নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ

চারুশিল্পী , লেখক

শাহ আজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। স্বর্ণ

০৭ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৩১





স্বর্ণ অত্যন্ত দামি জিনিস। কারণ, পৃথিবীতে এটি বেশ বিরল। কথাটা ঘুরিয়েও বলা যায়—স্বর্ণ বিরল বলেই এত দামি। সে যাই হোক না কেন, গয়না থেকে শুরু করে ব্যাংকের লকার, সব জায়গায় স্বর্ণের আধিপত্য। কিন্তু এই স্বর্ণ এল কোথা থেকে?

স্বর্ণ এসেছে মহাকাশ থেকে। এটা পৃথিবীর নিজস্ব সৃষ্টি নয়। মহাকাশে দুটি নিউট্রন নক্ষত্র পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে যে তাপ ও চাপের সৃষ্টি হয়, তাতে তৈরি হয় স্বর্ণ। এরপর তা গ্রহাণুর মাধ্যমে এসে পৌঁছেছে পৃথিবীতে। অর্থাৎ আপনার শরীরে যে স্বর্ণালঙ্কার আছে, তা একটা মহাকাশীয় দুর্ঘটনার ফসল!

কিন্তু প্রশ্ন হলো, পৃথিবীতে কতটা স্বর্ণ আছে? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথমে দেখতে হবে, মানুষ এখন পর্যন্ত কতটা স্বর্ণ উত্তোলন করেছে। যুগের পর যুগ মানুষ মাটি খুঁড়ে, নদী থেকে নানাভাবে স্বর্ণ উত্তোলন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের হিসেব অনুযায়ী, মানুষ এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার টন স্বর্ণ উত্তোলন করেছে। তবে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলছে এই পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার টন। এত সোনা যদি এক জায়গায় রাখা হয়, তাহলে তা প্রায় ২২ মিটার একটি ঘনকের সমান হবে। মানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় ২২ মিটার হবে। এটা হবে একটা মাঝারি আকারের বহুতল ভবনের সমান।

মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, এত স্বর্ণ গেল কোথায়? এই উত্তোলিত স্বর্নের বেশিরভাগ অংশ প্রায় ৪৫ শতাংশ দিয়ে তৈরি হয়েছে গয়না। ২২ শতাংশ আছে সোনার বার ও কয়েন আকারে এবং ১৭ শতাংশ রাখা হয়েছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। তবে এটাই পৃথিবীর সব স্বর্ণ নয়। এখনো মাটির নিচে রয়েছে অনেক স্বর্ণ—প্রায় ৭০ হাজার ৫৫০ টন। বর্তমানে আমাদের হাতে যেসব প্রযুক্তি আছে, সেগুলোর সাহায্যেই এসব স্বর্ণ উত্তোলন করা সম্ভব। এখন সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আছে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ উত্তোলন করেছে চীন।

এর বাইরেও কিছু স্বর্ণের কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা। তা বুঝতে হলে ‘রিজার্ভ’ আর ‘রিসোর্স’ শব্দের সঙ্গে একটু পরিচিত হতে হবে। রিজার্ভ মানে যেসব খনি থেকে সোনা তুলতে গেলে লাভ হবে। আর রিসোর্স মানে যেসব খনি সম্পর্কে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের মতে, বিশ্বে বর্তমানে রিজার্ভ আছে ৬০ হাজার ৩৭০ টন। আর রিসোর্সের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৬ টন।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মানুষের কাছে থাকা স্বর্ণ ও জানা মাটির নিচের স্বর্ণের মোট পরিমাণ ২.৮ লাখ থেকে ৩ লাখ টন। তবে এটাই শেষ হিসেব নয়। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, পৃথিবীর বেশিরভাগ স্বর্ণ এমন জায়গায় আছে, যেখান থেকে তা তোলা অসম্ভব। সমুদ্রের পানিতে, আগ্নেয় শিলায়, আর পৃথিবীর ভূত্বকের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট সোনার কণা। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকে সোনার ঘনত্ব প্রতি বিলিয়নে ৪ ভাগ। মানে প্রতি টনে মাত্র ০.০০৪ গ্রাম! এই হিসেবে পৃথিবীর মোট স্বর্ণ থাকার কথা ৪০ কোটি টন! অথচ আমাদের কাছে হিসেবে আছে মাত্র ৩ লাখ টনের। তাহলে বাকি স্বর্ণ কোথায়? আসলে সেগুলো এমনভাবে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে, তা তুলতে হলে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাবে। মানে খরচ হবে আকাশছোঁয়া।

পৃথিবীর মোট স্বর্ণের ৯৯ শতাংশ লুকিয়ে আছে আমাদের গ্রহের কেন্দ্রে.

তবুও এটাই পৃথিবীর সব স্বর্ণ নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মোট স্বর্ণের ৯৯ শতাংশ লুকিয়ে আছে আমাদের গ্রহের কেন্দ্রে। যখন পৃথিবী গঠিত হচ্ছিল, তখন ধাতব পদার্থগুলো ভারী হওয়ায় কেন্দ্রের দিকে চলে গিয়েছিল। আর হালকা বস্তুগুলো রয়ে গিয়েছিল ওপরিভাগে। স্বর্ণও সেই ভারী ধাতুদের দলে ছিল। ফলে বেশিরভাগই এখন আমাদের নাগালের বাইরে, আটকে আছে পৃথিবীর গভীর স্তরে।

ভাবতে পারেন, তাহলে আমরা এখন যে স্বর্ণ উত্তোলন করতে পারি বা পাই, তা কীভাবে এল? বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৪.১ থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে অসংখ্য গ্রহাণু ও উল্কা এসে পৃথিবীতে আঘাত হানে। এই সময়েই প্রচুর স্বর্ণ ও প্লাটিনামসহ দামী ধাতু পৃথিবীর বাইরের উৎস থেকে আসে। যেহেতু তখন পৃথিবীর পৃষ্ঠ শক্ত হয়ে গিয়েছিল, তাই এই ধাতুগুলো কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। সেগুলো রয়ে গেছে ভূত্বকে। এজন্যই আমরা এখন পাহাড়, নদী এবং খনিতে স্বর্ণ খুঁজে পাই। অবশ্য নতুন করে এখন আর পৃথিবীর বাইরে থেকে স্বর্ণ আসার ঘটনা ঘটে না।

তাহলে মূল বিষয়টা কী দাঁড়াল? পৃথিবীতে কতটা স্বর্ণ আছে, তার একটা মোটামুটি ধারণা থাকলেও একেবারে নিখুঁতভাবে মাপা প্রায় অসম্ভব। কেন্দ্রের গভীরে থাকা স্বর্ণ তো আমাদের কাছে অধরা। আর মাটির ওপরিভাগে যা আছে, তারও বেশিরভাগ রয়ে গেছে অজানা।

Source : লাইভ সায়েন্স

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম।

০৮ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:১৭

শাহ আজিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.