নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাজু সিদ্দিকের মননভুবন

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক

রাজু সিদ্দিক

আমার অনুমতি ব্যতীত কেহ আমার গল্প বা গল্পের অংশ এবং নাটক বা নাটকের দৃশ্য বা সংলাপ বা সংলাপের অংশ কোখায়ও ছাপাতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। -- রাজু সিদ্দিক .

রাজু সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউন ( ২ )

০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:০১

পুলিশ অফিসার তথ্যানুসন্ধান শেষে সাততলা থেকে নেমে আসেন। ততক্ষণে বাড়িওয়ালা যে প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তার ছিলেন সেই পরিচয় পেয়ে যান। তাই যাবার সময় সম্মান নিয়ে বলেন,
: স্যার, যেহেতু ভিক্টিমের করোনার পজিটিভ রিপোর্ট এখনও হাতে আসে নাই, আর যতটুকু ইনফর্মেশন পেয়েছি তাতে সংক্রামণের ইতিহাস ক্লিয়ারই মনে হচ্ছে । অবশ্য ইনভেষ্টিগেশন এখনও শেষ হয় নি, হলে রেজাল্ট অন্য রকমও হতে পারে। যাইহোক, আপাতত আমরা আপনার বিল্ডিং লকডাউন করছি না। বাট, বিষয়টা আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি । আপনি টোয়েন্টিফোর আওয়ারস গেট লক করে রাখবেন । ইমার্জেন্সি ছাড়া কাউকে বের হতে বা ঢুকতে দিবেন না, প্লিজ। অন্যথায় স্যার, আমরা এসে লকডাউন করতে বাধ্য হব।
: বুঝতে পেরেছি । ওকে, ঠিক আছে । আমি সব সময় গেটে তালা দিয়ে রাখব।
: আরেকটি কথা স্যার, বিল্ডিংয়ের কমন-স্পেসগুলোতে জীবাণুনাশক স্প্রে করুন, বিশেষ করে করিডোর, লিফটের ভিতর,বাহির । তারপর ধরেন সিড়ি, সিড়ির রেলিং, গেট, প্রতিটা ফ্লাটের দরজার হেন্ডেল, ডোরবেল। আপনার সেফটির জন্যই বলছি স্যার।
: সিওর, থ্যাংকিউ, থ্যাংকিউ।
: ওয়েলকাম স্যার। আসি স্যার, ঘরে থাকবেন, ভাল থাকবেন । সালামুলাইকুম।
: অলাইকুম আসসালাম।
বাড়িওয়ালা হাফ ছেড়ে বাঁচেন। তিনি গেটে তালা লাগিয়ে ঘরে এসে এসির ছেড়ে বসেন। এসির ঠান্ডায় গা শীতল হবার আগেই উনার ছেলে ছুটে এসে আতংকিত কণ্ঠে বলে,
: আব্বু, এলাকার পোলাপান বাঁশ,লাঠি নিয়ে আমাদের বাসার দিকে আসছে !
: কি ?
: হ্যাঁ, দেখো ।
বাড়িওয়ালা পড়িমরি করে নিচে নেমে আসেন। এসে দেখেন হাউজিং প্রজেক্টের উৎসাহী যুব সমাজ উনার গেটের দু’পাশে দুটা লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে ! আর দুটা বাঁশ গেটের সাথে আড়াআড়ি করে বাঁধছে। তিনি নিজেকে শান্ত রেখে মোলায়েম স্বরে জানতে চান,
: কী করছো বাবারা ?
নেতা গোছের একজন উত্তর দেয়,
: আঙ্কেল, শুনছিলাম কাকের মাংস কাকে খায় না, আজ দেখলাম। আপনি পুলিশ ছিলেন বলে পুলিশ আপনার বাসা লকডাউন করে নাই। কিন্তু আমরা তো আর এই প্রজেক্টের লোকজনকে বিপদে রাখতে পারি না । কী বলেন, পারি ?
: না, তা কী করে হয় !
: জ্বী, এই জন্যে আপনার বাড়ি আমরা লকডাউন করে দিলাম। নো এন্ট্রি, নো এক্সিট । বলে নেতা লকডাউন লেখে দুটা কাগজ গেটে আঠা দিয়ে সেঁটে দেয়।
বাড়িওয়ালা অবাক হয়ে সবাইকে দেখেন, এরাই না চলার পথে সালাম দিয়ে রাস্তার পাশে সরে যায় ! হাউজিং সোসাইটির মিটিংয়ে দাঁড়িয়ে চেয়ার এগিয়ে দেয় ?
আফসোস !
: বাবারা, বাঁশ শক্ত করে বাঁধছো তো ? দেখো চোরে যেন না নেয় ! বলে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে উপরে উঠে আসেন। এসে ধপাস করে এসির নিচে বসেন । উনার ছেলে এসে পাসে বসে ।
: আব্বু বিষয়টা পুলিশকে জানানো উচিত না ?
: হু ?
: বিষয়টা পুলিশকে জানাই ?
: বাদ দেও, যা করেছে ভালেই করেছে । আমি কাউকে আসাযাওয়ায় বাধা দিতে পারতাম না ।
: কিন্তু আব্বু, আমার কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না ।
: হু ? বাড়িওয়ালা ভ্রূ কুঁচকান ।
: না, বলছি কি, এদেরকে সোসাইটির সভাপতি বা সেক্রেটারী পাঠায়নি তো ? না হলে পুলিশ যে আমাদের লকডাউন করেনি এই খবরটা এরা এত তাড়াতাড়ি পেল কিভাবে ? আর পেলেই চলে আসবে ? উ-হু, অবশ্যই পেছনে কেউ গুটি করেছে । বাড়িওয়ালা হতাশ চোখে ছেলের দিকে তাকায় । হঠাৎই ছেলে নড়েচড়ে বসে,‘আচ্ছা আব্বু, পুলিশ অফিসারই এদেরকে বলে যায় নি তো ? না, দেখো পুলিশ তোমাকে সম্মান দেখিয়ে লকডাউন না করে চলে গেলো, ঠিক আছে । কিন্তু যাবার সময় এদের ইঙ্গিত দিয়ে গেলো লকডাউন করে দিতে ! না, এমনটা হতে পারে না ? বাড়িওয়ালা এবার নীরবে হাসেন। এ হাসির অর্থ - হতে পারে, আবার না হতে পার ?
এদিকে যুবসমাজের লকডাউনের পর থেকে বাসার সামনে উৎসুক লোকজন জটলা পাকাতে শুরু করে। বিল্ডিংয়ের কেউ বারান্দায় এলেই জটলার কম বয়সীরা আঙুল তুলে সমস্বরে, "ঐ যে, ঐ যে," আওয়াজ তুলে। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে বিল্ডিংয়ের বাসিন্দারা বারান্দার দরজা, জানালা লাগিয়ে পর্দা টেনে দেয়। ক্রমেই মানুষজন বাড়তে থাকে, বেড়ে বেড়ে জটলাটা ভিড়ে পরিণত হয়।
ভিড়ে নানা জন নানান ধারণা ব্যক্ত করে। যাদের কোমল হৃদয়, তাদের ধারণা - অই পোলার কাছ থিকা বাড়িওয়ালারও করোনা ধরছে !
: আরে হ, বাড়িওয়ালা চাচা পরশুদিনই আমার দোকানের সামনে দাঁড়াইয়া দুইডা কাশি দিলো । অমনি আমার মনে কু-ডাকটা দিল। এহন ? এহনতো নিজের চোখেই দেখতাছো !
আর কঠিন হৃদয়বানদের ধারণা,
: শুধু বাড়িওয়ালা আঙ্কেল না, লগে তার পোলারেও করোনা ধরছে। তারা বিষয়টা লুকাইতাছে । সোসাইটির উচিত তাগো দুইজনের হাতপা বাইন্ধা হাসপাতালে নিয়া যাওন !
ভিড় থেকে বিচ্ছিন্ন একজন হাঁটু ভেঙে বসে ম্যাচের কাঠি দিয়ে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলে,
: আমারতো মন চাইতাছে বুলডোজার দিয়া হেগো বিন্ডিংটাই ভাইঙা ফালাইতে।
: বিল্ডিং ভেঙে ফেলবেন মানে ! ফাজলামি পেয়েছেন ?
: বিল্ডিংয়ের সমস্যা কী, এ্যাঁ ? পেছন থেকে আরেকজন রেগে উঠে ।
: সমস্যা কী, আমি কি জানি ? আমার মন চাইছে ভাঙতে, আপনার না চাইলে ভাইঙেন না। এতে চেতনের কী আছে ?
: যানতো ভাই, যান। মালিক এহনও বাড়ি বানাইয়া সারতারে নাই ! আর উনি আইছে কোনখানের হাউকারটা - বিল্ডিং ভাঙবো ?
: আরে ভাই, দেখেন গিয়ে এই লোকের হয়তো বুলডোজারের ব্যবসা আছে, এই উছিলায় সে দু’পয়সা কামাতে চাচ্ছে !
: হ, অইতে পারে, এই দেশের ব্যবসায়ীগো খাসলতইতো এইডা - অইন্যের ঘর পোড়া আগুনে আলুর বার-বি কিউ খাওন !
( ৩ পর্বের ২য়-পর্ব সমাপ্ত )

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:২০

সাইন বোর্ড বলেছেন: দেখা যাক তৃতীয় পর্বে কি হয়, তবে প্রথম পর্বটা বেশি ভাল লেগেছিল ।

০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:৩৫

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ, আসলে একটি সত্য ঘটনার উপর লেখাটা লিখছি। একজন করোনা রুগী পাওয়ার পর একটা পরিবার কি রবম যন্ত্রণার
মধ্য দিয়ে গেছে, তা-ই বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি। যাইহোক সাথে থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

২| ০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: করোনার যে চেহারা ইতালি, স্পেন, ব্রিটেন ও আমেরিকা দেখেছে, আমরা অদ্যাবধি তার কিছুই দেখিনি। সেদিক থেকে নিঃসন্দেহে আমরা ভাগ্যবান। তবে কয়েকটি ঘটনায় চকিতে করোনার যে অগ্নিমূর্তি দেখার দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে--রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার জন্যে সেটুকুই যথেষ্ট।

০১ লা মে, ২০২০ রাত ১০:৩৮

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ, আসলআমিও চিন্তিত আতঙ্কিত । তবে একজন করোনা রুগী পাওয়ার পর একটা পরিবার কি পরিমাণ যন্ত্রণার
মধ্য দিয়ে গেছে, তা-ই বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি। যাইহোক সাথে থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

৩| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১২:০৬

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ভালো লাগলো।

০২ রা মে, ২০২০ রাত ৩:০৮

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৪| ০২ রা মে, ২০২০ রাত ১:৪৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আগের পর্বের মতো সুখপা্ঠ্য না হলেও
বাস্তব ঘেষা লেখার কারনে উৎরে গেছে।
দেখি আগামী পর্বের পরিনতি কি হয়।
শুভকামনা আপনার জন্য।

০২ রা মে, ২০২০ রাত ৩:১২

রাজু সিদ্দিক বলেছেন: ধন্যবাদ, সত্য ঘটনার উপর লেখাটা লিখছি। একজন করোনা রুগীর উপস্থিতিতে একটা বিল্ডিংয়ের কয়েকটা পরিবার, বিশেষ করে বাড়িওয়ালা কি রকম যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে গেছে, তা-ই বর্ণনা করতে চেষ্টা করছি। যাইহোক সাথে থাকার জন্য আবারও ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.