নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের ময়নাতদন্ত (গুজরাত ফাইলস) পর্ব-৮

১৯ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৬

ভিজিটিং কার্ড, পাঁশুটে ধূসর চশমা, হেয়ার স্ট্রেটনার, গলায় বাঁধার কয়েকটা রংচঙে বাঁদনা আর রেকর্ডিং করার কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আমেদাবাদ পৌঁছলাম । মাইক আসবে দু’দিন পরে । মৈথিলী ত্যাগীর নামে চটপট একটা সিম কার্ড জোগাড় করে নিলাম । আমেদাবাদে আমার তথাকথিত ‘অভিভাবক পরিবার’-এর দেওয়া নথিপত্রের সাহায্যে এত সহজে সিম কার্ডটা পেয়ে গেলাম দেখে বেশ অবাকই লাগল । অন্তর্তদন্ত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে । কোনো দামি হোটেলে থাকার বিলাসিতা করা আমার বা আমার সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয় । তাছাড়া আমি একজন উঠতি চলচ্চিত্রকারের ভূমিকায় অভিনয় করছি যার আর্থিক সামর্থ্য সীমিত । এ-রকম একজন মানুষের থাকার বন্দোবস্ত একমাত্র স্থানীয় কেউই করতে পারে । এবার সাহায্য পেলাম এক শিল্পী-বন্ধুর কাছ থেকে, আমেদাবাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি মহলে যার ভালো যোগাযোগ আছে । বেশি প্রশ্ন করে আমাকে অস্বস্তিতে ফেলেনি সে । আমি একজন সাংবাদিক, যার অন্তর্তদন্তের জেরে গুজরাতের গৃহমন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়েছিল—এটুকুই তার কাছে যথেষ্টই ছিল ।নিজের প্রভাব খাটিয়ে ‘নেহরু ফাউন্ডেশন’ নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিল সে ।
ফাউন্ডেশনের হস্টেলের ওয়ার্ডেনের কাছে একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে আমার পরিচয় দিল বন্ধুটি । ওয়ার্ডেন আমার প্রায় তাকালেনই না, হাত-পা নেড়ে বন্ধুটির সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন । লাগোয়া বাথরুম-সহ ২৫০ বর্গফুটের একটা ঘর জুটল, ভাড়া দিনপিছু ২৫০ টাকা । পরে হস্টেলের অন্য বাসিন্দারা আমার অন্তর্তদন্তের কাজে অনেক সাহায্য করেছিল । এরা ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছাত্র—জার্মানি, গ্রিনল্যান্ড আর লন্ডনের ।
প্রথম পরিচয় হল হস্টেলের ডিন বা ম্যানেজার মানিকভাই (নাম পরিবর্তিত)-এর সঙ্গে আমার বন্ধুটি তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘গুজরাত নিয়ে একটা সিনেমা বানানোর জন্য ম্যাডাম এখানে এসেছেন’। মানিকভাই বললেন, ‘বাঃ দারুণ । আমার শহর আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সম্বন্ধে ভালো ভালো কথা বলুন । এই আমেদাবাদ একটি চমৎকার শহর’। সেইসঙ্গেই জানালেন শহরটা আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন । আমার ঘরে একটা একশয্যার খাট, একটা লেখার টেবিল আর একটা বুক স্ট্যান্ড রাখার বেশি জায়গা ছিল না । কিন্তু হস্টেলের অবস্থানটা জায়গার অভাব পূরণ করে দিল । গুজরাতের সবথেকে অভিজাত এবং মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত এই হস্টেলটা পরবর্তী ছ’ মাসে আমার বাড়ির-বাইরে বাড়ি হয়ে উঠেছিল ।
পরের দিন সকালে মাইক এসে পৌঁছল । মাত্র ১৯ বছর বয়সী উজ্জ্বল, লম্বা ফরাসী তরুণ, একমাথা এলোমেলো চুল । আমার বন্ধুর বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করলাম । আমার সঙ্গে হস্টেলে যাওয়ার আগে অল্পকথায় বুঝিয়ে দিলাম, তাকে ঠিক কী করতে হবে ।
আমার ঘরের লাগোয়া একটা ঘর পরবর্তী এক মাসের জন্য মাইককে ছেড়ে দিলেন মানিকভাই । এর পিছনে মাইকের তাঁকে ‘কেমোছো’ বলার অবশ্যই একটা ভূমিকা ছিল । মাইকের শেখার ইচ্ছে ছিল, বিভিন্ন সংস্কৃতিকে জানতে-বুঝতে চাইত, তবে তার সবথেকে প্রিয় জিনিস ছিল খাবার । সেদিন রাতে আমাদের প্রথম যৌথ নৈশভোজনে ছিল আমেদাবাদের ‘পাকওয়ান’ নামে পরিচিত জনপ্রিয় থালি । এখন আমি আর মাইক স্মৃতিচারণ করতে গেলে মনে পড়ে—সে রাতে অন্তত দু’ডজন পুরি আর ছ’বাটি হালুয়া উড়িয়ে দিয়েছিল ও, যা দেখে হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম আমি ।
খাওয়া সেরে হস্টেলের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মাইক জিজ্ঞেস করল, ‘যখন শুধু আমরা দু’জনই থাকব, তখন কি আমি তোমাকে রানা বলে ডাকতে পারি ?’
‘না । তুমি এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তোমার কাছে আমি মৈথিলী হয়েই থাকব’। মাইক কথা রেখেছিল । প্যারিস রওনা হওয়ার আগে আমাকে পাঠানো বিদায়ী কার্ডে হিন্দিতে সে লিখেছিল, প্যারী মৈথিলী, আপনা খেয়াল রাখনা—মাইক’। (ক্রমশঃ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.