নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।
আজ আকাশের ভার্সিটি জীবনের শেষ পরীক্ষা। বলা যায় আর কোন এক্সিডেন্ট না ঘটলে আর কখন পরীক্ষার হলে বসতে হবে না।কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশ হবে, সেই অপেক্ষায় থাকা। তারপর কোনমতে একটা চাকরী যুগিয়ে নিতে পারবে। আবার স্থপতিদের চাকরীর চিন্তা করতে নেই। ভিতরে সৃষ্টিশীলতা থাকলে এমনিতেই কিছু না কিছু উপার্জন করতে পারবে।
প্রতিদিনের মত পরীক্ষা শেষে চা’ খেতে না গিয়ে সকল বন্ধুকে বলল একটু কাজ আছে। এই বলে থেমে গেল বিল্ডিং এর নিচে। অপেক্ষা করছে নীতুর জন্য। কিন্তু এটা সে কাউকে বলতে পারছে না। যদিও বন্ধু সমাজে নীতু-আকাশ নিয়ে চুপি চুপি কথা হয়ে থাকে তবুও এখন পর্যন্ত দুজনে সেভাবে কথা বলে নি।
কেননা, নীতু চলে নিজের মত, ব্যাকগ্রাউন্ডে সৃষ্টিশীলতা থেকে উচ্চ সিজিপিএ আছে। এজন্যও অল্প সিজি ধারী আকাশ কোন দিন কথা বলার সাহস করে নি। তবে আজ সে বলতে চাই। মনের জমে থাকা কথা গুলো বলতে চাই। আর সুযোগ পাবে কিনা তাই আজকের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।
যে মেয়েটাকে ক্লাসের সেই প্রথম দিন থেকে আড়চোখে দেখে এসেছে, প্রতিদিন বিকেল বেলা যে মেয়ের হোস্টেলের সামনে যেয়ে বসে চা খেত তাকে আজ না বললেই না।
অবশ্য, আকাশ আজকে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। এই পরীক্ষায় না ওর যতটা মন ছিলো তার চেয়ে বেশি মনোযোগ আর চিন্তা ছিলো নীতুর সাথে কথা বলা নিয়ে।
একে তো শীতের বিকেল, গায়ে কিছু নেই আবার নীতুর সাথে কথা বলতে যাবে এ নিয়ে ভেবে কাঁপা কাঁপা পায়ে অপেক্ষা শুরু করল।
একসময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে ছিলো কিন্তু তখন আসলো না কিন্তু যেই না চোখ একটু অন্যদিকে ঘুরিয়েছে সে সময়ে সামনে দিয়ে চলে গেছে। চলে যাওয়া দেখে চিৎকার দিয়ে ডাকতে না পেরে পিছু নিলো। সাথে আছে নীতুর বান্ধবীরা। আজ যেই থাকুক আজকে বলতেই হবে এই ভেবে আকাশ পিছু নিতে থাকলো।
হঠাত যখন নীতু রিক্সা ডেকে ফেলেছে হোস্টেলে যাওয়ার জন্য তখন আকাশের মনটা খারাপ হয়ে গেলো, তবে আজ কি সে বলতে পারবে না। ভেতরে এক অস্থিরতা চলছে। কিছু না ভেবেই নীতু বলে ডেকে উঠলো আকাশ। নিতু শুনতে পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আকাশ তাকিয়ে আছে। প্রথমে আর কাউকে না দেখে নীতু ভাবতে ছিলো, আকাশ কি আমায় ডাকালো? এ তো আমার সাথে আজ অব্দি একটা কথাও বলে নি সে আমাকে ডাকছে?
যাইহোক, আকাশ কাছে আসলো।
নীতুঃ কি? কিছু বলবি?
আকাশঃ হ্যাঁ। একটা কথা ছিলো।
নীতুঃ অনেক কথা?
আকাশঃ হ্যাঁ।
নীতুঃ আচ্ছা রিকশায় উঠ।
আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে গেল। এতটাও কল্পনা করেনি। সে একটু ইতস্ত করে উঠে পড়ল।
নীতুঃ পরীক্ষা কেমন হলো?
আকাশঃ আমাদের পরীক্ষা কেমন হয় জিজ্ঞেস করতে হয় না।
নীতুঃ আচ্ছা, আর জিজ্ঞেস করব না।
আকাশঃ আর তো পরীক্ষাও নেই।
নীতুঃ আচ্ছা, কি যেন বলবি?
আকাশঃ না মানে একটু জরুরী কথা।
নীতুঃ আরে শোনার জন্যই তো বলছি বল?
আকাশ মাথা নিচুকরে রিক্সাওয়ালা মামার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রিক্সা আগাচ্ছে। আকাশ বলা শুরু করলঃ
মানে, তোর চোখ দুটো না অনেক সুন্দর।
নীতুঃ আচ্ছা। তারপর?
আকাশঃ তুই পড়ালেখাতেও অনেক ভালো।
নীতুঃ আচ্ছা, এর ভেতরে আবার পড়ালেখা কিভাবে এলো?
আকাশঃ না মানে, চোখ দিয়ে পড়ালেখা করতে হয়ত। তাই।
রিক্সা প্রায় হোস্টেলের কাছে এসে গেছে। নিতু থামতে বলল।
আকাশঃ আসলে, তোকে আমার সেই প্রথম থেকেই খুব ভালো লাগে।
নীতুঃ তাহলে এত দেরিতে বলছিস কেন?
আকাশঃ আমি আসলে নিজেকে পরীক্ষা করতেছিলাম যে আমার তোকে কেবল শুধু ভালোই লাগে না আমি তোকে ভালোবাসি।
নীতুঃ তো পরীক্ষার রেজাল্ট কি?
আকাশঃ এখন মনে হয় আমি তোরে অনেক ভালোবাসি।
নীতু রিক্সা থেকে নেমে চলে যাচ্ছিলো। পেছনে ফিরে বলল, আচ্ছা যা ভেবে দেখব। আর রিক্সার ভাড়াটা দিয়ে দিস।
সে মুহূর্তে আর আকাশ কিছু ভাবতে পারছে না। সে ধরেই নিয়েছে নিতুও তাকে ভালোবাসে, অথবা বাসবে। কিন্তু এখন যে প্রেম শুরু না হতেই রিক্সা ভাড়া চেয়ে নিচ্ছে, প্রেম শুরু হলে না জানি কি হবে, এই ভেবে রিক্সা ঘুরিয়ে চলে আসল।
২
কিছুদিন পর
তখন রাত ১০ টা বাজে। আকাশের নাম্বারে একটা ফোন আসে,
আকাশঃ হ্যালো? কে বলছেন?
নীতুঃ আমি নীতু।
আকাশঃ ও হ্যাঁ বল।
নীতুঃ আচ্ছা শোন, আমার রাত ১১ টাই ট্রেন। আমি বাসায় যাচ্ছি। তুইও আমার সাথে যাচ্ছিস।
আকাশঃ মানে?
নীতুঃ মানে কিছুই না। তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে আমার হোস্টেলের সামনে আসবি।
আকাশ কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল। আকাশ নীতুর কথা অনুযায়ী রেডি হয়ে চলে গেলো হোস্টেলের সামনে। সেখান থেকে স্টেশন।
কিন্তু আকাশের এ দিকে আরেকটি চিন্তা হল, যেখানে নীতুর বাসা সেখানে তো ওর আত্মীয় বা পরিচিত কেউ নেই তাহলে কার বাসায় থাকবে?
ট্রেন ছেড়ে দিলো। আকাশকে কিছু ভাবতে দেখে নীতু জিজ্ঞেশ করল,’’কি ভাবছিস?’’
আকাশঃ ভাবছি, ওখানে আমার থাকার কেউ আছে নাকি?
নীতুঃ না, থাকলে কি করবি?
আকাশঃ তাই ভাবছি।
নীতুঃ তাহলে আসলি কেন?
আকাশঃ তুই না বললি?
নীতুঃ আমি বললেই আসতে হবে?
আকাশঃ তুই বলবি আর আমি আসব না?
নীতুঃ আচ্ছা, আমার কথায় যখন এসেছিস তখন ভাবনার কিছু নেই।
ট্রেন থেকে একটা অটো নিয়ে নিলো নীতু। আকাশ কিছু বুজছে না সে কোথায় যাচ্ছে।
তারপর এক বাড়িতে ঢুকে নীতু চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো, ‘’মা, মা, কোথায়? দেখো কাকে নিয়ে এসেছি? তাড়াতাড়ি এসোগো, তোমাদের জামাই কে নিয়ে এসেছি দেখে যাও।‘’
সেই মুহূর্তে আকাশ যে লজ্জা পেল তা বোধ হয় আজ পর্যন্ত কোন মেয়েও পায়নি।
তারপর সে অনেক হাসাহসি হলো, নীতুর বাবা-মা অনেক ভাইভা নিলো। যেন এতদিনের বোর্ড ভাইভার চেয়েও ভয়ঙ্কর। সারাদিন বেশ ভালো খাওয়া-দাওয়া হলো।
সে রাতের ট্রেনে আকাশ ফিরে এলো ক্যাম্পাসে।
সে রাতে অনেকবার ফোন দিয়ে খোঁজ নিয়েছে নীতু। রুমে পৌঁছাবার আগ পর্যন্ত অনেকবার ফোন দিয়েছে।
এভাবেই অঘোষিত প্রেম শুরু হয়ে গেল। ফ্রী সময় কে কাজে লাগাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘন্টা কথা চলে।
যে সময়ে আকাশ- নীতুর ভবিষ্যৎ এ কি কাজ করবে তা নিয়ে ভাবার সময়, তখন তারা স্বপ্নে সাজাচ্ছে তাদের সংসার।
আপাতত নিতুর স্বপ্ন, তাদের একটা সুন্দর ডিজাইনের বাড়ি থাকবে। যে ডিজাইন করবে তারা দুজনে মিলে। বাড়ির আশে পাশে মিলিয়ে সব কিছু থাকবে। থাকবে খেলার মাঠ, থাকবে সুইমিং পুল, থাকবে ফুলের বাগান, থাকবে সবুজ ঘাসের চাদর, তারপরে থাকবে দোলনা ইত্যাদি। সব কিছু তারা করবে নিজের হাতে।
এভাবে আরো ভাবনা আগায়, দিন চলে যায়, প্রেম গাড় হয়।
৩
ধুমধাম ভাবে নীতু আর আকাশের বিয়ে হয়। বন্ধু বান্ধব এক নতুন প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকে। বিয়ের আগে অবশ্য আকাশ একটা ভালো চাকরী পেয়েছে, নীতু লেকচারার পদ টা পেয়ে গেছে।
নতুন সংসার বেশ ভালোভাবে চলতে শুরু করল। দিন যায় তাদের ভাবনাগুলো বাস্তবে রুপ নিতে থাকে। যে সব স্বপ্ন দেখেছে তা বাস্তবে নিয়ে আসার জন্য দুজনেই কাজ করতে থাকে।
অনেক দিনের পরিশ্রমের ফলে মন মত ডিজাইন করে ফেলে। ডিজাইনের সাথে সাথে সে অনুযায়ী কাজ করানো শুরু করে।
প্রায় ৭ মাস পর বাড়িতে ওঠার মত হয়ে যায়। এই সাত মাসে বাড়ির আশে পাশে তাদের মনের মত করে সাজিয়েছে।
যেদিন বাড়িতে উঠবে সেদিন সকালে অফিসে ছোট একটা কাজ শেষ করে আসার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় আকাশ। যাওয়ার সময় নীতুকে বলে খুব সুন্দর করে সাজতে। কেননা আজকে সেইদিন যেদিন আকাশ নীতুকে প্রোপোজ করছিলো।
নীতু সেই কথা অনুযায়ী খুব করে সাজে। সেজে অপেক্ষা করতে থাকে আকাশের জন্য। আকাশ আসবে একসাথে যাবে নতুন বাড়িতে। ওরা গেলে মা-বাবা রা যাবে।
কিন্তু দুপুর গড়িয়ে যায়, আকাশ আসে না। হঠাত তার ফোনে ফোন আসে অচেনা নাম্বার থেকে।
ফোনের ওপাশ থেকে একজন বলে উঠল, “আপনি কি আকাশ সাহেবের কেউ হন? উনি একটু আগে এক্সিডেন্ট করেছেন, এখন হাসপাতালে আছেন।‘’
কোনমতে ফোন রেখে নীতু দৌড় দিলো হাসপাতালের দিকে। হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আকাশ চলে গেছে অনেক দূরে। যারা সেখানে যেতে চাই তাদের কাছে সহজ না,অথচ যারা যেতে চাই না তাদের কাছে সময়ে অনেক সহজ হয়ে যায়।
অথচ কত না স্বপ্নের সব কিছু তৈরি ছিলো। কিন্তু হিশাব নিকাশ সব তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। আজ বেঁচে থাকা, কাল স্বপ্ন দেখা কিংবা ভবিষ্যতের এই করব ঐ করব ভেবে আশায় বুক বেধে কেবল জীবনের দিনগুলোকে পার করা যায়। কিন্তু বর্তমানই সব কিছু। এই তো যতক্ষন বেঁচে আছি......
এরপর হয়ত নীতু অনেক কাঁদবে, প্রতিদিন কাঁদবে, তাদের সাজানো ঘরের প্রতিটা স্মৃতি মনে করে কাঁদবে, তারপর মাঝে মাঝে...।
এভাবেই নীতু ফিরে যাবে আবার ব্যাস্তাতার মাঝে, অথচ যে চলে গেল সে ত গেছেই। তার তো যাওয়ারই কথা ছিলো, সে যাবেই, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
মুরাদ দুর্জয়
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭
ধন্যবাদ
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৫২
রিফ্রাক্শন বলেছেন: ধন্যবাদ। দ্রুত শেষ করার ইচ্ছা ছিলো।
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:০৫
অাব্দুল্লাহ অাল কাফি বলেছেন: বেশ হয়েছে...
৪| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৭
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প, কিন্তু সবকিছুতে বড্ড তাড়াহুড়ো ছিল, নিতুকে প্রপোজ করতে সময় লাগলেও পরের ঘটনা গুলো ছিল খুব ফাস্ট।
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬
রিফ্রাক্শন বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যাঁ, দ্রুতই শেষ করার ইচ্ছা ছিলো তো এজন্যই।
৫| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখার হাত কিন্তু বেশ ভালো।
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
রিফ্রাক্শন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১০
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কেমন যেন খুব দ্রুত এগুলো গল্পটা!!
ভাল লেগেছে নীতুর বাড়িতে প্রথম পরিচয়টা।। একটু অভিনবত্ব!!