নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।
সকালে মা ফোন দিয়েছিলেন, কাল বাবার রিটায়ার্ডের দিন। আমাদের সবাইকে স্কুলে যেতে বলেছে। আপু গেছে বাড়িতে, আমাকে যেতে বলল। পরীক্ষা শেষে তাই দ্রুত থিসিস সুপারভাইজারের কাছে গেলাম। প্রেজেন্টেশন ছিলো। কাল না থাকলে পরে কোন ভাবে ব্যবস্থা করা যাবে কিনা জানতে গেলাম কিন্তু কতগুলো কথা শুনিয়ে দিল। এখন আর এসব কথা গায়ে লাগে না। গত ৬ বছর ধরে দিনের পর দিন শুনে আসছি। যেন প্রতিদিন না শুনলে খাবার হজম হয় না। কানের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
এখন আর মন খারাপও খুব কম হয়, দ্রুত রুমে ফিরে গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে লাল মিয়ার দোকানে চা পানের উদ্দেশ্যে বের হলাম। মনের ভেতরে এমনিতেই চিন্তা চলে আসছে। হয়ত কাল বাবার পাশে থাকলে বাবা একটু সাহস পেত, বিদায় নিতে খুব একটা কষ্ট হত না। এখন তো যেতে পারব না। কিছু জিনিস যেন এড়ানো যায় না। রাতে মাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। বাবা শুনলে হয়ত বলবে, "সময় মত পাশ করলে ঠিকই থাকতে পারত"।
বেশ ভালোই চিন্তা হচ্ছিলো। অথচ ২য় বর্ষে থাকাকালীন যখন অনেককে দেখতাম একই সাথে পড়াশুনা, টিউশনি করে নিজেই নিজের খরচ জোগান দিচ্ছে। আর সেই সময়ে আমি লালা মিয়ার চায়ের দোকানে বসে মহিলা হোস্টেলের বারান্দায় ঝুলতে থাকা অন্তর্বাস দেখে, পদ্মার পারে গানে আড্ডায় দিন কাটিয়েছি। এখন বুঝছি, দিন সবারই কঠিন আসে, করো হয়ত কিছুদিন আগে কারো কিছুদিন পরে।
লাল মিয়ার দোকানে গিয়ে দেখি রাফা বসে আছে। রাফা আমার ছোট বেলার বন্ধু হলেও একই সাথে এক রুমে ভার্সিটি তে থেকেছি ৩য় বর্ষ পর্যন্ত।
দেখা হওয়ার সাথে সাথে রাফা খবর দিলো ও নাকি গতকাল লেকচারার হিসেবে জয়েন করল। আরো কয়েকটি কথা হলো। দুকাপ চা আর দুটো সিগারেট নিয়ে কথা শুরু করলাম।
-কি অবস্থা?
-ভালো। পরীক্ষা দিলাম। পাশ করলে আর দেওয়া লাগবে না। কাল থিসিস প্রেজেন্টেশন।
-কোন রুমে ছিলি?
-১০৯
-আমি তো ১০১ এ ডিউটি দিলাম।
-বাহ! জয়েন করেই ইনভিজিলেটর?
-বাদ দে! ওসব। অন্য কথা বল!
কথা বলতে বলতে হঠাত রাফার মোবাইলে ফোন আসলো। "নীতুর বাবা মারা গেছে"- বলে উঠে চলে গেলো রাফা।
আমি কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন দিলাম মা কে। ফোন ধরেই মা বললেন, "তোর জামিল চাচা আর নেই।"
আমি থ হয়ে বসে থাকলাম। শুধু মনে আছে, গত শীতেও এই জামিল চাচার সাথে আড্ডা দিয়ে ছিলাম। তিনি আমার সাথে খুব করে বলেছিলেন আমি যেন গ্রামে একটা লাইব্রেরী করি। নতুন কিছু বই সংগ্রহ করি। আমি তাকে কথা দিয়ে আসছিলাম।
জামিল চাচা আমাকে পছন্দ করত। যদিও তাঁর সাথে আমি জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধটা করেছি। তবুও জানিনা তিনি কেন আমার সাথে এত ভালো ব্যবহার করেন। হয়ত তিনি তখন খুব একা থাকতেন।
শুনেছিলাম, গত ঈদে নাকি নিজের মেয়ে জামাই কে মেনে নিয়েছেন, সে জন্য হয়ত আমাকে আর মনে পড়েনি।
জামিল চাচার মেয়ের নাম নীতু। ছেলে রফিক, পড়াশোনা না করে বাড়ির সামনে মুদি দোকান চালায়। সেই দোকানেই আমাদের বন্ধুদের বিড়ি খাওয়ার হাতে খড়ি।
একদিন দুপুরে একা বসে বিড়ি টানতে ছিলাম। হঠাত জামিল চাচার বাড়ির ছাদে দেখলাম, এক কিশোরী যেন তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে হাজির। কিছুটা মগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম।
ধীরে ধীরে তখন মনের ভেতরে একটা স্বপ্ন বড় হতে থাকে। আমিও যত্নে লালন পালন করতে থাকি। কাউকে জানাই না। জামিল চাচার মেয়ে বলে কাউকে জানাইনি।
কিন্তু আমার সে স্বপ্ন যখন প্রায় কিশোরে পা দেবে ঠিক তখনই অকাল মৃত্যু হলো। সেদিন রুমে শুয়ে আছি, রাফা বাড়ি থেকে ফিরলো, কিছুটা চিন্তিত হয়ে। আমি জানতে চাইলাম কি হয়েছে। বেশ কয়েক বার গুতানোর পরে রাফা বলা শুরু করল, "জামিল চাচা তো নীতুর বিয়ে দিতে চাচ্ছে, কিন্তু আমি আর নীতু দুজন দুজনকে ভালোবাসি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা পালাবো কিন্তু কোন বুদ্ধি পাচ্ছি না। "
অকাল বয়সে কোন ছেলে মারা গেলে একজন বাবার মেনে নিতে যতটা কষ্ট হয়, আমার স্বপ্নটাও এভাবে আমার প্রিয় বন্ধুর হাতে খুন হওয়াতে আমারো সেই কষ্টটা হচ্ছিলো। তবুও মেনে নিয়ে বললাম, "আমি ঠিক করছি, তবে?"।
-তবে কি?
-না, একসাতে এত বছর থাকলাম, একই রুমে ৩ বছর কাটাতে চললাম কিন্তু কিছুই বুঝলাম না।
-আসলে, আমি কাউকেই জানায় নি। যদি কোন ভাবে জেনে যায় সবাই!
"চিন্তা করিস না, পালিয়ে যা থাকার ব্যবস্থা আমি করছি" বলে উঠে এলাম। বন্ধুকেও দোষ দিতে পারলাম না, কারন আমিও গোপন রাখতাম।
সেই নীতুকে পালিয়ে যেতে হেল্প করেছি, বিয়ে দিয়েছি রাফার সাথে। জামিল চাচা কে সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছি।
তারপর রাফা হল ত্যাগ করে বাসা নিয়ে থাকা শুরু করে। আজ ৩ বছর হয়ে গেলেও কোন দিন নীতু আমার সাথে কৃতঙ্গতা বসতও একটা কথা বলেনি, আবার রাফাও ওর বসায় একদিন ডাকলো না।
আজ নিজেকে কেমন যেন মনে হচ্ছে। সময়ের কাজ সময়ে করতে পারিনি, নিজের স্বপ্ন তো মরে গেছেই সাথে মরে গেছে বাবার স্বপ্ন, তবুও বেঁচে আছি কেবল ভরসা আর বিশ্বাস নিয়ে।
হ্যাঁ, ভরসা আর বিশ্বাস। আমার পরিবার এখনও আমার ওপর বিশ্বাস টা রেখেছে। ভরসা করে আমার ওপর। শুধু মাত্র এই জিনিস টা ধরে রাখতেই কিছু একটা করতে চাই!
ধন্যবাদ
অলস সময়ে কাটাতে লেখা
২৪/০১/২০১৮
২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার মা ভালো থাকুক। আমার মা ভালো থাকুক। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৫১
করুণাধারা বলেছেন: সময়ের কাজ সময়মত না করলে পিছিয়ে যেতে হয়- এই উপলব্ধি আসে সময় চলে যাবার পর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৮:৫৭
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভালই লাগলো, এমন ব্যর্থতা সবার জীবনেই থাকে, একসময় সফলতা ধরা দেবেই।