![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .
মূল ভাবনা : শাইখ সিরাজ
১
(শিল্পপতি শিশির নিঃসন্তান অবস্থায়ই বছর দুয়েক আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। যদিও শিশিরের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যবসা তার বিধাব স্ত্রী অর্থাৎ বড় ভাবির নামে কিন্তু বর্তমানে সে সব দেখাশোন ও পরিচালনা করে শিশিরের ছোট ভাই মিহির। মিহিরের স্ত্রী পূরবী, একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করে। পূরবীসহ শিশিরের আরো দুই ভাই আদি ও সবুজ এবং বোন নিমা বড়ভাবির সাথে ধানমন্ডির থাকে। ধানমন্ডির এ বাসাটাও বড়ভাবির। এ বাসায় আরো থাকে শিশিরের শালিকা অর্থাৎ বড়ভাবির ছোট বোন মেমি ও কাজের ছেলে পাপ্পু। এ মুহূর্তে বড় ভাবি, আদী, মেমি ও নিমা বসে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। বড় ভাবি, মেমি, নিমার পরনে বিদেশী দামী পোশাক, জড়োয়া গহনা। আদীর পরনে সুট-টাই।শিশিরের ছোট ভাই আদী ও বড়ভাবির বোন মেমি দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে মধুর হাসি দেয়, তাদের দৃষ্টি টিভির চেয়ে পরষ্পরের দিকে বেশি।তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে।)
নিমা : বড় ভাবি শাড়ির কাজটা দেখো ।
বড়ভাবি : কাল খুঁজে দেখিসতো পাওয়া যায় কি না ?
মেমি : কি যে বলো আপু ! এতো তাড়াতাড়ি আসবে ?
আদী : হামলোক উদারছে কমছে কম এক মায়নে পিছে। (এমন সময় পূরবী অফিস থেকে ফিরে, তার পরনে দেশীয় ড্রেস। পূরবীকে দেখে সবাই চুপ হয়ে যায় ।)
পূরবী : তোমরা সারা দিনই এসব সিরিয়াল দেখো ? (কেউ ফিরে তাকায় না) আশ্চর্য ! (আদী ও মেমি আবার পরষ্পরের দিকে তাকায়, নিমা তাদের দিকে এক পলক তাকায় )
নিমা : ডিস্গাস্টিং ! (পূরবী ভ্রূ কুঁচকে নিমার দিকে তাকায়)
পূরবী : এ সব সিরিয়ালে যে তোমরা কী মজা পাও ? পরকিয়া প্রেম আর পারিবারিক চক্রান্ত ছাড়াতো কিছুই দেখায় না ।
নিমা : ভাবি, চক্রান্ত যদি সুন্দর ভাবে করা যায়, তবে তা আর্টের পর্যায়ে পড়ে ।
পূরবী : উল্টা পাল্টা লজিক দিও না নিমা, মনে রেখো - নদী তার পাড় ভেঙে নিজেরই পানি ঘোলা করে।
আদী : কেয়া বলতা হে ? সামাজমে নেহি আয়া। (এমন সময় পূরবীর মোবাইল বাজে, পূরবী মোবাইলের ইনকামিং নাম্বার দেখে হাসি মুখে উঠে দাঁড়ায় )
বড় ভাবি : কিন্তু বৌহু আমারতো মনে হচ্ছে তোমার পানিই ঘোলা। (পূরবী থমকে ফিরে তাকায় )
পূরবী : সরি, কী বললে বড়ভাবি ? (পুরবীর মোবাইল বাজতে থাকে )
বড় ভাবি : অফিস শেষ হয়েছে কখন, এতক্ষণে এসেছ, আবার আসতে না আসতেই ফোন, আমরা কিছু বুঝি না।
পূরবী : বড়ভাবী, হিন্দি সিরিয়ালগুলো সত্যি তোমাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে, সত্যি ।
বড় ভাবি : হ্যাঁ, আজ কাল মাথা খারাপ লোক ছাড়া কেউ সত্য কথা বলে না ।
পূরবী : তোমাদের সাথে কথা বলাই ভুল ।
২
( শিশিরের সেজ ভাই সবুজ খাবার ঘরে এসে কাজের ছেলে পাপ্পুকে ডাকে )
সবুজ : পাপ্পু, পাপ্পু (পাপ্পু বিরক্ত মুখে ঘরে আসে )
পাপ্পু : পাপ্পু-জী কন ।
সবুজ : পাপ্পু-জী ?
পাপ্পু : হ, হিন্দি নাটকে দেখছি, এক বেডারে জী না কইলে জবাব দেয় না ।
সবুজ : (সবুজ বিদ্রুপ করে) তো পাপ্পু-জী, আপনি হিন্দি বুঝেন ?
পাপ্পু : বাংলায় কইলে আমি চীনাও বুঝি, আর হিন্দিতো খুব সোজা, কথার শেষে খালি তা-থা-থা-থা লাগাইলেই হয় ।
সবুজ : তা-থা-থা-থা !
পাপ্পু : আপনে কিয়া খুঁজতা-থা-থা, আম কাজ করতা-থা-থা-থা। (সবুজ হাসি মুখে পাপ্পুকে দেখে) কিন্তু সবুজ ভাই আমি একটা জনিষ বুঝি না (পাপ্পু সবুজের কাঁধে হাত রাখে, সবুজ ভ্রূ কুঁচকে তাকায়, পাপ্পু সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয়) না, মানে, হিন্দি নাটকের হেরা ঘুমায় না ? সারাক্ষণ দেখি ফেটিংফাটিং হইয়া থাকে ! হেরা গোছল করে না? (সবুজ হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় )
৩
( মিহির বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, মেমি মিসিরের মোবাইল নিয়ে আসে )
মেমি : মিহির ভাই ইউর কল ।
মিহির : থ্যাঙ্ক ইউ।(মিহির মোবাইল নেয়)
মেমি : ওয়েল কাম (মেমি বেরিয়ে যায়।মিহির মোবাইলে আর অন্যপ্রান্তে মিহিরের পিএস তুলি অফিস থেকে কথা বলে। তুলির মুখে চিন্তার ছাপ।)
মিহির : হ্যাঁলো ।
তুলি : সালামূলাইকুম স্যার।
মিহির : অলাইকুমসালাম, বলো।
তুলি : স্যার একাউন্টসে একটা গড়মিল ধরা পড়ছে ।
মিহির : কেমন গড়মিল ?
তুলি : বড় ধরনের স্যার ।
মিহির : ডিটেলস্ রিপোর্ট তৈরি করো, আমি আসছি ।
তুলি : জ্বী স্যার ।
মিহির : বাই। (মিহির মোবাইল অফ করে একটু ভাবে, তারপর আবার মোবাইল করে শিশিরের বন্ধু সফিকের সাথে কথা বলে) সফিক আপনি কোথায় ? থাকুন আমি আসছি।
৪
( মিহিরের অফিস রুমে বসে সফিক তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে মোবাইলে কথা বলে )
সফিক : আমি ভাল নেই, তুমি কেমন আছো ? এইতো আর ক’দিন, তারপরই আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ, হ্যাঁ (এমন সময় মিহির ঢোকে, সফিক দ্রুত লাইন কাটে ) কী ব্যাপার বন্ধু ? অফিসে ওয়েট করতে বললে কেন ?
মিহির : কাল শিপ্মেন্টে কোন সমস্যা হয়নি তো ?
সফিক : না। এ জন্যে থাকতে বললে ?
মিহির : তুলি বলল, একাউন্টসে নাকি কী গড়মিল ধরা পড়েছে । (শফিক চমকে তাকায় )
শফিক : গড়মিল ?
মিহির : তাইতো বলল, আমি ডিটেলস্ রিপোর্ট দিতে বলেছি ( মিহির ল্যান্ডফোনের রিসিভার তুলে তুলিকে আসতে বলে ) হ্যাঁ, এসো (শফিক রুমাল বের করে ঘাম মুছে। হঠাৎ শফিকের মোবাইল বেজে উঠে, শফিক চমকে উঠে নাম্বারটা দেখে চট করে মিহিরের দিকে তাকায়, তারপর লাইন কেটে দেয়। তুলি ফাইল হাতে ঘরে ঢোকে, শফিক ফিরে তাকায়, শফিককে দেখে তুলি একটু থমকে যায়। দু’জন দু’জনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে) দেও ( তুলি ফাইল মিহিরকে দেয় )
তুলি : এই যে স্যার (মিহির মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখে। তুলি দাঁড়িয়ে আড় চোখে শফিকের দিকে তাকায়, শফিক ক্রুদ্ধ চোখে তুলিরকে দেখে)
মিহির : ওহ, মাই গড ! এতো অনেক টাকা !
শফিক : অনেক ! কত ?
মিহির : হ্যাঁ, এই দেখেন (মিহির ফাইল শফিকের দিকে বাড়িয়ে দেয়, শফিক ফাইল দেখে না) এতো টাকা, কিন্তু কিভাবে ?
তুলি : চারটা চেকে টাকাটা তোলা হয়েছে স্যার । (শফিক আবার ক্রুদ্ধ চোখে তুলিকে দেখে)
মিহির : চেকগুলো কার নামে ইস্যু হয়েছে ? (তুলি ইতস্তত করে। হঠাৎ মিহিরের চোখে শফিকের আচরণ ধরা পড়ে, মিহির একবার শফিককে আবার তুলিকে দেখে, দেখে ফাইলাটা আবার টেনে নিয়ে ভাল ভাবে চোখ বোলায়। বোলাতে বোলাতে গম্ভীর হয়ে যায়। তারপর থমথমে চোখে শফিকের দিকে তাকায়, শফিকও আস্তে আস্তে মিহিরের দিকে তাকায়। দু’জন দু’জনকে ক্রুদ্ধ চোখে কিছুক্ষণ দেখে।) তুলি তুমি এসো ।
তুলি : জ্বী স্যার (তুলি বেরিয়ে যায়।মিহির ফাইল শফিকের উপর ছুড়ে মেরে উঠে দাঁড়ায় )
মিহির : হোয়াই ? হোয়াই শফিক ভাই ? মনে পড়ে, মনে পড়ে আপনি কোথায় ছিলে আর আজ কোথায় এসেছেন-মনে পড়ে ? পড়ে মনে শিশির ভাই আপনাকে হাতে ধরে এখানে এনেছে, হাতে ধরে। আর সেই আপনি ? সিট ! আচ্ছা বিশ্বাস বলে কি জগতে কিছু থাকবে না ?
শফিক : বিশ্বাস আমি একা ভাঙিনি।(মিহির চট করে ফিরে তাকায়)
মিহির : আমি ভেঙেছি ! (শফিকও উঠে দাঁড়ায়)
শফিক : টেক্সটাইলের ফিফটি পার্সেন্ট শেয়ার আমাকে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু তুমি পুরাটাই দিলে তোমার বড় ভাবিকে।
মিহির : কখনোই ফিফটি পার্সেন্ট দেয়ার কথা ছিল না, ভাইয়া ভেবেছিল দিবে কিন্তু পরে উনি দেননি। উনি মারা যাবার আগে নিজেই পুরাটা বড়ভাবির নামে দিয়ে যান। আপনি জানেন আপনার মত আমিও কিছু পাই নি ।
শফিক : (হেসে) তুমি আর তোমার বড় ভাবি একই কথা। তোমরা এক পরিবারের অংশ।
শফিক : কিন্তু এর জন্যই যদি আপনি এসব করে থাকেন, তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই, শুধু একটা কথা ছাড়া (শফিক জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়) আমাদের পথ চলা এখানেই শেষ ।
শফিক : কিন্তু আমার হিস্যা ?
মিহির : নো হিস্যা, নো মানি, জাষ্ট গ্যাট লষ্ট ( শফিক কিছুক্ষণ নীরব হাসে )
শফিক : কিন্তু এভাবে কি পথ ফুরায় বন্ধু ?
মিহির : এক্সিউজ মি ! আমরা কখনোই বন্ধু ছিলাম না । আপনি শিশির ভাইয়ের পরিচিত ছিলেন, ব্যস এতটুকুই।
শফিক : ঠিক আছে বন্ধু ছিলাম না, কিন্তু মনে রেখো এভাবে পথ ফুরায় না। (মিহির কিছুক্ষণ থমকে থেকে ইশারায় দরজা দেখায়। শফিক হাসি মুখে কিছুক্ষণ মিহিরকে দেখে বেরিয়ে যায়।মিহির থমকে থেকে টেবিল থেকে ফাইলটা তোলে রুমের কোণা ছুড়ে মারে )
৫
(মিহিরের অফিসের সামনের রাস্তার শফিকের গাড়ি দাঁড় করানো, শফিক থমথমে মুখে হেঁটে এসে গাড়ির পাশে দাঁড়ায়। তার মোবাইল আবার বাজে। শফিক মোবাইলে কথা বলে)
শফিক : সরি জান, মিটিংয়ে ছিলাম, তাই লাইন কেটেছিলাম, সরি। এখন আমি রাস্তায়। আচ্ছা পরে রিং দিব, বাই। (শফিক মোবাইল বন্ধ করে মিহিরের অফিস বিল্ডিংয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়িতে বসে, বসে আবার বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে আপন মনে হাসে) ওকে, দেখা যাক কার পথ ফুরিয়েছে ? (শফিক গাড়ি স্টার্ট দেয়)
৬
( নিমা ও বড় ভাবি টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। মেমি শপিং শেষে বাসায় ঘরে মন খারাপ করে নিমার পাশে বসে )
বড় ভাবি : কিরে কিছু কিনিস নি ?
মেমি : (হতাশ কণ্ঠে) না আপু ।
বড় ভাবি : কেন ?
মেমে : কাল কারিনার স্কার্টটা পছন্দ করে এলাম না, আজ গিয়ে দেখি নেই, খুব খারাপ লাগছে।
বড় ভাবি : ঠিক আছে কাল পূরবীর সাথে গিয়ে আবার খুঁজিস। (নিমা মেমির কানের কাছে মুখ আনে ক্ষীণ কণ্ঠে)
নিমা : না পাওয়ার কষ্টটা কি খুব বেশি মেমি ?
মেমি : বেশি হবে না, কত সুন্দর ছিল স্কার্টটা, কারিনাকে যা লাগছিল না ।
নিমা : এর থেকে বড় না পাওয়ার কষ্ট তুমি পাবে।
মেমি : ( ভ্রূ কুঁচকে তাকায় ) মানে ?
নিমা : আদীর স্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ! (মেমি চমকে তাকায়) শিশির খানদানকা হিস্যা তোম কাভি নেহি বনেগি মেমি, কাভি নেহি। (মেমি ও নিমা পরষ্পরের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে)
বড় ভাবি : কিরে, তোরা ফিস ফিস করে কী বলছিস ? (এমন সময় নিমার মোবাইল বাজে )
নিমা : কিছু না বড়ভাবি, তোমার বোনকে জিজ্ঞেস করছিলাম কারিনার কোন স্কার্টটা সে পছন্দ করে এসেছিল ? ( নিমার মোবাইল বাজতে থাকে, নিমা ঠোঁটে তাচ্ছিল্যে হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায়। মেমি স্তম্ভীত হয়ে বসে থাকে )
৭
( নিমা বারান্দায় এসে মোবাইলে কথা বলছে। রাস্তার পাশের তাতার মুদির দোকানে পাড়ার বখাটে ছেলে বাতেন ও তার বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে । হঠাৎ দোকানদার তাতা নিমাকে দেখে বিদ্রূপ করে)
তাতা : ওই যে দেখো শাহরুখের লগে কথা কয় (তাতার বিদ্রুপে বাতেনরা ফিরে তাকায় )
নিমা : আরে না এখনো বেরই হই নি, মেজভাবির সাথে কাল যাব শপিংয়ে। আরে এগুলোতো ব্যাক-ডেটেড। হ্যাঁ কেটরিনা যেটা পরেছিল, হ্যাঁ। না, না দীপিকারটা ভাল লাগেনি, না। (বাতেনরা নিমার দিকে তাকিয়ে কোরাস ধরে)
কোরাস : আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা ফুল-কুমড়ার জাত।। / আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা হিন্দি-টিভির জাত ।। ( নিমা সাথে সাথে বাতেনদের দিকে তাকায়, বাতেনরা অন্য দিকে তাকিয়ে গান গেতে খাকে ) আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা ফুল-কুমড়ার জাত ।। ( নিমা আবার মোবাইলে কথা বলতে থাকে ।)
নিশা : সিআইডির ? ধ্যাৎ ! আমার ভাল লাগেনি। লাগেনি ব্যাস লাগেনি।
কোরাস : আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা হিন্দি-টিভির জাত ।।
নিমা : ডিস্গাসটিং ! ( নিমা রেগে ঘরের ঢোকে যায়। বাতেনরা হেসে ওঠে )
কোরাস : আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা হিন্দি-টিভির জাত। / হিন্দি-টিভির জাত ।।
৮
( আদী ছাদে ব্যায়াম করছে । মেমি মলিন মুখে এসে ছাদে দাঁড়ায়। মেমি জানেন না তার পেছন পেছন নিমাও ছাদে এসে সিঁড়িঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। আদী ব্যায়াম শেষে কাঁধে তোয়ালে ঝুলিয়ে জুসের গ্লাসে চুমুক দেয়। মেমিকে দেখে আদী হেসে এগিয়ে আসে )
আদী : কেসি হো ? (মেমি অভিমানে সরে যায়) তবিওত ঠিক নেহি ?
মেমি : আচ্ছা আদী ভাই, তুমি আমার জন্য কতটুক ছাড়তে পারবে ?
আদী : তোম যেতনা চাতাহে ।
মেমি : সম্পর্ক ?
আদী : রিস্তা ? (নিমা দরজার আড়ালে কান পেতে আদী-মেমির কথা শুনছে )
মেমি : হু, শিশির পরিবারের সাথে সম্পর্ক ? (আদী একটু ভাবে )
আদী : জরুর, হোয়াই নট ? (আদী আবার মেমির কাছে এগিয়ে যায়। মেমি নিশ্চিন্তে আদীর হাত ধরে। তারপরই ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে সে ভাবে )
মেমি : হাম শিশির পরিবারকা বউ হয়েগা, জরুর হয়েগা, নিমা তোম দেখতে রয়েগা, তরপায়েগা। লেকিন কোছ নেহি করপায়েগা। কুছ নেহি।
( অন্যদিকে আদী-মেমির কথা শোনে নিমাও ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে ভাবে )
নিমা : শিশির পরিবারকা বউ তুম কাভি নেহি বনেগি মেমি, কাভি নেহি ।
৯
( নিমা, মেমি ও পূরবী শপিংয়ে বের হয়েছে। দোকানে দোকানে মেমি ও নিমা বিদেশী পোষাক দেখছে, পছন্দ করতে পারছে না। পূরবী বিরক্ত মুখে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এক সময় পূরবী রেগে যায় )
পূরবী : তোমরা এসব কি দেখছ বিদেশী পোষাক-হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের পোশাক, আশ্চর্য! আমাদের হাজার বছরের বস্ত্রের ঐতিহ্য। আমাদের জামদানী, টাঙ্গাইলের তাঁত, সিল্ক আরো কত। আর এসব ছেড়ে এগুলো ? সেইম !
নিমা : কিন্তু এদেশের ড্রেসে গ্ল্যামারাটা ঠিক ফুটে না ।
মেমি : হ্যাঁ, এদেশের ওর্নামেন্ট তেমন গর্জিয়াস না ।
পূরবী : কে বলছে গর্জিয়াস না ? গ্ল্যামারাস না ? এসো আমার সাথে (নিমা ও মেমিকে নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে পূরবী দেশীয় পণ্যের দোকানে যায়।) এসব পণ্য যদি আমরা না কিনি তবে কে কিনবে ?
সেল্সম্যান : ঠিক বলেছেন আপা, এই দেখেন টিভিতে কী বলে (সেল্সম্যান দোকানের টিভির ভ্যলিউম বাড়ায়। টিভিতে চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান পুনপ্রচার হচ্ছে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষে দেশীয় পণ্যের স্বচিত্র প্রতিবেদন দেখানো হচ্ছে )
১০
( বড় ভাবি মোবাইলে হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলছে )
বড় ভাবি : আসব, আসব না কেন ? সত্যি জীবনটা কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে, কোন চার্ম নেই। কিচ্ছু ভাল লাগে না। আসলে কী জানো, যতক্ষণ তোমার সাথে কথা বলি, ততক্ষণই মনে হয় বেঁচে আছি।
১১
( সন্ধ্যায় নিমা একা টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। সবুজ আসে )
সবুজ : চ্যানেল আই দেতো নিউজটা দেখি।
নিমা : পরে, সিরিয়ালটা শেষ হোক । ( সবুজ রেগে যায় )
সবুজ : ২৪ ঘন্টা একই জিনিষ, একই জিনিষ। এ হিন্দি সিরিয়াল যে তোদের ভাবনার জগতটা সংকুচিত করে ফেলছে, তা বুঝতে পারছিস ? এখন তোদের চিন্তা-ভাবনা সব সিরায়ালগুলোর পাত্র-পাত্রীদের মাঝেই ঘুরপাক খায়, এরা তোদের সৃজনশীলতা নষ্ট করে দিচ্ছে। (এমন সময় মিহির বাহিরে যাবার জন্য রেডি হয়ে এসে টিভির দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে )
মিহির : এটা কোনটারে ? ও এটা, রাখ, রাখ কাল দেখতে পারি নি।
সবুজ : ভাইয়া আমি তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি।
মিহির : আশা না করলে আর কী করা, তবে কী জানিস, এদেশের চ্যানেলগুলো পোগ্রাম ঠিক জমাতে পারে না, ওরা পারে।
সবুজ : ওরা পারে বলেই দেখবে ? আর আমাদের পোগ্রাম কি খুব বেশি খারাপ ? কখনো দেখেছো আমাদের চ্যানেলের সিরিয়াল ? দেখো নি।
মিহির : আচ্ছা এখন যাতো দেখতে দে। ( সবুজ রেগে বেরিয়ে যায়। পরক্ষণে মিহিরের সাথে বাহিরে যাবার জন্য পূরবীও রেডি হয়ে আসে )
পূরবী : সবুজের কী হয়েছে ?
মিহির : নাথিং, লিভ ইট ।
পূরবী : কিন্তু তুমি টিভির সামনে বসলে কেন ? যাবে না ?
মিহির : আজ বাদ দেও, কাল যাব । ( পূরবী রেগে ওঠে )
পূরবী : কেন ? কাল কেন ? কাল আমার অফিস আছে না ? আচ্ছা সংসারে কি টিভি ছাড়া আর কিছু নেই ? বাসায় আসো কেন ? অফিসে একটা টিভি কিনে নিলেই পারো ।
মিহির : এমন ভাব করছ, যেন তুমি দেখ না ?
পূরবী : তোমরা দেখো বলে দেখতে বাধ্য হই।
মিহির : হয়েছে, এবার সিরিয়ালটা দেখতে দেও। আর পাপ্পুকে চা দিতে বলো। (পূরবী রেগে চুপচাপ বসে থাকে। )
নিমা : দাঁড়াও ভাইয়া আমি বলছি , পাপ্পু-জী, পাপ্পু-জী ।
মিহির : পাপ্পু-জী !
পূরবী : উনি পাপ্পু-জী না বললে জবাব দেন না, তোমাদের হিন্দি সিরিয়ালের আউটপুট। আর পাপ্পু কেন ? যাও নিমা যাও, তুমি চা বানিয়ে আনো।
দিমা : সরি, আমি...
পূরবী : সেটাপ ! টিভির সামনে বসে সারা জীবন যাবে না। যাও, আজ থেকে তুমি আর মেমি বাসার সব রান্নাবান্না করবে। যাও। ( নিমা মন খারাপ করে উঠে যায়)
১২
( তাতা মাত্র দোকান খুলেছে। এখনো বনি হয় নি। এমন সময় বখাটে বাতেন আসে )
বাতেন : তাতা ভাই এক পেকেট সিগেরেট দেও।(তাতা বাতেনকে এক পেকেট সিগেরেট দেয়, বাতেন সিগেরেট নিয়ে হাঁটতে থাকে দেয়)
তাতা : বনির সময় বাকি দিমু না, টাকা দেও ।
বাতেন : বাকি নিছি কেডা কইল তোমারে, মাগনা নিলাম, মাগনা (তাতা হা হয়ে থাকে, বাতেন চলে যায়। পরক্ষণে তাতা বাতেনকে গালাগাল দিতে থাকে )
তাতা : বদের বদ ! নেওনের সময় তাতা ভাই, টাকার সময় মাগনা, মাগনা । (এমন সময় পাপ্পু দোকানে আসে) আরেক বার আয়, তাতা ভাইয়ের রূপ দেখবি, রূপ ।
পাপ্পু : এই টাকা নিতা-থা-থা-থা, দুই বোতল কোক দিতা-থা-থা-থা । (পাপ্পু তাতাকে টাকা দেয়। তাতা ভাবে পাপ্পু তার নাম “তাতা” শব্দটা বিকৃত করে তা-থা বলে ভেঙ্গাচ্ছে, সে রেগে যায়।)
তাতা : নিতা-থা-তা-থা ?
পাপ্পু : হু নিতা-থা-থা-থা।
তাতা : দিতা-থা-থা-থা ?
পাপ্পু : হু দিতা-থা-থা-থা (তাতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, সে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে পাপ্পুর কলার ধরে)
তাতা : তাথাথা ? তাথাথা ? হালারপো আমারে ভেঙ্গাস, আমারে ? এমনেই মেজাজ খারাপ, আর তুই আমারে ভেঙ্গাস ? আমারে ? তাতারে কছ্ তাথাথা ? তাথাথা ? আইজ তোরে খাইছি (তাতা পাপ্পুরে ধরে মারতে থাকে )
পাপ্পু : ক্যান মারতা-থা-থা-থা ?
তাতা : আবার তাথাথা ! আবার ! (তাতা পাপ্পুকে সমানে কিল ঘুষি মারতে থাকে। পাপ্পু ওবাবারে, ওমারে করে চিৎকার দিতে থাকে)
১৩
( মেমি ও নিমা জমকালো পোষাক পরে রান্না করতে চেষ্টা করছে, করতে গিয়ে বার বার সমস্যায় পড়ছে। নিমা তাক থেকে মসল্লার ডিবি নামাতে গিয়ে আটার ডিবি ফেলে মেমির জামায় নোংরা করে দেয়। মেমি দ্রুত সরে দাঁড়ায়।)
নিমা : সরি, সরি।
(মেমি রাগে দাঁত কিড়মিড় দিতে দিতে থাকে। তারা দুজনেই গরমে ঘামছে। মেমি বেখায়েলে নিমার ওড়না দিয়ে প্লেট-পেয়ালা মুছে। নিমা হায় হায় করে ওড়না টেনে নেয়।)
মেমি : সরি, সরি।
( মেমি রেগে মেমির দিকে তাকিয়ে থাকে। সবুজ এসে রান্না ঘরে উঁকি দেয় )
সবুজ : কিরে ? এই গরমে এসব পরে রান্না কর...! আচ্ছা তোদের কি কোনো বোধ নেই ? হিন্দি সিরিয়াল কি তোদেরকে বোধহীন করে ফেলেছে ? এসব কী পড়ে রান্না করতে এসেছিস ?
১৩
( পাপ্পু ছ্যাঁড়া জামা পরে নেংচাতে নেংচাতে বাসায় ফিরছে )
পাপ্পু : ও বাবারে, ও মারে এই জীবনে আর হিন্দি কমু নারে, আমারে মাফ কইরা দেরে ।
১৪
( শফিক মিহিরের বাসায় আসে। মিহির বাসায় নেই। পূরবী বসে শফিকের সাথে কথা বলছে। এমন সময় মিহির বাহির থেকে ফিরে। )
পূরবী : এই যে মিহির এসেছে। ( শফিককে দেখে মিহির থমকে দাঁড়ায়। শফিক মিটি মিটি হাসে। )
মিহির : আপনি ?
পূরবী : তোমরা বসো, আমি নাস্তা দিচ্ছি। ( পূরবী উঠে চলে যায় )
মিহির : কী চান ?
শফিক : কিছুই না, শ্রেফ চলে আসলাম।
মিহির : কিন্তু কেন ?
শফিক : আমাদের ব্যাবসায়ীক সম্পর্কের পথ ফুরিয়েছে, কিন্তু বন্ধুত্বের পথতো ফুরায়নি ।
মিহির : অফিসে গেলেই দেখা হতো, বাসায় আসার প্রয়োজন ছিল না ।
শফিক : তা ঠিক, তবে অফিসের মিহির যত না বন্ধু, তার চেয়ে বেশি ব্যাবসায়ী।
মিহির : আমরা কখনোই বন্ধু ছিলাম না, আপনি শিশির ভাইয়ের পরিচত ছিলেন, ব্যাস এতটুকুই ।
শফিক : অবশ্য আরেকটা কারণ আছে..... (মিহির ভ্রূ কুঁচকে তাকায়। শফিকও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় ) ভাবি, বড়ভাবিকে অনেক দিন দেখি না। ( মিহির ও শফিক দু’জন দুজনের দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে। মিহিরের মুখ থমথমে, শফিকের মুখে নীরব হাসি )
মিহির : আমি বুঝতে পারছি আপনার এই ভদ্র মুখোশটার আড়ালে অন্য একটা মুখোশ আছে। ( শফিক হাসে ) আজ হয়তো মুখোশটা খুলতে পারছি না, তবে একদিন খুলব, অবশ্যই খুলব। সে দিন .....
শফিক : মুখোশটা যতদিন খুলতে না পারো, ততদিনই ভাল। খুললে কষ্ট পাবে, অনেক কষ্ট, অনেক। ( শফিক একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায়। পূরবী নাস্তা নিয়ে ফিরে আসে )
পূরবী : চলে গেছে ? ( মিহির ভ্রূ কুঁচকে পূরবী দিকে তাকিয়ে শফিকের শেষ কথাগুলো ভাবে। )
১৫
( বাসা থেকে বেরিয়ে শফিক গাড়ির দরজা খুলে মিহিরের বাসার দিকে তাকায়, দোতালার বারান্দার দিকে তাকায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বড়ভাবি মোবাইলের বাটন টিপছে। তাতার দোকানে বসে বাতেনরা বড়ভাবি ও শফিককে দেখে। শফিক আপন মনে হেসে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয়। গাড়ি চলে যায়। বড়ভাবি মোবাইলে কথা বলে )
তাতা : ওই যে মাধুরীরে হাই-হ্যালো করতাছে । (বাতেনরা হেসে ওঠে।)
পার্বণী : এভাবে জীবন চলে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সিরিয়ালের নায়িকাদের মত, নতুন করে সব শুরু করি, সব। (এমন সময় মিহির এসে বারান্দায় দাঁড়ায়। বড় ভাবি মোবাইল অফ করে )
মিহির : ভাবি কে ?
বড় ভাবি : কে, কে আবার ? মা । (বাতেনরা কোরাস ধরে)
কোরাস : আমার বাপে খায় না ভাত / আমার মায়ে খায় না ভাত / আমরা হিন্দি-টিভির জাত ।।
( মিহির ভ্রূ কুঁচকে বাতেনদের দেখে )
মিহির : এরা এসব কী বলছে ?
বড় ভাবি : আমাদের টিচ্ করছে ।
মিহির : আনকালচার্ড !
বড় ভাবি : চলো ভেতরে যাই ( বড় ভাবি ও মিহির ঘরে ফিরে আসে। বাতেনরা হেসে উঠে )
১৬
( বড় ভাবি একা বসে টিভি দেখছে। পূরবী ঘরে এসে আবার ফিরে যায় । )
বড় ভাবি : বো-হু । ( পূরবী আবার আসে )
পূরবী : ভাবি আমাকে ডেকেছেন ?
বড় ভাবি : এ বাড়িতে তুমি ছাড়া আর বো-হু আছে ?
পূরবী : না নেই, কিন্তু আপনি আমাকে নাম ধরে ডাকতেন, ইদানিং হিন্দি উচ্চারণে বো-হু ডাকেন, তাই মাঝে মাঝে বুঝতে পারি নি।
বড় ভাবি : বুঝতে পারো না, না বুঝতে চাও না। ( পূরবী কিছু বলে না, নীরবে হাসে ) বার বার উঁকি দিয়ে কী দেখ ?
পূরবী : কী আশ্চর্য উঁকি দিব কেন ! আসলে হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে আপনি বদলে গেছেন।
বড় ভাবি : বদলেছি মানে ! কী বলতে চাও আমি প্রেম করে বেড়াই ?
পূরবী : তা বলব কেন ?
বড় ভাবি : অবশ্যই তা বলেছ, অবশ্যই। না হলে শফিক এসেছে আমাকে খবর দিলে না কেন ? শফিকতো আমারই হাসব্যান্ডের বন্ধু, তাই না ?
পূরবী : উনি বেশিক্ষণ বসেন নি,
বড় ভাবি : আমাকে সাপের পা দেখিও না বো-হু, আমি সব বুঝি, সব ( বড় ভাবি উঠে দাঁড়ান ) মনটা পরিষ্কার করো। বুঝেছ, পরিষ্কার ! ( বড় ভাবি বেরিয়ে যায়। পূরবী রাগে কাঁপিতে থাকে। মিহির ঘরে আসে )
মিহির : কী হয়েছে, ভাবিকে দেখলাম রেগে আছেন ?
পূরবী : তুমি আগামী মাসেই আলাদা বাসা নিবে, আগামী মাসেই। অযথা বকে গেল, অযথা ।
মিহির : কমেপ্রামাইজ করো, কমেপ্রামাইজ।
পূরবী : আর না, অনেক করেছি।
মিহির : বোকা ! তুমি কত বেতন পাও ? এই বাড়ি, গাড়ি, ইন্ডাস্ট্রি সব ভাবির নামে, সব। রাস্তায় নামতে হবে, রাস্তায় (পূরবী রেগে সোফায় বসে। মিহির টিভির রিমোট হাতে নেয়। মিসিরের কাছ থেকে রিমোর্ট নিয়ে পূরবী ছুড়ে ফেলে দেয়।)
পূরবী : খবরদার টিভি চালাবে না, এই সিরিয়ালগুলো ভাবিকে সম্পুর্ণ পাল্টে দিয়েছে, কম্পিকেটেড করে তুলছে, এখন তিনি সব কিছুর ভিন্ন অর্থ খুঁজেন। তুমি যদি কোন দিন রাস্তায় নামো তাহলে এই সিরিয়ালের জন্যই নামবে।
১৭
( পাপ্পু মুখ মলিন করে বাজারে যাচ্ছে । পথে বাতেনের সাথে সাথে দেখা )
বাতেন : পাপ্পু-জী কই যান ?
পাপ্পু : আমারে পাপ্পু-জী কইবেন না ।
বাতেন : কেন হিন্দি ভূত গেছে ?
পাপ্পু : এই জীবনে আর হিন্দি দেখুম না, কমুও না ।
বাতেন : তো এখন কই যান ?
পাপ্পু : বাজারে
১৮
( নিমা মিহিরের অফিস আসে। তুলির সাথে দেখা )
তুলি : গুড আফটারনুন মেডাম ।
নিমা : গুড আফটারনুন, ভাইয়া আছে ?
তুলি : ইয়েস মেডাম ।
নিমা : থ্যাঙ্কিউ।
তুলি : ওয়েল কাম ( নিমা মিহির রুমের দরজা ধরে ফিরে তুলিকে দেখে। তুলি হাসে, উত্তরে নিমাও হেসে মিহিরের রুমে ঢোকে )
১৯
( মিহির তার রুমে বসে কাজ করছে । নিমা ঢোকে )
নিমা : ভাইয়া কি ব্যস্ত ?
মিহির : কিরে, আয়, আয়।
নিমা : এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমাকে একটু দেখে যাই ।
মিহির : ভাল করেছিস, বস, কী খাবি ?
নিমা : কিছু না, আচ্ছা ভাইয়া তুলি মেয়েটা কেমন ?
মিহির : খুব ভাল, সে আমার কাছে একটা গিফট্ পাওনা আছে ।
নিমা : গিফট্ ?
মিহির : হ্যাঁ, টাকার গড়মিলটাতো সেই আমাকে জানায়, আচ্ছা তাকে কী গিফট্ দেয়া যায় বলতো ? ( নিমা নীরবে হাসে, সেতো এরকম কিছুই চাচ্ছিল। সে ভাবার ভান করে )
নিমা : আদী।
মিহির : মানে ?
নিমা : আদীর সাথে বিয়ে ( মিহির থমকে তাকায় )
২০
( পাপ্পু ফ্রিজ থেকে সবজি বের করছে। আদী বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে পানি খেতে আসে। )
পাপ্পু : আদী ভাই কই যান ?
আদী : শপিংয়ে। তোমকো লিয়ে কি আনতাহে, শাহরুখ পাঞ্জাবী ?
পাপ্পু : আরে নাহ, আমি আর শহরুখ মাহরুখে নাই। মাইর খাওনের বুদ্ধি দেয় ! ( পাপ্পু গজ গজ করতে করতে চলে যায়। আদী অবাক চোখে দেখে )
২১
( মিহির অফিস থেকে তুলিকে নিয়ে বাসায় আসে। বাসার সবাই তুলিকে নিয়ে বসবার ঘরে বসে গল্প করছে। তুলি বসেছে মেমি ও নিমার মাঝে । )
বড় ভাবি : তুমি অনেক দিন পরে এলে ।
তুলি : অফিসে কাজের কত চাপ।
বড় ভাবি : মিহিরের চেয়েও বেশি ? ( সবাই হেসে উঠে )
তুলি : না, না, তা হবে কেন ?
মিহির : ভাবি আজ অবশ্য একটা বিশেষ কারণে তুলিকে নিয়ে এসেছি ।
পূরবী : কী কারণ ?
মিহির : সামনেতো কোরবানীর ঈদ, ভাবছি ঈদের পর ..... ( মিহির একটু থামে । নিমা মিটি মিটি হাসে )
মেমি : ঈদের পর কী ? ( নিমা মেমির কাছে মুখ নেয় )
নিমা : ( ক্ষীণ কণ্ঠে ) ধীরে মেমি, ধীরে। পরেরটা তোমার ভাল নাও লাগতে পারে। ( মেমি ভ্রূ কুঁচকে ভাবে )
মিহির : তুলির সাথে আদীর বিয়ে। ( বড় ভাবি, মেমি ও পূরবী থমকে থাকে। তুলি লজ্জায় মুখ নামায়। মেমি ক্রুদ্ধ চোখে নিমার দিকে তাকায়। বড় ভাবি থমথমে মুখে উঠে চলে যায়। মিহির ও পূরবী বড় ভাবির দিকে তাকায়, পর মুহূর্তে পরষ্পরের দিকে তাকায়। মিহিরের চোখে মুখে উৎকণ্ঠার ছাপ পড়ে । নিমা মেমির কাছে মুখ এনে হাসি মুখে ক্ষীণ কণ্ঠে আবার বলে )
নিমা : আই সিলেক্ট হার ( একটু থেমে ) আদীর জন্য।
মেমি : ইটস্ এ ব্যাক-ডোর গেইম ( একটু থেমে ) বল সব সময় এক কোটে থাকে না। ( তারপর মেমিও উঠে বেরিয়ে যায়। তুলি চোখ তুলে তাকায়। নিমা হাসি মুখে তুলির হাতে হাত রেখে তুলিকে আশ্বস্ত করে। তুলি চিন্তিতি মুখে পূরবীর দিকে তাকায়, পূরবী জোর করে হাসে )
২২
( মেমি বারান্দায় রাদে ফুঁসছে। পূরবী এসে মেমির কাঁধে হাত রাখে। মেমি হাত সরিয়ে দেয় )
পূরবী : আমি বুঝতে পারছি মিহিরকে এ বুদ্ধিটা কে দিয়েছে। নিমা কাজটা ভাল করেনি। কিচ্ছু ভেবনা, সব ঠিক করে দিব ।
মেমি : না।
পূরবী : আমি মিহিরের সাথে কথা বলব।
মেমি : না।
পূরবী : তাহলে ?
মেমি : ( দৃঢ় কণ্ঠে ) আমার যুদ্ধ আমি একাই লড়ব ভাবি, একা। হয় আদী আমার, না হলে কারোই না, ( পূরবী চমকে তাকায়) হ্যাঁ ভাবি - কারোই না। ( মেমি বেরিয়ে যায় )
২৩
( বড় ভাবি তার রুমে মোবাইলে কথা বলছে। )
বড় ভাবি : হ্যাঁ ব্যবস্থা করো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমি আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে রাজি না, হ্যাঁ - বাই ( ভাবি মোবাইল অফ করে আপন মনে বলে ) আমার বাড়িতে থেকে, আমারটা খেয়ে ! এত সাহস ? দেখি তোমারা কোথায় যাও ? ( এমন সময় মিহির ঘরে আসে। )
মিহির : ভাবি আসব ? ( ভাবি গম্ভীর হয়ে যায় ) সরি ভাবি ।
বড় ভাবি : এখন কেন সরি ? এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জিজ্ঞেস করারও প্রয়োজন মনে করো নি ? কেন ? আদী তোমার ভাই বলে ? আজ শিশির বেঁচে থাবলে তুমি এটা করতে পারতে ?
মিহির : ভুল হয়ে গেছে ।
বড় ভাবি : না ভুল না, এই তোমাদের শুরু হয়েছে, শুরু। আমাকে অবহেলা করা শুরু হয়েছে। ( মিহির মাথা নিচু করে বসে থাকে। )
২৪
( তুলি তার ডেক্সে বসে কাজ করছে। মেমি আসে। তুলি উঠে দাঁড়ায় )
তুলি : গুড আফটারনুন মেডাম, স্যারতো অফিসে নই, বাইরে।
মেমি : আমি স্যারের কাছে না, আপনার কাছে এসেছি ।
তুলি : আমার কাছে ? বলুন কী ব্যাপার ?
মেমি : আমি ভনিতা পছন্দ করি না, সরাসরি বলছি - আদী আমার, আপনি আমার পথের কাঁটা হবেন না ।
তুলি : ও, এ বিষয়। ঠিক আছে আমি বিয়ে রাজি হলাম না, কিন্তু ...
মেমি : কিন্তু ?
তুলি : ( হেসে ) মেডাম, আমি আপনার পথের কাঁটা না, আমি সর্বচ্চো আপনার পথের বাঁধা হতে পারি - যা আপনি সহজে ডিঙ্গাতে পারবেন। কিন্তু আপনার পথের কাঁটা অন্য একজন ।
মেমি : কে ? নিমা ?
তুলি : না, আপনার,বোন - বড় ভাবি ( মেমি চমকে তাকায়। তুলি মাথা ঝাঁকায় ) হ্যাঁ, আপনার বোন ( মেমি হা হয়ে থাকে। )
মেমি : কি-কি-কিন্তু ! তা কি-কি-কি করে ? (তুলি রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠে বেরিয়ে যায়। মেমি আস্তে আস্তে চেয়ারে বসে)
২৫
( ঈদের দিন। বাতেন-তাতা সবাই পাঞ্জাবী, টুপি পরে ঈদের নামাজে যাচ্ছে। আদী জমকালো পোষাক পরে রান্তায় নামে, দেখা হয় বাতেনদের সাথে। )
তাতা : আরে তাড়াতাড়ি চল, জামাতের দেরি নাই।
বাতেন : ভাইজান কই যান ?
আদী : ঈদ-মন্ডপে।
তাতা : ঈদ-মন্ডপে ?
বাতেন : হালায় কয় কী - ঈদ-মন্ডপে ! হালারে ধর, মন্ডপে পাঠাই (সাথে সাথে সবাই আদীকে ঘিরে ধরে মারতে থাকে।)
২৬
( ঈদের দিন সন্ধায় মিহির, মেমি ও নিমা বসে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। পূরবী আসে।)
পূরবী : আদীকে নাকি সকালে কারা মেরেছে ?
মেমি : পাড়ার বখাটে ছেলেরা, মেরে কাপড়-চোপড় ছিন্তাই করেছে।
পূরবী : তাই ! ( তারপরই পূরবীর চোখ পড়ে টিভিতে ) আজ ঈদের দিনে আমাদের চ্যানেলগুলোতে কত ভাল ভাল পোগ্রাম দেখাচ্ছে, আর তোমরা হিন্দি সিরিয়াল দেখছো ?
মিহির : তুমি সব সময় ব্যাপারটা কেন সিরিয়াসলি নেও ?
পূরবী : নিব না ? এরা আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও সম্পর্কের উপর সরাসরি আঘাত করছে। এখন আই লাভ ইউ বললে যে কেউ আপন হয়ে যায়। আর আই হেট ইউ বললে মুহূর্তে আপন হয়ে যায় পর । ( কেউ পূবেীর কথা শুনচ্ছে না। পূরবী বিরক্ত মুখে বেরিয়ে যায়। এমন সময় শফিক মিহিরের মোবাইলে রিং দেয়। মিহির টিভির দিকে তাকিয়ে কল রিসিভ করে )
মিহির : হ্যালো ঈদ মোবারক ।
শফিক : ঈদ মোবারক। কেমন আছো মিহির ?
মিহির : আপনি ?
শফিক : হিন্দি সিরিয়ালে পার্বণী তার পারিবারিক শত্রুকে যে বিয়ে করেছে তা জানো ?
মিহির : পার্বণী তার পারিবারিক শত্রুকে বিয়ে..., তো ?
শফিক : তুমিতো দেখছি অনেক বোকা, অনেক। হা, হা, হা । ( শফিক লাইন কেটে দেয়। মিহির কিছুক্ষণ থমকে। )
মিহির : বড় ভাবি কোথায়রে ? ( নিমা ও মেমি ফিরে তাকায়। হঠাৎ মিহির উঠে বড়ভাবির ঘরে যায় )
২৭
( মিহির বড়ভাবির ঘরে এসে বড়ভাবিকে ডাকে, ভাবি নেই। হঠাৎ বিছানায় একটা চিঠি পেয়ে নিয়ে পড়ে। )
মিহির : এ সংসারে আমি হাঁপিয়ে ওঠেছিলাম, তবু তোমাদের জন্য ছিলাম। কিন্তু তোমরা এখন বড় হয়েছ, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছ, আমার আর দরকার নেই। তাই চলে এলাম। তোমরা সবাই ভাল থেকো। (চিঠি শেষে মিহির চিৎকার দিয়ে চুল টানতে থাকে) ফকির হয়ে গেলাম, ফকির। সব শেষ, আমরা এখন পথের ফকির, পথের। (মিহির ঘরের সব তছনছ করতে থাকে। মিহিরের চিৎকারে বাসার সবাই ছুটে আসে।) উফ ! এই সিরিয়াল, সিরিয়ালই আমাদেরকে ফকির করছে, ফকির ( মিহির ছুটে এসে বসবার ঘরের টিভির ডিসের লাইন ধরে টানকে থাকে, পূরবী মিহিরকে বাঁধা দেয় )
পূরবী : ডিসের লাইন না ছিঁড়ে সিরিয়াল দেখা বন্ধ কর ।
মিহির : হ, আজ থিকা হিন্দি বন্ধ, বন্ধ । (মেমি ও নিমা ভয়ার্ত মুখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকে) ঊফ ! মারে । (মিহির দু’হাতে মাথা চেপে ধরে।) ও মারে, মরে গেলাম রে (পরক্ষণে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে) হা, হা, হা ( মিহির হাসতে হাসতে সোফায় বসে, সোফা থেকে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। পাপ্পু, আদী ছুটে এসে মিহিরকে ধরে।) ঐ তোরা টিভি ছাড়, ছাড় টিভি, সিরিয়াল দেখুম, হ সিরিয়াল, হা, হা, হা। (পরক্ষণে মিহির দু’হাতে মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।) টিভি সারছ না কেরে ? সিরিয়াল দেখুম না ? সিরিয়াল ?
২৮
( শফিকের ফ্লাটে বড় ভাবি হাসি মুখে শফিকের হাতে এক কাপ চা তোলে মেয় )
বড় ভাবি : নেও ।
২৯
( মিহির রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে, তার পরনে কোট-টাই। মিহির বাঁশি ফুঁকে একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ড্রাইভারের লাইসেন্স দেখতে চায়। )
মিহির : এই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখা, তোর রিক্সার ব্লু-বুক কই ? ব্লু-বুক ?
রিক্সা ড্রাইভার : আপনে কেডা ?
মিহির : আমি ফুল-কুমড়ার জাত ! ( মিহির মুঁচকি হাসে। রিক্সার প্যাসেঞ্জার হাঁ হয়ে থাকে )
ফ্রিজ
প্রচার : চ্যানেল আই
রাজু সিদ্দিক
২২ পৌষ ১৪০৯
©somewhere in net ltd.