নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন নিয়েই মানুষের জীবন। স্বপ্ন আছে বলেই আমরা বতর্মানের শত কষ্টকে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলি।

রাঙা প্রভাত

আমি খুবই সাধারন খেটে খাওয়া একজন মানুষ। ঘুরতে পছন্দ করি এবং ছবি তোলাও আমার একটি নেশা।

রাঙা প্রভাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

না বলা কথা

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

সবে মাত্র চাকুরিতে জয়েন করেছি। ঢাকার বাহিরে পোস্টিং। অফিসের পরে তেমন কোন কাজ থাকে না। গ্রাম এলাকা, বিনোদনের জায়গা কম। একমাত্র বিনোদন হচ্ছে বহু কষ্টে কেনা কম্পিউটার খানা। মুভি দেখা , বই পড়া এসব করেই দিন জাচ্ছিল। এর মধ্য নিলাম ইন্টারনেট কানেকশন। পড়ার মাত্রা বেড়ে গেল বহুগুনে এবং তখনই সোসাল মিডিয়া ফেসবুকের সাথে পরিচয়। ভালই দিন কাটছিল কিন্তু অঘটনটা ঘটলো এক বিকেল বেলা।

একটি মেয়ের প্রফাইল ছবি দেখে খুবই পছন্দ হয়ে যায়। সেই থেকে শুরু। আস্তে আস্তে মেসেজ আদান প্রদান। মোবাইল নাম্বার বিনিময়। এর পরে কথা শুরু। ও থাকে ঢাকা আর আমার পোস্টিং খুলনাতে। নতুন চাকুরি বিধায় ছুটিছাটা খুব কম। তার পরেও অনেক কস্টে ঢাকায় এসে দেখা করতাম। আমার সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে নানা ধরনের গিফ্ট কিনে দিতাম। দিনগুলো খুব রংইন মনে হত।

পারিবারিক ভাবে আমি নিন্মমধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। এক ভাই , এক বোন। বোনটি জন্মের ১০ বছরের সময় মারা যায়। থখন আমিই বাবা মার একমাত্র সন্তান। জীবনে কখনো ভাবিনি যে প্রেম করে বিয়ে করবো। বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান। বাব মায়ের পছন্দেই বিয়ে করবো , এটা ছোটবেলা থেকেই মনে ছিল। যাই হোক মেয়ের সাথে বন্ধুত্য হওয় পরে ৩/৪ বছর কেটে যায়। এই কয়েক বছরে প্রতি বছর ৩/৪ বারের বেশি দেখা হত না। যখন বিয়ের কথা ওঠে তখন বাব মা বলেন যে আমার কোন পছন্দ আছে কিনা? আমি বল্লাম আছে, আপনারা পছন্দ করলেই বিয়ে হবে। এর পরে মেয়ের বাব মা এর ব্যপারে জানতে চান। মজার ব্যপার হচ্ছে আমি তখনো জানতাম না যে মেয়ের ফ্যামিলি কি করে? তখন জিজ্ঞেস করে জানতে পারি যে মেয়ের ফ্যামিলি খুবই উচ্চবিত্ত ফ্যামিলি। তখনই আমি ওকে এভোয়েড করা শুরু করি, কারন ছোটবেলা থেকে উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে মেয়েদের ব্যপারে আমার বিশাল অনিহা ছিল। আমি ব্রেকআপ করে দিচ্ছি জানতে পেরে মেয়ে বলে যে, আমি যেভাবে রাখবো সে সেভাবে থাকবে। আমি তাকে বল্লাম- তোমার বাবা মা তোমাকে যেভাবে মানুষ করেছেন তার ১০ ভাগও আমি আয় করি না। কিন্তু মেয়ের এক কথা যে সে আমাকেই বিয়ে করবে। আমার আব্বু আম্মু শুধু আমাকে বল্লেন - মেয়ের ফ্যামিলি রাজি আছে কিনা। ও বলে যে সে রাজি করাবে। আমি তার পরেও ওর বাবা মায়ের সাথে সরাসরি কথা বলি।

ওদের বাসায় ঢোকার পরে আমি প্রচন্ড নেগিটিভ ফিলিংস পাই। কেন জেনো মনে হচ্ছিল কেউ চাচ্ছিল না বিয়েটা হোক। মেয়ের মা শুরু থেকে সরাসরি আমার বিরোধিতা করেন। যাই হোক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই যে, ওকে বিয়ে করবো না। কিন্তু মেয়ে বলে যে বিয়ে না করলে সুইসাইড করবে এই সব। সব কিছুর পরে আমি হার মানলাম এবং ২০১৩ সালে আমাদের বিয়ে হয়। খুবই জাঁকজমক ভাবে বিয়েটা হয়।

বিপত্তি শুরু হয় বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে। মেয়ের মা কাবিন করতে চাইলেন ৫০ লক্ষ টাকা। আমার বাব মা বল্লো যে ছেলের এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। যাই হোক মেয়ের বাবার কথায় শেষ পযর্ন্ত ১৫ লক্ষ টাকায় দফা হয়।

যাই হোক বিয়ের কিছুদিন পরে থেকে ঝামেলা শুরু হয়। এর মধ্যে আমার পোস্টিং হয় ঢাকা। আমি বাহিরে আলাদা বাসা নিতে চাইলে বিপত্তি শুরু হয়। ওর মা কিছুতেই চাচ্ছিলেন না যে আমি আলাদা বাসা নেই। আর আমার স্ত্রী ও চাচ্ছিল না। এর মধ্যে একদিন আমার বাবা মা ঢাকায় আসেন খুলনা থেকে। আমাকে দেখতে এসে ওদের বাসায় আসেন। জোর করে আমার শশুর তাদের ওই বাসায় রেখে দেন ওই দিন। পরের দিন আমার বাবা মা চলে যায়। তখন ওদের বাসার কাজের মেয়ে আমাকে বলে- ভাইয়া চাচা চাচী কে আর এই বাসায় আইনেন না, সবাই আপনার পিছে খুব খারাপ কথা কয়।

এর এক সপ্তাহ পরেই বাসা নেই। কিন্তু আমার বউ আসে নি। ৩/৪ মাস পরে শশুর জোর করে মেয়েকে পাঠায় বাসায়। অল্প কিছুদিন থেকে আবার চলে যায়। রান্না বান্না যে একটি বাসায় হয় সেটা ৩ বছে দেখি নাই। বেশির ভাগ দিন বিস্কুট অথবা রেড়িমেট খাবার খেয়ে থাকি আমি। কারন ওতো বাসায় থাকে না। আমার বাবা মা যখন ঢাকায় আসে তখন ওর মাথা যেন খারাপ হয়ে যায়। কিছুতেই সহ্য করতে পারে না আমার বাবা মা কে। চুপচাপ করে সহ্য করি।

বাসায় যতক্ষন থাকে ততক্ষন হিন্দি সিরিয়াল দেখে সময় কাটায়। কিছু হলেই - আমি ছোটলোক্, গরিব , বস্তিতে থাকি বলে গালাগালি করে। তার পরেও মুখ বুজে সব সহ্য করে যাই। আমি নাকি ওকে ঠিকমত ভরনপোষন করতে পারি না। অথচ আমার সামান্য চাকুরির সব টাকা খরচ হয় ওর পিছনে। শেষ তিন বছরে আমি নিজে মনে হয় দুইটা শার্ট প্যান্ট ও কিনতে পারি নাই। অথচ প্রায় প্রতি মাসেই ওর ১০/১৫ হাজার টাকার জামা কাপড় চাই।

তার পরেও মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাই। এখন আমার বাবা মায়ের কষ্ট ভরা মুখের দিকে তাকাতে পারি না। কারন বিয়ে করার ভুলটাতে আমারি।

যদি তিন বছর আগের বিয়ে না করার ডিসিসনে অটল থাকতাম।

*** বন্ধুর জীবনাবলম্বনে ***

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: সেই আদি এবং অকৃত্রিম ভেজাল ভালোবাসা |-)

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১১

রাঙা প্রভাত বলেছেন: ভাই ঠিক বলেছেন। এই বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি আমাদের সমাজ।
ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.