নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।
অক্টোবর মাস, এই সময়ে মাঝরাতের পর হালকা হালকা শীতের বাতাস বয়ে থাকে। আমি সচারচার রাতে জার্নি করে অভ্যস্ত। জানালার পাশে আসন। উদ্দেশ্য রাজশাহী। ট্রেন ছাড়ল, ধীরে ধীরে গতি বাড়ল। আমার আবার জার্নিতে খুব ঘুম পাই, এজন্য ট্রেনে উঠেই আগে জানালা বন্ধ করে রাখলাম। নয়ত কখন ঘুমিয়ে যাব, পরে বাতাসে ঠান্ডা লেগে যায় কিনা! পাশের ছিট টা আপাতত ফাঁকা আছে। হয়ত পরের স্টেশন থেকে কেউ উঠবে। তাই একটু হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসলাম।পরের স্টেশন আসতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে, অন্তত এইটুকু সময় আরামে বসে নেই। পরে যদি পাশের সিট কোন রমনীর হয় তাহলে আমার ঘুমের বারটাও বাজবে আবার আরামে বসাও হবে, কখন স্পর্শ লেগে যায়। মেয়েরা এখন আবার এসব বিষয়ে খুব খেয়াল রাখে। রাস্তা ঘাটে এসব নিয়ে পুরুষদের হেনস্তা হতে হয়। যদিও দোষ টা আমাদের পুরুষেরই, কেননা সচেতন, অবচেতন যে কোন ভাবেই সুযোগ পেলেই আমরা মেয়েদের গায়ে হাত দিতে চাই।
হয়ত সকল পুরুষ এমন না, কিন্তু এক্ষেত্রে মেয়েরা সবাই কে এক মনে করে, তাই ওদেরও দোষ দেয়া যায় না।
সময় যেতে যেতে পরের স্টেশন ও ফাঁকায় থাকলো। আরেকটু সময় পেলাম। আরো আধাঘন্টা মত।
এরপর যখন ঘুম ভাঙল তখন অনুভব করলাম গায়ে ঠান্ডা বাতাস লাগছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের জন এসে বসেছে।
একজন মেয়ে। তখন ঘুমের ভিতরেই ছিলাম, চেহারা ভালো করে খেয়াল করা হয়নি। যেহেতু পাশে একজন মেয়ে বসেছে তাই সতর্ক থাকার জন্য আমি নিজে এখন হাত পা গুটিয়ে নিজের আসনের মধ্যে রাখার চেস্টা করলাম।
আব্বু, আমি ট্রেনে উঠলাম।- পাশের মেয়েটা বলল।
কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগলো। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমার অনেক দিনের চেনা, শুধু মুখ চেনা নয়, চেনা ছিলো প্রতিটি শ্বাস,এখনো হয়ত আছে তবে মলিন হয়ে গেছে ম্যাচিং টা। তবু আজ কন্ঠের জোরে চিনে ফেললাম, যে কন্ঠ কত রাত, কত দিন ফোনের ওপাশে কিংবা বাস্তবে কথা বলে গেছে আমার সাথে। এটা এতো সহজে ভুল হবার নয়।
আমি অনেকদিন পর দেখে তাকিয়েই ছিলাম একপলকে।
একসময়, মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,কি দেখছ এভাবে?
কথাটি শুনে আগের কথা মনে পড়ে গেল, যখন ঘন্টার পর ঘন্টা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম তখনও ও এই কথাটা বলতো।
আমিঃ অনেকদিন পর দেখলাম তো। তাই স্মৃতি চারণ করতে ছিলাম।
নীতুঃ তোমার অভ্যাস আর বদলালো না।
আমিঃ তুমি অনেক চেষ্টা করেছিলে
নীতুঃ ব্যর্থ। একটা কলাগাছেকে যদি এত চেস্টা করা যেত তবে সে আম গাছ হয়ে যেত, আর তুমি তো মানুষ।
আমিঃ সে যাই হোক। এটা কোন জায়গা?
নীতুঃ বলা যাবে না।
আমিঃ ঠিক আছে, আবার যদি পিছু নেই।
নীতুঃ আমার পিছুটান কেটে গেছে।
আমিঃ যাচ্ছ কোথায়?
নীতুঃ সেটা বলা যায়। ট্রেন যেখানে থামবে।
আমিঃ পাশে থাকতে সমস্যা নেই তো? আমিও যাচ্ছি সেখানেই।
নীতুঃ সমস্যা? অপরিচিত মানুষ থাকলে যেমন তেমন হবে।
আমিঃ অপিরিচিত?
নীতুঃ হ্যাঁ। তুমি তো আমাকে প্রাক্তন বানিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস দাও।
আমিঃ প্রেমিকা ছেড়ে চলে গেলে প্রেমিকের জিবনে সে প্রক্তন হয়েই থাকে।
নীতুঃ আর প্রেমিকার?
আমিঃ প্রাক্তন প্রেমিক।
নীতুঃ না। প্রেমিকরা প্রেমিকাদের নিকট কখনো প্রক্তন হয় না, প্রথমে যে স্থান ছিলো সেটাই আছে।
আমিঃ ভাগ্যবান।
নীতুঃ তবে তুমি আমাকে দোষী বানাতে একটু ভেবে দেখনা।
আমিঃ কেন? আবার কি করলাম?
নীতুঃ এই যে বললে ‘আমি তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছি। আসলে সত্যটা কি? মনে পড়ে সেদিনের কথা? আমি কত অসহায়ের মত বলেছিলাম, ‘আমাকে ছেড়ে যেয়ো না, তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই চলব’।
আমিঃ অহ। আমি চলে গিয়েছি। আমি থাকতে পারিনি তোমার সাথে?
নীতুঃ কেন?
আমিঃ ভালোবেসে অধিকার দিয়েছিলাম, তা নিয়ে খেলেছ।
নীতুঃ অধিকার আর ভালোবাসার ফারাক টা বুঝতে তোমার এখনো সময় লাগবে।
আমিঃ প্রয়োজন আছে আর? মনে হয় না।
নীতুঃ প্রয়োজন হতেই পারে…।
আমিঃ বাদ দাও। কথায় কেবল কথা ওঠে। কি করছ এখন? সংসার।
নীতুঃ ভালোই চলছে। গান কর এখন? ফটোগ্রাফি?
আমিঃ এখন আর সুন্দরী মেয়েরা ডাকে না ছবি তোলার জন্য । ক্যমেরা এখন সস্তা হয়েছে। আর গান? সেদিন রাতেই গিটার টা ভেঙ্গে গেছে।
নীতুঃ আমাদের ছবি গুলো?
আমিঃ আমাদের বলে আর কথা নেই। তোমার একটা ছবি শুধু মোবাইল অন করার সময় দেখা যায়। মেমরি তে নেই।
নীতুঃ ভালো।
তারপর দুজনেই হঠাত করে চুপ হয়ে গেলাম। মনের মাঝে হঠাত যেন ফিরে পাবার আকুতি জন্মালো। তবুও কিছু বিচ্ছেদে এভাবে চাইতে নেই, কেননা বর্তমানে অধিকার ভালবাসা নিয়ে সন্দিহান মন।
বাইরে অন্ধকার। ঠান্ডা বাতাস ট্রেন চলছে। সময় অনেক খানি পেরিয়ে গেছে। আর দু একটা স্টেশন পড়েই গন্তব্য। তবুও অশান্ত মন চাইছে, ট্রেন লাইনচ্যুত হোক কিংবা ক্রসিং এ শুধু লেট হোক, আরেকটু পাশে পেতাম ওকে। কতদিন ওর গলা শুনিনা, এত কাছেও আশা হয় নি। প্রেমিকের মন, প্রেমিকা অনেক দিন না থাকলে তাকে পাওয়ার জন্য আকুলতায় ভোগে ঠিক যেমন টা প্রেম শুরুর আগে। প্রেম শুরু হলে যেন একটা অবহেলা কাজ করা শুরু হয়ে, কোথাও বলে ওঠে অত আমারই , এই ভাবনাটা থেকে গেলে একদিন ইগো বেড়ে যায়। তারপর ‘ও আমার প্রেমিকা’ থেকে ‘ও আমার প্রাক্তন প্রেমিকা হয়ে যায়’। আর প্রেমিকা প্রাক্তন হয়ে গেলে কেমন যেন অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী হয়ে ওঠে।
এসব ভাবতে ভাবতে দেখি আমার কাধে মাথা দিয়ে নীতু ঘুমিয়ে গেছে। সেই মায়াবতী মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। দ্রুত গতিতে ট্রেন যাচ্ছে, হালকা বাতাস পেয়ে চুল গুলো নড়ছে, মনে হচ্ছে, সারাদিন অনেক ক্লান্তি শেষে ঘুমালো। বারবার মন চাইছে আবার সব কিছু স্যাক্রিফাইস করে ফিরে যাওয়ার জন্য বলি, ওর মনের মত হয়ে উঠি। ও যেভাবে বলবে সেভাবে চলি… বলব কি বলব না, এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই ট্রেন গন্তব্যে এসে ব্রেক কষল।
নীতুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ট্রেনের সবাই নামার জন্য ব্যস্ত। ভেবেছিলা, ঘুম থেকে উঠে ওর ভেতরে একটা অপরাধ বোধ কাজ করবে… কিন্তু না। যেন সব কিছু স্বাভাবিক।
নীতুঃ একটা ভারি ব্যাগ আছে। নামিয়ে দিও।
আমিঃ নীতু?
নীতুঃ কতদিন পর নাম ধরে ডাকলে?
আমিঃ আমি শাহ্রুখ খান নয়, হিশেব করে রাখব। তবে অনেকদিন।
নীতুঃ কিছু বলবে?
আমিঃ না।
ট্রেন থেকে নেমে ওকে এগিয়ে দিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়ার আগে মনে জোর নিয়ে বলে ফেললাম, “আবার ফিরে আসা যায় না?”
নীতু বললঃ হঠাত প্রাক্তন প্রেমিকাকে এত কাছে পেলে প্রেমিকদের ফিরে পেতে ইচ্ছে করে। পরে আবার যা তাই। দূর থেকে অনুভব করে কোন দিন ফিরে আসতে চাওনি।
শেষে আমি আর কথা বলতে পারি নি। মাথা নিচু করে তাকিয়ে ছিলাম। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে।
হঠাত কানে এলো, নীতু বলছে, “কোন একদিন ভালোবেসে আবার ফিরে এসো শুধু আমার ঠিকানায়।”
কথা টা শুনে আমার অনুভুতি কেমন হয়েছিলো জানিনা। তবে মনে হয়েছিলো, আসলেই প্রেমিকা প্রাক্তন হয়ে গেলে ওদের চরিত্র অদ্ভুত হয়ে যায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৪
কালীদাস বলেছেন: সিনামা হৈলে কৈতাম কঠিন একটা কিসের পর নায়ক নায়িকা রিলেশন রিজিউম করল না কেন ট্রেন থিক্যা? বাস্তব জীবনে এইডি কওন যায় না!!
লেখাডা ভাল পাইছি