নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৪৯ সালের ৯ই জুলাই রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থী ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে তাদের নিজস্ব ক্ষমতার ভিত্তিকে জোরদার করতে দিল্লিতে আরএসএস প্রথম বিদ্যার্থী পরিষদের সূচনা করে। এবিভিপি নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করে। কিন্তু এরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নেয়, আর ক্যাম্পাসে হানাহানি, অন্য দলের প্রার্থীদের অপহরণ ইত্যাদিতে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমানে পাল্লা দেয়। বিদ্যার্থী পরিষদের কর্মীরা অনেকেই আরএএস-এর স্বয়ংসেবক। তারা নির্বাচনে জনসঙ্ঘ বা বিজেপি প্রার্থীর হয়ে কাজ করে। এবিভিপি-র বেশির ভাগ কর্মী ও নেতা ছাত্রাবস্থার পর বিজেপি-র হয়ে কাজ করে। যেমন গোবিন্দাচার্য এককালে ছিলেন নামী এবিভিপি নেতা, এখন তিনি বিজেপি-র জাতীয় সেক্রেটারি। সুশীল মোদীও ছিলেন এবিভিপি-র বড় মাপের নেতা, তিনি এখন বিহারে বিজেপি-র নেতা। প্রয়াত বিজেপি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবিভিপি-র নেতা ছিলেন। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
১৯৭৫ সালে সমাজবাদী নেতা ও একসময়ে মহাত্মা গান্ধী ও বিনোবা ভাবের ঘনিষ্ঠ অনুগামী জয়প্রকাশ নারায়ণ (জেপি) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের দুর্নীতি, অকর্মণ্যতা ও গুন্ডামির বিরুদ্ধে এক বিশাল আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনটি বোধ হয় স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন, যা এদেশের রাজনৈতিক চিত্র চিরকালের মত পালটে দেয়। গুজরাটের একদল ছাত্র প্রথম এই আন্দোলন শুরু করে। প্রথমে এর নেতৃত্বে ছিল সমাজবাদী ও সর্বোদয় আন্দোলনের ছাত্ররা, যারা মতাদর্শগতভাবে জয়প্রকাশ নারায়ণের অনুগামী। কিন্তু শীঘ্রই আন্দোলনের রাশ চলে গেল ক্রমশ মুছে আশা ভারতীয় জনসঙ্ঘ ও এবিবিপি-র হাতে। বিহারের সুশীল মোদীর মত ছাত্রনেতা এই আন্দোলনের নেতা হয়ে গেলেন। অন্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন রাম বাহাদুর রাই, রাজ কুমার ভাটিয়া, অরুণ জেটলি, মদন দাস, সুনীল মিত্তাল।
জেপি-র আন্দোলনে বিদ্যার্থী পরিষদের ভূমিকা দুটি কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি আরএসএস, জনসঙ্ঘ, এবিভিপি ও এদের নেতাদের জাতীয় স্তরে লোকের সামনে তুলে ধরল। তাদের পক্ষে এটা খুব প্রয়োজনীয় ছিল, কারণ মানুষ তাদের ভুলতে বসেছিল। আর দ্বিতীয়ত এটা তাদের কর্মী ও নেতাদের কাজের এলাকা বাড়িয়ে দিল। এই নেতারা জাতীয় ও রাজ্য স্তরে ক্ষমতা দখলের নতুন কৌশল প্রণয়ন করলেন। এভাবে ভারতের রাজনৈতিক চালচিত্রে এই গোষ্ঠীটি হয়ে উঠল সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলির একটি।
অনেকে মনে করেন, ইন্দিরা বিরোধী এই আন্দোলনে সিআই-এর হাত ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারী ধরন, তাঁর নৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত কুখ্যাত কংগ্রেস দল, তাঁর অত্যাচারী ছেলে সঞ্জয় গান্ধী—এ সমস্ত সত্ত্বেও তিনি ছিলেন একজন সমাজতন্ত্র অভিমুখী নেতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের মধ্যে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে তিনি উচ্চ প্রশংসিত ছিলেন। তাঁর সময়ে বেশ কিছুদিন ধরে মার্কিন ও অন্যান্য বিদেশী পুঁজিকে ভারতের বাজার থেকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ভারতের ওপর সোভিয়েত ইউনিয়নের ও সমাজ তন্ত্রের একচেটিয়া প্রভাব ভাঙতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সিআইএ। এর আগে তারা সমাজতন্ত্র বিরোধী জোট গড়তে বিশেষ সফল হয়নি। জেপি-র আন্দোলন তাদের কাছে এক আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে এলো। জেপি-র আন্দোলনে তার নিঃস্বার্থ নেতৃত্বকে সরিয়ে তার জায়গায় চলে এলো কিছু দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী। ইন্দিরার পরে এলো জনতা দলের সরকার—তাতে ছিল সমাজবাদী, মধ্যপন্থীরা ও জনসঙ্ঘ। কিন্তু এই সরকারের মধ্যে বাম ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে ঝামেলা ক্রমশ বাড়তে থাকে। অন্তর্কলহের জেরে শাসক জনতা পার্টিতে ভাঙন ধরে, এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৮০ সালে জনতা সরকারের পতন ঘটে। প্রাক্তন জনসঙ্ঘীরা, যারা আগে নিজেদের দল তুলে দিয়ে জনতা দলে যোগ দিয়েছিল, তৈরি করে তাদের নতুন দল—ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
বিজেপি পরে এদেশে তাদের দক্ষিণপন্থী রাজনীতির জোর বাড়াতে সক্ষম হয়। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় আসেন, কিন্তু ১৯৮৪ সালে তিনি তাঁর শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হন। অনেকের ধারণা, এটিও সিআইএ-র কাজ।..... (ক্রমশ)
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০১
গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: খুব সুন্দর বলেছেন, রাজীব নুর ভাই। ইন্দিরা গান্ধীর জন্য আমরা সোনার বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছি। তবে এক্ষেত্রে বাংলার বীর সন্তান ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছাড়া, স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হত না। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আপনার সুচিন্তিত মত-প্রকাশের জন্য!
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১০
রাজীব নুর বলেছেন: ইন্দিরা গান্ধী ভালো মানুষ। অন্তত আমাদের জন্য।