul 2013 -- 06:41 PM
দ্বিতীয় প্রশ্নবোধক টা শুধু ই দাঁড়ি হবে।
________________________________________
Name: কালপুরুষ
IP Address : 111.218.3.45 (*) Date:15 Jul 2013 -- 12:41 AM
১৯৪৬-৪৭ এর যা ডেটা পেয়েছি,তা পর্যাপ্ত ছিল না।বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাকে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে যথাসম্ভব যুক্তিগ্রাহ্য অনুমান মিশিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।সরকারি তথ্যাগার ব্যবহার করতে পারিনি আর আমার দিক থেকেও কিছু ভুল হয়েছে।এরপর থেকে সতর্ক থাকবো।
________________________________________
Name: h
IP Address : 213.99.212.53 (*) Date:15 Jul 2013 -- 11:07 AM
ইয়েস, আমার ক্যাজুয়াল অবসারভেশন কে আদৌ পাত্তা দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। যে কাজে নেমেছেন, সে মানে খুব কঠিন লড়াই।
________________________________________
Name: h
IP Address : 213.99.212.53 (*) Date:15 Jul 2013 -- 11:08 AM
সুরঞ্জন দাশ এর বই ৪৬-৪৭ এর জন্য রেফার করতে পারেন।
________________________________________
Name: b
IP Address : 135.20.82.164 (*) Date:15 Jul 2013 -- 11:17 AM
উৎস মানুষের পাবলিশ করা একটা বই ছিলো 'ইতিহাসের দিকে ফিরেঃ ছেচল্লিশের দাঙ্গা'। মোটামুটি পপুলার ইতিহাস বইয়ের মত।
________________________________________
Name: h
IP Address : 213.132.214.155 (*) Date:15 Jul 2013 -- 11:34 AM
হ্যাঁ রাইট। এই বইটা আমি ও কিনেছি, গতবার বইমেলায় মাত্র। রিজনেবলি ভালো বই।
________________________________________
Name: কালপুরুষ
IP Address : 59.136.100.8 (*) Date:15 Jul 2013 -- 12:23 PM
সুরঞ্জন দাশ এর বই'টির কথা জানি।তবে উৎস মানুষের বইটির কথা জানা ছিল না।সংগ্রহ করব।অনেক ধন্যবাদ।আর আমার নিজের মনে হয়েছে প্রত্যেকটি বড় মাপের দাঙ্গা-গণহত্যা আদতে সুকৌশলী রাজনৈতিক ভাবনা প্রসূত।এর নির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে।আমার সীমিত সাধ্যে সেই প্যাটার্নের নকশা'টা মানুষের সামনে ফুটিয়ে তুলতে চাই।আপনাদের সহযোগিতা চাইছি।ভারতে ঘটে যাওয়া দাঙ্গা-গণহত্যা নিয়ে যদি কোনো বই,ডকুমেন্ট বা ইন্টারনেট লিঙ্ক জানা থাকে,আমাকে জানান।বই এর নাম লিখলে প্রকাশনী সংস্থার নামটা দেবেন।প্রত্যাশা রইলো।
________________________________________
Name: h
IP Address : 213.132.214.155 (*) Date:15 Jul 2013 -- 01:03 PM
যে কটা টপ অফ দ্য হেড মনে পড়লো ঃ
১- কম্ব্যাট কমিউনুলাজিম - এর আর্কাইভ।
২ - শাহিদ আমিন এর ভাগলপুর দাংগার উপরে প্রবন্ধ।
৩ - লিবারহান্স কমিশন রিপোর্ট ও সাবমিশন
৪ - শ্রীকৃষ্ণ কমিশন রিপোর্ট এবং সাবমিসন
৫। সুজাতা প্যাটেল এর সম্পাদিত বই বোম্বে সংক্রান্ত
________________________________________
এই সুতোর পাতাগুলি [1] এই পাতায় আছে1--13
আপনার নাম:
বাংলা লিখুন(গুগল লেআউট)
বাংলা লিখুন(গুরুচন্ডালি লেআউট)
বাংলা বা ইংরিজি লিখুন(নিজস্ব সফটওয়্যার)
মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি 152,008 বার পঠিত
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০
আমার প্রিয় বাংলাদেশ
২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার প্রিয় বাংলাদেশ
" এবার আমায় গ্রহণ করো ‘বাংলাদেশ’---
বর্ণমালার রক্তাক্ত ইতিহাসের দিকে চেয়ে।
আমি পথহারা এক তৃষ্ণার্ত পথিক।
উদাসী মাঝির ডাক পদ্মার ওপার থেকে—
সোজোনবেদিয়ার ঘাটে,নক্সীকাঁথার মাঠে, জসীমউদ্দিন
রূপসী বাংলার জীবনানন্দ।
আমার দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে,মেঘনার সর্বনাশা ঝড়---
আজ তোমার-আমার মাঝে অলঙ্ঘ্য সীমারেখা!
আমায় গ্রহণ করো বাংলাদেশ--- এখানে আমি বাকরূদ্ধ,শ্বাসরূদ্ধ!
বিবর্তনের পালায় বঙ্গাংশ-বিহার-উড়িষ্যা সীমায়িত,
ধূমায়িত উত্তর,ক্ষয়িষ্ণু দক্ষিণ অরণ্যশোভা।
সুদূর দ্বীপান্তর হয়তো আমার শেষ ঠিকানা!
এবার আমায় গ্রহন করো বাংলাদেশ---
যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে দিশাহীন,বর্ণদূষণ বাংলা সেখানে নিরুত্তাপ।
কখনো ঋষি বঙ্কিম ভেসে আসে উন্মত্ত সাগর প্রবাহে---
‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ!’
রবীন্দ্র-বাণী--‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ!’
দুরন্ত কালবোশেখী ঝড়ে কবি নজরুলের
‘পথহারা পাখি,কেঁদে ফেরে একা!’
এবার আমায় আশ্রয় দাও ‘বাংলাদেশ’
আমার প্রিয় ‘বাংলাদেশ’!!"
...সময়টা ২০০৮-এ জানুয়ারীর ২৯।বাংলাদেশ ডেপুটি কমিশনারস্ অফিস কলকাতা থেকে একমাসের জন্য বাংলাদেশ পরিভ্রমণের অনুমতি পাওয়া গেল। ৩১ শে জানুয়ারি কলকাতা থেকে ঢাকার রাজপথে শুভযাত্রা।লাল সবুজে মেশানো টিকিটের গায়ে ‘শ্যামলী পরিবহন’ লেখাটি দেখে মনটা কেমন ক’রে উঠলো!রবীন্দ্রনাথের ৭৪তম জন্মদিনে শেষ গৃহপ্রবেশ ‘শ্যামলী’-র কথা মনে প’ড়ে গেল।কবির কথায়:- ‘আমার শেষ বেলাকার ঘরখানি বানিয়ে রেখে যাব মাটিতে তার নাম দেবো শ্যামলী।’ বাসস্ট্যান্ডে আসতেই চোখে পড়লো লাল সবুজে মেশানো রঙের সুদর্শণা একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে দেরি হ’লনা এই সেই শ্যামলী,আজ সে যেন চলমান শ্যামলী,আমাদের দীর্ঘ পথযাত্রার সঙ্গী।নির্ধারিত সময়ে ‘শ্যামলী’ আমাদের নিয়ে চললো,কলকাতার কোলাহল থেকে দূরের পথে।বেনাপোল-এ কেনাকাটার ভিড়।অর্থের বদলে কিছুটা অর্থদন্ড হলেও,অর্থ-দালালদের মুখোজ্জ্বল করতে পারার একটা প্রচ্ছন্ন আনন্দানুভব করলাম।আমরা সবাই তো অর্থমুখী!কতকগুলি ভিখারিকে হাত পাততে দেখলাম।আন্দামানে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে ভিখারি-সমস্যার কথা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম!এখন বহু পুরনো স্মৃতি আবার যেন তরতাজা হয়ে উঠল।আরে এটাই তো সেই বাংলা,এই তো সেই বাংলার মুখ।এইসব মানুষের মলিন মুখেই তো ফুটে ওঠে সোনার বাংলার করুণ ইতিহাস!....এসব ভাবতে ভাবতেই সহযাত্রী বন্ধু তাড়া করলে: ‘এরকম ধীরগতিসম্পন্ন হলে সুরক্ষিত সীমান্ত-রেখা যে পেরোতে পারবেন না,তা ভেবেছেন কি?’কবি-বন্ধুর কথা অস্বীকার করার উপায় নেই!সত্যিই সে দুর্বলতা আমার আছে!অপরদিকে দ্বিতীয় সহযাত্রী অশীতিপর সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় শ্রী দ্বীজেন্দ্র কিশোর বিশ্বাস(কবি-বন্ধুর জ্যাঠামশাই,নিশিকান্ত বিশ্বাস সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত) প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যেও সক্রিয়!সীমান্ত-দাপ্তরিক কাজ শেষ ক’রে আবার শ্যামলী-র নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়লাম।যশোর রোডের দুপাশে সোনালি-সবুজের দৃশ্য মন ভুলিয়ে দেয়।দূরে যে দিকে তাকাই,প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য চোখে পড়ে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।কবি নজরুলের ভাষায়:- ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী। ফুলে ও ফসলে কাদামাটি জলে ঝলমল করে লাবণী।।’ মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ প’ড়ে বুঝিনি তখনো পদ্মার রূপ কী মোহময়ী হতে পারে।নজরুল গীতি ‘পদ্মার ঢেউরে!মোর শূন্য হৃদয়পদ্ম নিয়ে যা,যা রে’কতবার শুনেছি,মনে মনে পদ্মার ছবি এঁকেছি।আজ আমার দুচোখে পদ্মার রূপ দেখে বিস্ময় শুধু নয়,লোকসঙ্গীতের কথায়—‘আমায় ভাসাইলি রে,আমায় ডুবাইলি রে/অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে!’ বাংলাদেশ-রাজধানি ঢাকা।রাত প্রায় আটটা।জাতীয় নাট্যশালার ‘রোকন জহুর’ আমাদের স্বাগত জানালেন।অতিথি আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি আমাদের চোখে পড়ল না।আধো ঘুমে রাত কাটল।ত্রস্তগতিতে প্রাত:কালিন প্রস্তুতি,১লা ফেব্রুয়ারি।গন্তব্য ঐতিহাসিক ‘রমণা প্রাঙ্গণ’। ‘বাংলাদেশ জাতীয় কবিতা পরিষদ’-আয়োজিত কবিতা উৎসব। নির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে বাংলাদেশ-জাতীয়কবি নজরুল ইসলামের সমাধিদর্শণ,শহীদবেদী সমাগম,অবশেষে কবিতা-মঞ্চে আগমন।শুরুতেই প্রথিতযশা শিল্পীসহ অগণিত মানুষের কন্ঠে শোনা গেল অমর শহীদদের উদ্দেশে আব্দুল গফফার চৌধুরীর লেখা সে গান: ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি!’ এবং জাতীয় সঙ্গীত: ‘আমার সোনার বাংলা’।গান দুটি শুনে আমার হৃদয়ে এক অস্বাভাবিক শিহরণ জাগে।এই গান দুটি শুধু বাংলাদেশের নয়,সমগ্র বাঙালি জাতির প্রাণ সে কথা এক নিমেষেই মনে হ’ল! শুরু হ’ল আমন্ত্রিত কবিদের সম্মান-প্রদর্শণ পর্ব।সূচীবদ্ধ কবিদের আমি একজন না হয়েও অন্যান্যদের মতো আমাকেও পুষ্পস্তবক দিয়ে যেভাবে সম্মানিত করা হয়েছিল,তাতে আমি অভিভূত না হয়ে পারিনি।আলাপ হ’ল জনপ্রিয় কবি সমুদ্রগুপ্ত-র(আব্দুল মান্নান)সঙ্গে,কবি আসাদ চৌধুরি,কবি আসলাম সানীসহ অনেক গুণী মানুষদের সাহচর্যে কবিতা উৎসব প্রাঙ্গণ আনন্দমুখর হয়ে উঠল।কী নিবিড় সখ্যতা,কী বিস্ময়কর অভিনন্দন ভাল কবির জন্য,কবিতার জন্য।কবিতা যে সত্যিই জীবনের ভাষা,সাধারণ মানুষের ভাষা সেদিন প্রতি মূহুর্তেই মনে হচ্ছিল।সারাদিনের কবিতা-সংগ্রাম শেষে বাসায় ফেরা।ডায়েরির পাতায় লিখে রাখলাম অব্যক্ত উচ্চারণ: ‘যাহা দেখিলাম,যাহা শুনিলাম—জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না’। পরের দিন ২রা ফেব্রুয়ারি আবার ‘কবিতা-মঞ্চ’-র ডাক।সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা।মঞ্চে তখনও অবিরাম বিস্ময়কর বাণী-প্রবাহের প্রাবল্য! রাত্রি প্রথম প্রহরের পুণ্যলগ্ন।ভারতীয় কবিদের সারিতে প্রতীক্ষমান আমিও।আন্দামান থেকে কবি অনাদিরঞ্জনের কবিতা ‘বাংলা মানে’ আর রইসউদ্দিনের ‘আমার প্রিয় বাংলাদেশ’ কবিতায় হয়তো বা আমাদের অজান্তে মন ছুঁয়েছে কারও।তাই বোধ হয় শ্রদ্ধা আর ভালবাসার খামতি কোথাও ছিল না।আমাদের কবিতা ভাল লাগুক বা না লাগুক,কাব্যপ্রাণ মানুষদের যে ছোঁয়া আমরা পেয়েছি,তা’পরশপাথরের ছোঁয়া বললে অত্যুক্তি হবে না।বাংলাদেশের কবিপ্রেমে আমার উদাসী মন কখন কবি হয়ে গেল জানি না। বই মেলায় কবি জসীমউদ্দিন-পুত্রের পুস্তকবিপণী থেকে ‘নকসী কাঁথার মাঠ’,সোজন বেদিয়ার ঘাট, শুধু নয়—জসীমউদ্দিনের ‘জীবনকথা’-র হানিফ মোল্লা,যাদব ঢুলি,কবিগান,মধু পন্ডিত,চৈত্র-পূজা,সন্ন্যাসী ঠাকুর সবাইকে পেয়েছি একসাথে—এ আমার কম সৌভাগ্যের নয়। জীবনদেবতা বোধ হয় বাধ সাধলো তৃতীয় দিনের প্রারম্ভে।স্মৃতিরোমন্থনের আনন্দানুভূতি যখন চরম শিখরে হৃদ্-যমুনায় উথাল-পাথাল অস্বাভাবিক শব্দ-দ্বন্দ্ব;অকস্মাৎ দুচোখে ঘনঘোর অন্ধকার।আর সেটাই নাকি হার্ট-অ্যাটাক!হৃদয় বিশেষজ্ঞ-র স্থির সিদ্ধান্ত--- ‘অস্ত্রোপচার’।আমার মন-বিশেষজ্ঞ মেনে নিতে পারল না।তাই মনমাঝি বৈঠা হাতে ডাক দিলেন—‘ফিরে চলো,ফিরে চলো পান্থ’।অগত্যা ফিরে এলাম এপারে।ফেরার পথে বার বার মনে পড়ছিল ফেলে আসা বাংলাদেশে থাকা ক’দিনের স্মৃতিচিত্র।অসুস্থ-অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে এসে অস্ফুট স্বরে শুধু বলতে পেরেছিলাম কয়েকটি কথা: ‘বিদায়! আমার প্রিয় বাংলাদেশ,বিদায়!!’
৮১ বার পঠিত ০ ০
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর
১. ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৩২ ০
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর স্মৃতি
জাগানিয়া লেখা
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩ ০
লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ পরিবেশ বন্ধু,আপনার সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য!
২. ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৩ ০
কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: ভালো লেগেছে। আমন্ত্রণ রইল।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু কামরুল ইসলাম রুবেল, অশেষ ধন্যবাদ আমার লেখায় আপনার সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য! আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই! ভাল থাকুন!!
৩. ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৪ ০
কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: সত্যি বলতে কি আন্দামান দ্বীপের প্রতি আমার প্রচন্ড টান। বিশেষ করে বিশাখাপত্তম থেকে আন্দামান জাহাজে ভ্রমণ করা আমার অনেক পুরোনো একটা ইচ্ছা। যদি এ ব্যাপারে কিছু ছবি বা পোষ্ট দেন তাহলে ভালো লাগতো। আমার সেল নাম্বার দিলাম +৮৮০১৭৬০০০২৩৩২। যদি এদেশে আসেন তাহলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আমি একজন মিডিয়া কর্মী, ঢাকায় থাকি। ভুলবনা আপনাকে, বিশেষ করে বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি আপনার আকুন্ঠ দরদের কারণে। ভালো থাকবেন।
ভারতে রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্লোগান 'জয় শ্রীরাম'(একটি প্রতিবাদী ই-মেল)
২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
1 of 30
Fwd: INDIA AND HER 'SECULARISM'
Inbox x
Anadiranjan Biswas
13:00 (16 minutes ago)
to me
---------- Forwarded message ----------
From: Anadiranjan Biswas
Date: Wed, 28 May 2014 11:26:43 +0530
Subject: INDIA AND HER 'SECULARISM'
To: onjaiswal1 , echopress4
Cc: baakprotima
INDIA AND HER SO-CALLED ‘SECULARISM’
- Anadiranjan Biswas
It was quarter past six in the evening of 26th May 2014. A large
gathering of reportedly 3,000 distinguished VVIP guests consisting of
the Heads of SAARC countries as well as the
administrative/constitutional Heads of Indian States and UTs,
diplomats, representatives of all Indian political parties including
newly elected MPs, was waiting in the fore-court of Rashtrapati
Bhawan, New Delhi to witness the historic swearing-in ceremony of Shri
Narendra Damodardas Modi as the 15th Prime Minister of India. So were
we, the ‘Aam Aadmi of India’, who quench their thirst of such national
programme by viewing it on the television screen.
We watched on the television set that after the arrival of His
Excellency Shri Pranab Mukhopadhyay, the Hon’ble President of India,
formal swearing-in ceremony commenced with the Indian National Anthem.
When the National Anthem was over, we heard ‘Bharat Mata Ki Jai’ in
chorus at least twice. Then came the ‘surprise’ (even not to others
but to me). If I can rely upon my listening capacity, a slogan
uttering ‘Jai Shri Ram’ was clearly heard (that is also, at least
twice) which came off the television set kept before me. I don’t
know, from which segment of the gathering came the sound, but it
surely came. And I have sufficient reasons to believe that the sound
was made by certain extremist MPs of that particular political party –
which has got clear mandate to rule India for next five years. But,
was that a proper place to make that slogan – ‘Jai Shri Ram’?
Yes, the vital question lies here. When a political party is all
along alleged of being ‘saamprodayik’ (non-secular) by almost all the
political parties in opposition – was it necessary for its MPs to
utter that sound ? When the swearing-in ceremony is going on in such
a place and in presence of such a Constitutional Head of India, who,
according to the Constitution of India is ‘impartial’ and ‘neutral’
insofar as political belief is concerned – was it justified at all to
utter such religious phrasing ? When a large number of foreign Heads
and/or Ambassadors are present in the ceremony, was it the signature
of intellect to utter such slogan in front of those distinguished
guests ? Which message is sent to their minds by doing so ?
As a matter fact, ‘secularism’ is just like an ‘orphan child’ in
India, who has nobody to take proper care of. And that is why
‘secularism’ is only used by the Indian political parties just as a
playing card to gain voters’ favour. And that is why, a number of
state/national level functions in our country commence with
enchantment of Vedic slokas. And that is why high-ranked Indian Navy
Officer dedicates a newly built ship to the Nation after offering puja
according to a particular religious rite. And that is why a National
Leaders of a century-old political party of India takes shelter of
Imams just before the election. And that is why ‘Jai Shri Ram’ slogan
is uttered in the swearing in ceremony arranged for the 15th Prime
Minister of India in the Rashtrapati Bhawan, New Delhi.
Now, let us see what the word ‘secular’ means. As per Oxford
Dictionary, ‘secular’ denotes to be (1) ‘not religious, sacred or
spiritual’; and (2) ‘not subject to or bound by religious rule’. From
these points of view, undoubtedly it can be said that (a) either a
‘secular’ country should not be subject to or bound by any particular
religious rule and/or rites of that country theocracy . (2) Or, if
religious rite is inevitably essential, in that case, rituals followed
by all the religions of the country should be followed. But,
unfortunately, none of the above is followed in India. Most of the
Indian national functions/activities follow theocracy. Nevertheless,
we say – India is a ‘secular’ country.
Now, an obvious question may arise here. That is – how did then India
become ‘secular’? A portion of ‘aam aadmi’ is of the notion that
India remained ‘secular’ from the very inception its first Republic
Day i.e. 26th January 1950. But those who have more or less, gone
through the Constitution of India and aware of Indian
post-independence political events very well know that India was not a
‘secular’ country immediately on becoming ‘Republic’. It took at
least 25 years for India to become ‘secular’; and that also not under
an Act passed in any normal session of the Parliament. During the
emergency period (25th June 1975 to 21st March 1977) the Constitution
(42nd Amendment) Act 1976 was passed by Parliament on November 11,
1976 and received Presidential assent on December 18, 1976. Under
that controversial 42nd Amendment of the Constitution of India,
changes in the Preamble of Indian Constitution were made from
‘Sovereign Democratic Republic’ to ‘Sovereign Socialist Secular
Democratic Republic’. Thus, India became a ‘secular’ country.
But, as much secular as we be in our political speeches, unless all
our national activities/acts are confined to the very meaning of the
lexicon as referred to hereinabove and are not effected by the
theocratic activities, India’s ‘secularism’ will remain as nothing but
a square peg in round hole.
----------
৪৯ বার পঠিত ০ ০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আপনার মন্তব্য লিখুন
কি বোর্ড বেছে নিন:
ভার্চুয়াল ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয় english
ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
পোস্ট পর্যবেক্ষণ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ
৩৫ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে জিয়াকে স্মরণ (ভিডিও)
লিখেছেন তালপাতারসেপাই, ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:০২
সবাই এক জিনিস আজ ভুলে গেছে বলতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান সামরিক শাসক সায়েমের বিরুদ্ধে ক্যু করে নিজে প্রধান সামরিক প্রশাসক
জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর ২৯শে নভেম্বরে প্রধান... ...বাকিটুকু পড়ুন
সখী ভালবাসা কারে কয়
লিখেছেন খায়রুল আহসান, ৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:৩২
‘সখী ভালবাসা কারে কয়’?
প্রশ্নটি বহু শ্রুত হলেও,
জবাবটি অজানাই রয়।
কখনো শিশুদের হাসি,
কখনো জোটবাঁধা পাখি
ভালবাসি বলে মনে হয়।
অঞ্জলি ভরে তোলা
ঝরা বকুল ফুলের মালা
ভালবাসায় সতেজ হয়।
দুঃখিনী নারীর হাসি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যারা বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় পাশ করেছো,তারা আপাতত গা ঢা্কা দিয়ে থাকো।
লিখেছেন বন্দী কন্ঠস্বর।, ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:২৭
যারা বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় পাশ করেছো,বিশেষ করে গোল্ডেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আলোচনা সমালোচনায় জিপিএ-৫! সমস্যার দায়ভার যাদেরই হোক উত্তরণের একমাত্র উপায় লজ্জাহীনতা!!
লিখেছেন সানিম মাহবীর ফাহাদ, ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
সম্প্রতি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রদের উপর করা প্রতিবেদনে পুরো বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়াগুলোতে একটা আলোচনার ঝড় উঠেছে। সবার মুখেই ধিক্কার, ছিঃ ছিঃ এসব কি হলো! কেউ ছাত্রদের, কেউ মিডিয়া কিংবা... ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছদ্মবেশী ফান এবং জরিপ পোস্টঃ হাউ ফাস্ট ইউ ক্যান রিড এন্ড মেক কমেন্ট?
লিখেছেন আমি অথবা অন্য কেউ, ৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১২
আমার ধারনা আমি দ্রুত পড়ি। এবং দ্রুতই কমেন্ট করি। তারপরও সময় বেশি লেগে যায় কারণ কমেন্টে গিয়ে অতিকথনে সময় লেগে যায়। একটা পোস্টে কম হলে ২-৩ মিনিট (কবিতা পোস্টে) আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামহোয়্যার ইন...ব্লগ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ, মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল্যাটফমর্। এখানে প্রকাশিত লেখা, মন্তব্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর...
• © সামহোয়্যার ইন...নেট লিমিটেড
• ব্যবহারের শর্তাবলী
• গোপনীয়তার নীতি
• বিজ্ঞাপন
আন্দামান থেকে বলছি:-দ্বিতীয় পর্ব
১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আজ বলা যাক আন্দামানের এক অপ্রকাশিত ইতিহাসের কথা।১৯৮৪ সালের ৫ই অক্টোবর। অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে সরকারি নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে আমি পৌঁছই, উত্তর আন্দামানের প্রধান জনপদ ডিগলিপুর থেকে ১৯-২০ কিলোমিটারের দুর্গম পথ পেরিয়ে, তালবাগান গ্রামটিতে। ঠিক সেই মুহূর্তে কোনও তথাকথিত স্কুল সেখানে ছিল না। দেশভাগের পর পূর্ব-পাকিস্তানে (অধুনা বাংলাদেশ) যাঁদের ঠাঁই হ'ল না, সেইসব অসহায় 'সর্বহারা' পরিবার শুধু বাঁচার তাগিদে একটু নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এই বিপদসঙ্কুল জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিলেন। কঠোর পরিশ্রমে তাঁরা গ'ড়ে তুলেছিলেন সুজরা-সুফলা-শস্যশ্যামলা গ্রাম।
যা-ই হোক,স্থানীয় গির্জাঘরে প্রাথমিকভাবে লেখাপড়া শুরু হ'ল।গ্রামবাসী সকলেই বাঙালি,তাই শিক্ষাও বাংলা মাধ্যমে। কয়েক মাসের মধ্যে গ্রামবাসীদের অসীম আগ্রহ ও অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হ'ল স্কুলঘর,খেলার মাঠ,নাটমন্দির,শিক্ষকাবাস। স্কুলের উৎসব আর নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রইল না।শুধু তালবাগানই নয়,পার্শ্ববর্তী 'পশ্চিমসাগর' গ্রামে স্কুল-পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও যোগ দিত উৎসবে।আমার বেশ মনে আছে ১৯৮৫ সালের বার্ষিক উৎসবে (ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) গ্রামের সমস্ত মানুষ একত্রিত হয়ে আয়োজন করেছিলেন সারাদিন ব্যাপী পংক্তিভোজনের আর তাতে যোগ দিয়েছিলেন তিনটি গ্রাম(তালবাগান,পশ্চিমসাগর ও কিশোরনিগর)-এর অগণিত মানুষ। সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর প্রায় সারারাত ধ'রে চলেছিল যাত্রানুষ্ঠান।সভ্যতার আধুনিক আলো যেখানে পৌঁছয়নি,সেই দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করা মানুষের জীবনযাত্রার মঙ্গলধ্বণি আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়।
একদিন সরকারি নিয়মের পথ ধ'রে আমাকে ফিরতে হ'ল পুরনো ঠিকানায়। জীবনের পথ পরিক্রমা করতে করতে ২০০৩ নাগাদ হঠাৎ কোনও একদিন শোনা গেল উদ্বাস্তু বাঙালিদের বাড়িঘর,বাগান,ফসল ইত্যাদি সরকারি ফরমানে ধ্বংস করা হয়েছে। তখনও আমার শ্রুতিগোচর হয়নি যে সেই সবুজ পাহাড়ের দেশে বনবিভাগের হাতির সাহায্যে ভয় দেখিয়ে মহিলা ও শিশুদের ঘরছাড়া করা হয়েছিল, অত্যাচার চালানো হয়েছিল তাঁদের উপর।বনবিভাগের জমি-অধিগ্রহণের অপরাধে পাকা ধানের ক্ষেতে চালানো হয়েছিল বুলডোজার।বিশ্বস্তসুত্রে জানা গিয়েছিল,একটি জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা একজন অ-বাঙালি নেতা ‘বাঙালি’ পরিচয় দিয়ে,উচ্চতম আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে,অনেক গুরূত্বপূর্ণ রিপোর্টকে অবমাননা ক’রে বেসরকারিভাবে বসতি স্থাপন করা উদ্বাস্তু বাঙালিদের বাড়িঘর,নারিকেল-সুপারির বাগান সুফলা শস্যক্ষেত ইত্যাদি ধ্বংস করেছেন। অথচ,পরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল উচ্চতম আদালতের এ ধরণের কোনও আদেশই ছিল না।
তথাকথিত ‘জননায়ক’টির পরিচয় দিতে গিয়ে আন্দামানের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন- ‘এই নেতার আসল পরিচয় আন্দামান-নিকোবরের মানুষজন এখনও জানেন না।অথচ কলুর বলদের মতো তাঁকে সমর্থন করেন।পোর্টব্লেয়ারের সত্তর শতাংশ জমি বে-আইনীভাবে বহিরাগত আগন্তুকদের দখলে;অথচ বাঙালি স্বার্থ-বিরোধীদের তা’ চোখে পড়ে না।’
প্রশ্ন জাগে, যে ছিন্নমূল বাঙালিরা এক লক্ষ দু:খ-কষ্ট সহ্য ক’রে এই দ্বীপপুঞ্জকে সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা ক’রে তুলেছিলেন তাঁরাই আজ তথাকথিত জননেতাদের বিরক্তির কারণ কেন,কেন তাঁরা চক্ষুশূল? একটা কথা এখানে পরিষ্কার করা যাক।এই দ্বীপপুঞ্জে বাঙালি-বিরোধী কালপুরুষগুলোকে আমরা চিহ্নিত করব-ই।
বাঙালি-বিদ্বেষী আরও একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই,সংক্ষেপে। ৯০-এ দশকে দক্ষিণ আন্দামানের ওয়ান্ডুর স্কুল প্রাঙ্গণে কোনও এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের জনসভা চলাকালীন একটা প্রচারপত্র (হ্যান্ডবিল) আমার হতে আসে। সেই প্রচারপত্রে ছাপা যে কয়েকটি দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাখা হয়েছিল,তার মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিল---‘বাংলাদেশ থেকে আগত অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের চিহ্নিত ক’রে সে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।’ এটি পাঠ ক’রে আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেছিলাম;- ‘অনুপ্রবেশের দায় তাহলে শুধু মুসলমানের,হিন্দুর নয়?অনুপ্রবেশ নি:সন্দেহে একটি বে-আইনী কাজ, তবে তার দায় চাপাতে শুধু মুসলমানদের আলাদা ক’রে চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া কেন? উত্তরে নেতাপ্রবরের মুখ থেকে যে ‘অমৃতবাণী’ নি:সৃত হয়েছিল,তা মনুষ্যজনোচিত ছিল না,তাই এখানে তা’ অনুল্লেখ্য।
শুধু আন্দামানেই কেন,এই সময়ে সর্বস্তরে বাংলা ও বাঙালি-বিরোধী যে প্রেতচ্ছায়া আচ্ছন্ন ক’রে রেখেছে কিছু মানুষের শুভ চেতনাকে,তার বিরুদ্ধে আজ ‘একত্রিত হোক আমাদের সংহতি’। নানা জাতি,নানা ভাষা,নানা মত,নানা পরিধানের মাঝে আমরাও যেন আমাদের ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব-র মর্যাদা বজায় রাখতে পারি,এই হোক আমাদের সঙ্কল্প।
১৪৮ বার পঠিত ০ ১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১ ০
সরদার হারুন বলেছেন:
সব দেশই ক্ষমতাবানরা গরীবদের শোসন করে ধনবান হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে ,এটা নতুন কিছু নয় ।
২. ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯ ০
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
লেখাটি ভালো লেগেছে, যদিও লেখার বিষয়টিতে দুঃখ পেয়েছি। সবখানেই একই সমস্যা। অধিকার সংগ্রাম করেই আদায় করতে হয়। আন্দামানের আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
আন্দামানে বেড়াতে যাবার স্বপ্ন দেখছি বেশ কিছু বছর ধরে।
আপনাদের বিষয়ে আরও জানার আগ্রহে ‘অনুসরণ’ করে রাখলাম।
শুভেচ্ছা
ছোটদের আসর:-
১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ছোটদের আসর:-
(রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্টব্লেয়ার,আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ,ভারত।)
তিনটি রাজকুমারীর গল্প:- মিনতি মন্ডল
তিনটি রাজকুমারী ছিল বড়োই ভালো। বড়ো রাজকুমারীর নাম মিতা,মেজো রাজকুমারীর নাম সীতা এবং ছোটো রাজকুমারীর নাম গীতা। মিতা আর সীতা ছিল রূপসী কিন্তু গীতার তেমন রূপ ছিল না। তিনজনে বেশ মিলেমিশে থাকতো; কিন্তু হঠাৎ একদিন মিতা ও সীতা দুজনে মিলে গীতাকে বলে ফেললো: ‘তুই আমাদের মতো সুন্দরী না,দেখ্ না আমাদের গায়ের রঙ কেমন টুকটুকে ফর্সা। আর তোর.....এই ব’লে হো হো ক’রে হেসে উঠলো’। গীতা কিছু না ব’লে মনের দুঃখে একা কোথাও চলে গেল। ধীরে ধীরে পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্ত গেল। মিতা ও সীতা বাড়ি ফিরে গীতাকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলো। রাজবাড়ির ভিতরে বাইরে কোথাও খুঁজে না পেয়ে রানী মাকে বলতেই রানীমা দাসীদের খুঁজতে পাঠালেন। বাইরে কোথাও যখন পাওয়া গেল না,রানীমা নিজেই রাজবাড়ির ছাদে খুঁজতে গিয়ে দেখলেন---পূর্ণিমার চাঁদ যেন রাতের আকাশের রূপালি টিপ,একটা মাদুর পেতে বসে গীতা চাঁদের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে,শুভ্র চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে গীতার মুখমন্ডলে। রাতের রজনীগন্ধা ছড়াচ্ছে তার মিষ্টি সুবাস। মেয়ের এমন রূপ রানীমা আগে কখনও দেখেননি। একটু পরেই রানীমা শুনতে পেলেন একটি মিষ্টি সুরের গান: ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে,উছলে পড়ে আলো/ ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো// রানীমা কখনই শোনেননি গীতার কন্ঠে এমন মধুর গান! রানীমাকে রাজ-অন্ত:পুরে দেখতে না পেয়ে মিতা ও সীতা ছাদের ওপর আসতেই তাদের নজরে পড়ল এই অপরূপ দৃশ্য! বাতাসে তখনও ভেসে বেড়াচ্ছে গীতার কন্ঠের মিষ্টি-মধুর গানের সুর,হাসনুহানা,রজনীগন্ধা ও বকুলফুলের মিষ্টি সুবাস! আর চুপ থাকতে না পেরে দুজনে গীতাকে জড়িয়ে ধ’রে কেঁদে কেঁদে বলল: ‘গীতা--- তুমি আমাদের ক্ষমা করো---তুমি যে কতো সুন্দর তা’ আমাদের আগে জানা ছিল না’!!
ছুটির দিনে:-মহাশ্বেতা গোস্বামী
যখন স্কুল ছুটি থাকে,তার আগের দিন থেকে ভাবি যে কালকের স্কুল ছুটি থাকবে,একটু বেশি ক’রে খেলবো বা অন্য কিছু করবো; কিন্তু তা’ ভেবেও লাভ কি? স্কুল থেকে যে হোম্ টাস্ক্(বাড়ির কাজ) দেয়,সেই কাজ করতে করতে পুরো দিনটা কেটে যায়। তারপরও যদি বাড়ির কাজ না শেষ করতে পারি, তাহলে ক্লাসে মার খেতে হয়। আবার ক্লাসে বসে যদি করি,তাহলে স্যার বা ম্যাডামরা এসে লাল কালি দিয়ে কেটে দেয়! এই যদি হয়, আমি কী করি উপায়? আমার দুঃখ জানাবো কোথায়?
ঈদ ও পুজো:-উম্মি কুলসুম্
পুজো আসবে ঈদ্ আসবে
বাজবে খুশির বীণ--
নাচের তালে বাজবে ঢোলক
তাক্ ধিনা ধিন্ ধিন্।
নতুন জামা পরবো পুজোয়
ঈদে নতুন স্যুট।
ইচ্ছে করে পরবো এবার
কোট-প্যান্ট আর বুট।।
মিনতি আর মহাশ্বেতার
সাথে পুজোয় যাবো।
জিলিপি আর রসগোল্লা
যতই পারি খাবো।।
ঈদের দিনে বিরিয়ানি
কোপ্তা-কাবাব খাবো।
মুন্নি আর স্নেহার সাথে
মেরিনা পার্ক যাবো।।
স্পিড্ বোটে চড়বো এবার
যদি সুযোগ পাই।
কখনও বা ইচ্ছে করে
ফুচকা কিনে খাই।।
অকাল বোধন যাত্রা হবে
অতুল স্মৃতি ক্লাবে।
দিদা-দাদু,চাচি-চাচু
সবাই শুনতে যাবে।।
আমরা তখন নাগর দোলায়
দুলিয়ে রাঙা পা।
বলবো একটু মুচকী হেসে
যা রে উড়ে যা।।
উড়তে উড়তে,ঘুরতে ঘুরতে
রাত বারোটার পরে।
‘শুভরাত্রি’ ব’লে আমরা
ফিরবো আপন ঘরে।।
Bandarwala(Hindi)/Khatija Khatun
Doog doog doog doog karta ekdin bandarwala aaya
Byaet perh ke niche usne,apna rang jamaya.
Bandar dekhkar bachche saare,doure doure aaye,
Ruth gayee Bandar se bandariya,Bandar usey manaaye.
Chal di pichhe- pichhe bandariya aagey uska saiyaan
Bandariya fir lagi naachney,boley tat ha thaiyaan.
ভালো মানুষ:- অঙ্কুশ কুমার দে
কী এসে যায়,কেউ যদি হয়
ফর্সা কিংবা কালো?
ভালো মানুষ সেই শুধু হয়
মনটা যার ভালো।
লম্বা,বেঁটে যেমন-ই হোক
খোঁড়া কিংবা কানা।
চেহারাতে ভালো-মন্দ
যায় না কিছুই জানা।।
আয়নাতে চোখ রেখে শুধু
মুখটি দেখা যায়--
মনের মাঝে কী যে আছে
কেউ কি খুঁজে পায়?
ফুল ফোটে পরের জন্য
নিজের জন্য নয়।
মানুষ কেন নিজের জন্য,
পরের জন্য নয়?
সব মানুষকে তুমি যদি
বাসতে পারো ভালো।
ভালো মানুষ বলবে সবাই
ঘুচবে মনের কালো।।
মনের সাধ:- দীপ্তি রায়
যদি আমি দুষ্টুমি ক’রে,
পাখি হয়ে উড়ি—
দূর দেশে গিয়ে পখিদের সাথে
খেলতাম লুকোচুরি।
তখন মা ডাকবে আমায়
‘খুকি কোথায় গেলি ওরে?’
আমি উড়ে গিয়ে বসে থাকতাম
গাছের ডালে চুপটি ক’রে।
তখন দেখবো মা,আমায় তুমি
খোঁজো কেমন ক’রে!
আমি গান গেয়ে বেড়াবো
যখন তুমি সাঁঝের বেলায়
ঠাকুর ঘরে যাবে।
তখন তুমি দূরের থেকে আমায়
গান শুনতে পাবে।
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে
তোমার খুকির গানের এ সুর আসে।
যখন তোমার খুকির কথা ভেবে
তোমার মনটা খারাপ হবে
তখন দূরে থাকব না আর
আবার আসবো ফিরে
নাচবো তোমায় ঘিরে
তখন তুমি আমার কানটা ধ’রে
বলবে, ‘দুষ্টু মেয়ে কোথায় ছিলি ওরে?’
আমি তখন বলবো মনে মনে
বুঝবে না মা এই খেলারই মানে!!
রবীন্দ্রনাথ:- কোয়েল সরকার
আমি যদি জন্ম নিতাম
তোমার কালে রবি।
তোমার আশীর্বাণী পেয়ে,
হয়তো হতাম কবি!
তুমি যেন শুরু,আবার
তুমিই যেন শেষ---
তোমার কাব্যে খুঁজেপেলাম,
সবুজ সোনার দেশ।
তোমার গানের বাণী,
সে যে অমৃতেরই ধারা--
বাজে সে সুর হৃদয় মাঝে,
হয় না কভু হারা!
শীতের বৃষ্টি:- লক্ষ্মী মন্ডল
শীতের মাঝে বৃষ্টি এলো
আকাশ ভরা পানি।
উঁকি মারে গগন পানে
শুকনো ডালাখানি।।
হঠাৎ পড়ে বৃষ্টি-ফোঁটা
মুক্ত-মণির মতো।
ধুসর মাঠে প্রাণ ফিরে পায়
দূর্বা-কোমল যত।
ঝরঝরিয়ে বৃষ্টি পড়ে
পাখিরা গায় গীত।
শুরু হ’ল শীতের বৃষ্টি
জমিয়ে এলো শীত।।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
২৬ বার পঠিত ০ ১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩ ০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: সুন্দর পোস্ট +++++++++
শুভকামনা রইল
২. ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯ ০
রইসউদ্দিন গায়েন বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু অপূর্ণ রায়হান,
আপনি রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়ের ছোটদের আসরে এসে ৯টি ইতিবাচক খুশির চিহ্ন দিয়েছেন এবং আমাদের শিশু কবি,লেখকদের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।আমরা হৃদয় দিযে আপনার শুভকামনা অনুভব করলাম।ধন্যবাদ,অশেষ ধন্যবাদ!----রবীন্দ্র বাংলা বিদ্যালয়,পোর্টব্লেয়ার থেকে আমরা মিনতি মন্ডল,উম্মি কুলসুম,মহাশ্বেতা গোস্বামী,খাতিজা খাতুন,অঙ্কুশ কুমার দে,লক্ষী মন্ডল,দীপ্তি রায় ও কোয়েল সরকার।
আন্দামান থেকে বলছি:- তৃতীয় পর্ব
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আন্দামান থেকে বলছি:- তৃতীয় পর্ব
২০ শে সেপ্টেম্বর ২০০১ থেকে ১৭ অগাস্ট ২০০৬ পর্যন্ত মধ্য-উত্তর আন্দামান ছিল আমার সরকারি চাকরির নিযুক্তি। এই পাঁচ বছর সময়কালে দুটি উচ্চতর মাধ্যমিক,চারটি উচ্চ মাধ্যমিক ও দুটি মাধ্যমিক স্কুলে আমার পোস্টিং হয়েছিল। এর মধ্যে চারটির কথা উল্লেখযোগ্য,মায়াবন্দর আদর্শ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় যার অন্যতম। এই স্কুলে হিন্দি,ইংরাজি,তামিল ও তেলেগু— মোট চারটি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলার ঠাঁই নেই সেখানে; যদিও বহু বাঙালির বাস পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে।
এরপর দুর্গম পাহাড়ি এলাকাস্থিত চৈনপুর (যেখানে ১০০ ভাগ বাঙালির বাস) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দেখলাম পুরোটাই হিন্দি মাধ্যম। কোনও একসময় এই স্কুলটির প্রারম্ভিক বিদ্যাশিক্ষা বাংলাতেই ছিল। প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ’র কুটকৌশলে বাংলা মাধ্যমের অকালমৃত্যু ঘটে।
চৈনপুরের দিকে যাওয়ার আনুমানিক ১০ কিলোমিটার আগে ‘মাধ্যমিক স্কুল’ টুগাপুর ৮’। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম, তারপরে হিন্দি মাধ্যম। আহা বিস্ময়ে মরি-মরি! আবার অতি দুর্গম বনাঞ্চল, মোহনপুর, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পাশে দেখি বাঁশের বেড়া ও পাতায় ছাওয়া একটা ভাঙা-চোরা ঘরের মধ্যে ছোট বাচ্চাদের লেখাপড়া চলছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম,ওটা নাকি বাংলা মাধ্যম প্রাধমিক বিভাগ (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত)। নিজের চোখে দেখতে হ’ল, পাঠশালার নামে বাঙালি শিশুদের ‘পাঠ-বন্দীশালা’। এই বন্দীশালা থেকে শিশুরা কবে যে মুক্তি পাবে,তা’ তাদের অদৃষ্টও বোধ হয় জানে না। মজার কথা হ’ল, ওই একই স্কুলে হিন্দি মাধ্যম শাখায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিশেষভাবে নির্মিত পরিচ্ছন্ন শ্রেণিকক্ষে,স্বচ্ছ আলোবাতাসের মধ্যে রমরমিয়ে চলছে লেখাপড়া।.....
সরকারি নির্দেশ ব’লে কথা! ট্রান্সফার অর্ডার। ১৭ইঅগাস্ট,২০০৮ মধ্য-উত্তর আন্দামান থেকে বিদায়, স্থানান্তর ফেরারগঞ্জ,আদর্শ উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দ: আন্দামানে। এখানেও দেখি সেই একই চিত্র,তবে আর এক রূপে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পরে,একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তে হবে হিন্দি মাধ্যমে। ওই একই স্কুলে আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা আছে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত; তবে তার শিক্ষা-মাধ্যম অবধারিতভাবে ‘হিন্দি’। এই মহান আদর্শ’র ফাঁদে প’ড়ে কালক্রমে কত বঙ্গসন্তানকেই যে একটু একটু ক’রে ‘অবাঙালি’ হয়ে যেতে হচ্ছে, তা’ তাদের অনেকেই জানে না। মনে পড়ে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই গানটি—‘হায় বাঙালি হায়! তুই আর বাঙালি নাই। তোর চলন-বলন কথার ধরণ...’
গান প্রসঙ্গে দেশাত্মবোধক একটা হিন্দি গানের কথা মনে প’ড়ে গেল:- ‘দুনিয়া কে রঙ্গ সহনা,আউর কুছ না মুহ সে কহনা’। ভাবার্থ খানিকটা এরকম— দুনিয়ার রঙ্গ-তামাশা সহ্য ক’রে যাও,আর মুখে রা’টি কেড়ো না’। এই অদ্ভুত উপদেশটি কে, কিভাবে নেবেন জানি না, তবে আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনের, ‘বাংলা’র প্রতি যে ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা বা বিমাতৃসুলভ মনোভাব আছে,একথা অনস্বীকার্য।
এসব ঘটনা ছাড়াও যখন দেখি বাংলা মাধ্যমে পাঠরত শিক্ষার্থীদের গণিত,বিজ্ঞান,ইতিহাস,ভূগোল ইত্যাদি গুরূত্বপূর্ণ বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকগুলো ইংরাজি ও হিন্দি ভাষায় মুদ্রিত,তখন বড় বিস্ময় জাগে মনে! কী বিচিত্র এই শিক্ষাব্যবস্থা!
আরও এক অদ্ভূত বিষয়ের কথা ব’লে আজকের পর্ব শেষ করব। পূর্বোক্ত স্কুলগুলিতে আমার কাজ ছিল,স্কুল-শুরুতে প্রার্থনাসহ শপথ-গ্রহণ করানো,নীতিকথা,সাধারণ জ্ঞান ও সবাই মিলে জাতীয় সঙ্গীত (সব মিলিয়ে, এখানে যাকে বলে ‘মর্ণিং অ্যাসেম্বলি’) গাওয়া। তা’ প্রার্থনা ইত্যাদি তো যেমন-তেমন, জাতীয় সঙ্গীতের ভাষা ও বিকৃত/অশ্রাব্য উচ্চারণ-ধ্বণি শুনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে হ’ল। এখানকার বেশিরভাগ স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের উচ্চারণ নমুনা:- ‘চানা-কানা-মানা-আদিনায়াকা-চায়াহে-বারাতা-বাগ্যাবিদাদা...দ্রাবিড়া-উতকালা বাঙ্গা’...ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এই বিকৃত উচ্চারণ আর কিছু নয়, হিন্দি-তামিল সংস্কৃতির মিশ্রণ-প্রভাবজাত।
জাতীয় সঙ্গীত আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই,এর মর্যাদা রক্ষা করা প্রতিটি ভারতবাসীর নৈতিক দায়িত্ব। এই গুরুদায়িত্ব বহন করতে গিয়ে আমি যখন বলি— ‘জাতীয় সঙ্গীতের ভাষাটি তো ভাই বিশুদ্ধ বাংলায়,তাই বাংলায় তা শুদ্ধ উচ্চারণই কাঙ্খিত’। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আমার শিক্ষকজীবনে,শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত শেখাতে গিয়ে দেখেছি, সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে হিন্দিভাষী শিক্ষক-শিক্ষকাদের জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে অজ্ঞতা। তাঁদের ধারণা, ‘রাষ্ট্রগান’-গানের ভাষা হিন্দি, তাই সেই ভাষায় উচ্চারণরীতিই প্রযুক্ত হবে। আর ভ্রান্ত-ধারণাজাত এই বিকৃত ট্রাডিশন আন্দামানে আজও সমানে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৯
১০৪ বার পঠিত ০ ০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
১. ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫ ০
তুষার কাব্য বলেছেন: বাহ...বেশ লাগলো আন্দামানের গল্প।যাবো একদিন নিশ্চয় ওখানে।অনেক দিনের ইচ্ছে।
ভালো থাকুন।শুভকামনা...
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৫ ০
লেখক বলেছেন: প্রিয় পাঠক-বন্ধু, তুষার কাব্য---
ধন্যবাদ আমার লেখাটি প'ড়ে সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য! আপনার আন্দামানে আসার ইচ্ছা পূরণ হোক,এই কামনা করি! ভাল থাকুন!!
২| ১১ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৫:৩২
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠক-বন্ধু বিজন রায়,
আপনি যে আমাকে খুঁজে এতদূর এসে আপনার সুন্দর ও প্রেরণাদায়ক মন্তব্য করেছেন, তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন! সঙ্গে থাকুন।... আন্দামান, ভারত থেকে রইসউদ্দিন।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪৯
বিজন রয় বলেছেন: আপনি তো অনেক পুরানো ব্লগার।
নিক হারিয়ে নতুন করে ফিরে আসা।
তো চলুক এই নিকে ব্লগিং।
শুভকামনা। শুভব্লগিং।