নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে চাওয়া নকল মানুষ। নিজ ধর্মে বিশ্বাসী ধার্মিক। নিজ কাজে নির্ভরশীল শ্রমিক। দেশকে ভালবাসা এক দেশপ্রেমিক।মানুষে মানুষে সচেতনতা বাড়ুক, দেশ হোক উন্নত, সমৃদ্ধশালী। মানবতা আশ্রয় নিক হৃদয়ে।

রিফ্রাক্শন

আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।

রিফ্রাক্শন › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন ভাইয়ের পরিবর্তন

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৮

চার দিনের ছোট একটা ভ্রমণ শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে হবে। স্টেশনে বসে অপেক্ষা করছি ট্রেনের জন্য। আমি আর জামিল ভাই। জামিল ভাই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই।

যেমন আবহাওয়া তেমন ট্রেনের অবস্থা। ১ ঘন্টা দেরী। ট্রেনের ১০ বগির সমান প্লাটফরমের মাঝামাঝি বরাবর এক গাছের নিচে বসে আসি।

পাশেই এক লোক ডালা বুনছে। চোখের সীমানার অদুরে এক মা তার ছেলেকে শাসন করছে।

এক বৃদ্ধা মহিলা স্তন ঢাকার আপ্রাণ চেস্টা করছে, বুকে ব্লাউজ নেই, শুধু পরনে ছেঁড়া শাড়ি।
আমার যখন ঐ মহিলার দিকে চোখ পড়ল তখন পাশ থেকে জামিল ভাই বলল, ‘’ঐ বৃদ্ধা কে দেখ? কিছু বুঝলি?’’

আমি বললাম, “ কি বুঝব? বৃদ্ধার খুব অভাব। বোধ হয় এই রেলের ধারে থাকে।“

ক্ষনিক চুপ থাকার পর জামিল ভাই বলল, ‘’ হয়ত বৃদ্ধার খুব অভাব কিন্তু তার যেটুকু আছে তা দিয়েই নিজের সম্মান কিভাবে আগলে রাখার চেস্টা করছে, অন্যদিকে আমাদের সমজের কিছু মেয়ে স্তন দেখানকে আজ ফ্যাশান মনে করে। আসল অভাব তো এই সব মেয়েদের।‘’

আমি জামিল ভাইয়ের কথা শুনে একমত হওয়াতে মাথা ঝাকালাম। ঠিক এজন্যই জামিল ভাইকে আমার ভালো লাগে। কেনো জানি আলাদা আলাদা লাগে।

১ ঘন্টা হতে কয়েক মিনিট বাকি আছে, কিন্তু এরই মাঝে আবহাওয়া অনেকবার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই একবার ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি তো আরেক বার ঝকঝকে রোদ। এই ঠান্ডা বাতাস তো এই ভ্যাপসা গরম। গরম ভাল, যে গরমে গায়ে ঘাম ঝড়ে যায় কিন্তু যে গরমে গায়ে ঘাম ঝড়ে না, সে গরম বড্ড অসহ্য লাগে। ঠিক ছলনাময়ী প্রেমিকার মত।

ট্রেন চলে আসলো। এখন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার জার্নি। নিজের আর জামিল ভাইয়ের আসন পেয়ে আমরা বসে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর জামিল ভাই ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু আমার কেন জানি ঘুম আসতে লাগলো নাহ। শুধু গত ৪ টা দিনের কথা মনে হচ্ছে। খুব কাছে থেকে এরকম কিছুর অভিজ্ঞটা খুব খারাপ না।


তখন ক্যাম্পাসে ১ বছর হয়েছে আমার। নিজের মাঝে একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব আসছে। জুনিয়ররা আসা শুরু করেছে। ডেকে ডেকে শিক্ষা দিতে হবে। তাই একটা ফুরফুরে ভাবে ছিলাম। একদিন রাতে ৩/৪ জন জুনিয়র নিয়ে একটু মজা করছিলাম তখন এক বড় ভাই আমাকে ডেকে বলল পাশের রুমে যেতে। এই ভাইকে আমি আগেও কয়েকবার দেখেছি। ৪২০ এ থাকে। গত একবছরে তেমন একটা স্বাভাবিক লাগে নি। একটু একটু ভয়ে ছিলাম, ১ বছর সিনিয়র হওয়ার পরে আবার র‍্যাগ খাওয়া লাগে কিনা এই ভয়ে। উঠে গেলাম পাশের রুমে…

পরিচয় হলাম। নাম জানলাম, ভাইয়ের নাম জামিল। এই তখন থেকেই জামিল ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়। তারপর অনেক প্রশ্ন করল, আমি উত্তর দিতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর ভয় কেটে গেলো। শেষে আমাকে একটা গান গাইতে বললো। আমি কিছুক্ষণ নাহু নাহু করলেও গান গেয়ে ফেললাম গলা ছেড়ে। তখন রাত প্রায় ২ টা বেজে গেছে। গানগাওয়া শেষে জামিল ভাই খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করল। আমি না সূচক উত্তর দিলাম। তারপর আমি আর জামিল ভাই দুজনে বের হলাম খাওয়ার জন্য।

এরপর থেকে প্রায়ই আমি আর জামিল ভাই আড্ডা দেই। ভাইয়ের রুমে অনেক গল্প, উপন্যাস, নাটকের বাংলা ও ইংরেজি লেখকের বই আছে। আমার যখন যেটা লাগতো তখন সেটা পড়তাম নিয়ে এসে। মাঝে মাঝে তো বইয়ের ভিতরে ঢুকে থাকতাম।

এভাবেই আমার আর জামিল ভাইয়ের সম্পর্ক ক্লোজ হয়। বিকেলে চায়ের টঙ্গে আড্ডায় রাজনীতি কিংবা সাহিত্যের চর্চা। অথবা মাঝরাতে বাদ্যযন্ত্রহীন গানের আসরে দুজনে গলা ছেড়ে গান গাইতাম। গানের লাইন ভুলে গেলে যা মনে আসত তাই গেয়ে যেতাম। এমনি এক
বিকেলে আড্ডা হচ্ছিলো…কবিদের নিয়ে।

আমিঃ কবিতা না গল্প?

জামিল ভাইঃ কবিতার চরনে চরনে মিলে যাওয়া শব্দগুলো কিংবা গল্পের শেষ লাইন।

আমিঃ উপন্যাস নাকি নাটক?

জামিল ভাইঃ উপন্যাস হলে জীবনধারা, নাটক হলে চরিত্র।

“এমন কেনো ভাই? আপনার তো সবই ভালো লাগে।‘’ আমি বললাম।

জামিল ভাইঃ কেন তোর কেমন?

আমিঃ কবিতা ভালো লাগে না, বরং কোন ছোট গল্প…আবার নাটক নয় বরং উপন্যাসের কোন জীবনধারা।

জামিল ভাইঃ তুই ঠিক সাপোর্টারস দের মত। আমি পাঠক। যারা আমার পাঠের জন্য লিখে আমি তাদের লেখা থেকে আমার মন খুজি।

আমিঃ সাপোর্টারসদের মতো মানে?

জামিল ভাইঃ অন্ধ ভক্ত। যেমন ধর, তুই যদি রবীন্দ্রনাথ কে সাপোর্ট করিস তাহলে তোর সামনে অন্য কোন লেখক এর গুণগান করলে

তোর সহ্য হবে নাহ। ঠিক?

আমিঃ ঠিক। একপাক্ষিক না হয়ে সব কিছুতে নিজেকে খুঁজতে হবে। সেখানেই আগ্রহ জন্মাবে।

এমনি একদিন করে আলোচনা হয়ে যেত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

এতদিনেও আমি জামিল ভাইকে পড়ালেখার বেপারে কিছু জিজ্ঞেস করি নি। এ দিকে তার সাথে আমার ভারসিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে দেখা হলেও আজ আমি থার্ড ইয়ারের শেষের দিকে কিন্তু জামিল ভাইয়ের কি অবস্থা জানিনা। একদিন জামিল ভাই, এক প্যাকেট মিস্টি নিয়ে হাজির। কিসের জন্য জিজ্ঞেস করতে ভাই বলল তার গ্রাজুয়েশন শেষ করার মিস্টি।

তখন আমার মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো, ভাই আমার থেকে ৬ বছরের সিনিয়র হলেও কেন এতো দেরী?
ভাই এতোদিন কেনো নিজেকে একা একা রাখতো?

মাথায় আসা প্রশ্নগুলো মিলে যাচ্ছে। কোথাও একটা কিছু আছে। ব্যাপার জানার জন্য উদ্গ্রীম হয়ে গেলাম। দ্বিধা দন্দে ভুক্তে লাগলাম। ভাইকে কি সরাসরি জিজ্ঞেস করব নাকি অন্য কোন মাধ্যমে জানার চেস্টা করব…

একদিন কৌশলে ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনার বাড়ি কোথায়?

জামিল ভাই উত্তর দিলো। কিন্তু দেওয়ার সাথে সাথে একটু কুঁচকে গেলো। আমি আরো কৌতূহলে পড়ে গেলাম।
তারপরেই জামিল ভাই অন্য দিকে কথা ঘুড়ালেন। এরপর বিভিন্ন ভাবে আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয় নি।



হঠাত আজ থেকে চারদিন আগে বলল, চল ঘুরে আসি।

আমিঃ কোথায় থেকে?
জামিল ভাইঃ গেলেই দেখতে পারবি।

সেদিন জামিল ভাইয়ের সাথে এসেছিলাম ভাইয়ের বাড়িতে। লোকজন কেউ নেই। ফাঁকা বাড়ি পরে থাকে। বাড়ির আসে পাশে সব জায়গায় ঘুরে দেখালাম দুদিন ধরে। মনে অনেক প্রশ্ন জমে গেল। জিজ্ঞেস করব কি করব না এই দন্দে থেকেও গত কাল রাতে আমার সব ভয় কাটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ভাই টানা বলা শুরু করল।

‘’
আমরা পরিবারে ছিলাম ৪ জন। বাবা, মা, আমি আর আমার এক ছোট বোন। ক্লাস ৮ এ পড়ে। আমি সবে ভর্তি হয়েছি। আমাদের পরিবারটা সচ্ছল। খুব টানাপোড়ন নেই। আমার কথা তেমন চিন্তা করা লাগতো না। বাবা-মা খুশি যে তাদের মেয়ের চেহারা ভালো হয়েছে। বিয়ে দিতে দেরী হবে নাহ। খুব সহজে জামাই পাওয়া যাবে। কিন্তু আমি এমন চিন্তা ভাবনা করতাম না। বোন আমার যেভাবে চাই সেভাবে চলবে।

যখন আমি কলেজে ছিলাম তখন আমার এক ক্লাস্মেটকে আমার খুব পছন্দ হয়। কলেজ লাইফ, একটু আধটু প্রেম না করলে জীবনটায় বৃথা। এসব কথা ভেবে মেয়েটাকে প্রপোজ করে দিলাম। ওর নাম নিলা। কয়েকদিনপর নিলা তার সম্মতি জানাল। বাধাহীন ভাবে প্রেম শুরু করলাম। ক্লাস বাদ দিয়ে যেতাম ঘুরতে। প্রাইভেটের টাকা মেরে গিফট কিনে দিতাম। পার্কে যেতাম সময় কাটতে। দিন গুলো ভালই যাচ্ছিলো।
তখন বয়সটাও ছিলো খারাপ। শরীর মন চাইত একটু প্রেমিকার গায়ে ঘেঁষে থাকতে। প্রেমিকার নরম অঙ্গ গুলো চেপে ধরতে। লোকালয়ের আড়ালে গেলেই মন চাইত দুজনের ঠোঁট একসাথে করতে। কিন্তু কেন জানি সাহসে কুলাত না।
এ বন্ধুর কাছ থেকে শুনতাম, ও ওর প্রেমিকার সাথে এমন করেছে…। এ যুগে না খেললে নাকি প্রেমিকার গলায় দড়ি পড়ে না। বন্ধুদের পাল্লায় পরে অনেক কিছু নিয়ে প্ল্যান করছি।

হঠাত পাশের ঘর থেকে মায়ের কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি উঠে গিয়ে দেখি মা আমার বোনের ঘরে। উপরে তাকিয়ে দেখি বোন আমার ঝুলছে। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কেন, এমন হল? কোন কথা ছাড়ায় কিছু না বলে আমার আদরের টুকরো বোন এভবে চলে গেলো? এখন আর কেউ আমার সাথে দুষ্টুমি করে না। আমার ফুটফুটে বোনটা আজ কোথায় থাকে? কেমন আছে? বলতে পারবি মুরাদ?

‘’
আমি সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। জামিল ভাই আবার বলা শুরু করল।
‘’
বোনের লাশে শেষ কাজ করে আমি শুধু উত্তর খুঁজতে লাগলাম কেনো ও এমন করল। ওর নিজের কোন ফোন ছিলো নাহ। আম্মুর ফোন ব্যাবহার করত। আমি মায়ের ফোনটা নিয়ে আসার পর চেক করতে লাগলাম। দুএকদিনের মধ্যে তেমন কিছু নেই। আমার ফোন বাজতে দেখে আমি ফোন রিসিভ করলে আমার বন্ধু আমাকে এক জায়গায় আসতে বলে।
আমি গেলাম। ও আমাকে একটা ভিডিওর কথা বলে। আমি দেখতে চাই কিন্তু আমাকে দেখতে দেয় না। আমার আর বুঝতে বাকি থাকলো নাহ কিছুই।কিন্তু আমি এতই অক্ষম যে আমার কিছু করার ছিলো নাহ। বিপরীতে আমাদের অপরেই অনেক চাপ। নিজেকে পরাজিত মনে হচ্ছিল।
অনেক ভাবনা আসছিলো। তাহলে কি আমার অপরাধের জন্যই আজ আমার বোনের এই করুন পরিনতি। আমার প্রেমিকাও তো অন্য কারো বোন!

‘’
জামিল ভাইয়ের কথার পর আমার নিজেকেই যেনো খুব অসহায় লাগছিল। ইয়ারকির ছলে বলে থাকি ‘তোর ঘরে কি মা-বোন নেই’ কিন্তু কথাটাকে সিরিয়াস ভাবে নেয়ার দরকার।
প্রেম ভালবাসাতে শরীরের চাহিদা চলে আসছে যেখানে প্রেম কিনা ছিলো প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রতিদিন একটু করে বাঁচিয়ে রাখার মন্ত্র। আজ প্রেমের মরা জলে ডুবে যাচ্ছে।
ভালো থাকুক সকল প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের নিজেদের প্রেম নিয়ে। ট্রেন চলছে ঝকঝকা ঝক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৪

এ্যান্টনি ফিরিঙ্গী বলেছেন: বিবেকের দংশন আর প্রকৃতির ধার শোধ!

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫৭

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: ব্যাপারটা ধোঁয়াশা লাগলো।বোনের সঙে এমন হলো,তাই বলে বাড়ি যাওয়া নেউ,কারো সাথে কথা নেই,বন্ধু নেই এমন কেন হবে???
আর তাছাড়া আপনার সঙে উনার পরিচয়টা আরো বেশি অদ্ভুত ভাবে হয়েছিলো।গল্পের থিম অবশ্যই ভালো ছিলো। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.