নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে চাওয়া নকল মানুষ। নিজ ধর্মে বিশ্বাসী ধার্মিক। নিজ কাজে নির্ভরশীল শ্রমিক। দেশকে ভালবাসা এক দেশপ্রেমিক।মানুষে মানুষে সচেতনতা বাড়ুক, দেশ হোক উন্নত, সমৃদ্ধশালী। মানবতা আশ্রয় নিক হৃদয়ে।

রিফ্রাক্শন

আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।

রিফ্রাক্শন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ হৈমন্তী, একজন মা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:৪১

হৈমন্তী। মেয়েটাকে দেখে বোঝা না গেলেও মেয়েটার মন কাঁদা মাটির চেয়েও নরম এবং পবিত্র

আমাদের বিয়ে হয়েছে বছর গড়ায় নি। জানিনা কেন আমার শ্বশুর তার মেয়েকে আমার মত ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন।

আমি হৈমন্তীকে চিনতাম একভাবে কিন্তু তারসাথে আমার কোন ভালবাসার সম্পর্ক ছিল না।
আমি তখন সবে একটা চাকরী পেয়েছি। বেতন বলার মত না। বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি করে যা থাকে তা দিয়ে খেতেই চলে যায়। বিয়েটা করতে চাইনি কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় হয়ে গেল কারন জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব তাঁর হাতে।

অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায় তেমনি আমার সাথে যেন খারাপটা লেগেই থাকত। বিয়ের পর সবাই নতুন বউকে শাড়ি গহনা সাথে কসমেটিকস কিনে দেয় কিন্তু আমি পারি না।

এমন একটা চাকরী করি যেখানে সকাল আট টায় যায় আবার বিকেল পাঁচটায় চলে আসি। মাসের শেষে বেতন পাই যা মাস না ঘুরতেই ফুরিয়ে। শেষের কদিন টান পোড়ন পরে যায়।

আগে চেনা জানা না থাকলেও বিয়ের পর থেকে দুজন দুজন কে অদ্ভূত রকমের ভালবেসে ফেলেছিলাম। ছিল পারস্পারিক বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ। এতে কোন খাদ ছিল না। হৈমন্তী কি ভাবত জানিনা। তার স্বামী তাকে একটা নতুন কিছু কিনে দিতে পারে না।

এদিকে অফিসে যাওয়ার জন্য আমার পোশাক দুইটা আর একটা টিশার্ট ছাড়া কিছুই নেই। বিলাসিতা যে আমার মানায় না।

মাসের বেতন পেলে ঐ পাকেই বাজার থেকে চাল আর কিছু শাকসবজি খেতাম। গরুর মাংস কিংবা আমিষ কল্পনা করা ছিল পাপ। তবে চা এর বিলাসিতা টা ছাড়তে পারিনি। আফিস থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে হৈমন্তীর সাথে বেলকনিতে বসে চা খাওয়ার অনুভুতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই চা বানানো ও ওর মা এর কাছে থেকে শিখেছে।

আমার সংসারে যে ও কিসের সহিত কিভাবে কত কষ্টে জীবনযাপন করছে তা কাউকে বলে না। ও আমাকে নিয়ে খুব গর্ব করে। আমি যতদিন বেচেঁ আছি ওর কোন দুঃখ নেই। একটা ভরসা আছে।

আফিস থেকে তিন দিন ছুটি পেয়েছি যার একদিন বাসায় থেকে পরের দুদিন একটু শহরের বাইরে যেতে হবে। তাই সেদিন মনে করলাম একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি কিন্তু এই ব্যাস্ত শহরে পা ফেলতে লাগে টাকা। জানি রিক্সায় ঘুরার টাকা নেই তবুও বের হলাম দুজন।

এতদিন ওকে আমি কোনদিন সাজতে দেখিনি। আজকেও তেমন না কিন্তু কপালে শখ করে একটি কালো টিপ দিয়েছে। বিয়ের আগের একটি নাকফুল ঐটাই পড়ে আছে। কানের দুলটাও ঐরকম। আমি আর কি পড়ব ঐ টিশার্টটা পড়েছি। হৈমন্তী এগুলো বারবার কেঁচে ঠিক করে রেখেছে।

তারপর রিক্সা ডাকতে গেলাম কিন্তু হৈমন্তী বলল থাকে অযথা টাকা খরচ হবে। যদিও আমি অপমান বোধ করলাম কিন্তু সত্যটা তো আসলে তাই বিলাসিতা করার মত টাকা নেই। তাই ও আমার কাধে মাথা রেখে হাঁটতে শুরু করলাম। নদীর ধার দিয়ে হেটেই চলেছি। এসব ভাবলে তিতা ছাড়ি কিছু আসে না।

২।
দুদিন শহরে থাকার পর যেদিন ফিরব সেদিন ভাবলাম বাসেই ফিরি। বাসের নাম মহানগর এক্সপ্রেস। উঠতে উঠতেই গাড়ি ছেড়ে দিল। আমার যেখানে আসন ছিল কিন্তু দেখলাম ঐ খানে একটা লোক ঘুমাচ্ছে তাই পাশের ফাঁকা সিট টাতে বসলাম। পাশে একজন বিবাহিত মহিলা। বুঝলাম কারন তার কোলে একটা দেড় বছরের ছোট মেয়ে। নাম জিঙ্গেসা করাতে জানতে পারলাম মহিলার নাম তুলি।
কিছুক্ষন পর মহিলা সমানে বমি শুরু করল। তখন বাচ্চাটাকে কোলে নিলাম আর উনাকে পানি দিলাম।

আমিঃ আপনি তো দেখছি অসুস্থ, যাচ্ছেন কোথায়।
তুলিঃ বাপের বাড়িতে।
আমিঃ এত রাতে আর আপনার স্বামী
তুলিঃ আমার স্বামী নেই।
আমিঃ দুঃখিত
তুলিঃ কেন
আমিঃ ভাবতে পারিনি যে মারা গেছেন
তুলিঃ আরে নাহ। প্রেম করেছিলাম সাত বছর তারপর কোন এক রাতে অবৈধ মিলনের ফসল এই বাচ্চা।
আমিঃ বিয়ে করে নি?
তুলিঃ নারীদেহের স্বাদ পাওয়ার শখ ছিল পেয়ে গেছে এখন লক্ষ অন্যজনকে।


ক্লান্ত হয়ে মহিলা ঘুমিয়ে পড়লেন আমার কাধে মাথা রেখে। আমি বাচ্চা মেয়টার চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি পৃথিবীর কোন পুরুষ কতটা অমানুষ হলে এত সুন্দর একটা রক্তের সম্পর্ক যুক্ত বাচ্চা মেয়েকে অস্বীকার করতে পারে। অনেক আধুনিক হয়েছে এখন যৌনতা কানামাছি খেলার মত হয়েছে। আসলে এসব পুরুষ জাতের কলঙ্ক।

বাস চলছে। কিছুদুর পর যাত্রা বিরতি। দেখলাম তুলি এখনো ঘুমিয়ে আছে। তাই বাচ্চা মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে হিসু করতে গেলাম। কাজ প্রায় শেষ একটা বিকট শব্দ। বাচ্চা মেয়েটা আমাকে একটু শক্ত করে ধরল। বাসটা ককটেলে পুড়ে যাচ্চে। কিছুই করার নেই। মেয়েটার মা তো মারা গেল এখন এই মেয়েকে কিভাবে ঠিকানাই পৌছে দেব। ভাবতে থাকলাম হঠাত্‍ মাত্র বুলি বলা মেয়েটা আমাকে বাবা বলে ডেকে উঠল। আমার পিতৃমন জেগে উঠল পারলাম না ছেড়ে আসতে।

৩।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে সকাল। হৈমন্তী দরজা খুলে দিল। ওর চোখে এখনো খূম ভাঙেনি হয়ত ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে। ভেতরে গেলাম। বাচ্ছা মেয়েটাকে দেখে কিছুটা অবাক হল তারপর সবকিছু বলার পর ও কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করল।
শুক্রবার ছিল তাই আফিস নেই। রাতে এত বড় একটা কাহিনী ঘটে গেল মাথাটা ঠিক কাজ করছে না। এমনিতেই টানপড়নের সংসার তারপর একটি সদস্য বেশি তাও যদি নিজের হত মেনে নেওয়া যেত। বেলকানির গ্রিলে হাত দিয়ে ভাবছি। হঠাত্‍ পেছন থেকে গায়ে হাত দিয়ে হৈমন্তী চায়ের কাপটা দিল।

হৈমন্তীঃ চিন্তা করছ
আমিঃ না কিসের চিন্তা
হৈমন্তীঃ লুকিও না। আমি জানি তুমি চিন্তা করছ।
আমিঃ না মানে
হৈমন্তীঃ থাক না মেয়েটা আমার কাছে। না থাকল রক্তের টান তবুও আমি ওকে বড় করব। মানুষ করব। আমরা না হয় সন্তান নেব না।
আমিঃ তাই বলে তুমি এত কিছু ত্যাগ করে আবার মাতৃত্ব টুকু ত্যাগ করবে যা একজন নারীর লালায়িত স্বপ্ন।
হৈমন্তীঃ গর্ভে ধরলেই মা হয় শুধু? আমি একেই নিজের মনে করব।


এই জিবনে আমি স্বার্থক যে হৈমন্তীকে অর্জন করেছি। আজ ওকে আরেকটু চিনলাম। এখন শ্রদ্ধা টা বেরে গেল।
প্রতিটা মেয়ের মন এরুপ নমনীয় হলে আজকের এই ধ্বংসের পৃথিবীটা অন্যরকম হতে পারত। যে পৃথিবীতে থাকত ভালবাসা মায়া।

কনসেপ্ট টা এক ভাই নাম নিয়াত তার কাছ থেকে নেয়া। গল্পটা লিখা ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল। তখন প্রথম লেখা শুরু করি। বানানে অনেক ভুল থেকে গেছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫

ফারিয়া রিসতা বলেছেন: অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে এমন গল্পগুলা পড়লে !
ভালো লাগলো

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:২৬

রিফ্রাক্শন বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.