নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে চাওয়া নকল মানুষ। নিজ ধর্মে বিশ্বাসী ধার্মিক। নিজ কাজে নির্ভরশীল শ্রমিক। দেশকে ভালবাসা এক দেশপ্রেমিক।মানুষে মানুষে সচেতনতা বাড়ুক, দেশ হোক উন্নত, সমৃদ্ধশালী। মানবতা আশ্রয় নিক হৃদয়ে।

রিফ্রাক্শন

আমি ঠিক আমার মতো। আমার ভাবনার মত। ভাবনাগুলোর যুক্তির মত। আমি যেগুলো তে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাস এর মত। আমি আমার রচিত সংবিধানের মত। আমি প্রেমিকা পাগল প্রেমিকের মত। কাজ পাগল শ্রমিকের মত। দায়িত্ব নিতে চাওয়া নেতার মত। অবশেষও আমি মানুষ আপনাদের মতই, আপনাদের মধ্যেই একজন।

রিফ্রাক্শন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুরানা চিঠি

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:১৮

কেমন আছিস বলটু?

ভালোই তো থাকার কথা তোর! সুখের সংসার, মাস গেলে বড় অঙ্কের টাকা, এসবের পর ভালো না থাকলে কি হয়? যদিও অনেকসময় টাকাও সুখ এনে দেয় না তবুও টাকা থাকলে সুখও কেনা যায়।

বোঝা যায়, কেননা এতোদিনে একবারও খবর নিস নাই তুই, মনে আছে কতদিন পর আমাদের আবার যোগাযোগ হবে? চিঠি পেয়ে হয়ত ঘাবড়ে যেতে পারিস, হয়ত মনে মনে বলতে পারিস, “ এই আধুনিক যুগে আবার চিঠি কেন? হাতবাড়িয়ে কয়েকটা ডিজিট চাপলেই তো কথা বলা যায়।”

কিন্তু চিঠি লেখার একটা সুবিধা আছে কথার পিঠে কথা বলা লাগে না। হঠাত যদি জিজ্ঞেস করতি ‘এতোদিন পর কেন?’। তখন কি বলতাম বলত? তাইতো এই চিঠি। অথচ একসময় আমাদের মাঝে ‘কেমন আছিস?’ কিংবা কোন কথা বলার শেষে জিজ্ঞেসা চিহ্ন ব্যবহার করা লাগত না। তখন ওসব ভাবার সময় কোথায় ছিলো বল? যদি কোথাও যেতে হয় বলতাম ‘চল’, কখনও আবার চোখের ইশারাতেই কথা হয়ে যেত।

কিন্তু সময় অনেক পাল্টে গেছে। সময়ই মানুষের ঘরের শত্রু। কখন কিভাবে মানুষকে বদলে দেয় তার উত্তর কেউ জানেনা। বদলে যাওয়াটাই কেবল দৃশ্যমান, বদলানোর কারনটা সময় অতিবাহিত হওয়ার মতোই অদৃশ্য।

যাই হোক আর কথা বাড়িয়ে কি লাভ বল? তোর মনে এখন যে প্রশ্ন ভাসছে তারই উত্তর দিব।

মনে আছে তোর সেই ঘন কালো লম্বা চুলের কেশবতী শ্যামলা মেয়েটির কথা?

ঐ যে সেদিন শেষ ঘন্টায় জামিল স্যারের গণিত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বালিকা বিদ্যালয়ের সেই পেছনের লেকে বসে এক মেয়েকে দেখে পিছু নিলাম? তুই আমাকে কতকবার সাবধান করলি, কেননা মেয়েটার উদ্দেশ্য যে পথে সেই পথে জামিল স্যারের বাড়ি। তবুও যাচ্ছিলাম, যেতেই হত, ততক্ষণে ঘন্টা পেরিয়ে গেছে, হঠাত সামনে সেই চিরচেনা গম্ভীর চেহারার লোকটা এসে হাজির, ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়’ বলে চিতা বাঘের মত কি দৌড় টায় না দিয়েছিলাম!

অথচ লাভ কি হয়েছিলো বল? সেই তো পরের দিন বেধম মার খেতেই হলো ‘যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়’ কথার তালে তালে। তারপরেও কত ক্লাস ফাঁকি দিলাম, তোর কত ভয় দেখানোকে পানিতে ফেলিয়ে পিছু নিলাম সেই মায়াভরা চোখ দুটোর টানে? কি ছিলো জানিনা, আচ্ছা, চোখে জমা মায়া কি ফুরিয়ে যায় কোন সময়ের ব্যবধানে অথবা প্রয়োজনে?

সেই চিরচেনা মায়া ভরা চোখ দুটি হারিয়ে গেছে, স্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে। তুই জানিস কিনা জানিনা, নীতু এখন থাকে অন্যশহরে, যে শহর আমার অচেনা।

গত পড়শু গেছিলাম চাকরীর পরীক্ষা দিতে। ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেসে হঠাত দেখা। কোলে একটা বাচ্চা, পাশের ছিটে স্বামী, দুজনেই ঘুমাচ্ছে। যে মেয়েটা আমাকে বলেছিলো, ‘আমি কালো তাই আমাকে কেউ বিয়ে করবে না, তুমি কি সত্যিই করবে?’ অথচ সেই মেয়েই আজ সুদর্শন জামাই নিয়ে সুখে আছে।

প্রথম চোখে চোখ পড়ায় অনেক ক্ষন তাকিয়ে ছিলাম, কি বলব ভেবে না পেয়ে শেষে নীতুই আমকে জিজ্ঞেস করল, ‘হাতে কি?’

আমি বললাম, ‘এতোদিন পরে দেখা, কেমন আছি জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করছ হাতে কি?’

-সময় তো ফুরিয়ে যায়নি?
-তখন সেই কথায় বলেছিলে।

-তখন পরিবেশ আলাদা ছিলো। যাই হোক যাচ্ছ কোথায়?
-চাকরীর পরীক্ষা দিতে।

-আর কত দেবে? ভালো মত চেষ্টা করলে তখনই একটা চাকরী যোগাড় করতে পারতে।
-ভালো মত সব কিছু হলে তো, তোমার কোলের বাচ্চাটা আমারই হতো।

-হেয়ালি করা ছাড়োনি বলেই বাচ্চা কেন একটা বউও যোটাতে পারছ না।
-তবে খোঁজ রেখেছো এখনো? হেয়ালি নয়, আমি কারো আশায় ডুবে ছিলাম, সেখান থেকে সাঁতরে উঠতেই বয়স শেষ হয়ে গেলো?
-অতো ডুবেছিলে কেন তাহলে?

-ভেবেছিলাম, প্রয়োজনের সময় তুমি টেনে তুলবে! অথচ, আমার যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো তোমাকে তখন তোমাকে পাইনি, বরং তুমি আরো বেশি ডুবিয়ে দিয়েছো।

তারপর, হঠাতই যেন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখালাম, সেই মায়া ফিরে এসেছে। আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না। কিই বা বলতাম বল? তখন কি আবার বলা সম্ভব ছিলো, ‘আবার যদি ফিরে পেতাম তোমাকে, আশায় ডুবে নয় বরং তোমাকে নিয়ে একসাথে সাঁতরে যেতাম হাজারো নটিক্যাল মাইল, যেখানে থাকতো না কোন ব্যক্তিগত চাহিদা, ‘আমার’ হয়ে যেতা ‘আমাদের’।’

মনে আছে তোর? ওর যেদিন বিয়ে হয়েছিলো? তুই আমাকে বুঝিয়েছিলো, ‘নীতু হয়ত আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু ভালোবাসার দায়িত্ব টা তুই পালন করতে পারিস নি’। থাক আর সেসব কথা তো তুই জানিসই।

ট্রেনের সময় যেন দ্রুতই চলে গেল। কান্না শেষে বলল, ‘পরের স্টেশনেই নামব আমরা, একদিন আসিস।’ কিন্তু এই আমরা তে থাকার কথা ছিলো আমার! আমি বললাম, ‘আসব একদিন।’

জানিনা, তোকে কথা গুলো কেন লিখলাম। সুখে থাকলে স্মৃতিচারণ করতে ভালো লাগে, এটা পড়তে হয়ত তোর বিরক্ত লাগবে না। আর চিঠির উত্তর দিস না। যে ঠিকানা থেকে পাঠিয়েছি, সেটা কাল নাও থাকতে পারবে।

তবে চিন্তা করিস না, কোন এক শীতের খুব ভোরে তোর বাসায় কড়া নাড়বো, দুজনে মিলে বের হয়ে বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে ভাপা পিঠা খাবো নয়ত সেদিনের মত হারিয়ে যাব চেনা রাস্তাকে অচেনা ভেবে।

কি যাবি তো? তোর বউ আবার খুব ভোরে বের হতে দেবে তো?

ভালো থাকিস।

ইতি
তোর বন্ধু আকাশ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর চিঠি।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯

রিফ্রাক্শন বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.