নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

গায়েন রইসউদ্দিন

গায়েন রইসউদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব মানুষের ধর্ম এক, স্রষ্টাও এক

১২ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:৪৪

সব মানুষের ধর্ম এক, স্রষ্টাও এক
‘ঈশ্বর এক, ধর্ম এক, প্রেরিত পুরুষ তাঁর বার্তাবাহী’। ধর্ম মানে কাজ। যেমন চোখের কাজ দেখা, কানের কাজ শোনা, জলের কাজ তৃষ্ণা নিবারণ, খাদ্যের কাজ ক্ষুধানিবৃত্তি। আর মানুষের কাজ হল মানবিকতা অর্থাৎ মানবিক বুদ্ধি-বিচার সহযোগে কল্যাণমূলক কার্য-সম্পাদন। পৃথিবীর সব কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি, বৃক্ষ-লতাপাতা তাদের নিজস্ব ধর্ম পালন করে— মানুষেরও পালন করতে হয়, তাঁদের মানবিক ধর্ম। সবাই যখন নিজস্ব ধর্ম পালন করে, তবে সমস্যা কোথায়? ‘জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে, সে-জাতির নাম মানুষ জাতি’। এখন এই যে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ এসব কেন? এই দলাদলির মানে কী? একই মানবগোষ্ঠীকে ভেঙে ভিন্ন ভিন্ন দলে বিভক্ত করার উদ্দেশ্য কী? আমি মাত্র কয়েকটা দলের কথা বললাম। আবার, সেমেটিক-অসেমেটিক দল বিভাজন করতে গেলে ছোট-খাটো প্রবন্ধে কাজ হবে না—বিশালাকার এক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করতে হবে। মূলতঃ হিব্রু, আরব, আসিরীয় ও ফিনিশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেমেটিক ধর্মের উদ্ভব ঘটেছে। আর তার বিপরীত অসেমেটিক ধর্ম বলতে বোঝায় আর্য-অনার্য। সেমেটিক-অসেমেটিক শব্দ পরিচিতি এরূপঃ বাইবেলের বর্ণানুসারে নূহ্ ঈশ্বর-দূতের পুত্রের নাম ছিল ‘শাম’। তাঁর বংশধরগণ ‘সেমেটীয়’ নামে পরিচিত। আর অসেমেটিক বলতে আর্য-অনার্যদের বোঝায়। আর্যরা আবার বৈদিক, অবৈদিক এই দু’ধারায় বিভক্ত ছিল। বৈদিক ধর্মকে ‘হিন্দুবাদ’ বা ‘ব্রাহ্মণ্যবাদ’ নামে অভিহিত করা হয়। আর অবৈদিক ধর্মগুলো হল শিখবাদ, বুদ্ধবাদ, জৈনবাদ ইত্যাদি। জরাথ্রুস্টীয় ধর্মও একটি আর্য-অবৈদিক ধর্ম। অনার্য ধর্ম ‘কনফুসীয়’ ও ‘তাওবাদ’-এর উৎপত্তি হয়েছিল চীনদেশে। ‘শিন্টো’ ধর্মের উৎপত্তি জাপানে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীতে এতগুলো ধর্মাবলম্বীদের কাজ(ধর্ম) কি আলাদা-আলাদা? নাকি সকলের কাজ (ধর্ম) এক? সজ্ঞান-সচেতন মানুষ কী বলবেন? আমাদের সকলের শারীরিক ধর্ম বা কাজ এক, তাই না? আর আমরা যেহেতু মানুষ, তাই আমাদের মানবিক গুণগুলিও এক। এককথায় আমাদের সকলের মানবিক ধর্মও এক। তাই যদি হয়, তবে যুগে যুগে কেন বিভেদ-দ্বন্দ্বে জর্জরিত পৃথিবী?
আমার বেশ মনে পড়ে—ছেলেবেলায় একরকম মজার খেলা দেখেছিলাম। একদল ছেলের দিকে একটি সিকি (২৫ পয়সা) বা আধুলি (৫০ পয়সা) ছুঁড়ে দিয়ে কোনও একজন যুবক, বয়স্ক বা বৃদ্ধ মজা দেখতে থাকে—যে নিতে পারবে, সেটি তারই হয়ে যাবে। আর একটা খেলা দেখেছিলামঃ- দুটি ছেলেকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সিটি বাজিয়ে মারামারি লাগিয়ে দেওয়া হত— হার জিতের খেলা। কখনও অধিক সংখ্যক ছেলে দল বানিয়ে এরকম মারামারি খেলা চলতো। মার খেয়ে কেউ ঘায়েল হলে অন্য দল আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়তো, চিৎকার-চেঁচামেচি করতো। আঘাতপ্রাপ্ত বা আহত ছেলেটি মরলো কি বাঁচলো, সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। অসহায় ছেলেটির প্রতি তাদের কোনো করুণা বা সহানুভূতির লেশমাত্র থাকতো না। এইসব দলাদলি, মারামারির নগ্নপ্রকাশ আজ দেখতে পাই বড়দের মধ্যে। কেন? কেন, এই মারামারি খেলা?
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য একটাই—আর তা হল ধর্ম-সংক্রান্ত ভ্রান্তির নিরসন আর স্রষ্টা-সম্পর্কিত ধারণার অস্পষ্টতা দূরীকরণ, যাতে মানুষে মানুষে ভ্রতৃত্ববোধের সঞ্চার হয়। নাস্তিকতাবাদ সম্পর্কে অনেক কিছু বলার থাকলেও আজ নয়। আজ বলবো, যাঁরা স্রষ্টায় বিশ্বাসী তাঁদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কথা। একটা কথা যুক্তিপূর্ণ যে স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি সম্ভব নয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছুই সৃষ্টি হয় না (যদিও ‘ডারউইন’ বিবর্তনবাদের কথা বলেছেন, তা এখানে আলোচ্য নয়)। এখন আসুন, আমরা জানার চেষ্টা করি—পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলিতে স্রষ্টা-সম্পর্কিত বক্তব্য কী? প্রথমে হিন্দু ধর্মের কথায় আসি। আর্য ধর্মগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ধর্ম হল হিন্দুধর্ম। ‘হিন্দু’ একটি ফারসি শব্দ। ‘সিন্ধু’ (নদীর নাম) পারসি ভাষায় বলা হয় ‘হিন্দু’। হিন্দুধর্মের মতবাদ সাধারণত বেদ, উপনিষদ, গীতা প্রভৃতি গ্রন্থ-নির্ভর।
প্রথমেই দেখা যাক, প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋগবেদ কী বলছে: ‘জ্ঞানী ঋষিগণ এক ঈশ্বরকে বহু নামে ডাকে’ (ঋগবেদ ১:১৬৪:৬৪)। উপনিষদে আছে ‘একমাদ্বিতীয়ম অর্থাৎ ‘তিনি এক, দ্বিতীয় ছাড়া’ (চান্দগোয়া উপনিষদ ৬:২:১)
এবার দেখা যাক, ইসলামী ধর্মগ্রন্থ আল্ কোরআন কী জানাচ্ছে—‘বলুন, তিনি আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় (সুরা ইখলাস, প্রথম আয়াত)। শিখদের ধর্মগ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহেব’-এর প্রথম খন্ডে, (জাপুজী অধ্যায়ের প্রথম) ‘জাতকহীন, তিনি স্বয়ম্ভু, তিনি মহান এবং করুণাময়’। জরাথ্রুষ্ট্রীয় ধর্মে স্রষ্টা বা ‘আহুর মাজদা’-র আটটি গুণাবলী উল্লেখিত হয়েচে—(১) তিনি একক, (২) কোনও কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, (৩) তিনি আদি ও অন্তহীন, (৪) তাঁর কোনো আকার-আকৃতি নেই, (৫) তিনি মানবীয় ধারণা-কল্পনার বহু ঊর্দ্ধে, (৬) তাঁর পিতা-মাতা নেই, (৭) তিনি মানুষের নিজের চেয়েও নিকটতর, (৮) দৃষ্টি তাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না।
খ্রিস্টীয় ধর্মে স্রষ্টার পরিচয়: ‘আমিই প্রভু, এবং এছাড়া আর কেউ নেই। আমি ছাড়া আর কোনও ঈশ্বর নেই’ (বাইবেল, ইসাইয়া ৪৫:৫)।
তাহলে, এতক্ষণে স্পষ্ট হল যে, সব মানুষের ধর্ম যেমন এক, স্রষ্টাও এক। তবে কেন মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ দৃষ্টিগোচর হয়? ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ অন্তর্দ্বন্দ্ব-বহির্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়? এমনকি মারামারি খুনোখুনিও লেগে থাকে, কেন এসব? ধর্ম তো মানুষের শান্তির বাণী শোনায়, তা সে যে-কোনো ধর্মই হোক। কিন্তু যদি অহরহ তার বিপরীত দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়, তা কি শুভবুদ্ধসম্পন্ন মানুষের কাছে প্রশ্নসূচক নয়? বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব; / ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ’। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কন্ঠেও উচ্চারিত হয়েচিল সাম্যের বাণী। ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? / কান্ডারী বলো, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’-র’। এইসব সতর্কবার্তা সত্ত্বেও সারাদেশ শুধু নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে চলেছে মানুষে মানুষে সন্ত্রাসের ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা। জানি না মানুষের এই চরম মূর্খতার শেষ কোথায় !(?) এবার কিছুক্ষণ চোখ রাখা যাক স্বদেশের প্রতি। অখন্ড ভারতবর্ষ, পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ বললে আশা করি অত্যুক্তি হবে না। রবীন্দ্রনাথের কথায়—‘হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড়, চীন--/ শক-হুনদল-পাঠান—মোগল এক দেহে হল লীন’।
যুগ যুগ ধরে এই দেশ, শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু সর্বযুগে কিছু বিভেদকামী মানুষ অশান্তির বার্তা ছড়িয়েছে সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। ধর্মগ্রন্থে যুদ্ধের (ধর্মযুদ্ধ) মর্মার্থ না বুঝে কারণে অকারণে যুদ্ধ বাধিয়েছে নিজেদের মধ্যে। কখনো লোভের লড়াই, কখনো ক্ষোভের লড়াই, কখনো অহঙ্কারের লড়াই, মাতৃভূমির ভাগাভাগি নিয়ে লড়াই। কিন্তু কোনো হিংসাশ্রয়ী ধার্মিক শক্তিধরে,র একবার ভুলেও মনে হল না যে, মা-কে ভাগ করা যায় না। সব মানুষের ধর্ম যে এক, এ শিক্ষা তারা গ্রহণ করল না। রাজনৈতিক শক্তি-মদমত্ত হয়ে, ভাই ভাইকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে দ্বিধাবোধ করল না। দেশ-বিভাজনের পরে, সেদিনের সেই হিংসার আগুন আজও থামেনি। আজকাল প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে অসহিষ্ণুতার কথা শোনা যায়। এই অসহিষ্ণুতার সঠিক কারণ ও তার প্রতিকারের কথা না ভেবেই আমরা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হই। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী এক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক: ‘কাউকে যদি বলিস কিছু, সংশোধনের তরে / গোপনে তা’ বুঝিয়ে বলিস সমবেদনা ভরে’। আমার বিশ্বাস— এই একটিমাত্র উপদেশবাণী থেকে, সমগ্র মানবজাতি যদি শিক্ষা গ্রহণ করে, তাহলে ‘অসহিষ্ণুতার অধর্ম’ চিরদিনের জন্য বিদায় নেবে। তখন পৃথিবীই হবে প্রকৃত শান্তির আলয় !!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.