নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে চাওয়া নকল মানুষ। নিজ ধর্মে বিশ্বাসী ধার্মিক। নিজ কাজে নির্ভরশীল শ্রমিক। দেশকে ভালবাসা এক দেশপ্রেমিক।মানুষে মানুষে সচেতনতা বাড়ুক, দেশ হোক উন্নত, সমৃদ্ধশালী। মানবতা আশ্রয় নিক হৃদয়ে।

রিফ্রাক্শন

আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।

রিফ্রাক্শন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাই আমার ভাই

১৩ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৩২

__এই যে ভাই

"জি

__এই মানিব্যাগ এবং মোবাইলটা আপনার

"ও দেখি হ্যা আমার ধন্যবাদ।

আজকাল বড় উদাসীন হয়ে গেছি। কারনটা নিজেও ধরতে পারছিনা। সেই সন্ধ্যা থেকে বসে ছিলাম এই চায়ের দোকানে। নিকোটিনের ধোয়ার দোকানিকে টাকা দেয়ার পর মানিব্যাগটা আর মোবাইলটা তুলতে ভুল হয়ে গেছে। হয়ত এই ছেলেটা আজ ছিল বলে পেয়ে গেলাম কিন্তু দেশের সবাই তো আর এমন না।

হারালে আর কি হত যখন বাস্তব মানুষটা নেই তখন আর এই স্থির আলোকচিত্রটা আর তার দেয়া শেষবারের মানিব্যাগটা এটা ছিল তবে যেত।

এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির পথে চলছি। মধ্যরাত তাই গ্রামে নীরবতা বিরাজ করছে। মাটির রাস্তা। পায়ের নিচে প্যান্ট চটি সেন্ডল পরে হাটছি। নীরবতার একটা মধুরতা আছে তা অনেকে বুঝতে পারে না বলে ভয় পায়। যদি একবার কেউ এই মধুরতার ঘ্রান গ্রহন করতে পারে তবে সে এইভাবে একে আপন করে বেঁচে থাকবে।

এই নীরবতা আজ থেকে আমার আপন নয়। সেই অনেক দিন থেকে যেন আমাকে ভরসা করে এগিয়ে যাচ্ছে।

সেদিন কি আমি জানতাম যে বিকেলের ঘটে এমন ছিল। ছোট ভাইটার বয়স তখন দুই। মা বাবা গেছেন কাজে তাই ভাইটাকে নিয়ে মাঠে গেছি খেলতে। কিন্তু ফিরে আর বাবার আর মায়ের ঐ মায়াবী মূখটা আমার দেখা হয়নি। এভাবে যে আমার কাধে একাকিত্ব ফেলে চলে যাবেন দুর্ঘটনায় পড়ে তখন কল্পনায় এসব থাকেনা বা আসেনা। ছোট ভাইটাকে যদিও সেদিন বুঝতে দেয়নি কিন্তু মায়ের অভাব তো পূরন করা যাবে না। তখন থেকেই আমি ছোট ভাইটাকে নিয়ে দিন চলাতে লাগলাম। নিজে একটু কঠিন হলাম কিন্তু ছোট ভাইটার মা বলে কান্নাটা আর ঠিক থাকতে দেয়নি।

ভাইটা আমার গায়ের সাথেই লেগে থাকত। তাকে আর আলাদা হতে দিতে চাইনা। সবে একটা প্রশাসনেয় চাকরী পেয়েছি। কাজে যায় ভাইকে নিয়ে। এভাবেই চলেত হবে।

মাস দুই পার হয়ে গেছে। এসব ঘটনার দুঃখে আর তুলিকে কিছু জানায়নি। অযথা একটা টেনশন করবে। মধ্যবিত্ত ছেলে হয়েও তুলির মত একজন বিত্তবান মেয়ের ভালবাসা বিস্তীর্ন আকাশ আমাকে ছায়ার মত ঢেকে রাখত। সকাল দুঃখ তাতে ভুলে যেতাম। কিন্তু আজ ওর আসার কথা তখন ওকে কি করে বলব এসব কথা আর ও কি করে সহ্য করবে এসব। তবুও ওকে নিয়ে আসার সময় সব খুলে বললাম।

__গাড়ি থামাও

"কেন

__এত বড় একটি কথা আমাকে বললে না

"না আসলে

তারপর তুলি যেয়ে ছোট ভাইটাকে কোলে তুলে নিয়ে বসে থাকল।

এখন আমার একটু সুবিধা হয়েছে। চাকরীতে যাওয়ার সময় তুলি ওকে নিয়ে যায় আর রাতে আমি ওকে নিয়ে আসি। এভাবে মাস চলছে।

দেখতে দেখতে ভাইটা স্কালে ভর্তি হল। এখন সে একাই স্কুলে যায় তারপর তুলির কাছে যায়।

এযুগের পিচ্চিদের বড়দের সদৃশ কথা বার্তা তেমনি আমার ভাইটাও পিছিয়ে নেই। একাই শহর চড়িয়ে খায়।

আমি প্রশাসনে চাকরী করতাম বলে আমারতো আর শত্রুর অভাব ছিল না।

এমনি একদিন সকালে ভাইটা স্কুলে চলে গেল। কেন জানি খালি খালি লাগতে লাগল। আমার ছুটি ছিল। স্কুল ছুটির সময় হয়ে গেছে কিন্তু ভাই আর আসে না বাড়িতে। হঠাত্‍ আমার কাছে ফোন আসে ঐ স্কুলের সামনে একটা খুন হয়েছে।

আমি দ্রুত চলে গেলাম। তারপর যা দেখলাম তা আমি আর বর্ননা করতে পারব না। শুধু সাদা শার্টের ওপর লাল রক্তের ছাপ আর কিছু মনে পড়ে না।

......
......
এখন তাই আমি এই মধ্যরাতে চলে যাই ভাইয়ের কবরের পাশে যেন প্রতিবার ওর কথা গুলো আমার কানে প্রতিধ্বনি হয়।
ভাইয়া আসি

ভাইয়া এটা আনবে কিন্তু

ভাইয়া চলনা একটু খেলি

ওর কোন কথা আমি ফেলিনা। কিন্তু আমার ভাইটা কোথায়। কবরে পাশে যেয়ে ওর সাথে আমার কথা না বললে ভাল লাগেনা। সবাই যখন ঘুমিয়ে যায় আমি ওর কবরের পাশে বসি আর ও সাদা কাপড় পড়ে আসে।যেন ওর গায়ে থেকে আলোক দ্যুতি ছড়াই তাতেই আলোকিত গোরস্থান। রাতের খাবারটা খাওয়ায়ে দিতাম। একটু দেরি হলে রাগ করত। তাই আমিও দেরি করতে চাইতাম না।
এদিকে তুলির পিতামাতা জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার পিতামাতা নেই এটাই দোষ। ভাইটার শোকে কাতর আমি তুলিকে নিয়ে ভাবার এত বিলাসিতা ছিল না।

ভাই যে আমার আত্মা। কোথায় তুই?

হয়ত অনেক পাপ করেছিলাম বলে এভাবে কাছের প্রতিটা মানুষকে নিয়ে নিলেন তিনি। বড় অভাগা আমি।
এখন আমি অনেকটা শোক কাটিয়ে ওঠা মানুষ। তাইতো আমার কোন অপরাধীর মায়ের বুক সন্তানহীন করতে আমি বিচলিত হয়না।
সময় হয়েগেছে। ভাইয়ের কবরের পাশে যেতে হবে। ভাইতো আমার জন্য বসে আছে না খেয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.