নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধোঁয়াশার অন্তরালে

রেহানুল হক

রেহানুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতা

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:০৭

দাও না নির্বাসন পৃথিবী
-রেহানুল হক
পৃথিবী, মনে কি হয় আর তোমাতে থাকি? না-তো।
মনে হয় লাল উজানি রশ্মির মত না থেমে বেরিয়ে পড়ি
ট্রপোমন্ডল, স্ট্রাটমন্ডল, আয়নমন্ডল পেরিয়ে
এক্সোস্ফেয়ার,না সেখানেও থামবোনা-
ওজোনস্তর? হাসালে পৃথিবী!
ওর তো আমায় রুখবার কোন ক্ষমতাই নেই
ও তো এখন বিগত যৌবনা
সব ব্যূহ ভেদে যেন ছুটে চলি
কোন এক অজানা, অচেনা গন্তব্যে,
যেখানে নেই পৃথিবীর বোঝা।

পৃথিবী, কি দিয়েছ আমায়?
দিয়েছ যা তা কি পিরিক ভিক্টরি না?
হা--- হা— পিরিক ভিক্টরি- ইংরেজী শব্দ
লুকিয়ে সেথা কত কি!
উপনিবেশ, ভোগ,দখল, লুঠতরাজ, অত্যাচার
আরো আছে নারী, গাড়ি, মদ, জুয়া
হানাহানি, মৃত্যু, বিভিষিকা, বিভৎসতা- সেও কম নেই
আছে ক্রন্দন, চিৎকার, ধ্বংসযজ্ঞ।
এসব যে আমার ভালো লাগে না পৃথিবী
তবু কি আমায় বাঁধবে তোমার বন্ধনে?
জানি- অনেক নিয়েছি তোমার
পেয়েছি তোমাতে মায়া, মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা,
পেয়েছি ভোজ, চিন্তা, আনন্দ, উদ্বেলতা, বর্ণিলতা
তবু যে আমি তৃপ্ত নই পৃথিবী।

মরি ধুকে কষ্ট, ব্যাথা আর আপন লাঞ্ছনায়
আর যে পারি না পৃথিবী
না থাকলে তোমার এমন আর কি?
আছে তো সোনার ছেলে তোমার অনেক,
অনেক মাথাওয়ালা, মগজ ৩০,০০০গ্রামেও ঠেকেছে হয়তোবা।
আর তথাকথিত রেট রেছ-
তাল মেলাতে কি পারি আমি?
তোমার ছেলেরা যে অনেক এগিয়ে
আমার যে ভালো লাগে না কালচার,
কৃষ্টিতে আমি ফিশ আউট অব ওয়াটার
ভালো লাগে না যে ডেড, মম, ওমা –গো
কিংবা আমি অমুক, তমুক, থাকি নিউ জার্সিতে
এসব ভাষা আমি শিখিনি
শিখিনি আরো অনেক,-- অনেক
নইতো আমি মেধাবী সোমা, হামিদ, হাবিব কিংবা রশীদ প্রিন্সিপাল
আমি অতি নগন্য, ক্ষুদ্র প্রাণ এক
যদি বল নন-এনটিটি তবু নিশ্চুপ আমি।
দৃশ্যমান বিশ্বজগত ১০৯
অথবা ভাবনার উদরে ১০১১
মাঝে বিশাল ফারাক--- কোটি কোটি আলোকবর্ষ
এর মাঝে একটি ধূলিকণাসম পৃথিবী
তার-ই মাঝে অতি নগন্য এই আমি
মিলি মাইক্রনেও যার মিলে না হিসেব
আমাতে যে আমারে খুঁজে পাই না আমি।

আর তাইতো রই পড়ে অ—নে—ক পিছে
কিন্তু দেখেছি আমি চিলের ভয়ে পাতার ঘরে
সেঁধিয়ে থাকা বাবুই, মুখখানা ঢাকা রইলেও
ধর যায় যে দেখা।
শুনেছি তাদের কন্ঠস্বর, শুনেছি গান
দেখেছি ভাষার সমৃদ্ধি
ভয়াল কন্ঠ ‘পালাও’ বলা
কাছেই যে শিকারী ওই
‘সাবধান’ তাই। আরো অনেক কথা
মধুমাখা প্রণয় ডাক!
আরো জানি ওদের দশ ভাষার কথা শুনেছে মানুষ
আমিও নাকি মানুষ তাই বাবুইয়ের কথা জানতে পারি
তবু আমি নই সুখি।

বাবুইয়ের ভাষায় না থেমে
দেখেছি যে আমি নিজের ভাষা, দেখেছি সেথা
জাম গাছে কূল
লাউ যেন ফলেছে কুমড়ো হয়ে
তিল ফলেছে তাল হয়ে
বেলের স্বাদ যেন জাম্বুরায় মেলে
স্নেহের ভাষা স্নেহই বটে
কিন্তু একি দেহ যে তার কাঁটায় ভরা
ভালোবাসার অভিব্যক্তি কিংবা ধর্মীয় বচন
সেখানেও ছল, চাতুরি, স্বার্থের কারসাজি
কই বাবুইয়ের তো এমন হয় না।

শুনি মানুষ তাই নাকি থাকতে হয়
বিচিত্রতা, বহুমুখিতা, বহুরুপিতা, প্রসারতা
নইলে যে ঠেকে নীরস, নীরস।
কিন্তু পৃথিবী আমার যে ভালো লাগে না
ভালো লাগে না রঙ মেখে সং সাজা
তাইতো আর তোমাতে রইতে চায় না মন
তবু কেন রাখতে চাও পৃথিবী?

পৃথিবী দেখেছি আমি অনেক সন্ধ্যা, অনেক রাত
ভালো লাগে সূর্যাস্ত, লাল আভায় ভরা দিগন্ত
দেখেছি কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের নীল তবু
তবু বিক্ষেপনে নীলাভ গগন
দেখছি হেঁটে যাওয়া মেঘ, বদ্ধ জলাশয়ের তরঙ্গখেলা
ভালো লাগে ভাবি যখন বৃষ্টিতে কোলা ব্যাং লুকিয়ে পড়েছে ছাতায়
নারিকেলের ঝিরিঝিরি পাতা নারীর কেশ
অথবা শুনি যখন ক্ষেতের আলে কবুতরের বাকুম বাকুম, ঘুঘুর কুক্রুকু।
কিন্তু ভালো লাগে না নিতম্ব ফুলিয়ে হাঁটা নর-নারী
জানি ওরা ওদের পাছা দেখাতে চায় আমায়
কিন্তু কেন? কয় কেজি মাংস আর আছে ওখানে!
ঐ মাংস থেকে যে পঁচা গন্ধ বেরোয়
তা তো আমার অজানা নয়
তবু কি আমায় চাটতে হবে সেটা?
কারো শ্বেতশুভ্রা নিতম্বখানা দশ কেজি হলেও
আমি তো জানি
দশ কেজি মাংস ক্ষুধা মেটাতে পারেনা কোলের শিশুটিরেও
তবে কি করে আমার ক্ষুধা মেটাবে তা!
এরপরেও কেন এত চাটাচাটি
এত জায়গা তবু কেন ঐ পঁচা জায়গাখানি?
কিন্তু পৃথিবী ওটা তো আমি পারিনা
তাইতো ভালো লাগেনা সমাজ, সংস্কৃতি আর তোমার বীরপুরুষদের।

শরতের মেঘ ঠিক যেন পেঁজা তুলো
অথবা নীলের মাঝে উত্তাল তরঙ্গ
দেয় হাতছানি- এস কর অবগাহন।
কম কিসে ধরাধামেও
প্রাণজুড়ানো বাতাস, দিগন্তব্যাপী সবুজ,
ধান গাছের সুঠাম নৃত্য
তবু সুতৃষ্ণ নয়ন
হাজার বছরেও এ তেষ্টা মেটবার নয়
সাদা কাশফুলের বাহারি তাল
দূর শুন্যে ঐ পাখির গ্লাইডিং-
কোথায় যে এত ছন্দ শিখেছে জানিনা
পড়েছিল কি ওরা কোন স্কুলে?
সমুদ্র কচ্ছপ- পৃথিবী তোমার চৌম্বকত্বে সামান্য হেরফের
ঠিক ঠিক নেয় বুঝে।
বিদ্যালয়ে পড়েছি আমি
জেনেছি পেয়াড়ার কত আই.ইউ
ডাল কেন গরীবের আমিষ
রুটির ভেতরে কি আছে
আর তাই স্বাদ জাগতেই পারে করি চুরি
পাই যদি আর খানিক ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ফ্রুক্টোজ, শর্করা বা প্যাক্টিন।
কিন্তু পড়তে চাইনি আর কিছু
শিখিনি কাকের শিক্ষা, অক্সিজেনের উদারতা
যে শর্করার হয়ে দেয় আত্নহুতি
আমার তরে, ব্যাক্টিরিয়া বিপক্ষে
তাইতো আর রইতে চাইনা পৃথিবী
এত্ত লজ্জা নিয়ে
আমিতো বেহায়া নই।

জেনেভা কনভেনশনের শিক্ষা
সবল বলে দূর্বলকে অত্যচার নাহি কর
করলে তা মানবতাবিরোধী,নৈতিকতা লঙ্ঘন
আরো কত কি-----!
ওরা সভ্যতার সন্তান
করেছে আইন তবু তো দেখি ওদের
বেশ ভালোই শিখেছে
কিসের প্রহারে মৃতেরা কাপড় নষ্ট করে
কোন আতঙ্কে সুফী পরিধেয় ভিজিয়ে ফেলে
কত জুলে চাপলে তরুনীর জলজ্যন্ত স্তনযুগল আলুভর্তা সাজে।

বিগগান, মহানুভব, সমাজহিতৈষী, বিশ্বপ্রেমিক
দেখেছি এদেরও
দেখেছি এরা হোয়াইট লাই বলে
বললে আর ক্ষতি কি
লাই হলেও এ যে হোয়াইট
আরো দেখেছি কি করে মহান এরা
পলাশের মা’রে স্বর্গসুখ দেয় এনে।
পলাশের মা- কাঁদ কেন?
ওরা তোমার থেকে সুখ নেয়
এনজয় করে ওরা তমার বক্ষ আর দুই উরুর সন্ধিক্ষণ
টেক ইট ইজি
পরের সুখ যদি নাও নিজ করে
তবে তো আর দুঃখ থাকে না মনে।

পৃথিবী, দেখেছি আরও তোমার সোনার মুখদের
দেখেছি আমি অনেক পীর, অনেক বেশ্যা
দেখেছি ওদের চিকিৎসা সমাজের তরে, মানুষের জন্য।
দেখলুম সেদিনই- মহান চিকিৎসক এক
এসপার, ওসপার করা শিশুটিরে
কিরুপে প্রেস্ক্রিপসন করে
প্রেস্ক্রিপসন নিতে পথ্য আর নাহি জুটে।
চিকিৎসক বটে!
মিসেসের যত ডিমান্ড, ডজনখানেক থাকে নিভৃতে
ওদেরও হক আছে
কর্মযজ্ঞ যার এত মহান
শখের দাম হতেই পারে।

আরো দেখছি-
আদর্শ প্রিন্সিপাল এক
বইয়ের পোকা বটে,মামলাও ভালো জানে
নীতিতে ওস্তাদ, নাগরের গানেও কম নহে
তোমার সন্তানদের দেখেছি এমনি অনেক রুপ পৃথিবী
এদের কি বলা যায়- এ্যরো ব্যাং, লিযার্ড, কোলাল সাপ
না! ওসব নিকৃষ্ঠ প্রাণ।

কিন্তু পৃথিবী আমি যে বহুরুপ চাই না
আমার অতসব ভালো লাগে না
আর তাইতো চাই না পৃথিবী রই তোমাতে
হয়তো বলবে ভয় কি
রয়েছে তো জেনেভা কনভেনশন।
কিন্তু পৃথিবী এই তো সেদিন
এক হ্যাংলা কুত্তীর পিছে ছুটছে দু’ সবল কুত্তা
বেচারী আর পারছে না
লেজ নিল গুটিয়ে
কুত্তারা গেল চলে।
পৃথিবী জেনেভা কনভেনশন আমি জেনেভায় শিখিনি
শিখেছি কুত্তার কাছে
কিন্তু আমি তো কুত্তার বাচচা নই
তবু আর কি শর্তে রাখতে চাও পৃথিবী
তোমার মাঝে?

পৃথিবী তোমার সন্তানেরা এ+পায়, পায় এ
আমার অতসব নেই পৃথিবী
ভালোও লাগে না অতকিছু
কারণ দেখেছি আমি যুগে যুগে
তোমার সন্তানদের দেড় পয়সার বিদ্যে
দিয়েছে যত না তারও চেয়ে বেশি করেছে ক্ষতি;
তবু তার মানবহিতৈষী
আর তেমন যে আমি নই পৃথিবী
আমি সাধারণ, অতি নগন্য;
মানব বললে বলতে পার
যদি মন চায় কিন্তু নই মানবহিতৈষী।
বিশুবিদ্যালয়ের শিশুশিক্ষা আর তার পরীক্ষা
কৌন হাতি কিতনা যাদা- ইসকা ক্রাইটেরিয়া
এ ক্রাইটেরিয়ায় যে আমার আস্থা নেই পৃথিবী
হয়তো বলবে পারিস না তো তাই কস অমন কথা
সত্যি পৃথিবী-
পরীক্ষা অযোগ্য আমার
নয়তো আমি অযোগ্য পরীক্ষার।

কিন্তু কি করবে পৃথিবী আমায় নিয়ে
মানুষ যে আমার মনে হয়
এস্কিমো, পিগমি, বুশম্যান বা অস্ট্রেলিয়ান এবওরিজিন
আর এদের নেই যে
শিশুনিকেতন, নেই শিশুশিক্ষা
নেই মহাবিদ্যালয়, নেই পাঠশালা
তবু মনে হয় তাদেরি সেরা।
হয়তো বলবে আমায় অসভ্য, মূর্খ
তাইতো পৃথিবী, সত্যিই তাই
ভাবিনি তো আগে সম্বিৎ বোধ হয় ফিরল এই
কিন্তু পৃথিবী কিভাবে ঠিক করবে আমায়?
ঠিক আমি ছিলাম না বহুদিন, হবোও না আর কোনদিন
তাই পৃথিবী কেন থাকি অযাচিত, রবাহুত!
কারো ক্ষতি করা ঠিক নয় অহেতুক
মূর্খ হলেও আমার যে এ জ্ঞান আছে
এ জন্যই পৃথিবী থাকতে চাই না আর তোমাতে
চাই স্বেচ্ছা নির্বাসন, দাওনা পৃথিবী, দাওনা প্লিজ ।

পৃথিবী জানই তো যতবেশি থাকব ততবেশি জ্বালাব তোমায়
একক অপরাধে করব সব একাকার,করব ছারখার
আর পৃথিবী তোমারও তো মনে হারাবার নয়
তোমার সভ্যতা আর বিত্তের পাহাড়ে
মুতেছি আমি দিবস-যামিনী মুতি প্রতিদিনে।
আর তোমার সোনার ছেলেমেয়ের হীরের মুখগহ্বরখানি
সে তো যেন পয়ঃনালী নিক্ষেপ করি উচ্ছিষ্ট যা কিছু
আর সম্বোধন কি করে করি তোমার সোনার লেড়কা লেড়কিওছে
জানই তো আজন্ম দোষ আমার
অটোমেটিক আসে মুখে
সবকো মে বলতা হ্যায় শালী এন্ড শালা
অর কুছভি নেহি
তাই পৃথিবী আর কতই বা সইবে তুমি!

আমি কাঙ্গাল ভালোবাসার
এখানে মনে হয় আমার অভাব তার
বাধাও মানে না আমার- সেরোটোনিন,
নোরাপিনেক্সিন, কোনিলেথিলমিন, এম্ফিটামিন
অবাধ্য এরা আমার মতোই
তাই পৃথিবী দাও না নির্বাসন, দাও অব্যাহতি
তুমিও পাও শান্তি, আমিও চলি কোন এক রাঙ্গা ভুবন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.