নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমেদাবাদের হোটেল অ্যাম্বাসাডরেই তখনও থাকছিলাম আমি । হোটেলটা ততদিনে আমার দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছিল । মূলত মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকা খানপুরে অবস্থিত এই হোটেলটা আমার পক্ষে যথেষ্ট সুবিধাজনক ছিল । পরে জেনেছিলাম ওখান থেকে মাত্র কয়েকটা ব্লক পরেই ছিল রাজ্য বিজেপি-র দপ্তর । হঠাৎই সবার নজর এসে পড়ল আমার ওপর । বিজেপি নেতারা বলতে লাগলেন, আইয়ূব নামে একজন অল্পবয়সী ছোকরাই এইসব তথ্য ফাঁস করেছে । যে-কোনো কারণেই হোক তাঁদের মাথায় আসেনি যে, অন্তর্তদন্তমূলক সাংবাদিকটি কোনো মেয়েও হতে পারে । আমার তাতে কোনো অসুবিধে ছিল না, বরং এর ফলে নির্বিঘ্নে কাজ করে যেতে পারছিলাম । তবে এই সুবিধেটা বেশিদিন রইল না । রিপোর্ট প্রকাশিত হবার কয়েকদিন পরে অজানা নম্বর থেকে একটা মেসেজ এল আমার ফোনে, ‘আমরা জানি তুমি কোথায় আছ’।
জীবন সত্যিই পালটে গেল । সেইদিন থেকে শুরু করে তিনদিন অন্তর বাসস্থান পালটাতে লাগলাম; আমেদাবাদের আইআইএম ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন গেস্ট হাউস, হস্টেল আর জিমখানায় । পলাতকের মতো জীবন । এইসময় মোবাইল ফোনের বদলে ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করতে শুরু করি । অবশেষে সিবিআই-কে যা-কিছু তথ্যপ্রমাণ জোগানো সম্ভব সবটুকু দিয়ে এবং আমার ফলো-আপ রিপোর্ট লেখা শেষ করে মুম্বাইতে এসে পৌঁছোলাম । ঠিক করলাম জীবনযাপনকে একটা রুটিনের মধ্যে আনতে হবে ।
কিন্তু ভবিতব্য আমার জন্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল । রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অমিত শাহকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই—স্বাধীন ভারতের এই প্রথম কোনো কার্যরত গৃহমন্ত্রী গ্রেপ্তার হলেন । চারদিকে আলোড়ন পড়ে গেল । অধিকাংশ জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা গান্ধীনগরে সিবিআই দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করলেন । এই চাঞ্চল্যকর গ্রেপ্তারির পরবর্তী ঘটনাস্রোতের রিপোর্ট করার জন্য গুজরাতে ফিরতে হল আমাকে ।
শাহের আমলে যে-সব পুলিশ অফিসার বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়েছিলেন, শাহের গ্রেপ্তারি যেন তাদের নতুন জীবন দিল । এইসময় বিভিন্ন অফিসার আমাকে কৌশলে জানাতেন যে তাঁরা আমার সঙ্গে কথা বলতে চান । আগে যাঁরা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন, এখন যেন তাঁরা কথা বলার শক্তি অর্জন করেছেন । অধিকাংশ কথোপকথনই ছিল ব্যক্তিগত, অফ দ্য রেকর্ড, কিন্তু সেটুকু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল সংঘর্ষের ঘটনাগুলো হিমশৈলের চূড়ামাত্র । গুজরাতের বিভিন্ন ঘটনার ফাইলে আরও ভয়াবহ কিছু লুকিয়ে আছে । আমরা কেউই সত্যের কাছাকাছি পৌঁছোতে পারিনি । বোঝা যাচ্ছিল বিগত এক দশকে বিচারব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে । মানুষের জীবনের নিরাপত্তার ভার যাঁদের হাতে, তাঁরা বিক্রি হয়ে গেছেন । সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভুয়ো সংঘর্ষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক হত্যা পর্যন্ত বহু বিষয়ে বহু বেয়াড়া সত্য সামনে আসার জন্য অপেক্ষা করছিল । কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনোটাকে প্রমাণ করা যাবে কীভাবে ?
সাংবাদিকতার প্রথম কথাই হল প্রমাণ এবং আমার হাতে কোনো প্রমাণই ছিল না । ছিল শুধু কথোপকথন আর কিছু ঘটনার বিবরণ, অফ দ্য রেকর্ড স্বীকারোক্তি । এ-সব প্রমাণ করব কী করে ? তখনই আমি এমন একটা সিদ্ধান্ত নিই, যা আমার জীবনকে পেশাগত ও ব্যক্তিগতভাবে পালটে দেয় । রানা আইউবের বদলে দেখা দেবে মৈথিলী ত্যাগী, কানপুরের এক কায়স্থ মেয়ে, ‘আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট কনজারভেটরি’র ছাত্রী, গুজরাতের উন্নয়ন এবং সারা পৃথিবীর অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা সম্বন্ধে একটা চলচ্চিত্র বানানোর জন্য যে দেশে ফিরে এসেছে । (ক্রমশঃ)....
১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৯
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: প্রিয় রাজীব নুর ভাই, ধন্যবাদ আপনার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য! আপনি সঙ্গে থাকলেই আমি অনেক উৎসাহ পাই। ভাল থাকবেন ! সঙ্গে থাকবেন এভাবে । শুভেচ্ছা নিরন্তর !!
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলেই ভয়ঙ্কর।