নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন ২০০৯ ইংরেজী। প্রথম বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি। হাসান ভাই, আমার দুলাভাই। শুনেছি উনি খুব মিশুক মানুষ। রসিকতা উনার আর একটা ইন্দ্রিয় দক্ষতা। বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছাতেই দেখি হাসান ভাই দাঁড়িয়ে।
- অনেক কষ্ট হয়েছে আসতে? আহারে ধুলোই পুরো ফর্সা হয়ে গেছো।
আমি জানি উনি আমাকে টিপ্পনি দিল। আমার গায়ের রঙ একটু কালো তাই। ব্যাপার না! তবে বিষয় টা নোট করে নিলাম। পরে ফয়সালা হবে।
- তা লম্বু শালা বাবু, অনেক গরম পরেছে ঠান্ডা কিছু খাও।
বলেই একটা ১ লিটারের বোতল মুখে পুরে দিল। ঢক ঢক করে আধা লিটারের ও বেশি গলাধঃকরণের পর মুখ লাগানো এঁটো বোতলটা আমাকে দিয়ে দিলো। আমি বললাম থাক। ধন্যবাদ। আমার এমনিতেই ঠাণ্ডার সমস্যা।
- বল কি?? ঠাণ্ডা কিভাবে সমস্যা হয়?? সমস্যা তো গরমে! যার সমাধান হচ্ছে এই ঠাণ্ডা। হে… হে… হে…।
খুব বিচ্ছিরি ভাবে উনি হাসি দিল। আমি নিশ্চিত এখানে আরো কিছুক্ষন থাকলে আমাকে আরো বেশি পঁচাবে।
ভাইয়া চলেন আমরা বাসার দিকে রওনা দেই।
- কি? আর নিতে পারছ না? আচ্ছা চল!
আমরা ভ্যান গাড়িতে রওনা দিলাম। আঁকাবাঁকা গ্রামের রাস্তা। ভর দুপুর। ইয়া বিশাল বিশাল তাল গাছ। মাঝে মাঝে অনেক পুরনো বট বৃক্ষ।
ভাইয়া আপনাদের এখানে কি ভুত টুত আছে নাকি?
- আছে মানে তোমার সাথেই তো আছে। হা… হা… হা…!
বেহুদা জোক!! কিন্তু উনার হাসিটা শুনে কিঞ্চিত তকমা খেয়েছিলাম। কারন এরকম অনেক নাটক সিনেমা দেখেছি যে অজানা জায়গায় বেড়াতে গিয়ে কেউ রিসিভ করতে আসে, কিন্তু পরে বুঝা যায় সে আসল মানুষ ছিল না।
দ্রুত ভ্যানের নিচে উকি দিলাম। ঝুঁকে উনার পা এর দিকে নজর দিলাম। শুনেছি ভুতের পা নাকি উল্টা থাকে।
নাহ উনার তো সোজা। আইতালকুড়সি পড়ে বুকে ফুঁ দিচ্ছিলাম। হাসান ভাই দেখে বলে,
- আমাকেও একটু ফুঁ দিয়ে দাও। ভুত হইলে পালিয়ে যাবো। আর না পালাইলে তোমার দুলাভাই।
বোনের বাসায় ভরপেট খেয়েদেয়ে বিকালে মাছ ধরতে যাবো। দুলাভাই নিয়ে গেলো এক শুনশান পুকুর ঘাটে। পানি কম জংলা বেশি।
ভাই এখানে তো বড়শি আটকে যাবে। অন্য কোথাও যাই?
- আরে এখানেই তো সবচেয়ে মজা। এখানে ছিপ ফেললে মাঝে মাঝে সোনাদানাও মিলে শুনেছি।
তা আপনি কয়দিন পেয়েছেন?
- পায়নি এখনো। কিন্তু আসা ছাড়িনা। এখানে শুনেছি জলপরি ও আছে। মাঝে মাঝে সাথে নিয়ে যায় ওদের দুনিয়া দেখাতে।
আর ফিরে আসে না?
- আসে। কারো যদি ভালো না লাগে চলে আসে। এই যেমন ধর যাদের বৌ বাচ্চা আছে তারা মায়ার টানে চলে আসে।
আপনি গিয়েছেন কখনো?
- আরে নাহ। তোমার আপা শুনলে লঙ্কা কান্ড বাধিয়ে দিবে।
যাক ভয় তাহলে আপনি পান।
রাত ১০ টায় খাবার খেয়ে একটু ফন্দি ফিকির করছিলাম সিগারেট টানার। উপায় না পেয়ে বললাম, দুলাভাই চলেন যাই,একটু হেঁটে আসি।
আপা বলল, তোর দুলাভাইয়েরও হাঁটার রোগ আছে খাওয়ায় পরে।
বের হয়ে গেলাম শালা দুলাভাই।
- ওই সামনের কালভার্ট টা দেখছিস না? ওটার সাথে যে বট গাছ আছে ওখানে গিয়ে তুই বিড়ি টেনে আয়। আমি এদিকে আছি। কিন্তু সাবধান ওখানে শুনেছি ভুত থাকে। যাকে পায় দেখে সালাম দেয়।
ব্যাস! সালাম দেয় শুধু। সমস্যা নাই আমি সালামের উত্তর দিয়ে দিব।
কালভার্টের কাছে গিয়ে সিগারেট জ্বালালাম। অর্ধেক শেষ হতে হঠাত নজরে পড়ল জমির আইল ধরে একটা লাইট আসছে আমার দিকে। লাইট টা মাঝে মাঝে নিভু নিভু হয়ে আসছে। আমি বসে বসে পর্যবেক্ষন করছি জিনিষটা কি?
আর একটু কাছে আসতেই বুঝলাম কোন ভদ্রলোক একটি ডায়নামো চালিত সাইকেল নিয়ে আসছেন।
আমি কালভার্টের রেলিং এ বসেছিলাম। লোকটি মুরুব্বি গোছের। কাছে আসতেই আমি সিগারেট ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। “আসসালামুয়ালাইকুম”
লোকটি বাবাগো মাগো বলে সাইকেল ঘাড়ে নিয়ে লুঙ্গি তুলে দিলো এক ভোঁ দৌড়।
কি এক সর্বনাশ করে ফেলেছি পরে বুঝলাম। দুলাভাইএর কথা মনে পড়ল। এখানে নাকি ভুতেরা সালাম দেয় রাতের বেলা। দুর্ভাগ্যবশত আমার গায়ে ছিল আবার সাদা পাঞ্জাবি। ব্যাপারটা ওই সিচুয়েশনে একবার ভেবে দেখুন।
দুলাভাই চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে বলে কি হয়েছে? ভুত দেখেছিস নাকি?
আমি বললাম, ‘আমি না ওই মুরুব্বি দেখে গেল মাত্র।‘
দুলাভাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি অবস্থা। বলে কালকেই তোকে ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে দিবো। অন্ততপক্ষে অন্ধকারে তো বুঝা যাবে তোকে।
[মাস তিনেক পর]
আবার সেই বাসস্ট্যান্ড। আবার দুলাভাই এসে হাজির। বোনের বাসায় এলাম। এসে দেখি এলাকায় ব্যাপক তাবিজ কবজের ব্যাবসা শুরু হয়ে গেছে। দুলাভাই ব্যাপারটা এঞ্জয় করছে মনে হয়।
- আরে তুই তো এখন হিট। এলাকার সব্বাই বলে ইয়া ১০ ফুট লম্বা একটা সাদা কাপড় পরা ভুত এর গল্প। বাচ্চা পোলাপাইনের মুখে মুখে গল্প। ওঝা দরবেশ বাবার ব্যাবসা ভালো জমেছে গ্রামে।
আপনি তো জানতেন! আপনি ব্যাপারটা ক্লিয়ার করেন নি কেন?
- চল আমার দরবারে। ব্যাপারটা তোরে বুঝায়।
বাজারের কোনে এক আধা নেংটা বুড়া বসে আছে অনেক গুলো ফিতা প্যাঁচায়ে। লোকে অনেক টাকা দিচ্ছে আর একটা করে ফিতা নিয়ে যাচ্ছে।
- কি কিছু বুঝলি? ব্যাপারটা আসলে কি?
আমি বললাম,
“বুঝলাম! আপনি প্রডিউসার এন্ড ডিরেক্টার আর আমি লাইভ এক্টর।“
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৪
Rehan বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। পুরোটা গল্প কাল্পনিক। :-)
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:২৮
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: ভালোই লাগলো।
৩| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০০
চৌধুরী আসিফ বলেছেন: বাহ বেশ দারুন!! খুব মজা পেলাম
৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: পুকুরে মাছ ধরে মজা নাই। মাছ ধরতে যাবেন নদী অথবা সমুদ্র।
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:০৭
Rehan বলেছেন: যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার রুই কাতলা পিলাই। ;-)
৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৯
মওদুদ মান্নান বলেছেন: অসাধারণ লেখেন ভাই। বই মেলায় একটা ছোট গল্পের বই বের করতে পারেন।
৬| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৭
Rehan বলেছেন: ভাই! দিল্লী অনেক দূর।
৭| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৪
নীল আকাশ বলেছেন: গল্প মজা লেগেছে তবে বানান ভুল ঠিক করুন।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৩
Rehan বলেছেন: ওকে! :-)
৮| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৪৫
সোহানী বলেছেন: হাহাহাহাহা..........
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০০
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: গল্পটা বেশ মজারু। এমনিতেই শালা-দুলাভাই সম্পর্কটা রস-কষ-শিঙারা। সাথে যদি রসিক দুলাইভাই হয় তবে তো শালার কদর রামায়ন। লেখার ধরন বেশ ভালো।